আমার এ কথা ভাবতে খুব ভালো লাগে, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সুনাম-খ্যাতির সূত্রে আমার প্রিয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের সংশ্লিষ্ট অনেকেই চেনে। ড. ইউনুসের বাংলাদেশ হিসাবে এ দেশটাকে চিনে। টাকা-পয়সা দিয়ে বড় বড় কোম্পানি ব্র্যান্ড এম্বেসেডর নিয়োগ করে। কোনো কোনো দেশ খেলোয়াড়দের মাধ্যমে পরিচিত হয়। নোবেল পুরস্কারসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের পরিমাণ ও গুণগত উভয় দিক থেকে সর্বাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত নাগরিকটি সম্পর্কে কিছু কিছু অবুঝ লোকেরা অসম্মানজনক মন্তব্য করে। খুব খারাপ লাগে।
ড. ইউনুসকে own করার আরেকটা কারণ হলো তিনি চট্টগ্রামের। এবং আমার খুব কাছের এলাকার। জাতীয় বীরদেরকে সম্মান করতে না পারা ভালো কথা নয়। হ্যাঁ, তিনি সুদের ব্যবসা করছেন। আসলে স্বর্ণ-মান রহিত ইউএস ডলার ভিত্তিক যে মুদ্রা-ব্যবস্থাপনার সাথে আমরা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছি, তার অনুষঙ্গ হিসাবে বায়বীয় ট্রেজারি লোনের মাধ্যমে যে তথাকথিত বেইজ-মানি আমরা ব্যবহার করি, তা itself সুদনির্ভর। আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থামাত্রই সুদী-মহাজনি ব্যবসার ভদ্র রূপ। আমার-আপনার সাধের ইসলামী ব্যাংকও fractional reserve system এর নামে টাকা তৈরী করে ব্যবসা করে। এ নিয়ে পরে বিস্তারিত লেখা যাবে। আপাতত ‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র’ কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত ড. তারেক রমাদানের ‘পুঁজিবাদের ইসলামীকরণ প্রচেষ্টার মৌলিক অসংগতি’ এবং ড. আকরাম নদভীর ‘ইসলামিক ফাইন্যান্স: কল্পকথা বনাম বাস্তবতা’ – এই দুইটা আর্টিকেল পড়ে মাথা ঠাণ্ডা করেন।
যদ্দুর মনে পড়ে, ড. ইউনুস নোবেল পাওয়ার পরে এক টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে ইসলামী অর্থনীতি নিয়ে জানাশোনার ক্ষেত্রে উনার সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি ইসলামী অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ নই। এ বিষয়ে যারা এক্সপার্ট তারা এ নিয়ে কাজ করতে পারেন। উনি পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থাভিত্তিক একটা কিছু করেছেন। আপনারা যারা উনাকে সুদী ব্যবসায়ী বলে গালি দেন, আপনরা সুদমুক্তভাবে অনুরূপ কিছু করে দেখান। সমস্যা কী?
তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই তো একজন শিক্ষক ছিলেন। আপনার আমার মতো শিক্ষকরা তো শুধু বেতন তুলছি। নানা রকমের ডিগ্রী বাগিয়ে পদোন্নতি নিচ্ছি। কই, গ্রামীণের মতো কিছু তো করতে পারলেন না…! না পারেন, চেষ্টাও কি করেছেন? এমনকি এ ধরনের একটা কিছু করা যে দরকার, তাও কি ভেবেছেন কখনো? বিশ্ববিদ্যালয়ের বনেদী শিক্ষক বাসের জানালা দিয়ে যে জোবরা গ্রামবাসীকে দেখেন, তাদেরকে আদৌ মানুষ বলে ভেবেছেন কি কখনো? আমি তো এমনকি সমাজবিজ্ঞানের কোনো শিক্ষককেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রামে কখনো স্টুডেন্টদের নিয়ে বা একা ঘুরে আসতে দেখি নাই। তিনি কি ক্লিনটন পরিবারের আশ্বাস পেয়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প চালু করেছিলেন? না। প্রথম পুঁজিটা উনি উনার বেতন থেকেই দিয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নানা রকমের তত্ত্ব পড়েন, পড়ান, নিজেরা তৈরী করেন কিংবা বিদ্যমান তত্ত্বে কন্ট্রিবিউট করেন। এরপর, এসবের বাস্তবায়ন নিয়ে তারা আর মাথা ঘামান না। এগুলোর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদের নিজেদেরও ব্যক্তিগত-নৈতিক কোনো দায় আছে – এটি তারা কখনো ভাবেন না। এক স্যারের ভাষায়, মুরগী ডিম পেড়ে উঠে যাবে। এবার আপনি তা দিয়ে মামলেট-ওমলেট যা করেন তা আপনার ব্যাপার। মুরগীর তাতে কিছু করার নাই। হ্যাঁ, কবিতা লেখার ব্যাপারে এটি প্রযোজ্য হলেও হতে পারে। বিশেষ করে সমাজমুখী সাবজেক্টগুলোর আত্মমর্যাদা নিয়ে অতিসচেতন বিশেষজ্ঞদের কখনো দেখি না, নিজ নিজ গবেষণা ও জ্ঞানের বিষয়ে কোনো রকমের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও বাস্তব সংশ্লিষ্টতার কথা ভাবতে।
এ বিষয়ে ব্লেম গেম ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উপর তাদের পরম আস্থা। এমনকি ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবী বিভাগের আলেমে দ্বীন শিক্ষকদেরকেও কখনো দেখি না ‘পয়গম্বরদের উত্তরসূরী’ হিসাবে নিজ থেকে এগিয়ে কোনো দাওয়াতী কাজে লিপ্ত হতে। তাজকিয়া ইত্যাদি তো পরের কথা। যদিও নিজেদের পক্ষে ইসলামের কপিরাইট দাবির ব্যাপারে তারা খুবই সেনসেটিভ ও স্ট্রিক্ট…!!
যাহোক, কথা বলছিলাম ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে নিয়ে। বর্তমান সরকারের সাথে উনার যে দ্বন্দ্ব তাতে আমি কোনো প্রকারের মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। আমার মতো আদার বেপারির জন্য জাহাজের খবর নেয়ার কোশেশ করার দরকার নাই। আমি গোবেচারা। এক সময়ে দল করতাম। এখন সব ছেড়ে সিএসসিএস নিয়ে পড়ে আছি। ‘no conflict with any authority’ নীতিকে কঠোরভাবে মেনে চলি। শুধুমাত্র concept buildup-এর কাজ করছি। ইউনুস স্যারকে নিয়ে কিছু বলার মধ্যে রাজনীতিতে জড়িয়ে যাবার শংকা থাকে। সেসব বিষয়কে এড়িয়ে শুধুমাত্র দুটো পয়েন্টে কথা বলা দরকার মনে করেছি।
যেমনটা উপরে বলেছি, ইউনুস স্যারই সম্ভবত একমাত্র শিক্ষক যিনি পার্শ্ববর্তী গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষদের সাথে মিশেছেন। আমি যত বারই জোবরা-ফতেহপুরের এক নম্বর কিংবা দুই নম্বর রাস্তার ধারে কোনো চায়ের দোকানে বসেছি ততবারই কোনো বয়স্ক লোক দেখলে আমি এ কথা জিজ্ঞাসা করতে ভুলি নাই, ‘চাচা, আচ্ছা ইনিবারসিটি থেকে ইউনুস স্যার নামের কোনো শিক্ষক কি এখানে আসতেন? বসতেন? মানুষের সাথে কথা বলতেন?’ প্রতিবারই কোনো না কোনো বয়স্ক ব্যক্তি আমাকে কনফার্ম করেছেন, তিনি আসতেন, চায়ের দোকান বা কোনো মুদী দোকানে বসতেন। লোকদের কথাবার্তা শুনতেন। এখনো যে কেউ এটি নিরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
শিক্ষকরা যে মনে করেন, তত্ত্ব দেয়াই তাদের কাজ। বাস্তবায়নের কোনো ব্যক্তিগত দায় তাদের নাই। ড. মুহাম্মদ ইউনুস এই আত্মবিরোধ হতে বের হয়ে আসতে পেরেছিলেন। এটি ইসলামেরই দাবি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা সে কথা কেন বলো যা তোমরা নিজে করো না। একদল থিয়োরিস্ট হবেন আর একদল এক্টিভিস্ট হবেন – এমন ভাগাভাগি ইসলাম অনুমোদন করে না। তবে হ্যাঁ, একেকজনের একটিভিজম একেক ধরনের হবে। ইউনুস স্যার একজন থিওরিস্ট-এক্টিভিস্ট। আমি নিজেকেও এভাবে ভাবি। তাই উনাকে আমার ভালো লাগে।
উনার সাথে দ্বিমতের অনেক বিষয় আছে। তিনি নারীদেরকে এমপাওয়ার্ড করতে গিয়ে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ফাটল ধরিয়েছেন, পোভার্টি এলিভিয়েশানের শ্লোগান দিয়ে শতকরা ২৫ থেকে ৩৫ ভাগ সুদ নিয়ে এনজিও সিস্টেমকে ব্যবসায়ে পরিণত করেছেন, পুঁজিবাদকে প্রমোট করেছেন।
সরকারী টাকায় নিছক বিদেশী সাহায্য খরচ করার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল লাইন বরাবর বসানো ফাইবার অপটিক ক্যাবল আংশিক ভাড়া নিয়ে গ্রামীণফোন চালু করা এবং এর মাধ্যমে দেশে কমিউনিকেশন সেক্টরে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে দেয়ার কৃতিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনুসের। এটি সাফল্যের এক পিঠ। এর উল্টো পিঠে আছে, গ্রামীণফোন ও এর পথ ধরে পরবর্তীতে চালু হওয়া সব ফোন কোম্পানীর ডাটা ব্যবসার জন্য খুলে দেয়া সব ‘বন্ধু প্যাকেজ’। অতএব, বলা যায়, দেশে শেকড়বিচ্যুত ডিজ্যুস জেনারেশান তৈরীর দায়ও অন্তত আংশিকভাবে ইউনুস স্যারের। এ পর্যায়ে কেউ বলতে পারেনে, গ্রামীণফোন তো আর ড. ইউনুস চালান নাই। হ্যাঁ, গ্রামীণফোন তিনি চালান নাই। তবে, সংগত কারণেই গ্রামীণ ব্র্যান্ডের যত কিছু তার সবটুকুর মৌলিক কৃতিত্ব ও দায় ইউনুস স্যারেরই। পক্ষ-বিপক্ষ কেউই সেটি অস্বীকার করে না। তাই না?
যাহোক, এবার বলুন আপনার আমার প্রিয় এমন কোনো ব্যক্তি কি আছে, হতে পারে, যার মধ্যে আপনি কোনো মেজর মিসটেক বা গ্রস ডিজএগ্রিমেন্টের ইস্যু খুঁজে পান নাই? কারো সমালোচনা করার আগে তার বড় ধরনের কোনো অবদান থাকলে তা আন্তরিকভাবে স্বীকার করুন। আলোচনার কৌশলে আমার আগ্রহ নাই।
ইউনুস স্যারের মতো আমিও মানুষের ইনহারেন্ট বা ইনার পটেনশিয়্যালিটিতে বিশ্বাস করি। এমনকি কাউকে মুসলমান বানিয়ে বা ‘সত্যিকারের ঈমানদার’ বানিয়ে তাকে দোযখের আগুন থেকে বাঁচানোও আমার উদ্দেশ্য নয়। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সেবা করতে বলেছেন। যে কোনো ব্যক্তিকে সম্ভাব্য সব উপায়ে সহযোগিতা করতে বলেছেন। সদাসবর্দা কল্যাণ কামনা করতে বলেছেন। সে জন্যই আমি জনসেবা করি। একজন বুদ্ধিজীবী হিসাবে তাত্ত্বিক স্বচ্ছতার কাজ করাই আমার বড় দায়িত্ব। এর মানে এই নয় যে, আমি অন্য কোনো পাবলিক সার্ভিস করি না।
যখন দল করতাম, তখন দলের বাইরে কখনো ভাবি নাই। দলের ফান্ডে বাইতুল মাল দেয়ার বাইরে বড় অংকে ও নিয়মিতভাবে কাউকে কিছু দেই নাই। ভাবতাম, একামতে দ্বীনের মধ্যে আছি। যা কিছু করার তা ঊর্ধ্বতনেরা সময় মতো করতে বলবেন। এখন দেখছি, তা ছিলো একটা প্রিজম বা রঙ্গীন কাঁচের মতো। বাস্তব জগত অনেক বড়, অনেক জটিল ও ব্যক্তিগত। বুদ্ধিজীবী ও আলেম-উলামাদের কোনো দলের সাথে আইডেন্টিফাইড হওয়া অনুচিত। বড়জোর কোনো concept group-এর সাথে এটাচড থাকতে পারেন। থাক আজ এসব প্রসংগ।
ইউনুস স্যারের বিরুদ্ধে আর একটা বড় অভিযোগ হচ্ছে, যে জোবরা গ্রাম হতে উনি ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প শুরু করেন সেখানকার লোকেরা এখনো দরিদ্র। হ্যাঁ, এটি ঠিক যে জোবরা-ফতেহপুরের লোকেরা এখনো যথেষ্ট দরিদ্র। আমার কথা হলো, এজন্য ইউনুস স্যারকে কেন দায়ী করা হবে? তিনি কি তখনকার পুরো গ্রামবাসীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন? কিংবা যে সুফিয়াদের দিয়ে শুরু করেছিলেন পরবর্তী জেনারেশানসহ তাদের পুরো জীবনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন? তিনি কি জোবরার গভর্নর ছিলেন?
শুনেন, আমি ১৯৮২ সালে চবি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর হতে অব্যাহতভাবে জোবরা-ফতেহপুরকে দেখে আসছি। আল্লাহর কসম, শিক্ষা ও আর্থিক স্বচ্ছলতার দিক থেকে পুরো চট্টগ্রামের মধ্যে জোবরা-ফতেহপুরের চেয়ে অনুন্নত কোনো এলাকা আমার জানা নাই। যারা চট্টগ্রামের তারা এটি স্বীকার করবেন। এ যেন বাতির নিচে অন্ধকার। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সাধারণ গ্রামবাসীর মনোভাব হলো– আমাদের জায়গা দখল করে এরা ইনিবারসিটি দিছে, আমাদেরকে পাঁচ-দশ টাকা রিক্সাভাড়া দিতে এরা গড়িমসি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ স্টুডেন্টরা দেখে, এরা গরু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তার উপর দিয়ে মুরাতে (পাহাড়ে) যায় আর আসে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তায় গরুর গোবর দেখবেন না, তা হয় না। এত বছর পরেও হাতেগোনা গুটিকতেক এলাকার ছেলে বিশ্ববিদ্যায়েরর শিক্ষক হতে পেরেছে। এলাকার ছেলে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে তাদের বেশিরভাগ রাজনীতির নামে কমবেশি সন্ত্রাসের সাথে জড়িয়েছে।
এখানকার স্থানীয় লোকদের পাহাড়ি চরিত্রের কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে এতটা হতাশ যে, এদের উন্নয়ন হয় নাই বলে যারা ড. ইউনুসকে গালি দেন, তাদের অডাসিটি দেখে আমি আশ্চর্যান্বিত হই! আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এখান হতে কোথাও সরিয়ে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পুরো জায়গা-জমি ও দালানকোঠা যদি জোবরা ফতেহপুরের লোকদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়, তবুও তাদের দারিদ্র মোচন হবে না। এর কারণ বিশ্লেষণ আপনারা করেন। আমি নিশ্চিত করে এটি বললাম।
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মতো একজন জাতীয় ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অপমানজনক মন্তব্য করার আগে, আশা করি, আমার কথাগুলো ভেবে দেখবেন। অপরকে হেয় করা নিজের ব্যক্তিত্বহীনতার পরিচায়ক। ইউনুসের গায়ে পোকা না বেছে আসুন ইতিবাচক ও সুস্থ মন-মানসিকতা গড়ে তুলি। এদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক জনপরিমণ্ডল প্রবলভাবে বামপন্থা দ্বারা প্রভাবিত। ইউনুস স্যার বামপন্থী না হওয়ায় কম্যুনিস্ট ঘরানার লোকেরা উনার বিরোধিতা করে। তিনি ইসলামপন্থী না হওয়ায় ইসলামিস্টরা তার বিরোধিতা করে। তিনি দৃশ্যত বৈশ্বিক পুঁজিবাদের সমর্থক হওয়ায় তারা উনাকে হাইলাইট করে। এসব বাস্তবতা।
তো, বৈশ্বিক পুঁজিবাদ থেকে বেরোনোর জন্য আপনার আমার প্রস্তুতি কী? আসলে আমরা জানিই না যে, আমরা পুঁজিবাদের পূজই দিনরাত খেয়ে চলেছি। সমস্যা সমাধানের পথ না থাকা অর্থাৎ অগত্যা পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে সমঝোতা করা এক কথা আর সমস্যাটাকে আদৌ বুঝতে না পারা, স্বীকার না করা ভিন্ন কথা। পুঁজিবাদ আর ইসলামীকরণের এক অদ্ভূত দোলাচালে আমরা দুলছি। ইউনুসের সমালোচনা করার আগে, আসুন, এই স্ববিরোধ হতে বের হওয়ার চেষ্টা করি।
ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Rezaul Karim: ইসলাম সংকীর্ণমনা হতে উৎসাহ দেয় না, কিন্তু জেনে বুঝে যে দুনিয়ার পুজা করে বা দুনিয়াবাসী যার পুজা করে তাকেও সম্মান করতে বলেছে কি?
Mohammad Mozammel Hoque: লোকেরা যাকে নেতা মানে তাকে নেতার মর্যাদা দেয়াটাই শরীয়াহর দাবি, সুন্নাহর দাবি। এ বিষয়ে আপনার কি কোনো সন্দেহ আছে? এমনকি এ ধরনের নেতার সাথে সম্ভাব্য কোনো যুদ্ধে তাকে আপনি বন্দী করলেও তাকে নেতা হিসাবে বিশেষ সম্মান দিতে হবে। এটি কাণ্ডজ্ঞানেরও কথা। সম্মানিতকে সম্মান প্রদর্শনই ঈমানের দাবি।
একজন মুসলমান যা কিছু ইসলামের দাবি পূরণে করে তা ঈমানী দায়িত্ব হিসাবে করে। বা করার কথা। অবমাননা, প্রতারণা, ধোঁকা – ইত্যাদিকে ইসলাম কখনো এলাউ করে না। এর বেশি আমি জানি না।
Salamat Ullah: বৈশ্বিক পুঁজিবাদ থেকে বেরোনোর জন্য আপনার-আমার প্রস্তুতি কী?
আমাদের পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব আছে এই বিষয়ে। বৈশ্বিক পুঁজিবাদ কি বিষয় আমি জানিই না। ১৯৯৬ সালে আমি DU IBA’র ছাত্র ছিলাম (উল্লেখ করলাম নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড বোঝানোর জন্য)। কিন্তু বর্তমান অর্থব্যবস্থা (Monetary System) যে একটা ফ্রড সিস্টেম (আমার সাথে একমত হবার কোনো দরকার নাই) তা জানতে/বুঝতে পারলাম গত ৩/৪ বছরে, সম্ভবত ২০১৩ তে। Fiat currency গরিবকে গরিব বানানোর একটা অটোমেটিক সিস্টেম, গরীবের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস করে গরীবের গচ্ছিত সম্পদ ধনীদের একাউন্টে পাঠানোর সিস্টেম। এই সিস্টেমে ইসলামিক ব্যাংকিংও জড়িত। বর্তমান বিশ্ব-রাজনৈতিক ব্যবস্থা (ইউএন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থা) যতদিন থাকবে ততদিন বৈশ্বিক পুঁজিবাদ থেকে বেরোনোর কোন রাস্তা নাই। বৈশ্বিক পুঁজিবাদ থেকে কেউ বেরোনোর চেষ্টা করলে (ম্যাক্রো লেভেল) তাকে ‘ওয়ার অন টেররিজম’ দিয়ে নিঃশেষ করে দেয়া হবে। অধিকাংশ জনগণ অজ্ঞতার কারণে যেহেতু বৈশ্বিক পুঁজিবাদ ব্যবস্থাকে আদর্শ ‘শ্রেষ্ঠ সিস্টেম’ হিসেবে মেনে নিয়েছে, পুঁজিবাদের বিকল্পকে ‘ওয়ার অন টেররিজম’ দিয়ে নিঃশেষ করে দেয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে এই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে। আমি নিজেই জানতাম না “চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য থাকিবে” বাক্যটা টাকার নোটে লেখা থাকে কেন? আমি নিজেই জানতাম না “টাকা” এবং “টাকার নোট” – এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য কী? মনে হয় না স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে জেনেছি। আমাদেরকে স্বীকার করতে হবে, ইসলামী ব্যাংকিং প্রকৃত ইসলামিক নয়। জনগণ যখন প্রকৃত বিষয় উপলব্ধি করবে তখন বৈশ্বিক পুঁজিবাদ থেকে নিজেরা বের হবার চেষ্টা করবে, এই সিস্টেমের বিপরীতে কোন কিছুকে স্বাগতম জানাবে (আশা করতে কোনো দোষ নাই)।
১৯৭৭/৭৮ সালে একটা গরুর মূল্য ছিল এক হাজার টাকা। ধরুন, এক কৃষক তার গরু বিক্রি করে সিন্দুকে টাকা রেখে দিল। ২০১৬ সালে তার নাতি এক হাজার টাকা নিয়ে বাজারে গেল। এক হাজার টাকায় গরু তো পাওয়া যাবেই না, হয়ত বড় সাইজের একটা মোরগ পাওয়া যাবে। তো, ঘটনা কী? ঘটনা হচ্ছে কৃষকের নাতির ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। অন্যভাবে বললে, কৃষকের নাতির ক্রয় ক্ষমতা চুরি হয়েছে, কৃষকের সম্পদ অন্যদের কাছে ট্রান্সফার হয়েছে। এটা ফিয়াট কারেন্সীর কারসাজি।
Mohammad Mozammel Hoque: সমকালীন অর্থ ব্যবস্থা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নাই, অথচ ইসলামিক ইকনমিক্স বা ইসলামিক ফাইন্যান্সের শরীয়াহ বোর্ডের মেম্বার…! কী আশ্চর্য…! এই হলো আমাদের অতি শখের ইসলামীকরণের হাল… বুঝেন এবার।
Iqbal Mahmud: আপনি কিভাবে বুঝলেন আর আমরা কিভাবে বুঝতে পারি? হতাশা আর আগ্রহ দুটোই অনুভব করছি।
Mohammad Mozammel Hoque: স্বর্ণমুদ্রা হিসাবে দিনার আর রৌপ্যমুদ্রা হিসাবে দিরহাম, এছাড়া কীভাবে নিসাব ইত্যাদি ঠিক করবেন? বর্তমান টাকা, ডলার, রিয়াল, ইয়েন ইত্যাদি যে মুদ্রাই আপনার থাকুক না কেন, তা স্বর্ণ কিংবা রৌপ্য স্ট্যান্ডার্ডে মূল্যায়িত নয়। ইউএস ডলারের সাথে তুলনা করে বিশ্বের বাদবাকী মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়। অথচ ১৯৭১ সালের পর হতে ইউএস ডলারের সাথে স্বর্ণ বা রৌপ্য মূল্যমান বা স্ট্যান্ডার্ডকরণের বিষয়টিকে পুরোপুরি রহিত করে এটিকে স্বয়ং একটা মানদণ্ড হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে।
এটি তো একটা পয়েন্ট। এ ধরনের আরো অনেক স্বতন্ত্র পয়েন্ট বা ইস্যু আছে যার কারণে অর্থ ব্যবস্থা সম্পর্কিত কোনো কিছুকে চট করে ‘ইসলামী’ বলা খুবই ডিফিকাল্ট। উপরের দিকে থুতু নিক্ষেপের বোকামীর মতো কাউকে ‘সুদী কারবারি’ বলাটাও স্ববিরোধী ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার।
Tanvir M H Arif: So good. Thanks Sir.
Mohammad Mozammel Hoque: অতি মেধাবীদেরকে আমরা এতো বেশি মিস করি…!!! তারা কি তা বোঝে? তবুও তো এতটুকু হলো, আছে আমাদের প্রাগ্রসর চিন্তার উদ্যমী ছোট ভাইগণ, নিজ নিজ স্পেসে কোনো না কোনোভাবে সোশ্যাল কন্ট্রিবিউশানে সংশ্লিষ্ট…!! আমরা তাদের স্মরণে থাকি বা না থাকি। কিংবা তাদের অবসর সময়ে বা কোনো ক্ষণে স্মরণে থাকলেও, সাক্ষাতে বা বাস্তবে তাদের কোনো সময় আমরা পাই বা না পাই। তবুও তো আছে পরিচয় দেয়ার মতো একদা ঘনিষ্ট কেউ কেউ…!!!!
Tanvir M H Arif: Very Sorry Sir, সময় দেওয়া উচিত, নিজের দুর্বলতার কারণেই পেরে উঠছি না।
Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ, যাদের সময় মানেই pragmatically important কিছু তাদের কাছ হতে আমাদের মতো ফ্যান্টাসিতাড়িত ইউটোপিয়ানরা কিইবা আশা করতে পারি…!!! তবুও ভালো লাগে, সমাজের ক্রিম পোর্শান হতেও কেউ কেউ আমাদের স্মরণ করে। অন্তত সামাজিকতার খাতিরে হলেও…
Tanvir M H Arif: প্রিয় স্যার, এরপরও ভাবনার জগতটাতে আমাদের অবস্থানও আপনার আধুনিক ভাবধারা, চিন্তা এবং গবেষণার খুব নিকটেই আছে।
Zia Hassan: I also want to add that, in my home town there are 40 private banks and around ten government owned bank. none of the bank has to take ownership of the poverty in my area. but Dr Yunus have to take ownership of the poverty of the area where his organization distributed loan to poor people without collateral. sorry for the English comment as I am writing from mobile
Shaheed Ullah: Now a days you are engaged with more critic. reason…?
Mohammad Mozammel Hoque: Critic of what? If you mean Jamaat-e-Islami (JI), then what’s the problem? If you are with JI line of thought that “no criticism in public” then I am sorry with you. If you don’t think so, then find and put your disagreements on the concerned issue. I think I have been able to make it clear.
Shaheed Ullah: Of course, you are very clear. Sometimes, self-declared intellectuals like to keep them in marginal points, so that somebody appreciate and others criticise. that their own methodology of keep themselves in the discussion. personally, I think, what is the motto of your discussion? do you like to establish a policy to create consensus for moving the country a democratic one or you are going to establish ” khilafat” in separate way? discussion counter discussion will not help to achieve anything. you must know that first you have to fix target and secondly you have to discuss the way to achieve that. thirdly you have to find the way and alternative way, so that you can reach at destination easily. meaningless discussion will kill valuable time, which is task of ‘satan’ just to keep away a man from worship of Allah.
Mohammad Mozammel Hoque: That’s fine. Please check the slides and related brief discussions with “social movement” tag in the site of “Centre for Social & Cultural Studies” cscsbd.com