[ফেসবুক ইনবক্সের প্রশ্নোত্তর নিয়ে স্ট্যাটাস]

প্রশ্ন: “আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহ আপনাকে ও আপনার পরিবারকে ভালো রেখেছেন। যুক্তি-বুদ্ধি, নৈতিকতা, ঈশ্বর নিয়ে আপনার রিসেন্ট পোস্টগুলো ভালো লেগেছে। আপনার সিএসসিএস ওয়েবসাইটের লেখাগুলোও পড়ার চেষ্টা করি মাঝেমধ্যে। আপনার মতো মানুষদের খুব অভাববোধ করি, যাদের সাথে কথা বলতে, প্রশ্ন করতে কোনো দ্বিধা কাজ করে না।

আপনি আপনার লাস্ট ভিডিওতে বলেছেন “God is the embodiment of the laws of nature or the rules of physics.” এ কথার প্রেক্ষিতে আমরা মু’জিযাগুলোকে কোন দৃষ্টিতে দেখতে পারি? আল্লাহ কি নিজেই এসব ক্ষেত্রে তাঁর বানানো নিয়মগুলোর ব্যতিক্রম ঘটিয়েছেন? নাকি, সেগুলোরও কোনো proper explanation থাকতে পারে, যার কিছু কিছু হয়তো আমাদের এখনো অজানা?”

উক্ত প্রশ্নের যে উত্তর সংশ্লিষ্ট পাঠককে আমি দিয়েছি:

প্রকৃতির ঘটনাগুলোকে আমরা কীভাবে জানি? আমরা দেখি, প্রাকৃতিক ঘটনাগুলো একটা সুনির্দিষ্ট কার্যকারণ সম্পর্কে আবদ্ধ। এই দৃষ্টিতে মোজেজা বা অলৌকিক ঘটনাগুলো অসম্ভব। অর্থাৎ একটা সুনির্দিষ্ট কার্যকারণ সম্পর্কের বাইরে কোনো ঘটনা arbitrarily ঘটতে পারে না। কথাটা এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। সমস্যা হলো, এই প্রাকৃতিক কার্যকারণ সম্পর্ক, যেটাকে আমরা বলতে পারি অনিবার্য কার্যকারণ সম্পর্ক, সেটিই বা কীভাবে নির্ধারিত হলো? বা আরো সুনির্দিষ্টভাবে বললে, কে সেটা নির্ধারণ করলো? এই প্রশ্নের একটা সেক্যুলার জবাব হচ্ছে, ‘প্রকৃতি’ সেটা নির্ধারণ করেছে বা সেটা প্রাকৃতিকভাবে অটোমেটিক্যালি হয়েছে। তাহলে বলতে হয়, অতিপ্রাকৃতিক কোনো কিছু হওয়া অসম্ভব।

প্রশ্ন হলো, ‘প্রকৃতি’ কেন এটি এভাবে করেছে, এই প্রশ্নের জবাব কী? জানি, এর কোনো জবাব নাই। কথার কথা, ‘প্রকৃতি’ নামক এই অজ্ঞাত (ও অস্তিত্বহীন?) সত্তা যদি এই নিয়মটি এভাবে না করে অন্যভাবে করতো, তাহলে কারো পক্ষে কি সেটাকে বাধা দেওয়া সম্ভব হতো? কিংবা সেটাকে অনুসরণ না করে অন্য কিছু করা সম্ভব হতো? বা হবে? জানি, এই ধরনের প্রশ্নমালার উত্তর হবে নেতিবাচক। তাহলে, সর্বাবস্থায় আমরা প্রকৃতিকে মেনে চলতে বাধ্য।

এর দ্বিতীয় পর্যায়ের কথা হলো, প্রকৃতির প্রকৃতিকে জানতে গিয়ে বা প্রকৃতিকে প্রকৃতভাবে জানতে গিয়ে মানুষ স্রষ্টা বা ঈশ্বর বিশ্বাসে উপনীত হয়। তারমানে, খোদার উপরে বিশ্বাস হচ্ছে, প্রকৃতিকে অতিক্রম করে তথা প্রকৃতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে অতিপ্রাকৃতিক একটি সত্তায় বিশ্বাস করা। অতএব খোদা যদি থেকে থাকেন এবং তিনিই যদি প্রাকৃতিক নিয়ম প্রতিষ্ঠা করে থাকেন, সেক্ষেত্রে তিনি কি স্বয়ং ওই নিয়মের অধীন? নাকি স্বাধীন?

এর উত্তর হচ্ছে, ঈশ্বরবিশ্বাসের দৃষ্টিতে, প্রকৃতি ঈশ্বরের অধীন। কিন্তু ঈশ্বর প্রকৃতির অধীন নয়। এ পর্যায়ে এসে আপনি বুঝতে পারছেন, ঈশ্বর কখনো কখনো কোনো বিষয় সম্পাদনের জন্য যে সাধারণ নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেছেন, তিনি চাইলে পরম ও সার্বভৌম হিসাবে সেটার ব্যতিক্রমও তিনি ঘটাতে পারেন। খোদা যদি থেকে থাকেন তাহলে তাঁর এ রকম সুপ্রিম অথরিটি এবং পাওয়ার না থাকার কথা নয়।

আমাদের আশেপাশে, বিশেষ করে বস্তু জগতের ঘটনাবলীর ক্ষেত্রে আমরা দেখি, একই ফলাফল আমরা কোনো একটা বিষয়ে একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও পেতে পারি। আবার সংক্ষিপ্ত কোনো ভিন্নতর পদ্ধতিতেও পেতে পারি। যিনি দীর্ঘতর পদ্ধতিতে ওই বিষয়ে ফলাফল পেতে অভ্যস্ত, সংক্ষিপ্ততর বা অন্য পদ্ধতির সাথে পরিচিত নন, তিনি খুব যুক্তিসঙ্গতভাবেই বিশ্বাস করবেন, এই বিষয়টি হতে হলে এভাবেই হতে হবে। এর অন্যথা হতে পারে না। এ ব্যাপারে আপাতত শেষ কথা হলো, বস্তুজগতের অনিবার্য কার্যকরণ পরম্পরা যদি খোদা কর্তৃকই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে তিনি চাইলে সেই চেইন অফ অ্যাকশনকে ভিন্নতর অথবা সংক্ষিপ্ততরও করতে পারেন, বা পারার কথা।

আমরা অর্থাৎ মানুষেরা একটা কাজ সেভাবেই করতে বাধ্য যেভাবে আল্লাহ তায়ালা এটি করার জন্য নিয়ম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এটি নবী-রাসূলদের উপরও প্রযোজ্য। তবে ব্যাপার হচ্ছে, বিশেষ কোনো কাজ করার জন্য আমরা যে ধরনের পদ্ধতিকে সচরাচর অনুসরণ করি, বিশেষ পরিস্থিতিতে নবী-রাসূলদেরকে আল্লাহ তায়ালা সেটা থেকে ভিন্নতর বা সংক্ষিপ্ততর বা বিশেষ কোনো পদ্ধতিতে উক্ত কর্মটি সম্পাদন করার জন্য তৌফিক বা ক্ষমতা অর্পণ করেন।

কেউ যদি মনে করে, বিশেষ কোনো কার্য সেটার জন্য নির্ধারিত কোনো কারণেই ঘটে থাকে, অর্থাৎ সেই নির্দিষ্ট কারণ হলো উক্ত নির্দিষ্ট ঘটনা সংঘটনের জন্য চূড়ান্ত বা অ্যাবসলিউট অথরিটি বা পাওয়ার, তাহলে কথাটা ইসলামের তাওহীদ ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়ায়। বলা বাহুল্য, ইসলামের তাওহীদ ধারণা মোতাবেক, সকল কারণই হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন কারণ বা টেম্পোরারি কজ। কারণ বা কারণসমূহও হচ্ছে মূলত পূর্বতন ঘটনা মাত্র। কোনো কারণের মধ্যে কার্য ঘটনোর কোনো ক্ষমতা নাই। কেননা, সকল ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার। সে জন্য কার্যকারণ সম্পর্কের অনিবার্যতায় বিশ্বাস করা হচ্ছে এক অর্থে নিরীশ্বরবাদী বস্তুবাদে বিশ্বাস করা।

এজন্য, ইমাম আবু হামিদ আল গাজ্জালীর ‘তাহাফাতুল ফালাসিফা’ গ্রন্থে তিনি যে ২০টি বিষয়ে ইবনে সিনা ও আল ফারাবীর সমালোচনা করেছেন তার মধ্যে এটিও একটি। চাইলে সেখান থেকে পড়ে নিতে পারেন। আমি আল গাজ্জালীর অবস্থানের সাথে সম্পূর্ণ একমত। এ বিষয়ে ছাত্রজীবনে পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসাবে একটি নোট তৈরি করেছিলাম। যেটা এখনো কোথাও প্রকাশিত হয়নি। যাহোক, ভালো থাকবেন। সুন্দর একটা প্রশ্ন করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

পাঠকের মন্তব্য: “তাহাফাতুল ফালাসিফা বইটা কিনেছিলাম। কিন্তু বাংলা অনুবাদটা এতই নিরস আর বিক্ষিপ্ত লেগেছিল যে পড়ার আগ্রহ ধরে রাখতে পারিনি। ইংরেজি অনুবাদ সংগ্রহ করার চেষ্টা করবো। অনেক ধন্যবাদ।”

আমার মন্তব্য: “হ্যাঁ, বাংলা অনুবাদ খুবই বিচ্ছিরি, বাজে।”

ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Tariq Al Mozahid: আমি একটু বিরক্ত করব। মুজিজা একটি আরবি শব্দ। এই আরবি শব্দটির ইংরেজি অর্থ কী? We take translation for granted. কিন্তু, translation (অনুবাদ) কি সম্ভব?

আচ্ছা, মুজিজা শব্দের ইংরেজি ট্রান্সলেশন যদি ‘supernatural events’ ধরে নেই। এখন nature (বিশ্ব)-এর মধ্যে supernatural ঘটনা আবার কীভাবে ঘটবে? Supernatural events, by definition, happen outside nature. Every event that happens in nature is natural.

এখন আমার এই লেখা পড়ে যদি কেউ মন্তব্য করে, “তারিক বলেছে মুজিজা বলে কিছু নেই”, তাহলে সেই ব্যক্তি ভয়ানক মূর্খ। এদের সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ব্যাপার হলো, একটা বিষয়কে আমরা কীভাবে দেখছি, তা। কোনো কিছু আমাদের দিক থেকে অতিপ্রাকৃত হওয়াটা ঠিকই আছে। যদিও আল্লাহর দুনিয়ায় অতিপ্রাকৃত বলে কোনো কিছু নাই। সবই প্রকৃতিসঙ্গত। কোনোটা সচরাচর প্রকৃতিসঙ্গত বা usual sense-এ natural, কোনোটা ব্যতিক্রমী বিরল প্রকৃতিসঙ্গত তথা naturally unusual or rare। যেমন– কম জানা লোকটির কাছে যে বিষয়টা গায়েব, বাতেন তথা অদৃশ্যের খবর, সে বিষয়টাই বেশি জানা কারো কাছে জ্ঞাত বা জাহের।

Meah Imtiaz Zulkarnain: তাহাফাতুল ফালাসিফার ইংলিশ ট্রান্সলেশন কী নামে পাওয়া যায়? এটা কি বাংলাদেশের মার্কেটে পাওয়া যাবে?

Nure Elahi Shafat: বাংলায় আছে ‘ইমাম গাযালীর জীবন চিত্র ও দর্শন’ নামে। ইংরেজিতে আছে ‘The incoherence’ নামে।

আনারুল ইসলাম: দুইজনের অনুবাদ আছে তাহাফাতুল ফালাসিফার। The Incoherence of the Philosophers নামে। প্রথমজন Sabih Ahmed Kamali ও দ্বিতীয়জন Michael E. Marmura। মারমুরার অনুবাদ আরবি টেক্সটসহ প্যারেলেল অনুবাদ, অর্থাৎ ডানে আরবি, বামে ইংরেজি। কামালি সাহেবের অনুবাদটাই পরিস্কার, ঝরঝরে।

আনারুল ইসলাম: মুজেজা, ধর্মতত্ত্বে বিশ্বাসের উপর ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। কারণ প্রমাণ করতে গেলেই বস্তুগত প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনে এনে প্রমাণ করতে হবে, যেখানে সে নিজেই অপ্রাকৃতিক সেখানে প্রাকৃতিক প্রমাণ করতে হবে কেন ? আর সেটা আদৌ কি সম্ভব? আর গাজ্জালীর জবাবে ইবনে রুশদ যে জবাব দিয়েছেন সেটা সম্পর্কে আপনার মতামত/অবস্থান কী? যেহেতু আপনি বলেছেন এ প্রসঙ্গে গাজ্জালীকে সমর্থন করেছেন। আর মুজেজা নিয়ে হিউমের গোঁজামিল নিয়েও কিছু বলুন।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বস্তুগত প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যাখ্যা ইসলাম এভাবে দিয়ে থাকে যে এসব বস্তুগত প্রাকৃতিক নিয়ম স্রষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত বা নির্ধারিত। যিনি এক ধরনের একটা নিয়ম দিলেন তিনি চাইলে একই বিষয়ে ভিন্নতর একটা নিয়মও দিতে পারেন। যার ঊর্ধ্বতন কোনো সত্তা নাই, তিনি একটা বিষয়কে যেভাবে করেছেন, সেই বিষয়টির জন্য সেটিই হচ্ছে নিয়ম। আমাদের জন্যই নিয়ম প্রযোজ্য। স্রষ্টার জন্য নিয়ম কথাটাই প্রযোজ্য নয়। এটি এই অর্থে যে তাঁর পক্ষ থেকে কোনো অনিয়ম হওয়া অসম্ভব। তিনি যেটা বলেন সেটাই কৃত হয়ে যায় এবং সেটাই নিয়ম। অতএব, তিনি চাইলে কোনো বিষয়ে কাউকে কোনো কিছু সম্পন্ন করার জন্য কখনো কখনো বিশেষ ক্ষমতা দিতে পারেন। ব্যাপারটা খুব পরিষ্কার। সেজন্য এখানে কার্যকারণ নিয়ে আল গাজ্জালী, ইবনে রুশদ এবং হিউমের তুলনামূলক আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক। আমার কথাটা আমি স্ট্যাটাসেও বলেছি, এখানেও আবার সংক্ষেপে পরিষ্কার করে বললাম।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কেউ মুজিজাকে অসম্ভব মনে করার কারণে আল্লাহর অস্তিত্বে অবিশ্বাসী হতে পারেন। কিন্তু কেউ যদি আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী হয় তাহলে তার পক্ষে মুজিযা বা অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার সম্ভাব্যতাকে অস্বীকার করা অযৌক্তিক।

যারা অতিপ্রাকৃতিক ঘটনাকে অস্বীকার করেন তারা ভুল করছেন। নিজের করা অংকের মধ্যে রয়ে যাওয়া ভুলটা বার বার চেক করার পরও যেমন চোখে পড়ে না, তেমনি করে তারা ভুলের মধ্যে আছেন। এ ধরনের ভুল অন্য কেউ দেখিয়ে দিলে তখন তারা বুঝতে পারেন যে ভুলটা কোন জায়গায় ছিল।

এ ধরনের একজন প্রকৃতিবাদী-নিরীশ্বরবাদীর ভুলটা কোন জায়গায় সেটা আমি দেখিয়ে দিচ্ছি। যেটাকে তিনি নিতান্তই স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক বলে মনে করছেন সেটি তিনি যেভাবে জানেন, দেখেছেন ও অভিজ্ঞতায় পেয়েছেন সেভাবেই কেন হলো বা হয়েছে বা হচ্ছে? স্ববিরোধী কিংবা চক্রাকার কুযুক্তির বাইরে এর যুক্তিসঙ্গত কী ব্যাখ্যা উনার কাছে আছে বা থাকতে পারে?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: “ইসলাম ধর্মে অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলো সব সত্য। কিন্তু অন্য ধর্মে অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলো সব মিথ্যা!! Hypocrisy much” – এরকম একটা স্ট্যাটাস এইমাত্র চোখে পড়লো।

আচ্ছা কেউ যদি অন্য ধর্মকে মিথ্যা মনে করে, তাহলে সেই ধর্মে বর্ণিত অতিপ্রাকৃতিক ঘটনাকে কেন সে সত্য মনে করবে? কারো ধর্মবিশ্বাস যদি অতিপ্রাকৃত ঘটনানির্ভর হয়, সেটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাপার। আমার ধর্মবিশ্বাস নিছকই যুক্তি-বুদ্ধির ব্যাপার। আমার কাছে ধর্মবিশ্বাস সত্য হওয়ার কারণে অতিপ্রাকৃত ঘটনায় বিশ্বাস। অতিপ্রাকৃত ঘটনায় বিশ্বাস করার কারণে ধর্মবিশ্বাস– ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়।

এ ব্যাপারে দ্বিতীয় কথা হলো, একই সাথে কেউ কি সব ধর্মকে সঠিকভাবে বা সমভাবে সঠিক মনে করতে পারে? কেউ যদি এমনটা করে বা বলে তিনি এক ধরনের চিন্তা বিভ্রাটের শিকার হয়েছেন বলতে হবে। এই ধরনের চিন্তাগত ভুলকে বলা হয় relativist fallacy। কেউ যদি বলে ২+২ = ৪ এটাও ঠিক, একই সাথে ২+২ = ৬ বা ৮ এটাও ঠিক, তাহলে তিনি এই ধরনের চিন্তাগত ভুলের মধ্যে আছেন।

জগৎ ও জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্ম বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা কেন বলে? বা ধর্মীয় বিষয়গুলোর মধ্যে ঐক্য নাই কেন? এ ধরনের প্রশ্ন যারা করেন তারা ভুলের মধ্যে আছেন। কেননা মূল্য নিরপেক্ষ নয় এমন কোনো বিষয় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত বিষয়গুলোর মতো সুনির্দিষ্ট হবে না, এটাই তো স্বাভাবিক।

এই লেখাগুলো যে লেখা, এ কথাটা যতুটুকু সঠিক ও মতবিরোধের ঊর্ধ্বে, এই লেখাগুলো এভাবে লেখা ঠিক কিনা, সেই বিষয়টা নির্ধারণ করতে গেলে দেখা যাবে এই মতৈক্য আর থাকছে না এবং নানা ধরনের মতবিরোধ তৈরি হবে। কেউ বলবে এভাবে লেখাটা ভালো, কেউ বলবে খারাপ, কেউ বলবে বেশি ভালো, কেউ বলবে বেশি খারাপ, কেউ বলবে কম খারাপ, কেউ বলবে বুঝতে পারছি না, ইত্যাদি।

মেটাফিজিক্স, এপিস্টেমোলজি, এথিকস এবং লজিক যারা বুঝে না, এক কথায় যারা ফিলোসোফি ততটা ভালো করে বুঝে না, সাধারণত তারাই এ ধরনের চিন্তাগত বিভ্রান্তিতে ভুগতে থাকেন।

লেখাটির ফেসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *