‘একজন পরাজিতের বিজয় ভাবনা’ শিরোনামে সম্প্রতি আমি একটা নিবন্ধ লিখেছি। আমাদের মতো গোবেচারা-ছাপোষা-ননসেলিব্রেটিদের সাধারণ লেখাজোকার তুলনায় এটি অনেক বেশি সংখ্যক পাঠক পড়েছেন, লাইক-কমেন্ট-শেয়ার করেছেন। এরই মধ্যে এক শুভানুধ্যায়ী আমার এই ‘বৈপ্লবিক’ লেখাটার ক্রিটিক করে “মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের ‘পরাজিতের বিজয় ভাবনা’ পাঠ ও পর্যালোচনা” শিরোনামে একটা নোট লিখেছেন। উনি ও কয়েকজন পাঠক চাইতেছিলেন, আমি যাতে উত্থাপিত আপত্তিগুলো খণ্ডন করার জন্য সেখানে আলোচনাতে এনগেইজ হই।
আমি তা করি নাই। বরং বলেছি, কেন আমি এনগেইজ হতে চাচ্ছি না তা নিয়ে আলাদা একটা পোস্ট দিবো। লেখার ঝামেলা হতে বাঁচার জন্য এ নিয়ে আজ দুপুরে একটা ভিডিও বক্তব্য রেকর্ড করেছি।
ইসলামপন্থীদের প্রচলিত ধ্যান-ধারণার তুলনায় আমার কথাগুলো যথেষ্ট র্যাডিকেল। সরাসরি বিপরীত উচ্চারণ। খোলামেলা কথা শোনার আগ্রহ ও ধৈর্য থাকলে ১ ঘণ্টা ৬ মিনিটের এই ক্লিপটা চেক করে দেখতে পারেন।
তবে, আল্লাহর ওয়াস্তে ভিডিওটা না দেখে মন্তব্য বা প্রশ্ন করে বসবেন না।
আগ্রহীদের মধ্য থেকে যাদের নেট কানেকশান দুর্বল তাদের জন্য বক্তব্যটার একটা অডিও লিংক দেয়া হলো:
কেন আমি ইসলামপন্থীদের সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক তর্কে এনগেইজ হই না তা নিয়ে বলতে গিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে আমার নিম্নোক্ত অভিযোগ বা আপত্তিসমূহকে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেছি:
১. একাট্টাভাবে পশ্চিমবিরোধী মনোভাব পোষণ ও সভ্যতাসমূহের পারস্পরিক লেনদেনের সম্পর্ককে অস্বীকার করা।
২. বিষয়নিষ্ঠতার পরিবর্তে ঐতিহাসিক পদ্ধতির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা।
৩. মনুষ্যকেন্দ্রিকতার বাস্তবতাকে অস্বীকার করার চেষ্টা।
৪. ষড়যন্ত্র তত্ত্বে গভীর আস্থা।
৫. বিশ্লেষণী ধারার পরিবর্তে ইউরোপীয় ধারার অস্পষ্ট দর্শন নিয়ে পড়ে থাকা।
৬. ধর্ম, দ্বীন, তত্ত্ব, আদর্শ ও ইসলামের মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলা।
৭. রাষ্ট্রতান্ত্রিক, নৃতাত্ত্বিক কিংবা ধর্মীয় তাৎপর্যপূর্ণ জাতীয় দিবসগুলো উদযাপনের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব।
আলোচনাটার লিংক: (পিকচার কোয়ালিটি পুওর কিন্তু সাউন্ড কোয়ালিটি বেটার)
পুরো আলোচনাটা একসাথে এখানে পাবেন। পিকচার কোয়ালিটি বেটার হলেও সাউন্ড কিছুটা কম।
ফেইসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Shahadat Tayeb: স্যার, মানে আপনি বিশ্লেষণী ধারা বা অ্যানালিটিক্যাল ধারাকে নিলেন, আর কন্টিনেন্টাল ধারার কথাটাকে উহ্য রাইখা কোনো একটা পক্ষকে ট্যাগ মারলেন ইউরোপীয় ধারা বইলা। কিন্তু আপনার অ্যানালিটিক্যাল ধারা আর কন্টিনেন্টাল দুইটাই তো ইউরোপীয় এবং বৃহদার্থে পশ্চিমা ধারা। তো কী হইল, আপনিও তো পশ্চিমা ধারাটাই নিলেন। আফটার অল, আপনার লেখার একটা আন্তরিক পর্যালোচনাকে আপনি কইলেন কন্টিনেন্টাল ধারা। কিন্তু তরিকুল হুদা যে লিখা লিখলেন, সেখানে তো উনি এমন কোনো ধারা অনুসরণ করে আপনার ওই লেখার পর্যালোচনা করেন নাই। আপনার বক্তব্যের বিপরীতে তরিকুল হুদার লেখায় যেসব বিশ্লেষণ উঠে এসেছে আপনি তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা বা জবাব না দিয়ে উল্টা উনাকে কন্টিনেন্টাল ধারার বা এরকম একটা ঘরানার ধরে নিয়ে যে রিয়েকশন দিলেন তাকে আবার তকমা দিলেন চিন্তার বিভ্রান্তি বইলা। আপনার কাছে অনুরোধ থাকবে আপনি সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেবেন।
Mohammad Mozammel Hoque: বর্তমান পাশ্চাত্য দর্শনের মধ্যে continental philosophy বা মহাদেশীয় যে ধারা সেটাকে আমি সঠিক মনে করি না। আমি যে ধারার লোক অর্থাৎ analytic trend সেটাও পাশ্চাত্যের একটা ধারা। এর মানে এই নয় যে আমি এনালাইটিক ধারার প্রতিনিধিত্ব করি। আমি চিন্তার প্রতিনিধিত্বে বিশ্বাস করি না। বরং নিজস্ব চিন্তা দিয়ে চলি এবং অন্যদেরকেও সেভাবে চলতে বলি। যেটা আমি আমার আলোচনার মধ্যে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেছি।
আমার আলোচনাটি তরিকুল হুদা ভাইয়ের আলোচনার খণ্ডন নয়। বরং উনার লেখাটা পড়ে আমার মনে হয়েছে আমি মোটাদাগে উপরে উল্লেখিত সাতটা পয়েন্টে উনার সাথে দ্বিমত পোষণ করছি। এই ভিডিও বক্তব্যে আমি সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
এতে যে সাতটা পয়েন্ট আছে তার প্রথম পয়েন্টে আমি ক্লিয়ার করেছি, আমি পাশ্চাত্য বিরোধী নই। আমি সভ্যতাসমূহের পারস্পরিক লেনদেনের উপরে বিশ্বাসী। সেখানে আমি dominant and dormant হিসাবে sixty-fourty ভাগাভাগির একটা ফর্মুলা নিয়ে এসেছি।
সভ্যতার দ্বন্দ্ব আছে, স্বাতন্ত্র্য আছে। একই সাথে আছে পারস্পরিক লেনদেন। আমি একাট্টাভাবে দ্বন্দ্ব ও ষড়যন্ত্রে বিশ্বাসী নই।
অন্যান্য মতাদর্শের সাথে ইসলামের সম্পর্ক নিয়ে আমার নিজস্ব চিন্তা তুলে ধরে আপনাকে একটা রেফারেন্স দিচ্ছি।
বাই দ্যা বাই এ কথাটা বলতে হচ্ছে, আমি এ ধরনের আলোচনাতে বিষয়নিষ্ঠ বা থিমেটিক অ্যাপ্রোচকে সব সময়ে প্রেফার করি। যুক্তি হলো আমার কাছে ultimate tool or apparatus. আমি historical background আর রেফারেন্স নির্ভর আলোচনাতে অভ্যস্ত নই।
২০১৩ সালের শুরুর দিকে আপনার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল। এখন আবারো আপনাকে পেয়ে ভালো লাগছে। ভালো থাকবেন। আমাদের জন্য দোয়া করতে ভুলবেন না যেন।
Mohammad Mozammel Hoque: অন্যান্য মতাদর্শের সাথে সম্পর্কের দিক থেকে ইসলামের ইতিবাচক অনন্যতা
Sabuj Kabir: পুরাটা দেখলাম। শিখলাম নতুন কিছু। তবে একটি বিষয় ভালোভাবে ব্যাখ্যার দাবি রাখে। কুরআনের কথা যে দ্বীন হিসাবে ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। তাই ভিন্ন ধর্ম বা দর্শন বিষয়ে অধ্যয়ন করাকে অনেকেই এ আয়াতের আলোকে নিষিদ্ধ বা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন। এটার ব্যাখ্যা কী হবে?
Mohammad Mozammel Hoque: যে ধরনের অধ্যয়ন ইসলামকে অন্য মতাদর্শের সাথে মিশ্রিত করে ফেলে সে ধরনের অধ্যয়ন নিষিদ্ধ। যেমন করে এখনকার বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে মজহারী ধারার লোকেরা করছে। তারা ইসলামকে আউল-বাউল ও কমিউনিজমের সাথে সমন্বিত করতে চায়।
আর যে অধ্যয়ন ইসলামকে জানার জন্য সহায়তা করে তা করতে ইসলাম উৎসাহ দিয়েছে।
Sabuj Kabir: আরেকটি বিষয় আমার চিন্তায় আসে যে আমরা অনেকে কিছুতে উম্মাহভিত্তিক চিন্তা করি, যে উম্মাহ আমরা গঠনই করতে পারিনি। অনেকে এই উম্মাহর ধারণা থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ভুল দৃষ্টিতে দেখেন। এই বিষয়ে একটা ঘটনার কথা মনে হয় যেটা মুহাম্মদ আসাদের মক্কার পথে পড়েছি। লিবিয়ার সেনোসি আন্দোলনটি ছিল ইতালির বিরুদ্ধে। যাার কারণে পার্শ্ববর্তী মিশরের বৃটিশ ঔপনিবেশিক সরকার তাকে নিরব সমর্থন দিত। কিন্তু তুর্কি খলিফার দাবিতে সেনসি নেতা সাইয়েদ আহমদ তার সহকর্মী শহীদ ওমর মুখতারসহ অনেকের মতের বিপরিতে বৃটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। যার পরিণতিতে সেনোসি আন্দোলন প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। আমার মনে হয় কঠোর জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে কঠোর উম্মাহর ধারণাও এক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। সাম্প্রতিক তুর্কি নির্বাচনের প্রেক্ষিতে অনেকের আচরণ দেখে এটাও মনে হচ্ছে তারা উম্মাহর ধারণাকে মানুষের খাদ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠা থেকেও গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
বিশ্লেষণী ও মহাদেশীয় ধারার দর্শনের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়
কন্টিনেন্টাল ফিলোসফি নাস্তিক্যবাদী কেন
ধর্ম, দর্শন ও ইসলাম
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ…
(আমার মত) যাঁদের পঠনের সুযোগ অবারিত হলেও শ্রবন দর্শনের সুযোগ অতি সীমিত তাঁরা এ মূল্যবান আলোচনা থেকে মাহরুম হতে বাধ্য!
বিযয়টি বিবেচনাযোগ্য হওয়ার দাবী রাখে!