প্রশ্ন: “স্যার, মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। কীভাবে উত্তর পাবো? আপনি কি লাইভে যান? কিংবা, ভিডিও বানানোর সময় কয়েকটি প্রশ্নোত্তর আয়োজন করতে পারেন।”
আমার উত্তর: তোমার প্রশ্নগুলো যথাসম্ভব বিস্তারিতভাবে ও খানিকটা গুছিয়ে একসাথে লিখে পাঠাও।
প্রশ্ন: “আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন দয়ালু। এটা তাঁর কুরানে দাবী করেছেন। অথচ, তিনি জাহান্নাম নামক চিরস্থায়ী ফাঁদ সৃষ্টি করেছেন। এ ফাঁদে কেউ না কেউ তো পতিত হবেই। তিনি তো এইটা বানাতে নাও পারতেন। যেহেতু বানিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্য, তারমানে কেউ না কেউ তো উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হবেই। কিন্তু জাহান্নাম সৃষ্টি না করলে তো কেউ এই ফাঁদে পড়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকতো না। তাহলে তাঁর রহমান বা দয়ালু গুণের সাথে এটি কি সাংঘর্ষিক নয়? অর্থাৎ আল্লাহ কি নিজেই দায়ী নন, কেউ না কেউ জাহান্নামে পতিত হওয়ার জন্য?”
আমার উত্তর: (হুবহু। আনএডিটেড)
আমাদের যে ভাল-মন্দ জ্ঞান তাতে করে আল্লাহ নিজেই মূলত দায়ী। কারণ, তিনি জাহান্নাম সৃষ্টি না করলেও পারতেন। তাতে করে তাঁর কোনো ক্ষতি হতো না।
সমস্যা হলো, আল্লাহ কি আমাদের ভাল-মন্দ জ্ঞানের অধীন? আমাদের ভাল-মন্দ জ্ঞান আমাদের সসীম জ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। অথচ, আল্লাহ হলেন অসীম। তো, সসীম কীভাবে অসীমের কিছু যাচাই করবে সঠিকভাবে?
এটি একটি ক্যাটাগরি মিসটেক নয় কি?
দ্বিতীয়ত: আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক। বন্ধুত্বের সম্পর্ক বা ব্যবসায়িক সম্পর্ক নয়। আদতে। তাহলে আনুগত্যশীল বান্দার কি উচিত নয়, আল্লাহর হুকুম মেনে নেয়া?
বান্দা যেহেতু নিজের ভাল চায়, ভাল কাজ যেহেতু চাইলেই করা যায়, বাস্তবে করতে না পারলেও ঐকান্তিক চেষ্টাকে সম্পন্নকরণ হিসাবে গণ্য করা হয়, ভাল কাজের পুরষ্কার প্রাপ্তি যেহেতু নিশ্চিত, খারাপ কাজের শাস্তি যেহেতু অবধারিত, তাহলে বান্দা কেন ভাল কাজ করবে না? কেন সে তাওবা করবে না? কেন সে স্বীয় প্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহমূলক মনোভাব পোষণ করবে?
এ ব্যাপারে আপাতত শেষ কথা হলো, আল্লাহকে আমরা জানি আমাদের দিক থেকে। আমাদের ও জগতের অস্তিত্ব ও পরিচালনার কারণ হিসেবে। সসীম সত্তা হিসেবে আমরা অসীম সত্তাকে সঠিকভাবে জানার দাবি করতে পারি না।
নিজেদের সসীমত্বের বাস্তব জ্ঞান দিয়ে আমরা ontologically বা তাত্ত্বিকভাবে বুঝতে পারি, অসীম একটা সত্তা আছে। কেননা, অসীমের ধারণা ছাড়া কোনো কিছুকে আমরা সসীম বলতে পারি না। অথচ, আমরা নিশ্চিতভাবে অনুভব করি, স্বজ্ঞাতভাবে জানি, আমরা সসীম। জগত সসীম। যা কিছু বস্তুগতভাবে অস্তিত্বশীল তা সসীম।
ইসলামে এজন্য আল্লাহ তায়ালার দুই ধরনের বৈশিষ্টের কথা বলা হয়: (১) আমাদের দিক থেকে তাঁকে আমরা যেসব বৈশিষ্ট্য দিয়ে জানি। সেগুলো তাঁর গুণবাচক বা সিফাতি বৈশিষ্ট্য। (২) তাঁর দিক থেকে তিনি কেমন, স্বগতভাবে কী তাঁর বৈশিষ্ট্য, এগুলো জানা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এগুলোকে বলা হয় আল্লাহর স্বরূপগত বৈশিষ্ট্য বা জা’তি বৈশিষ্ট্য।
আল্লাহ যে আছেন এবং আমাদের দিক থেকে দেখলে তাঁর মধ্যে আমরা এই এই বৈশিষ্ট্য দেখতে পাই, এর বাইরে, কেমন তিনি, কী তাঁর বৈশিষ্ট্য, কেন তিনি এমন এমন করেছেন, কেন তিনি এমন এমন করেন নাই, ইত্যাদি নিয়ে ভাবিত হওয়াটা যে ভুল তা আমরা আমাদের যুক্তি ও কাণ্ডজ্ঞান দিয়েই বুঝতে পারি।
এ জন্যই ঈমান আনার পর তাকদীর নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে নিষেধ করা হয়েছে।