[পূর্বসতর্কতা: এ লেখাটি আস্তিক ও অ-আস্তিকদের মধ্যকার কট্টরবাদীদের (intolerant) জন্য নয়।]

আস্তিকতা আর নাস্তিকতা– উভয়ই মূলত বিশ্বাস। কারণ, স্রষ্টা আছেন এমন ‘প্রমাণ’ নাই। আবার ‘নাই’-এরও কোনো প্রমাণ নাই। স্রষ্টা বা ঈশ্বরবিশ্বাস প্রসঙ্গে আরো দুই ধরনের অবস্থান হতে পারে। যথাক্রমে সংশয়বাদ ও নির্বিকারবাদ (Irrelevantism)

এই বিভাজনগুলো ‘পরমসত্তার’ সাথে (যাকে সাধারণত স্রষ্টা, ঈশ্বর, খোদা ইত্যাদি বলা হয়) ব্যক্তি মানুষ ও সমাজের কোনো সম্পর্ক বা দায়দায়িত্ব আছে কিনা, তার উপর নির্ভর করে। ধর্মীয় অর্থে ঈশ্বর হলেন এমন সত্তা, যিনি মানুষের বাস্তব জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান। যার কাছে মানুষ প্রার্থনা করে। যাকে ত্রাণকর্তা মনে করে। এ ধরনের ঈশ্বরের ধারণাকে আমরা ব্যক্তি-ঈশ্বর (personal God) হিসাবে অভিহিত করতে পারি। অর্থাৎ এমন ঈশ্বরে বিশ্বাস করা, যিনি মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের ভালো-মন্দের সাথে সংশ্লিষ্ট । পক্ষান্তরে যদি মনে করা হয়– ঈশ্বর হলেন এমন সত্তা, যিনি অস্তিত্বশীল কিন্তু অতিবর্তী। যিনি জগতের বাহিরে অবস্থান করেন। ব্যক্তির বাস্তব জীবনের ভালো-মন্দের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নাই। এই অর্থে ঈশ্বরের ধারণা হলো মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক বা জ্ঞানতাত্ত্বিক, যাকে আমরা পরম-ঈশ্বর (philosophical-God) হিসাবে অভিহিত করতে পারি। ‘পরম সত্তা’ অর্থে এই পরম-ঈশ্বরের সাথে ব্যক্তি-ঈশ্বরের সম্পর্ক কোনো কোনো ধর্মে অপ্রাসঙ্গিক, কোনো কোনো ধর্মে প্রাসঙ্গিক, আবার কোনো কোনো ধর্মে অভিন্ন (যেমন– ইসলাম)।

‘ঈশ্বর’ বলতে কী বোঝায়? আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, সংশ্লিষ্ট বই-পুস্তকে ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে-বিপক্ষে শত পৃষ্ঠা আলোচনা দেখা গেলেও ‘ঈশ্বর’ বলতে কী বুঝায়– সে সম্পর্কে এক পৃষ্ঠা লেখাও অনেক সময় পাওয়া যায় না। ঈশ্বরের ধারণা নিয়ে সুস্পষ্ট ঐক্যমত না থাকলে ঈশ্বর অস্তিত্বশীল কিনা– এই বিতর্কের কোনো যৌক্তিক পরিণতি সম্ভবপর হবে না। কারণ, ইতোমধ্যেই আমরা দেখেছি পরম-ঈশ্বর আর ব্যক্তি-ঈশ্বরের ধারণা এক নয়। তাই, ব্যক্তি-ঈশ্বরের বিরুদ্ধে প্রদত্ত যুক্তি পরম-ঈশ্বরের ধারণায় আরোপ করা এক ধরনের শ্রেণীগত বিভ্রান্তি (categorical mistake)।

ঈশ্বর (পরম-ঈশ্বর অর্থে) মানে এমন এক সত্তা যা পরম, অসীম ও অতিবর্তী। ‘God’ is in its philosophical sense, ‘something’ or an ‘entity’ which is absolute, infinite and beyond…

এ ধরনের এক পরমসত্তায় (absolute) বিশ্বাস হলো মানুষের একটি সাধারণ অন্তর্গত বৈশিষ্ট্য। আপনি একে প্রকৃতি বলুন, শূন্য বলুন, অসীম বলুন, অনন্ত বলুন, কিছু নয় (nothing) বলুন; যাই বলুন না কেন, চিন্তার আকার হিসাবে (intrinsically) এক ধরনের ফিলোসফিক্যাল গডে আমরা সবাই বিশ্বাস করি।

যারা বিশ্বাস করেন, ঈশ্বর আছে; তারা বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বরবিশ্বাসের প্রমাণ আছে। যারা নাস্তিক্যবাদকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন, তারা ব্যক্তি-মানুষের বাস্তব জগতের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো ঈশ্বরে (ব্যক্তি-ঈশ্বর) বিশ্বাস করেন না। তারা ‘বিশ্বাস’ করেন যে এ ধরনের ঈশ্বর না থাকার ‘প্রমাণ’ আছে। যারা সংশয়বাদী তারা এর কোনোটিকেই গ্রহণ করেন না, অথবা দুটিকেই সমগ্রহণযোগ্য মনে করেন। আর নির্বিকারবাদী হলেন তারা, যারা এই বিষয়ে কোনো আগ্রহ বা প্রয়োজন বা বাস্তব জীবনে এর কোনো প্রাসঙ্গিকতা অনুভব করেন না। অর্থাৎ তারা মনে করেন, এ বিষয়ে কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়াই আমরা সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নাস্তিকরা সাধারণত বিজ্ঞানবাদী হয়ে থাকেন। বিজ্ঞান চর্চা করা বা বৈজ্ঞানিক হওয়া এক ব্যাপার, আর বিজ্ঞানবাদী হওয়া ভিন্ন ব্যাপার। বিজ্ঞানবাদীরা ‘বিজ্ঞানে’ ‘বিশ্বাস’ করেন। যদিও বিজ্ঞান কখনো ‘নিশ্চয়তা’ দিতে পারে না। আবার নিশ্চয়তা ছাড়া জ্ঞান হতে পারে না। (কোনো কিছুকে যখন আমরা সম্ভাব্য বলি তখনও সেটিতে এক ধরনের নিশ্চয়তা থাকে। যেমন, আমি যদি নিশ্চিত না হই যে এটি সম্ভাব্য, তাহলে আমি বলতে পারি না যে এটি সম্ভাব্য।) আমরা জানি, যে কোনো বৈজ্ঞানিক ফলাফল/তত্ত্ব নীতিগতভাবে সম্ভাব্য ও অধিকতর ব্যাপক পরীক্ষণ সাপেক্ষে পরিবর্তনযোগ্য। বিজ্ঞানে শেষ কথা বলে কিছু নাই। এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে অধিকতর গ্রহণযোগ্য অনুমান বা যুক্তিকে ‘প্রমাণ’ হিসাবে গ্রহণ করা হয়। অপরিবর্তনীয় বা স্থায়ী কোনো তত্ত্ব বা প্রমাণ বিজ্ঞানে নাই। জগতেও নাই। আমরা অপরিহার্য মনে করছি বা আমাদেরকে সন্তুষ্ট করে বলেই কথিত স্বতঃসিদ্ধসমূহ (axioms) আমাদের জ্ঞানের উৎস। কেন আমরা স্বতঃসিদ্ধসমূকে অপরিহার্য মনে না করে বা এগুলোর উপর সন্তুষ্ট না হয়ে পারি না? কারণ, আমরা দেহ ও চিন্তাগতভাবে নির্দিষ্ট অবয়বে সীমিত। কিন্তু, কেন? কারণ প্রকৃতিগতভাবেই আমাদের দৈহিক ও চিন্তনের নির্দিষ্ট কাঠামো আছে। ‘প্রকৃতি’ কী? নাস্তিকতাকে যারা যুক্তিসঙ্গত মনে করেন তারা ‘প্রকৃতিতে’ বিশ্বাস করেন। লক্ষ্যণীয় হলো, তারা ‘প্রকৃতির’ উপর এমনসব গুণ বা বৈশিষ্ট্য আরোপ করেন, আস্তিকেরা যেগুলো হুবহু ঈশ্বরের জন্য দাবি করেন। সুতরাং, প্রকৃতি বলুন আর ঈশ্বর বলুন– একই কথা। ঈশ্বরবিশ্বাসের জন্য ঈশ্বর, গড বা অন্য বিশেষ কোনো শব্দ ব্যবহার করতে হবে, এমন কোনো কথা নাই।

ঈশ্বরবিশ্বাস সম্পর্কিত সমস্যার কতিপয় মৌলিক দিক সম্পর্কে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই লেখা। আস্তিকতার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনার জন্য এটি লেখা হয়নি। তাই এখানে আপনার চিন্তনের উপাদান হতে পারে এমন দুটি প্রশ্ন রেখে অন্য প্রসঙ্গে যাচ্ছি। আচ্ছা, মাপকাঠির মাপ কী? নাই! সবকিছু যদি মাপ মতো হতে হয় তাহলে মাপকাঠির কোনো মাপ থাকবে না কেন? জ্ঞানের উপরিকাঠামোর জন্য যা কিছু সঠিক, জ্ঞানের মৌলিক কাঠামোর জন্য তা হতে পারে মারাত্মক ভুল। তাহলে জ্ঞান দুই পর্যায়ে দুই ধরনের কেন?

আমি ঈশ্বরবিশ্বাসী। কিন্তু তা প্রমাণ নির্ভর নয়। অথচ তা বিশ্বাসমাত্র তথা অন্ধবিশ্বাসও নয়। আমার ঈশ্বরবিশ্বাস আমার বিবেচনায় যথেষ্ট যুক্তিনির্ভর এবং এই যুক্তিগুলো আমার কাছে নিঃসন্দেহ ও অকাট্য মনে হয়। এ ক্ষেত্রে পাঠককে প্রমাণ, যুক্তি ও বিশ্বাস এই তিনটি পদকে (term) আলাদা আলাদাভাবে বিবেচনা করতে হবে।

তাই ঈশ্বরে বিশ্বাস করার যুক্তি আছে, না করারও যুক্তি আছে, এর মাঝামাঝি অবস্থানেরও যুক্তি আছে, আবার এ বিষয়ে না ভাবারও যুক্তি আছে। যার যার মানসিক প্রবণতাই নির্ধারণ করে কোন কোন ‘যুক্তিকে’ সে এ বিষয়ে ‘প্রমাণ’ হিসাবে ‘বিশ্বাস’ করবে। (স্মতর্ব্য, বিশ্বাস করা মানে গ্রহণ করা।) সবচেয়ে বড় কথা হলো, ঈশ্বরও চান না মানুষ ‘প্রমাণ’ নিয়ে ঈশ্বরে ‘বিশ্বাস’ করুক। বিশ্বাস হলো এক ধরনের আবেগ। যুক্তি এর বাহন মাত্র। ‘প্রমাণ’ এখানে দাবি করা হয়, দেখানো যায় না। যুক্তির ঊর্ধ্বে ও বিশ্বাসমুক্ত ‘প্রমাণ’ একটি অলীক বিষয়।

আমাদের সকল জ্ঞানই মূলত বিশ্বাস, কিন্তু সকল বিশ্বাস জ্ঞান নয়। জ্ঞান হলো সে সকল বিশ্বাস যা স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে সত্য এবং যাচাইযোগ্য। ‘Knowledge is justified true belief’ প্লাটো কর্তৃক জ্ঞানের এই ‘সংজ্ঞা’ জ্ঞানতত্বে প্রাথমিকভাবে স্বীকৃত হওয়ার পাশাপাশি এই ‘সংজ্ঞার’ অপর্যাপ্ততার বিষয়েও সব জ্ঞানতাত্ত্বিকরা একমত! যেটি ‘গ্যাটিয়ারের সমস্যা’ নামে পরিচিত। আশ্চর্যের বিষয় হলো জ্ঞানের কোনো সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞা আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি। এতদসত্ত্বেও আমরা প্রত্যেকে কমবেশি জ্ঞানের অধিকারী। এটিকে বলা হয় ‘সক্রেটিসের প্রত্যয়’। এই দৃষ্টিতে জ্ঞানতাত্তিক সংশয়বাদ একটি স্ববিরোধী (self-refuting) মতবাদ।

জ্ঞান-গবেষণা ও মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে আমি ফরাসী চিন্তাবিদ ভলতেয়ারের অনুসারী। যিনি অপরের ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত ছিলেন। আমি মনে করি না, সবাই আমার সাথে একমত হবে। এটি উচিতও নয়। কিন্তু তাই বলে ভিন্নমত প্রকাশের জন্য কাউকে এমন অশ্লীলভাবে আক্রমণ করা হবে, মনে হবে যেন কাছে পেলে ও পারলে তাকে বা তাদের সবাইকে খতম করে দিবো– এমন মানসিকতার লোকজন আমার পোস্টে দয়া করে অংশগ্রহণ করবেন না। ধন্যবাদ।

So, you have to believe to live, no matter what you believe! Put your comments, please.

সামহোয়্যারইন ব্লগ থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম: ভালো লিখেছেন। সৃষ্টিকর্তাকে যদি কেউ বিশ্বাস করতে চায়, তাহলে কোনো যুক্তি ছাড়াই বিশ্বাস করতে হবে। আর বিশ্বাস করতে না চাইলে কোনো যুক্তি ছাড়াই অবিশ্বাস করতে হবে।

যদি সৃষ্টিকর্তাকে কেউ বিশ্বাস করে তাহলে তার বিধান মানতে হবে। সেখানেও অনেক কিছুই বুঝে আসবে না। কিন্তু স্রষ্টাকে মানার মধ্যেই মংগল– এই বিশ্বাস নিয়েই তাকে মানতে হবে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ‘যুক্তি ছাড়াই বিশ্বাস করতে হবে। আর বিশ্বাস করতে না চাইলে কোনো যুক্তি ছাড়াই অবিশ্বাস করতে হবে।’ যুক্তি নয় প্রমাণ। বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের যুক্তি থাকে, প্রমাণ থাকে না। যদিও সেটি দাবি করা হয়।

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম: ধন্যবাদ মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক ভাই। আসলে শব্দটা প্রমাণই হবে, যুক্তি নয়। 🙂

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আসলে আমি আপনাদের মতো বোদ্ধা ব্যক্তিদের খুঁজছি। যারা চিন্তা করে। চিন্তার বিনিময়ের জন্য, তথ্যের আদান-প্রদানের জন্য ব্লগ লেখে, পড়ে। আমি তাঁদের দলে। ধন্যবাদ।

রঙ পেন্সিল: ভালো লেখা। সবচেয়ে বড় কথা– জানতে হবে আগে, তারপর মারামারি কাটাকাটি। আর এই সূত্র ধরলে কেউ আর এসব নিয়ে বিতর্কেও জড়াবে না। বিতর্ক করে যারা, নিজেদের জ্ঞানী ভাবে তারা। জ্ঞানীরা বিতর্কের গভীরে যেতেই থাকেন…।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আসলে গড বলতে কী বোঝানো হচ্ছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি প্রধান ধর্মগুলো অনুসারে গডের অর্থ ব্যাপকভাবে আলাদা। ‘আছে’ বা ‘নাই’ ধরনের বিতর্কের আগে ঠিক করতে হবে বিষয়টি কী? উত্তর-দক্ষিণ ঠিক না করে কোনো কিছু উত্তরে নাকি দক্ষিণে– এ জাতীয় তর্ক করে লাভ নাই। ধন্যবাদ।

আবদুল ওয়াহিদ: আসসালামু আলাইকুম। সুন্দর সহজ চমৎকার করে লিখলেন। কেন যে কম লিখেন।

আমার নিজের কিছু ভাবনা আছে। গুছিয়ে লিখতে পারি না। তারপরও বলার লোভ ছাড়তে পারলাম না।

অস্তিত্ব নিজেই নিজেরে জানান দেয়। এটাই অস্তিত্বের ধর্ম। এই কারণে এটা গুণ নয়। কিন্তু গোলমেলে বিষয় হলো, অস্তিত্ব সবসময় সাপেক্ষ বিষয়। সেটা কালগত তো অবশ্যই এবঙ বিষয়গত বিবেচনাকে বড় করে জড়িয়ে নেয়। এর ফলে তার নিজের ভাষাটাই চাপা পড়ে যায়। আল্লাহকে যে অর্থে অস্তিত্ববান জ্ঞান করা হোক না কেন, সেটা সাপেক্ষের স্থানে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। যা তার ধারণার সাথেই বেমিল তৈরি করে। আবার মনুষ্য জগতে এই স্ববিরোধিতার পাশ কাটানোর বিষয়খানা আত্মগত। অর্থ্যাৎ, প্রায় ভিনজগতেরই কারবার।

যুক্তি-তক্কো, প্রমাণ, জ্ঞান, বিশ্বাস– যে অর্থকেই সামনে নিয়ে আসি না কেন, কেউ সম্পূর্ণ নয়। যদি আল্লাহ সর্বজ্ঞাতা বা সর্বজ্ঞানী হয়, এটা কি ধারণাগত কোনো চিত্র তৈরি করে? সেটা ধারণা বা সাপেক্ষ বাস্তবতার বাইরের বিষয় নয়। সেই অর্থে পরমকে জানা-বুঝা ধরাছোয়ার বাইরে। অদ্ভুত একটা বিষয় হলো, মানুষ বলে তাকে সে নিজেরেও বুঝে নাই। এখানে সে নিজে ধরাছোয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। ব্যক্তি মাত্র আধা-আলো আর আধা-অন্ধকারে। সেই অজ্ঞানতাকে সে ছোট পাত্রে নিয়ে বুঝতে পারে না। তাই যুক্তি এবঙ বিশ্বাস করার প্রবণতা তাকে বড় কিছুর সন্ধান দেয়। এটাকে সে যুক্তি-তক্কে সপেঁ দিয়ে নিজের মূর্তি তৈরি করে। তাই তাকে সেই বাস্তবতার ঊর্ধ্বে যেতে হলে নিজেরেই অতিক্রম করতে হয়। এখন কাজের প্রশ্ন হলো, এটা কেন করতে হবে? কুয়োর ব্যাঙ কুয়োয় থাকলে মন্দ কি?

কারণ কিছু না, কুয়োর ব্যাঙ সমুদ্দুরের হদিস পাইছে। সেই হদিস কেমনে পাইছে? সেটা আর কিছু না, তার আকলের ভেতর কেউ একজন তারে এই ঠিকানা দিয়ে দিছে। যে ভাবটা পরম তাকে তার অসম কিছুতে আপনা আপনি জাগ্রত হতে পারে না।

সেটা বিশ্বাস-অবিশ্বাস দিয়ে হাসিল করা যায় না। যেহেতু এই বলে দেয়াটাই তার অস্তিত্বের সাথে জড়িত তাই এই মীমাংসা তারে করতে হবে। অপর দিকে বিশ্বাস করার ঘটনা হলো, নিজের ক্ষমতার বিকাশ ঘটানো। এই ক্ষেত্রে বিশ্বাসের ভরসা পুরোটা মীমাংসা হয় না, যতদূর পর্যন্ত না নিজের ভেতর থাকা আধ্যাত্মিক পরমভাবে পৌঁছা না যায়, ততক্ষণ তারে বিশ্বাসের ঝাণ্ডা হাতে নিয়া দিন গুজরান করতে হয়। যখন সে আসলে আপন অস্তিত্বের মুখোমুখি হয়, তখন সবকিছু তার সামনে পরিস্কার। তখন আর বিশ্বাস-প্রমাণ-যুক্তি-তক্কের প্রয়োজন পড়ে না। এইসব কিছু অসারতায় পর্যবসিত হয়।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ধন্যবাদ। লেখাটি কিছুটা মডিফাই করেছি। গড হলেন বিয়ন্ডে। তাই যে কোনো তুলনা অপর্যাপ্ত হবে– এটিই তো স্বাভাবিক।

কার্ল মার্কস: আপনার লেখা পড়ে ভালো লাগলো। সামনে আরো বিশদভাবে আলোচনা হবে আশা করি। তবে যে কাঠামোকে নিক্তি ধরে আলোচনা করছেন, সে কাঠামোকে প্রশ্ন করা জরুরি। গ্রীক, রোমান সভ্যতার দেওয়া এ কাঠামোর মৌলিক সমস্যা চিহ্নিত করা এবং ব্যাখ্যা করা জরুরি। ড. আলী শরীয়াতী তার ‘ম্যান মার্ক্সসিজম অ্যান্ড ইসলাম’ বইতে চমৎকার করে চিহ্নিত করেছেন।

ভালো থাকবেন। ভবিষ্যতে আরো পড়ার আশা করছি।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আলী শরীয়তীর বইটি পড়িনি। কোনো লিঙ্ক থাকলে দিবেন। আমার লেখার পরিমাণ খুব কম। ইদানীং চেষ্টা করছি। আলোচনায় আমি খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ব্লগে তো আর সেটি সম্ভব হয় না। সবাই কত দ্রুত লেখে! লেখার অভ্যাস না থাকায় জীবনে অনেক সাফার করেছি। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

দাসত্ব: অন দ্য স্ট্রোক নক করেছেন।

ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে মারমার কাটকাট হয়ে গেলেও ঈশ্বরকে নিয়ে কেউ ভাবছে না। আসলে সাহাবীগণ সুপার ফিলোসোফার ছিলেন। তারা নবীজিকে এসব বিষয় নিয়েও জিজ্ঞাসা করেছিলেন।

কোরআনে বলা হয়েছে: “তারা প্রাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে । তাদেরকে বলো প্রাণ সম্পর্কে তাদেরকে অতি অল্প জ্ঞানই দেয়া হয়েছে।”

সবচেয়ে বড় কথা, টাইম মেশিন দিয়ে আলোর চেয়ে দ্রুত বেগে হয়তো চলা যাবে। কিন্তু মানুষ যে বলে ভবিষ্যতে বা অতীতে যাওয়া যাবে, এটা তো হাস্যকর। আলো তো কেবল ইমেজ ক্যারি করে, থ্রিডি কিছু না।

এই ধরনের বিষয়ই তো অমীমাংসিত। অথচ মানুষ খুব সহজেই সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেলে– অল অ্যাভোব কিছু নাই।

পোস্টটির সামহোয়্যারইন লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *