৪টা বিষয়। এর কোনোটির ঘাটতি অন্য কোনোটি দিয়ে পূরণ হয় না। সাহস, সততা, বিদ্যা ও বুদ্ধি। মানুষের জীবনে নানা ধরনের গুণ বা ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। অনেক খারাপ গুণ বা নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য আছে যা থেকে প্রত্যেক মানুষকে আত্মরক্ষা করে চলতে হয়। সেসবের একটা বিস্তারিত তালিকা করা এই আলোচনার লক্ষ্য নয়।

আমি বরং বলতে চাচ্ছি, যতই সততা বা সিনসিয়ারিটি থাকুক, যদি সাহসের ঘাটতি থাকে, তাহলে সে ব্যক্তি তার সকল সততা, বিদ্যা ও বুদ্ধিকে কাজে লাগাবে ভীরুতার পথ অবলম্বন করার জন্য। জলপানে অনিচ্ছুক ঘোড়ার মতো তাকে আপনি (যুক্তির) পানিতে চুবিয়ে ধরলেও পানি খাওয়াতে (অর্থাৎ মোকাবেলার ময়দানে নামাতে) পারবেন না।

ভীরুতা হলো সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা, সবচেয়ে বড় চারিত্রিক ত্রুটি।

সাহসিকতার পরে মানুষের ৪টি মৌলিক গুণের মধ্যে দ্বিতীয়টা হলো সততা। দেখবেন, সততার বিপক্ষে কেউ নেই। চরম অসৎ ব্যক্তিও বলে, ‘সততার কোনো বিকল্প নাই’। নিজেকে কেউ অসৎ স্বীকার করতে চায় না। অসততাকে তাই অসৎ ব্যক্তিরা কৌশল হিসেবে দাবী করে। এভাবে তারা আত্মপ্রবঞ্চনা লাভ করে।

কৌশল আর অসততার মধ্যে সাদৃশ্য থাকলেও দু’টো মূলগতভাবে ভিন্ন। কৌশল হলো লক্ষ্য অর্জনের জন্য গৃহীত সাময়িক ব্যবস্থা। অসততা হলো নিঃসংকোচ ও নির্লজ্জ স্ববিরোধিতা।

সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে অসৎ ব্যক্তির বিদ্যা ও বুদ্ধিকে আপনি কিনে নিতে পারবেন।

কোনো কাজ বাস্তবে সম্পন্ন হতে পারে না, আপনি যদি তাত্ত্বিকভাবে সমস্যাটিকে পূর্বেই সমাধান করতে না পারেন। সেজন্য সাহসিকতা আর সততার পরে মানুষের ৪টি মৌলিক গুণের মধ্যে তৃতীয়টি হলো জ্ঞান বা বিদ্যা।

আর হ্যাঁ, বিদ্যা থাকলে কারো বুদ্ধি থাকবে, এমন কোনো কথা নাই। বিদ্যান ব্যক্তি অথচ প্রচণ্ড মাত্রায় বুদ্ধিবিকল, যা বলে থাকেন আর যা লিখেছেন তা সবই মুখস্তবিদ্যা, এমন পণ্ডিতদের(?) মধ্যে আমার নিত্য বসবাস।

বিদ্যা হলো কোনো বিষয়ে তাত্ত্বিক দক্ষতা। বুদ্ধি হলো প্রায়োগিক দক্ষতা। আমি জীবনে অনেক বুদ্ধিমান মানুষ দেখেছি যারা প্রচলিত অর্থে অশিক্ষিত, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।

চারিপাশে এত ভীতু আর অসৎ ব্যক্তিকে দেখে আমি শঙ্কিত। তাই ভাবলাম, এ’কথাটা জোরেশোরে বলি, বিদ্যার চেয়েও বেশি দরকার বুদ্ধির, সততার চেয়ে সাহসিকতার।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এই লেখাতে সততা এবং সাহসিকতাকে পরস্পরের বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করা হয়নি। একইভাবে আমি এটা দাবি করিনি যে বিদ্যার প্রয়োজন নেই, বুদ্ধিই যথেষ্ট।

সাহসিকতার পরিবর্তে সততার উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করার যে প্রচলিত রীতি, বুদ্ধির পরিবর্তে বিদ্যার উপর বেশি ফোকাস করার যে ট্রেন্ড, আমি বরং সেইটাকে সংশোধন করতে চেয়েছি।

মূল পোস্টেই উল্লেখ করেছি, সাহসিকতা, সততা, বিদ্যা ও বুদ্ধি, এই চারটার কোনোটার ঘাটতি অপর কোনোটা দ্বারা পূরণ হতে পারে না।

কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের মধ্যে এই চারটি মৌলিক মানবীয় গুণের একটারও যদি ঘাটতি থাকে, তাহলে ব্যক্তি বা সংগঠন কোনো কিছুতেই সফলভাবে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে না।

Rokon Uzzaman: সৎ মানুষদের ভীরুতার জন্যই সমাজে অসৎ-এর শক্তি বেড়ে যায়। সত্যের পথে মৃত্যুও ভালো। এর জন্য প্রয়োজন সাহস।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সাহসিকতার অভাবে ভীরু মানুষেরা শেষ পর্যন্ত অন্যায়কারীদের পরোক্ষ সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করে। সেজন্যই সাহস এবং সততা দুইটাই লাগবে। যেমন করে বিদ্যা থাকার সাথে সাথে বুদ্ধি থাকাটাও জরুরী।

উসমান মাহদী: কিন্তু ভীরুতা কাটিয়ে উঠবো কীভাবে? আমি চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পাই। ভীরুতা কি সহজাত, নাকি পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে হয়?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সবকিছুই অভ্যাসের ব্যাপার। মোকাবেলা করতে করতে একসময় ভীরুতার দুর্বলতা কেটে যায়। সাহসী লোকদের সাথে থাকতে হবে। সাহস করে ছোটখাটো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

তুমি এটা জিজ্ঞেস করছো দেখে খুব ভালো লাগলো। লেখাটার শেষের অংশে কীভাবে সাহস গড়ে তুলতে হয় সেরকম একটা অংশ ছিল। লোকেরা বিরক্ত হবে ভেবে সেই প্যারাটা কেটে দিয়ে পোস্ট করেছি।

Ahmadul Hasan Safwan: আপনার লেখাটা যে কতটা সত্য সেটা আমার নিজের জীবনের সাথে মিলিয়ে বুঝতে পারি। আমি বিশ্বাস করি আমার ভেতর শতভাগ সততা আছে। বিদ্যা এবং বুদ্ধি উভয়‌ই আছে বলে আমার বিশ্বাস। কিন্তু যেটা নেই সেটা হলো সাহস। আমার ভেতর কোনো সাহস নাই। অত্যন্ত ভীতু মানুষ আমি। আমার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া কতো অন্যায় যে আমি সহ্য করেছি, তার কোনো হিসাব-নিকাশ নাই। মাঝে মাঝে নিজেকে অথর্ব মনে হয়।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব কাজকে সাহসিকতার কাজ বলে বলেছেন তার অন্যতম হচ্ছে সত্য কথা বলা, সেটা যদি কোনো অত্যাচারী শাসকের মুখের ওপর হয়, তাহলেও।

Muhsin Abdullah: স্যার, বিদ্যা এবং সততা হয়তো কেউ চাইলে অর্জন করতে পারে, কিন্তু বুদ্ধি বা সাহস তো অর্জন করার বিষয় না। যার বুদ্ধি নাই সে কীকরে বুদ্ধিমান হবে? যার সাহস নাই, সে কীকরে সাহসী হবে?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ইন্টেলেকচুয়ালিটি বা বুদ্ধিবৃত্তি, এটি নিরন্তর চর্চার বিষয়। দেখা গেছে, নিয়মিত চর্চা না করার কারণে যথেষ্ট মেধাবী লোকেরাও আনক্রিটিক্যালি চিন্তা করে। আবার তত বেশি মেধাবী নয় এমন লোকেরা নিয়মিত চর্চা করার কারণে ভালো ক্রিটিক্যাল থিঙ্কার হয়ে ওঠে।

Mohammad Osiur Rahman: “বিদ্যার চেয়েও বেশি দরকার বুদ্ধির, সততার চেয়ে সাহসিকতার” একটু পরিবর্তন করে বললে কেমন হয়- “বিদ্যার সাথে (চেয়েও) বেশি দরকার বুদ্ধির, সততার সাথে (চেয়ে) সাহসিকতার”, কেননা অসৎ মানুষরা বিদ্যা, বুদ্ধি এবং সাহসিকতা দিয়ে যাবতীয় অপকর্ম করে থাকে ।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হ্যাঁ ভাই, আপনার কথাটা আসলেই সঠিক। সততা এবং সাহসিকতার সম্মিলনে যদি বিদ্যা আর বুদ্ধি সংযুক্ত হয় তাহলে সেটা খুবই ভালো হয়। বিশেষ করে লিডারশিপের জন্য।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *