ফেইসবুক স্মরণ করিয়ে দিল। আজ থেকে ঠিক ছয় বছর আগে, গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম, কারো দাফনের আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ করতে। তখন কেউ একজন এই ছবিটি তুলে দিয়েছিল।

ছবিতে আমার সাথে যাকে দেখছেন, তিনি আমার বড় চাচা। জগতের এক অনিবার্য বাস্তবতাকে মেনে ইতোমধ্যে তিনিও আশ্রয় নিয়েছেন মাটির কোলে।

আমিও একদিন থাকব না। নাই হয়ে যাব সুন্দর এই পৃথিবী হতে। কোনো এক প্রত্যুষে, আমিহীন এক নতুন অথচ গতানুগতিক পৃথিবী জেগে উঠবে। কোলাহলমুখর হবে প্রাত্যহিক কাজে। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আর প্রাপ্তির মায়াবী টানে ভুলে যাবে, তাদেরই মতো জীবনের নেশায় এমনি করে মশগুল ছিল অনেকে এখানে।

আমাদের উপস্থিতিকে অগ্রাহ্য করে, তাদের জীবনের তরী এগিয়ে যাবে, নিরন্তর বিস্মৃতির পানে। আমাদেরকে তারা কার্যত অস্বীকার করবে। ভুলে যাবে বেমালুম। যেমন করে আমরাও ভুলে ছিলাম আমাদের অগ্রজদের।

শুধু একান্ত আপন প্রিয়জনদের স্মৃতিতে থাকব কিছুদিন। এরপর অগুণিত আদম সন্তানের মতো নিশ্চিহ্ন হব, হারিয়ে যাব বিস্মৃতির অতলে।

একদিন আসবো এখানে। থেকে যাবো। অথবা, রেখে যাওয়া হবে আমাকে। ফিরে যাব বাবার পাশে, কবরে। আমার সব পূর্বসূরীর মতো একদিন আমারও স্থায়ী ঠিকানা হবে এটি, বাবুনগর গ্রামে মাস্টার বাড়ির মসজিদ ভিটা সংলগ্ন এই পুরান পুকুরের পাড়।

মনে পড়ছে আমারই লেখা প্রিয় একটি কবিতা। একটিমাত্র বাক্যে যা রচিত, সম্পূর্ণ ও সমাপ্ত: “জন্মের চেয়ে বড় বিস্ময়, আর মৃত্যুর চেয়ে বড় সত্য, পৃথিবীতে নাই।”

জীবনের পরিণতি অনিবার্য। তবুও আমরা বেঁচে থাকি। স্বপ্ন দেখি। স্মৃতি আর বিস্তৃতির এক অদ্ভুত দোলাচল, নিরুদ্বেগ বাঁচিয়ে রাখে আমাদের। মৃত্যুর মর্মান্তিক বাস্তবতা বরং আমাদেরকে বেশ খানিকটা বেপরোয়া করে তোলে।

এই মুহূর্তে তাই ভাবছি, যা হবার হবে। হোক। দুশ্চিন্তা করে তো আর, রেহাই পাওয়া যাবে না। শুধু এতটুকু চাই, নিজেকে যেন একটু গুছিয়ে নিতে পারি। যতটুকু সম্ভব, যেন জরুরি কিছু কাজ সম্পন্ন করে যেতে পারি। জোগাড় করে নিতে পারি যেন, কিছুটা পাথেয়।

মালেক চাচা। তিনি ছিলেন আমার বাবার অত্যন্ত প্রিয়। আজ তিনি নাই। তাঁর অতীব শ্রদ্ধেয় বড় ভাই, আমার বাবা, তিনিও নাই বহুদিন। পাশাপাশি তাঁরা সমাহিত।

সময়ের ব্যবধানে, একদিন হব সহযাত্রী তাদের। এ জীবনের পরে নতুন এক জীবনের দীর্ঘ যাত্রা পথে।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *