নেতৃত্ব সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, নেতৃত্ব হলো একটি পরামর্শভিত্তিক ব্যাপার। বাস্তবতা হচ্ছে, এই ধারণাটি ভুল।

বরং নেতৃত্ব হলো একটা এককেন্দ্রিক ব্যাপার। পরামর্শ হচ্ছে নিছকই সহায়ক phenomena। সেজন্য কালেক্টিভ লিডারশিপ দিয়ে কখনো কোনো বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে না। পৃথিবীর ইতিহাসে আজ পর্যন্ত সফল হয়েছে এমন প্রত্যেক দেশ, জাতি, আদর্শ ও সভ্যতার ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য।

কথাটা উল্টাভাবে বললে এভাবে বলা যায়, জাতি গঠনের জন্য চাই ক্যারিশম্যাটিক লিডার। এ পর্যায়ে কেউ বলতে পারে, সোনার পাথরবাটি বা পরশ পাথরের মতো এই ক্যারিশম্যাটিক লিডারশিপ কোথায়, কীভাবে পাবো? এটি না থাকলে কী করা? কিংবা, কীভাবে একজন লিডার বুঝবেন, তিনি একজন ক্যারিশম্যাটিক লিডার?

এ ব্যাপারে সংক্ষেপে বলছি।

ক্যারিশম্যাটিক লিডারশীপ জিনিসটা কোনোভাবে কাউকে উদাহরণ বা প্রমাণ দিয়ে বোঝানোর দরকার পড়ে না, বা এর অবকাশ থাকে না। এই জন্যই সে ক্যারিশম্যাটিক লিডার। অর্থাৎ, সঙ্কট মুহূর্তে যে ধরনের লিডারশিপ স্বতঃস্ফূর্ত ও অপ্রতিরোধ্যভাবে গড়ে ওঠে এবং প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তা-ই হলো ক্যারিশম্যাটিক লিডারশিপ।

ক্যারিশম্যাটিক লিডার নিজের ব্যাপারে নিজে যা ভাবা দরকার এবং তার যা করা দরকার সেটা হলো, যখনই কোনো গ্যাপ দেখা যাবে তখনই নিজ দায়িত্বে এগিয়ে যেতে হবে। কেউ যখন নেতৃত্বের জন্য এগিয়ে যাবে, তখন তাকে ভাবতে হবে, আমাকে এই কাজটি করতেই হবে, I must do it. or, I have to.

সংকটময় মুহূর্তে জীবনপণ না হয়ে কেউ যদি জামায়াতের মতো ধর্মীয় দলগুলোর স্টাইলে ‘আমি চেষ্টা করব’, ‘দেখি না কতদূর কী হয়’, বা, ‘আছি অন্য সবার সাথে’–  এই ধরনের মনমানসিকতা নিয়ে দায়িত্ব পালন (?) করতে চায়, বা এই ধরনের গাছাড়া ভাব নিয়ে কাজে নামে, তখন সেই কাজে কখনো সে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে সফলতা লাভ করতে পারবে না। অংকের নিয়মের মতো এটি সত্য।

বহু লোকের এই ধরনের একটা অনুর্বর গণসম্মিলন শেষ পর্যন্ত কোনো অর্থবহ পরিবর্তন ও উন্নয়ন সাধন করতে পারবে না। এটি নিশ্চিত বলা যায়।

আমার এ কথাগুলো ভালো করে বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার কর্মক্ষেত্র হোক সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় কিংবা যে কোনো field of work, নেমেছেন যখন তখন কোরআনের ভাষায় ‘তীব্র গতিতে ছুটে চলার’ নীতিকে সমুন্নত রেখে সর্বতোভাবে with full sincerity and seriousness এগিয়ে চলেন। আপনি যদি ক্যারিশম্যাটিক লিডার নাও হয়ে থাকেন তারপরও আপনি সফলভাবে আপনার কর্মক্ষেত্রের নেতৃত্ব দিতে পারবেন। এতটুকু নূন্যতম যোগ্যতা দিয়েই আল্লাহ তায়ালা আপনাকে এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর উপরে বিশ্বাস এবং নিজের উপর এতটুকু আস্থা আপনার থাকতেই হবে।

আচার-আচরণে বিনম্র হওয়া আর আস্থাহীনতায় ভুগতে থাকা কিংবা পলায়নপর মানসিকতা পোষণ করা, দুটো ভিন্ন জিনিস। সেল্ফ ব্র্যান্ডিংয়ের নীতিকে যিনি ভুল মনে করেন তিনি কখনো কোনো বিষয়ে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। তিনি সর্বোচ্চ একজন অনুগত অনুসারী, কর্মী বা কর্মচারী হতে পারবেন।

কাজ করার সময়ে আপনার ভুল হতেই পারে। হোক। যারা কাজ করে, তাদেরই ভুল হয়। ভুল হওয়াটা সমস্যা নয়। সমস্যা হলো ভুল থেকে শিক্ষা নিতে না পারা বা না নেয়া। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমরা তো সফলতার জন্য কাজ করতে পারি। কিন্তু সেটাকে তো আমরা আমাদের শক্তি দিয়ে তৈরি করে নিতে পারি না, যতক্ষণ পর্যন্ত না মহান আল্লাহ তায়ালা তা অনুমোদন করেন।

লেখাটির ফেসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *