আগের নোটে উল্লেখিত রাজনীতির ছকে যদি আমরা সমকালীন বাংলাদেশের রাজনীতিকে বিবেচনা করি তাহলে তা এই স্কেলে প্রদর্শিত প্যাটার্ন হিসাবে হাজির হবে। এখানে ইসলামী দলগুলোকে (নেতৃস্থানীয় হওয়ার কারণে জামায়াতে ইসলামীকে দিয়ে এদেরকে বুঝানো হয়েছে) আমি চরম ডান শক্তি হিসাবে চিহ্নিত করেছি, যাকে ইংরেজীতে ফা-র অথবা র্যাডিকেল রাইটিস্ট ফোর্স হিসাবেও বলা যায়। উল্লেখ্য, আদর্শবাদ নিয়ে রাজনীতির ময়দানে হাজির থাকা অন্যান্য ‘খেলোয়াড়দের’ অবস্থানের সাপেক্ষে প্রত্যেকটা দল বা সমআদর্শের দলসমষ্টির অবস্থানকে আমি চিহ্নিত করেছি। অর্থাৎ চরম ডান বলতে চরম বামের বিপরীত অবস্থানকে বুঝাতে চাচ্ছি।
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী চরমপন্থীদের বুঝানোর জন্য যে অর্থে ‘চরম’ শব্দটাকে ব্যবহার করা হয় এখানে ‘চরম’ কথাটা সেই অর্থে ব্যবহৃত হয় নাই। এখানে ‘চরম’ কথাটা র্যাডিকেল বা অতি রক্ষণশীল অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাত্ত্বিক বাম আদর্শবাদী অবস্থানকেও এই অর্থে ডগমেটিক, র্যাডিকেল বা আল্ট্রা কনজারভেটিভ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে যথাক্রমে মধ্যবাম ও মধ্যডান শক্তি হিসাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান একক ও সুস্পষ্ট। সে তুলনায় চরম বাম ও চরম ডান ফোর্সের অবস্থান ততটা একক পর্যায়ের নয়। চরম বাম শক্তির নেতৃস্থানীয় বা প্রতিনিধি হিসাবে কম্যুনিস্ট পার্টিকে ধরা হবে, নাকি বাসদকে, নাকি জাসদকে, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু বাম আদর্শের ১৮০ ডিগ্রী বিপরীত অবস্থানে থাকা জামায়াতে ইসলামীকে নিঃসন্দেহে far right politics-এর নেতৃস্থানীয় হিসাবে গ্রহণ করা যায়।
জামায়াতের আদর্শ ও রাজনীতি সঠিক বা ভুল মনে করে একে সাপোর্ট বা অপোজ করাটা পাঠকের যার যার ব্যক্তিগত বিবেচনা ব্যাপার। যা এই প্রায়োগিক পর্যালোচনার সাথে প্রাসংগিক নয়। বরং এখানে অতি সংক্ষেপে দেখানোর চেষ্টা করবো, বাংলাদেশে জামায়াত রাজনীতি মোটাদাগে ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। তারা বামপন্থীদের কৌশলের কাছে পরাজিত হয়েছে। এর বিপরীতে বামপন্থীরা স্বীয় মতাদর্শ ও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে অত্যন্ত সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে। যদিও ‘নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভংগের’ মতো এ কাজ করতে গিয়ে তারা আইডিওলজিক্যালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রসংগত উল্লেখ্য, আদর্শবাদী দল যখন ক্ষমতাপন্থী দলের সাথে নিজের দূরত্বকে ঘুচিয়ে ফেলে, তখন তারা আদর্শিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি অনিবার্য। সেজন্য বিরোধীপক্ষকে দুর্বল করা মানেই নিজস্ব রাজনীতি বিকশিত হওয়া, এমনটা নয়। বিরোধী শক্তিকে দুর্বল করার সাথে নিজস্ব আদর্শবাদ কিংবা রাজনীতির একটা যোগসূত্র থাকলেও এর একটি অপরটিকে অটোমেটিকেলি জেনারেইট করে না।
তাছাড়া, গণ্য করার মতো একটা বিরোধী পক্ষের উপস্থিতি যে কারো নিজস্ব রাজনীতি, সেলফ ডেভেলপমেন্ট ও নিজের লোকজনকে ঠিক রাখার কাজে অত্যন্ত সহায়ক হিসাবে ভূমিকা পালন করে। একক হিসাবে ময়দানে থেকে সঠিক পথে আগানো দুঃসাধ্য ব্যাপার। যে কোনো সর্বাত্মকবাদী ব্যবস্থাই তাই শেষ পর্যন্ত ভেংগে পড়ে। বাহ্যিকভাবে যত উন্নয়নই করুক না কেন, মানবিক উন্নয়নের মাপকাঠিতে এ ধরনের এককেন্দ্রিক ব্যবস্থামাত্রই ভেংগে পড়তে বাধ্য। যাহোক, এটিও আমার আজকের আলোচ্য বিষয় নয়।
“Islam to Bangladesh to Islam-in-Bangladesh to Jamaat-e-Islami” – এটি এক ধরনের বিবেচনা। আবার, “Jamaat-e-Islami to Bangladesh to Islam” – এটি আরেক ধরনের বিবেচনা।
ইসলামী আদর্শের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে জামায়াতে ইসলামী – পুরো বিষয়টাকে এভাবে দেখলে এটি স্পষ্ট, আওয়ামী লীগের সাথে ‘জানি দুশমন’ হিসাবে লেগে যাওয়াটা জামায়াত রাজনীতির চরম ব্যর্থতা। এবং ‘মৌলবাদী আদর্শ’ অনুসরণকারী জামায়াতের ওপর আওয়ামী লীগের মতো সেন্টার লেফট একটা দলকে দিয়ে নির্মূলকরণ চালিয়ে নেয়ার ব্যাপারটা এ দেশের ‘গণবিচ্ছিন্ন’ বামপন্থীদের কার্যকর রাজনৈতিক কর্মকৌশলের স্বাক্ষর। যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতো একটা অতি সংবেদনশীল ইস্যুর মাধ্যমে জামায়াতকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশের ইসলামপ্রিয় জনগণ হতে বিচ্ছিন্ন করতে পারাটা তাদের মৌলিক রাজনৈতিক সফলতা। এই ‘ফাঁদে’ পা দেওয়াটা, বিপরীতভাবে, জামায়াতের অদূরদর্শী রাজনীতির পরিচয় ও বড় ধরনের ব্যর্থতা।
আওয়ামী লীগ বামপন্থী দল নয়। আওয়ামী লীগের মধ্যে বরাবরই বাম ও ডান ধারা সক্রিয় থাকলেও তারা মূলত ক্ষমতার রাজনীতি করে। রাজনৈতিক বালখিল্যতার পরিচয় দিয়ে জামায়াত যখন আওয়ামী লীগের ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাথে গাঁটছড়া বাধলো, তখন আওয়ামী লীগের তরফ হতে বামপন্থীদের ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার’ ইস্যুটাকে গ্রহণ করার বিকল্প ছিলো না। আওয়ামী লীগের দিক থেকে দেখলে, এটি তাদের ফলপ্রসূ রাজনৈতিক কর্মকৌশল।
জামায়াতের দিক থেকে দেখলে, ‘ইসলামী আদর্শের’ দাবি ছিলো এ দেশের রাজনীতিতে সর্বোচ্চ এক-দশমাংশ পর্যায়ের উপস্থিতি বজায় রেখে পাওয়ার পলিটিক্স করা মধ্য অবস্থানের দলগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। তা না করে তারা নিজেদেরকে দেশের রাজনৈতিক ‘ত্রাণকর্তা’ ভাবতে থাকে। ইসলামপন্থীদের নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার কার্যকর চেষ্টার মাধ্যমে স্বতন্ত্র তৃতীয় ও বিকল্প শক্তি হিসাবে গড়ে না উঠে দ্বিদলীয় রাজনীতিতে ‘ভারসাম্য শক্তি’ হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করে। আগুন নিয়ে খেলতে গিয়ে নিজেই আগুনে পোড়ার মতো এক পর্যায়ে এসে ক্ষমতাপন্থীদের নিজস্ব রাজনৈতিক চালের বলিতে পরিণত হয়। তৃতীয় শক্তি হওয়া আর ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো লাফালাফি করা এক কথা নয়। জামায়াতে ইসলামীর ভুল রাজনীতিকে ব্যাখ্যা করার জন্য এ ধরনের অশোভন কিন্তু কার্যকর উদাহরণের বিকল্প দেখছি না।
ক্ষমতার জন্য যারা রাজনীতি করে তারা তো যে কোনোভাবেই হোক ক্ষমতায় যেতে ও থেকে যেতে চাইবে। এর মানে আমি এটি বলছি না, যারা ক্ষমতার রাজনীতি করে তাদের কোনো আদর্শবোধ ও নীতি নৈতিকতা নাই। তারা চরম বাম কিংবা ডানদের তুলনায় বিশেষ কোনো আদর্শকে অতটা সিরিয়াসলি নেয় না; বরং দেশের মানুষের রুচি ও মনমানসিকতাকে অধিক গুরুত্ব দেয়। এদিক ওদিক ম্যানেজ করে কোনোভাবে ক্ষমতায় গিয়ে সুযোগ সুবিধা ভোগ করাই তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। ঘোড় সওয়ারী কর্তৃক ঘোড়াকে খাবার দেয়ার মতো করে নিজেদের লোকদের মধ্যে সুযোগ সুবিধা বণ্টন করতে গিয়ে তারা প্রকারান্তরে দেশকেও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়।
শুরুতে যেভাবে বলেছি, জামায়াতে ইসলামীর দৃষ্টিতে বাংলাদেশ, বিশ্ব ও ইসলামী আদর্শ – এভাবে দেখলে ভুল করা হবে। আদর্শবাদী দলগুলো আদর্শের কথা বলে পথচলা শুরু করলেও প্রায়শই তারা এক পর্যায়ে নিজেদের দলীয় অবস্থানের প্রিজমেই আদর্শকে ব্যাখ্যা করে ও অন্যান্যদের মূল্যায়ন করে। জামায়াতের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
নিজেদের ভুল রাজনৈতিক অবস্থান ও গতিপথের পক্ষে তারা অনেক যুক্তি হাজির করতে পারবে। সামগ্রিকভাবে না দেখে ওয়ান-টু-ওয়ান তথা বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে সেসব সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের পেছনে হাজির করা যুক্তিকে গ্রহণযোগ্যও মনে হবে। ইটের দেয়াল গাঁথা বলুন কিংবা জাহাজের গতিপথ বলুন, গন্তব্যে পৌঁছতে হলে, সঠিক পথে চলতে হলে, অরিজিনাল ম্যাপ দেখে মেপে মেপে পথ চলতে হয়। তো এই মাপামাপির বিষয়টা ইমিডিয়েট ও আলটিমেট উভয় ধরনেই হতে হয়। পথের শুরু ও পথ চলার লক্ষ্য – উভয় বিন্দুকে স্বল্পতম দূরত্বে, যথাসম্ভব সরল রেখায় আঁকতে হবে। ট্রেডমিলের ওপর দৌড়িয়ে ব্যায়াম করা যায়, কোনো লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না।
বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি ট্রেডমিলের ওপর দৌড়ানো কিংবা তৈলাক্ত বাঁশে আরোহণের মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজনীতি কিংবা যা-ই হোক না কেন, যে কোনো ধরনের সামষ্টিক সাংগঠনিক উদ্যোগ গড়ে তোলার জন্য উপাদান, ভিত্তি ও লাইন ঠিক থাকতে হবে। মশল্লা নরম থাকতে থাকতেই গাঁথুনি শেষ করতে হবে। আবার একসাথে পুরো দেয়াল নির্মাণ করা যাবে না। ধাপে ধাপে ইট গাঁথতে হবে। ঠিক মতো শক্ত হওয়ার আগেই পুরোটা গেঁথে দিলে তা ভেংগে পড়বে।
যদি এমন হয়, দেখা যাচ্ছে, ইটের একটা উচু গাঁথুনির পাশে বিচ্ছিন্ন ইটের একটা স্তুপ। একটা গাঁথুনি তৈরির কথা ছিলো যাদের তারা ভেংগে পড়া একটা ইটের একটা স্তুপের উপর দাঁড়িয়ে ভাবছে, আমরা তো মাটি হতে অনেক উপরেই আছি! এ ধরনের অবাস্তব আত্মতুষ্টি নিয়ে কেউ চাইলে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। এ ধরনের লোকজন মিলে বাংলাদেশের মতো ওভার পপুলেটেড একটি দেশে ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট তৈরি করে একটা উল্লেখযোগ্য শক্তি হিসাবেও নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে পারে। কিন্তু তাতে করে দেশ ও জাতি গঠন হবে না। ইসলাম বা কোনো আদর্শবাদও এই পদ্ধতিতে কায়েম হওয়ার নয়।
ইসলামের দিক থেকে বাংলাদেশের সমস্যা কী? বাংলাদেশ উন্নত দেশ নয়, এটি? বাংলাদেশের মানুষ ‘ভালো’ নয়, এটি? বাংলাদেশের মানুষ ‘জামায়াতে ইসলামীর মতো একটা ইসলামী দলকে ভোট দেয় না’, এটি? ‘অতএব তাদেরকে দিয়ে হবে না’ – এমন ধরনের কিছু?
না, বাংলাদেশের সমস্যা এর কোনোটাই নয়। আমার দৃষ্টিতে ইসলামের দিক থেকে বাংলাদেশের মানুষের প্রধান সমস্যা হলো, তারা প্রধানত বর্ণপ্রথা হতে বাঁচার জন্য মুসলমান হলেও ইসলামকে বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে সাংস্কৃতিক চেতনা হিসাবে তথা সামগ্রিক জীবনাদর্শ হিসাবে কখনো বুঝে নাই। এক কথায় বললে, আকীদাগত সমস্যাই বাংলাদেশের মানুষের প্রধান সমস্যা। এ দেশের মানুষের যে আইডেন্টি ক্রাইসিস তার মূলে রয়েছে এই কনসেপ্টচুয়্যাল এম্বিগিউটি বা প্রবলেম।
নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তার দিক থেকে আমরা বাংগালি। রাজনৈতিক জাতীয়তার দিক থেকে আমরা বাংলাদেশী। এই নিরেট সত্য ব্যাপারটা নিয়ে এতো বিতর্ক কেন, তা যদি আমরা বুঝার চেষ্টা করি, তাহলে দেখবো, এই ফলস ডিবেটের মূলে রয়েছে আমাদের আইডেন্টি নিরূপণ বা আরোপের চেষ্টা। যারা বামপন্থাকে বাংলাদেশের মানুষের আইডেন্টিটি হিসাবে দেখতে চান তারা বাংগালিত্বকে হাইলাইট করেন। আবার যারা এ ধরনের আইডেন্টিটির পরিবর্তে এক ধরনের ইসলামী আইডেন্টিটিকে প্রতিষ্ঠা করতে চান তারা এর বিরোধিতা করেন।
এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিরোধ ও দ্বন্দ্বকে পাশ কাটিয়ে মানুষকে কোরআন ও হাদীস অনুসারে ইসলাম বুঝানোর দায়িত্ব পালনের চেয়ে জামায়াতকে আমরা দেখি ‘পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদের’ পক্ষে জান কুরবানী দিয়ে ‘বাংগালি/বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের’ বিপক্ষে খেয়ে না খেয়ে বিরোধিতা করতে। অথচ, তারা আদতে জাতীয়তাবাদ মাত্রকেই অনৈসলামী মনে করে। কী করুণ স্ববিরোধ!
১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ ইসলামের কোনো ইস্যু নয়। এটি কোনো আদর্শিক ইস্যু নয়, বরং একটা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের একটা ঐতিহাসিক আঞ্চলিক ইস্যু। বড়জোর বলা যায়, একটা অর্থনৈতিক ইস্যু। অথচ জামায়াত নিজেকে এটাতে ওতপ্রোতভাবে জড়ায়। তাদেরকে কি বন্দুকের মুখে তৎকালীন মালেক মন্ত্রীসভার সদস্য করা হয়েছিলো? যুদ্ধাপরাধ বিচারের অসংগতি ও ফাঁক-ফোকর যা-ই থাক, নিজেদের মধ্যে ৭১ নিয়ে তাদের এত রাখঢাক কেন? কোথায় তাদের নৈতিক মনোবলের সমস্যা?
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এমন বিরোধী ভূমিকা রাখার পরেও পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের বিস্ময়কর উত্থান ঘটে। একে তারা নিজেদের সাংগঠনিক ও আদর্শগত সাফল্য হিসাবে দাবি করে। তাই যদি হতো তাহলে বাংলাদেশে স্বাধীনতার পরে তাবলীগ জামায়াতের এত বড় সাংগঠনিক উত্থান ও আদর্শগত প্রসার কীভাবে সম্ভব হলো? এ বিষয়ে আমার অন্যান্য লেখায় বারে বারে বলেছি, এ দেশে ইসলাম হলো একটা পপুলার ব্র্যান্ড। এর পক্ষে বা বিপক্ষে যারাই অবস্থান নেয় তারাই ব্যাপক পপুলারিটি পায়। এ দেশে সব পীরপন্থীদের উত্থান, তাবলীগের উত্থান, জামায়াতে ইসলামীর উত্থান, এমনকি তাসলিমা নাসরিনের ব্যাপক পরিচিতিও একই সূত্রে গাঁথা।
এই পপুলার ইসলামকে ভায়বল এন্ড কমপিটেন্ট হিসাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব ছিলো জামায়াতে ইসলামীর। তারা তা করে নাই। কখনোই তারা ‘দাওয়াতী মেজাজ’ নিয়ে এ দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে যায় নাই। ১৯৬৯ সালে মাওলানা মওদূদীর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সফর বলুন, আর ১৯৯৪ সালে অধ্যাপক গোলাম আযমের দেশব্যাপী সফর বলুন, সবই ছিলো রাজনৈতিক ইস্যুকে সামনে রেখে। এমনকি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব সফর ছিলো সংঘাতমুখর।
অধ্যাপক গোলাম আযমের বক্তব্য ছিলো, এ দেশের মানুষ ইসলাম চায়। নেতৃত্বই সমস্যা। তরুণ চবি শিক্ষক ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসাবে সে সময়ে ‘আল-ফালাহ মিলনায়তনে’ আমি ব্যক্তিগতভাবে উনার উপস্থিতিতেই এ কথার প্রতিবাদ করেছিলাম। আমার কথা ছিলো, “এ দেশের মানুষ ইসলাম চায়, এটি ঠিক। তবে, তারা ইসলামকে ঠিক মতো বুঝে না। ‘ইসলামী আন্দোলনের ধারণা’ তাদের কাছে অপরিচিত। মানুষকে ইসলাম না বুঝিয়ে দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া হলো মাটি প্রস্তুত না করে দালান নির্মাণের চেষ্টা করার মতো পণ্ডশ্রম মাত্র।”
বর্ণপ্রথা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য সাম্যবাদী ধর্ম হিসাবে ইসলামকে আমাদের পূর্বপুরুষগণ গ্রহণ করেছিলো। এ কথা আগেই বলেছি। এর থেকে ধারণা হতে পারে, আকীদাগত পরিশুদ্ধিই এ দেশে ইসলামের জন্য কাজের প্রধান ক্ষেত্র। ধারণাটা আংশিক সত্য। আংশিক সত্য বললাম এ জন্য, এ ধরনের সমস্যা দেশের বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য অধিকতর সত্য হলেও এ দেশের উঠতি মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত ও শহুরে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য ততটা রিলেভেন্ট নয়। তাদের সমস্যা নিছক ইসলাম না বুঝার সমস্যা নয়। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকায় একজেক্টলি বলা না গেলেও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া ইত্যাদির মাধ্যমে পাশ্চাত্য বস্তুবাদী ও সমাজতান্ত্রিক নাস্তিক্যবাদী চিন্তাচেতনার বিরাট নেতিবাচক প্রভাব মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। এটি ইসলাম না বুঝার সমস্যা নয়। বরং এটি ইসলাম না মানার সমস্যা। এই মানা, না মানার বিষয়কে রিচুয়েলিস্টিক দৃষ্টিতে দেখলে, আমার কথার সাথে কারো একমত না হওয়াই স্বাভাবিক।
এ দেশের মানুষ এত নামাজ পড়ে, এত বেশি সংখ্যক হজ্জ করে, এতো কোরবানি দেয়। যেন তারা তেমন ঈমানদার। আসলে তা নয়। ইসলামকে জীবনবোধ ও স্বতঃস্ফূর্ত জীবনাদর্শ হিসাবে দেখার পয়েন্ট অব ভিউ থেকে দেখলে যে কেউ একমত হবেন, এ দেশে ইসলাম নিয়ে মানুষের স্ববিরোধ এবং ইসলাম না বুঝার সাথে সাথে ইসলামকে ইসলামের মতো করে না মানার সমস্যাটাও অতীতের তুলনায় অনেক প্রকট।
এই বিরাট ফাটল মেরামত করার দিকে নজর দেয়ার ফুরসত জামায়াতের নাই। তারা দিনরাত আওয়ামী লীগকে মোকাবিলায় ব্যস্ত। ভুল রাজনৈতিক কৌশলের পরিণতিতে অহেতুক লেগে গিয়ে এখন যুক্তি দিচ্ছে, আমরা নির্যাতিত! মক্কী যুগ পর্যায়ের এ দেশে অপরিণামদর্শী মোকাবিলায় লিপ্ত হয়ে উল্টো নবী-রাসূলদের মোকাবিলা তত্ত্বের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সরলপ্রাণ ও নিরীহ জনশক্তিকে আনুগত্যের নেশায় তারা বুঁদ করে রাখছেন! শিক্ষিত জামায়াত কর্মীরাও ভুল রাজনৈতিক কৌশলের বিষয়ে বলতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ ও ‘মোকাবিলা তত্ত্বে’ আশ্রয় নেন।
জামায়াতের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের অন্যতম হলো ভুলভাবে উপস্থাপিত মোকাবিলা তত্ত্ব। তারা বলেন, ‘হক ও বাতিলের লড়াই অনিবার্য ও চিরন্তন। এবং জামায়াত এই লড়াইয়েই আছে।’ নিজেদের ভুল রাজনীতিকে লেজিটিমেইট করার জন্যই তারা এমন ধরনের অবাস্তব কথাবার্তা বলে থাকেন। আচ্ছা, বাংলাদেশে এখনো লক্ষ লক্ষ জামায়াত নেতা-কর্মী-সমর্থক সরকারী-বেসরকারী চাকুরি করেন। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে স্থানীয় মসজিদের ইমামগণ রয়েছেন। তারা যদি আগামীকাল স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে গিয়ে জামায়াতের পক্ষে বর্তমানে অতি সংবেদনশীল অথচ সত্য – এমন কিছু কথা বলেন, তখন কী ঘটতে পারে? অবভিয়াসলি তারা নানা রকমের হয়রানি ও ক্ষতির শিকার হবেন। তাই না? তো, কনফ্লিক্ট থিওরিই যদি সত্য হয়, ইসলামিক্যালি তাদের তো তা-ই করা উচিত। কী বলেন?
হক-বাতিলের দ্বন্দ্বটা মূলত তাত্ত্বিক। বাস্তবে বা ব্যবহারিক জীবনে সবসময় এই তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের প্রতিফলন না ঘটানোই বরং সুন্নাহর দাবি। রাসুলুল্লাহর (সা), এমনকি, মাদানী জিন্দেগীতেও এর নিদর্শন দেখা যায়। যেমন নানা ধরনের সমঝোতা চুক্তি ইত্যাদি। মদীনা সনদও এ ধরনের একটা প্র্যাকটিক্যাল এপ্রোচ। ইসলামে হেকমত বা কার্যকর কর্মকৌশল গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। কপটতা, ফেতনা বা হঠকারিতাকে নিষেধ করা হয়েছে।
সোজা কথায়, শেষ কথা হিসাবে বললে, আস্তিকতা-নাস্তিকতা সংক্রান্ত ইস্যুগুলো এ দেশের তরুণ মানসের মৌলিক সংকট। মক্কীযুগের সূরাগুলোর আলোকে আল্লাহ আছে কি নাই, আল্লাহ থাকার মানে কী, তাওহীদ বিশ্বাসের ব্যবহারিক তাৎপর্য কী – এখনকার আকীদাগত আলোচনায় এসব বিষয়কে ফোকাস করতে হবে, অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। ইল্লা মাশাআল্লাহ, ইনশাআল্লাহ ধরনে হয়-হবে ধরনের রেটরিকের পরিবর্তে পাশ্চাত্য নারীবাদের মোকাবিলায় নারীর মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র ও পদ্ধতি কী হবে তা বিশ্বাসযোগ্যভাবে দেখিয়ে দেয়া অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমান পুঁজিবাদী বিশ্ব অর্থনীতিতে আপনি কী করবেন, কীভাবে করবেন, সংস্কৃতির বিশেষ করে বিনোদন সংস্কৃতির ব্যবহারিক অবয়ব কী হবে, নাগরিক সমস্যাগুলোকে কীভাবে মোকাবিলা করবেন, এসব নিয়ে সিরিয়াসলি এনগেজ না হয়ে প্যানাসিয়া (সর্বরোগ বটিকা) হিসাবে খালি ‘ইসলাম’, ‘ইসলাম’ জপ করলে হবে না।
রাজনীতি দিয়ে সব হয় না। এটি বুঝতে হবে। জামায়াতে ইসলামী অনুসৃত সর্বব্যাপী রাজনৈতিকীকরণ পন্থা যে চরম ভুল, তারা ছাড়া বাদবাকী সবাই এটি বুঝতে পারে। জামায়াতে ইসলামীর লোকজন বিশ্বাস না করলেও এটি সত্য, বামপন্থীদের মধ্যকার উগ্র ধর্মবিদ্বেষীরা ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক পক্ষই চায় জামায়াতের মতো একটা মডারেট ইসলামী ফোর্স ময়দানে হাজির থাকুক।
আরবে তৎকালীন ইয়াসরিবের এ ধরনের পলিটিক্যাল ভ্যাকুয়াম বা হেজিমনিকে আল্লাহর রাসূল (সা) কাজে লাগিয়েছিলেন। তিনি যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছিলেন। মক্কায় জীবন বিসর্জনের জন্য বসে থাকেন নাই। সিস্টেম ম্যানেজমেন্টের এই সুযোগকে জামায়াত কাজে লাগাতে আগ্রহী নয়। তারা সব কিছুকে স্বীয় সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থের বাইনারিতে দেখে। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনা করা, সুদূরপ্রসারী কর্মকৌশল গ্রহণ, এমনকি টাইম-টু-টাইম নিজেদের কাজকর্মের স্বচ্ছ পর্যালোচনা করার ব্যাপারেও তাদের একান্ত অনীহা। স্ববিরোধী কথার ফুলঝুরি দিয়ে ধর্মবাদিতার এক ধরনের আবেশের মোহে লক্ষ্যহীন মোকাবিলার অর্থহীন ঔদ্ধত্যই জামায়াত রাজনীতি সম্পর্কে শেষ কথা।
(“জামায়াতে ইসলামী: অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন” গ্রন্থের ১ম সংস্করণে সংকলিত সর্বশেষ নিবন্ধ হিসাবে ২০১৬ সালের অক্টোবরে লিখিত।)
ফেইসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Sorol Kotha: স্যার, সাধুবাদ আপনাকে, প্রিয় সংগঠনকে নিয়ে আপনার এত এত উচ্চ পর্যায়ের ধারাবাহিক গবেষণার জন্য। বিনয়ের সাথে আপনাকে বলছি জামায়াত নিয়ে আপনার গবেষণা ভুল প্রমাণিত হবে ইনশাআল্লাহ্। এদেশে জামায়াতের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আপনার ধারণা বাহ্যিক পরিস্থিতি এবং মিডিয়া কর্তৃক প্রাপ্ত তথ্যনির্ভর। আপনি সম্ভবত এসি রুমে গবেষণা করেন। আপনার সাথে বড়জোর ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে হাজার দশেকের সাথে কানেকশন আছে। বাকি ১৬ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের পালস সম্পর্কে আপনার ধারণা একদম কল্পনাপ্রসূত। জামায়াত ৭১ নামক একটা ভয়ংকর জটিলতায় ঐতিহাসিকভাবে যুক্ত আছে। এই গ্যাঁড়াকলে থেকেও জামায়াতের অর্জন অগ্রগতি নিয়ে যে কেউ জেলাস হতে পারে। আর যুদ্ধপরাধের বিচার নিয়ে জামায়াতকে যে ভাগ্যবরণ করতে হয়েছে তাতে জামায়াত শেষ হয়ে যায়নি, বরং জামায়াতের এগিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন পথের সূচনা হয়েছে। বাংলাদেশে আপনার এসব তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের কোনো ফলাফল নেই। এখানের লড়াইটা ক্ষমতার, আদর্শের নয়। আদর্শের লড়াই হলে জামায়াত সহসাই জয়ী হতো। ক্ষমতার লড়াই এবং ভূরাজনৈতিক সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে জামায়াত আদর্শিক কারণে জিম্মি হয়ে আছে। ঐতিহাসিক কারণে জামায়াতে অর্জন এবং অগ্রগতি জামায়াতকে ক্ষমতাশীনদের মুখোমুখি করেছে। অচিরেই এমন দিন আসবে যেদিন সরকার-বিরোধীপক্ষ সবাই বিকল্প তৃতীয় শক্তি ভেবে জামায়াতের বিরুদ্ধে একাট্টা হবে। এটা জামায়াতে সর্বোচ্চ অর্জন স্টিল নাউ। জামায়াত রাইট ট্র্যাকেই আছে। ভুল ট্র্যাকে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সঠিক ট্র্যাকে উঠলে জামায়াত অবশ্যই প্রমাণ করবে জামায়াতের রাজনীতি সঠিক ছিল। একটা রাজনৈতিক দলের দীর্ঘ পথচলায় কিছু ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। জামায়াতের আছে, থাকবে। তাই বলে জামায়াত নিয়ে আপনার গবেষণা সঠিক নয়, বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ধন্যবাদ স্যার।
Mohammad Mozammel Hoque: বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনার বক্তব্য জামায়াতের ট্রু মাইন্ডসেটকে রিপ্রেজেন্ট করে।
যে কোনো অ্যানালাইসিস হচ্ছে আদতে অনুমান বা prediction। হওয়ার পরেই শুধুমাত্র নিশ্চিত করে বলা যায় যে হয়েছে। দেখা যাক কী হয়। I’ll be personally more than happy if I am wrong.
Sorol Kotha: ধন্যবাদ স্যার। আমরা বরং অপেক্ষা করে দেখি কি হয়। আগেও বলেছি এখনো বলছি স্যার, আমাদের রাষ্ট্র অসুস্থ হয়ে পড়েছে। স্বৈরাচার রাষ্ট্রে কাউকে প্রোপার জাজমেন্ট করা খুব কঠিন। জামায়াতের প্রয়োজন ফ্রি স্পেস। জামায়াতের জন্য তেমন কিছু নিশ্চিত করা গেলে একদশক লাগবে না জামায়াতকে চূড়ান্তভাবে সফল হতে। কিন্তু সেটা প্রত্যাশা করা অজ্ঞতার পরিচায়ক।
Mohammad Mozammel Hoque: you can do one favour for me. That is, do not delete it. Keep your comment as it is. and without further editing. as I have said already, whatever you have said, is a true reflection of Jamaat-mindset. interested readers need to know it and see it. It will guide them to think… Never mind, please! do duah for us.
Sourav Abdullah: “জামায়াতের প্রয়োজন ফ্রি স্পেস। জামায়াতের জন্য তেমন কিছু নিশ্চিত করা গেলে একদশক লাগবে না জামায়াতকে চূড়ান্তভাবে সফল হতে। কিন্তু সেটা প্রত্যাশা করা অজ্ঞতার পরিচায়ক।”
পুরাই দ্বিমুখী কথাবার্তা না? তাহলে শেষ পর্যায়ে এসে আপনিও ঘোষণা দিচ্ছেন জামায়াত মূলত ফেইল করবে?
এই যে জামায়াতের জন্য স্পেস দরকার, সেটা কে তৈরি করবে? আওয়ামী বা বামরা? অথবা জামায়াত যদি নিজের জন্যই স্পেস তৈরি করতে চায় তো সেটা কিভাবে? যেমন ছিলাম, তেমন আছি, তেমনই থাকবো, ইনশাআল্লাহ – এই নীতিতে? হক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব অবশ্যম্ভাবী। আমরাই হক। তাই আজ আমরা এত নির্যাতিত। পুরো বাংলাদেশ ভুল পথে, লোকজন আমাদের বুঝছে না। তাই আজ বাংলাদেশের এ অবস্থা। এসব বলে স্পেস তৈরি হবে? সফলতা আসবে? নিজেদের ভুল আছে কিনা তা দেখার দরকার নাই?
স্পেস তো ছিল। ক্ষমতাও চর্চা করেছে। তখন সার্বিকভাবে তথা জীবনের বিভিন্ন খাতে আদর্শিক ডিভেলপমেন্টের কী হয়েছে? কতটুকু হয়েছে? চূড়ান্তভাবে সফল হওয়ার জন্য কাজ তখন কতটুকু হয়েছিল? আজ কেন এত স্পেসের প্রয়োজন?
Siddikul Islam: স্যার, আপনার লেখা অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
Mohammad Mozammel Hoque: এটি ২+২=৪ সমীকরণের মতো সত্য। নির্ঘাত। বিজ্ঞানের মতো সমাজবিজ্ঞানের বিষয়গুলোও ফর্মুলা অনুসারে চলে। একেবারে সুনির্দিষ্ট সূত্রবদ্ধ।
Mohi Uddin: জামায়াতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দেশের জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থতা। জনগণের কাছে তারা দেশ পরিচালনায় নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেনি। মানুষের প্রত্যক্ষ সমস্যাগুলো নিয়ে জামায়াত সরব নয়। মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে জানে না। মানুষের দেখা স্বপ্ন পূরণের আশ্বাস দিতে জানে না জামায়াত। এদেশের ৮০ ভাগ মানুষ শরীয়াহ আইনের পক্ষে, অথচ যারা শরীয়াহ আইন বাস্তবায়নের কথা বলে মানুষ তাদের ভোট দেয় না। কারণ, মানুষ তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সার্বিক ভাবে যোগ্য মনে করে না।
Shahadat Mahmud Siddiquee: আমার মনে হয় কি স্যার, আ’লীগের সাথে জামায়াত কখনোই সেভাবে কনফ্লিক্টে যায় নাই, যেভাবে আ’লীগ দেখাচ্ছে। আ’লীগও হয়তো এতটা করতো না, যদি না তাদের উপর ইন্ডিয়ার এসাইনমেন্ট থাকতো। বাংলাদেশের রাজনীতিকে ইন্ডিয়া-বিযুক্ত করে ভাবা এবং এখানকার বাম ও সেকুলার সংস্কৃতিকে ব্রাহ্মণ্য বা রাবীন্দ্রীক সংস্কৃতির সংযোগ ছাড়া চিন্তা করাকে আমার কাছে বিখণ্ড ও বেখাপ্পা লাগে।
তাই জামায়াত কী করতে পারতো, কী করেনি, তারচেয়ে ফ্রম দিস মোমেন্ট তারা কী করতে পারে, কীভাবে করতে পারে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হতে পারে।
জামায়াতের থিসিস মোকাবিলায় আপনার এন্টিথিসিস উপভোগ্য। তবে সংশ্লেষেই শুধু তা ফলপ্রসূ হতে পারে।
Sultan Uddin: আপনার নিকট একটি ইসলামী দলের সফলতার মাপকাঠি কী? বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর বিকল্প ইসলামী দল হিসেবে কোন দলের উত্থান হতে পারে?
Mohammad Mozammel Hoque: ইসলামী দল বলতে আপনি কী বুঝছেন, আমি কী বুঝতেছি, তা তো ঠিক করা হলো না। তৎসত্তেও আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য বলছি, যে কাজে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে দুনিয়ায় পাঠাইছেন, অর্থাৎ তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে তার দুনিয়াকে সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালোভাবে পরিচালনা করা, সেই কাজ করতে পারাটা হলো একটা ‘ইসলামী দলের’ সফলতা।
দ্বিতীয়ত: জামায়াতে ইসলামীকে আপনি কী হিসাবে দেখছেন, তা তো বুঝতে পারছি না। তাই আন্দাজে কী বলবো? জামায়াত কি একটি রাজনৈতিক দল? ধর্মীয় দল? সামাজিক দল? নাকি, এই সব কিছুই? জানি না আপনার উত্তর কী হবে? তবে, যে উত্তরই আপনি দেন না কেন, তা যেন কাগুজে না হয়।
Sultan Uddin: বর্তমান আহলে হাদিস আন্দোলন সম্পর্কে আপনার মন্তব্য মানে দৃষ্টিভঙ্গি যদি বলতেন? প্লিজ!
Mohammad Mozammel Hoque: পুরনো পেরেক যখন জং ধরে কাঠের সাথে লেগে যায় তখন মিস্ত্রীরা সেটাকে বের করে আনার জন্য হাতুড়ির বারি দিয়ে আরো খানিকটা ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর সেটাকে চাড়ি দিয়ে বের করে আনে। আমি অবাক হয়ে একদিন মিস্ত্রীকে বললাম, “আপনি এটাকে বের করবেন। অথচ, বারি দিয়ে আরো খানিকটা ঢুকিয়ে দিলেন যে!” তখন মিস্ত্রী বললো, “দেখেন, এই পেরেকটা মরিচা ধরে কাঠের সাথে এমনভাবে লেগে গেছে, যেটাকে বের করে আনাটা ছিলো খুব কঠিন। বারি দিয়ে কিছুটা ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়াতে সেটা কাঠ থেকে ছুটে আলগা হয়ে গেছে। এখন এটাকে সহজেই বের করে আনা যাবে।”
এভাবে বিবেচনা করলে দেখবেন, প্রচলিত মাজহাবের দৌরাত্ম এত বেড়ে গেছিলো যে, মূলনীতির চেয়েও মূলকথার প্রতি আহলে হাদীসের বাড়াবাড়ি রকমের গুরুত্বারোপের ব্যাপারটা ওভারঅল সবাইকে ডকট্রিনাল রিজিডিটির পরিবর্তে বেশ খানিকটা অরিজিনাল রেফারেন্সমুখী করেছে বা করবে। একটা বাড়াবাড়ির মোকাবিলায় আরেকটা বাড়াবাড়ি যখন হয় তখন মধ্যপন্থাটা ভেসে উঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়। আশা করি বুঝেছেন।
A Gipsy Man: সমালোচনা করা সহজ কিন্তু বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বুঝা যায় সব সূত্র মতো চলে না। নির্যাতিত হওয়া মানেই যে ব্যর্থতা, তা নয়। শয়তান তো বাঁধা দিবেই। হ্যাঁ, জামাতের আরও ব্যাপকহারে দাওয়াতী কাজ করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেই সুযোগ কি তাগুতি শক্তি দিচ্ছে। আপনি জামায়াত ত্যাগ করে নির্দিষ্ট এলাকায় কোনো মডেল দাঁড় করাতে পেরেছেন? পারেননি, পারবেন না। ওয়াজ করা সহজ কিন্তু মাঠে নেমে দেখুন। কয়দিন বিনাদোষে রিমান্ডে ছিলেন???
Mohammad Mozammel Hoque: না, আমি রিমান্ডে ছিলাম না। কিন্তু আমার জীবনেও শিবির ও জামায়াতের জন্য অনেক সেক্রিফাইস আছে। নিজে নিজে শহীদ হওয়া যায় না। এটি যদি ‘অপরাধ’ হয়ে থাকে, তবে সেটার কথা আপনি বলতে পারেন। যাহোক, এসব নিয়ে আমি এনগেইজ হতে চাচ্ছি না। কেননা, আমি তো জামায়াতের ‘কনফ্লিক্ট থিওরিকে’ই ভুল মনে করি। কেন করি, তা মুল লেখায় বলেছি।
জামায়াত ত্যাগ করে নির্দিষ্ট এলাকায় বিকল্প মডেলের কথা বলেছেন, সে প্রসংগে বলছি। কেন ভাই, নির্দিষ্ট এলাকায় হতে হবে? কেন জামায়াতের বিকল্প এক ধরনের জামায়াতই হতে হবে? আরো সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাইলে এটা পড়েন: ‘ইসলামী মতাদর্শের আলোকে সামাজিক আন্দোলন’।
মাহদী হাসান মুয়াজ: মুহতারাম আপনি তাত্ত্বিক আলোচনা করেছেন, কিন্তু বাস্তবিক কী হতে পারতো সেটা বলেননি।
যদিও আপনার অনেক কথায় দ্বিমত করাটা কষ্টকর তথাপি একমত পোষণেও ইনসাফ হবে না।
আমি কাউকে আঘাত করতে চাইনি, কিন্তু আমার দিন দিন ভালো অবস্থানে যাওয়ার দরুন কিছু হিংসুক আমার শত্রুতা শুরু করে দিলো এবং তারা আমাকে হটাতে বহিঃশত্রুর সহায়তা নিলো। আমাকে নিশ্চিহ্ন করতে চাইলো। সেক্ষেত্রে আমার ভূমিকা কতটুকু দায়ী!
জামায়াত ইসলামী দল হিসেবে বিভিন্ন মতের ইসলামী বিশ্বাসের ঐক্য চেয়েছিলো। কিন্তু বাকি দলগুলোর অধিকাংশের একগুয়েমি ও আক্বিদাগত বিভেদে জামায়াত ব্যর্থ হয়েছে। আক্বিদাগতভাবে জামায়াতের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানই মূলত দলটির আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।
এছাড়া দ্বীনি আন্দোলনে তা’লিম প্রথাটির আধুনিকিকরণ করেছে জামায়াত। এই ইউনিকনেসই তাবলীগ ও জামায়াতকে আলাদা করেছে। কেবল রাজনৈতিক ইসলামে ঝুকে যাওয়ার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে অনেকাংশে একমত। পরিবর্তন দরকার।
রাজনৈতিক দর্শনের ক্ষেত্রে জামায়াত এখন সাইড নয়, মূল ফ্যাক্টর হিসেবে আস্তে আস্তে এগুচ্ছে। যদিও সামনে অনেক ফাঁদ পাতা।
আওয়ামীলীগ জামায়াতকেই বরং স্টাবলিসড করে দিচ্ছে এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে।
Mohammad Mozammel Hoque: পুরো ব্যাপারটাকে আপনি জামায়াতে দৃষ্টিতে দেখছেন। সেটি আপনার ইচ্ছা। তবে, যে কোনো বিষয়কে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার জন্য নির্মোহ ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থাকা থার্ড অ্যাঙ্গেল থেকে না দেখলে কোনো বিষয়কে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা অসম্ভব।
আপনি ইসলামের দিক থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জামায়াতকে দেখেন। তাহলে অনেক অদেখা জিনিস আপনার সামনে ভেসে উঠবে।
জামায়াতে ইসলামী দিনদিন অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে বলে আপনার ধারণা। আপনার এই ধারণাটি ভুল। বরং দিন দিন ইসলাম অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে এবং সেখানে জামায়াতে ইসলামী অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে। এটি মতাদর্শ হিসেবে বিশ্বব্যাপী ইসলামের শক্তিশালী উত্থানের কারণে।
এ.এ.এম.যাইনুল আবিদীন ফারহাত: ইসলামী শক্তিগুলোর ঐক্যের জন্য জামায়াত যতটা সদিচ্ছা পোষণ করেছে তার সিকিভাগও যদি বাকি শক্তিগুলো করত তাহলে বিএনপির মতো ক্লাসলেস দলের সাথে জোট হওয়ার কোনো সুযোগই সৃষ্টি হতো না। মরহুম সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম (রহ) এ দেশে ইসলামী ঐকের জন্য কম করেননি। কিন্তু মাথামোটা কিছু তথাকথিত পীরদের একগুঁয়েমির কারণে সে ঐক্য আলোর মুখ দেখেনি। জামায়াতের একজন রুকন হিসেবে আমিও আপনার কিছু মন্তব্যের সাথে একমত যেমন হয়েছি ঠিক কিছু মন্তব্যের সচেতনভাবে দ্বিমত পোষণ করছি।
Mohammad Mozammel Hoque: শ্রদ্ধেয় Abdus Salam Azadi সম্পর্কে নিশ্চয় জেনে থাকবেন। আমার একটা লেখা তিনি শেয়ার করেছিলেন। তাতে তিনি প্রসঙ্গক্রমে বলেছেন,
“জাযাকুমুল্লাহু খায়রান। আজকে ফেইসবুকে মাজলিসে মুত্তাহিদা আমিলাহের ছবি দিয়ে দারুন দারুন খবর দেয়া হচ্ছে। জামাআত ইসলামি পাকিস্তান, ব্রেলভী হাদারাত ও দেওবন্দী উলামারা একত্রিত হয়ে রাজনৈতিক মোর্চা করেছে। এই মোর্চায় একবার তারা পাকিস্তানের দুইটা প্রদেশের ক্ষমতা পায়। মাঝ খানে ভেঙে যায়। এবার আবার এক হয়েছে।
আমি মরহুম কাজি হুসায়নের কাছে এই মোর্চা গঠনের ইতিহাস শুনতে চেয়েছিলাম লন্ডনে। যার রেকর্ড আমার কাছে আছে। তিনি বলেছিলেন, আমি প্রথম দেওবন্দীদের কাছে ঐক্যের ডাক নিয়ে যাই। তারা ঐক্যের পথে মাওলানা মাওদূদীর খেলাফাত মুলূকিয়্যাত, রাসাইল মাসাইল, ইসলামি রেনেসাঁ আন্দোলন ও তাফহীমের কয়েকটা খন্ডের ব্যাপারে আপত্তি জানান, এবং ঐক্যের পথে ঐগুলো মূল বাঁধা হিসেবে উল্লেখ করেন। আমি ঐখানেই লিখিতভাবে ওয়াদা করে আসি যে এই বই জামাআতের সিলেবাসে রাখা হবে না, তবে কেউ পড়তে চাইলে না করবো না।
ঠিক অনুরূপ অবস্থা হয় ব্রেলভী হাযরাতগণের পাশে যেয়েও। তারা মাওলানা মাওদূদীদের আরো কয়েকটা বইয়ের কথা বলে। সেখানেও আমি একই কাজ করি। ফলে তার পর দিনেই আমাদের মজলিসে মুত্তাহিদে আমেলার কাজ শুরু হয়।
প্রফেসার গোলাম আযম (র) একবার লন্ডনে দাওয়াতুল ইসলামের শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্যদের নিয়ে ৭ দিনের একটা শিক্ষাশিবির পরিচালনা করেন। কেন্দ্রীয় তারবিয়্যাহ সম্পাদক হওয়ায় এটার অর্গানাইজ আমাকে করতে হয়। ইক্বামতে দ্বীনের আলোচনার দিনে আমি ইসলামী ঐক্য প্রক্রিয়ায় কাজী হুসায়নের (র) এই সফলতার পাশে বাংলাদেশে তার ব্যর্থতার কারণ জিজ্ঞেস করি। প্রফেসর স্যার ছিলেন আল্লাহর অলি। দ্বার্থহীন কণ্ঠে বললেন, “আসলে আমি আমার ভাই কাজী হুসায়ন আহমাদের মতো ইখলাস দেখাতে পারিনি।” তিনি ‘মাওলানা মাওদূদীর বই বাদ দেবো’ এই রকম সাহসী কথা উচ্চারণ করতে পারেননি হাফেজ্জী হুজুরের সাথে ঐক্য করার সময়।
আমরা যারা ইসলামী জাগরণের শরীক, তাদের এই পয়েন্টে কাজী হুসায়নের ফিক্বহটা বুঝা উচিত। নিঃসন্দেহে মাওলানা মাওদূদী জামাআতের সম্পদ। কিন্তু তিনি সকল মুসলিমের সম্পদ হয়ে থাকুন, এইটাই উচিৎ।” (লিংক)
