১. ইয়াং মেয়েরা কেন নেকাবের প্রতি বেশি আকৃষ্ট?
পর্দার প্রযোজ্যতা ও প্রয়োজনীয়তা সবার জন্য হলেও পর্দার কঠোরতা বিবাহিতাদের জন্য। অবিবাহিতাদের জন্য কিছুটা ছাড়। যারা বিবাহের প্রস্তাব পাওয়ার আশা করে তারা তদনুরূপ সাজসজ্জা করবেন, এটি স্বাভাবিক। এটি শরিয়ত অনুমোদিত। মহিলা সাহাবিরা তা-ই করেছেন। সিরাত পড়ে আমরা এটি জানতে পারি। এগেইন, এরমানে এই নয় যে তারা সতর খোলা রেখে চলবেন।
কারো সাথে যাদের ‘ডিল’ ফাইনাল হয়ে গেছে, অর্থাৎ বৈবাহিক বন্ধনের সুরক্ষার মধ্যে যারা সুরক্ষিত হয়েছেন তারা নিজেদের স্বামী ব্যতীত অন্যদের থেকে নিজেদের সৌন্দর্যকে হেফাজত করবেন, রূপ-সৌন্দর্যের প্রদর্শনী করার বা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করবেন, স্বাভাবিক যুক্তিও এটা বলে, ইসলামি শরিয়তও তা-ই বলে। সেজন্য বিবাহিত নারী ও পুরুষের যিনার শাস্তি, প্রমাণ সাপেক্ষে, মৃত্যুদণ্ড হলেও অবিবাহিতদের জন্য লঘু শাস্তি। একশত বেত্রাঘাত। সেটি একশ’টা শলা আছে এমন ঝাঁটার একটা বাড়িও হতে পারে।
এইসব তাত্ত্বিক কথা। ধর্মের কথা। বাস্তবে এখানে ধর্মের নামে হচ্ছে এর উল্টো কাজ। পর্দার ব্যাপারে সিরিয়াস নারীদের অধিকাংশই অবিবাহিতা। বিবাহিত নারীরা পর্দার ব্যাপারে ততটা সিরিয়াস নয়। এই পাজলটা আপনি মেলাতে পারবেন, “নেকাব: কনসিলমেন্ট অফ বিউটি? নাকি, বিউটি অফ কনসিলমেন্ট?” আমার এই লেখাটা পড়লে।
২. মুখমণ্ডল কি শুধু যৌন আকর্ষণ প্রকাশের জায়গা?
একটা মানুষের মুখাবয়বের মাধ্যমে আমরা ৩টা জিনিস পাই:
ক. সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব,
খ. তার এ মুহুর্তের মনোভাব এবং
গ. যৌন আকর্ষণ বা আবেদন।
যৌন আকর্ষণ ঢাকার জন্য বা কমানোর জন্য যদি মুখ ঢাকতেই হয়, তাহলে তো অবশ্য চোখ ঢাকা, এই দিক থেকে ফরজ হওয়ার কথা। কারণ, আকর্ষণ যা কিছু তা সব কেন্দ্রীভূত হয় চোখের নজরে। দৃষ্টিতে। এটি যে দেখে এবং যারটা দেখা হয়, উভয়ের জন্য সমপ্রযোজ্য। ভিজুয়াল ছেলেদেরকে বেশি আকৃষ্ট করলেও, মেয়েদের জন্য এটি কিছুই নয় এমন তো নয়।
নারীদের যা কিছু দেখে পুরুষরা আকর্ষিত হয় তার সবটুকু ঢেকে রাখার জন্য নারীদের বলা হলেও, পুরুষদের যেসব শারীরিক বৈশিষ্ট্য নারীদেরকে উদ্দীপ্ত করে, তাদের মধ্যে টার্ন-অন ঘটায়, তা ঢেকে রাখার মাধ্যমে নারীদের প্রতি ইহসান করার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদেরকে কেন নির্দেশ দিলেন না, তা নিয়ে ভাবতে হবে।
অব্যবহৃত/অতিরিক্ত সম্পদের যাকাতের মতো পর্দা নারীর ওপর এক ধরনের বহিরাগমন জরিমানা –
খুব সংক্ষেপে বললে, বাহিরের কর্মক্ষেত্র বলতে আমরা যা বুঝি তা পুরুষদের এলাকা। ইসলামী শরিয়ত চায় না, নারীরা সেখানে সতত যাতায়াত করুক। তাই আপদমস্তক পর্দার মাধ্যমে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। রাস্তায় স্পিড ব্রেকার ও এরিয়া রেস্ট্রিকশান দেয়ার মতো ব্যাপার।
এই মূল জিনিসটা না বুঝে, অথবা পাশ্চাত্যপ্রভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে, পর্দার এই শরয়ী স্পিরিটকে উল্টে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আজকাল নারীরা তো বটেই, সাধারণ লোকজন, বিশেষ করে ইংরেজি শিক্ষিত লোকদের মনোভাব এমন, নারীরা পর্দা করা সাপেক্ষে সামাজিক পরিসর তথা পাবলিক স্পেইসকে লিঙ্গনিরপেক্ষ করা সম্ভব, কিম্বা উচিত। এটি নারীবাদি শিক্ষানীতি এবং জেন্ডার পলিসির প্রত্যক্ষ প্রভাব।
যারা ইসলামের কথা বলে এবিষয়ে তাদের ভুল ধারণা ভাঙবে যদি তারা সিএসসিএস-এর সাইট হতে halal but unIslamic (হালাল হলেই কি ইসলামিক হবে? ইসলামী নৈতিক চেতনার গুরুত্ব) আমাদের করা এই অনুবাদটি ভাল করে পড়ে। কোনোকিছু পার্টিকুলারলি বিধিসম্মত হওয়া সত্ত্বেও সেটি আল্টিমেইটলি অবৈধ বা অনুচিত হতে পারে। এ বিষয়ে এখানে বিস্তারিত কিছু বলার সুযোগ নাই।
বিশেষ অনুমোদনকে একসেপশনালিটির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে একে জেনেরালাইজেশানের মাধ্যমে যে কোনো আইনী কাঠামোর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও নৈতিক চেতনাকে নস্যাৎ করে দেয়া সম্ভব। ইসলাম এর ব্যতিক্রম কোনো কিছু নয়।
সে যাই হোক, অনেকেই জানে না, রাসূল (স.) এটাও বলেছেন, ‘তোমরা কারো সাথে কথা বলার সময়ে মুখ ঘুরিয়ে কথা বলো না।’ তারমানে, দৃষ্টি নত করার যে হেদায়েত, তারসাথে মানুষের সাথে সসম্মানে কথা বলার এই দৃষ্টি আকর্ষণীকে সমন্বয় করতে হবে। কাণ্ডজ্ঞান প্রয়োগ করে আমাদের বুঝতে হবে, কার সাথে কখন কীভাবে ইন্টারেকশান করাটা প্রপার তথা ভদ্রজনোচিত হবে। কোমল কণ্ঠে কথা না বলার যে আয়াত তা শেষ হয়ে আল্লাহ তালার এই হেদায়েত বানী দিয়ে, বরং তোমরা কথা বলো উত্তম উপায়ে, ভদ্রজনোচিতভাবে।
টেক্সট্রোভার্টনেস –
বেসিকেলি এটি একটা ফিমেইল ফেনোমেনা। নেকাব নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নারীদেরকে দেখা যায়, তারা সাধারণত টেক্সট্রোভার্ট হয়ে থাকেন। অর্থাৎ তারা পরপুরুষদের সাথে টেক্সট-এ খুব ইজি গোয়িং এন্ড এক্সট্রোভার্ট, বাট বাই-পারসন তথা ফিজিকাল ইন্টারেকশানে ইউজুয়েলি মোর কনজারভেটিভ। বয়ফ্রেন্ডের সাথে নেকাব পরে হরহামেশা ঘুরে বেড়ায় অনেক মেয়ে। আমাদের এলাকায় এটি কমন দৃশ্য। তাদের এই কাজের যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যা আমার জানা নাই।
মেয়েদের পোষাক নিয়ে নাকি কোনো কথা বলা যাবে না। তাদেরকে কিছু জিজ্ঞাসা করা যাবে না। কোনো পরামর্শ বা উপদেশ দেয়া যাবে না। এটি নাকি মোরাল পুলিসিং। অথচ, দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম মানুষটি বলেছেন, ‘কোনো অন্যায় দেখলে তোমরা হাতে বাধা দিবে। না পারলে মুখে প্রতিবাদ করবে। তাও না পারলে অন্তরে ঘৃণা করবে।’
আধুনিক এপলজেটিক ট্রেন্ডের এটাই বৈশিষ্ট্য, তারা ‘ইনকনভেনিয়েন্ট’ ক্লাসিকাল রেফারেন্সগুলোর নতুন ধরনের ইন্টারপ্রিটেশনের কথা বলবে। অথবা, বলবে, এগুলো মরিটরিয়াম করা হইছে। অর্থাৎ এ’গুলোর হুকুম বর্তমান কালে রহিত বা অকার্যকর।
ইসলামিক কনজারভেটিভদের লিঙ্গবাদী বা সেক্সিস্ট মনোভাব –
নারীদের চেহারাকে জনসমক্ষে যারা সর্বদা ঢেকে রাখার পক্ষে তারা চেহারার মাধ্যমে যে আকর্ষণ ফুটে উঠে সেইটাকে ওভারফোকাস করেন। চেহারাতে নারীসহ যে কোনো মানুষের সাইকোলজি ও পারসনালিটির যে বহিঃপ্রকাশ ঘটে সেটাকে ততটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন না। প্রাকটিকালি। এবার আপনারাই বলুন, এটি কাইন্ড অব সেক্সিস্ট মেন্টালিটি কিনা।
পোষাক, মানবসভ্যতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার –
পোষাক মানব সভ্যতার শুধু আবিষ্কার নয়, বরং অন্যতম শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার। বলা যায়, পোষাকের মাধ্যমে মানুষ কাজে মনোযোগি হতে পেরেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত উদ্দীপণাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। এটি আদিকালের জন্য যেমন করে সঠিক ও কার্যকর ছিল। এখনও তাই।
দুনিয়াতে একটা মানব গোষ্ঠী কেউ দেখাতে পারবে না, যারা আদৌ পোষাক পরিধান করে না। পোষাকের প্যাটার্ণ তথা দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ও উপকরণ যা-ই হোক না কেন, শীত নিবারণের কারণ ব্যতিরেকে কেউ যদি শরীরের কোথাও একটা সূতাতুল্য কিছু পরিধান করে তাহলে বলতে পারবেন না যে তারা নেকেড কমিউনিটির উদাহরণ।
নগ্নতার সংজ্ঞা ও পরিমাপ একেকজনের কাছে এক এক পরিবেশে একেক সময় একেক রকম। আমার এক অমুসলিম ছাত্রীকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘তুমি সব সময়ে একটা বড় সাইজের মাস্ক কেন পরে থাকো?’ তখন সে আমাকে বলল, ‘স্যার, করোনার কারণে মাস্ক পরে থাকতে থাকতে এখন মুখ খোলা রাখলে মনে হয় আমি যেন আন্ড্রেসড!’
যা বলছিলাম, পোষাকের মাত্রা নিয়ে মতভেদ ও বৈচিত্র ছিল আছে ও থাকবে। এবং অকেশনালি প্রত্যেকেই জায়গামতো আনড্রেসড হয়। এগুলো মানুষের বা বিশ্বাস কোনো জনগোষ্ঠীর পোষাকহীনতার প্রমাণ নয়।
পোষাক মানুষের কর্ম-উপযোগিতার পূর্বশর্ত। ইসলামের পোষাক সংক্রান্ত হুকুমআহকাম ট্রাডিশনাল জেন্ডাররোল বলতে আমরা যা কিছু বুঝি সেটার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর একটিকে স্বীকার করলে অন্যটি অনস্বীকার্য হয়ে পড়ে।