কিছুক্ষণ আগে ‘সময় উপযোগী নারী সংগঠন সময়ের দাবি’ (লিখেছেন সিরাজুম রুমি) শীর্ষক পোস্টে আমি মন্তব্য করি।
ব্লগার মহোদয় তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে যা বলেছেন তাতে মনে হতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নেকাব পরা মেয়েরা ব্যাপকভাবে অবিচারের শিকার। আমি এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে লিখেছিলাম,
আমার এক সহপাঠিনী নেকাব পরেই ফার্স্ট ক্লাশ পেয়েছেন। নেকাব পরে চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছেন। যোগদানের মাস কয়েক পরে পরিচিতিগত সমস্যার কারণে নেকাব পরা ছেড়েছেন। এটি প্রায় বিশ বছর আগের কথা।
এ বছর আমাদের পার্শ্ববর্তী বাংলা বিভাগে রেকর্ড পরিমাণ জিপিএ নিয়ে যে মেয়েটি প্রথম হয়েছে, নেকাব পরেই সে এই রেজাল্ট করেছে।
এর ভিত্তিতে আমি মন্তব্য করেছিলাম, কোয়ালিটি ডাজ ম্যাটার।
বলেছিলাম, নিজের দীর্ঘ শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার সূত্রে দেখেছি, নেকাব পরা মেয়েরা ক্লাশে কোনো রেসপন্স করে না। আমি ক্লাশে তাদের ভূতের মতো বসে থাকার কথা বলেছি। এই শব্দচয়নের জন্য অব্যবহিতভাবে দুঃখ প্রকাশও করেছি।
এরপর লিখেছিলাম, অধিকাংশ নেকাব পরা মেয়ে নিজেদের, এমনকি দাদার বয়েসী পুরুষ শিক্ষকদের সাথেও এমন ভাব দেখায়, যেন পুরুষ মাত্রই তাদের ‘সম্ভ্রমের’ জন্য পটেনশিয়াল থ্রেট!!
উক্ত ব্লগার মহোদয় আমার মন্তব্যের উত্তরে আমাকে ‘জেগে ঘুমানো, মস্তিস্কে বিকৃতিসম্পন্ন ও সিক মেন্টালিটির লোক’ বলে মন্তব্য করেন!
আমি এর উত্তরে কোরআনের একটা আয়াত উল্লেখ করে (ফা-ইজা খাত্ববা হুমুল জাহিলুনা ক্বলু সালামা) বললাম। কখনো কোনো নেকাব পরিহিতার সাথে নেকাব পরা নিয়ে কোনো প্রকার বিতর্ক করি নাই। উনার লেখাটা ব্লগে দেখে মন্তব্য করেছি মাত্র।
মুখ ঢাকার দলীলকে সঠিক মনে করে এসব আধুনিক নেকাব পরিহিতাগণ শুধুমাত্র মুখের অর্ধাংশ ঢেকে চলেন কেন? তাদের ভাষায় সৌন্দর্যের রাজধানী (চেহারা) গোপন রাখা জরুরি মনে করা সত্ত্বেও এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু (চোখ ও এর আশপাশের অঞ্চল) অরক্ষিত ও উন্মুক্ত রাখেন কেন? তাও আবার উন্মুক্ত অংশে ‘মাঞ্জা’ লাগিয়ে? এ ধরনের আচরণের যুক্তিগুলো তো জানা গেলো না।
এই প্রতিমন্তব্য পোস্টানোর পরপরই দেখলাম ব্লগারের মন্তব্য। পোস্ট খুলে দেখি আমার মন্তব্যগুলো সাফ গায়েব! এসবি ব্লগ চালু হওয়ার আগে সামুতে ব্লগিং করতাম। এসবি ব্লগ চালু হওয়ার দু-তিন দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। এরপর হতে অদ্যবধি স্বীয় নাম-পরিচয়ে ব্লগিং করা এই বান্দার কোনো মন্তব্য কেউ হাওয়া করে দেয় নাই! বড় দুঃখ পেলাম!
এরচেয়েও বেশি দুঃখ লাগে যখন দেখি, ইসলামী জযবাধারী আমাদের আন্দোলনপন্থী বোনেরা সরাসরি আয়িশার (রা) মতো (শুধুমাত্র পর্দার দিক থেকে!) হতে চান! তারা যদি প্রথমেই আয়িশার (রা) মতো হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা না করে হযরত খাদিজার (রা) মতো মহান হওয়ার চেষ্টা করতেন, তাহলে কতই না ভালো হতো!
এসবি ব্লগ থেকে নির্বাচিত মন্তব্য–প্রতিমন্তব্য
নোমান সাইফুল্লাহ: পর্দা তো শুধু নেকাব নয়, আবেদনময়তার অবদমন। কথা হচ্ছে শুধু মাত্র নেকাব পরলেই অপরকে ডিঙ্গিয়ে সামনে আগানো যায় কিনা সেটা ভাবনার বিষয়।
পর্দা হতে পারে অপরকে আড়াল করা। অথবা হতে পারে অপরের ভেতর রহস্য ভেদ করার আকাংখাকে তীব্র করা। কারণ, নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি মানুষের আকাংখা চিরন্তন।
আপনার যুক্তিগুলো খুব বাস্তবসঙ্গত। ধন্যবাদ। এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত লেখার অনুরোধ রইল।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কিন্তু ভাই যেই ভদ্রমহোদয়া আমার মন্তব্যগুলো ডিলিট করে দিলেন, সে ব্যাপারে কী হবে? আমার কাছে এ আচরণ অকল্পনীয় মনে হচ্ছে!
নোমান সাইফুল্লাহ: সম্ভবত তিনি চিন্তার মোকাবেলা শক্তির বদৌলতে করতে চাচ্ছেন। উনাদেরই বা কী দোষ দিব। আমাদের মুরব্বীরা তা-ই শিখিয়েছেন। আর ধর্ম বিষয়ে কোনো ফিলোসফিক্যাল থটকে সব সময়ই শরীয়াহপন্থীরা নিরুৎসাহিত করেছেন। তাই এটা হতে পারে। এই নিয়ে মন খারাপ করা মনে হয় ঠিক হবে না। ধন্যবাদ।
লোকমান বিন ইউসুপ,চিটাগাং: বিস্তারিত লিখলেও কাজ হবে না। মনে করা হবে, কোনো সংস্থার মেয়ে কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত বা মনের মধ্যে রোগ আছে। এ ব্যাটা মেয়েদের চেহারা দেখবার চায় কেন? চেহারা খোলার পক্ষে লেখে! সাদা উত্তর– মনের মধ্যে রোগ।
এরা স্কুলের একজন জন ছাত্রীর ১০০ পাওয়ার জন্য অন্য সকল মেয়েকে ফেল করাতে মানসিকভাবে প্রস্তুত।
দর্শনকে অনেকে মনে করে বাংলা রিডিং পড়া, আমার কাছে দর্শনই পৃথিবীর কঠিন বিষয়। অনেক মানুষ ফাঁসি কবুল করে, কিন্তু দর্শন ছাড়ে না। আজকে ১৮-২৮ বছর পর্যন্ত যে বিষয়টা নেকাবীরা ইসলাম মনে করছে, তার কন্যা সন্তান বড় হলে তার কাছে সেটিকে হাস্যস্পদ মনে হবে। কেহ আগে বুঝে, কেহ পরে বুঝেও চুপ করে থাকে।
নেকাবের সমর্থকদের সবিনয়ে প্রশ্ন রাখি– বয়স্ক মহিলারা নেকাব ছাড়ে না কেন? ওদের তো ফেতনার আশংকা নাই। আমার এক দাদীর বয়সী মহিলা আমারে দেখলে এমন ভাব করে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করে। রিয়া কোথায় আছে, সেটা একটু এক্সপেরিমেন্ট চালালেই জানা যাবে।
ধন্যবাদ।
মুজাহিদ আহমাদ: ???
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হ্যাঁ ভাই, ভীষণ চিন্তার কারণ! এতো অসহিষ্ণু লোকজন কীভাবে ইসলাম কায়েম করবেন, বুঝতে পারছি না। যে কথায় যুক্তি আছে, সে যুক্তি আমার পছন্দ না হলে আমি পাল্টা যুক্তি দিতে পারি। কিন্তু সরাসরি (পোলাপানের মতো) কাট ??? সব মন্তব্য হাওয়া!!!
যুমার৫৩: সহানুভুতি রইলো।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কোরআনে আল্লাহ তায়ালা পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে কথা বলতে নিষেধ করার সাথে সাথে একই আয়াতে উত্তমপন্থায় বাক্যালাপের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা এটিকেট বা ম্যানার বলতে যা বুঝি, তা-ই হলো উত্তম কথা (ক্বওলাম মারুফা/ক্বাওলান সাদী-দা)।
একজন ছাত্রী তার সহপাঠীদের সাথে ‘ফিতনাবোধ’ করতে পারে, কিন্তু তার বাপের বয়সী অ-সুদর্শন পুরুষ শিক্ষক সম্পর্কে ফ্যাকাল্টির করিডোরেও যখন ‘ফিতনার আশংকা’ করে, তখন কেমন হয় ব্যাপারটা? আগে বড়রা সালাম দেয়া সুন্নাহর দাবি হলেও আমাদের দেশে সাধারণত ছাত্র-ছাত্রীরাই শিক্ষকদের আগে সালাম দেয়। নেকাব পরিহিতা ছাত্রীদের অনেকেই পুরুষ শিক্ষকদেরকে সালাম দেয় না। তাদেরকে সালাম দিলেও উত্তর তারা দেয় না। অথচ, সালামের উত্তর কমপক্ষে সমভাবে দেয়া ওয়াজিব।
পর্দার নামে ইনারা দুনিয়াটাকে কেবলমাত্র সাদা-কালো বাইনারি হিসাবে দেখেন বলে মনে হয়। দুনিয়াটা রঙিন। এই রং-বৈচিত্র্যময় দুনিয়াই আখিরাতের শষ্যক্ষেত্র। একে যথাসম্ভব অস্বীকার করে নয়, বরং যথাসম্ভব কাজে লাগানোর যোগ্যতা অর্জন করাই বিশ্বাসীমাত্রেরই কর্তব্য-কর্ম নয় কি? সহানুভূতি প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ।
উম্মে সালমা: কণ্ঠের পর্দা রক্ষা বলে একটা কথা সংস্থার মেয়েরা এখন মেনে চলছে। সালাম দিলে কেমনে রক্ষা হবে সেটা? তাই এখন আর তাদের কোনো রেসপন্স ক্লাসেও পাওয়া যায় না।
লোকমান বিন ইউসুপ,চিটাগাং: কণ্ঠের পর্দা! নতুন বিষয় জানলাম। আগে জানতাম কর্কশ করে সালামের উত্তর দেয়ার নির্দেশ জারী আছে। কর্কশ স্বরে টেলিফোন রিসিভের কথা আছে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কোরআন শরীফে তো কর্কশ স্বরে কথা বলার নির্দেশ দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে, সমস্যাগ্রস্ত লোকদের সাথে কোমল স্বরে কথা না বলতে। এ ব্যাপারে আম নির্দেশটা হচ্ছে উত্তম পন্থায় বাক্যালাপ করা।
এম এন হাসান: ‘নিকাব সম্বন্ধে ইসলামিক স্কলারদের অভিমত’ শীর্ষক পোস্টে নিকাব রিলেটেড একটি মন্তব্য করেছি। এখানেও সেটি কপি-পেস্ট করলাম। আপনার ভিন্নমত থাকলে জানতে আগ্রহী।
উপরোক্ত পোস্টের আলোচনা থেকে যা বুঝলাম, হাম্বলীগণ বাদে বাকি সবাই ফিতনার আশংকা থেকে নিকাবকে নিয়ে পর্যালোচনা ও মতামত দিয়েছেন যেখানে ওয়াজিব থেকে মুস্তাহাব বা না করা পর্যন্ত ভেরি করে।
আমার পয়েন্টস একটু ভিন্ন জায়গায়।
প্রথমত, নিকাব বা পর্দার ইস্যুতে ঈমাম-মুফাসসির-আলেমগণ মোটামোটি সবাই ‘ফিতনা’ ইস্যুটাকে পুরুষের পয়েন্টস অফ ভিউ থেকেই বিবেচনা করেছেন। কেননা তারা সবাই পুরুষ। আমার কাছে এখানে পুরুষ প্রজাতিকে এক ধরনের আন্ডারমাইনই করা হয় বলে মনে হয় (ভুল হতে পারে)। কেননা ভাবটা এমন, পুরুষ এতটাই অধপতিত যে মেয়েদের নখ-মোজা-জুতা দেখলেও তাদের কামভাব জাগ্রত হওয়ার আশংকা রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে সেই সমস্ত অধপতিত পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত করেননি।
এখন পুরো উম্মাহর স্কলারগণ ‘অধপতিত পুরুষদের’ টেনশনে আল্লাহর অর্ধ সৃষ্টিকে কন্ট্রোল করার প্রচুর কায়দা-কানুন বের করেছেন, যেটা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা) জীবিত থাকতে করেননি। ব্যাপারটা আমার কাছে আজিবই মনে হয়।
দ্বিতীয়ত, ইসলামপূর্ব আরব সমাজে ফিতনা কম ছিল না। ইতিহাস অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, এখনকার হলিউড-বলিউড যে সমস্ত ফিনফিনে দৃশ্যমান কাপড় পরে এটাকে আধুনিক বলে চালিয়ে দিচ্ছে,আরব সমাজে সেই ধরনের পোশাক, অর্ধ-উলংগপনা সবই ছিল। উপরে এক ভাই যেটি উল্লেখ করেছেন– হযরত আয়েশার (রা) বোন হযরত আসমা রাসূলের (সা) সামনে পাতলা কাপড় পরিহিত অবস্থায় আসলে রাসূলুল্লাহু (সা) সঙ্গে সঙ্গেই মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলেন: “হে আসমা, কোনো মেয়ে বালেগ হওয়ার পর তার মুখ ও হাত ছাড়া শরীরের কোনো অংশ দেখানো জায়েয নয়।” অনুমান করি, কাপড় এমনই পাতলা ছিল যে আল্লাহর রাসূলের (সা) মতো বয়স্ক ব্যক্তিও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি কী বললেন?– “কোনো মেয়ে বালেগ হওয়ার পর তার মুখ ও হাত ছাড়া শরীরের কোনো অংশ দেখানো জায়েয নয়।”
তৃতীয়ত, ‘ফিতনার আশংকা’ কথাটা আপেক্ষিক। যেমনটা বলেছেন মোজাম্মেল ভাই। উদাহরণ দিয়ে বলি। বাস্তবতার খাতিরে আমাকে গত প্রায় ৬ বছর যাবত পাশ্চাত্যের একটি দেশে থাকতে হচ্ছে। যেখানে মেয়েদের পোশাকের পরিধি নিয়ে ব্যখ্যার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। গ্রীষ্মকাল যখন শুরু হয়, তখন পোশাকের সাইজ এতটাই ছোট হতে থাকে যে, মাঝে মাঝে নিজেদেরই লজ্জা লাগে। কিন্তু এই পর্যন্ত আমার পরিচিত কোনো মুসলমান পুরুষ ইনক্লুড আমি নিজে ‘ফিতনায়’ পতিত হয়ে ঐ মেয়েদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে, এমন খবর পাইনি।
ট্রেনে যখন চড়তে হয় তখন এ সমস্ত দৃশ্য দেখতে না চাইলেও আপনার চোখের-হাতের সীমায় এসে পরে। তা সত্ত্বেও এখানে ‘ফিতনা’ তৈরি হচ্ছে না। এমনকি এইদেশী স্থানীয়রাও যে অহরহ মেয়েদের দেখলে কামুক ভাব নিয়ে তেড়িয়ে যায়, ব্যাপারটা ওরকম নয়। হ্যাঁ, এখানেও ধর্ষণ, ব্যভিচার ইত্যাদি ঘটে, যেমনটা ঘটে আমাদের মুসলিম দেশেও।
এখন একটা মুসলিম দেশে যেখানে সমাজ অনেকাংশেই কনজারভেটিভ, সেখানে একটা মেয়ে চোখ-কান-মুখ খোলা রাখলেই ‘ফিতনার’ সৃষ্টি হবে, এটা কেমন কথা? যেই সমস্ত অধপতিত পুরুষরা মেয়েদের চেহারা দেখলেই উত্তেজিত হয়ে উঠেন, এটা তো এক ধরনের সাইকোলজিক্যাল সমস্যা, সামাজিকভাবে তার চিকিৎসা হওয়া দরকার, ঐ মেয়েদের নয়। অথচ আমরা অসুস্থ ঐসব অধপতিত পুরুষদের কাল্পনিক ফিতনার কথা চিন্তা করে বিশাল একটা জনগোষ্ঠীকে ‘মানুষ’ হিসেবে তার স্বকীয়তা ও ব্যক্তিত্ব প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করছি, তাও কুরআন-হাদীসের জাস্টিফিকেশনে।
ফাইনালি, আমি যেমন আমার অসুখ হলে আমার ভাইকে ঔষধ খাইতে বলি না, আর সেটা সে মানবেও না, ঠিক তেমনি আমার সমস্যার কারণে কোনো নারীকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে ফেলতেও বাধ্য করি না। ব্যাপারটা ব্যক্তির নিজস্ব পছন্দের উপর ছেড়ে দেয়াই ভালো মনে করি।
ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ভাই, যত বেশি টলারেন্স তৈরি হবে, অনাহুত বা অনাবশ্যক কিম্বা অনুচিত জায়গায় অহেতুক সংবেদনশীলতা তত কমবে। যত কম দেখবে, ততই দেখার আগ্রহ সৃষ্টি হবে। তাই বলে যথাসম্ভব দেখতে হবে– তাও নয়। তবে কাজেকর্মে দেখাদেখির কোনো প্রসঙ্গ সৃষ্টি হলে এর একটা ইতিবাচক দিক হলো অতি আগ্রহের ভাবটা এতে কেটে যায়।
যারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছেলে-মেয়েদের একসাথে চলাচল ও মেলামেশা দেখতে অভ্যস্থ নয়, তারা মনে করতে পারেন, এরা বোধহয় সবসময়…! যদিও বাস্তবতা তা নয়। এখানে অঘটন ঘটে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে সুরক্ষিত পরিবেশেও সেসব ঘটে। সমাজের সতেচন সদস্য হিসাবে আমরা তা জানি।
আমার কথা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমের পাহাড়ি অঞ্চলে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সাথে ভোরে কাজে যাওয়া বা সেখানে ঘর বানিয়ে থাকা পার্শ্ববর্তী গ্রামের মহিলারা সম্পূর্ণ মুখ ঢেকে চলাচল করেন। প্রায়শই দেখা যায়। ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কোনো মেয়েকে এভাবে পরিপূর্ণভাবে পর্দা করতে দেখি নাই।
মুখ ঢাকাই যদি জরুরি মনে করেন, তাহলে আশেপাশের বিস্তৃত অঞ্চলসহ দুচোখ কেন খোলা রাখেন? অন্তত একটা চোখ তো ঢেকে রাখা যায়। কী বলেন?
এর সাধারণত কথা বলার সময় মুখের দিকে তাকায় না। অথচ বলা হয়েছে, কারো সাথে মুখ ঘুরিয়ে কথা না বলতে! পর্দার নামে এরা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়টাকে সামনে নিয়ে আসে। ফলশ্রুতিতে তাদের পক্ষ থেকে স্বীয় ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করার বিষয়টা চাপা পড়ে যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে।
সর্বোপরি, মুখ খোলা রেখে বাহিরে চলাচলকারী ব্যাপক সংখ্যক মহিলা সাহাবীগণ কি মুখ ঢাকার এইসব ‘ইন্টারপ্রিটেশন’ বুঝতে বা রাসূলূল্লাহ (সা) ও সাহাবীগণ তাদের সেসব বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন? (নাউযুবিল্লাহ!)
এসব কূপমণ্ডুকতার নিরসন হওয়া উচিত। অবশ্য যুক্তি যতই থাক না কেন, যতক্ষণ শরীয়াহ ও দ্বীনের উপর অযৌক্তিক ও আবেগনির্ভর ‘ধর্মবাদিতা’ প্রাধান্য বিস্তার করবে; ততক্ষণ পর্যন্ত এসব এক্সট্রিমিজমও কন্টিনিউ করবে! তৎসত্ত্বেও যারা বুঝতে চান তাদের জন্য কিছু আলোচনা করলাম।
লোকমান বিন ইউসুপ,চিটাগাং: এবনরমালিটির নাম তাকওয়া হতে পারে না। সমাজ এসব বিষয়কে পাগলামী বলে। আমাদের একটা বদ খাসলত হলো আমরা নিমিষেই বলে দিই– সমাজ বুঝে না অথচ বাস্তবতা হলো– সমাজ নয়, আমরাই বুঝি না।
shopon: ব্লগের সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৮০% বোন নেকাবের পক্ষে ছিল। বাকি বোনেরা ব্যক্তির নিজস্ব পছন্দের উপর ছেড়ে দেয়াকেই ভালো মনে করছেন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সমাজের ৮০% মহিলা নেকাবের পক্ষে নয়। যদি তাই হয়, তা কি নেকাবপন্থীগণ মানবেন? অধিকাংশ বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিলের পক্ষে রায় দিয়েছেন। দুজন বহাল রাখার পক্ষে বলেছেন। একজন বিষয়টা সংসদের উপর ছেড়ে দেয়ার জন্য বলেছেন। আমার তো মনে হয়, এই সর্বশেষ জনের সিদ্ধান্তই সর্বাধিক সঠিক। অধিকাংশ দিয়ে তো ইসলাম বা শরিয়ত হয় না, আমরা জানি। শরীয়াহর ক্ষেত্রে দলীল ও যুক্তিই মূল বিবেচ্য।
সিরাজ উল্লাহ: পর্দার সাথে মুখ খোলা থাকলে কিন্তু মানুষ মুখ দেখে আসক্ত হতে পারে। তাই নেকাব পরে থাকলে তা কম হতে পারে। যদিও নেকাব দিতে হবে– তা কোনো ফরজ নয়। তারপরও আমি নেকাবের পক্ষে। অনেক ধন্যবাদ
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: নেকাব পরলে যদি সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায় তাহলে তা না পরাই ভালো। কী বলেন? বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি, নেকাব পরাতে অনেক অসুন্দর মেয়েকেও সুন্দর দেখায়। কারণ, তখন ফোকাল পয়েন্ট হয় তার অহর্নিশি যত্ন নেয়া নয়ন যুগল। ফলত পর্দার উদ্দেশ্য হয়ে যায় বিপরীতমুখী!
লোকমান বিন ইউসুপ,চিটাগাং: স্যার, আমরা যারা ইসলামপন্থী, অসহিঞ্চুতা তাদের জাতীয় রোগ।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমি দীর্ঘ প্রায় তিরিশ বছর থেকে লক্ষ্য করছি, পর্দানশীন নারীরা, বিশেষ করে ইসলামী ছাত্রী সংস্থা ও মহিলা জামায়াতের লোকজন অভদ্রতা ও বেয়াদবী করাকে তাকওয়া (?) মনে করে। কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াতের ভুল ব্যাখ্যার কারণে এমনটা হয়েছে।
গত দু-তিন আগে আমাদের বাসায় মহিলাদের প্রোগ্রাম ছিলো। মাগরিবের পরে আমি একজন ভাইকে নিয়ে বাসায় এসে ডাইনিং স্পেসে চা খেতে বসলাম। উনার স্ত্রীও প্রোগ্রামে ছিলেন এবং তখনো আমাদের বাসায় ছিলেন। শহর থেকে আমাদের এক প্রাক্তন ছাত্রী (অন্য বিভাগ থেকে পাস করা) দায়িত্বশীলা হিসাবে এসেছেন। তিনি বোরকা ও নেকাব পরা সত্ত্বেও দোতলা থেকে নামার সময় কিছুটা নেমে দাঁড়িয়ে পড়লেন। আমার বাড়িওয়ালা ম্যাডাম বললো– এই, তোমরা এখানে বসে আছো কেন? উনারা তো তোমাদের দেখে নামছেন না। আমি হেসে বললাম, আমরা বসেই থাকবো এবং নাস্তার ভাগ নেবো। এখান দিয়ে যেতে হলে সবাইকে সালাম দিয়েই যেতে হবে। তখন তিনি ‘ভাইদেরকে আমাদের সালাম দেন’ বলে নেমে সিএনজি ট্যাক্সি করে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা করলেন। আমার থেকে বয়সে অন্তত দশ বছরের তরুণ ড্রাইভারের সাথে উনি যতটা ইজি ফিল করেছেন মনে হলো, আমার সাথে তিনি ততটা ইজি ফিল করলেন না। যে সহকারী অধ্যাপক ভাইটা সাথে ছিলেন, তাঁর চার সন্তান এবং তিনি জামায়াতের রুকন।
এদের কাজকর্ম দেখে মনে হয়, ইনাদের সম্বন্ধে আপনি যা বলেছেন তা শ্রুতিকটু হলেও একেবারে মিথ্যা নয়।
লোকমান বিন ইউসুপ,চিটাগাং: হাটে হাঁড়ি ভেংগে দিলে সমস্যা হবে মনে করে অনেক বিষয় চেপে গেছি।
শামিম: আসসালাম। উনি আসলে আপনার কমেন্ট বুঝতে পারেন নাই বলে মনে হয়। এই জন্য এ রকম কমেন্ট করে ফেলেছিলেন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমরা যারা নানা কারণে ‘এলাম রে, গেলাম রে, আওয়ামী লীগ এই বলেছে, বিএনপি এই করেছে’ টাইপের ব্লগার নই, যাদের ব্লগিংটা তাদের আদর্শ চর্চার অংশ বা সহায়ক তাদের উচিত কিছু বলা, লেখা বা করার সময় সাংগঠনিক মেজাজের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করা। কারো কথা পছন্দ হলো না বলে তার ব্যাপারে অশোভন কোনো মন্তব্য করা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নেতিবাচক মানসিকতার পরিচায়ক। কেউ অশ্লীল বাক্য প্রয়োগ না করলে পোস্ট মুছে দেয়ার তো প্রশ্নই উঠে না। এগুলো সামহোয়্যারের প্র্যাকটিস।
রাইশা: কেন জানি নেকাব পরিহিত মানুষদের কাছ থেকে অনেক বেশিই ইসলামের বিপরীত কিছু বেশি দেখেছি। কেউ নেকাব পড়লে পড়ুক, কিন্তু বাড়াবাড়ি যেন না করে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এই নেকাব সমস্যার কার্যকর সমাধান হতে পারে নেকাবপন্থীদেরকে পাতলা কালো কাপড়ে পুরো মুখের উপর পর্দা ঝুলিয়ে চলার কথা বলা। পুরো মুখ ঢাকা তাকওয়ার দাবি হিসাবে অগ্রগণ্য হওয়ার কথা হলেও কেন পর্দানশীন ছাত্রী ও প্রাক্তন ছাত্রীরা সেটি অনুসরণ না করে কোনোমতে মুখের নিম্নাংশ ঢেকে রাখার তরীকা মেনে চলে? এতে দেখা যাচ্ছে, তারা আধুনিকতার সাথে তাদের শরীয়াহ-জ্ঞানের অঘোষিতভাবে এক ধরনের কম্প্রোমাইজ করছেন। এই লুকোচুরি কেন?
ব্লগে আমরা যত যুক্তি-তথ্য-তত্ত্ব দেই না কেন, এতে কেউই নেকাব ছাড়বে না। এ ব্যাপারে আপনাদের সবাইকে আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি। কারণ, এই ধরনের নেকাব পড়ার মাধ্যমে এক ধরনের ব্যক্তিগত সুবিধা ভোগ করা যায়। এই সুবিধা যারা একবার পেয়েছেন, তারা সহজে সেটি ছাড়বেন না। পক্ষে যখন ‘অধিকাংশ ফকীহদের’ ফতোয়া আছে, তখন তো আর কথাই নাই!
ট্রিপল আইটির একটা বই আছে, ‘রসূলের স. যুগে নারী স্বাধীনতা’। লেখক হলেন আবদুল হালীম আবু শুককাহ। দীর্ঘ ৪ খণ্ডের এই প্রামাণ্য গ্রন্থে লেখক অকাট্যভাবে নেকাবের অগ্রহণযোগ্যতাকে তুলে ধরেছেন। জামায়াত ১৯৯৪ সালের দিকে এটি সাংগঠনিকভাবে নিষিদ্ধ করে। এর শুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য একটা কমিটি গঠন করে। কমিটি যাচাই করে এই বইয়ের অথেনটিসিটিকে কনফার্ম করার পর জামায়াত শুধুমাত্র কর্মজীবী মহিলাদের রুকন হওয়ার জন্য নেকাবের শর্তকে প্রত্যাহার করে।
প্রশ্ন হলো, নেকাব যদি ফরজ বা ওয়াজিব হয়, সেক্ষেত্রে কর্মজীবী ও অকর্মজীবী মহিলার মধ্যে পার্থক্য করার অধিকার কি কারো আছে? বিগত এক জাতীয় সংসদে জামায়াতের দুজন মহিলা সদস্য ছিলেন। তাঁরা ইরানী স্টাইলে ভ্রু হতে থুতনি পর্যন্ত খোলা রাখতেন। এই তরীকার শরয়ী অথরিটি কী?
নেকাব যদি সুন্নাত হয় সেটিকে শপথের কর্মী হওয়ার ক্ষেত্রে ওয়াজিবের মর্যাদা দেয়ার ক্ষমতা কি উলিল আমর হিসাবে জামায়াতের আছে? এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত আশা করছি।
জনাব রাইশা, আপনার সংক্ষিপ্ত মন্তব্যের উত্তর অনেক লম্বা হয়ে গেল! ভালো থাকুন।
সুমাইয়া জামান: মন্তব্য করব না, করব না করেও করে ফেললাম। আমি ‘ব্যক্তিগত সুবিধা ভোগ করা’ বিষয়টা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। প্রয়োজনে আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে চললেও আমার সমস্যা নেই। স্যার, আপনি বার্তাটা একটু চেক করুন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমি নিজেই আর্লি মেরিটাল লাইফে একবার নেকাব পরে সাজছিলাম, আপনাদের (তৎকালীন নেকাবী) আপুর সহযোগিতায়। বেশ ভালোই লাগছিলো। যখন কোনো ফাঁকতালে কিছু দেখি বা চোখে কালো চশমা লাগিয়ে চলি, বেশ ভালোই লাগে! কী মজা! আমাকে দেখছে না কিন্তু আমি দেখছি! পুরুষদের যদি নেকাব পরার প্রচলন থাকতো তাহলে আমি প্রায়শ তা পরতাম। তাতে আমার বেঢপ নাকটা ঢেকে অধিকতর সুন্দর চোখগুলোকে উপস্থাপনের সুযোগ পেতাম! এমনকি আমার কপোলের দু পাশ থেকে বয়সের কারণে ঠেলে বেরিয়ে আসা হাড়, মুখের ভাঁজ ইত্যাদি ঢেকে রাখার সুযোগ পেতাম! সর্বোপরি, এতে আমার সৌন্দর্য চর্চা বাড়তো বৈকি!
মুখাবরণীর উদ্দেশ্য যদি হয় সৌন্দর্য কমানো, ছাত্রীরা যে ধরনের নেকাব ব্যবহার করেন তাতে ঘটনা তার উল্টোটাই ঘটে! এ জন্যই কোনো এক কমেন্টে প্রশ্ন করেছিলাম, (এই নেকাব ব্যবস্থা) সৌন্দর্যের আবরণী, নাকি আবরণীর সৌন্দর্য? কনসিলমেন্ট অফ বিউটি, অর বিউটি অফ কনসিলমেন্ট?
শামিম: ঐ মেয়ে ব্লগারটা নিকাবপন্থী এটা আপনাকে কে বললো? প্রসঙ্গ কোথা থেকে কোথায় এখন! আজিব!
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হ্যাঁ, আপনার কথাই ঠিক। কদিন ধরে এই ব্লগে নেকাব-হিজাব নিয়ে উত্তপ্ত পরিবেশের কারণে এটি হয়েছে। লেখিকা কর্তৃক তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য মুছে দেয়ার অনাকাঙ্খিত বিষয়টা এক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে থাকবে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা মেয়েরা সাধারণত সম্মান ও সুবিধা পেয়ে থাকেন। লেখিকার অভিজ্ঞতা ব্যক্তিগত ও ব্যতিক্রম হতে পারে।
সাধারণভাবে ইসলামের অনুসরণকারীদের জন্য দুনিয়ার কোনো কিছুর মূল্য একটু বেশিই দিতে হয়, বিশেষ করে যদি তা সেক্যুলারদের কাছ হতে অর্জন করার মতো হয়। কোয়লিটি ডাজ ম্যাটার কথাটা উদাহরণ দিয়ে বলেছিলাম, এ জন্যই।
শামিম: প্রথমত কালকের পোস্ট যেটা দেখেছি সেটা নিকাব বা হিজাব নিয়ে ছিলো বলে মনে হয় নাই, সেটা ছিলো প্র্যাকটিসিং মুসলিম মেয়েদের সমসাময়িক সমস্যা নিয়ে। পর্দা প্রথা নিয়ে এই সরকারে আমলে অনেক ইনসিডেন্স ঘটেছে, বিশেষ করে রাজউক কলেজ, নার্সিং কলেজ, ঢাকা ভার্সিটি ও পিরোজপুরের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। সেক্যুলারিস্টরা জেনারালি প্র্যাকটিসিং মুসলিমদের পছন্দ করে না। আর তা গাত্রদাহের কারণ বলেই মনে হয় তাদের রিয়াকশন দেখে।
আর ইউনিভার্সিটিগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের একটা ব্যাপার ছিলো উনার লেখায়। উনি ফার্স্ট হওয়া সত্ত্বেও উনাকে না নেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রোবাবলি পলিটিক্যাল রিজন হবে। কারণ, এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পলিটিক্যাল ব্যাপারটা চলে আসে এই ক্ষেত্রে। আর সরকার যেহেতু সেক্যুলারিস্ট, স্বাভাবিকভাবেই এ রকম হিজাব পরিহিতা স্টুডেন্টদের না নেওয়ার আশংকা বেশি। রেজাল্ট যেহেতু ভালো কোয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন করার অবকাশটা কম।
আপনার কমেন্ট যেটা ছিলো সেটা আসলে পোস্ট সম্পর্কিত ছিলো খুব কম কথা, আর পরেরটা ছিলো আমাদের পর্দানশীল মেয়েগুলো দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে! কী করবে বলেন, শিক্ষকগুলো নিয়ে তো আর কম অভিযোগ নাই! এই তো কিছু দিন আগেও ঢাবি আর জাবি নিয়ে যাচ্ছেতাই হলো! এহেন পরিবেশে হয়তো উনারা একটু বেশি ভয় পান। এতে খুব বেশি দোষের কিছু আছে বলে মনে হয় না! আর সাংগঠনিক দিক দিয়ে যদি এগিয়ে থাকা পিছিয়া থাকার কথা চিন্তা করেন, তাহলে শুধু মেয়ে কেন, ছেলেদের সাংগঠনিক দিকেও এরকম সমস্যাই রয়েছে বলে মনে হয়েছে আমার। প্রসঙ্গটা আসলে এখন মূল বিষয় থেকে বিচ্যুত! উচ্চ প্রতিষ্ঠানে হিজাবী মেয়েরা সম্মান পেয়ে থাকে বলেই মনে হয়েছে, কিন্তু সুবিধার ব্যাপারটা বুঝি নাই।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: যেমন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায়, যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক ইসলামপন্থী, সেখানে তারা কিছুটা সুবিধা পাওয়ার কথা। আমি অনেক বামপন্থী শিক্ষককে জানি, যারা হিজাব পরা মেয়েকে কোনো ব্যক্তিগত অসৎ উদ্দেশ্য ছাড়াই হেল্প করেছেন। সর্বোপরি, শিক্ষকরা সাধারণত ভালো স্টুডেন্টের প্রতি দুর্বল থাকেন, হেল্প করেন, যদিও তাদের মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্য থাকে।
ইসলামের মতো বৈপ্লবিক আদর্শের বাস্তব অনুসারী হয়েও যদি আমরা কোনো বৈষয়িক অর্জনকে স্বল্প বা বাজারমূল্যে কিনতে চাই, তাহলে তা ভুল হবে। এজন্যই লাগবে হাই কোয়ালিটি। আমাদের হতে হবে যোগ্যদের মধ্যে অনেক বেশি যোগ্যতা নিয়ে সেরা। এই কঠিন বাধা পেরোনোর হিম্মত থাকা চাই।
শামিম: I think it’s being generalized the thing on the basis of one university. There is no survey or data still about getting extra facilities due to being Hijabi. Rather we have some evidences regarding appalling steps of secularists to eradicate this Islamic custom.
“ইসলামের মতো বৈপ্লবিক আদর্শের বাস্তব অনুসারী হয়েও যদি আমরা কোনো বৈষয়িক অর্জনকে স্বল্প বা বাজারমূল্যে কিনতে চাই, তাহলে তা ভুল হবে।” একমত।
কোয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন করার অবকাশ আমার কাছে কম এই জন্য যে একজন টপারকে আমি কোয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন করতে পারি না। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ওভারল চার বছরে টপ হতে হলে কোয়ালিটি থাকতে হয়ে। যেখানে ডার্টি পলিটিক্স, সেখানে আমি এক্ট্রা-অর্ডিনারি হয়ে সুযোগ পাবোই। এটা না হওয়ার আশঙ্কাই কম। যদিও এই ব্যাপারগুলোর ইমপর্টেন্স ভ্যারি করে একেকজনের ক্ষেত্রে! কোয়ালিটি থাকলে কোনো না কোনো জায়গায় ব্যবহৃত হয়ই বলেই মনে হয়েছে আমার অভিজ্ঞতায়।
যাইহোক, ভালো থাকুন। জাযাকাল্লাহ।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বাংলাদেশে ইন জেনারেল, মানুষ এখনও ইসলামের পক্ষে। সমস্যা হলো প্রত্যেকে নিজ নিজ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সবকিছু দেখে। হিজবুত তাহরীরের খিলাফত, জামায়াতের রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন, তাবলীগের দাওয়াত ও মেহনত – এ সবগুলোই অন্ধের হস্তির দর্শনের মতো একদেশদর্শিতা। এ সবগুলোই দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত। এর কোনোটিই একমাত্র বিষয় নয়। সেক্যুলারগণ ইসলামিস্টদের ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করে। এটি সত্যি ও তাদের দিক থেকে স্বাভাবিক। ইসলামিস্টদের তাই অনেক বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে। যোগ্য লোককে কেউ শেষ পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখতে পারে না।
ইসলাম চর্চা করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবার বিষয়টা যত না বাস্তবতা, তারচেয়ে অনেক বেশি প্রচারণা ও অজুহাত মাত্র! বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে বাদ দেয়ার চেয়েও বেশি ভিক্টিমাইজড করার ঘটনা ঘটে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ ও আঞ্চলিকতার কারণে। যেখানে রাজনৈতিক কারণে বাদ দেয়া হয়, সেখানে ক্ষমতার পালাবদলের ধারায় পরবর্তীতে তাদেরকেই খুঁজে খুঁজে নিয়োগ দেয়া হয়, হয়েছে এবং হবে।
উম্মে সালমা: শামিম, “একজন হিজাবী মেয়েকে প্রতি পদে পদে বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়।” সিরাজুম রুমির পোস্টে উল্লেখিত এই বাক্যটিকে কেন্দ্র করেই মূলত আলোচনা এগিয়ে যাচ্ছে। প্রসঙ্গ এখন কোথা থেকে কোথায় এসে ঠেকে, সেটাই দেখার বিষয়। তবে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় এই পোস্টে ইসলামী স্কলাররা কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছেন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ইসলামী স্কলারদের দুই ভাগ: (১) যারা ইসলামী স্কলার নন, (২) যারা ইসলামী স্কলার। প্রথম ধরনের লোকেরা মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের নয় কিন্তু ইসলাম চর্চা করেন। তাদের সিনসিয়ারিটি, সেক্রিফাইস ও কারো কারো পড়াশোনার ব্যাপ্তি অনেক বেশি। দ্বিতীয় ধরনের লোকেরা হলেন মাদ্রাসা শিক্ষিত আলেম সমাজ বলতে আমরা যাদেরকে বুঝি, জানি।
আলেম সমাজ অ-প্রাতিষ্ঠানিক ইসলামী শিক্ষিতদের সাথে মতবিরোধের এক পর্যায়ে প্রায়শই ‘কপিরাইটের’ প্রসঙ্গ তুলে কথা বলে থাকেন। অন্যদিকে, নন-আলেম ইসলাম চর্চাকারীদের অনেকেই খণ্ডিত জ্ঞানের উপর নির্ভর করে ‘পাইছি রে…’ বলে ছুটেন!
যাহোক, একবিংশ শতাব্দীর ইসলামে কারা নেতৃত্ব দিবে – এ সম্পর্কে মুরাদ হফম্যানের কিছু বিখ্যাত প্রপজিশন আছে। ধারণা করছি, তা আপনার জানা আছে।
একটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে এই পোস্টের সূত্রপাত। ভালো থাকুন।
সুমাইয়া জামান: হুম,আপনার মন্তব্য পড়ে বেশ মজা পেলাম। আপনার কথা যে মিথ্যা এটা বলবো না। অনেক ক্ষেত্রে নেকাব চোখকে সুন্দর করে দেয়।
এবার আমি আমার একটি কষ্টের কথা অকপটে বলব, কোনো রাখ ঢাক করবো না। আমি সাধারণত রাস্তায় নেকাব দিয়ে যতটা সম্ভব ভদ্রভাবে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু প্রায়ই আমাকে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। প্রায়ই দেখি ছেলেরা, ক্ষেত্রবিশেষে মধ্যবয়সীরা, অদ্ভুত দৃষ্টিতে দেখে, প্রথমে পা, পরে হাত এবং সবশেষে চোখ। বিশ্বাস করুন! এত কষ্ট লাগে…। তখন মনে মনে ভাবি, আল্লাহ্র শুকরিয়া যে তারা আমার মুখটি দেখতে পায় না। দেখলে না জানি কী করত?
আর আশেপাশে যারা নরমাল পোশাকে থাকে তাদের কারও সাথে আচরণ দেখলে তো মরতে ইচ্ছা করে। জানি না এ অনুভুতি আমার ব্যক্তিগত কি না, কিন্তু ব্যাপারটা আমাকে কষ্ট দেয়। এক্ষেত্রে আপনি কী বলবেন? আমার তো মনে হয়, নেকাব দেবার কারণে আমি কিছুটা হলেও মানসম্মান বজায় রাখতে পারছি।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ভালো। আপনি মরিয়ম জামিলার মতো বোরকা পরতে পারেন। নিরাপদ থাকবেন। পাশ্চাত্য সভ্যতা নিয়ে মরিয়ম জামিলার যে বইটা, সেটির শুরুতে উনার সম্পূর্ণ মুখ ঢাকা আগাগোড়া বোরকা পরা একটা ছবি আছে।
(ছবিটা আদৌ মরিয়ম জামিলার কিনা কে জানে! যদিওবা তাঁরই হয়ে থাকে, তাহলে তা ছাপানোর কী মানে, সেটি তিনি বেঁচে থাকলে বলতে পারতেন!)
ভালো থাকুন।
সুমাইয়া জামান: আমি কিন্তু এখনই থামতে চাইছি না, আর একটু মতামত ব্যক্ত করতে চাই।
কেন? কেন আমাকে সারা শরীর ((সারা মুখ, চোখসহ), হাত, পা, অনেকেই হাত মোজা, পা মোজা পড়ার কথা বলতে পারেন) ঢেকে রাখতে হবে? আমি কি মানুষ নই? আমি কি আর দশটা মানুষের মতো চলাফেরা করার অধিকার রাখি না? পর্দা কি শুধু মেয়েদের জন্যই ফরজ? আর আমি তো পর্দাকে লঙ্ঘন করছি না। আমি তো ইসলামের দেয়া নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ঢেকে চলেছি। তারপরও কেন আমাকে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে দেওয়া হবে না? আমি তো আমার হাত, পা, চোখ ঢাকব না। এবার ছেলেরা তাদের চোখের পর্দা করুক। তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে আমি না হয় মুখ ঢাকলাম। কিন্তু এর থেকে বেশি অসম্ভব। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস ইনশাআল্লাহ্ এজন্য আমাকে জবাবদিহি করতে হবে না। এরপরও যদি কোনো ছেলে ফিতনায় পরে তবে সেটা তার দোষ। এক্ষেত্রে আমি নির্দোষ।
স্যার, আমি মনে করি, আমাদের দেশের অধিকাংশ ছেলের নৈতিকতার স্তর এতটা উন্নত নয় যে তারা যে কোনো মেয়ে দেখলে চোখ নামিয়ে নেবে এবং কোনো রকম কুচিন্তা করবে না। অল্প কিছু ছেলে অবশ্যই আছে। কিন্তু তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। নৈতিকতার স্তর উন্নত হতে আরও কিছু সময় লাগবে এবং আমরা সে সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে চাই। ইনশাআল্লাহ্ সামনে হয়তো এমন দিন আসবে যখন মেয়েদের নেকাব দেবার কোনো প্রয়োজন থাকবেই না।
তাই আমার অনুরোধ থাকবে তাদের প্রতি, যারা নেকাবীদেরকে অবজ্ঞা করেন, অপমান করেন, প্লিজ আমাদেরকে আমাদের মতো থাকতে দিন। যদি প্রয়োজন অনুভব করি, তাহলে আমারা আমাদের নেকাব নিজেরাই খুলতে পারব। আপনাদেরকে খোলার জন্য জোর করতে হবে না।
আল্লাহ্ না করুক, নেকাব না দেবার কারণে আমি যদি কোনো বিপদে পরি, তখন তো আমার পাশে কেউ দাঁড়াবে না। সমাজ আমাকে দূরে ঠেলে দেবে। আর ছেলেদের কথা নাইবা বললাম। তখন তো আমার পাশে থাকবে শুধু আমার বৃদ্ধ, রিটায়ার্ড বাবা, আর সারাদিন সংসারের জন্য খাটুনি করা বড় ভাই। তাই ওদের একটুখানি দুঃশ্চিন্তা কমাতে নেকাব যদি সাহায্য করে, তাহলে কেন আমি সেটা থেকে বিরত থাকব?
অনেক কথা বললাম, আশা করি আমার মন্তব্য থেকে আমাদের নেকাবের বিরুদ্ধে জিহাদরত ভাইয়েরা কিছুটা হলেও পরিস্থিতি বুঝবার চেষ্টা করবেন।
আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
আবু সাইফ: সুমাইয়া জামান, “আমি মনে করি, আমাদের দেশের অধিকাংশ ছেলের নৈতিকতার স্তর এতটা উন্নত নয় যে তারা যে কোনো মেয়ে দেখলে চোখ নামিয়ে নেবে এবং কোনো রকম কুচিন্তা করবে না। অল্প কিছু ছেলে অবশ্যই আছে। কিন্তু তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়।”
আমি জানি না, আপনি সমাজের কোন কোন স্তরে কতটা বিচরণ করে থাকেন! এটা কি আপনার জানা আছে, একই অবস্থা মেয়েদেরও? আপনার কথাটা এভাবেও বলা যায়– আমাদের দেশের অধিকাংশ মেয়ের নৈতিকতার স্তর এতটা উন্নত নয় যে তারা যে কোনো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে চোখ নামিয়ে নেবে এবং কোনো রকম কুচিন্তা করবে না।
আসলে নৈতিকতার অবক্ষয় সর্বব্যাপী। পুরুষ-শাসিত সমাজব্যবস্থার কারণে ছেলেদেরটা বেশি চোখে লাগে। তাছাড়া সৃষ্টিগত কিছু সীমাবদ্ধতাও মেয়েদের সংযত হতে বাধ্য করে!
নেকাবের ব্যাপারটা স্থান-কাল-পাত্র-পরিবেশ সব মিলিয়েই নির্ধারণযোগ্য, ঢালাওভাবে কোনো নিয়ম-নীতি নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, সমীচীনও নয়!
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, শিরোনাম যদিও ঢাকা পড়ে গেছে, আলোচনা কিন্তু জমেছে ভালো। আপনি যে ‘নেকাবপন্থী ব্লগারের অসহিষ্ণুতার শিকার’ তাঁকে বার্তায় এ পোস্টে আমন্ত্রণ জানালে হয়তো তাঁর জন্য উপকার হবে।
হিজাব ও নেকাবের সঠিক দর্শন ও বোধ যদি মেয়েদেরকে শিখিয়ে দেয়া যায়, তাহলে তারা নিজেরাই ঠিক করে নিতে পারবে।
কিন্তু বাস্তবে যা হয়ে থাকে– হুকুমজারী করেই হিজাব-নেকাব পরানো হয়, আর অতিরিক্ত সতর্কতার নামে সদাচরণকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। ফলে যে ঘরে কন্যা সন্তানটি প্রাইমারি পাশ করে ফেলে, সে ঘরটি আত্মীয়-স্বজন থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হওয়া শুরু করে।
সুমাইয়া জামান: ভাবছিলাম, থেমে যাব। কিন্তু না, আর একটু বলতেই হবে।
আবু সাইফ ভাই, কথাটা নেকাব প্রসঙ্গে এবং সাধারণত মেয়েরাই নেকাব দেয়। তাই নেকাবী মেয়েদের সমস্যাগুলো বলেছি। নৈতিকতার স্তর যদি বলেন তাহলে তো দুদলেরই অবস্থা ভয়াবহ। আমি নেকাবী মেয়েদের পক্ষ থেকে কথা বলেছি, তাই আমি আশা করছি যারা নেকাব দেয় তাদের নৈতিকতার স্তর কিছুটা হলেও উন্নত। আর নেকাবের ব্যাপারে আমার মনোভাব আমি, পুস্পিতা আপু ও অনেকে পার্টিশন ৪৭ ভাইয়ের পোস্টে করেছি। চাইলে লিংক দিতে পারি। আর আপনার সাথে আমিও একমত নেকাব বাধ্যতামূলক নয়। এটি ব্যক্তির ইচ্ছাধীন। আর এক্ষেত্রে অবশ্যই স্থান, কাল, ব্যক্তির সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করা উচিত। ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: “নারীদের ইসলামচর্চা: প্রসঙ্গ নেকাব, হিজাব, পর্দা ও বোরকা: কিছু ব্যক্তিগত মন্তব্য” – এই পোস্টটি দেখুন।
উম্মে সালমা: “আমি আশা করছি যারা নেকাব দেয় তাদের নৈতিকতার স্তর কিছুটা হলেও উন্নত।”
বোন, আপনার এ কথার সাথে দ্বিমত রয়েছে আমার। নেকাব আর নৈতিকতা দুটো ভিন্ন জিনিস। অনেক নেকাবধারীকে আমি দেখেছি অনেক অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকতে। নেকাবের সাথে উন্নত নৈতিকতাকে জড়ানো বোধ হয় ঠিক হবে না।
সুমাইয়া জামান: উম্মে সালমা, ধন্যবাদ আপনার মতের জন্য। আসলে নেকাবেরও রকমফের আছে। কিছু আছে অকেশনাল নেকাবী। যেমন, আমার একজন পরিচিতা, সে শুধু ভার্সিটি যাতায়াতের জন্য নেকাব পড়ে। কিছু আছে শয়তানী কাজ করার জন্য নেকাবকে ব্যবহার করে। আবার কেউ কেউ সত্যিকার অর্থে তাকওয়ার জন্য নেকাব পরে। আমার খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে, যারা তাকওয়ার জন্য নেকাব পরে তাদের নৈতিকতার স্তর অন্যান্যদের থেকে আলাদা। আমি মূলত তাদেরকেই বুঝিয়েছি। আপনার মন্তব্যের কারণে বিষয়টা ক্লিয়ার করতে পারলাম।
এম এন হাসান: সালাম।
“আমি নেকাবী মেয়েদের পক্ষ থেকে কথা বলেছি, তাই আমি আশা করছি যারা নেকাব দেয় তাদের নৈতিকতার স্তর কিছুটা হলেও উন্নত।”
“কেউ কেউ সত্যিকার অর্থে তাকওয়ার জন্য নেকাব পরে। আমার খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে, যারা তাকওয়ার জন্য নেকাব পরে তাদের নৈতিকতার স্তর অন্যান্যদের থেকে আলাদা।”
নিকাব কি তাকওয়ার সিম্বল? Would you mind to explain little bit more… একটা নতুন পোস্ট হলেও খারাপ হয় না। বাই দ্যা ওয়ে, আমি এই প্রপোজিশনের বিপক্ষে। শক্তিশালী যুক্তি ও রেফারেন্স পেলে আপনার মতামত মেনে নেব, ইনশআল্লাহ।
জাযাকআল্লাহ
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: নেকাব যদি তাকওয়ার উৎস হয়, সেটিকে এ জমানার সাথে সংশ্লিষ্ট বা সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। নচেৎ যে বিপুল সংখ্যক মহিলা সাহাবী নেকাব ছাড়াই তথা খোলা মুখে বাহিরে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন তাদের তাকওয়া-অনুভূতিতে ঘাটতি (নাউযুবিল্লাহি মিন জা-লিক) ছিল বলে মনে করতে হবে।
সুমাইয়া জামান: হাসান ভাই, শরীরটা খুব খারাপ। লিখতেও কষ্ট হচ্ছে। তারপরও সময় নিয়ে লিখেছি। দলীল প্রমাণ এখন দিতে পারবো না। দোয়া করেন যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হতে পারি। আপাতত নিজের মত দিচ্ছি।
আবদুল হালীম শুককাহ্র লিখিত বইয়ে নেকাব সংক্রান্ত অধ্যায়টা ভালোভাবে পড়ার চেষ্টা করেছি। পড়ে মন খারাপ হয়ে গেছে এটা ভেবে যে তিনি নেকাবকে অনেকটা ফ্যাশন হিসাবে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন। আমার মতে, নেকাব যদি ফ্যাশনই হয়, তাহলে মেয়েরা কোন দুঃখে এত কষ্ট করবে? এতে তাদের কী লাভ হবে? আমি নেকাব দেবার চেষ্টা করি এবং এটা ভালোভাবেই বুঝেছি যে এর জন্য একটা মেয়েকে কতখানি কষ্ট, ত্যাগ স্বীকার এবং কটু কথা শুনতে হয়। এগুলো শুধু ফ্যাশনের জন্য???
তাহলে কেন…, আর এমন তো নয় যে নেকাবের পক্ষে কেউই নয়। অনেক বড় বড় স্কলার, যেমন (শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া ও বিন বায রহ.) নেকাবের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আর যেহেতু এটি নাজায়েজ নয়, তাহলে পড়লে আমরা কি আল্লাহ্র কাছ থেকে একটু সওয়াব আশা করতে পারি না?
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, আমার আশেপাশে যারা নেকাব দেয় আর যারা দেয় না তাদের তাকওয়ার মধ্যে বেশ ফারাক আছে।
আচ্ছা আপনিই বলুন, এ টাইপের ফ্যাশন করে লাভ কী, যাতে ছেলেরা পেত্মী বলে? নিনজা বলে? আরে ভাই আমরাও তো মানুষ। কেউ আমাদের হুর-পরী না বলুক, অন্ততপক্ষে পেত্মী সম্বোধন নিশ্চয়ই আমরা চাই না। আপনিও তো মানুষ, আপনি কি এটা পছন্দ করবেন যে কেউ আপনাকে মফিজ বলুক, ভূত বলুক, বা খ্যাত বলুক?
অথচ নেকাব দেওয়া মেয়েকে প্রতিনিয়তই এগুলো শুনতে হয়। সওয়াবের আশায় মেয়েগুলো নীরবে সহ্য করে। খুব কম মেয়েই এর প্রতিবাদ করে। আপনি বলুন, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া ফরজ নয়। কিন্তু এটাকে ইনকারেজ করা হয়েছে। আর কেউ যদি প্রতিদিন তাহাজ্জুদ পড়ে, তবে কি এ কথা বলতে পারি না যে তার তাকওয়া বেশি? নেকাবকে তো ইনকারেজই করা হয়েছে (উম্মুল মুমীনিনরাসহ অনেক সম্ভ্রান্ত মহিলা নেকাব পড়েন)। ইসমাইল ভাইয়ের পোস্টে আরও বিস্তারিত আছে। তাহলে এটা মেনে নিতে কি খুব কষ্ট হবে? আর যদি নাই মানেন, এটা তো আমার ব্যক্তিগত অভিমত। ছুঁড়ে ফেলে দিন। আমার কথা মানতেই হবে এমন কোন বিখ্যাত ব্যক্তি আমি নই।
তাছাড়া অনেক আলিম লোকই (ইসলামিক টিভি, পিস টিভির লেকচারার) আমার মতকে সমর্থন করেন। তারা প্রায়ই বলেন, যে সকল মেয়েরা অধিক সতর্ক, তারা অধিক সওয়াবের আশায় নেকাব দিয়ে থাকে। নাম জিজ্ঞেস করলে এখন বলতে পারব না (ইসলামী টিভির রেগুলার প্রোগ্রাম আল-কুরআনের গল্পের উপস্থাপক এদের মধ্যে একজন)। তবে আমি চেষ্টা করব তাদের নাম জানার।
তাই আমি বলেছিলাম, তাকওয়ার জন্যই অনেকেই নেকাব পড়ে। তারমানে এই নয় যারা নেকাব দেয় না, তারা তাকওয়াবান নয়। তবে আমার মনে হয়, শুধু মনে হয় না, দৃঢ়্ভাবে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে, যারা শুধুমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য নেকাব দেয়, তাদের তাকওয়ার লেভেল (আমাকে গন্য না করলেই খুশি হব, কারণ আমি এত বেশি তাকওয়াবান নই) যারা নেকাব দেয় না, তাদের থেকে অনেক উন্নত। তবে হ্যাঁ, আপনি যদি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে পারেন যে নেকাব দিলে সওয়াব হয় না, অথবা তাদের তাকওয়ার লেভেল খুবই নিম্নস্তরের, তাহলে আমি আমার ভুল স্বীকার করে নেব। তবে নেকাব দেওয়াটা বোধহয় ছাড়তে পারবো না। কেননা আমি নেকাব দিতে খুব পছন্দ করি এবং আমৃত্যু নেকাব অক্ষুন্ন রাখতে চাই। কারণ, নেকাব আমার সম্মান বাঁচিয়েছে, নেকাব আমাকে মাথা উচুঁ করে পথ চলতে সাহায্য করছে। ভালো থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।
সুমাইয়া জামান: “নিকাব ও মহিলা সাহাবীগণ”
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: জনাব সুমাইয়া জামান, আপনার এই মন্তব্যে ১৪টি প্রতিমন্তব্য এসেছে! মাশাআল্লাহ!
আপনার পাঠানো লিংকটি পোস্ট দেয়ার পর পরই দেখেছি। আমার বক্তব্য ইতোমধ্যেই স্পষ্টভাবে তুলে ধরার কারণে আর কথা বাড়াতে চাইনি। তাই সেখানে কোনো মন্তব্য করিনি। আপনার আগ্রহ ও আন্তরিকতায় বাধ্য হয়ে অতি সংক্ষেপে আমার মতামত দিচ্ছি–
ক। মহিলা সাহাবীদের মধ্যে যারা নেকাব তথা মুখাবরণী ছাড়াই ঘরের বাহিরে গিয়েছেন তাঁরা উত্তম পন্থা পরিহার করেছেন – এ কথা বলা যাবে না।
খ। নবী পত্নীদের পর্দা ও অন্যান্যদের পর্দায় কোনো পার্থক্য করা হবে কি না, সেটি হলো প্রশ্ন। একদল এক্সপার্ট মনে করেন, নবী পত্নীদের জন্য বিশেষ ধরনের পর্দা প্রযোজ্য ছিল, যা সাধারণ মুমিনাদের জন্য প্রযোজ্য ছিল না।
গ। উত্তম আর অনুত্তম আমলের বিষয়ে আমি মনে করি, সহজপন্থায় আমল করাটাই উত্তম ও সুন্নাহর অধিকতর নিকটবর্তী। এই প্রেক্ষিতে কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আপনি কী ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবেন, সেটি আপনার ব্যাপার। আমি নিজের জন্য কখনো কোনো কঠিন বা আজিমতকে (সর্বোচ্চ মান) পছন্দ করলেও অন্যদের জন্য সবসময় রুখসত বা ন্যূনতম মানকে সাজেস্ট করি বা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
ঘ। নেকাবকে আমি ‘সর্বোচ্চ মান’ হিসাবে না দেখে উম্মুল মুমিনীনদের আমল ও এক ধরনের আভিজাত্যের প্রতীক হিসাবেই দেখি। এর কারণ ‘ক’ পয়েন্টে আংশিক বলা হয়েছে।
আসলে হাদীস বিশেষকে বিচ্ছিন্নভাবে, বিশেষ করে সাহাবীদের সাধারণ আমল হতে বিচ্ছিন্ন করে গ্রহণ করার কারণে প্রায়শই এক ধরনের একদেশদর্শিতার সৃষ্টি হয়।
ঙ। মহিলাদের গৃহাভ্যন্তরে নামাজকে সর্বোত্তম বলা সত্ত্বেও প্রচুর সংখ্যক মহিলা সাহাবী নিয়মিতভাবে, বিশেষ করে এশা ও ফজরে, মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতেন। যা বন্ধ না করার জন্য রাসূল (সা) তাগিদ দিয়ে গেছেন। মহিলাদের গৃহাভ্যন্তরের নামাজ সর্বোত্তম হওয়ার হাদীসের সাথে ঈদের নামাজে তাঁদের শরীক হওয়ার নির্দেশের হাদীস বাহ্যত সাংঘর্ষিক।
চ। যারা নিজ মতের পক্ষে দলীল খোঁজেন ও আরবী এবারত সহকারে সেসব সাজিয়ে পেশ করেন, তারা রাসূলের (সা) সুন্নাহকে বুঝা ও মানার চেয়ে হাদীসের নামে নিজ নিজ মতকেই সবার উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। সুন্নাতে রাসূলুল্লাহ (সা) বুঝতে হলে সংশ্লিষ্ট সকল হাদীসকে সামনে রেখে সে বিষয়ে সাহাবীগণ কীভাবে আমল করেছেন সেটি দেখতে হবে। সেজন্য হাদীসের শুদ্ধতার সাথে সাথে এর সামগ্রিকতাকেও সমভাবে বিবেচনা করতে হবে।
ছ। বর্তমানে, বিশেষ করে ছাত্রীরা যেভাবে নেকাব দেয়, তাতে তাদের মুখের অর্ধাংশ উন্মুক্ত থাকে। যা নিঃসন্দেহে ‘ইল্লা মা জাহরা’র সীমাকে অতিক্রম করে যায়। আমার পোস্ট ও মন্তব্যে বার বার বলা সত্ত্বেও, যারা নারীদের মুখ ঢেকে চলার পক্ষে পোস্ট দিচ্ছেন তাদের একজনকেও এই স্টাইলিশড নেকাবের ব্যাপারে আপত্তি করতে দেখলাম না!
জ। চবি দক্ষিণ ক্যাম্পাসের রাস্তায় আজ সন্ধ্যার দিকে একজন বোরকা পরিহিতা গ্রামীণ মহিলাকে দেখলাম পাতলা পর্দা মাথার দিক থেকে ঝুলিয়ে দিয়ে আগাগোড়া মুখ ঢেকে যাচ্ছেন। মুখ ঢাকাকে যারা জরুরি মনে করেন, তাদের একজনকেও এই ক্যাম্পাসে এই মানের পর্দা করতে দেখিনি! অবাক লাগছে!