‍“আমাদের মৃত্যুর পর কেয়ামত আসা পর্যন্ত সময়টিতে আমাদের কী হবে? বা আমরা কোথায় থাকবো? আমাদের পূর্বপুরুষ যাদের মৃত্যু হয়েছে তারা এখন কোথায় আছে?

আমরা তো জানি কেয়ামতের পর হাশরের ময়দানে আমাদের পুনর্জন্ম হয়ে আমলনামা অনুযায়ী শেষবিচারের পর আমরা জাহান্নাম-জান্নাতে যাবো। তাহলে আমরা যে কবরের আযাব শুনি, সেটা কী? আমার বিচার না হতেই আযাব বা শাস্তি কেন? আর আমরা যে আমাদের মৃত পূর্বপুরুষের জন্য দোয়া করি— আল্লাহ আমার বাবা/মা/আত্মীয়কে জান্নাত নসীব করো, বা তাদের কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দাও এটি কতটা সঠিক? কারণ, শেষবিচারের আগে জাহান্নাম-জান্নাতের প্রশ্ন আসে কী করে? আর মৃত্যুর পর পরই জাহান্নাম-জান্নাতে চলে গেলে শেষ বিচারের প্রশ্ন আসে কী করে? অথচ এ দুটোই ইসলামী বিশ্বাসের মূলভিত্তির অন্যতম।”

এই প্রশ্নের আমি এই উত্তর দিয়েছি:

মৃত্যুর পর কেয়ামত আসার আগে মানুষের আত্মা থাকে আত্মার জগতে। বিচারে শাস্তির আগে যেমন একজন আসামী গ্রেফতার হয় এবং হাজতে শাস্তির সম্মুখীন হয়, তেমন করে কেয়ামতের আগে অপরাধীরা ‌‘হাল্কা’ শাস্তির সম্মুখীন হবে।

যেহেতু আল্লাহ জানেন সবকিছু, তাই তিনি যে কোনো ফায়সালা দিতে পারেন।

আর হ্যাঁ, বিচার দিবসে সব বিচার করে ভালো-মন্দটা দেখিয়ে দেয়া হবে। এমন নয় যে আল্লাহ জানতেন না, এরপর বিচার করে তিনি জানবেন। বিচার হবে মানুষকে বিষয়গুলোর আদ্যপান্ত জানিয়ে দেয়ার জন্য।

আল্লাহর পক্ষ থেকে সবকিছু ফিক্সড। মানুষের দিক থেকে সবকিছু একটা ওপেন পসিবিলিটি।

আল্লাহ কেন এভাবে সবকিছু ঠিক করলেন তা আমরা জানি না।

আল্লাহকে যদি আমরা আমাদের মতো একটা সত্তা মনে করি, তাহলে আমাাদের দৃষ্টিতে তিনি গেইম-ফিক্সিংয়ের ‌‘অপরাধে’ দোষী।

আর আল্লাহকে যদি আমরা অজ্ঞাত এক বিশেষ স্বতন্ত্র সত্তা মনে করি, তাহলে তিনি কেন কী করছেন, তা নিয়ে ভাবিত না হয়ে আমাদেরকে বিষয়টাকে দেখতে হবে আমাদের দিক থেকে।

আমাদের দিক থেকে ভবিষ্যত হলো এক উন্মুক্ত সম্ভাবনার বিষয়। কোরআন-হাদীসে যা বলা আছে তার কিছু কিছু বর্ণনাকে from God to world হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, কিছু কিছু বর্ণনাকে from world to God হিসেবে বুঝতে হবে।

আমাদের দিক থেকে অর্থাৎ from world to God দৃষ্টিভঙ্গি হতে দেখলে freedom of choice হচ্ছে একটা প্রায়োগিক সত্য বা এম্পেরিক্যাল ফ্যাক্ট।

আবার খোদার জাত বা মহান সত্তার দিক থেকে অর্থাৎ from God to world দৃষ্টিভঙ্গি হতে দেখলে সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞাতা এক মহান সত্তার মোকাবিলায় মানুষ বা জগতের অন্তর্গত কোনো পার্টিকুলার এনটিটির স্বাধীনতা না থাকাটাই যুক্তিসঙ্গত।

এই কথাগুলোর আলোকে পুরো বিষয়টাকে বুঝার চেষ্টা করবেন।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *