চাই, ফিলোসফি হোক সেরা
জ্ঞানে, গুণে, গণ পরিচয়ে।
চাই, সেরা সাবজেক্ট হতে
বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে
একাডেমিক এক্সট্রা-একাডেমিক সব
সাংবাৎসরিক কর্মকাণ্ডে।
ফিলোসফি ফ্যামিলি হোক
সবার ঈর্ষার, ভালো লাগার
আকর্ষণের শীর্ষে।
চাইলেই আমরা এ ধরনের অবস্থান
তৈরি করতে পারি;
দরকার শুধু ইচ্ছা, একাগ্রতা ও ঐক্যবদ্ধতার।
নিজেদের সেরা প্রমাণে আগ্রহী
এমন আছো কারা?
চলো হাত তুলি
শপথ নেই এগিয়ে চলার।
হীনমন্যতার সব জড়তা ভেংগে
জীবনের রহস্য সন্ধানে
মননশীলতার মূর্তপ্রতীক হয়ে
সত্যসন্ধানী হতে চাও কারা,
আসো, একসাথ হই।
জ্ঞানকাণ্ডের মূল অংশের মালিকানা তোমার।
অথচ, তুমি হীনমন্য; কেন?
পরিচয় দিতে সংকোচবোধ করো; কেন?
আমি ফিলোসফির ছাত্র
এ আমার অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন।
যত সব ভ্রান্তির মাঝেও
নির্ঘাত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম,
আমি ফিলোসফিতে ভর্তি হয়েছিলাম।
মুক্ত জ্ঞানের এই অবাধ প্রেম
দিনে দিনে গাঢ় হয়েছে; বরং বেড়েছে …
এই মুগ্ধতা যেন অনিঃশেষ।
হ্যাঁ, আমি ফিলোসফির স্টুডেন্ট–
এ আমার গর্বের বিষয়
বলার মতো পরিচয়।
মাথা উঁচু করে প্রবল বিশ্বাসে এসো বলি,
আমি ফিলোসফির স্টুডেন্ট …।
তুমি যদি চাও, আমি যদি চাই
যদি এক ঐক্যবদ্ধ ‘আমরা’ গড়ে তুলতে পারি,
নির্ঘাত জানি,
জ্ঞানে, গুণে ও গণ-পরিচয়ে
খুব শীগগীরই আমরাই হবো সেরা;
শুধু সময়ের অপেক্ষা
সময়কে শুধু গড়ে নেয়ার বাকি
শুধু তেমন এক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দেরি …।
২ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে কবিতাটির নতুন আবৃত্তির ভিডিও:
মন্তব্য প্রতিমন্তব্য
Sayed Towhidul Alam: স্যার, ফিজিক্স, রসায়ন ইত্যাদি জ্ঞানের সব শাখাই তো ফিলোসফির অন্তর্ভুক্ত। তাহলে আবার আলাদা করে ফিলোসফি একটা সাবজেক্ট কেন হলো? আর ফিলোসোফি পড়ার জন্য আলাদা নির্দিষ্ট বিষয়ই (যেমন: যুক্তিবিদ্যা, জ্ঞানতত্ত্ব ইত্যাদি) বা কেন সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হলো এবং অন্যান্য বিষয়গুলো কেন নয়?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: জ্ঞানের সব শাখা ফিলোসফির অন্তর্ভুক্ত নয়। একসময় ছিল। ফিলোসফি এখন আলাদা ডিসিপ্লিন। অন্যান্য সব জ্ঞানকাণ্ডের মতো ফিলোসফির মধ্যেও আছে বিভিন্ন সাব-ডিসিপ্লিন। যেমন, অধিবিদ্যা, জ্ঞানবিদ্যা, যুক্তিবিদ্যা, নীতিবিদ্যা ইত্যাদি।
একসময় জ্ঞানের সবগুলো শাখা প্রত্যক্ষভাবে ফিলোসফির অন্তর্ভুক্ত ছিল। যেমন করে প্রাপ্তবয়স্ক বা বড় হওয়ার আগে সন্তানেরা থাকে মা-বাবার পরিবারে সদস্য। প্রজনন ক্ষমতাকে বেইজ হিসেবে ধরে আমরা নানা ধরনের সক্ষমতার ভিত্তিতে নির্ণয় করি, সন্তানটি এখন নিজের পরিবার গঠন করা বা সংসার করার উপযুক্ত হয়েছে কিনা।
একইভাবে, কিছু সলিড ফাইন্ডিংসের ভিত্তিতে এক ধরনের জ্ঞানচর্চা যখন নিজস্ব আঙ্গিকে সত্যানুসন্ধানের কাজে সক্ষম হয়ে উঠে, তখন সেটাকে আমরা একটা স্বতন্ত্র ডিসিপ্লিন হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকি।
এই দৃষ্টিতে, অন্যান্য ডিসিপ্লিনের যে মূল শাখা, তা গড়ে উঠেছে ফিলোসফি চর্চার উপজাত বা বাই-প্রডাক্ট হিবেবে। যেমন, প্রকৌশলবিদ্যা, ট্রিপল-ই, সিএসই, এস্ট্রোফিজিক্স, এরোনটিকস, ম্যাথমেটিক্যাল ফিজিক্স ইত্যাদি নিয়ে পড়াশোনার ভিত্তি হচ্ছে ফিজিক্স। আর ফিজিক্স হলো ফিলোসফির কন্ট্রিবিউশন। আজকালকার সব সাবজেক্টই ফিলোসফি চর্চার পরিণতি হিসেবে গড়ে উঠেছে। এ জন্য দেখা যায়, নিউটনের ফিজিক্স সংক্রান্ত বইয়ের শিরোনাম হচ্ছে, Mathematical Principles of Natural Philosophy।
অপরদিকে, কোনো সাবজেক্টের অধীনে আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণার যে চৌহদ্দি বা সীমানা, সেই সাবজেক্টের গভীরতর অধ্যয়নের মাধ্যমে একজন গবেষক সেই চৌহদ্দি বা সীমানাকে ছুঁয়ে যায় বা অতিক্রম করার পর্যায়ে এসে পড়ে। নির্দিষ্ট ডিসিপ্লিনের কিছু ধরাবাঁধা বিষয় নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও একজন সিরিয়াস গবেষক এক পর্যায়ে এমন স্তরে উপনীত হয়, যা তার প্রারম্ভিক স্তরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম করে। এবং এর ফলে তিনি জ্ঞানের বৃহত্তর নতুন ক্ষেত্রের মুখোমুখি হয়ে পড়েন।
বলাবাহুল্য, জ্ঞানের এই ‘বৃহত্তর ক্ষেত্র’টিই হলো ফিলোসফি। এজন্য যে কোনো সাবজেক্ট হতে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করলে আনুষ্ঠানিকভাবে সেটাকে বলে Doctor of Philosophy, সংক্ষেপে PhD।
মজার ব্যাপার হলো, অন্য ডিসিপ্লিনের একজন গবেষক ফিলোসফির এই বৃহত্তর আঙ্গিনায় এসে পড়েন নিজের সাবজেক্টের অন্তর্গত সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে। গবেষণার কোয়ালিটি বা ইনটেন্সিটিকে বাড়ানোর জন্য কোয়ান্টিটি বা এক্সটেনশনকে কমানো হলো উচ্চতর গবেষণার অন্যতম অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। উচ্চতর গবেষণার ক্ষেত্রে তাই বিষয়বস্তুকে যথাসম্ভব ছোট করে নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের ওপর ফোকাস করতে হয়। দূরবীণ বা অনুবীক্ষণ যন্ত্রে টিউবের মধ্যে লেন্স বসানোর মতো। প্যারাডক্সিক্যালি, গবেষণার বিষয় হয় যত সুনির্দিষ্ট বা ছোট, ফাইন্ডিংস হয় তত ব্যাপকতর ও মৌলিক।
বলাবাহুল্য, যে গবেষণায় জীবন ও জগতের মৌলিক তথা ব্যাপকতর সত্যকে উদঘাটন করা যায়, বা ‘সত্যের’ অধিকতর নিকটে যাওয়া যায়, সেই ধরনের গবেষণা হলো মূলত ফিলোসফি চর্চা। হতে পারে, ফিলোসফিতে জড়িয়ে পড়া সম্পর্কে গবেষক সচেতন নন।
সংক্ষেপে বললে, যে কোনো ফিল্ডে সিরিয়াস স্টাডির এক পর্যায়ে আমরা জীবন ও জগতের বৃহত্তর সত্য বা সত্যতা সম্পর্কিত বিশেষ কোনো সংকটের মুখোমুখি হই। ফিলোসফির কাজ হলো এই ধরনের বিগ কোয়েশ্চনগুলোকে প্রপারলি এন্ড সিস্টেমেটিক্যালি ডিল করা।
তোমাকে খুব স্নেহ করি। তাই একটু ব্যাখ্যা করে বললাম। ভাল থাকো। মহাকাশবিদ্যা নিয়ে তোমার কৌতূহল ও অধ্যয়ন অব্যাহত আছে, আশা করি।
শামস আরা নওরোজী: রেজাল্টের ভিত্তিতে যখন বিষয় নির্বাচনের ব্যাপারটি সামনে এসে দাঁড়ালো, তখন আমার মধ্যে হীনমন্যতা কাজ করছিলো প্রচন্ড রকম। যেখানে আমার সহপাঠীরা ইংরেজি, বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণসহ বিবিধ বিষয়ে ভর্তি হয়ে গেলো; তখন একটা হীনমন্যতা আমাকে ঘিরে ধরেছিল। ভেবেছিলাম কী হবে দর্শন পড়ে? কী হবে অন্যের মতবাদকে ধারণ করে? কিন্তু যখন দর্শনের পাঠ্যপুস্তকে মনোনিবেশ করলাম, তখন দেখলাম এ এক গভীরতায় আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি যেন এক গভীর জ্ঞানে অবগাহন করছি। জীবনের মূল্যবোধকে মূল্যায়ন করাতে শিখাচ্ছে। শিখাচ্ছে কীভাবে আধ্যাত্মিকতার জগত অতিক্রম করতে হয়। কীভাবে বস্তুনিষ্ঠ চিন্তা করতে হয়। কীভাবে নিজের গণ্ডি পেরিয়ে ভ্রমণ করতে হয় মানবতায়।
হ্যাঁ, আজ সত্যিই গর্ব করে বলতে পারি, আমি দর্শনের ছাত্রী। মানপত্রের সামান্য কিছু নাম্বার আমাকে আজ বিশাল ভাণ্ডারে পরিপূর্ণ করে তুলেছে। হ্যাঁ, অনেকের কাছে আজ যা মহামূল্যবান; আমার কাছে তা অতি নগণ্য। আমি তাচ্ছিল্য করতে পারি, যা নিয়ে সংগঠিত হতে পারে মহাযুদ্ধ। হ্যাঁ, আজ আমার যে আত্মিক প্রাচুর্য, তা শুধুই আমার। হ্যাঁ, আজ সত্যিই আমি গর্বিত যে আমি দর্শনের ছাত্রী।
আজ আমার মধ্যে প্রতিবিম্বিত হয়েছে প্লেটো, এরিস্টটল, দেকার্ড, হেগেল, কার্ল মার্কস থেকে সুফিবাদের শামস তাবরীজ, মাওলানা রূমী, আল্লামা ইকবাল প্রমুখ। আজ আমি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারি।
কারণ, আমি দর্শনের ছাত্রী।
good