[ডিসক্লেইমার: ছাত্রদের হল নিয়ে কথা বলা যাবে না। কেন বলা যাবে না, তা বলতে গেলেও ‘চাকরী থাকবে না’।]

বেশ আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা সূর্যাস্ত আইনের বিরোধিতা করে আন্দোলন করছিল। অর্থাৎ সূর্যাস্তের পর পরই ছাত্রীদের হলে ফিরে আসার যে আইন, ছাত্রীরা সেটার বিরোধিতা করছিল। ঠিক ক’টায় তারা ফিরে আসার দাবী দিয়েছিল, বা সেখানে এখন কী অবস্থা তা আমি সঠিক জানি না।

শিক্ষকদের কারো কারো সাথে তখন আমি এ’ ধরনের কথাবার্তা বলেছিলাম— মেয়েদের আদৌ হলে ফিরে আসার দরকার কেন? বা ফিরে আসার কোনো নির্দিষ্ট টাইমটেবিল থাকার কি দরকার আছে? ছেলেদের, মেয়েদের আবাসিক হল আলাদা হওয়ার দরকার কী? ক্লাস তো তারা একসাথেই করে। ছেলে-মেয়েরা একই হলের আলাদা ফ্লোরে বা একসাথে থাকতে অসুবিধা কী?

ঠিক কোন জায়গায় আমরা ন্যায়-অন্যায়ের সীমারেখা টানতে পারি? আদৌ কি কোনো সীমারেখা থাকার দরকার আছে? কীসের ভিত্তিতে আপনি বলবেন, ‘চার আনা’ ঠিক আছে, ‘ছয় আনা’তে যাওয়া যাবে না? সমাজ ও সংস্কৃতি? ধর্মীয় মূল্যবোধ? অথবা ….?

নৈতিকতার ভিত্তি ও সীমা নিয়ে আপনি যা-ই বলেন বা ভাবেন না কেন, এর সবকিছুই তো পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনশীলতার কারণে অনেকে ভুল করে বলে বসে, নৈতিকতার কোনো বস্তুনিষ্ঠ ভিত্তি নাই। এটি সত্য, কিছু কিছু বস্তুনিষ্ঠতাকে আমরা কনস্ট্যান্ট হিসেবে পেলেও আমাদের আচরিত সব নৈতিক মানদণ্ডকে আমরা ধ্রুব হিসেবে পাই না। কিছু কিছু বস্তুনিষ্ঠতাকে আমরা একটা মাত্রার মধ্যে পাই। কথাটাকে ইংরেজীতে বললে এভাবে বলা যায়, multiplicity or indeterminacy of anything doesn’t mean that that thing doesn’t exists at all or it has no determinate feature.

বিতর্কিত ইস্যুতে কেউ হতে পারে রক্ষণশীলতাকে উল্টে দিতে চান। দেখবেন, তিনিই কিনা একটা মাত্রার বাইরে ওপেন বা প্রগতিশীল হতে চান না। কথার কথা ‘আট আনা’কে যে কিনা স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন, তিনিই দেখবেন সেই ‘আট আনা’কে যারা ‘বারো আনা’ পর্যন্ত নিয়ে যেতে যারা চান তাদের ঘোরতর বিরোধিতা করেন। কেন করেন, তা তিনিও জানেন না।

নৈতিকতার এই বিতর্কে কোনো ধরনের আইনী সূত্রের, তা হোক ধর্মের বা দেশের, কোনো গুরুত্ব নাই। এর মানে এই নয় যে ধর্মীয় কিংবা দেশজ আইনের কোনো গুরুত্ব নাই। বরং যখন আমরা কোনো প্লুরালিস্টিক (বলাবাহুল্য, সমাজ মাত্রই মাত্রাভেদে প্লুরালিস্টিক হতে বাধ্য) সমাজের প্রেক্ষাপটে কোনো আচরণের শুদ্ধতা বা ভ্রান্তি নিয়ে কথা বলবো, তখন আমাদেরকে ওই সমাজ কর্তৃক tacitly agreed মোরাল স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে কথা বলতে হবে। মেজরিটি ওপিনিয়ন বা মেজর স্টেকহোল্ডারদের ইন্টারেস্ট ও কনসার্নকে গ্রাহ্য করতে হবে। এ বিষয়ে আমার পার্সোনাল সাইটে ‘নৈতিকতার শূন্য মানদণ্ড নীতি’ শিরোনামের আর্টিকেলটিতে আরো ডিটেইলস আলোচনা পাবেন। পড়তে পারেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা রাতের পরে হলের বাইরে ঘোরাফিরা করতে পারবে কিনা সেই ইস্যুতে আমার কিছু কথা বলার জন্য আজকের এই লেখা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি আছি ১৯৮২ সালে মেট্রিক পরীক্ষার পর হতে। চবি কলেজে পড়ি উচ্চমাধ্যমিক, চবি’র আবাসিক ছাত্র ছিলাম স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে। পাশ করার পরপরই শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে দক্ষিণ ক্যাম্পাসে বসবাস করছি প্রায় তিন দশক।

ছেলে-মেয়েরা পরস্পর ঘেঁষাঘেঁষি করে, হাত ধরাধরি করে, পরস্পর ফ্লার্টিং করতে করতে আমাদের বাসার সামনে দিয়ে যায় নিত্যদিন (এবং রাত্রিতে)। এখন আর কিছু বলি না। কখনো কাউকে কাউকে বলেছি, এমন ভাষায়, ‘দেখো, তোমার বাবা-মা কি এ ধরনের দৃশ্য দেখতে প্রস্তুত?’ অথবা, ‘তোমরা কি স্বামী-স্ত্রী?’ ‘তোমরা কি ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য কোনো নির্জন জায়গা খুঁজে পাচ্ছ না?’ খুব কম ক্ষেত্রেই আমি বা আমার স্ত্রী তাদের কাছ হতে সম্মানজনক রেসপন্স পেয়েছি।

দক্ষিণ ক্যাম্পাস মসজিদের সাথে লাগোয় ৯নং বাসার সামনে ফার্স্ট ইয়ারের একজন স্টুডেন্ট আমাকে বলেছিলো, ‍“আপনাদের উচিত অভ্যস্ত হওয়া।” ওকে, আমরা তোমাদের রং-ঢং, ভদ্র ভাষায় বললে ফ্লার্টিংয়ে অভ্যস্ত হলাম। তৎসাথে কিসিং এবং হাগিং-এ নয় কেন? এভাবে, ওই যে বললাম আনার হিসাব, সেভাবে আপনারা বুঝে নেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দিনরাতের যে কোনো সময়ে যে কেউ নিরাপদে চলাচল করবে। এটা দাবী করার কিছু নয়। এমনটাই হওয়া উচিত। যে কারো একজন নাগরিক হিসেবে দেশের যে কোনো জায়গায় ভ্রমণের অধিকার আছে বা থাকা উচিত। এর ভিত্তিতে কেউ কি বলবেন, ‘দেশের কোনো এলাকা কারো জন্য সংরক্ষিত থাকা উচিত নয়?’ প্রবেশের ব্যাপারে যদি সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু থাকতে পারে, তাহলে নির্গমনেও তো (আইনসম্মত) বাধা থাকার কথা। সেটা ক্লাস হোক, হল হোক বা অন্য কোনো এরিয়া।

প্রয়োজনে কোথাও যাওয়া বা চলাচলের রীতিসম্মত অধিকার থাকা এক কথা, আর রাতবিরাতে ছেলে-মেয়েদের অবাধ ‘বন্ধুত্বচর্চা’ আরেক কথা। আমার ইচ্ছা হলেই কি নিজ বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে আমি খেলার মাঠে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য পাহাড়ের চিপায়-চুপায়, ট্রেন স্টেশনের ধারে কাছে মধ্যরাতে শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখা, গল্প করা অথবা আমাদের পারস্পরিক সম্মতিতে যা যা করতে মন চায় তা সব করতে পারবো?

সম্পর্ক করার ক্ষেত্রে ‘পারস্পরিক সম্মতিই যথেষ্ট’ এমন কথার মাধ্যমে সমাজ নামক একটা প্রতিষ্ঠানকে অস্বীকার করার চেষ্টা করা হয়। অথচ মানুষ মানুষ হয়েছে, এমনতর একটা সভ্যতা গড়ে তুলতে পেরেছে সামাজিক চুক্তির কারণে। এমনকি বানর প্রজাতিতেও ব্যক্তির চেয়ে সমাজের গুরুত্ব অধিকতর।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এত হাজার হাজার ইয়াং পিপল কেন এসেছে? অন্তত আর্টস আর সোশ্যাল সায়েন্সের স্টুডেন্টদের দেখে বুঝা যায় না যে তারা এখানে বিশেষ কঠিনতর কিছু অর্জন করতে এসেছে। শতকরা ৯৫ ভাগ স্টুডেন্ট কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই ক্লাসে আসে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গড়ে দৈনিক ২৪ মিনিটও পড়ালেখা করে না।

সিগনিফিকেন্ট নাম্বার অব স্টুডেন্টস পরীক্ষার গ্যাপে গ্যাপে পড়ে অন্তত মধ্যমানের ফলাফল নিয়ে পাশ করে। এক-তৃতীয়াংশ স্টুডেন্ট আদৌ কোনো ক্লাস করে না। (কীভাবে পাশ করে? সে ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না। বললে ‘চাকরী থাকবে না’।) এক তৃতীয়াংশ স্টুডেন্ট মাঝে মাঝে ক্লাস করে। আর এক তৃতীয়াংশ ‘বেকার’ পোলাপান আছে, যারা নিয়মিত ক্লাস করে।

এই অবস্থা চলছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছেরর পর বছর, দশকের পর দশক। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবই চলে। যে কোনো অজুহাতে যা প্রথমেই বাদ যায়, তা হলো ক্লাস। শিক্ষকরা ব্যস্ত পার্টি-পলিটিক্স, হান্টিং ফর অপরচুনিটিজ ও বিচিত্র রকমের ধান্ধাবাজীতে। স্টুডেন্টরা ব্যস্ত সম্ভাব্য সকল উপায়ে যৌবনের উত্তাপ বিনিময়ে। পড়ালেখা দূর ছাই, মৌজ মাস্তিটাই বড় কথা।

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র করে একটা যৌন বিপ্লবের প্রথম ধাপ ইতোমধ্যে যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়ে গেছে তা বাইরে থেকে অনেকেই ঠিক বুঝতে পারছেন না। সূর্যাস্ত আইন তো গেছে। রাত ১০টাও থাকবে না। কোনো ‘টা’ই থাকবে না। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্বের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এখানে জায়গায় জায়গায় কনডমের ভেন্ডিং মেশিন বসানোর দাবী উঠাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

করোনার অজুহাতে স্টুডেন্টদের হল বন্ধ রাখার কারণে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে এখন ছাত্র-ছাত্রীরা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। একই বিল্ডিংয়ের পাশাপাশি ফ্ল্যাটে ছেলেরা আর মেয়েরা ‘আলাদাভাবে’ থাকে। অথচ, মাত্র ক’বছর আগেও স্টুডেন্ট ভাড়া দিলে বাড়ীওয়ালাকে উত্তরা ও পাহাড়িকা আবাসিক এলাকার কমিটি হতে বাধা দেয়া হতো।

‘এ পাশ + ও পাশ = পাশ’। ফটোকপি মেশিন বা ডিপার্টমেন্টের একপাশ দিয়ে প্রবেশ করলে সময়ের ব্যবধানে সেই স্টুডেন্ট পাশ করেই বের হবে। ফেল করে আউট হওয়ার কোনো প্রভিশান এখানে নাই। বারম্বার ফেল করে ‘বিশেষ পরীক্ষা’ দেয়াটা এখানে খুব কমন প্র্যাকটিস।

এক দশক আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো একটা রাজনৈতিক দলের প্রাধান্য থাকলেও সব দলের তৎপরতা চোখ পড়তো। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো স্টুডেন্ট পলিটিক্সই নাই। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু প্রগতিশীল ধারার সীমিত পর্যায়ের কিছু সাংস্কৃতিক তৎপরতা দেখা গেলেও ‘অন্যকারোর’ কোনো ধরনের পলিটিকেল-কালচারাল-রিলিজিয়াস কোনো তৎপরতা এখানে দৃশ্যমান নয়। এটি আনপ্রিসিডেন্টেড।

সংস্কৃতির নামে এখানে যা চর্চিত হয় তার বৃহৎ অংশই কোনো না কোনো ক্যাটেগরির ‘কাছে আসার গল্প’। একজন প্রবীণ শিক্ষক হিসেবে এসব ‘গল্পের’ গভীরে যাওয়ার সুযোগ না থাকলেও একজন সমাজকর্মী হিসেবে যথাসম্ভব চোখ-কান খোলা রেখে জমানার হাল-হাকিকত বুঝার চেষ্টা করি। তা সব বলার সময় ও সুযোগ এখানে নাই।

শুধু এ’টুকু বলি, স্টুডেন্টদের চলমান আন্দোলন আমার উপলব্ধিতে ‘গরু মেরে জুতা দান’ প্রক্রিয়া ছাড়া আর কিছু নয়। সরকারবিরোধী পক্ষ এটাকে রাজনৈতিক স্বার্থে সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে। প্রগতিশীল পক্ষ এই ইস্যুটাকে কাজে লাগাচ্ছে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য। এসব আমার অনুমান।

কেউ বলতে পারেন, আন্দোলন করছে ‘সাধারণ’ ছাত্রছাত্রীরা। কিছু সাধারণ ছাত্রছাত্রী নানা কারণে এনগেইজ হলেও হলফ করে বলতে পারি, কোনো গণআন্দোলনই বিশেষ বিশেষ মহলের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা ছাড়া আউট অব দ্যা ব্লু গড়ে উঠেনি বা পরিচালিত হয়নি। সফলতা বা ব্যর্থতা তো পরের কথা। এটি এতটাই অবভিয়াস যে এর জন্য কোনো উদাহরণ টানারও প্রয়োজন নাই।

হ্যাঁ, ছাত্রছাত্রীদের সাথে আমিও একমত, ‘নিরাপত্তা চাই’। তবে কীসের নিরাপত্তা চাইতে হবে বা চাইবো, সেটা বিবেচনাসাপেক্ষ। ছেলেমেয়েরা যত্রতত্র যখন তখন তাদের খেয়াল খুশি মোতাবেক যে কোনো মাত্রায় সম্পর্কচর্চা করার নিরুপদ্রপ অধিকার, প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা চাইবে, তা আমি কোনোক্রমেই সমর্থন করতে পারি না। আমার মেয়ে এখান থেকে সদ্য মাস্টার্স করেছে। ওর জন্য যা আমি ভালো মনে করি না, তা অন্য কারো জন্যও করবো না, এটি কি খুব প্রতিক্রিয়াশীলতার কথা?

ছাত্রছাত্রীরা ছাত্রীনির্যাতনের বিষয়ে জাস্টিস চায়। তারা কতটুকু কী জাস্টিস পাবে, তা আমি জানি না। যৌন নির্যাতনে তারা ফুঁসে উঠেছে। উঠাই উচিত। কিন্তু আর কোনোকিছুতে কিছুতেই তাদের কোনো হুঁশ কেন হয় না, বিশ্ববিদ্যালয়ের শত-সহস্র অনিয়মে কেন তারা অফেন্ডেড ও এগ্রেসিভ হয় না, তা আমি বুঝতে পারি না।

অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যৌন স্বাধীনতা যেখানে যত বাড়ে, যৌন নির্যাতনও সেখানে সমান তালে পাল্লা দিয়ে ততই বাড়ে; আইন সেখানে যতই কঠোর থেকে কঠোরতর করা হোক না কেন। অবাধ যৌন স্বাধীনতার লাগাম টেনে ধরা ছাড়া যৌন নির্যাতন রোধ করা অসম্ভব। দেশ দুনিয়ার যে কোনো জায়গার যে কোনো উদাহরণের মাধ্যমে আপনি এটি সহজেই বুঝে নিতে পারবেন।

মূল্যবোধের সমর্থন ছাড়া নিছক আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে কোনো অপরাধই দমন করা সম্ভব হতে পারে না। অংকের নিয়মের মতো এটি সত্যি। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা ছিল মূল্যবোধ চর্চার জায়গা। তা না হয়ে এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্য নতুন আইন ও অকাতরে সেসব ভায়োলেট করা বা সেগুলোর টার্গেটেড (অপ)ব্যবহারের উর্বর ক্ষেত্র।

জানি না মান সম্মান নিয়ে অবশিষ্ট এক দশক (যদি বেঁচে থাকি) চাকরী করে যেতে পারবো কিনা।

এখানে মানে চবি’তে সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা হল থাকতে পারলে ৪টা ছাত্রী হলের মধ্যে অন্তত ১টা হল এমন কি থাকতে পারে না, যেটাতে জোড়ায় জোড়ায় প্রেমিক-প্রেমিকাদের মান-অভিমান ও সোহাগ চর্চা দেখতে হওয়া ছাড়াই গার্ডিয়ানরা এসে মেয়ের সাথে বা বোনের সাথে দেখা করে যেতে পারবে? বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেনের ১০টা বগির অন্তত একটা কি শুধু ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত করা যায় না?

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীলতার অবাধ চর্চা হতে পারে, হচ্ছে, হোক। কিন্তু কেউ যদি এখানে প্রগতিশীলদের দৃষ্টিতে যথেষ্ট প্রগতিশীল হতে না পারে, কেউ যদি এখানে রক্ষণশীল মূল্যবোধ চর্চা করতে চায়, তাকে কেন কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হবে? বিশ্ববিদ্যালয় কি শুধু প্রগতিশীলতার জায়গা? সনাতনী মূল্যবোধে বিশ্বাসী হিসেবে কেন আমি এখানে প্রতিনিয়ত সাফোকেটেড ফিল করছি?

কেন আমি এই যৌন নির্যাতনবিরোধী এই আন্দোলনকে সমর্থনও করতে পারছি না, বিরোধিতাও করতে পারছি না? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কেন এখানে বিবেক-বুদ্ধি মোতাবেক কথা বলার স্বাধীনতা নাই? বিশ্ববিদ্যালয়ে আদৌ কি কোনো রাজনীতি আছে? আদৌ কি এখানে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক গণপরিসর বা পাবলিক ইন্টেলেকচুয়েলিটির কোনো স্পেস আছে? আর কত তলানীতে আমরা যেতে পারি?

একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যু দেখতে দেখতে আমি আজ রীতিমতো আতঙ্কিত। আরো অনেক কথা বলতে চেয়েছিলাম, খুব সংক্ষেপে হলেও বলা যেত, হয়তোবা। কিন্তু, ওই যে বললাম, বেঁচে থাকলে আরো ১০ বছর চাকরীটা কনটিনিউ করে স্বাভাবিক পন্থায় অবসরে যাওয়ার প্রলোভনটা দমন করতে পারছি না। তাই, থামছি।

এতটুকু যদি আপনি লেখাটা একটানা পড়ে থাকেন, তাহলে আমার লেখার মান যা-ই হোক, আপনি যে অত্যন্ত উঁচু মানের একজন ধৈর্যশীল পাঠক, তা নিশ্চিত। আপনাকে অভিনন্দন।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Akib Jabed: আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিলাম। শুধু নামাজ পড়তাম দেখে শিবির, জঙ্গি ইত্যাদি ট্যাগ খেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় নাকি মুক্ত বুদ্ধির জায়গা, এটা যখন কেউ আমার সামনে বলে তখন এত ঘেন্না হয়!

ANik Abdullah: শাটলে ছাত্রীদের জন্য আলাদা বগির আলাপ কিছুদিন আগে চবির একটা ফেসবুক গ্রুপে উঠেছিল। সেখানে কতিপয় ভাইদের সাথে খোদ অনেক বোনও এর তীব্র বিরোধিতা আর হাস্যরস করেছিল।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ওই যে আমার লেখায় বলেছি সফট রেভুলেশন, সেটা অলরেডি ঘটে গেছে। সেজন্যে যা স্বাভাবিক তা অনেকের কাছে অস্বাভাবিক বলে মনে হয় এবং যা অস্বাভাবিক সেটাকেই তারা স্বাভাবিক মনে করছে। সেক্স ড্রাগের প্রভাবে এখানে অনেকের রুচির পরিবর্তন ঘটেছে।

Lucky Bin Siddique: আমি কমেন্ট করায় আমার বন্ধুই হা হা দিছে কেন ১০টার আগে হলে ঢোকার বিষয়ে সহমত ছিলাম।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এই ধরনের অ্যাডভার্স কমেন্ট বা রিএকশনগুলো প্রমাণ করে যে আমার কথাই সঠিক। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন বিপ্লবের প্রথম ধাপ অলরেডি সম্পন্ন হয়ে গেছে।

নূরে এলাহী শাফাত: ‌‘অপ্রগতিশীল’ ছাত্রী পরিচয় প্রাতিষ্ঠানিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ইসলামোফোবিয়ার সময়ে আরো গভীর খাদ তৈরি করবে। তখন অন্যান্য ছাত্রী হলগুলো পরিচিত হবে ‌‘প্রগতিশীল, আধুনিক, মুক্তচিন্তা’র হল হিসেবে। যেহেতু প্রগতিশীলতার মানদণ্ড নির্ণয় করে লিবারেল অথোরিটি, আরো স্পষ্ট করে বললে বর্ণবাদী বাঙ্গালি জাতিবাদ।

সুতরাং এ কনটেক্সে ‌‘অ-প্রগতিশীলতা’ বাছাই করা, লিবারাল ফিলোসোফি-পলিটিক্সের ইন্ধন/অনুবর্তী হওয়া। যেহেতু ‌‘অ-প্রগতিশীল’ ডেফিনেশনটা ‌‘সাম্প্রদায়িক’ পরিচয়ের সাথে সম্পর্কিত। এতে ‌‘অ-প্রগতিশীল’ স্টুডেন্টরা বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিকভাবে আরো দুর্বল হতে থাকবে। এখানেই ওয়াইজ কনশাসনেসের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। তাই জ্ঞানগত সক্রিয়তার সাথে কর্মযোগ জড়িত হওয়ার প্রশ্নেই সমাজ, বুদ্ধিবৃত্তি ও রাজনীতিতে এসোসিয়েশন, প্রতিষ্ঠান নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়ে! আর এই কাজ কেবল পলিটিকাল মুভমেন্ট বা বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব বা সোসাল মুভমেন্টের ভেতর দিয়ে সাধিত হবে না, অপূর্ণাঙ্গ থেকে যাবে, এবং অবশিষ্ট ন্যায় ও বিবেকের অস্তিত্ব ক্ষয় হতে থাকবে। তাই প্রত্যেক ডোমেইনে দরকার যুগপৎ কনশাস ও ইউনিফাইড মুভ।

فخر جهان: পুরো লিখাটা গভীর মনোযোগ দিয়ে একটানা পড়ে শেষ করলাম। আমাদের প্রজন্ম চারপাশ এমন দেখে বড় হয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা ছাত্রছাত্রী মানে মুক্তমনা হতে হবে। এখানে ধর্মের কথা বলা বেমানান, নৈতিকতা ব্যাকডেটেড!!

যেকোনো সমস্যাকে বুঝতে হলে তার ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলতে হবে। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অত্যন্ত সিরিয়াস ডিপার্টমেন্টের একজন অত্যন্ত সিরিয়াস স্টুডেন্ট ছিলাম যে কিনা সকাল ৮টার ট্রেনে গিয়ে টানা ক্লাস করে আবার তাড়াহুড়োয় ট্রেনে করে বাসায় ফিরতাম। আমার ছোটবোনও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য ডিপার্টমেন্টে পড়ে। যৌনস্বাধীনতা যারা চায় তাদের জন্য বলি, আমি আমার বোনের সাথে কিছুদিন ট্রেনে আসা-যাওয়া করলাম যখন সে ফ্রেশার ছিল। মুক্ত পরিবেশে এসে আমাদের মনমগজ মুক্ত হয়ে গেলেও ছোটবোনের সাথে বসে সামনা-সামনি নিজের ক্লাসের বন্ধু-বান্ধবীর অবাধ যৌনতা দেখাটা আমার জন্য এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা ছিল। চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া বাধা দেওয়ার উপায় ছিল না, কারণ রাইট নেই!!! এটা অনেকগুলো অভিজ্ঞতার একটা অংশমাত্র। ফলস্বরূপ অনুজ ধরে নিয়েছে এটা মনে হয় খুব সাধারণ কাজ!!

শেষবেলায় খালেদা জিয়া হলে থাকতে হয়েছে প্রায় ৬ মাস। অভিজ্ঞতা হলো হলের গেইট দিয়ে প্রবেশ করা মানে নিজেকে নিরাপদ লাগতো। এছাড়া গেইটের বাইরে, হলের রাস্তায়, অথবা টিচার্স কোয়ার্টারের ওদিকে এত বেশি মেলামেশা থাকতো যে ওদিকে হাটলেও নিজের কাছে লজ্জা লাগতো।

এবার আসি, বাকিদের কথায়। আমার হিন্দুধর্মের সহপাঠীরাও ছিল, ব্যাপারগুলো নিয়ে যে তাদের সমস্যা হতো না তা কিন্তু নয়। তারাও এসব অবাধ যৌনতার বিরোধী ছিল। কারণ তাদের পারিবারিক শিক্ষা ছিল, নৈতিকতা ছিল।

আমার একজন বান্ধবী প্রীতিলতা হলে থাকে, তাকে টিউশন করে চলতে হয়। দিনের বেলা ক্লাস থাকায় তাকে শহরে টিউশনে যেতে হয় দুপুরের পর। আর ফিরতে রাত ৮.৩০টার ট্রেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে ভয় লাগে কিনা রাতে ফিরতে। সে উত্তর দিয়েছিল, ‍“বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী টিউশন থেকে ফিরে তাই সমস্যা হয় না, তবে প্রতি বগিতেই কয়েকজোড়া থাকে যাদের স্বাধীনতা (!) বাকিদেরকে স্বাধীনভাবে বসতে দেয় না।

বয়সটাই যৌনতার, শিক্ষাব্যবস্থা বলা হোক আর সমাজব্যবস্থা, যার দোহাই দিয়ে এই বয়সটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনায় কাটানোর ব্যবস্থা করা হয়। অন্যদিকে মৌজ-মাস্তির সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। ছেলেমেয়েরা দুদিকের টাল সামলাতে না পেরে যেকোনো একদিকে হেলে পড়ে। ফুর্তি করাটাই যেহেতু বেশি সহজসাধ্য এবং বয়সের চাহিদা, সুতরাং সেদিকের দল ভারী বেশি।

সহশিক্ষাকে যেসব আলিমরা নাজায়েয বলেন, তার পিছনে একটাই অন্যতম কারণ থাকে– অবাধ মেলামেশা (স্রেফ বন্ধুত্ব!!) যা পরবর্তীতে অবাধ যৌনতাতে পরিবর্তিত হয়ে যায়।

আমার পরিবার, বাবা আমাদের শিক্ষা নিয়ে কতটা সচেতন ছিলেন তা এককথায় বলে বুঝানো সম্ভব নয়। শুধুমাত্র এই সহশিক্ষা (অবাধ মেলামেশা) থেকে বাঁচার জন্য আমি অনার্সের পর আর কন্টিনিউ করছি না। করলেও অন্তত এখানে আর নয়।

আমার বাবার কষ্ট আমাকে পীড়া দেয়। কিন্তু আমার বাবা যদি এমন পরিবেশ নিজে দেখতো তাহলে হয়তো ভুলেও আমাকে পাঠাতো না এমন পরিবেশে। আমার ক্লাসের অন্তত ৫/৬ জন ছাত্রী আমার মতো এখানে আর কন্টিনিউ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুনেছি ছেলেদের কয়েকজনও একই কাজ করেছে। এবং ভবিষ্যতে নিজেদের অনুজ বা পরবর্তী প্রজন্মকে এখানে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যতদিন না আলাদা ব্যবস্থা করা হয়।

পরিশেষে, মেয়েদের জন্য আলাদা হল, আলাদা বগি, আলাদা শিফট, আলাদা ক্লাস এখন সময়ের দাবী।। নয়তো এভাবে অনেক মেয়ের পড়াশোনার স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই, অবাধ যৌনতামুক্ত। সবাই নিরাপদ থাকুক, ছেলেরা ছেলেদের জায়গায় আর মেয়েরা মেয়েদের জায়গায়।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এত সুন্দর তথ্য নির্ভর এবং বিশ্লেষণধর্মী লেখা মন্তব্য হিসেবে দেয়ার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

Lubna Jahan: فخر جهان, তোর কথার সাথে আমি অবশ্যই একমত। কোনো এক ঢিলা-ঢালা ডিপার্টমেন্টে পড়ি বলে আমাকে হয়তো রোজ রোজ ৮টার ট্রেন ধরতে হয়না। তাই প্রতিদিন ট্রেনে বা ক্যাম্পাসে তথাকথিত জাস্টফ্রেন্ডদের এমন দৃষ্টিকটু দৃশ্য গুলোর সম্মুখীনও হতে হয়না। তবে এখানে ভর্তি হওয়ার পর, অরিয়েন্টেশনের দিন প্রোগ্রাম শেষে ২:৩০টার ট্রেনে বাসায় ফিরছিলাম একা। যেহেতু প্রথম দিন, তাই তখন আমার কোনো ফ্রেন্ড হয়নি। ট্রেনের মধ্যে কয়েকজন ভাইয়া আপুরা মিলে খুব জোরে-সোরে এডাল্ট কথাবার্তা বলছিলো। কথাগুলো আমার কানে আসাতে প্রচন্ড লজ্জা+অসহ্য লাগছিলো। মনে মনে ভাবছিলাম, ছিঃ! এরা বন্ধু-বান্ধব সব একসাথে এত নোংরা কথা বলছে কীভাবে! এরা নাকি আবার ভার্সিটির স্টুডেন্ট। এরপর থেকে ফার্স্ট ইয়ারে রেগুলার ক্লাস করতে করতে, এরচেয়েও তেতো অভিজ্ঞতাগুলো গা সয়ে গেছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে নিজেকে এসব থেকে দূরে রাখতে পেরেছি।

আমি অবশ্যই এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক সেটাই চাই। তবে, আমার মতো অনেকের কাছেই এই পরিবেশটা যখন সহনীয় হয়ে যায়, তখন আজকের এই ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে। নৈতিকতার ছিটেফোঁটাও যেখানে নাই সেখানে এসব ঘটনা ঘটবেনা এটা ভাবাই বরং বোকামী। স্যারের কথার সাথে আমার বলতে ইচ্ছে করছে, ‍“সংস্কৃতির নামে এখানে যা চর্চিত হয়, তা কোনো না কোনো বিশেষ ক্যাটাগরির ‌‘কাছে আসার গল্প’। ‘নিরাপত্তা চাই’। তবে কীসের নিরাপত্তা চাইতে হবে বা চাইবো, সেটা বিবেচনাসাপেক্ষ। ছেলেমেয়েরা যত্রতত্র যখন তখন তাদের খেয়াল খুশি মোতাবেক যে কোনো মাত্রায় সম্পর্কচর্চা করার নিরুপদ্রপ অধিকার, প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা চাইবে, তা আমি কোনোক্রমেই সমর্থন করতে পারি না।”

আরেকটা কথা ছেলে-মেয়ের আলাদা ক্লাসরুম, ট্রেনে আলাদা বগী, ক্যাম্পাসে অবাধ মেলামেশা বন্ধ এগুলোও আমার কাছে অলীক স্বপ্ন মনে হয়।

فخر جهان: Lubna Jahan, অনেক অলীক স্বপ্নও ইতোপূর্বে বাস্তবায়িত হয়েছে কারণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা দিয়েছিল। আর এটা সম্ভব যদি স্যারদের মত শিক্ষিত সচেতন মানুষেরা এটা নিয়ে কথা বলেন। খুব ভালো লাগলো এরকম একটা লিখা পেয়ে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: Lubna Jahan, খুব ভালো বলেছ। অনেক ধন্যবাদ।

Puspita: এধরনের কয়েকলাইনের একটি কথা আপনাদের একজন অধ্যাপকের পোস্টে মন্তব্য আকারে লিখার পর মন্তব্য মুছে দিয়ে তিনি ব্লক করে দিয়েছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখিও করেন তিনি।

Ahmad Hasan: স্যার, আমি একবার একটা জায়গায় বলেছিলাম ‍“বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি জায়গা যেখানে যাবতীয় অবৈধ কাজের বৈধতা পাওয়া যায়।” তোপের মুখেও পড়েছিলাম কথাটা বলে। আপনার লিখাটাকে যদি আমি একবাক্যে সারসংক্ষেপ করি তাই অর্থ দাঁড়ায় বলে মনে হচ্ছে (আমার দৃষ্টিতে)। কারণ মাদকের ব্যবহার, মারামারি, যৌন নিপীড়ন ইত্যাদি তো অহরহ ঘটছে বলে শোনা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে শাস্তি পাওয়ার হিসেব নগন্যই দেখা যায়। এই বিষয়গুলো আজ ছোট রোগ থেকে ক্যান্সারে রূপ নিয়েছে মাত্র। আর সিগারেটটা তো ট্রেন্ড অ্যান্ড ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে। এটা হাতে না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে ধরা যায় না। এতদসত্ত্বেও বাই প্রোডাক্ট হিসেবে বৈধ কাজ পড়াশোনা করা যায়। তবে তার জন্য অনেক স্ট্রাগল করতে হয়। লাইব্রেরীতে বই নিয়ে যাওয়া যাবে না, বই ইস্যু করতে দরখাস্ত দাও, এই সুবিধা পেতে লিখিত দাও ইত্যাদি।

অবাধ মেলামেশার ব্যাপারে যা বললেন সেই বিষয়ের ভিক্টিম আমি নিজেই। ভিক্টিম বলছি এই কারণে, বাবা এবং আমার মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের সামনে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম চাকসুতে নিয়ে। ভগ্যিস ওনারাও চবিতে পড়াশোনা করা মানুষ ছিলেন।

আপনার সাথে প্রায় ক্লাসে কিংবা ক্লাসের বাইরে দেখা হয়, কথা বলারও যথেষ্ট সুযোগ হয়, তবুও মনে হলো দু’বাক্য লিখি। কারণ আমার মনের চাপা কথাগুলোর অনেকদিক এই লিখায় প্রকাশিত।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ভিকটিম এবং ভিকটিম পক্ষের কাছে এই আন্দোলন হচ্ছে ন্যায়বিচার পাওয়ার আন্দোলন, রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষের কাছে এই আন্দোলন হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলকে একহাত নেওয়ার একটা চান্স, আবার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিরোধী পক্ষের কাছে এই আন্দোলন হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপকে সাইজ করার একটা সুযোগ, এবং প্রগতিশীলদের কাছে এই আন্দোলন হচ্ছে তাদের প্রগতিশীলতার সীমারেখাকে আরো খানিকটা বাড়িয়ে নেওয়া, এবং তাদের দৃষ্টিতে ভাল কাজ, যেগুলো অনেকের দৃষ্টিতে খারাপ কাজ, সেগুলোকে সামাজিকভাবে বৈধ এবং সহনীয় হিসেবে এস্টাবলিশ করা।

Ahmad Hasan: বাস্তবিক পক্ষে এটাই হচ্ছে। এসবের পাহাড়ে চাপা পড়ে ভিক্টিম যেন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকটাই প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।

অর্বাচিন আব্দুল্যাহ: আপনি বলেছেন, করোনার সময় থেকে দক্ষিণ ক্যাম্পাসে একই বিল্ডিং এ ছেলেমেয়ে পাশাপাশি থাকছে; আপনার মতে এটা নৈতিকতা বিরোধী কাজ। কিন্তু ঐ সময় যখন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলছিলো শিক্ষার্থীরা তো হল খুলে দেয়ার কথা বলেছিলো, আপনাদের প্রশাসন তা দিয়েছিলো? অথচ হলে তো সেসময় ছাত্রলীগ অবস্থান করতো, সে বিষয়ে আপনি তখন কেন চুপ ছিলেন?

কিংবা শিক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেয়ার পক্ষেও তো আপনার কোনো অবস্থান দেখা যায়নি, আপনি নিজেও তো চুপ ছিলেন। শিক্ষার্থদের কোনো সমস্যার ব্যাপারে আপনারা শিক্ষকরা বরাবরই চুপ থাকেন; ছাত্রী হেনস্তার ঘটনা আপনার বাসা থেকে খুব বেশি দূরে ঘটে নাই, আগামীতে আপনি কীভাবে আপনার কন্যাকে নিরাপদ ভাবতে পারছেন! ধরলাম একটা অ-প্রগতিশীল হল বানানো হলো সেখানে কনজারভেটিভ ফিমেল স্টুডেন্টরা থাকে, আপনি কি আমাকে নিশ্চয়তা দিতে পারবেন, সেখানে ছাত্রলীগ দ্বারা গ্যাং রেইপ হবে না?

আপনারা চান শিক্ষার্থীরা ডাইনামিক আন্দোলন করুক অথচ আপনারা শিক্ষকরা তো তাদেরকে সবসময়ই জিম্মি করে রাখেন, ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন থেকে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীগুলোর নিরাপত্তা দিতে পারবেন? কিংবা সে জন্য তরুণদের নিয়ে কাজ করবেন?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আই রেস্পেক্ট ইউর কনসার্ন। থ্যাংকস ফর দা কমেন্ট।

Khondoker Ahmed Zakaria: চবি নিয়ে একধরনের আবেগ আমার মধ্যে কাজ করে। যে কোনো খারাপ ঘটনা বা খারাপ পরিস্থিতি আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়। কিন্তু আপনার লিখাতে যে পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে তাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় যে উদ্দেশ্য পরিচালনা করা হয় তার ক্ষুদ্র অংশও কি অর্জিত হবে? বাবা-মা তার সন্তানের যে শিক্ষার জন্য পাঠায় তা-কি অর্জিত হবে? গবেষণা কর্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখ করার মত কোনো অবদান কি খুঁজে পাওয়া যাবে? মনে হয় না। জাতীয় জীবনে বহু দুর্ভোগ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এক দিকে বেকার শিক্ষিত যুবকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, অন্যদিকে চাকুরীদাতা সংস্থগুলো বলছে আমরা দক্ষ জনবল পাচ্ছি না। আবার যদি দেখেন একটি শিক্ষিত সমাজে যে উন্নত সাংস্কৃতিক পরিবেশ কাম্য তাও অবনতির দিকে। কেন এমন হচ্ছে? কারণ অনেক আছে তবে আপনার লিখায় কিছু বিষয় প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। ধন্যবাদ সাহসী লিখার জন্য।

Ibrahim Hossain: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদা দল নামে আরেকটি সুশীল গ্রুপ আছে যারা সিদ্বান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেয়ামত হলেও তারা কোনো টু শব্দ করবেনা। তাদের কাজ হচ্ছে ঘাপটি মেরে থাকা আর একটি সুসময়ের জন্য অপেক্ষা করা যখন তারা হালুয়া রুটির ভাগাভাগি করবে। তারা বেহশত চায় কিন্তু মরতে চায় না ।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আগে রাজনৈতিক দলগুলো সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক নানা বিষয়ে তাদের কনসার্ন এবং এনগেইজমেন্ট শো করতো। সব ব্যাপারে তাদের একটা সে থাকতো। এখন কেন জানি সবাই কোথায় হারিয়ে গেছে। আমার যৌবনের যেই সময় ছিল শুধু সে সময় যায় নাই, সেই পরিবেশ, সেই মানুষ সবকিছুই কোথায় জানি হারিয়ে গেছে। এক বিরুদ্ধ পরিবেশে আমি যেন অযাচিত বেঁচে আছি।

উম্মুল আখয়ার: আসসালামু আলাইকুম স্যার। আপনার লেখাটা পড়েছি, অনেক বিষয়ের সাথেই একমত। এই ক্যাম্পাসের অবাধ মেলামেশা ইত্যাদি চর্চার আমিও সমর্থক নই। তবে একজন মানুষকে বিবস্ত্র করে তার ভিডিও করার সমর্থনে কোনো আইনও নিশ্চয় এই দেশে নেই। একটা মেয়ে রাতের ৩টা বাজেও যদি বের হয়, একাও হোক, কোনো ছেলের অধিকার নাই তাকে বিবস্ত্র করার। সেই মেয়েটার কথা একবার ভাবুন। অবশ্য এই অনুভূতিগুলো পুরুষরা কখনো অনুভব করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। হাজার আপনি বাবা হোন।

