আমি পুরুষ মানুষ। আজীবনই পুরুষ ছিলাম। কোনো ট্রানজিশন হয় নাই। যার কারণে ফিমেইলনেসের কোনো অভিজ্ঞতা আমার নাই। আমার অভিজ্ঞতা একজন পুরুষের অভিজ্ঞতা। যেমন করে নারীর অভিজ্ঞতা মূলত নারীর। নারী সম্পর্কে পুরুষের অথবা পুরুষ সম্পর্কে নারীর অভিজ্ঞতা পরোক্ষ তথা রেশনাল এক্সপেরিয়েন্সের বেশি কিছু নয়।

একজন পুরুষ হিসেবে অনুমান করতে পারি, পুরুষদেরকে এহসান করা জন্য নারীরা তাদের চোখও ঢেকে ফেলল। তাতে করে পরিস্থিতির কি বিশেষ কোনো উন্নতি হবে? অভিজ্ঞতা তা বলে না। নারীরা আপদমস্তক পর্দা করার পরও পুরুষ মানুষ তাদের প্রতি আকর্ষিত হয়। হওয়াটাই স্বাভাবিক। অতিরিক্ত আকর্ষিত হইয়া বেআইনি কাজ, ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটাইয়া ফেলতে পারে।

এমতাবস্থায়, একটা কল্পিত সমাধান হইতে পারে, নারীরা ঘর থেকে বেরই হবে না। পাবলিক প্লেস থেকে সব প্রভকেটিভ জিনিসগুলোকে আমরা সরাইয়া দিব। প্রভকেশন থেকে মুক্ত করা হলো। কাজটা কি ভাল হলো? এর উদাহরণ হলো সব সময়ে বিশুদ্ধ পানি পান করার মতো। যে কিন সব সময়ে বিশুদ্ধ জল পান করে সে যদি কখনো একটুখানি দূষিত পানি পান করে তাহলে  সে নির্ঘাৎ অসুস্থ হয়ে পড়বে। তার কোনো ইমিউনিটি মানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকার কারণে। তার মানে হলো, সহনীয় মাত্রায় কিছু দূষিত পানি পান করাটা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।

প্রভকেশন-মুক্ত একদম ফুল সেগ্রিগেশনে নারী পুরুষ উভয় পক্ষের জন্য ক্ষতিকর।

দেখা যায়, যে ছেলেটা মেয়েদের সাথে মেলামেশা করে না, কোনো একটা মেয়ে তার সাথে অন কার্টেসী ভালো ব্যবহার করছে। টলারেন্স লেভেল খুব লো হওয়ার কারণে সে তো একেবারে গলে-টলে শেষ। আবার সে ধরনের মেয়েদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য যারা ছেলেদের সাথে কখনোই মেলামেশা করে না। হয়তো কোনো ছেলের সাথে তার একটা অকেশনাল ইন্টারেকশান হয়েছে। ব্যাপার খুব সাদামাটা কিছু একটা। অথচ অতিউচ্চমাত্রার সংবেদনশীলতার কারণে মেয়েটা এই সৌজন্য ব্যবহারকে ওর প্রতি ছেলেটার দুর্বলতা হিসেবে দেখছে। দিনরাত ছেলেটার কথাই সে ভাবছে।

সুতরাং একটা মাত্রার ভেতরে ছেলেমেয়েদের মধ্যে মেলামেশা হওয়াটা বাঞ্চনীয়; সহজীবনযাপনের অভিজ্ঞতা ও মানসিকতা থাকা জরুরী।

পাবলিক প্লেসে সেক্সুয়াল প্রভকেশনের ব্যাপারটা এমন, কোনোভাবেই এর থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারি না। হাল্কা পাতলা দেখে ফেলা, কিছুটা সংবেদনশীলতা তৈরী হওয়ার ব্যাপারটাকে আমরা যতই হাইড করবো, যতই দমন করার চেষ্টা করবো, ততই দেখা যাবে অনাকাঙ্ক্ষিত উচ্চ মাত্রার সংবেদনশীলতা তৈরী হচ্ছে। এ’ধরনের সুপার সেন্সেটিভ সিচুয়েশানে কোনোমতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার মতো যা ঘটার তা ঘটিতেই থাকিবে। ঠেকানো যাবে না কোনোমতে। সামান্য ঢেউয়ের দোলায় পাহাড় উল্টে যাবে। এটা একটা বড় ধরনের সমস্যা।

এ’ধরনের পরিস্থিতিতে লোকেরা আইন ও নৈতিকতার কথা বলে। এগুলোর দরকার আছে। আরো একটা জিনিস প্রাকটিকেলি খুবই জরুরী। যার কথা লোকেরা বলে না। সেটি হলো অভ্যস্থতা। সাইকোলজিকেল এডাপটেশান। এ’প্রসঙ্গে এ’কথাও বলতে হয়, আমরা কেন মনে করতেছি যে এই জিনিসগুলো অর্থাৎ

সেক্স এন্ড সেক্সুয়ালিটির ব্যাপারগুলো আদতে খারাপ?

নারীরা পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে, পুরুষরা নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মধ্যে (উইথ সোশ্যাল কগনিজেন্স) একটা সম্পর্ক গড়ে উঠবে। প্রজনন হবে। পরিবার গড়ে উঠবে। সমাজ গঠিত ও পরিচালিত হবে। এটাই তো স্বাভাববিক। এক দৃষ্টিতে, সেক্সই তো এই সবকিছু অন্তরালবর্তী ফাউন্ডেশান। এই অতি দরকারি জিনিসটাকে আমরা রেগুলেইট করব। করতেই হবে। ভাল কথা। পর্দা সংক্রান্ত আলোচনাতে, লক্ষ করেছি, ইন জেনারেল, লোকেরা যৌনতাকে খারাপ মনে করে। এটলিস্ট এর পজিটিভ নেসেসিটির কথা এড়িয়ে যায়।

হেইভিং সেইড দিস, এপ্রসঙ্গে আরেকটা কথা বলা দরকার। সেটা হচ্ছে, যৌননৈতিকতার বিষয়ে কোরআন হাদিসের রেফারেন্স যখন আমরা টানি তখন আমরা ভুলে যাই, এসব বিধিনিষেধ কিম্বা উদাহরণ এমন একটা সমাজের যেখানে বিয়ে ছিল খুব সহজ ব্যাপার। আর, বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল খুব কঠিন ব্যাপার।

যে কারণে যেভাবেই এটি তৈরী হোক না কেন, আমাদের সমাজ এমন একটা সমাজ যেখানে বিয়ে করা হলো কঠিন আর বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক করা হলো অতিসহজ। আর্লি মেরেজ, রিমেরেজ, মেইল পলিগেমি, এগুলো সোশালি আনএক্সেপ্টেবল। বিবাহবহির্ভূত ‘সম্পর্ক’ তথা রিলেশন করা হলো পারিবারিক ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য। বিশেষ রক্ষণশীল আবহে আপত্তিসহকারে গ্রহণযোগ্য।

পর্দা সংক্রান্ত আলোচনাতে যৌনব্যবস্থাপনার প্রসঙ্গকে এড়িয়ে যাওয়ার বিদ্যমান প্রবণতাকে আমি ভুল মনে করি। তাই খোলাখুলিভাবে এই কথাগুলো বললাম।

পর্দা হলো একটা মাত্রার ব্যাপার। আমরা যদি বিষয়টাকে সায়েন্টিফিক্যালি বলি, পিউর বলতে কোনো জিনিস নাই। বস্তুগত হোক কিম্বা নৈতিক হোক, জগতের সব কিছুই একটা মাত্রার ব্যাপার। মাত্রার মধ্যেই আমরা সবকিছুকে সংজ্ঞায়িত করি। পর্দাও এর ব্যতিক্রম কিছু নয়।

পর্দা সংক্রান্ত এটা নিশ্চয়ই একটা পরিপূর্ণ আলোচনা নয়। এখানে যাষ্ট কয়েকটা আসপেক্ট থেকে আমি কিছু প্রাসঙ্গিক কথাবার্তা শেয়ার করতে চাচ্ছি।

যারা মুখ ঢাকার পক্ষে যুক্তি দেয়, অথচ চোখ এবং চোখের আশেপাশের অঞ্চল খোলা রেখে মূলত মুখের ঊর্ধ্বাংশ ঢাকে, হ্যাঁ আমি আধুনিক নেকাবের কথা আমি বলছি, তাদের যুক্তিটা কী?

তারা যত যুক্তি দেয়, যত রেফারেন্স বলে তা সব মুখ ঢাকার। বাস্তবে তারা আচ্ছাদিত করে মুখের অর্ধেক। একই রেফারেন্সের আন্ডাস্ট্যাডিং গ্রামীণ মহিলাদের কাছে অন্যরকম। গ্রামীণ পর্দানশীন নারীরা এখনো পুরো মুখ ঢাকে। পুরো মুখমণ্ডল আবৃত করে জনসম্মুখে যাওয়াকে যারা জরুরি মনে করেন, হোক সেটাফরজ, ওয়াজিব বা সুন্নাতে মোয়াক্কিদা, তারা গ্রামীণ মহিলাদের মতো করে পরিপূর্ণ পর্দা করে না কেন?

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের মধ্যে নেকাব পরার একটা প্যাটার্ন দেখা যায়। তারা মুখ অর্ধেক ঢাকে। মাদ্রাসা ছাত্রীদের নেকাব পরার প্যাটার্ন একটু রক্ষণশীল হলেও তাদের পর্দাতেও একটা স্টাইলিশ প্যাটার্ন লক্ষণীয়। তারা দুই চোখ খোলা রেখে ভ্রুসহ পুরো মুখ ঢাকে। তাদের বোরকায় মুখের সামনে ঝুলানোর জন্য যে পর্দা থাকে তা তারা কখনোই সামনে ছেড়ে দেয় না। সেইটা থাকে মাথার পেছনে ঝুলানো। কোনো মাদ্রাসা ছাত্রীকে আমি গ্রামীণ মহিলাদের মতো পাতলা পর্দা দিয়ে সম্পূর্ণ মুখ ঢেকে চলতে দেখি নাই।

তারমানে, নেকাব করা বা পরার মধ্যে যার যার মতো করে একটা কালচারা আছে। কিছু ব্যাপার। অনুচ্চারিত কিছু ফ্যাক্ট আছে। লেট আস আনফোল্ড ইট।

কেউ যদি মনে করে সৌন্দর্য ঢাকা দরকার, সে সৌন্দর্য ঢাকবে। আমি যদি একটা কিছু করা দরকার মনে করি, কাজটাকে সাক্ষাৎ খোদার হুকুম বলে মনে করি, তাহলে যে কোনো অবস্থাতেই সেইটা করব। এটাই স্বাভাবিক। কেউ যদি মনে করে যে তাকে নেগোশিয়েট করতেই হচ্ছে, ক্ষেত্রবিশেষে কম্প্রোমাইজ করতে হচ্ছে তাহলে তাকে অনুমোদিত সীমার মধ্যে থেকেই সেইটা করতে হবে।

পুরো মুখ ঢেকে পাবলিক প্লেসে নিজেকে এভেইলেবল করার ব্যাপারে কোনো নারী যদি অসুবিধা বোধ করে তাহলে সে ততটুকু নেগোশিয়েশন করতেই পারে যতটুকুর অনুমোদন শরিয়ত তাকে দিয়েছে। যদ্দুর জানি, শরিয়ত নারীদেরকে প্রয়োজনে মুখ খোলা রাখার অনুমোদন দিয়েছে। এরপরও কারো কাছে যদি মুখ খোলা রাখার রেফারেন্সগুলোকে যুক্তিসঙ্গত মনে না হয় তাহলে সে মুখ ঢেকেই চলবে। হ্যাঁ, পুরো মুখমণ্ডলই ঢেকে চলবে। এটি মানতে না পারার কী কারণ?

আমার কথা হলো, নারীরা, তোমরা যে কোনো একদিকে আসো। ব্যাপার যা-ই হোক না কেন, স্ববিরোধ কারো জন্যই দীর্ঘমেয়াদে কল্যাণ বয়ে আনে না। সেলফ কন্ট্রাডিকশান মানুষের মধ্যে মানসিক জটিলতা (cognitive dissonance) তৈরী করে।

পর্দা নিয়ে পর্দানশীল মেয়েদের মধ্যে সিনসিয়ারিটি আমি কমই দেখেছি। বরং দেখেছি সুবিধাবাদিতা। ইন মোস্ট অব দ্যা কেইসেস, পর্দা করার নামে তারা মুলত নিজের সৌন্দর্য ও আবেদনকে বাড়িয়ে তুলতে সচেষ্ট থাকে। নেগেটিভলি পজিটিভ বলে যে একটা এপ্রোচ আছে এইটাই তারা করে। সচেতনভাবে।

পাবলিক প্লেসে নিজেদেরকে মোর এক্ট্রাকটিভ এবং প্রেজেন্টেবল রাখার ব্যাপারে তারা অতিসচেতন। নিজেদের তো বটেই, অন্য মেয়েদের ব্যাপারে তারা যতটুকু তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ করে অবিরতভাবে, ছেলেরা সে তুলনায় যথেষ্ট বেখেয়াল। এটি নাকি তাদেরকে কনফিডেন্স দেয়। আমি বুঝতে পারি না, একজন মুসলিম মেয়ে কেন পাবলিক প্লেসে তার পারসনালিটির চেয়ে পারসনাল এপ্রোচকে বেশি গুরুত্ব দিবে…!

সূতি কাপড়ের যে ‘হিজাব’কে তারা নামাজের জন্য অধিকতর উপযোগি মনে করে তা পরে বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে কেন তাদের এত অনাগ্রহ ও অনীহা, তা আমি বুঝি না।

বলা হয়, চেহারা হলো সৌন্দর্যের রাজধানী। তাহলে চোখ নিশ্চয়ই হবে সচিবালয়তুল্য। বঙ্গভবন অরক্ষিত রেখে, সচিবালয় খোলা রেখে রাজধানী ব্লক করে কী লাভ? বুঝি না।

আসল কথা হলো, নেকাব হচ্ছে মেয়েদের অন্যতম বিউটি টিপস। যে কোনো নারী, হোক সে পর্দানশীল অথবা বেপর্দা, সে যখন একটা মেইটিং সিচুয়েশনের মধ্যে আসবে তখন সে নিজেকে যথাসম্ভব আকর্ষনীয় করে উপস্থাপন করবে। মুখ ঢাকা এর অন্যতম অনুষঙ্গ। শরীরের অনেক কিছু খোলা থাকলেও, দেখা যায় তার মুখের উপর একটু করে নেকাব টাঙানো। এই অর্থে, নেকাব এক্সক্লুসিভলি ইসলামিক কিছু নয়। বরং ছেড়ে দেয়া খোলা চুলের মতো ক্লাসিক্যাল মেইটিং বিহেভিয়্যারের একটা ফিমেইল ফ্লার্টিং টুল।

কোনো নারী যদি মনে করে, পাবলিক প্লেসে ফ্লার্টিশাস না হওয়ার জন্য আমি পর্দা করতেছি তাহলে তার পর্দাটা সে ধরনের হওয়া উচিত। একজন আত্মমর্যাদাশীল ব্যক্তি হিসেবে আমি যদি মনে করি যে আমি এটা করব, এইটা আমার করা উচিত, তাহলে পরিস্থিতি নির্বিশেষে আমি সেটাই করব; ইন আ ফোকাসড ওয়ে। উইদাউট এটি টেকনিকাল কম্প্রোমাইজ। যেটা করব না সেটা আদৌ করব না। আমি মুখে দাবি করব একটা আর আচরণে করব ভিন্নটা, এইটা আমি নিজের জন্য এবং কারো জন্য সঠিক মনে করি না।

নেকাব সংক্রান্ত আলোচনা আসলে আমি সাধারনত একটা ইরানী বইয়ের কথা বলি। যে বইটা আমার আজ পর্যন্ত পড়া হয় নাই। বইটা আমার কাছে আছে। সেই ছাত্রজীবন থেকে। বইটা আমার কেন পড়া হয় নাই, শুনবেন? বইটা কিন্তু ছোট। ব্যাপার হলো, বইটার প্রচ্ছদটা দেখলেই আমার মনটা জুড়ায় যায়। বইটা আর পড়তে মন চায় না! ছোট্ট বইটার টাইটেল এতটাই ক্যাচি, টাইটেলের মধ্যে পুরো জিনিসটা চলে এসছে, বিউটি অফ কনসিলমেন্ট অর কনসিলমেন্ট অফ বিউটি। আবরণীর সৌন্দর্য? নাকি, সৌন্দর্যের আবরণী?

আধুনিক নেকাব পরিহিত কন্যারা দোহাই দেয় কনসিলমেন্ট অফ বিউটির। বাস্তবে আমল করে এর উল্টো। বিউটি অফ কনসিলমেন্ট তাদের মনযোগের কেন্দ্র।

একটু আগে যেমনটা বললাম, নামাজ পড়ার জন্য মেয়েরা যে খিমারগুলো ইউজ করে, তারা বলে হিজাব, সেইটা সূতি কাপড়ের হয়। মোলায়েম। সুন্দর। অনেক বড়। ঢিলেঢালা। আরামদায়ক। এই খিমার তথা ‘হিজাব’গুলোতে মুখটা শুধু খোলা থাকে। সুন্দর করে স্টিচ করা একটা হালকা রাবারের মতো আছে, সেইটা মাথার পেছন দিকে নিয়ে ছেড়ে দিলে পুরো পোষাকটা খুব সুন্দরভাবে লেগে থাকে। নামাজের জন্য তো বটেই পর্দা মেনটেইন করার জন্য ওভারঅল খুবই কনভেনিয়েন্ট।

অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, ঘরে এত সুন্দর খিমার ব্যবহারকারী নারীরা বাইরে যাওয়ার জন্য আঁটসাঁট, সিল্কি, ১০টা পিন মারলেও খুলে যায়, কোনোমতে টেনেটুনে কেপের মতো পরে থাকতে হয়, বাধাকপির মতো ভাঁজ ভাঁজ করা স্কার্ফই পরে। নামাজের পোষাক পরে বাইরে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারে না। বাঁধাটা কোথায়? কেন এমন? কিউরিয়াস মন জানতে চায়।

অনুমান করি, আমার ভুলও হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় আমার অনুমানটা সঠিক। সেটি হচ্ছে, এখানে সৌন্দর্যচর্চার, সোজা কথায় এক্সপোজারের একটা ব্যাপার আছে। দেখা যায়, বিয়ে সাদি হয়ে যাওয়ার পর তাদের এই নেকাব প্রীতিটা আর ততটা থাকে না। তখন নেকাব কেবলই পইড়া যায়। নিচের দিকে নামতে থাকে। পিছনের দিক করা ছবি ক্রমান্বয়ে পাশ হয়ে সামনে আসতে থাকার মতো। বিয়ের পরে তাদের কড়া(?) নেকাব শিথিল হতে হতে, নিচের দিকে পড়তে পড়তে নাক পার হইয়া ঠোঁট পার হইয়া থুতনিতে এসে ঠেকে।

সে অনেক বছর আগের কথা। আমি নেকাবের বিরুদ্ধে লিখছি বলে আমার বিরুদ্ধে এক মেয়ে খুব গরম পোস্ট দিলো। সম্ভবত তখনকার সোনার বাংলাদেশ ব্লগে। আমিও একটা পাল্টা পোস্ট দিছিলাম। পরে আমাকে আমার একজন কাছের মানুষ বলল, দ্যাখেন ঐ মেয়ে, যে আপনার বিরুদ্ধে পোস্ট দিছিল। কয়েক বছরের মধ্যে বিয়া কইরা বিদেশে যাইয়া নেকাব ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিজেই নিজের পাবলিসিটি করছে।

যারা ছবি দিয়া মুখটা ইমুজি দিয়ে ঢেকে দেয়, তাদের মকারিটা আরো বেদনাদায়ক। নিজেকে ঢাকতেই যখন চাচ্ছেন তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় উপস্থিতি কেন? কেন আপনার জুতা সেন্ডেল আর বাহারি পোষাক অন্যদের দেখেতে হবে? কিসের এত টান? কেন এই স্ববিরোধ?

হিপোক্রেসি দেখতে দেখতে আমি রীতিমতো ভীষণ বিরক্ত। ক্ষুদ্ধ।

আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি মানুষের ব্যক্তিত্বকে সম্মান করি। সৌজন্যতা ও ভদ্রতার দাবিকে সব সময়ে মেনে চলি। আমি আজ পর্যন্ত পর্দানশীল নেকাব পরিহিতা কোনো মেয়েকে এটা না পরার জন্য ব্যক্তিগতভাবে বলা বা কোনোভাবে নেকাব ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা, এই ধরনের কাজ জ্ঞানত, আল্লাহ সাক্ষী, কাউকে বলি নাই।

যা বললাম, আমি মানুষকে সম্মান করি। আমি বলতে চাচ্ছি, তোমার উদ্দেশ্য যদি হয় থিওরিটিকেলি আল্লাহর সন্তুষ্টি, প্রাকটিকেলি কনসিলমেন্ট অফ বিউটি, তাহলে তুমি সেভাবেই যা কিছু করার করো। এটাই তোমার ঈমানের দাবী। শিক্ষিত নারী হিসেবে এটি তো তোমাদের না বোঝার কোনো কারণ নাই। তা না করে তোমরা কনসিলমেন্টকেই কেন বিউটিফিকেশনের মধ্যে নিয়ে আসতেছ?

শরিয়ত যদি কনসিলমেন্টকে টু সাম এক্সটেন্ট বিউটিফিকেশনের অনুমতি দিয়েই থাকে, শরিয়ত তো প্রয়োজনে তোমাকে মুখ না ঢাকারও অনুমতি দিয়েছে। কেন তোমরা সহজকে বাদ দিয়ে কঠিনের দিকে যাচ্ছো? সহজ বিকল্পকে বাদ দিয়ে কঠোর বিকল্পকে গ্রহণ করা সুন্নতের খেলাফ, নিশ্চয়ই তুমি জানো। আই এপিল টু ইউর কনশেনস, নট টু সোশাল নর্ম। গেট ইট। অর, ফরগিভ মি ফর সাম হার্শ টকস।

[এটি সাক্ষাৎকার থেকে লেখ্যরূপের জন্য পরিমার্জিত।]

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *