(এটি একটা গ্রুপের আলোচনা। প্রায় বছর দশেক আগের। সংগত কারণেই আলোচকদের নামগুলোকে পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে।)

HTariq: মোজাম্মেল হক স্যারের লেখা ‌‍“তারিক রমাদানের ‘Beyond Islamism’ নিয়ে আলোচনা-মন্তব্য-সমালোচনা” শিরোনামের নোটটা নিয়ে স্যারের সাথে আলাপ করছিলাম। এক পর্যায়ে পুঁজিবাদ নিয়ে তারিক রামাদানের সমালোচনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি যা বললেন তার সারকথা এমন— যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সমালোচনা তারিক রামাদান করছেন, সেই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে বসেই তো তিনি তা করছেন। অর্থাৎ, পুঁজিবাদী রাষ্ট্র তাকে সেই সুযোগ দিয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্রে বসে কি ইসলামের বিরুদ্ধাচারণ করা আমরা কল্পনা করতে পারি?

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাদ বা গণতান্ত্রিক-সেক্যুলার রাষ্ট্রগুলো তাদের সমালোচক নাগরিকদের সমালোচনা করার অপরাধে শাস্তি দেয় না। বরং অন্যান্য নাগরিকদের মতোই তাদের নাগরিক অধিকারেরও সুরক্ষা দেয়। এই বিষয়টা যদিও প্রশ্নসাপেক্ষ ব্যাপার, তারপরও আমি ওই প্রসঙ্গ না তুলে তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম, যে পুঁজিবাদী আমেরিকা নিজের নাগরিকদের সুরক্ষা, মৌলিক অধিকার প্রদান এবং অন্যান্য নাগরিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে উন্নত একটা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, সেই আমেরিকা তাদের এই ব্যবস্থা বহাল রাখতে গিয়ে ভিন্ন রাষ্ট্রের তেল-গ্যাস ও অন্যান্য সম্পদ শোষণ করছে। তাহলে এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মূল্যায়ন আপনি কীভাবে করবেন?

তিনি জবাব দিলেন, এটাই পৃথিবীর ইতিহাস এবং এটাই স্বাভাবিক। সভ্যতাগুলো এভাবেই গড়ে উঠেছে। এমনকি ইসলামী শাসন ব্যবস্থাতেও এটা ছিল। খোলাফায়ে রাশেদার শাসনামলে তো মদীনার সাহাবীগণ প্রচুর রাষ্ট্রীয় ভাতা, সুযোগ-সুবিধা পেতেন। কিন্তু ইসলামী খেলাফতের অধীন পুরো অঞ্চলে তো মানুষ এত সুবিধা লাভ করেনি। শোষণ প্রক্রিয়ার কথা যদি বলি, তাহলে তো ওই সময়ও ‘শোষণ’ ছিল!

তাহলে ওয়ে আউট কী? আমার কৌতুহলী প্রশ্ন।

স্যারের জবাব, ক্ষমতায় যারা থাকবে, তারা শোষণ করবেই এবং বাকিরা শোষিত হবেই। এটা হচ্ছে ক্ষমতায় যাওয়ার সুবিধা। কর্তব্য হচ্ছে, এই শোষণের মাত্রা নির্ধারণ করা।

নোট: আমার ধারণা, এটা নতুন ধরনের চিন্তা। সম্ভবত আপনারা এটা নিয়ে প্রচুর তর্ক-বিতর্কে (ইতিবাচক অর্থে) আগ্রহী হবেন। তাই নোট আকারে লিখে রাখলাম, যেন পরে সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

MJIR: ‍“যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সমালোচনা তারিক রামাদান করছেন, সেই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে বসেই তো তিনি তা করছেন। অর্থাৎ, পুঁজিবাদী রাষ্ট্র তাকে সেই সুযোগ দিয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্রে বসে কি ইসলামের বিরুদ্ধাচারণ করা আমরা কল্পনা করতে পারি?” —-পুঁজিবাদ বা গণতন্ত্র সিস্টেমকে টিকিয়ে রাখতে (সময় উপযোগী করতে) গঠনমূলক সমালোচনার পথ খোলা রাখে। ইসলামেও যেসব বিষয় মৌলিক আকিদার অংশ নয়। বরং মুয়ামেলাত, সেসব জিনিস সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনযোগ্য। এটা নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা ও তর্কে বাধা কোথায়? পাশাপাশি সকল গণতান্ত্রিক বা অন্য যে কোনো মতাদর্শই কিছু বিষয়ে সমালোচনার অধিকারকে অগ্রাহ্য করে, এক্ষেত্রে ইসলামও তাই করে। ইসলামী শরীয়ায় অধিকাংশ বিষয়েই কোনো নির্দিষ্ট বিধিবিধান নাই, কিছু মূলনীতি দেয়া আছে মাত্র। যেমন- অর্থনীতিতে যাকাত এর প্রচলনের কথা বলা আছে, সুদমুক্ত অর্থনীতির কথা বলা আছে, প্রতারণা বা জালিয়াতির উপর নিষেধাজ্ঞা আছে, কিন্তু শুধুমাত্র এ জিনিসগুলিই সব সমস্যার সমাধান নয়। এবং অনেক বিষয় তর্কসাপেক্ষ। যেমন কোনটা সুদ কোনটা সুদ নয়, পররাষ্ট্র নীতি কেমন হবে, কোন সেক্টর ডেভলপমেন্টে প্রাধান্য পাবে, সময়ের সাথে সাথে নারীদের ভূমিকা কী হবে ইত্যাদি, কোন ক্ষেত্রে কোন পরিস্থিতিতে হুদুদ কার্যকর করা যাবে, কখন যাবে না। আমরা এরকম আরও অনেক জিনিস দেখতে পাই যেগুলো সময়ের এবং যুগের চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তন হয়েছে (জিজিয়া, জিহাদের নীতিসহ আরও অনেক অনেক বিষয়) যার মূলে রয়েছে স্কলারদের সমালোচনা। তাই সমালোচনা করা যাবে না, এটি একটি ভিত্তিহীন যুক্তি।

“খোলাফায়ে রাশেদার শাসনামলে তো মদীনার সাহাবীগণ প্রচুর রাষ্ট্রীয় ভাতা, সুযোগ-সুবিধা পেতেন। কিন্তু ইসলামী খেলাফতের অধীন পুরো অঞ্চলে তো মানুষ এত সুবিধা লাভ করেনি। শোষণ প্রক্রিয়ার কথা যদি বলি, তাহলে তো ওই সময়ও শোষণ ছিল” – এটা খুব simplistic answer of a complex process।

With reference to fair distribution of wealth in the community, Ibn Taymiyyah has quoted the second Caliph, Umar al-Khattab, to have said concerning the assets of bayt al-mal (public treasury): ‘No one has a greater claim to these assets in preference to anyone else, and everyone’s entitlement would be judged by his record (of service), his financial condition, his burdens and his personal needs.’

‍“যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সমালোচনা তারিক রামাদান করছেন, সেই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে বসেই তো তিনি তা করছেন। অর্থাৎ, পুঁজিবাদী রাষ্ট্র তাকে সেই সুযোগ দিয়েছে” – এ ব্যাপারে আমার কথা হলো, ‌‘Freedom of expression’ is not an issue of concern (not within the territory of discussion) for capitalism. Capitalism merely deals with economy. Freedom of expression (right of criticism) has flourished due to the spread of liberal democratic ideas which can function (although to what extent might vary) under capitalism/socialism/Islam/Anarchism or many other systems! TR exercises his right of freedom of expression due to capitalism (“পুঁজিবাদী রাষ্ট্র তাকে সেই সুযোগ দিয়েছে।”) is a not a valid statement.

“কর্তব্য হচ্ছে, এই শোষণের মাত্রা নির্ধারণ করা।” — contradicts with the Quranic principle as Quran says, ‍“We sent Our Messengers with the Clear Signs and sent down the Book and the Balance with them so that mankind might establish justice.” (Surat al-Hadid, 25) We can try our best, yet we may fail this is one thing. But right from the beginning, if we assume that we have to determine the intensity of injustice, as if on principle we are agreeing that there would be some injustice and we are ok with that! Two are never same and have a different mind set up!

SHq: @MJIR ভাই, আপনার প্রথম কমেন্ট ভিন্ন দিকে চলে গিয়েছে, উনি ইসলামের বিরুদ্ধে ইসলামী রাষ্ট্রে ‍“সমালোচনা” বলেন নাই, বরং ‍“বিরুদ্ধাচারণ” বলেছেন। তবে, আমি যদি ঠিক মত বুঝে থাকি তাহলে উনি ইসলামী মূলনীতির কথা বলেন নাই; বরং মূলনীতির সমসাময়িক প্র্যাকটিসের কথা বলছেন।

দ্বিতীয় কমেন্টে উনি ‍“শোষণ প্রক্রিয়ার কথা যদি বলি, তাহলে তো ওই সময়ও শোষণ ছিল!”- বলেছেন, যার একটা অর্থ দাঁড়ায় ওই সময়েও শোষণ ছিল (লিটারেল অর্থে বিশ্বাসীদের জন্য মেনে নেয়া আপাত কষ্টকর)। আরেকটা অর্থ হতে পারে, ‍“শোষণ প্রক্রিয়া” নিয়ে আমাদের প্রচলিত আন্ডারস্ট্যান্ডিং আসলেই কি সাহাবীদের যুগের, টাইম-অফ-স্পিরিটের, আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর সাথে কম্পিটিবল কিনা, সেইটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা। সোজা বাংলা, আমরা যাকে ‍“শোষণ” বলি আসলেই তা ‍“শোষণ” কিনা? যেমন ধরুন, প্রত্যেক কমিউনিস্ট আর সোশালিস্ট দেশগুলোতে স্কুল কলেজে ভালো করেই পড়ানো হয়, পুঁজিবাদী দেশগুলো কীভাবে তাদের দেশে শ্রমিকদের উপর শোষণ করছে। ইনফ্যাক্ট, আমাদের ‍“শোষণ” সম্পর্কিত সকল ‍“আধুনিক বুঝ” সেই শ্রমিকদের অধিকার থেকেই উত্পত্তি, যার বিকাশ ঘটায় কমিউনিজম আর সোশালিজম। দু:খজনক হলেও সত্য আজকে পুঁজিবাদী দেশগুলোতে শ্রমিকের অধিকার নিয়ে যতটুকু দায়িত্বপরায়ণতা পাবেন, কমিউনিস্ট বা সোশালিস্ট দেশগুলোতে এর কাছাকাছি মানেরও নেই, কোনো এক্সেপশন ছাড়া। অন্যদিকে এইসব দেশগুলোতে ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন কেড়ে নিয়ে শ্রমিকের চিত্কার পর্যন্ত শোনার কোনো ব্যবস্থা করে দেয় না। প্রাকটিসের কথা বলছি।

তৃতীয় কমেন্টের সাথে একমত, ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন পুঁজিবাদের কারণে প্রসার লাভ করে নাই। এর পারফেক্ট উদাহরণ আমাদের পেট্রোমনার্কি দেশগুলো। পুঁজিবাদ আছে কিন্তু ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন প্রশ্নবিদ্ধ।

চতুর্থ কমেন্টে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সাথে রাষ্ট্রীয় মডেলের কারণে তৈরী হওয়া শোষণ কখনই সমার্থক করা উচিত মনে হয় না। ইসলামে এই কারণে ন্যায়বিচার আর রাষ্ট্রীয় মডেলের কারণে তৈরী হওয়া শোষণকে একসাথে অপটিমাইজ করে সামাজিক ন্যায়বিচার বা সোশাল জাস্টিসের প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। মাওলানা মাওদূদী আর সাইয়েদ কুতুবরা এই আইডিয়াই প্রচার করে গিয়েছেন। ঠিক এই কারণেই উনারা পুঁজিবাদী আর কমিউনিস্ট বা সমাজতন্ত্রী সবার বিরাগভাজন হয়েছিলেন। এটা নতুন কোনো বিষয় না।

MJIR: @SHq ভাই প্রথমত, আসলে এখানে আমরা যে ‍“বিরুদ্ধাচারণ” নিয়ে কথা বলছিলাম (যেমনটা তারিক রমাদান করে থাকেন) সেটাতে কিন্তু তিনি ক্যপিটালিজমকে অস্বীকার করেন না। বরং কিছু particular ব্যাপারে সমালোচনা করে থাকেন। উনি বুঝাতে চেষ্টা করেন যে এ ব্যাপারগুলা আমলে নিলে সিস্টেমটা আরও জাস্ট হবে। আমি আসলে এই দিকটা বুঝাতে চাইছি যে সময়ের সাথে সাথে একটা জাস্ট সিস্টেম চালু রাখার জন্য সমালোচনা বা ভিন্ন মতের সুযোগ ইসলামে রয়েছে। আমি ইসলামের এই dynamic দিকটাকে বুঝাতে চেয়েছি।

দ্বিতীয়ত, আপনি যেমনটা বলছেন, ‍“‌‘শোষণ প্রক্রিয়া’ নিয়ে আমাদের প্রচলিত আন্ডারস্ট্যান্ডিং আসলেই সাহাবীদের যুগের, টাইম-অফ-স্পিরিটের, আন্ডারস্ট্যান্ডিয়ের সাথে কম্পাটিবল কিনা। সোজা বাংলায়, আমরা যাকে ‍“শোষণ” বলি আসলেই তা ‘শোষণ’ কিনা?” – আমিও তার সাথে একমত। আমি মনে করি যে – ‍“সে সময়েও ‍“শোষণ” ছিল” – এটা খুব simplistic কথা, যেটা থেকে সে সময়ের social circumstance এর আলোকে ব্যাপারটা বুঝা যায় না। তাই আমি আরও contextualize এবং specific discussion এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বলতে চেয়েছি।

তৃতীয়ত, ‍“ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সাথে রাষ্ট্রীয় মডেলের কারণে তৈরী হওয়া শোষণ কখনই সমার্থক করা উচিত মনে হয় না।” – এটার সাথেও আমি একমত। আমি বলতে চেয়েছি, ইসলামকে implement করতে গিয়ে আমরা একটা সময়োপযোগী সিস্টেম দাঁড় করাতে চেষ্টা করি। মানবীয় ত্রুটির কারণে কিছুটা injustice সেখানে হতে পারে। তবে ideal set of mind is to establish a system that can do justice to the fullest extent. But right from the beginning, the ideal state should not assume that ‍“yes, there would be some injustice no matter how much we try to implement justice.” This could be the practical case not the ideal one.

SHq: @MJIR Bhai, agree, but we should come up with Islamic reference in appropriate context. While we are talking about practical issues, we should refer to the Quranic verses those are associated with practical solutions. And when we will talk about principles, reference should be those verses that deal with principles. Mixing up can lead to confusion, where we are now!

SHq: @Mohammad Mozammel Hoque, আপনি তারিক রামাদান আর পুঁজিবাদী দেশের কথা তুলে পুঁজিবাদকে রাষ্ট্রীয় মালিকানা দিয়ে দিলেন! আর অন্যদিকে যেই ব্যক্তি প্রচলিত বিশ্বের সকল রাষ্ট্রীয় কাঠামোকেই প্রশ্নবিদ্ধ (ইনফ্যাক্ট বর্তমান প্রচলিত রাষ্ট্রের ধারণাকেই উনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন কয়েকবার, ফরহাদ মজহার যেমনটি করেন) করে তাকে রাষ্ট্রের পরিচয়ে সামনে নিয়ে এসে রাষ্ট্রের অধীনে নিয়ে আসলেন, উনি এতে আগ্রহী থাকুক বা না থাকুক!

মুসলিম বিশ্বের পুঁজিবাদী অনেক দেশেই তারিক রমাদানের এন্ট্রি নিষিদ্ধ। আবার উনি পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে বলেন বিধায় সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো উনাকে কাছে টেনে নেয়, এমন কোনো উদাহরণ নাই। ইসলামী রাষ্ট্র ইরানে বা পাকিস্তানে উনার এন্ট্রি নিষিদ্ধ নাই। এন্ট্রির কথা এই কারণে বললাম, যেইসব দেশে উনার এন্ট্রি নিষিদ্ধ, সেইসব দেশে উনি নাগরিক হিসেবে থাকলে কি করে উনি ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারতেন?

ক্ষমতায় যাওয়ার সাথে শোষণের মাত্রা নির্ধারণের সম্পর্ক তৈরী করাটা বাংলাদেশী রাজনীতির চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। যে কোনো রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে নাগরিক মাত্রই চায় রাষ্ট্র সকল শোষণের মূলোত্পাটন করবে। আর সরকার মাত্র চায় রাষ্ট্রীয় অক্ষমতাকে সামনে তুলে ধরতে। ব্যক্তি কোনো দায়িত্ব নিতে রাজি না। আর সরকারের কাছে এত পরিমাণে রিসোর্স নাই। তাই এই দুইজনের সম্পর্কের ব্যাল্যান্সের জন্য দরকার সোশাল জাস্টিস, যা নাগরিককে দায়িত্ব দেয় আর সরকারদের কর্তব্য অনুভূতি জাগ্রত করে।

রাষ্ট্রীয় সেবা বিকেন্দ্রীকরণের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকাকে শোষণ বলা যায় কি, যেমনটা আপনি দাবি করেছেন মদিনার সাহাবীদের কথা বলে? এমন কোনো ট্যাক্স বা যাকাতসহ অন্য কোনো সুবিধা কি আপনার জানামতে ছিল মদিনাবাসীদের জন্য যা কুফাবাসীদের জন্য ছিল না? রাষ্ট্রীয় ভাতার এক্সট্রা কি কি ছিল মদিনাবাসীদের জন্য যা তায়েফবাসীদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল? Need explanation. নবীজির পরিবারের জন্য যাকাত নিষিদ্ধতা, সেনাবাহিনীতে যোগদানের কারণে আলাদা সুযোগ, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের কারণে প্রাপ্ত সুযোগ বাদের খাতায় রাখা উচিত।

SHq: @HTariq ‍“যে পুঁজিবাদী আমেরিকা নিজের নাগরিকদের সুরক্ষা, মৌলিক অধিকার প্রদান এবং অন্যান্য নাগরিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে উন্নত একটা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, সেই আমেরিকা তাদের এই ব্যবস্থা বহাল রাখতে গিয়ে ভিন্ন রাষ্ট্রের তেল-গ্যাস ও অন্যান্য সম্পদ শোষণ করছে।” আপনার কথার সাথে একমত। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো তাদের পুঁজিবাদের শোষণ প্রক্রিয়াকে ভাগ করে ফেলেছে। এর অপেক্ষাকৃত ভালোর ভাগটা নিজের দেশে রেখে খারাপের ভাগটা এক্সপোর্ট করে দেয়। বিশ্বায়নের মাধ্যমে এটি আরো সহজ হয়েছে। তার মানে, সমস্যা ফরেন পলিসিতে। ওরা নিজেদের দেশের নাগরিকদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টা সবসময় অগ্রাধিকার দেয়, ঠিক যেমনটা পরের দেশ থেকে সম্পদ আরোহণে দেয়। পুঁজিবাদবিরোধী দেশগুলো নিজের দেশে আহামরি পরিবর্তন না এনে উল্টা পুঁজিবাদী ফরেন পলিসির সাথে লাগতে যায়। তাই শোষণ প্রক্রিয়া উল্টা নিজেদের দেশেই বেশি চলে। তারিক রামাদান তাই সতর্কতার সাথে ও বাস্তবসম্মতভাবেই পুঁজিবাদের পর্যালোচনা করেন।

Mohammad Mozammel Hoque @HTariq @SHq @MJIR

১. এখানে, তারিক রমাদান নিয়ে ফোকাস বা আলোচনা করা হবে না। হলে, আমি নাই। তবে পুঁজিবাদ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

২. পুঁজিবাদের পক্ষে আমি নই। বিপক্ষেও নই। আমি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো কিছুর পক্ষে নই। ইসলামকে মতাদর্শ হিসাবে আমি অনন্য মনে করি এ অর্থে যে, অপরাপর সব মতাদর্শের সব ভাল দিকগুলোকে এটি ধারণ করে, own করে, আপন করে নেয়। বিশ্বাসের কিছু অখণ্ড ও মৌলিক দিকের পাশাপাশি এই adaptability অথবা flexibility ইসলামের আছে। অধুনা যাকে apologetic trend হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, আমি সেটির উর্দ্ধে থেকেই স্বাধীনভাবে চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি।

৩. ধারণা করছি, আমরা ইসলাম সম্পর্কে সম ধারণা রাখি। অতএব, ‘পুঁজিবাদ’ বলতে আমরা কী বুঝছি, তা নিয়ে কেউ একজন সংক্ষেপে বলা দরকার। যেটিকে সামনে রেখে আমাদের আলোচনা অগ্রসর হতে পারে। বিবেচ্য বিষয়টিসহ বর্তমানে প্রায় বিষয়গুলোই এতটা জটিল রূপ ও এতো বিচিত্র গঠন নিয়ে আছে বা থাকে যে, কোনো বিষয় বা বাদ-এর ব্যাপারে এক কথায় প্রকাশ করো টাইপের হ্যাঁ/না জওয়াব দেয়াটা অসম্ভব ব্যাপার মনে করি।

NSN: ‍“খোলাফায়ে রাশেদার শাসনামলে তো মদীনার সাহাবীগণ প্রচুর রাষ্ট্রীয় ভাতা, সুযোগ-সুবিধা পেতেন। কিন্তু ইসলামী খেলাফতের অধীন পুরো অঞ্চলে তো মানুষ এত সুবিধা লাভ করেনি। শোষণ প্রক্রিয়ার কথা যদি বলি, তাহলে তো ওই সময়ও শোষণ ছিল!” This took me by surprise. I want a clear reference from Mohammad Mozammel Hoque.

গালিব ভাই এর একটা বিখ্যাত উক্তি না করে এখানে পারা গেলনা। উনি বলতেন, ‍“ইসলাম অবশ্যই সাম্রাজ্যবাদী। ইসলাম নিজের এলাকার বাইরে গিয়ে নিজের ‌‘সাম্রাজ্য’ বাড়িয়েছে এই কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই, কিন্তু অন্য সাম্রাজ্যবাদ এর সাথে ইসলামের মানগত পার্থক্যটা এখানেই যে, ইসলাম কখনও periphery থেকে সম্পদ লুট করে center এ নিয়ে আসেনি।”

SAbdullah: We are having discussion on capitalism in this group. To have the perspective of one of the experts in this field, I am sharing the comment of Shah Abdul Hannan.  According to my knowledge he is one of the top Bengali speaking persons, who has deep understanding of Islamic economics. He said the following in this regard: “Capitalism is the global enemy of humanity, and particularly of the poor and the deprived. It is the vehicle of injustice in the world.

Capitalism is the free market system without any real control and this is the reason for all economic injustices. On the other hand, Islamic system is the free market with Hisbah or control and that largely solves the problem of injustice.”

SHq: SAbdullah ভাই, কমেন্টে সংগ্রহ করা বক্তব্য লেখকের বইয়ে লিখা বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়। বইয়ে উনি পুঁজিবাদের কিছু দর্শনগত আর প্রয়োগগত সমালোচনা করে এর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে দাবি করেছেন, ইসলামী অর্থনীতি এর সমাধান ভালো দিতে পারে সমাজতন্ত্রের তুলনায়। কিন্তু পুঁজিবাদকে ‍“বিশ্বমানবতার শত্রু” হিসেবে আখ্যায়িত করেন নাই।

Mohammad Mozammel Hoque: কোনো এলাকা দখল বা পদানত করে সেখান হতে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জন মাত্রকেই যদি মোটাদাগে শোষণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয় তাহলে তেমন ধরনের ‘শোষণ’ মদিনা কেন্দ্রিক ইসলামী রাষ্ট্র বা ‘সাম্রাজ্যে’ও ছিল। ‘অন্য এলাকা’ বা বিজিত এলাকা হতে গৃহীত ট্যাক্স ইত্যাদি কেন্দ্রে তথা মুসলিমদের মধ্যে বন্টন করা হতো। ব্যাপারগুলো ছিল প্রকাশ্য ও যৌক্তিক মাত্রার। মনে রাখতে হবে, যৌক্তিকতার এই মাত্রা নির্ধারণটা এখনও আমরা ‘আক্রমণকারী’ মুসলমানদের তরফ হতেই দেখি।

পিতৃত্ব অর্জনের যেমন কোনো শালীন পদ্ধতি নাই তেমনি দুনিয়াতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের কোনো শান্তিপূর্ণ ফর্মূলা নাই। তারপরও যদি শান্তির কথা বলা হয় তাহলে তাকে ‘(হত্যাকারীর) মৃত্যুদণ্ডের মধ্যেই রয়েছে (অপরাপর সবার) জীবন’ – কোরআন শরীফের এই আয়াতের আলোকে বুঝতে হবে। আল্লাহর কথাকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করা, দুনিয়াতে স্বীয় মতাদর্শের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার যে প্রক্রিয়া তা একটি প্যাকেজ ফর্মূলা যার মধ্যে ‘… ওয়া জির ওয়াতু সানামিহি আল জিহাদু’ মতো বিষয় অন্তর্ভূক্ত।

যেখানে সৃষ্টিশীলতা থাকবে সেখানে প্রযু্ক্তিগত প্রতিযোগিতা থাকবে, অবধারিতভাবে সেখানে সম্পদের মালিকানাগত তারতম্য অর্থে শোষণও থাকবে। যেখানে মতাদর্শগত সংঘাত থাকবে সেখানে যুদ্ধও থাকবে। যেখানে যুদ্ধ থাকবে সেখানে বিজয়ী শক্তির প্রাধান্যও থাকবে। অতএব, আধিপত্যশীল বিজয়ী শক্তি অর্থনৈতিক বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে যাকে শোষণ হিসাবে চিহ্নিত করা সম্ভব।

প্রাপ্যতা অনুসারে কেউ পাবে, দ্যাটস ফাইন। এখন কার কতটুকু প্রাপ্যতা? কে এটি কীভাবে নির্ধারণ করবে? কোনো অর্থব্যবস্থাই এটি বলে না যে, যার যোগ্যতা নাই সে আদৌ পাবে না। মৌলিক মানবাধিকারের দিক থেকে সম্পদের সুষম বন্টন জরুরী এবং এই জরুরী কাজটা উন্নত বিশ্বের সকল দেশে নিশ্চিতকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। সকল ব্যবস্থা গ্রহণ সত্বেও সম্পদের মালিকানা লাভের ক্ষেত্রে মানুষে মানুষে তারতম্য ঘটবেই। কেউ একশত উট যখন তখন দান করবেন, আর কেউ এমন থাকতে পারেন যার একটি উটও নাই। সম্পদ অর্জন ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে তারতম্যকে যদি শোষণ বলা হয়, তাহলে তেমন ‘শোষণ’ বরাবরই ছিল ও থাকবে।

এই প্রকৃতিগত ‘বৈষম্য ও শোষণ’কে সহনীয় মাত্রায় নিয়ে এসে নানাভাবে ইসলাম একে রেগুলেট করার কথা বলে। বলা বাহুল্য, বৈষম্য ও শোষণ যখন সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনা যায় তখন তা আর বৈষম্য কিম্বা শোষণ হিসাবে থাকে না; বরং বৈচিত্র্য ও তারতম্য হিসাবে পরিগণিত হয়।

NSN: মোজাম্মেল স্যারের লাস্ট কমেন্টের পর আমার মনে হচ্ছে স্যার অন্য ধরনের এক ‍“শোষণ” এর কথা বলছেন, যার ফলে ‍“শোষণ” শব্দটা রিডিফাইন করা দরকার হয়ে পড়েছে।

SAbdullah: @NSN কিন্তু শোষণ শব্দটির সাথে বঞ্চনা (deprivation, deception, deceit, fraudulence, a fraud)-এর ধারণা জড়িত থাকায় এ ধরনের শব্দ ব্যবহার কনফিউজিং হতে পারে। অন্যদিকে ইসলামে যে জাস্টিস-এর উপর জোর দেয়া হয়েছে, তা বঞ্চনার ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত।

FAR: @Mohammad Mozammel Hoque ধন্যবাদ। আমি শুধু একটা কথা যোগ করতে চাই। বর্তমান সময়ের চশমা চোখে রেখে বিচার করলে অতীতকালের অনেক বিষয়ই গোলমেলে মনে হয়; পরিবেশ-পরিস্থিতি সামনে রেখে বিবেচনা করলে মনে হবে চমৎকার। ঔপনিবেশিক সময় থেকে মুসলিম উম্মাহ লড়াই করছে অন্যদের সাথে। তাই নিজের দিকে ফিরে তাকিয়ে নিজের চিন্তা-ভাবনা পুনর্মূল্যায়ণ করার সময় পায়নি। এখন তা শুরু করা দরকার।

SAbdullah: এই থ্রেডের আলোচনার প্রেক্ষাপটে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা জরুরী মনে করছি। প্রশ্নটি হল ইসলাম কি ‘কথা’/মত প্রকাশ (Expression) বা সমালোচনার মাধ্যমে কোনো ধরনের (ইসলামের কোনো কনসেপ্ট বা রাষ্ট্রের বা যেকোনো কিছুর) বিরুদ্ধাচরণ করার সুযোগ দেয়? আমি যতদূর বুঝতে পারছি ইসলাম এ সুযোগ পুরোপুরিভাবে যে কাউকে দেয়:

১. আহলে কিতাবদের বিভিন্ন সমালোচনার উল্লেখ করে করে (তারা বলে..) আল্লাহ কোরআনে তার জবাব দিয়েছেন (শুধুমাত্র একটি উদাহরণ দিচ্ছি: ২:১১১)। এক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা মদীনার রাষ্ট্রকে এসব কথা বলবার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবার কথা বলছেন না। বরং পাল্টা যুক্তি দিয়েই তাদের কথার জবাব দেয়া হচ্ছে। সুতরাং কোরআন থেকে বোঝা যাচ্ছে এ ধরনের সমালোচনা হতে পারে বা তার সুযোগ রয়েছে এবং মোকাবেলা করার পদ্ধতি কী তা-ও পরিষ্কার হচ্ছে।

২. ড. হাশিম কামালীর Freedom of Expression in Islam – এই বিষয়ে এ পর্যন্ত লেখা একটি পূর্ণাংগ এবং সবচেয়ে ভাল বই। তিনি Freedom to criticize (Hurriyyat al-Mu’aradah) এবং Freedom to Express an Opinion (Hurriyyat al-Ra’y) সম্পর্কে কম্প্রিহেনসিভ আলোচনা করেছেন বইটির ৪৯ থেকে ৭২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত। অন্যদিকে বইয়ের part four-এ Legal Restraints অংশের আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে আইনগত ব্যবস্থার নেবার সুযোগ শুধু তখনই রয়েছে যখন প্রকাশিত কথা (Expression) নিম্নলিখিত কোনো একটি ক্যাটাগরিতে পড়ে:

    1. public utterance of hurtful speech (violating other person’s honor, causing physical harm or loss of property)
    2. Slanderous Accusation (Qadhf)
    3. Libel (Iftira’)
    4. Insult (Sabb, Shatm)
    5. Cursing (La’n)
    6. Attribution of Disbelief to a Muslim (Takfir Al-Muslim)
    7. Sedition (Fitnah)
    8. Blasphemy (Sabb Allah wa Sabb al-Rasul)

এছাড়া অন্য কোনো কথা/মত/ক্রিটিসিজমে কাউকে (মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে) কোনো ধরনের বাধা প্রদান করার কোনো অধিকার ইসলামী রাষ্ট্রের (বা কারো) ইসলামের ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে নেই।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *