(১) সাধারণ ভালোলাগা।
এর তেমন গভীরতা নাই। পছন্দ ও খানিকটা অকেশনাল ঘনিষ্টতার মাধ্যমে এমনটি ঘটে। এটি নির্দোষ আকর্ষণবোধে সীমাবদ্ধ থাকে। একে যৌনতামুক্ত ভালোবাসা বলা যায়।
(২) ভালোবাসা প্রকাশমূলক আচরণ যখন যৌনতামুক্ত নির্মল ভালোবাসার (asexual love) বহিঃপ্রকাশ, তখন তা পারিবারিক, সামাজিক ও বৃহত্তর মানবিক বন্ধন হিসেবে বিবেচিত হবে।
(৩) যৌনতা।
যৌনতার দুটি স্তর: হালকা ও নিবিড়।
হালকা যৌনতারও দুটি স্তর:
ক. সান্নিধ্য কামনা ও ঘনিষ্ট হওয়ার ফলশ্রুতি হিসেবে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশমূলক কর্মকাণ্ড।
ভারতীয় সিনেমার বিশেষ করে নাচগানের অংশে পরোক্ষ যৌনতার এই ধরনের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। সেজন্য সবাই, বিশেষ করে নারীদের কাছে এগুলো বেশ জনপ্রিয়। গুনাহর ভয়ে না দেখাটা ভিন্ন প্রসঙ্গের আলাপ।
খ. যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড, ইংরেজিতে যাকে ফোরপ্লে বা কোর্টশিপ বলা হয়।
এটি হলো আদর-সোহাগ তথা গুড টাচের মাধ্যমে যৌনমিলনের জন্য নারী সঙ্গীকে প্রস্তুত করা।
নিবিড় যৌনতা হলো যৌনকর্মের মূল অংশ।
(৩) মানসিক তৃপ্তিবোধ।
সফল যৌনমিলন পরবর্তী মানসিক তৃপ্তিবোধ ও ঐকান্তিকতা বা fulfillment-এর মাধ্যমে ভালোবাসায় আসে পূর্ণতা।
এই হলো ভালোবাসার এই মানচিত্রের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।
এর কিছু অতীব গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য হলো:
১। দেহাতীত শুদ্ধ ভালোবাসা।
যৌনতা হলো ভালোবাসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু যৌনতা মানেই ভালোবাসা নয়। যৌনতা হলো একটা চাহিদা। ভালোবাসার জন্য এটি অপরিহার্য নয়; বরং একটি অন্যতম প্রাসঙ্গিক বিষয়।
প্লেটোনিক লাভ বলতে আমরা যা বুঝি, তেমন ধরনের ভালোবাসা, অর্থাৎ ভালোবাসার পূর্ণতা অর্জিত হতে পারে সবগুলো ধাপকে পর্যায়ক্রমে অতিক্রম (exhaust) করা ছাড়াই। তার মানে হলো, কেউ সরাসরি পৌঁছে যেতে পারে ১নং স্তর হতে সরাসরি ৬নং ধাপে। প্রবল ভালোবাসার ক্ষেত্রে এটি ঘটে থাকে।
কেউ ভালোবাসার পূর্ণতা বা ফুলফিলমেন্টের স্তরে পৌঁছে যেতে পারে দ্বিতীয় স্তর তথা ভালোবাসা প্রকাশমূলক কর্মকাণ্ডের স্তর থেকে; শারীরিক স্পর্শ ও হার্ড সেক্স না করেই।
কেউ যৌনতার মূল অংশটুকুকে এড়িয়ে গিয়েও যৌনতার পরে অর্জিত তৃপ্তিবোধকে অর্জন করতে পারে। অর্থাৎ তৃতীয় স্তর থেকে সরাসরি ষষ্ঠ স্তরে পৌঁছে যেতে পারে।
২। দাম্পত্য ধর্ষণ।
ভালোবাসার এই মানচিত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য হলো, যৌনতার নিবিড় অংশে উপনীত হতে হয় হালকা যৌনতার স্তর পেরিয়ে। তা না করে কেউ যদি সরাসরি ইন্টারকোর্স শুরু করে দেয়, তাহলে তা সম্মতিনির্ভর ধর্ষণ বা প্যাসিভ রেইপের শামিল।
নারীদের শরীরে আসতে হয় মনের দরজা দিয়ে। পুরুষবাদী সমাজের বেকুব লোকেরা এটি জানে না বা মানতে চায় না। যার কারণে আমাদের সমাজে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী দাম্পত্য ধর্ষণের অসহায় শিকার।
৩। নারী মনের দুই দুয়ারী ঘর।
নারীদের মনের দরজা দুই দিক থেকে খোলা যায়। বা দুই দিকে খোলা থাকে:
(১) যৌনতার মাধ্যমে। এবং অবশ্যই তা হালকা থেকে নিবিড় হওয়ার প্রক্রিয়ায়;
(২) ভালোলাগা ও ভালোবাসার মাধ্যমে।
মানসিক তৃপ্তিবোধ বা সত্যিকারের ভালোবাসা তাদের মধ্যে পছন্দের মানুষটির প্রতি যৌন আকর্ষণ তৈরি করে বা করতে পারে। আবার সফল দাম্পত্য সম্পর্কের মাধ্যমেও পুরুষ সঙ্গীটির প্রতি তৈরী হতে পারে কোনো নারীর সত্যিকারের ভালোবাসা।
৪। ফ্রয়েডবাদের খণ্ডন।
ভালোবাসার এই মানচিত্র ফ্রয়েডের যৌনতানির্ভর মনস্তত্ত্বকে খণ্ডন করে। যৌনতাকে ফ্রয়েড ভিত্তি বা উৎসমূল হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
মানব জীবনের মৌলিক বিষয়গুলোর কোনো একটা কিছুকে আসল হিসেবে মনে করার এ ধরনের একদেশদর্শীতার শিকার হয়েছেন স্বয়ং কার্ল মার্কসও। যে কোনো পরিবর্তন বা অগ্রগতির পিছনে যে সব ফ্যাক্টর ক্রিয়াশীল থাকে তার মধ্যে অর্থনীতি অন্যতম, আমরা জানি। অথচ, সেটাকেই (উৎপাদন সম্পর্ক) তিনি সবকিছুর মূল বা সমাজ কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে ধরে নিয়ে মানুষের জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।
এ ধরনের চরমপন্থা বা একদেশীদর্শিতা হলো পুরো পাশ্চাত্য চিন্তা ও দর্শনেরই একটি গোড়ার সমস্যা।
সে যাই হোক, দীর্ঘমেয়াদী সফল যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে যে তৃপ্তিবোধ আসে তা এমনকি হার্ডসেক্স করা ছাড়াও অর্জিত হতে পারে। পছন্দ ও যৌনতার সুসমন্বয়ের মাধ্যমে এ ধরনের ফুলফিলমেন্ট আসে বা আসতে পারে। কোনো একটার পরিমাণ ০ থেকে শুরু করে এমনকি ১০০ও হতে পারে। হতে পারে পছন্দ ১০০ ভাগ। সেক্ষেত্রে যৌনতার বিষয়টি ০ ভাগ তথা অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে।
এর উল্টোটাও হতে পারে। হতে পারে যে কোনো অনুপাতের সম্পর্ক। যদি তা হয় পারস্পরিক সম্মতিমূলক ও সফল।
কোনো ধর্ম, মত, তত্ত্ব, দর্শন, মাতৃভূমি, পরিবারের সদস্য, বন্ধু, সুহৃদ— এ ধরনের কম্পোনেন্টগুলোর সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিবর্গের ক্ষেত্রে পরস্পরের জন্য তাদের যে টান ও অকৃত্রিম ভালোবাসা, তা চয়েস ও প্রেফারেন্স হতে সরাসরি সাইকোলজিকাল স্যাটিসফেকশান ও ফুলফিলমেন্টের স্তরে উন্নীত হয়ে থাকে।
এ ধরনের নির্দোষ (asexual) সম্পর্কের মধ্যে যৌনতা আবিষ্কার করা হলো সবকিছুকে যৌনকরণ (sexualize) করা। এটি হলো সমকালীন পাশ্চাত্যের ডমিনেন্ট সোশ্যাল ট্রেন্ড। প্রবণতা। এটি জণ্ডিসের কোনো রোগী কর্তৃক সবকিছুর মধ্যে হলুদ রং দেখতে পাওয়ার মতো ব্যাপার।
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Nurul Alom: দ্বিতীয় বা পুরুষের জন্য একাধিক বিয়ের উপযোগিতা ও উপকারিতা বিষয়ে কিছু লেখালেখি হওয়া দরকার।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বিয়ে একটা ঠিক মতো করেন। যদি করে থাকেন, তাহলে সেটার দায়-দায়িত্ব ঠিকঠাক মতো পালন করার চেষ্টা করেন আগে।
Nurul Alom: চাকুরিজীবী এক বউ নিয়ে কস্টে আছি। বাচ্চাগুলোর ঠিকমতো দেখাশোনা হয় না।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: চাকরিজীবী বউ আর চাকুরীজীবী পাঁচ বোন নিয়ে আমার তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের বাচ্চাকাচ্চারা তো খুব ভালো আছে। তারা সবাই খুব ভালো করেই মানুষ হয়েছে এবং হচ্ছে। চাকুরীজীবী অন্য অনেকের বাচ্চাকাচ্চার চেয়ে অনেক বেশি করে এবং ভালোভাবে। আপনাদের কেন সমস্যা হচ্ছে সেটা তো বুঝতেছি না। নিশ্চয়ই আপনাদের ম্যানেজমেন্টের কোনো সমস্যা আছে। তাই সমস্যাটা চাকরি করা না করার নয়। বরঞ্চ আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের।
Laila Arejuman: লাস্ট প্যারার আগের প্যারা পর্যন্ত পড়ার আগে শুধু ঐ কথাগুলো খুঁজছিলাম। ভাবলাম, ঐ বিষয়গুলি কি আপনি অস্বীকার করেন কিনা।
পাশ্চাত্যের পাশাপাশি আমাদের দেশীয় উল্লেখযোগ্য ইসলামপন্থী লোকজন তো সবকিছুকে যৌনকরন করে।
Noor Mohammad Siddique: Love is a kind of rainbow. So which colour I am going to like at that specific time how can you identify that? How do you map that? How do you feel that? How do you imagine that???!!! But I think your mapping is not so bad.
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: how do I do anything, matters very little. actually, what is that thing, is the matter. how is science related question. why and what is philosophical. I am concerned with the latter one.
Shahidul Islam: আত্মীয়-স্বজন বা রক্তিয় সম্পর্কের ভালোবাসা সম্পর্কে বলুন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: নন-সেক্সুয়েল ভালোবাসা হলো এই মানচিত্রের ১ নম্বর এবং ৫ নম্বর পর্যায়ভুক্ত।
Mosficur Rahman: ১ ও ৫ নাম্বার সম্পর্ক কি ছেলে-মেয়ের মধ্যে হতে পারে? যারা এই সম্পর্কের মধ্যে আছে তারা তো আপনার লেখাকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদেরকে ডিফাইন করবে!
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হতে পারে। এরকম হলে তা হবে বিরল এবং ব্যতিক্রমী ঘটনা।