‘একই দিনে বিশ্বব্যাপী ঈদ পালনের ইস্যু নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা’ শিরোনামের নোটে উত্থাপিত কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর:
প্রশ্ন-১। হাদীসে ‘তোমরা’ বলতে কাদেরকে বুঝানো হয়েছে?
প্রশ্ন-২। বড় বড় দেশগুলোর ক্ষেত্রে কী হবে, যখন তাদের সময়-এলাকা ভিন্ন?
প্রশ্ন-৩। ইসলাম কি বর্তমান জাতিরাষ্ট্রভিত্তিক ভৌগোলিক এলাকাকে এক্ষেত্রে স্বীকার করবে?
উত্তর-১:
হাদীসে বলা হয়েছে, তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো…। তো, এই ‘তোমরা’ কথাটা খাস তথা ব্যাপক অর্থবোধক। প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করলে, এই ‘তোমরা’ মানে হতে পারে গোটা উম্মত। সে অর্থে গোটা উম্মতের যে কেউ চাঁদ দেখলে বিশ্বের সব মুসলমানের ওপর রোজা রাখা শুরু করা ফরজ হয়ে যায়।
আর প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে কোনো এলাকার মধ্যে নির্ভরযোগ্য কেউ দেখলে সেই এলাকার সবার জন্য রোজা রাখা ফরজ হয়ে যায়।
হুকুম আ’ম বা সাধারণ হলেও এর ওপরে আমল খাস বা প্রেক্ষাপটনির্ভর হতে পারে। এর বহু বহু উদাহরণ আছে। লেকচারগুলোতে পাবেন। বিবাহিত যিনাকারীর শাস্তি হাদীস দ্বারা নির্ধারিত যা এতদসংক্রান্ত কোরআনের মুহকাম আয়াতের ‘খেলাফ’। আ’ম-খাসের শরয়ী পার্থক্য কীভাবে হয় তা না বুঝে শুধুমাত্র কোরআন-হাদীসের টেক্সট পড়ে করণীয় নির্ধারণ করার প্রবণতা মারাত্মক রকমের ভুল।
উত্তর-২:
টাইম-জোন আলাদা এমন দেশগুলোর ক্ষেত্রে কী হবে, এই প্রশ্নের গড়পরতা উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া আমি কোনো মুফতি নই। বরং মুফতিদের ১২টা বক্তব্যের ভিডিও লিংক দিয়েছি। সেগুলো দেখতে পারেন। আপাতত মনে হয়, সময়ের ‘অনেক বেশি’ পার্থক্য আছে এমন ক্ষেত্রে একই দেশ হলেও আলাদাভাবে রোজা ঈদ হবে। ‘অল্প ব্যবধান’ হলে একসাথে হবে।
‘অনেক বেশি’ বা ‘অল্প ব্যবধান’ কীভাবে বুঝবেন? এ জন্য দেশের উলামাদের সিদ্ধান্ত লাগবে। রোজা-ঈদ-কুরবানী – এগুলো সামষ্টিক এবাদত। কেউ চাইলে নিজ গরজে, বা কোনো গ্রুপ চাইলেই নিজেদের ইজতেহাদ অনুসারে এগুলো করতে পারে না। তিরমিজী শরীফের হাদীসটি এ ব্যাপারে দলীল।
উত্তর-৩:
ইসলাম জাতীয় পরিচয়কে স্বীকার করে। এ ব্যাপারে কোরআনের দুইটা আয়াত আছে। যেখানে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে জাতি, গোত্র, বর্ণ ও ভাষা পরিচয়ে সৃষ্টি করার কথা বলেছেন। তবে, সাম্প্রদায়িকতা, জাত্যাভিমান, স্বজনপ্রীতি ও বংশ-গৌরবকে নিষেধ করা হয়েছে। মানুষের সাধারণত ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, একেক ক্ষেত্রে প্রাধান্য লাভ করে।
অতিরিক্ত কথা: কতটুকু দূরত্ব নিয়ে একটা শরয়ী এলাকা হবে তা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে (১) সময়ের নৈকট্য ও (২) প্রশাসনিক কর্তৃত্বের বিষয় মূল বিবেচ্য বিষয়।
রোজা নিয়ে যারা এত কথা বলছেন, স্থানীয় কিংবা বৈশ্বিক, তাদের অনেকের কাছে রমজানের রোজা শুরু করার সাথে ধর্মীয় কর্তৃত্বের সাথে সাথে রাজনৈতিক কর্তৃত্বেরও যে একটা নির্ধারণী ভূমিকা আছে তা স্পষ্ট নয়। ঈদের নামাজে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ বা তার প্রতিনিধি ইমামতি করবেন। খুতবা দিবেন। এ ধরনের কোনো প্রশাসনিক তথা রাজনৈতিক অথরিটির অনুপস্থিতেতে স্থানীয় ধর্মীয় কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। সে হিসাবে বর্তমান দেশসমূহ এক একটা প্রশাসনিক ইউনিট বটে।
বৈশ্বিক ঈদের পক্ষে একজন একটা লিংক পাঠিয়েছেন। পড়লাম। সে লেখার শুরুর দিকে একটা সারিয়া (ক্ষুদ্র সেনাদল। স্ট্রাইকিং ফোর্স) কর্তৃক মাস গণনায় ভুলের কথা বলা হয়েছে। তাতে করে দাবি করা হয়েছে, চাঁদ উঠছে তো উঠছেই। উদিত হওয়া মাত্রই যেন অটো কাউন্ট শুরু হয়ে যাবে। কেমন আজগুবি কথা…!
মূল ভূখণ্ডে চাঁদ দেখে সবাই মাস গোনা শুরু করেছে। পাশ্ববর্তী অঞ্চলে পাঠানো বাহিনী সেটা বুঝতে পারে নাই। তাতে করে চাঁদ দেখার জরুরত কী করে কমে? এমন অপ্রাসঙ্গিক ‘রেফারেন্স’ কেন? এর উদাহরণ হলো, সফরে থাকা কেউ মনে করলো, রোজা শুরু হয় নাই। অথচ, দেশব্যাপী রোজা শুরু হয়ে গেছে। হোক সেটা গ্লোবালি বা লোকালি। কারো কাছে সংবাদ না পৌঁছার ঘটনা তো ঘটতেই পারে।
ওই লেখার উপসংহারে সত্যের ব্যাপারে অধিকাংশের কথা না শোনার জন্য রাসূলকে (সা) আল্লাহর পক্ষ হতে দেয়া হেদায়েতের রেফারেন্স টেনে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, দেশের বা বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমানেরা মানুক বা মানুক, যা সত্য, তা তো সত্যই। কেউ না মানলে কী আসে যায়…!
কী সাংঘাতিক কথা…!
কিছু সত্য আছে নির্ধারিত। যেমন, আকীদাগত ও মৌলিক এবাদতের বিষয়গুলো। এগুলোর সাথে সংখ্যাগরিষ্ঠতার কোনো সম্পর্ক নাই। এ ছাড়া বাদবাকি বিষয়গুলো বাস্তবায়ন সাপেক্ষে সত্য-মিথ্যা তথা হক বা না-হক। এমনকি মৌলিক এবাদতের বিষয়গুলোও বাস্তবায়ন অর্থাৎ স্থান, কাল ও পাত্র বিবেচনায় করণীয় বা বর্জনীয় তথা প্রযোজ্য অর্থে সত্য এবং অপ্রযোজ্য বা বর্জনীয় অর্থে বা ক্ষেত্রে অ-সত্য।
শরীয়ত পালনের ক্ষেত্রে অন্যতম মূলনীতি হলো খুঁতখুঁতে ভাবকে (perfectionism বা puritanism) বর্জন করা। কিছু নারী তুলার মধ্যে মাসিক স্রাবের তরল লাগিয়ে তা কৌটার মধ্যে নিয়ে আয়িশার (রা) কাছে এনে দেখাতেন। যেন তিনি রাসুলুল্লাহ (সা) হতে জেনে নেন, তাদের মাসিক শেষ হয়েছে কিনা। তারা আশংকায় থাকতেন, অবহেলার কারণে না জানি এক ওয়াক্তের নামাজ ছুটে যায়। হযরত আয়িশা (রা) এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহকে (সা) জিজ্ঞাসা করার পরে তিনি ভীষণ অসন্তুষ্ট হন। তিনি বললেন, ওই মহিলাদের বলে দাও, যখন তারা মনে করবে, তখন তারা পবিত্রতা হাসিল করবে ও নামাজ শুরু করবে।
অতএব, আপনিও আপনার এলাকার লোকদের সাথে সামিল হোন। আমি মনে করি, স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখে রোজা শুরু করা উচিত। যদি আমার এলাকায় গ্লোবালি রোজা-ঈদ করার প্রচলন থাকতো, আমি অধিকাংশকে ভুল মনে করা সত্ত্বেও তাদের সাথে রোজা-ঈদ করতাম। সাথে সাথে আমার দ্বিমতের বিষয়গুলো বিশেষজ্ঞদের কাছে উপস্থাপন করতাম। বার বার এই কাজই করতাম। এবার নিশ্চয়, প্রিয় পাঠক, বুঝেছেন।
দূরবর্তী অঞ্চল হতে সফর করে আসা ব্যক্তির রোজা ৩১টি হওয়ার উপক্রম হলেও তিনি ৩১তম রোজাই রাখবেন। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে তিনি ২৮টা রোজা রেখেই এ মুহূর্তে যেখানে আছেন সেখানকার লোকদের সাথে ঈদ পালন করবেন। সেক্ষেত্রে পরে তিনি ব্যক্তিগতভাবে একটা রোজা কাযা আদায় করবেন।
বিশেষ অনুরোধ: এখানে ‘কথার পিঠে কথা তোলা’র মতো করে প্রশ্ন না করে, কষ্ট করে সরাসরি আলেমদের বক্তব্যের লিংকগুলো ব্রাউজ করুন। দ্বীন জানাকে ফেইসবুকের প্রশ্ন-উত্তর ও বাদ-প্রতিবাদের বাইরে জানা, শোনা, অধ্যয়ন ও অনুধাবনের মধ্যে সম্প্রসারিত করুন। চট করে প্রশ্ন না করে বুঝার চেষ্টা করুন। দয়া করে ভুল বুঝবেন না। ভালো থাকুন।
ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
সাইফুল আলম: 31 রোজা রাখবে, হা হা!!
Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ, তা-ই। এবার বুঝুন। পার্শ্ববর্তী আলেমদের কাছ হতে জানার চেষ্টা করুন। এ ব্যাপারে কোনো এখতেলাফ নাই।
সাইফুল আলম: জাতীয়তাবাদী আলেম?
Mohammad Mozammel Hoque: ভাই, আলেমদের কাছ হতে জেনে এর পরে কমেন্ট করুন। এত অধৈর্য হওয়ার কী আছে?
সাইফুল আলম: কি জানবো, আলেমের ব্যক্তিগত মত? নাকি দলিল।
Mohammad Mozammel Hoque: সেইসব আলেমদেরই জিজ্ঞাসা করুন যারা দলিলভিত্তিক কথা বলে। অথবা, তাদের থেকে জেনে নিবেন, তার বক্তব্য কি ব্যক্তিগত মত, নাকি, আর কিছু। ফাসবির, সাবরান জামি-ল!
Bodrul Huda Jayed: ধরুন, আপনি পাশ্চাত্যের কোনো দেশ থেকে ৩০তম রোজায় রোজাদার অবস্থায় বাংলাদেশে এসেছেন। সেদিন এখান চলছে ২৯ রমজান। সেদিন যদি এদেশে ঈদের চাঁদ দেখা না যায়, তাহলে কি আপনি ঈদ পালন করবেন????
Muhammad Abdullah Al Yasin: এই যে ধরুন/মনে করুন কথাটা বাদ দেন, দেখবেন অনেক কিছুই ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আমরা এমন সব অবস্থা নিজেদের সামনে নিয়ে আসি যেসব অবস্থা আমার সাথে এখনো ঘটে নাই।
Salamat Ullah: [ধরুন আপনি পাশ্চাত্যের কোন দেশ থেকে………………… আপনি ঈদ পালন করবেন????]
কেউ রামাদানের ৩০ দিনের সময় পশ্চিম থেকে পূর্বে ভ্রমণ করে ২৯ দিনের সময় পূর্বের কোনো দেশে প্রবেশ করলে ঐদিন (২৯ দিন শেষে) চাঁদ অবশ্যই দেখা যাবে। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবো। পশ্চিমা দেশ যদি সহি পদ্ধতিতে (চোখে চাঁদ দেখার মাধ্যমে) মাস শুরু করে তাহলে কোনোমতেই রামাদান মাস ৩১ দিন হবে না।
উদাহরণ দেই: রামাদান ১৪৩৮ (বর্তমান মাস) মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিমে শুরু হয়েছে ২৭শে মে শনিবার এবং বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তানে শুরু হয়েছে ২৮শে মে রোববার। মনে করুন ২৪শে জুন শনিবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে চাঁদ দেখা যায়নি (আবার বলছি মনে করুন বা কথার কথা)। তাহলে ২৫শে জুন রোববার মধ্যপ্রাচ্যে রামাদানের ৩০দিন এবং ঐদিন রোববার ২৫শে জুন বাংলাদেশে রামাদানের ২৯ দিন। জনৈক ভদ্রলোক ওই রোববারে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে আসলেন। রোববারে কি চাঁদ বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে? অবশ্যই দেখা যাবে। ১০০% গ্যারান্টেড।
[বিশেষ দ্রষ্টব্য: “মনে করুন বলেছি ২৪শে জুন শনিবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে চাঁদ দেখা যাবে না।” আমাদের কাছে যতটুকু বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আছে, তার ভিত্তিতে বলা যায় ২৪শে জুন শনিবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে চাঁদ “খালি চোখে দেখার” কোনো সম্ভাবনা নাই। সৌদি যেহেতু ক্যালকুলেশান পদ্ধতি অনুসরণ করে, তাদের পদ্ধতি অনুযায়ী ২৪শে জুন শনিবার চাঁদের ঘোষণা দেবে – এটা ভিন্ন বিষয়; বিস্তারিত বলতে গেলে পোস্টের আকার বড় হয়ে যাবে]
Mohammad Mozammel Hoque: গ্লোবাল পদ্ধতির সমর্থকরা এ ব্যাপারেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন, তারা কি সৌদিকে ফলো করবেন, নাকি, প্রথম চাঁদ দেখাকে ফলো করবেন। আপনি যা বললেন, “যদি সহি পদ্ধতিতে (চোখে চাঁদ দেখার মাধ্যমে) মাস শুরু করে তাহলে কোনোমতেই রামাদান মাস ৩১ দিন হবে না” – এটি সত্য। মেঘলা আকাশের কারণে ৩০তম দিন রোজা রাখা হচ্ছে এমন এলাকায় যদি কেউ এসে পড়ে যে কিনা দুনিয়ার অন্য এলাকায় ইতোমধ্যে ৩০টি রোজা রেখে ফেলেছে, তাহলে সেই ব্যক্তির করণীয় হচ্ছে জনগণের সাথে সিয়াম পালন করে সেই এলাকার সবার সাথে পরবর্তী দিনে ঈদ পালন করা, যদিও এতে করে তার রোজা সর্বমোট ৩১টি হয়ে গেছে। এটি বিপরীতভাবেও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওই লোক ২৮ দিন রোজা রেখে ঈদ পালন করবে। পরে তিনি একটা রোজা কাযা আদায় করবেন। যদ্দুর আমি বুঝেছি।
Bodrul Huda Jayed: শেষের কথাগুলো খুবই চমৎকার এবং যুক্তিসংগত ছিল। সবাই যদি এমন করে ভাবত, তবে সমাজে ফিৎনা অনেকাংশেই কমে যেত।। ধন্যবাদ স্যার, অনেকের মনে থাকা বিষয়টির অবতারণা করার জন্য।
ChintaBad Niloy: আপনার লিখাটি খুব সন্দর হয়েছে। কোরআন বা হাদিসে কোন অঞ্চলের পরিধির কথা উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে অসংখ্য জাল হাদিস মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। এ বিষয়ে একমাত্র ধর্তব্য বিষয় হচ্ছে চাঁদ দেখার সংবাদ পাওয়া। আরও কোন কিছু বিবেচ্য নেই। নির্ভরযোগ্য কোন মুসলিম চাঁদ দেখেছেন এই সাক্ষ্য দিলে এই সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই তা কার্যকর হয়ে যাবে। এখানে সবাই যা বলে ইসলামি বিধিবিধান প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হতে পারে না। আপনি প্রযুক্তি না থাকার কারণে সংবাদ পেলেন না তখন ঠিক আছে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে ঈদের চাঁদ দেখার সংবাদ পাওয়ার পরেও আপনি রোজা রাখবেন এটা তো মেনে নেয়া যায় না। একসময় মোবাইল না থাকার কারণে হয়তো কারও বিপদের সংবাদ কয়েক ঘন্টা বা দিন পরেও আসতো। এখন তৎখনাৎ সংবাদ পেয়ে ছুটে না যাওয়ার তো কোন কারণ দেখি না।
Mohammad Mozammel Hoque: উপরে আমার মন্তব্যটা পড়বেন। আর আপনার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত কথা হচ্ছে, প্রযুক্তির সুবিধা নেয়া বা প্রযুক্তিকে সহায়ক হিসাবে ব্যবহার করা আর প্রযুক্তিকে প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করা তথা প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করা – এই দুইটা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। ইসলামী শরীয়াহর উৎস বিজ্ঞান নয়, বরং এক আধ্যাত্মিক উৎস যাকে আমরা তাওহীদ-প্যারাডাইম বলি। যাতে ইসলামী শরীয়াহর প্রযোজ্যতাকে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্য প্রণোদিত নয় এমন সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান ও সাধারণ অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করানো হয়েছে।
Muhammad Abdullah Al Yasin: আমি অনেকের ফতোয়া পড়েছি যেমন ইবনে বায, আলবানি, হামজা ইউসুফ অনেকেই গ্লোবালি রাখা পক্ষে আবার অনেকেই লোকালি। আমাদের হানাফি স্কুলেও গ্লোবালি ঈদ করার কথা বলেছেন দেওবন্দের আলেম রশিদ আহমেদ। এই নিয়ে এখন আর বিতর্ক করি না। আমার কাছে লোকালের চেয়ে গ্লোবালটাকেই অনেক লজিক্যাল মনে হয়।
Fazlul Karim Majumder: স্যার, কদরের রাত তো একটা। সেই কদরের রাত কি আরবের রাত, না বাংলাদেশর রাত???
এখন আমরা যদি দিনের পার্থক্য করি তাহলে তো মনে হয়, হয় আমারা কদর মিস করি, না হয় আরবরা মিস করে, কারণ আমাদের জোড় রাত হলে ওদের বিজোড় রাত।। তাছাড়া জুম্মার নামাজ তো হয়তো আমরা এক দিনেই আদায় করি।
বিষয়গুলা অনেক দিন থেকে আমার মাথায় ঘুরতেছে। কিন্তু আমি আমার সমাজে প্রচলিত নিয়ম মেনে চলতেছি। বিষয়টা যদি একটু ক্লিয়ার করতেন।
Mohammad Mozammel Hoque: বার বার ‘কেঁচো খুড়তে সাপ বের হয়ে যাবার মতো’ পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। এই স্ট্যাটাসের আগে দেয়া নোটের শেষের দিকে উল্লেখ করেছিলাম, প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করার পরিবর্তে প্রযুক্তি যদি নির্ভরযোগ্য হয় তাহলে প্রচলিত সাক্ষ্য আইনের পরিবর্তে, শরিয়তের নানা প্রযোজ্য বিষয়ে, প্রযুক্তিগত ফলাফলকে সাক্ষ্যের সমতুল্য বিবেচনা করা যাবে কি? যদি হ্যাঁ বলেন, তাহলেও সমস্যা। যদি না বলেন, তাহলেও সমস্যা।
শবে ক্বদর দুনিয়াতে একটামাত্র রাত্রে আসে, কোরআনের আয়াতের এই লিটারেল মিনিং গ্রহণ করলে ইসলামবিরোধীদের এই অভিযোগকে মেনে নিতে হয়, দুনিয়াটা হচ্ছে সমতল বা ফ্ল্যাট। পৃথিবী যে গোল, সমতল নয়, তাতো সপ্তম শতাব্দীর লোকেরা জানতো না।
গোলাকার পৃথিবী তথা গ্লোবাল ওয়ার্ল্ড কনটেক্সটে পুরো দুনিয়াতে একটা রাত বলতে যা বুঝায় তা একসাথে আসা অসম্ভব। ছোট বাচ্চারাও এখন এটি জানে। তাহলে পুরো দুনিয়ায় একসাথে শবে ক্বদর হয় কি করে? মনে রাখতে হবে, শবে ক্বদর হওয়া মানে পুরো একটা রাত হতে হবে। এর খণ্ডাংশ হলে হবে না। কোরআনেই তা বলা আছে। সন্ধ্যা হতে শুরু হয়ে সেই রাতের ফজিলত ফজর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।
Salamat Ullah: একইদিনে বিশ্বব্যাপী ঈদ পালন বা মাস শুরু করা যাবে কি?
এখানে কিছু কিন্তু আছে (কিন্তুর ব্যাপারটা পরে বলছি)।
আগে দেখতে হবে কে কিভাবে চাঁদের মাস শুরু করে। কেউ খাঁলি চোখে চাঁদ দেখে, কেউ ক্যালকুলেশন পদ্ধতি অনুসরণ করে, আর কেউ করে ক্যালকুলেশন কিন্তু ঘোষণা করে চাঁদ দেখেছি (এটা প্রতারণা -কারণ চাঁদ দেখেনি, মাস হিসাব করেছে )। তো, যেহেতু বিভিন্ন পদ্ধতিতে মাস শুরু করা হয়, আপনারাই বলুন কি করে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখা যায়?
যদি পদ্ধতি হতো “শুধুমাত্র খালি চোখে চাঁদ দেখাই একমাত্র গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি” তাহলে মাঝে মাঝে আমরা একই দিন ঈদ পালন করার সুযোগ পেতাম – সব সময় নয় । যেমন শাবান ১৪৩৮ মাস সারা বিশ্বে শুরু হয়েছিল এপ্রিল ২৮ তারিখ শুক্রবার -খালি চোখে চাঁদ দেখা পদ্ধতিতে । সৌদি যেহেতু ক্যালকুলেশন পদ্ধতি অনুসরণ করে তারা শাবান ১৪৩৮ শুরু করেছিল ২৭শে এপ্রিল বৃহস্পতিবার। সৌদি সূর্যাস্তের সময় সাড়ে তিনঘন্টা বয়সী চাঁদকে “দেখা গিয়েছে” হিসেবে ধরে নিয়ে শাবান মাস শুরু করে – সাড়ে তিনঘন্টা বয়সী চাঁদ দেখা অসম্ভব ঘটনা।
উপরে উল্লেখ করেছি “কিছু কিন্তু আছে”। কিন্তুটা কি? আগে কিছু বিষয় পরিষ্কার করে নিই। ক্যালকুলেশন পদ্ধতি কি “খালি চোখে চাঁদ দেখার বিকল্প”? যদি ক্যালকুলেশন পদ্ধতি ১০০% নিখুঁতভাবে বলতে পারতো তাহলে ক্যালকুলেশন পদ্ধতি অবশ্যই বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করা যেত। সমস্যা হচ্ছে, কোনো ক্যালকুলেশন পদ্ধতি ১০০% নিখুঁতভাবে বলতে পারবে না প্রথম কোথায় চাঁদ দেখা যাবে (খেয়াল করুন প্রথম শব্দটি)। কোনো ক্যালকুলেশন পদ্ধতি দ্বারা কোনো অঞ্চল থেকে প্রথম চাঁদ (First Visibility) দেখার নিশ্চয়তা দেয়া যায় না – দেখা যেতেও পারে আবার নাও পারে। এই রকম অনিশ্চিত বিষয়কে কিভাবে নিশ্চিত ধরা যায় ? তবে Yallop Method ক্যালকুলেশন পদ্ধতি ২৩-২৪ ঘন্টা পরের বয়সী চাঁদ কোথায় কোথায় দেখা যাবে তা ১০০% নিখুঁত বলতে পারবে। খালি চোখে চাঁদ দেখার বিশ্বরেকর্ড ১৫ ঘন্টা +.। সৌদি ১০-১৫ ঘন্টা বয়সী চাঁদ দেখা গিয়েছে হিসেবে ঘোষনা দিয়েছে অনেকবার। যদিও এই বয়সী চাঁদ দেখার কোনো রেকর্ড নাই, কিন্তু বিজ্ঞান বলে “এই বয়সী চাঁদ দেখা যাবার সম্ভাবনা আছে যদিও কোনোদিন দেখা যায়নি ” – চাঁদ দেখা সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক জ্ঞানে ঘাটতি আছে -এটাই হচ্ছে কিন্তু। আসল কথা, চাঁদ দেখা গিয়েছে নাকি যায়নি তা নির্ধারণ হবে “Observation Only”. ২৯ দিন পরে চাঁদ দেখো, না দেখা গেলে ৩০ দিন পূর্ণ করো – এই হাদিস এই জটিল বিষয়ের সহজ সমাধান দিয়েছে।
যদি বিশ্বব্যাপী খাঁলি চোখে চাঁদ দেখা পদ্ধতিকে একমাত্র গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং ক্যালকুলেশন পদ্ধতিকে (যে পদ্ধতিগুলো সঠিক) গাইডলাইন হিসেবে ব্যবহার করা হয় তাহলে নোটে উল্লেখিত “অনেক বেশি” বা “অল্প ব্যবধান”, বা ভিন্ন ভৌগোলিক এলাকা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সহজেই সমাধান করা যায়। “পশ্চিমের চাঁদ দেখা কি পূর্বের দেশগুলো গ্রহণ করতে পারবে?” ধরণের সমস্যার সমাধান ক্যালকুলেশন পদ্ধতি দিতে পারবে। ক্যালকুলেশন পদ্ধতি দ্বারা বলা যাবে, কোন কোন অঞ্চল থেকে চাঁদ দেখা যাবে না কোনো বিশেষ দিনে। যেমন আগামী ২৪শে জুন সৌদি থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাবার কোনো সম্ভাবনা নাই। যেসব অঞ্চল থেকে চাঁদ দেখার সম্ভাবনা নাই তারা কিছুতেই অন্য্ অঞ্চলের ঘোষণাকে গ্রহণ করতে পারে না।
Moon visibility for the month of Shaowal 1438 on 24TH JUNE 2017:
Mjh Chatgami: স্যার আপনি মুফতি নন, অথচ শেষমেশ আপনি ফাতওয়া দিয়ে দিলেন এই বলে যে, “আপনিও আপনার এলাকার লোকদের সাথে সামিল হোন। আমি মনে করি স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখে রোজা শুরু করা উচিত।”
আর যেসব আলেমের ভিডিও লিংক দিলেন তাঁদের দু একজনের কিছু বক্তব্য শুনার ও পড়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। তাঁদের একজনতো পুরো ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ। আরেকজনের এক ভিডিওতে দেখলাম অত্যন্ত খোঁড়া যুক্তি দিয়ে তিনি ব্যাংকের সূদী কারবারের বৈধতা দিয়ে দিলেন। তাই আমি বলি কি “একইদিনে রোজা শুরু ও ঈদ পালনের” ব্যাপারে আপনার দেওয়া ঐসব আলেমের চেয়ে ইমাম আবু হানীফা রহ:, ইমাম মালেক রহ:, ইমাম আহমদ রহ:, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ:, ইমাম শাওকানী রহ:, হযরত আশরাফ আলী থানবী রহ:, আল্লামা হোসাইন আহমাদ মাদানী রহ:, আল্লামা রশীদ আহমাদ গাংগোহী রহ: সহ অন্যান্য যুগশ্রেষ্ঠ আলেমগণ যে মত দিয়েছেন তা অধিক গ্রহণযোগ্য।
Mohammad Mozammel Hoque: কোথায়? নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অধ্যয়ন, অনুসন্ধান ও চিন্তাভাবনার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে নির্ভরযোগ্য ইমাম, আলেম ও মুফতিদের বক্তব্য শুনে নিজের একটা মতামত গঠন করা ও আগ্রহীদের কাছে তা শেয়ার করা কী করে ফতোয়া দেয়া হলো? আপনি কি এই মন্তব্য বুঝে করেছেন?
“অতএব, আপনিও আপনার এলাকার লোকদের সাথে সামিল হোন। আমি মনে করি, স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখে রোজা শুরু করা উচিত। যদি আমার এলাকায় গ্লোবলি রোজা-ঈদ করার প্রচলন থাকতো, আমি অধিকাংশকে ভুল মনে করা সত্বেও তাদের সাথে রোজা-ঈদ করতাম। সাথে সাথে আমার দ্বিমতের বিষয়গুলো বিশেষজ্ঞদের কাছে উপস্থাপন করতাম। বার বার এই কাজই করতাম। ” – এই কথা, আর “”আপনিও আপনার এলাকার লোকদের সাথে সামিল হোন। আমি মনে করি স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখে রোজা শুরু করা উচিত”। – এই কথার তাৎপর্য ও অর্থ কি এক? কেন যে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল উদ্ধৃতি (misquotation) দেন, বুঝতে পারছি না। আমি কী বললাম, আর আপনি কীভাবে তা উদ্ধৃত করলেন…! অবাক কাণ্ড….!!
Mohammad Mozammel Hoque: যারা প্রশ্ন করেছেন বিশেষ করে তারাসহ অপরাপর আগ্রহী পাঠকরাও খেয়াল করবেন, চাঁদ দেখা সম্পর্কে “কোরআন বা হাদিসে কোন অঞ্চলের পরিধির কথা উল্লেখ নেই।” কথাটা সঠিক নয়। স্বতন্ত্রভাবে কোরআনে বলা হয়েছে, যারাই এই মাসকে পাবে তারা সিয়াম পালন করবে। আজকে জুনের এগারো তারিখ। দুনিয়ার সব জায়গায় আজ জুনের এগারো তারিখ নয়। তো, জুনের এগারো তারিখের কোনো করণীয়, এ হিসাবে, শুধুমাত্র দুনিয়ার সে সব স্থানের জন্য প্রযোজ্য হবে যেখানে আজ জুনের এগারো তারিখ।
এই সহজ বিষয়টিই রমজানের রোজার জন্য প্রযোজ্য। কোরআন আমাদের যা স্পষ্ট বলে।
আর হাদীসে কুরাইবে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলছেন, না, রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের এভাবেই নির্দেশ দিয়েছেন। দেখুন, এটি ইবনে আব্বাস (রা.)এর ব্যক্তিগত মতামত হয় কি করে? ইমাম মুসলিম স্বয়ং এটিকে ইবনে আব্বাসের (রা.) ব্যক্তিগত মত মনে করেন নাই। তিনি মুসলিম শরীফে শুধুমাত্র এই হাদীসটির জন্য একটা অনুচ্ছেদ রেখেছেন এবং এর শিরোনাম দিয়েছেন “নিজ নিজ শহরে চন্দ্রোদয়ের হিসাব অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এক শহরের চন্দ্রোদয়ের হুকুম উল্লেখযোগ্য দূরত্বে অবস্থিত অন্য শহরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।”
ইবনে আব্বাসের (রা.) মতো ফকীহ সাহাবী বলছেন, তৎকালীন মদীনায় জীবিত সব সাহাবী উনার এই ফয়সালা মেনে নিয়েছেন, মূল রাবী বিষয়টিকে প্রত্যক্ষভাবে রাসূলূল্লাহ (স.) এর নির্দেশ হিসাবে দাবী করছেন, তারপরও কি এ কথা বলা হবে, এটি একজন সাহাবীর বিচ্ছিন্ন মত? এ বিষয়ে যদি অন্য সাহাবীদের ভিন্নতর রেওয়ায়েত থাকতো তাহলেও না হয় বিষয়টিকে “বিচ্ছিন্ন মতামত” হিসাবে মনে করা যেতো। এটি তো অকাট্য দলীল। এটি অন্তত:পক্ষে ফে’লী হাদীস যাতে আল্লাহর রাসূলের (স.) সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমল সম্পর্কে প্রত্যক্ষভাবে জানা যাচ্ছে।
Mjh Chatgami: হাদীসটির ব্যাখায় ইমাম শাওকানী (রহ) তাঁর নাইল উল-আওতার কিতাবে লিখেছেন:
وَاعْلَمْ أَنَّ الْحُجَّةَ إنَّمَا هِيَ فِي الْمَرْفُوعِ مِنْ رِوَايَةِ ابْنِ عَبَّاسٍ لَا فِي اجْتِهَادِهِ الَّذِي فَهِمَ عَنْهُ النَّاسُ وَالْمُشَارُ إلَيْهِ بِقَوْلِهِ : ” هَكَذَا أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ” هُوَ قَوْلُهُ : فَلَا نَزَالُ نَصُومُ حَتَّى نُكْمِلَ ثَلَاثِينَ ، وَالْأَمْرُ الْكَائِنُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ مَا أَخْرَجَهُ الشَّيْخَانِ وَغَيْرُهُمَا بِلَفْظِ : { لَا تَصُومُوا حَتَّى تَرَوْا الْهِلَالَ ، وَلَا تُفْطِرُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا الْعِدَّةَ ثَلَاثِينَ } وَهَذَا لَا يَخْتَصُّ بِأَهْلِ نَاحِيَةٍ عَلَى جِهَةِ الِانْفِرَادِ بَلْ هُوَ خِطَابٌ لِكُلِّ مَنْ يَصْلُحُ لَهُ مِنْ الْمُسْلِمِينَ
জেনে রাখ, (আমাদের কাছে) হুজ্জত (সুস্পষ্ট প্রমাণ) সাব্যস্ত হয় ইবন আব্বাস (রা)-এর মারফু’ রেওয়ায়াত থেকে, তার ইজতিহাদ থেকে নয় যা লোকজন তার থেকে বুঝেছে এবং তাঁর বর্ণনায় যেটি এসেছে “এভাবে রাসূল (সা) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন” সেটি তারই মন্তব্য; (এজন্যই তিনি বলেছেন): “আমরা সিয়াম পালন করে যাচ্ছি ত্রিশদিন পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত”। রাসূল (সা)-এর নির্দেশটি নিহিত রয়েছে সেই হাদীসটিতে যা শায়খাইন (বুখারী ও মুসলিম) ও অন্যান্যদের কর্তৃক সংকলিত হয়েছে: “নতুন চাঁদ না দেখা পর্যন্ত সিয়াম পালন শুরু করবে না এবং তা না দেখা পর্যন্ত সিয়াম পালন বন্ধ করবে না; যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে ত্রিশ দিনে (গণণা) পূর্ণ করবে”; এবং এই বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে কোনো একটি অঞ্চলের লোকজনকে বুঝাচ্ছেন না বরং সমস্ত মুসলিমদেরকেই বুঝাচ্ছে।
Mohammad Mozammel Hoque: যারা ইবনে আব্বাসের (রা.) এই হাদীসটাকে ব্যক্তিগত মত হিসাবে দেখেছেন তাদের মধ্যকার একটা মত আপনি এখানে উদ্ধৃত করেছেন। আরো এ রকম বিশেষজ্ঞ-মত উদ্ধৃত করা সম্ভব। এবং এটি উভয় পক্ষ হতেই করা সম্ভব। এ বিষয়ে ব্যাপারটা তা-ই হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আপনার-আমার কাছে প্রকৃত ব্যাপারটা কেমন মনে হয়, তা-ই গুরুত্বপূর্ণ। যে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নাই তা মানাটা আমাদের জন্য আবশ্যকীয়। কিন্তু মতবিরোধপূর্ণ তথা ইজতেহাদি বিষয়ে পক্ষ-বিপক্ষের উদ্ধৃতি ছোঁড়াছুঁড়ি করে শেষ পর্যন্ত কেউ কোনো একক সমাধানে আসতে পারে না। সমাধান ব্যক্তিকেই খুঁজে নিতে হয়। অবশেষে, সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্তৃপক্ষ ও নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞের মতামতকেই কার্যত: মেনে চলতে হয়।
Mjh Chatgami: স্যার, একইদিনে সাওম ও ঈদ পালন নিয়ে যে হাদীসগুলো আছে সেগুলো হল হাদীসে মারফূ (রসূল সা: এর কথা, কাজ ও অনুমোদন) আর হযরত কুরাইব থেকে বর্ণিত হাদীসটি হল, হাদীসে মাওকূফ (সাহাবীগণের কথা, কাজ ও অনুমোদন)। এখন উসূলে হাদীস অনুসারে মারফূ হাদীসের বিপরীতে মাওকূফ হাদীস কখনো দলীল হতে পারে না। তাই হানাফী, হাম্বলী ও মালেকী মাযাহাবের শ্রেষ্ঠ আলেমগণ কুরাইব রা: এর হাদীসটিকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করেন নি।
ইজতিহাদী বিষয়ে অবশ্যই কাদা ছোড়াছুড়ি করা যাবে না, তবে জমহূর মুজতাহিদগণের মত অনুসরণ বা শক্তিশালী ইজতিহাদ গ্রহণ করাটাই উত্তম। যেমনটা আমরা অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রে করি।
Mohammad Mozammel Hoque: যারা স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন, তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হলো, তারা সেই সব মারফু হাদীসকেই দলীল হিসাবে উপস্থাপন করছেন, যেগুলোকে একই দিনে সাওম ও ঈদ পালন করার পক্ষাবলম্বনকারীগণ নিজেদের অবস্থানের পক্ষে দলীল হিসাবে গ্রহণ করছেন।
হাদীসে কুরাইব (র.) হতে শেষ পর্যন্তও তো এ’কথা বহাল থাকে, মুয়াবিয়া (রা.)এর শাসনামলে শাম আর মদীনাতে একসাথে ঈদ উদযাপন হয় নাই। একসাথে ঈদ পালনের কোনো উদ্যোগ উনারা গ্রহণ করেন নাই।
একসাথে ঈদ পালনের বিষয়ে মতবিরোধটা পুরনো, কিন্তু একসাথে উদযাপনের দাবীটা সাম্প্রতিক। তো, দুনিয়ার সব জায়গায় খবর পৌঁছানের প্রযুক্তিগত যে সুবিধার দোহাই দিয়ে এই দাবীটা তোলা হচ্ছে সেই প্রযুক্তির দৌঁড় ও ক্ষমতা কতোটা সর্বগ্রামী, তা বুঝলে ক্লাসিক্যাল ফেকাহ’র তরফ হতে কেউ প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ার এ দাবী করতেন বলে মনে হয় না। প্রযুক্তি স্বয়ং, শরীয়াহ’র প্রচলিত সাক্ষ্য আইনকে অকার্যকর করে তোলে। এই অভিনব সমস্যা সম্পর্কে জানলে ও বুঝলে, জমহুর উলামায়ে কিরাম কী বলতেন বা করতেন, জানি না।
Mjh Chatgami: স্যার, আপনি প্রথমে একইদিনে রোজা ও ঈদ পালনের পক্ষে হাদীসগুলোর বর্ণনা ও ক্লা্সিকল মুজতাহিগণের ব্যাখ্যাগুলো পড়েন। কেননা হাদীস ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়মনীতি রয়েছে যা প্রযুক্তিনির্ভর নয়। অর্থাৎ কোনরকম প্রযুক্তির সহায়তা ছাড়া হাদীস থেকে হুকুম বের করা যায়। এই নীতিসমূহ কেয়ামত পর্যন্ত যত প্রযুক্তি বা নতুন উদ্ভাবন হোক না কেন পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তাই পূর্ববর্তী জমহূর মুজতাহিদগণ হাদীসসমূহ থেকে যে হুকুম(একইদিনে সাওম ও ঈদ পালন করা) পেয়েছেন সেটা আজকের তথ্যপ্রযুক্তির যুগে পাল্টে যেত বা ভিন্ন হুকুম হত বিষয়টা মোটেও সেরকম নয়। হাদীসগুলোর ব্যাখ্যা ও বর্ণনায় এটা স্পষ্ট হয় যে, রোজা ও ঈদ মুসলিম উম্মাহ একইদিনেই পালন করবে। যেমন: হাদীসে আছে,
শাওয়্যাল মাসের চাঁদ অর্থাৎ ঈদের চাঁদ মেঘে ঢাকা থাকায় মদিনার মুসলিমরা পরদিন রোযা রেখে ফেললেন। এই প্রেক্ষিতে আবু দাউদ শরীফে আবু উমাইর বিন আনাস হতে বর্ণিত আছে,
… أَنَّ رَكْبًا جَاءُوا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْهَدُونَ أَنَّهُمْ رَأَوْا الْهِلَالَ بِالْأَمْسِ فَأَمَرَهُمْ أَنْ يُفْطِرُوا وَإِذَا أَصْبَحُوا أَنْ يَغْدُوا إِلَى مُصَلَّاهُمْ
(দিনের শেষভাগে) একদল যাত্রী মদিনায় প্রবেশ করলেন। তারা নবী (সা)-কে সাক্ষ্য দিলেন যে, তারা (ভ্রমণরত অবস্থায়) আগের সন্ধ্যায় চাঁদ দেখে এসেছেন। অতঃপর নবী (সা) মদিনার মুসলিমদেরকে রোযা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন এবং পরদিন সকালে (ঈদের নামাজ আদায় করতে) তাদের নামাজের স্থানে যেতে বলেন।
ইমাম আহমদ-এর মুসনাদ-এর বর্ণনায়, তিনি (সা) নির্দেশ দিলেন,
… أَنْ يُفْطِرُوا مِنْ يَوْمِهِمْ وَأَنْ يَخْرُجُوا لِعِيدِهِمْ مِنْ الْغَدِ
… সেইদিন রোযা ভেঙ্গে ফেলতে এবং পরদিন তাদের ঈদের জন্য বের হতে।
যেহেতু হাদীসে একই দিনে সাওম ও ঈদ পালনের হুকুম পাওয়া যাচ্ছে, তাই আমাদের হুকুম পালনের প্রতি মনযোগী হতে হবে। কীভাবে করব সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। পূর্ববর্তী মুজতাহিদণ এই হুকুম পালনে তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছেন। চাঁদের বাস্তবতা না জানতে পারার অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের অধিকাংশই সঠিক মতের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন কারণ এ ব্যাপারে হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নির্দেশনা অত্যন্ত সুস্পষ্ট। প্রযুক্তিগত উপকরণ ব্যবহারে শরীআর বাধা নেই। বর্তমানে যেহেতু চাঁদের বাস্তবতা ও দলীল থেকে সঠিক জ্ঞানটি অর্জিত হয়েছে, সেহেতু এখন আর কোনো যুক্তি বা অজুহাত অবশিষ্ট থাকছে না।
আর আপনি হযরত কুরাইব এর বর্ণনা টেনে আনছেন রসূল সা: এর মারফূ রেওয়াত বাদ দিয়ে, যা উসূলে হাদীসের বিরুদ্ধে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ তার মাজমু’ আল ফাতওয়া গ্রন্থে বলেন,
مُخَالِفٌ لِلْعَقْلِ وَالشَّرْعِ
“এ বিষয়টি (চাঁদ দেখাকে কোনো একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বা দেশের মধ্যে সীমিত করাটা) যুক্তি এবং শরীয়ত উভয়েরই পরিপন্থি।”
Mohammad Mozammel Hoque: Mjh Chatgami, আমি তো বিষয়ের ওপর কোনো স্বতন্ত্র আলোচনা শুরু করতে চাই নাই। মূল নোটে দেখেন, আমি কিছু ভিডিও লিংক শেয়ার করে সেগুলোর ওপর কিছু ওভারঅল মন্তব্য দিয়েছি মাত্র। আপনি বার বার আমাকে বিষয়টির ওপর একটা পূর্ণাঙ্গ আলোচনায় টেনে নেয়ার চেষ্টা করছেন। আমি এতে ইচ্ছুক নই।
আপনি আমার এই মন্তব্যটা, একটু উপরেই আছে, ভালো করে খেয়াল করেন নাই – ” যারা স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন, তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হলো, তারা সেই সব মারফু হাদীসকেই দলীল হিসাবে উপস্থাপন করছেন, যেগুলোকে একই দিনে সাওম ও ঈদ পালন করার পক্ষাবলম্বনকারীগণ নিজেদের অবস্থানের পক্ষে দলীল হিসাবে গ্রহণ করছেন।” – এই কথার প্রত্যুত্তরে “আর আপনি হযরত কুরাইব এর বর্ণনা টেনে আনছেন রসূল সা: এর মারফূ রেওয়াত বাদ দিয়ে, যা উসূলে হাদীসের বিরুদ্ধে।” – কীভাবে আপনি এ কথা বললেন, বুঝে আসছে না।
এই প্রেক্ষিতে আবু দাউদ শরীফে আবু উমাইর বিন আনাস হতে যে হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে তাতে তো এটি স্পষ্ট, চাঁদ দেখার ব্যাপারে সাক্ষ্যদানকারী আগন্তুকদ্বয় মদীনার পার্শ্ববর্তী এলাকা হতে এসেছেন এবং এই ঘটনার ওপরে বর্ণিত অন্য রেওয়ায়েত থেকে জানা যায়, মদীনার আকাশে মেঘ থাকার কারণে ঠিক মতো চাঁদ দেখা যায় নাই। এই হাদীসকে গ্লোবালি ঈদ পালনের দলীল হিসাবে ব্যবহার করার কারণটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, তখনকার সময়ে দুনিয়াটা যে গোল, তা-ই তো কারো জানা ছিলো না। এখন আমরা জানি, বিশ্বব্যাপী একটা দিন বা একটা রাত বা একই তারিখ হওয়া অসম্ভব। এটি তো তখনকার কারো পক্ষেই জানার কথা না। কেবলমাত্র স্থানীয়ভাবে চাঁদ-সূর্য্য দেখার ঐশী বিধানের মাধ্যমে আমরা বর্তমান বিজ্ঞানের সাথে বৈপরিত্যের ‘সংকট’কে এড়াতে পারি।
যাহোক, এ নিয়ে আপনার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহবোধ করছি না। ভালো থাকুন।