প্রশাসন কিন্তু চাইলেই এই অবাধ বেহায়াপনা চর্চা প্রতিরোধ করতেই পারে। যাদেরকে অসংযত অবস্থায় পাবে ধরে বিয়ে করায় দিবে। এটা কখনো হয়েছে বলে ক্যাম্পাসে অন্তত আমার জানা নেই। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা চাই আমাদের ক্যাম্পাসের প্রতি ধূলিকণায় আমরা নিরাপদ হই। এই নিরাপত্তা কোনো নির্দিষ্ট সময়কালীন নিরাপত্তা নই। আমরা আমাদের বোনের সাথে ঘটে যাওয়া নোংরা ঘটনার জন্য দায়ী অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার চায়। আমি মনে করি একজন বাবা হিসেবে, আমাদের শিক্ষক-অভিভাবক হিসেবে আপনিও সুষ্ঠু বিচার হোক তাই-ই চান।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: চলাচলের অধিকার যতটা নিরাপদ হবে সমাজটা ততটা উন্নত হবে। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, একটা নারী সানআ থেকে হাজরামাউত পর্যন্ত একাকী ভ্রমণ করবে, বন্য পশু ছাড়া কাউকে সে ভয় পাবে না, এমন পরিবেশ তৈরী হবে। এটি মক্কায় থাকার সময়ে উনার বলা কথা।

প্রয়োজনে কোথাও যাওয়া আসা করা হলো এক ধরনের ব্যাপার আর ‌‘সম্পর্ক’ করার জন্য বনে জঙ্গলে প্রাইভেসি খুঁজতে যাওয়া হলো ভিন্ন ব্যাপার। আমি আদৌ জানি না মেয়েটা রাত ১০টায় কেন ওখানে গিয়েছিল। এমনকি সে যদি কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্যও যদি ওখানে গিয়ে থাকে, তাহলেও তাকে নির্যাতন করার কারো কোনো অধিকার নাই। যারা করেছে তাদেরকে অবশ্যই উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। এ ব্যাপারে তো কোনো সুস্থ মানুষ দ্বিমত করতে পারে না। আমার দ্বিমতের বিষয় হলো সেই মন-মানসিকতা যা বিভিন্ন সময়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে দেখেছি।

মনে কর, একটা মেয়ে কারো সাথে কোনো মাত্রায় সেটা হতে পারে ৪ আনা, ৮ আনা বা ১৬ আনা মাত্রায় কিছু করছে। কেউ সেটা টের পেলো বা দেখলো। এখন সেই ব্যক্তি কি এতে আপত্তি জানাতে পারবে? সাধ্যমতো বাধা দিতে পারবে? এগেইন, কাউকে বাধা দেয়া আর তাকে শাস্তি দেয়া, দুইটা দুই জিনিস। শাস্তি শুধু প্রপার অথরিটিই দিতে পারে। বাধা যে কেউ দিতে পারে, বা ইসলামিকেলি দেয়া উচিত। এখন এই ধরনের কাজে প্রতিবাদ করলে বা বাধা দিলে সেটাকে কি সংশ্লিষ্ট মেয়েটা তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে দাবী করতে পারে?

ফর গড’স সেইক, আমার এই প্রশ্নকে কোনোভাবেই বোটানিক্যাল গার্ডেনের কাছে রাত দশটায় নির্যাতিত ছাত্রীটির ঘটনার সাথে লিংকড করা যাবে না। কারণ, আগেই বলেছি, ওই ঘটনাটা আমি সঠিক জানি না। যতটুকু অভিযোগে এসেছে তার তদন্তসাপেক্ষে বিচারের ব্যবস্থা করা প্রশাসনের দায়িত্ব, আমার নয়। একটু আগেই একজন কর্মচারী আমাকে বললো, রাত ৩টায় কিছুদিন আগেও ছেলে মেয়েদেরকে উনি গার্ডেনের পথে দেখেছেন। তাদের এ ধরনের ব্যক্তি স্বাধীনতা চর্চার ব্যাপারে একজন অভিভাবক হিসেবে আমার প্রবল আপত্তি আছে। সেজন্য আমি লিখেছি।

সেক্স ফ্রি হওয়া উচিত কি উচিত নয় সেই আলোচনা আরো বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্টভাবে হওয়া উচিত। আমার মনে হয় তুমিও আলোচনাটাকে সেদিকে নিয়ে যেতে চাও না। তুমি ভুল বুঝতে পারো, তাই একটু ব্যাখ্যা করে বললাম। ভাল থাকো।

Aditya Piyash: স্যার, আপনাদের সাথে আমাদের মেইবি অনেক জেনারেশন গ্যাপ আছে। নইলে আপনারা কেন আমাদের মনের ভাষা বুঝতে পারেন না। কেন আপনাদের এসব আলাপ আমাদের কাছে তত্ত্ব ভারাক্রান্ত মনে হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে হওয়া এই আন্দোলনকে আপনি কেন সমর্থন করতে পারছেন না তা বিস্তারিত জানা অন্তত আমাদের জন্য জরুরি।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ‍“কোনো গণআন্দোলনই বিশেষ বিশেষ মহলের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা ছাড়া আউট অব দ্যা ব্লু গড়ে উঠেনি বা পরিচালিত হয়নি। সফলতা বা ব্যর্থতা তো পরের কথা। এটি এতটাই অবভিয়াস যে এর জন্য কোনো উদাহরণ টানারও প্রয়োজন নাই।”

‍“হ্যাঁ, ছাত্রছাত্রীদের সাথে আমিও একমত, ‘নিরাপত্তা চাই’। তবে কীসের নিরাপত্তা চাইতে হবে বা চাইবো, সেটা বিবেচনাসাপেক্ষ। ছেলেমেয়েরা যত্রতত্র যখন তখন তাদের খেয়াল খুশি মোতাবেক যে কোনো মাত্রায় সম্পর্কচর্চা করার নিরুপদ্রপ অধিকার, প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা চাইবে, তা আমি কোনোক্রমেই সমর্থন করতে পারি না। আমার মেয়ে এখান থেকে সদ্য মাস্টার্স করেছে। ওর জন্য যা আমি ভালো মনে করি না, তা অন্য কারো জন্যও করবো না, এটি কি খুব প্রতিক্রিয়াশীলতার কথা?”

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ছাত্রজীবনে সাধারণ ছাত্রদের একটা সংগঠনের আমি আহবায়ক ছিলাম। সংগ্রামী ছাত্র ঐক্য। তাই সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলন সম্পর্কে আমার একেবারে হাতে কলমে অভিজ্ঞতা আছে। সংগ্রামী ছাত্র ঐক্যের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল এবং সেই তদন্ত কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে তৎকালীন ভিসিকে অপসারণ করা হয়েছিল।

আর আন্দোলনের সমর্থন করতে না পারার বিষয়টা? আন্দোলনটা যদি হয় বিচারের, বিচার হতে পারে। তবে আমার প্রবল সন্দেহ যে আদৌ সুবিচার করা বর্তমান প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব কিনা। হলে তো ভালো। আমি যতটুকু শুনেছি বিচার ছাড়াও আন্দোলনের আরো কিছু দাবি বা মোটিভ আছে, যা আমার কাছে সমর্থনযোগ্য নয়।

আমার মূল লেখাতেই বলেছি এই আন্দোলনের আমি বিরোধিতাও করছি না। কারণ কোনো অন্যায়ের ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকা সেই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল।

Aditya Piyash: ‍“বিচার চাওয়াটা” আমাদের দায়। ‍“বিচার করার” দায়টা প্রশাসনের, আমাদের না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারের হওয়া একটা আন্দোলন যেখানে 95% সাধারণ শিক্ষার্থী তাদের অন্য কী মোটিভ থাকতে পারে? সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনা না করে সবকিছুতে ‍“মোটিভ” খোঁজা তো একটা এস্টাব্লিশমেন্টের আচরণ। আমি অনেক ক্ষেত্রে রক্ষণশীল এবং সম্পূর্ণভাবে নৈতিকতার সমর্থক। কিন্তু স্যার এই ক্রাইসিস মোমেন্টে, বিক্ষুব্ধ সময়ে আমাকে এসব নৈতিকতার গল্প স্বস্তি দিচ্ছে না। আমার মনে হয় বিক্ষুব্ধ সময়ে কেউ যদি এসব আলাপ তোলেন তাহলে অপরাধীরা কিংবা পটেনশিয়াল অপরাধী কোনো না কোনোভাবে ফেভার পায় যা হয়তো আপনারা বুঝতে পারছেন না। ভালো থাকবেন, স্যার।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমার ছাত্র জীবনের আন্দোলনের কথা তোমাকে বলেছি এটা বোঝানোর জন্য যে এইসব ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে আমার অন্য যে কারো চেয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞতা আছে। আশা করি ভুল বুঝবে‌ না।

MH Evan: Aditya Piyash, এটা দেখুন

Hiramoni Himu: আপনার লিখা সবটাই পড়লাম, অতএব অভিনন্দন গ্রহণ করলাম। আপনার কিছু কথার সাথে একমত হলেও প্রায় সবটা লিখাই আমার কাছে জাস্ট গার্বেজ মনে হইছে।

প্রথমত, আপনি এই আন্দোলনের ভিকটিমকে সাপোর্ট না দেওয়ার জন্যে হলে মেয়েদের প্রবেশের যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কথা বলছেন সেটার সাথে আমি তীব্রভাবে অমত পোষণ করছি। আপনার মতে কি রাত ১০টার আগে এইসব ঘটনা হইতে পারে না? রাতে বাইরে বের হওয়ার মানেই কি অবাধ যৌনাচার (!)।

দ্বিতীয়ত, আপনি বললেন, আপনার সন্তান এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পড়াশোনা করেছেন। একজন শিক্ষকের সন্তান হিসেবে উনি যেই সুবিধাগুলো পেয়েছেন, সাধারণ ছাত্রীরা কি এর আওতাভুক্ত? তাদের বাপের যে যথেষ্ট আয় নাই এবং তারা টিউশন করে চলে সেটা সম্পর্কে আপনি কি অবগত? এবং শহর থেকে ক্যাম্পাসের দূরত্ব এবং শেষ ট্রেন কখন ক্যাম্পাসে পৌঁছায় সেটা সম্পর্কে অবগত?

তৃতীয়ত, আপনি বললেন, বিশ্ববিদ্যালয় মানে মূল্যবোধ চর্চার জায়গা। সম্মানিত (!) শিক্ষক, আপনি কি এটা জানেন বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক এবং ছাত্রকে মূল্যবোধের পাশাপাশি সাহিত্য, সংস্কৃতি (অবশ্য আপনার মতে সংস্কৃতি চর্চা মানেও ‌‘কাছে আসার পর্যায়’), ধর্ম, আস্তিকতা, নাস্তিকতা (যাদের ইচ্ছা), দর্শন, বিজ্ঞান, প্রগতিশীলতা সবকিছু চর্চারই জায়গা?

আপনি ছাত্রদের ক্লাস না করার কথা বলছেন। সেটার সবটা দায় কি শুধুমাত্র ছাত্রদের উপরই পরে? আপনারা কি এর জন্যে একটুও দায়ী নন?

আপনি বললেন যে যৌন স্বাধীনতা বেশি যেখানে, যৌন অপরাধও বেশি সেখানে। কিছু ছাত্রকে দেখলাম আপনার সাথে সম্মতি জানাইছে। সম্মানিত শিক্ষক এবং ছাত্ররা (!) দয়া করে গুগল করে একটু দেখবেন। এখন যুগ পাল্টাইছে। নিজের মনগড়া কথা বললেই সবাই বিশ্বাস করবে কেনো?

শেষে আপনি একটা কথা বলেছেন, আপনাকে আরো ১০ বছর চাকরি করতে হবে তাই সব ব্যাপারে কথা বলতে পারেন না (অর্থাৎ আপনার জুজুর ভয় আছে)। তাহলে ছাত্রদের কাছে কীভাবে আশা করেন তারা সব ব্যাপারে (!) প্রতিবাদ করবে? বাইরে থেকে আসা ছাত্রদের কি জুজুর ভয় নাই?

Suhag Mia: Hiramoni Himu, রাতে না, এসব ঘটনা দিনেও হয়ে থাকে। রাত ১০টার পর মেয়েদের কাজ থাকতেই পারে। এই যে টিউশনি, শাটল এর কথা বলেছিস। কিন্তু রাত ১০টার পর শাটল, টিউশনি এসবের জন্য কয়জন বাহিরে থাকে, আর অন্য কারণে কয়জন বাহিরে থাকে এই পরিসংখ্যানটাও জানা দরকার। যেসব মেয়েরা বাড়িতে থাকতে সন্ধ্যার আগেই ঘরে থাকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেই প্রগতির চর্চার নামে রাত ১২টা পর্যন্ত বাহিরে থাকতে পছন্দ করে। যদিও এটার পার্সেন্টেজ ১০% এর বেশি হবে বলে মনে করি না।

আস্তিক নাস্তিক যেহেতু সবাই আছে, সেহেতু নিজের কাজের মাধ্যমে অন্যকে বিপদে না ফেলাই ভালো। আর যেখানে যৌন স্বাধীনতা বেশি, সেখানে যৌন অপরাধ বলতে শব্দটাই থাকার কথা না। কিন্তু এই যৌন স্বাধীনতা যে অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, তাও সবার বিবেচনা করা উচিৎ।

কিছু ভুল হলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

Hiramoni Himu: Suhag Mia, তোর কথার সাথে আমিও একমত। কিন্তু ওনি যেভাবে উপস্থাপন করছে যেনো সব দোষ মেয়েদের এবং এইসব রাত্রিকালীন ঘটনা!

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: Hiramoni Himu, ধরে নিচ্ছি তুমি আমাদের স্টুডেন্ট ছিলে অথবা আছো। তাই তুমি করে বলছি।

তোমার মন্তব্যটা আসলেই সুলিখিত ও সুন্দর। তোমার কনসার্ন এপ্রিসিয়েবল। তবে তুমি আমাকে কিছু বিষয়ে ভুল বুঝেছো। সেগুলোর ক্লারিফিকেশন দিতে গেলে এখানে অনেক কথা হয়ে যাবে। যদি প্রেজেন্ট স্টুডেন্ট হয়ে থাকো তাহলে, যদি তুমি ইন্টারেস্টেড হও, আমরা সরাসরি কথা বলতে পারি। আর তোমার প্রশ্নের উত্তরে অন্যরা তোমাকে কিছু আজেবাজে কথা বলতে পারে। যারা দ্বিমত করেছে তাদের কাউকে কাউকে (অন্য কমেন্টে) হেয় প্রতিপন্ন করে মন্তব্য করতে দেখেছি। সেজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। ভালো থাকো।

Hiramoni Himu: মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, ধন্যবাদ আপনাকে! আপনার কমেন্টের আশায় ছিলাম। সুযোগ পেলে আপনার সাথে কথা বলবো কোনো একদিন, ইনশাল্লাহ। আর যারা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করছে বা করার চেষ্টা করছে তাদের আমি তর্কের যোগ্য মনে করি নাই। আপনিও ভালো থাকবেন স্যার!

সায়ান তানভি: আপনি আফগানিস্তান যান। কোনো মানুষ সারাদিন যৌনতা নিয়ে থাকে না। এটা সম্ভব না। আপনার লেখায় মনে হচ্ছে সব সমস্যার মূলে অবাধ মেলামেশা। আপনার উচিৎ বিশ্বমাদ্রাসা বানানোর আন্দোলন করা। যেখানে সহশিক্ষা থাকবে না।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হিলারি ক্লিনটনের আত্মজীবনীর প্রথম অংশে সহশিক্ষা নিয়ে তিনি কিছু বলেছেন। আমার কাছে বইটা আছে। আমি চাচ্ছি আপনি বইটা খুঁজে, এর একটা বাংলা অনুবাদও আছে, সেখান থেকে যদি ওনার কলেজে পড়ার অংশটুকু পড়ে নেন।

Arif Uddin: স্যার, আপনার বৈধ বিবাহের বৈধ যৌনসঙ্গমের দৃশ্যও কি আপনার মা-বাবা দেখতে পছন্দ করবেন? কাপলদের ঝোপঝাড়ে অন্তরঙ্গ হওয়ার বিষয়টিকে আপনি মা-বাবা দেখতে পছন্দ করবে কিনা এই সেন্সে বিচার করতে চাইলেন এবং তাদেরকে যে প্রশ্নের সম্মুখীন করছেন একই প্রশ্ন আপনাকে করলাম। আশা করি উত্তরটা পাব।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ‍“কাপলদের ঝোপঝাড়ের আড়ালে অন্তরঙ্গ হওয়ার” দৃশ্যগুলো ঐসব ঝোপঝাড়ের খুব কাছের বিভিন্ন কলোনিতে থাকা কর্মচারী ভাইয়েরা, তাদের ছেলেমেয়েরা, তাদের স্ত্রীরা, প্রতিনিয়ত দেখে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এটা তোমার কাছে কেমন লাগে? আমরা যখন বাসার আশেপাশে হাঁটতে বের হই তখন আমরাও মাঝেমাঝে ওই ধরনের দৃশ্যের সম্মুখীন হই। আমরা তো মাঝে মাঝে সেখানে হাটতে যাই, কিন্তু যারা প্রতিনিয়ত সেই সব পথের পাশ দিয়ে তাদের বাড়িঘরে চলাচল করে সেই সব কর্মচারীরা, তাদের ছেলেমেয়েরা, তারা কি মানুষ নয়? ঝোপঝাড়ের আড়ালে কিছুটা জঙ্গল পরিষ্কার করে যেসব প্লাস্টিক/কাগজের বিছানা পাতা থাকে, সেগুলোতে যা ঘটে, সেগুলা যারা ঘটায়, তাদের সম্বন্ধে ওরা কি মনে করে সেটা সম্পর্কে তোমার কি কোনো ধারণা আছে?

Md Alauddin: ধন্যবাদ স্যার। রাতে বাচ্চার জন্য পড়ে শেষ করতে পারিনি। সকালে উঠেই পড়েছি। কী নিদারুণ সত্য কথা। একটা উদাহরণ দিই স্যার। বেয়াদবি নিবেন না। ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে আসি। ২০১৬ তে ক্যাম্পাসে গেলে কাটা পাহাড়ের মাঝপথ দিয়ে আড়াআড়ি পাহাড় দিয়ে খালেদ জিয়া হলে যাওয়ার পথে যা দেখেছি মনে হচ্ছিলো চবিতে উম্মুক্ত যৌনচর্চা চলছে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এজন্যই আমি প্রশ্ন তুলেছি, সম্পর্ক চর্চার সীমা আসলে কতটুকু হওয়া উচিত? দুই আনা, চার আনা, ছয় আনা এভাবে আনা বাড়িয়ে বা কমিয়ে আমরা একেবারে শূন্য থেকে শুরু করতে পারি। তখন আমরা বুঝতে পারবো, নৈতিকতার একটা বস্তুনিষ্ঠতার জায়গা অবশ্যই আছে; এবং সেটি আমার বিবেচনায় বৃহত্তর সমাজের নৈতিক কাঠামো অনুসারেই হওয়া উচিত। গার্ডিয়ানরা ছেলেমেয়েদেরকে এখানে পড়াশোনা করার জন্য পাঠায়। অবাধ সম্পর্ক চর্চা করার জন্য নয়। এই কথাটা এখানকার সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বৃত্তদেরকে বুঝতে হবে, অথবা বোঝার জন্য তাদেরকে কোনোভাবে বাধ্য করতে হবে।

Gourchand Thakur: লেখার মধ্যে পদে পদে স্ববিরোধী এবং খেয়াল-খুশিমতো বক্তব্য থাকলে বুঝতে হবে লেখকের উদ্দেশ্য সৎ নয়।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ঠাকুরেরা কেন বিশেষ একসুরে কথা বলে এটা মাঝে মাঝে বুঝতে পারি। কিন্তু পলিটিক্যাল কারেক্টনেস বলে যে একটা কথা আছে, সেটার কারণে কখনো বলতে পারি না যে কী বুঝতে পারি।

Tawhidul Islam Shifat: পুরো লিখাটা পড়লাম। স্যার, আপনার উদ্দেশ্য সৎ এবং পরিষ্কার। চিন্তাশীলদের জন্য এখানে অনেক বার্তা রয়েছে। যদিও আমরা পাঠক সমাজ পড়েই গেলাম। আমাদের কিছুই করার নেই। যাদের নজরে আসা দরকার তারা ও নীতিনির্ধারকদের চোখ, অন্তর এখন মোহরাবৃত। বিশ্ববিদ্যালয় নামক জায়গাটা তার সম্মান হারাচ্ছে। এটুকুই বলা যায়।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: যে বিশ্ববিদ্যালয় তার একমাত্র নোবেল লরিয়েট শিক্ষককে একটা সংবর্ধনা দিতে পারে না, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কারো স্বার্থনিরপেক্ষ মর্যাদা থাকার আশা করা যায় না।

Minhaj Akter: ভীষণ স্পষ্টভাষায় সত্য কথাগুলো বললেন, স্যার। জানি না আপনি একমত হবেন কি না; তবে আমার মনে হয় আমরা সেইসব শিক্ষকদের প্রায় হারাতে বসেছি যারা আমাদের মূল্যবোধ শেখাতেন, নৈতিকতা শেখাতেন৷ আমার ডেপ্টে এমন অনেক শিক্ষক আছেন যাদের কাছে সামান্য ছেলে-মেয়ে আলাদা সারিতে বসাটাই অস্বাভাবিক! জানি না কেন কিছু শিক্ষকদের কাছে একজন ছেলে/মেয়ের শালীনতা বা লজ্জাশীলতা অস্বাভাবিক মনে হয়!

তবুও এতকিছুর ভীড়ে আপনার স্পষ্টভাষার লেখা পড়ে বেশ ভালো লাগলো৷ হয়তো আরো অনেক শিক্ষকই এসব উচ্ছৃঙ্খলতার বিরুদ্ধে কথা বলতে চান, কিন্তু হেনস্তা হবার ভয়ে সবটাই এড়িয়ে যেতে বাধ্য হন৷

Rakibul Hasan Ishtiaq: যদিও আমি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না। আমি সামান্য মাত্র একটি উপজেলা ভিত্তিক কলেজের ছাত্র। ঢাকার একটি নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকবার যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বন্ধু এবং ভাইদের জন্য। ঐখানে গিয়ে আমার কোনো দিন মনে হয়নি এখানকার শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবারের লোকজনকে ভালোভাবে ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখাতে পারবে। কারণ পরিস্থিতি তাকে লজ্জিত করতে বাধ্য করবে। কয়েকবার যাওয়ায় এই অভিজ্ঞতা। যারা এখানে একটানা ৬/৭ বছর লেখাপড়া করে তাদের কী অভিজ্ঞতা তা একমাত্র আল্লাহতালা জানেন। আল্লাহতালা আমাদের সবাইকে সব রকমের ফিতনা থেকে হেফাজত করুক।

Khan Mehedi: পড়াশোনাটা এখন সর্বত্রই গৌণ হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে চিল করার জায়গা। পড়াশোনাটা যখন গৌণ হয়ে যায় তখন অন্য কিছু মুখ্য হবে সেটাই স্বাভাবিক। বয়সের কারণে প্রেম-ভালোবাসা বা আরো কিছু প্রাধান্য পাচ্ছে। টিভি-সিনেমায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কো-এডুকেশন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধু প্রেমই হয় এটাই দেখানো হয়। তাই ছেলেমেয়েরা এমন একটা পূর্বধারনা নিয়েই এখানে আসে। তবে খুল্লাম খুল্লা প্রেম করে এমন জুটি শতাংশের হারে কম বলেই মনে হয়। যদি পড়াশোনার চাপ বাড়ানো যায়, পরীক্ষায় পাশটা কঠিন হয় তাহলে এসব কম হবে।

তবে মেয়েরা বের হয় বলে, কেউ কেউ মাত্রা ছাড়িয়ে যায় বলে তাদের শ্লীলতাহানি করতে হবে এটা সাপোর্ট করা যায় না। আর এসবের বড় কারণ নষ্ট রাজনীতি। অপরাধীরা সবক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রশ্রয় পায়। সেটা বন্ধ না হলে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ না হলে আমার, আপনার মেয়েকে আজ বা কাল ঘর থেকে তুলে নিয়ে শ্লীলতাহানি করা হবে। কোনো কিছু দিয়েই এটা আটকানো যাবে না।

Mohammad Mazhar: আমি জেনারেল লাইনের ছাত্র নই। আপনার লিস্টেও নেই। Foysal Bin Bashar ভাই শেয়ার দেয়াতে পড়লাম। যেহেতু গবেষণাধর্মী লেখার প্রতি বরাবরই আমি আগ্রহী সেহেতু লেখাটা মনোযোগ দিয়ে শেষ করলাম। প্রাইমারি স্কুল শেষ করে (কওমি) মাদ্রাসায় আসার পরেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্রেফ পরীক্ষা দিয়ে পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ার একটা সুপ্ত বাসনা লালন করতাম। এমনকি মানসিকভাবে প্রস্তুতির পাশাপাশি এক আলিয়া মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তিও হয়েছিলাম। কিন্তু কোনো এক (সংগত) কারণে রেজিস্ট্রেশন করিনি। প্রথমদিকে কষ্ট লাগলেও পরবর্তীতে আল্লাহ তা’আলার কাছে অনেক শুকরিয়া আদায় করেছি যিনি আমাকে বিশাল একটা ঝুঁকি থেকে আগেই সরিয়ে দিয়েছেন।

এরপর তো আস্তে আস্তে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নেতিবাচক নিউজ আসতো সামনে, ফেসবুকে আসার পর অনেক ভাইয়ের সাথে পরিচয়ের সুবাদে জানতে পারি এদেশের কোটি কোটি কিশোর-কিশোরীর স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল রূপ! আপনার লেখাটা পড়ে যেনো চিত্রগুলো চোখের সামনেই ভাসছে আর মনে মনে রবের কৃতজ্ঞতা আদায় করছি। দোয়া করি আল্লাহ তা’আলা যেনো তাঁর বান্দাদের প্রতিটি আমলের যথাযথ বিনিময় দান করেন!

সংযুক্তি: আপনার কথাগুলো যে মোটাদাগেই বাস্তব তার উজ্জ্বল প্রমাণ হচ্ছে এই পোস্টের কমেন্ট সেকশন। বাস্তবতা মেনে নেয়ার মতো তারুণ্যের এক অংশ এগুলোকে সত্যায়ন করছে। আবার আবেগ, রঙিন চশমা পরিহিতদের আচরণও বলে দিচ্ছে যে আসলেই কী করুণ অবস্থা জনগণের অর্থায়নে চলা ভার্সিটিগুলোর!!!

স. মুহম্মদ নাহিন রহমান: ভিক্টিম ব্লেমার।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: মানে? আপনি এমন কোনো দুর্ঘটনা বা অপরাধমূলক কাজ দেখাতে পারবেন যেখানে বিনা দোষে অথবা অতিরিক্ত দণ্ড পাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বা দণ্ডিতের ভুল, অবহেলা বা বাড়াবাড়ি নিয়ে কথা বলা নিষেধ? অথবা এমনটা করা হয় না?

Abdul Rahman: শিক্ষা ব্যবস্থার এই বেহাল দশা কোনো অবস্থায় ভাঙ্গা যাবে না?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সবাই মিলে শক্তভাবে চেষ্টা করলে নিশ্চয়ই দুর্বৃত্তদের ঠেকানো যাবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল জনশক্তি আসে সহজ-সরল গ্রামীণ পরিবেশ থেকে, যারা ক্লাসিক্যাল সোশ্যাল ভেলুজগুলোকে এখনো ধারণ করে।

মাহফুজ হাসান: স্যার, চমৎকার লিখেছেন। কিন্তু আপনি তো কোনো সলিউশন দিলেন না। কোনটা বন্ধ করা দরকার? অবাধ মেলামেশা নাকি নিপীড়ন?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধান এমন নয় যে একটাকে সমাধান করে অন্যটা সমাধানের জন্য অগ্রসর হতে হবে। বরং একই তালে সব জরুরী কাজগুলো যথাসম্ভব করে যেতে হবে।

Kishor Pasha Imon: এই ২০২২ সালে পড়া সবচেয়ে কনজারভেটিভ লেখা এটা। নিজে স্ত্রীকে নিয়ে মাঠে শুয়ে থাকতে পারছেন না তাই বাকিদের দেবেন না — এটুকুই প্রকট হলো। শুনুন, আপনার অধিকার আছে স্ত্রী বা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার, শুয়ে থাকার। আপনিও এই অধিকার বঞ্চিত হয়েছেন। নিজের অধিকার আদায় করতে পারেননি বলে অন্যকে বাঁধা দিচ্ছেন। প্রসঙ্গত: ২০১৮-২০২০ এর মাঝে আমি বাংলাদেশের অনেক জায়গায় আমার বান্ধবীর (গার্লফ্রেন্ডও নয়, স্ত্রী দূরে থাকুক) ঠোঁটে প্রকাশ্যে চুমু খেয়েছি, চট্টগ্রামে হাত ধরে ছুটেছি। বখাটেরা উৎপাত করেনি তা নয়। গুলিয়াখালী সৈকতে স্থানীয়দের একটি গ্রুপ ওকে ধর্ষণের ইচ্ছেয় আমার সাথে গ্যাঞ্জাম করতে এসেছে। কিন্তু নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে আমরা আমাদের প্রকাশ্য প্রেম বন্ধ করিনি। আমাদের যা ইচ্ছে আমরা করেছি, করবো। এতে করে বাকিদের সমস্যা থাকার অধিকারই নেই। আপনার বাড়িতে বা আপনার পয়সায় করি না। আপনি, আপনার জেনারেশন মেরুদণ্ডহীন হতে পারেন, তবে আমাদের জেনারেশন নয়। আর মনে রাখবেন, সমাজ মানুষ দিয়েই গঠিত হয়। আর এই প্রজন্ম প্রায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমাদের বিরোধীতা করে লাভ নেই। মানিয়ে নিন। কুয়োর ব্যাঙ হয়ে কতদিন থাকবেন?

২. পড়াশোনার আলাপ যেটি করলেন সেটি সম্পূর্ণ ভিন্ন আলাপ। প্রকাশ্যে প্রেম করেছি বলে আমি পড়াশোনায় খারাপ হয়ে গেছি? আমার একাডেমিক রেকর্ড দেখুন। আমার সেই বান্ধবী এখন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ তিন ভাইরোলজি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানের একটির গবেষক, ইউরোপে। তার একাডেমিক রেকর্ড দেখুন। আপনার এই ফ্যালাসিটা এই হাজার হাজার লোক ধরতে পারলো না কেন? প্রকাশ্যে প্রেম করার সাথে পড়াশোনায় খারাপ করার সম্পর্ক কোথায়? ব্যক্তিজীবনে আমি যা ইচ্ছে করবো – সেটা নিয়ে জাজ করার অধিকার আপনার নেই। পড়াশোনা যে করে না বা খারাপ করে – সে প্রেম করলেও খারাপ করতে পারে, না করেও খারাপ করতে পারে। ওটা বলে এই ভান ধরবেন না যে ছেলেমেয়েদের একসাথে মেলামেশার কারণে পড়াশোনা খারাপ হচ্ছে।

৩. যৌন স্বাধীনতার সাথে যৌন নির্যাতনের সম্পর্কটা আপনার মূর্খ উপসংহার। যৌন স্বাধীনতা যেখানে বেশি থাকে সেখানে যৌন নির্যাতন বেশি রিপোর্ট করা হয়। যেখানে যৌন স্বাধীনতা কম সেখানে ধর্ষণ হলেও রিপোর্ট হয় না, যেমন গতকালকের বাংলাদেশ। আমেরিকায় একটা মেয়ের স্বামী তাকে ম্যারিটাল রেইপ করলে তা রিপোর্ট হয়, তার মানে এই নয় যে যৌন নির্যাতন আমেরিকায় বেশি। বাংলাদেশে তা বেশি – রাস্তাঘাটে বখাটে জ্বালায়, হাজবেন্ড ম্যারিটাল রেইপ করে, বাবা-মা নিজেই মেয়ের মতের তোয়াক্কা না করে কারো সাথে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয় – সেই ছেলে মেয়েকে বাকি জীবন রেইপ করে। এসবের কিছুই রিপোর্ট করা হয় না – কারণ যৌন স্বাধীনতা নেই। বাংলাদেশে আমেরিকার মত যৌন স্বাধীনতা থাকলে ৫-৬ কোটি রিপোর্ট পেতেন ১৮ কোটির দেশে। উত্তর কোরিয়ার মত আলাপ করলেন – রিপোর্ট নেই তো কোভিডও নেই। বাহ।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনার মন্তব্যটা পজিটিভ না হলেও এটি আমার বক্তব্যকে কোনো একভাবে সাপোর্ট করে। সেজন্য আমি চাচ্ছি, আপনি আপনার বক্তব্যটা ডিলিট না করে রেখে দিবেন, প্লিজ। এটা সাধারণদের জন্য লেখা একটা পোস্ট। এখানে আমি আপনার কিংবা আমার অবস্থানের দার্শনিক ভিত্তি নিয়ে ডিটেলস আলোচনাতে যেতে চাচ্ছি না।

Ariful Islam Tapu: Kishor Pasha Imon, সব বুঝলাম ভাই, এ প্রজন্ম প্রায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখন এই সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণি কি আপনার কথায় ঐক্যমত্য পোষণ করছে? এ দেশের অধিকাংশ মানুষ কি প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার পক্ষে? অন্যদেরকে কুয়োর ব্যাঙ বলার আগে কাইন্ডলি নিজেদের অবস্থানটাও দেখবেন।

ওছমান গনি ফরহাদ: বিচারহীনতা নিয়ে কিছু বলুন।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বিচার হওয়া দরকার, এটা আমি মনে করা বা না করাতে কিছু কি আসে যায়? এই ঘটনার বা অন্য কোনো ঘটনার কোনো সঠিক বিচার হবে কিনা সে ব্যাপারে আমি সন্দিহান।

যতদিন পর্যন্ত না ক্যাম্পাসে প্রগ্রেসিভ ফোর্সের পাশাপাশি কনজারভেটিভ কোনো ফোর্স সমান তালে একটিভ থাকবে, ততদিন পর্যন্ত ক্যাম্পাসে লেখাপড়ার একটা সুন্দর পরিবেশ ফিরে আসবে না। অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সবসময়ই এই ভারসাম্যটা কম-বেশি ছিল। এখন রাজনীতিহীনতার যুগ। ভারসাম্যের তো প্রশ্নই উঠে না।

যতই বিচার হোক, মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করতে না পারলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। সামাজিক সমস্যাগুলোকে যারা নিছক আইনি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখে তাদের বিচার-বিবেচনার সীমাবদ্ধতার দিকগুলো আমি আমার লেখাতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

Anwarul Islam Munir: আমি মন্তব্যের বিপরীতে মন্তব্য করতে গিয়েও হাত গুটিয়ে নিলাম। তবে কয়েকটা কথা না বলে পারছিনা:

১. অসাম্প্রদায়িকতার আড়ালে আমরা কী করছি? যারা গলা খাঁকারি দিয়ে বলে অসাম্প্রদায়িক, তারা কোন সম্প্রদায়ের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে?
২. প্রগতিশীলতার প্রগতির ছোঁয়ায় আমরা বিবেক, বুদ্ধি আর মানুষের বৈশিষ্ট্য ছেড়ে নিজেরা পশুত্বের গুণ অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছি।
৩. প্রত্যেকটা আন্দোলনের পিছনে একটা এজেন্ডা থাকে। আর আন্দোলনগুলো হয় সুড়সুড়ি বা সেনসেটিভ ইস্যু নিয়ে। আর আমরা বোকার মত দৌড়াই পিছনে, দিন শেষে ফিরি খালি হাতে আর তারা ফেরে নায়ক হয়ে এজেন্ডা সফলভাবে বাস্তবায়ন করে।
৪. যারা দূরে বসে বলে আমরা শান্তি চাই, বিবাদ চাই না; এরাই সমাজের সকল অশান্তির মূল। সমাজব্যবস্থার জন্য বিষফোঁড়া।

আর কিছু লিখলাম না।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: তিন নম্বর পয়েন্টটা বেশি ভালো লেগেছে।

Mashiur Raihan: ২০১০ সালের কথা। তখন আমি ফার্স্ট ইয়ারে। আমরা ক্লাশে ছেলেরা একপাশে, মেয়েরা আরেকপাশে বসতাম। একদিন এক প্রগতিশীল মাস্টর এসে বলল, তোমরা কি মাদ্রাসায় পড়ো? ছেলে-মেয়ে আলাদা বসো কেন? তিনি প্রতি টেবিলে একটা ছেলে একটা মেয়ে জোড়ায় জোড়ায় বসিয়ে দিলেন। কোনো কোনো টেবিলে আবার দু’পাশে দুটা ছেলে মাঝখানে একটা মেয়ে।

Mohammad Ishrak: স্যার, কয়েকটা বিষয়। প্রথমত, প্রগতিশীল-রক্ষণশীল ক্যাটাগরাইজেশন নিয়ে একটা আপত্তি আছে। কোনটা প্রগতিশীলতা আর কোনটা রক্ষণশীলতা সেটা কে ঠিক করবে? ষাটের দশকের মত স্লিভলেস পরিহিতা ঢাবি ছাত্রীর জামানায় ফিরে যেতে চাওয়া কি প্রতিক্রিয়াশীলতা না?

দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে যে যৌন বিপ্লব সংগঠিত হয় এটা তো নতুন কোন তথ্য না। সারা বিশ্বেই এটা সত্য। আমেরিকা, জার্মানি, ভারত, পাকিস্তান — সর্বত্রই এটা সঠিক। চলচ্চিত্র, টিভি সিরিজ, উপন্যাসসহ পপ কালচারে এই জিনিসটা খুব সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। এটা আধুনিকতার স্বাভাবিক ফলাফল। এখন তাহলে আমাদের ভেবে দেখতে হবে যেসব মোল্লারা বলতো আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা মজ্জাগতভাবে শয়তান তারা কতখানি প্রাজ্ঞ আর আমরা যারা ঐসব মোল্লাদের নিয়ে ট্রল করতাম তারা কতখানি প্রাজ্ঞ।

তৃতীয়ত, সবচেয়ে চমৎকারভাবে ফুঁটে উঠেছে সেকুলার জামানার দৈন্য। আপনি মেজরিটি হয়েও আপনি সংখ্যালঘুর মত নিজের জন্য আলাদা স্পেইস চাচ্ছেন। যেটা বাই ডিফল্ট প্রভিশন হওয়ার কথা ছিল সেটা হয়ে যাচ্ছে স্পেশাল প্রভিশন। একসময় প্রগতিশীলতার সংজ্ঞা আরও এগোবে। তখন হয়তো আমাদেরকে লিখতে হবে যে ‍“বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা হল কেন থাকবে না যেখানে গার্ডিয়ানরা মেয়ে/বোনকে দেখতে যাওয়ার সময় দেখতে হবে না যে ছেলেমেয়ে জড়াজড়ি করে শুয়ে আছে? কেন সুস্থ, স্বাভাবিক সমাজের মত হাত ধরাধরি করে ঘনিষ্ঠভাবে বসে নাই?”

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: [শাহ মোহাম্মদ শিহাবের পোস্ট থেকে সংগৃহীত]

কেউ একজন আমাকে লিংকটা পাঠালো, তাই পড়তে পারলাম। তোমার সুন্দর মন্তব্য ও বিশ্লেষণ, বিশেষ করে শালীন ভাষার ব্যবহার বেশ ভালো লেগেছে।

কিছু বিষয়ে তুমি আমাকে ভুল বুঝেছো। আসলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যে ধরনের ব্যাপক আলাপ-আলোচনার প্র্যাকটিস থাকার কথা, সেটা তো নাই। এই না থাকার দায় শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি, এরপর প্রশাসনের, এরপর ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সামগ্রিকভাবে সবার।

খুব সম্ভবত আমেরিকাতে ম্যাট ওয়ালেশ নামের এক ভদ্রলোক transgenderism ইস্যুতে সম্প্রতি একটা ডকুমেন্টারি করেছেন, ‌‘what is a woman’ এই শিরোনামে। এতে দেখা যায়, তিনি এই প্রশ্নটা গলায় ঝুলিয়ে হাঁটছেন। অনুরূপভাবে আমারও এখন ইচ্ছে করছে একটা ডকুমেন্টারি বানাই যেটার শিরোনাম হবে ‌‘what is a university’.

বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা পড়ি, পড়াচ্ছি, থাকি, খাই, ভালো-মন্দ নানা বিষয়ে এইটা-ওইটা করি, কিন্তু আসলে এখানে আমরা কেন এসেছি, সেই বিষয়টাই মনে হয় আমাদের কারো কাছে ক্লিয়ার না। কখনো ছিল বলেও মনে হয় না। না টিচারদের কাছে, না স্টুডেন্টদের কাছে।

এগেইন থ্যাংকস ফর ইওর ডিসেন্সি অ্যান্ড সিনসিয়ারিটি। সময়-সুযোগ মোতাবেক কখনো যোগাযোগ করলে খুশি হব।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *