যদি জিজ্ঞেস করা হয়—ছাত্র-ছাত্রীরা কীভাবে চলাফেরা করবে, কী করবে, কী করবে না, কোথায় যাবে, কখন হলে বা বাসা-বাড়িতে ফিরবে, কার সাথে চলবে, কী খাবে, পড়তে বসবে না ঘুরতে বের হবে, রাতে ঘুমাবে, নাকি ‘এই রাত শেষ রাত’ মনে করে সুবহে সাদিকে ঘুমাতে যাবে—এক কথায় স্টুডেন্টরা কীভাবে জীবনযাপন করবে, এটি কে ঠিক করবে? কীভাবে তারা নিজেদের লাইফস্টাইলকে এডজাস্ট করবে? কার গাইডেন্সে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বিশেষ করে প্রগতিশীল ধ্যান-ধারণার অনুসারীরা বলবে, ‘ছাত্র বা ছাত্রীটা নিজে’। স্টুডেন্টদের জীবনযাপনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আদৌ কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত কিনা, সেটা নিয়ে বড়জোর তারা প্রশ্ন তুলবে। এটি আমার ধারণা।
স্টুডেন্টদের লাইফস্টাইল কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে বলার মতো একটা মেজর স্টেকহোল্ডারের কথা কারো মনে থাকে না। জানি, এতক্ষণেও আপনার মনে পড়ছে না। তারা হলেন গার্ডিয়ানরা, যারা ছাত্র-ছাত্রীদের পারিবারিক অভিভাবক হিসেবে সর্বপ্রকারের দায়িত্ব বহন করেন। কতভাগ স্টুডেন্টদের খরচ গার্ডিয়ানরা বহন করে?
আমার ধারণায় ছেলেদের অন্তত শতকরা আশি ভাগের। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই রেশিওটা আরো বেশি। যেসব স্টুডেন্টরা নিজ খরচে পড়াশোনা করে তাদের শতকরা কতভাগ পারিবারিক অভিভাবকত্বের নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত? আমার ধারণায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে এমন কোনো স্টুডেন্ট নাই, যার ফেমেলি-গার্ডিয়ান নাই। এই ধরনের ফেমিলি ডিপেন্ডেন্সি ছাত্রীদের অনেকখানি বেশি। এটি আমার লিভড এক্সপেরিয়েন্স বেইজড এসাম্পশান।
বোঝা গেল, ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে কী করবে বা না করবে সে ব্যাপারে তাদের অভিভাবকদের অভিমতের সাথে সমঝোতা করেই ছাত্র-ছাত্রীদের চলতে হয়। অত্যন্ত চলার কথা। প্রশ্ন হলো, সেটি কি তারা করে? টিচার-স্টুডেন্টদের কেউ কি মনে রাখে এক বুক আশা নিয়ে তাদের পরিবার তাদেরকে এখানে পাঠিয়েছে মূলত লেখাপড়া করার জন্য? (অধিকতর যোগ্য) মানুষ হওয়ার জন্য?
যে ধরনের চলাফেরা তাদের গার্ডিয়ানদের জ্ঞাতসারে করতে পারার কথা নয় তা স্টুডেন্টরা অবলীলায় এখানে দিনের পর দিন করতে থাকে। অবলীলায়, নিঃশঙ্কোচে, উইদাউট এনি গিলটি ফিলিং, বরং প্রাউডলি। নষ্টামির সামাজিক সম্মতি উৎপাদনের এই দায়ভার আসলে কার?
একটা উদাহরণ দিয়ে বলি। তাদের ছেলে বা মেয়েটা নিজ ডর্মে বা আবাসে মধ্যরাতের আগে ফিরবে না। এমনকি রাতে নাও ফিরতে পারে। কারণ তারা স্বাধীন, যথেষ্ট মেচিউরড। হলে, ছাত্রী হোস্টেলে বা কটেজে রেখে যাওয়া নিজ সন্তানটা সম্পর্কে ক’জন গার্ডিয়ান এমনটা ভাবেন? এ ধরনের ফ্রি লাইফস্টাইল ক’জন গার্ডিয়ান অনুমোদন করেন?
প্রমথ চৌধুরী তো বহু আগেই বলেছেন, ‘ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্হ্য নহে’। যে পাশ্চাত্য উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে অনুকরণ করে এ ধরনের অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতার দোহাই দেয়া হচ্ছে, তারা কিন্তু সপ্তাহান্তের দু’দিন ছুটির আগ পর্যন্ত সপ্তাহের পাঁচটি নিয়মিত কর্মদিবসে একেবারেই নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করে। ক্লাস ন’টায়, ঘুম থেকে উঠেছেন দশটায়, তাদের ক্ষেত্রে এমন কখনো ঘটে না। দেড় ঘণ্টা জার্নি করে ক্যাম্পাসে এসে ক্লাসে না গিয়ে স্টুডেন্টদের অন এন এভারেইজ এক তৃতীয়াংশ ঝুপড়িতে ঝুপড়িতে দুপুর পর্যন্ত আড্ডায় মেতে উঠে। গার্ডিয়ানরা এটি জানেন না। গণহারে নকল করে এসাইনমেন্ট দেয়ার সুযোগ পশ্চিমা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে না।
ক’দিন আগে Wayne State University’র একজন শিক্ষক আমাদের ডিপার্টমেন্টে এসেছিলেন। উনার বক্তব্য ইউটিউবে আমার একাডেমিক চ্যানেলে (যুক্তি ও জীবন) আছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ক্লাসে তিনি কোনো স্টুডেন্টের সাথে কোনো গেজেট থাকা এলাউ করেন না। একটা স্টুডেন্ট তার হাতে থাকা এপল ওয়াচের দিকে কয়েকবার তাকানোতে তিনি তার পরীক্ষা নিতে অস্বীকার করেন। শিক্ষক পরীক্ষা না নেওয়া মানে নির্ঘাৎ ক্রেডিট লস। রীতিমতো ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি। ওখানে এক্সট্রা-একাডেমিক বিবেচনায় কারো পার পেয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।
অবশ্য আমাদের এখানে শিক্ষকদের যে মান, তাতে করে স্টুডেন্টদের ব্যাপারে বেশি কিছু বলার সুযোগ কম। তৎসত্বেও আমার কথা হলো, শিক্ষকরা মানসম্পন্ন না হওয়ার কারণে স্টুডেন্টরা যাচ্ছেতাই করার অধিকার লাভ করতে পারে না। এর বিপরীতে, স্টুডেন্টরা ফাঁকিবাজ ও নিম্নমান হওয়ার কারণে ঠিকমতো ক্লাস না করার অধিকার শিক্ষকরা কোনোক্রমেই লাভ করতে পারেন না। সেভেনটি থ্রি এক্ট শিক্ষকদেরকে বিবেকসম্মত স্বাধীনতা দিয়েছে। দুঃখজনকভাবে, আমাদের বেশিরভাগ কলিগ এই স্বাধীনতার অপব্যবহার করে।
শিক্ষকরা আগে ঠিক হবে তারপরে স্টুডেন্টরা ঠিক হবে, অথবা স্টুডেন্টরা আগে ভালো হয়ে যাবে এরপর টিচাররা সিনসিয়ার হবে, এটি কোনো কাজের কথা নয়। বরং যার যার জায়গা হতে প্রত্যেককে দায়িত্বপরায়ণ হতে হবে। সতর্কীকরণে কাজ না হলে উভয়পক্ষকেই সমানতালে টাইট দিতে হবে। কে দিবে, তা আল্লাহ মালুম।
কয়েক বছর আগে শিক্ষকরা যখন বেতনবৃদ্ধির জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলো তখন আমি বেতনবৃদ্ধির দাবীর সাথে একাত্মতা প্রকাশের পাশাপাশি তাদের ফাঁকিবাজির বিরুদ্ধেও জোরালোভাবে কলম ধরেছিলাম। ছাঁচাছোলা স্টাইলে কথা বলার কারণে শিক্ষক কমিউনিটিতে আমি তখন যথেষ্ট নিন্দিত হয়েছিলাম। যারা আমার সম্পর্কে জানেন না তারা চবি ফিলসফি ডিপার্টমেন্টের অতীত বা বর্তমানের কারো কাছ হতে জেনে নিতে পারেন। আমার সেসব লেখা আমার সাইট হতে পড়ে নিতে পারেন।
সে যাই হোক, বলছিলাম ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখা না করে অবাধে সম্পর্কচর্চার কথা। তাদের গার্ডিয়ানরা ধারণাও করতে পারেন না তাদের পরিবারের সদস্যটি পড়ালেখার নামে আসলে এখানে কী করে বেড়াচ্ছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রেম করাটা স্টুডেন্টদের একটা প্রধান কাজ, কিছুদিন আগে এমন কথা শুনেছি খ্যাতিমান ইউটিউবার বুয়েটের শিক্ষক জনাব এনায়েত চৌধুরীর একটা ভিডিও বক্তব্যে।
অনেক মেয়েরা আমাকে বলেছে, তারা ট্রেনে আলাদা বগি চায়। হলে নিয়মকানুন ফলো করা হোক, সেটা চায়। আবাসিক ডর্মের ন্যূনতম মান বজায় রাখা হয় এমন হল বনাম ফ্রি স্টাইলে ছেলেমেয়েরা থাকতে পারবে আবাসিক হোটেলের মতো করে এমন হল, চাইলে যে কোনোটাতে নিজের ছেলে বা মেয়েকে রাখতে পারবেন, এমন একটা অপশন গার্ডিয়ানদের দেয়া হলে আমার ধারণায় ফ্রিস্টাইল ডর্ম বা আবাসনগুলো অলমোস্ট খালি পড়ে থাকবে।
সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী গ্রাম থেকে উঠে আসা এবং তারা মূলত নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর। আমি নিজেও এমন (ছিলাম)। যেভাবে এখানে ছেলেমেয়েরা ইনডিসিপ্লিন লাইফ মেনটেইন করে তা তাদের পারিবারিক মূল্যবোধ ও আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যের সাথে যায় না। কারা আমাদের ছেলেমেয়েদের মাথা নষ্ট করছে? সেকথা বললে এই বয়সে এসেও চাকরী নট হয়ে যেতে পারে। তারপরেও একটুখানি বলার লোভ সামলাতে পারছি না।
একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বড় অনুষ্ঠানে স্বয়ং ভিসি তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, স্মৃতি থেকে বলছি তাই শব্দ ও বাক্যগঠনগত কিছু ভুল হতে পারে, তিনি সগর্বে বলেছেন, “ইয়াং ছেলেমেয়েরা, তোমরা জোড়ায় জোড়ায় পাহাড়ের ভিতরে ঝোপ জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়ো। লাইফকে এনজয় করো। এখন তো তোমাদেরই সময়। তোমরা প্রেম করো। আমাদের সময়ে আমরাও করেছি। তবে লুকিয়ে করেছি। এখন তোমাদের লুকানোর কিছু নাই।” আপনাদের বিশ্বাস হচ্ছে না? ঠিক এমনটাই তিনি বলেছিলেন পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তম একটা সমাবেশে। তিনি ছিলেন অতিআত্মবিশ্বাসী ও তুলনামূলকভাবে সৎ, মানে তিনি হিপোক্রেট ছিলেন না। তাই সরলভাবে কথাগুলো বলে ফেলেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মানে সময়, অর্থ ও শিক্ষার বিপুল অপচয়ের মহোৎসবের জায়গা, এমনটাই ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মূলধারা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার ধারণায় ল্যাব-বেইজড স্টাডি হওয়ার কারণে সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতে স্টুডেন্ট সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। এর ফলে স্টুডেন্টরা টিচারদের টাচে থাকে। সেখানে শিক্ষক এবং ছাত্ররা লেখাপড়া করে বা করতে বাধ্য হয়। কমার্স ও সোশ্যাল সায়েন্সের কথা সঠিক বলতে পারছি না (একচুয়েলি সাহস করছি না)। আর্টস ফ্যাকাল্টির টিচার হিসেবে নিশ্চিত করে বলতে পারি, অধিকাংশ স্টুডেন্টদের সাথে এখানে বিশ্ববিদ্যালয় মানের লেখাপড়া বলতে যা বোঝায় তার দূরতম সম্পর্কও নাই। তবুও তারা পাশ করে। কীভাবে করে তা স্টুডেন্টরাই ভালো বলতে পারবে। আর্টস ফ্যাকাল্টির ছাত্র-ছাত্রীরাও ফ্রি স্টাইল, শিক্ষকরাও ফ্রি স্টাইল। আর্টস ফ্যাকাল্টি হলো ১০টা থেকে ১টা বিশ্ববিদ্যালয়। বেলা ১০টা হতে দুপুর ১টা, এই ৩ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সব সারতে হয়। এরপর বাদবাকী সময় অফুরন্ত অবসর তাদের। প্রায় সবার। পড়াশোনা করে এখানে ক্লাসে আসতে হয় না। ছাত্রদেরও না, শিক্ষকদেরও না। অনেক ডিপার্টমেন্টে ক্লাসই হয় না। প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাসে আসার তো কথাই নাই।
বাতাস যেমন উপরের দিকে ক্রমান্বয়ে হালকা হতে থাকে, তেমনি স্টুডেন্টরা যত উপরের দিকে উঠতে থাকে তাদের লেখাপড়ার মান গুণ ও পরিমানের দিক থেকে ততই কমতে থাকে। এ এক অদ্ভূৎ জায়গা। ‘উচ্চশিক্ষার’ এ এক বিশ্ববিশ্রুত বিষ্ময়কর পদ্ধতি। এতক্ষণে আপনি অংকটা মেলাতে পেরেছেন হয়তোবা, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কেন আপনি তা শুনেন যা শুনার জন্য আপনি মোটেও প্রস্তুত নন।
গত পরশু রাতে ‘চাই অ-প্রগতিশীল ছাত্রীদের জন্য অন্তত ১টা ছাত্রী হল’ এই শিরোনামে একটা লেখা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করার পর হতে অনেকেই, বিশেষ করে প্রগতিশীলতার মাদকে আসক্ত স্টুডেন্টরা, তাদের বিভিন্ন পেইজে আমাকে গালাগালি করছে, এমনটা শুনেছি।
আমি ফিলসফির মানুষ। ‘যুক্তির বাইরে কিছু নাই, বুদ্ধির অনুকূলে আমরা সর্বদা’ এটি আমার অন্যতম শ্লোগান। আগামীকালও কয়েকজন স্টুডেন্ট আমার সাথে কথা বলার জন্য আসবে। তারা আমার অপরিচিত। কিন্তু তাদেরকে আমি সময় দিয়েছি। এটি আমার অভ্যাস। চাইলে যে কেউ আমার সাথে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে যে কোনো স্থানে কথা বলতে পারেন। আমি আলাপ-আলোচনাকে সবসময়ে এনজয় করি. যদি তা তর্কে জেতার জন্য না হয়ে জানার জন্য হয়ে থাকে। ‘কথা বলতে দিতে হবে, চাই প্রশ্ন করার অধিকার’ এই ব্যানার আমার ফেইসবুক ওয়ালে টানিয়ে রেখেছি অন্তত একযুগ হতে।
আমি যা বলেছি, তা কেন বলেছি, ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি। আপনার কোনো সাবস্ট্যানশিয়াল কথা থাকলে আমি শুনতে আগ্রহী। এখানেও বলতে পারেন, সরাসরিও বলতে পারেন। শুভ রাত্রি।
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Md Ariful Islam: স্যার, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকে আমিও ‘ঐ স্রোতে’ গা ভাসানোদের দলেই ছিলাম। তবে আমার দুর্বলতা (কিংবা হতে পারে চালিকাশক্তি) ছিল — কখনও কপট আচরণ করতে পারতাম না। মানে কোনো পাপ কাজ হয়তো সবার সাথে সবার মত আমিও করতেছি। কিন্তু সেটা যে পাপ, এটুকু অন্তত স্বীকার করতাম; পাপটাকে ‘যুগের দোহাই’/‘পরিস্থিতির স্বীকার’/‘প্রগতিশীলতা’ এসবের আশ্রয়ে ‘হালালাইজেশন’ করার কোনো প্রয়াস ছিল না। ফলশ্রুতিতে, সবার ‘সঙ্গে’ থাকলেও চিন্তাজগতে একাকিত্বে ভুগতাম (ভুগতে হতো)। আর এভাবে বেশিদিন চলাও সম্ভব হয় না। আলহামদুলিল্লাহ! শুরু হয় ‘ঐ স্রোত’ থেকে বের হয়ে আসার কার্যক্রম।
ঐ যাপিত জীবনটুকু ‘অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ’ হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। তাতে করে যা বুঝেছি— আসলে আমরা যেটাকে ন্যায়-অন্যায় বিবেচনা করি এটা তারাও ভালোভাবেই জানে। কিন্তু মানে না বা মানতে চায় না কিংবা স্বীকারও করে না। কারণ মানলে বা স্বীকার করলে তাদের প্রবৃত্তির দাসত্বের পথে ‘কিন্তু’ চলে আসবে। সেটা তাদেরকে ঐ পথ থেকে বের হতে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করবে, সেজন্য তারা বিভিন্ন অজুহাত, তথাকথিত যুক্তি কিংবা কুযুক্তির আশ্রয়ে সেই চাপ প্রশমিত করে। এমন অনেকের সাথেই আলোচনা করেছি। তাদের ‘জানার ঘাটতি’ থেকে তারা এমনটা খুব কমই করে। বরং জেনেশুনেই এই অন্ধকারকে আলিঙ্গন করে। তাই তাদেরকে ‘জানানোর’ চেয়ে বরং মানানোর ‘কায়দাকানুন’ নিয়েই বিস্তর চিন্তাভাবনা করা উচিত।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: নৈতিকতার জ্ঞান সৌন্দর্যবোধের মতো। কোনো কিছু আমাদের সুন্দর লাগতেই পারে, কিন্তু এর মানে এই নয় যে উই গো ফর দ্যাট। নীতি-নৈতিকতার ব্যাপারটাও সেরকম। কোনো কিছুকে নৈতিক মনে করা মানে এই নয় যে সেটা আমার আচরণের মধ্যে রিফ্লেক্টেড হবে। এজন্য সামগ্রিক পরিবেশ এবং অনুকূল ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
Md Najim Uddin Bhuiyan: স্যার, অসাধারণ। আপনার ছাত্র হিসেবে একটা ছোট্ট বিষয় বলতে চাই। মানুষ (বাঙ্গালী) সাধারণত অল্প শ্রমে/পুঁজিতে অথবা বিনা শ্রমে/পুঁজিতে অধিক মুনাফা করতে চায়। এই ব্যবস্থা বন্ধ করতে পারলেই অন্যান্য অপকর্ম বন্ধ হতে পারে। যেমন, রাজনীতি। একটু লেবেল লাগাতে পারলেই যে কোনো পরীক্ষা পাশ, চাকুরি, ঠিকাদারি, ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি, জায়গা-জমি ইত্যাদি দখল এরকম হাজারো সুবিধা হাতের নাগালে চলে আসে। যার যার সাধ্য অনুযায়ী কাজ বেছে নিতে পারে। যদিও এসব লটারী সবাই পায় না, কিন্তু লটারী ধরার লোভ কেউ নিবারণ করতে পারে না, এমনকি জীবনও বাজী রাখতে পারে। আর একারণেই গুল্মলতাও নিজেকে মহীরূহ হিসেবে তুলে ধরতে পারে। ধন্যবাদ স্যার।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: লটারির উদাহরণটা চমৎকার হয়েছে।
Shamim Noor: It’s just robust, deep, and splendid, sir! However, I have got a secret observation as well as a bit of new information about the study patterns of the Arts faculty. Sir, if your observation is true, it would be better to have another piece of write-up on this issue. Why this is happening over there? And what are the root causes behind this in comparison to other faculties? Otherwise, some people might argue and claim this is a kind of single-axis analysis. Hope you got my point, sir!
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: you mean, to focus on the teachers’ side?
Shamim Noor: Sir, it could be from both teachers’ and students’ sides. Focusing on up-to-date literature sharing, numbers of classes, research interest and involvement, and students’ capabilities to adapt to this process.
Mohammed Shah Alam: একটি সুস্থ্ ও স্বাভাবিক রাষ্ট্রে জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও আচরিত সাধারণ মূল্যবোধকে (কমন ভ্যালুজ) ধারণ করে জাতীয় বা সাধারণ নীতিমালা গ্রহণ করে থাকে। স্বল্প সংখ্যক মানুষ ব্যতিক্রম বা নতুন কিছু ধারণ করতে পারে। সেটা সংখ্যারিষ্ঠ তথা সমাজের উপর আরোপ করতে পারে না। বাংলাদেশ একমাত্র ব্যতিক্রম, যেখানে মুষ্টিমেয়র মূল্যবোধ ও আচারকে সংখ্যাগরিষ্ঠের উপর আরোপ করার নীতি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও মিডিযার পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকে। এটা অস্বাভাবিক ও অসভ্য নীতি।
Shafiq Swapan: প্রগতিশীলতা শুধু একটি মতলববাজ গোষ্ঠীর যৌন জাগরণের জন্য নারীকে ভোগ্যপণ্য বানানোর নামই নয় বরং কলোনিয়াল সেবাদাসদের তৈরি একটি উগ্র ধর্মের নামও। যার প্রধান কালিমা হলো ইসলাম বিদ্বেষ ও নারীকে ভোগ্যপণ্য বানানো এবং প্রতিবন্ধী মার্কা শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ইতিহাস জাতির উপর চাপিয়ে জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া।
Shob Uz: The sad part is almost all public universities are the result of the donations made by wealthy Muslims. The taxpayers are 90% Muslims. But the public universities are the center of the Islamophobe and Hindutva ideas in Bangladesh.
Saifuddin Ahmed: দুঃখ লাগে এই ভেবে যে এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে কৃষক, মজুরের ঘামের টাকায়। আর এখানে চর্চা হয় এই কৃষিজীবি সমাজের মূল্যবোধকে পাশ কাটিয়ে গড়ে উঠা পাশ্চাত্য বিকৃতমনা সংস্কৃতির।