Muhammad Sajal: ২০১৩-১৪ সালের কিছু ব্যাপার এদিক-ওদিক হলেই এখন সম্ভবত এ ধরনের বিশ্লেষণের কোনো প্রকার সুযোগ থাকতো না, জামায়াতের লোকজন ভাবতো জামায়াত সফল, বিএনপি ভাবতো জামায়াত সফল, আওয়ামী লীগ ভাবতো জামায়াত সফল। আদতে জামায়াত যে সফল না এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ পাওয়া যায় জামায়াতের জনশক্তিদের বৃহত্তর অংশের সন্তানদের দিকে তাকালে। দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন একটি সংগঠন ক্রমেই নিজের ওপর ভেঙ্গে পড়ছে। এই ভেঙ্গে পড়া ধ্বংসস্তুপ সুপারনোভার বর্জ্যের মতই কাজে লাগানো সম্ভব। জামায়াতের প্রধান ব্যর্থতা, এই মাটিতে পপুলার ইসলাম নিয়ে কীভাবে কাজ করতে হবে, তা নিরুপণের ব্যর্থতা, এটা জামায়াত না শুধু, মোটাদাগে দেশের ইসলামিস্টদের সামগ্রিক ব্যর্থতা।
Mohammad Mozammel Hoque: পোস্টটা পড়া ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
Muhammad Sajal: খাবার খাওয়ার পর যিনি খাইয়েছেন, ধন্যবাদ তো তাকে দেয়া উচিত। আলহামদুলিল্লাহ, আপনার লেখনী দারুণ।
Mohammad Mozammel Hoque: আমার লেখা কারো কারো ভালো লাগে, জানি। খারাপ লাগে, গা জ্বালা করে অনেকেরই, সেটাও বুঝি। সেটি যার যার ব্যাপার।
নিজের সম্পর্কে বলতে পারি, আমি এমনভাবে লিখি যেন তা হয় আমার মনের অকপট কথা। I always try to be a pro-people and a pro-life social worker-entrepreneur. but I dislike to be a populist.
Obviously, I care the readers. but I don’t write for them. I am the first and the most important reader of my writings.
সে যাই হোক, তরুণ, প্রতিভাবান ও প্রতিশ্রুতিশীল একজন লদ্ধপ্রতিষ্ঠিত লেখক হিসেবে তোমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমার লেখায় তুমি এনগেজ হয়েছো, সেটা তোমার ঔদার্য। আল্লাহ তোমার সহায় হোন।
Muhammad Sajal: আমিন। আমি আসলে বহু আগে থেকেই আপনার লেখার একজন মুগ্ধ পাঠক। আমার মতো সামান্য একজনকে এভাবে মূল্যায়ন করা আপনার ঔদার্যের একটি নমুনা মাত্র। আপনাদের দোয়া নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই, আপনাদের কাছ থেকে শিখতে চাই প্রতিনিয়ত, এখনো তো কিছুই শেখা হয়নি।
Mohammad Mozammel Hoque: I like committed people. And, I see it in you. May Allah guide us all to His path.
Gazi Saleh Uddin: তোমার লিখা আমি মনোযোগ দিয়ে পড়ি, তুমি অনেক দীর্ঘ করে লিখ, তবে তোমার ইস্যুগুলি দীর্ঘ হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে ফেবুতে মতামত দেওয়া কঠিন। তাই তুমি যদি সেমিনার আকারে আলোচনা না করে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর। যেমন– তুমি একটি আলোচনা করতে পার “ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের প্রয়োজন আছে কিনা?
Mohammad Mozammel Hoque: স্যার, আপনি আমার লেখা পড়েন, এইটা আমার জন্য অনেক বেশি সৌভাগ্যের ব্যাপার। এজন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আর হ্যাঁ, স্যার, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। তবে আমি মনে করি, প্রতিটি রাষ্ট্রের একটা আদর্শ থাকা উচিত অথবা থাকে। আদর্শ-নিরপেক্ষ কোনো রাষ্ট্র হতে পারে না। কেননা, রাষ্ট্র হলো মানুষের একটা সংগঠন বা সংঘ।
বলাবাহুল্য, মানুষ মাত্রেরই কোনো না কোনো ধরনের আদর্শ থাকে। সেটাকে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের জীবন ও জগৎ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি তথা জীবনদৃষ্টি বা life-view হিসাবে বলতে পারি।
তৃতীয়ত: ধর্ম কোনো আদর্শের অংশ, অঙ্গ বা উপাদান হতে পারে। কিন্তু ধর্ম = আদর্শ – আমি এমনটা মনে করি না।
চতুর্থত: ইসলামকে আমি একটা জীবনাদর্শ মনে করি। ধর্ম যার অন্যতম অপরিহার্য একটি অংশমাত্র।
Gazi Saleh Uddin: তোমার সাথে একমত। তবে তোমরা ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলেই ইসলাম ধর্মকে টেনে আন। এটি ক্ষুদ্র দৃষ্টিভঙ্গি। তুমি ধর্মের ঊৎপত্তি, এক ঈশ্বরবাদের জন্ম, বহু ঈশ্বরবাদ – এগুলি যদি আলোচনায় আন, ভাল।
তুমি খুব যৌক্তিক একটা কথা বলেছ, ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রের আদর্শ থাকবে, হতে পারে সেটি কোনো ধর্মের।
তবে আমি মনে করি আগামীতে রাষ্ট্রের আদর্শ হবে তার সংস্কৃতি। সেখানে অবশ্যই ধর্ম থাকবে তবে গৌণভাবে, মুখ্য হবে সে দেশের সংস্কৃতি।
Mohammad Mozammel Hoque: স্যার, আপনার এই কথার সাথে একমত হতে না পারার কোনো কারণ নাই। কথাটা অন্যভাবে বলতে গেলে, রাষ্ট্র একটা সামাজিক ও প্রায়োগিক সংগঠন। চরিত্রগতভাবেই সামাজিক ও প্রায়োগিক যে কোনো বৃহত্তর উদ্যোগ বা সংগঠন ধর্মনিরপেক্ষ হতে বাধ্য। মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র সম্পর্কে আমার কিছু লেখালেখি আছে। যেখানে আমি দেখিয়েছি, চরিত্রগতভাবে সেটি ছিল ধর্মনিরপেক্ষ ধাঁচের।
Gazi Saleh Uddin: মদীনা সনদ কিন্তু পরবর্তীতে চারটি নুতন ধারার সৃষ্টি হয়েছে