গত আট বছর ধরে আমি এই কথা দিয়ে বানানো কভার ফটো লাগিয়ে রেখেছি ফেইসবুকে আমার মূল একাউন্টের ওয়ালে। এই কথার ফলোআপ হিসেবে কভার ফটোতে যা নাই তা হলো—

সব প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক বা সঠিক নয়। যেমন, ভাত খাওয়ার সময়ে কেউ যদি গান গাওয়ার কথা বলে সেটা অপ্রাসঙ্গিক। কারণ, ভাত আর গান সমার্থক বা প্রাসঙ্গিক কিছু নয়।

আবার কেউ যদি কাউকে জিজ্ঞাসা করে, “কোন রং সঠিক অর্থে ভালো? নীল, নাকি গোলাপী?” প্রশ্নটাই ভুল প্রশ্ন। কেননা, রং সঠিক বা ভুল হয় না। এ ব্যাপারে সঠিক প্রশ্ন হতে পারে, “কোন রংটি আপনার পছন্দ?” এমনকি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে নীল ও গোলাপীর কোনোটিই ততটা পছন্দ নাও হতে পারে।

কেউ প্রশ্ন করতেই পারে, ‍“বলেন, নীল রংয়ের ঘ্রাণ কেমন?” অথচ, রংয়ের কোনো ঘ্রাণ হয় না।

প্রশ্ন করার অধিকার বা সুযোগের অপব্যবহার করে কেউ যদি ইনটেনশনালি এ ধরনের প্রশ্ন করতে থাকে তাকে দুয়েক কথা বলার পরে এ নিয়ে তার সাথে আর এনগেইজ না হওয়াই ভালো। এরপরও কেউ জোর করে তার অযৌক্তিক প্রশ্নের উত্তর দাবি করলে সম্ভাব্য কোনো উপায়ে তাকে দমানো বা থামানোই উচিত।

কেউ যদি প্রশ্ন করে, ‘আমি কি বেঁচে আছি?’ – এটি সেলফ-ডিফিটিং প্রশ্ন। কারণ, বেঁচে না থাকলে কেউ কথা বলতে পারে না। এ ধরনের প্রশ্নকর্তাকে পারলে একটা কষে থাপ্পড় মেরে বুঝিয়ে দিতে হবে, সে বেঁচে আছে বলেই থাপ্পড় খেয়ে ব্যাথা পাইছে।

হ্যাঁ, প্রথমত সব প্রশ্নকেই নিতে হবে। কিন্তু, প্রশ্নকর্তার মনে থাকতে হবে, সব প্রশ্ন সঠিক প্রশ্ন নয়। সব প্রশ্ন স্থান, কাল, পাত্র ও জরুরুত বিবেচনায় প্রাসঙ্গিক নয়। যার কাছে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে, তার দায়িত্ব হলো, কেন প্রশ্নটি ভুল বা অপ্রাসঙ্গিক, সময় ও সুযোগ থাকলে এবং উপযুক্ত মনে করলে তা যথাসাধ্য বুঝিয়ে দেয়া।

এবার আসেন, আলোচনার মূল অংশে।

কতটুকু বুঝানো হলে পর আমরা বুঝবো, হ্যাঁ সঠিকভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে?

এই প্রশ্নের উত্তর যদি হয়, ‘না, কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ বা সীমা নির্ধারণ করা যাবে না।’ তাহলে তো উত্তরদাতাকে বিষয়ের গোড়া থেকে প্রত্যেক প্রশ্নকর্তাকে সব কিছু পড়িয়ে, শুনিয়ে আগায়া নিয়ে আসতে হবে, যে কোনো অবুঝ বা কম বুঝদার লোককেও সঠিক বুঝজ্ঞান গিলিয়ে হজম করিয়ে দিতে হবে।

এরপরও যে প্রত্যেক প্রশ্নকর্তা সঠিক বুঝজ্ঞান লাভ করতে পারবে, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? সবার মেধা কি সমান?

এবার আমাকে বলেন, আমার ফেইসবুক টাইমলাইন পড়নেওয়ালাদের কতটুকু বুঝালে পর লেখনেওয়ালা হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন সুসম্পন্ন হয়েছে বলে মনে করা যাবে? যারা কার্টেসি বুঝে না, যারা ঔদ্ধত ও বেয়াদপ, তাদেরকে কি শেষ পর্যন্ত টলারেট করে যেতে হবে?

কথাটা পরিষ্কার।

আমি তো আনপড়া, হাফপড়াদের জন্য লিখি না। তবে যাদেরকে পড়ালেখা জানা বলে মনে করি, মাঝে মাঝে গভীর হতাশার সাথে লক্ষ করি, তারাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বুদ্ধি-বিকলাঙ্গের মতো উদ্ভট আচরণ করে। অনেক উচ্চশিক্ষিত লোকেরাও দেখেছি, ক্রিটিকেল থিংকিং এবং ফ্রি স্পিচের সঠিক তাৎপর্য ও মানে বুঝে না।

সেজন্যই সবসময়ে বলি, বুদ্ধিবৃত্তি হলো একটা চর্চার ব্যাপার। শ্রদ্ধেয় বদরুল আহসান cross talks-এ একবার লিখেছিলেন, (formal) education is certified ignorance। শুধু এই সাব-এডিটরিয়ালটার ওপর একবার আমরা সিরিয়াস আলোচনা করেছিলাম। চবি কলাভবন ১০২ নং কক্ষে।

মাঝে মাঝে আমি ডি-মটিভেশনাল কথাবার্তা বলি। লিখি। ডি-মটিভেশনাল বললাম এজন্য যে, মটিভেশনাল স্পিকাররা সাধারণত যে ধরনের কথাবার্তা বলেন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমার কথা তার সম্পূর্ণ উল্টা ধরনের হয়ে থাকে। সাধারণত।

এ ধরনের একটা লেখা হলো “আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে শুধুমাত্র ভালো মানুষদের সাথে”।

ছোট্ট লেখা। পড়বেন। পড়লে দেখবেন সেখানে এই কথাটা আছে: “তাই, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সৎবুদ্ধি ও কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে তোমার করণীয় হলো, ক্ষমতা থাকলে দুষ্ট প্রকৃতির অবুঝ লোকদেরকে থামিয়ে দেয়া বা কোণঠাসা করে রাখা। না পারলে, তাদেরকে সর্বতোভাবে এড়িয়ে চলা। এমনকি তারা যদি তোমার কাছের মানুষও হয়ে থাকে।”

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Md Emad Uddin: আল্লাহ হেদায়াত দান করুন

Mohammad Mozammel Hoque: সবাইকে।

Md Emad Uddin: জি ভাই

Md Emad Uddin: জাতীকে কঠিন রুগে পাইছে..

Muhammad Ishrak: স্যার, এখন ভদ্রতার আলখেল্লা পড়া এই লোক দেখেন তলেতলে চবি ছাত্রলীগকে দিয়ে আপনাকে নাজেহাল করার চক্রান্ত করতেছে। রাজশাহীর প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক মোবাশ্বের রাজের ওখানে যেয়ে ও এবং ওর সাঙ্গপাঙ্গরা আফসোসও করেছে ছাত্রলীগ কেন এখনও আপনাকে উত্তম মধ্যম দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে নাই। সামনে যদি ছাত্রলীগকে দিয়ে জামাত-শিবির আপনার উপর হামলা করায় আমি অবাক হব না।

Muhammad Ishrak: আর এই হইল আপনাকে গুন্ডা বলার প্রমাণ।

Mohammad Mozammel Hoque: তুমি এইগুলো কৈত্থেকে পাও …! এরা আমাকে চিনে নাই। তবে ওদের বাপেরা আমাকে চিনে। আল্লাহ তায়ালা, আলহামদুলিল্লাহ আমাকে ভয়-ডর কমই দিছেন। আমি একাই অনেক কিছু, এগেইন, আল্লাহর রহমতে।

Md Emad Uddin: কার সাথে?

Mohammad Mozammel Hoque: Md Emad Uddin, ‌‘কার সাথে’ কথাটা বুঝি নাই। কে, কার সাথে, কী বিষয়ে? কী প্রসঙ্গে? খুব সংক্ষেপে বলবেন।

Muhammad Ishrak: আমি কিছু সিলেক্টেড জিনিসপাতি ফলো করি। এতে মোটামুটি পুরা জামাতি স্পেক্ট্রাম আমার নখদর্পণে থাকে। নির্ঝর থেকে শুরু করে গান্ডু পর্যন্ত। দিনে বিশ মিনিটই এনাফ।

Mohammad Mozammel Hoque: ও আল্লাহ, তোমার এত এপারাটাস …! তুমি স্ক্রিনশট না দিলে তো বিশ্বাসই করতাম না ….! এরা এই পর্যায়ের নীচু …! ছি ছি ছি …!

Md Emad Uddin: Mohammad Mozammel Hoque, বলছি কে আপনাকে চেনে না, আর কার বাপে আপনাকে চিনে.?

Muhammad Ishrak: আমি আসলে ফলো করি বোঝার জন্য। ইচ্ছা আছে এই গিনিপিগ ঘাটাঘাটি করাই প্রফেশন বানাবো। কাজেই টাইমটা পুরা লস যায় তেমনটাও না। হা হা।

Mohammad Mozammel Hoque: Md Emad Uddin, ও তাই? এখনকার যেসব ছেলেরা ছাত্রশিবির করে তাদের বাপেরা বয়সে আমার সমতুল্য। তাই তাদের বাপেরা যদি তখনকার সময় শিবিরের দায়িত্বশীল হয়ে থাকেন, তাহলে খুব সম্ভবত চট্টগ্র্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালনকারী অন্যতম দায়িত্বশীল হিসেবে আমাকে চিনবেন। আমি সেইটা বুঝিয়েছি।

Md Emad Uddin: Mohammad Mozammel Hoque, আপনি কি আগে ছাত্রশিবির করতেন?

Md Emad Uddin: ও আচ্ছা বুজেছি।

Muhammad Ishrak: আহারে বেচারা। কই সেই তেজস্বী জেহাদী জজবাত? এত মিষ্টি কথা কেন হে, গান্ডু? আসল চেহারা তো বাহির হয়েই গেছে। ভন্ডামী করে আর লাভ কি? ডাইরেক্ট গালিগালাজ শুরু করলেও এখন আর কোন লস নাই। ‍“আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দিন” না বলে যে গালিটা মনে মনে দিতে চাচ্ছেন ঐটাই দেন, মনটা হালকা হোক।

Mohammad Mozammel Hoque: Md Emad Uddin, হ্যাঁ, সর্বশেষ দায়িত্ব ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের বায়তুলমাল সম্পাদক। ১৯৯১ সালে। এর আগে ছিলাম ‌‘সংগ্রামী ছাত্র ঐক্যে’র আহ্বয়াক। শিবিরের সমর্থনে ও সংগ্রামী ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে আন্দোলন করে আমরা বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো সিনেটের প্যানেল থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন ভিসিকে অপসারণে সরকারকে বাধ্য করেছিলাম। এই আন্দোলন করতে গিয়ে আমি এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় হতে বহিষ্কার হয়েছিলাম। এর পর পরই আমি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। ১৯৯৩ সালে।

Laila Arejuman: ‌‘সরল কথা’র এই রূপ দেখে ভালোই হলো, এদের চিনতে একটু দেরি হয়েছিলো।

Mostafa Nur: কথা বলতে না দেয়ার জন্যে দু’টি যুক্তি তুলে আনা হয়।

(১) এই কাজটি অমুক মহান নেতার নির্দেশে হয়েছে, ফলে কোনো সমালোচনা করা যাবে না। অথবা মহান নেতার পরিবারের কাজ, সদস্যের কাজ, অথবা সরকারের অমুকের কাজ; প্রশ্ন তোলা নিষেধ। প্রয়োজনে আইন আছে। তুমি আইনের ফাঁদে পড়ে যাবে।

(২) এটা ধর্মীয় গুরুর ইচ্ছায় ঘটছে। কথা বলা যাবে না। বিতর্ক নিষিদ্ধ। কেননা, বিশ্বাসে নাকি মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।

তারপরও মানুষকে চুপ করিয়ে দিতে চলে নানান হুকুমত। নানান ছল-বাহানার মহড়া। তারপরও মানুষ কথা বলে, প্রশ্ন তোলে। জানতে চায়। সময় তার স্বাক্ষর বহন করে। সময় বড় বেয়াড়া!

আমরা কথা বলতে চাই। আমাদের কথা বলতে দিতে হবে। চাই প্রশ্ন করার অধিকার। এইটুকু হাছিল করতে পৃথিবীর মাটি রক্তে সিক্ত হয়েছে অবিরাম। আমাদের এই ভূখণ্ডেও জ্বলেছে ইতিহাসের নানান মোহানায় নানান প্রজাতির দুষ্ট দানবদের বর্বরতম জিঘাংসার দাবানল! দাঁতাল কামড় বসিয়েছে হাজার বছর যাবৎ। আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস আছে। ঐতিহ্যে আমরা ভরপুর। সংগ্রামে আমরা অতুলনীয়। গৌরবে আমাদের হিমালয় ছুঁয়ে অট্টহাসি দেয়ার মতো দিকপালগণ আছেন। কিন্তু এখন যত্তসব হতাশাবাদিতার ভূত-পেত্নিরা আছর করে বসেছে এই দোআঁশ ধূসর পলিমাটির বদ্বীপে।

একটি সুনামীর আহ্বানকারী রাত্রের মতো ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমেছে সর্বময় সক্ষমতার দেয়াল উপচে। লুটেরা লুম্পেনের দল আজো তিরষ্কারের ভাষায় কান দেয় না। তাদের জন্যে বুঝি খোদার গজব নেমে আসার প্রার্থনা অমূলক ঠেকছে না হত-বঞ্ছিত নিপীড়িত আবাল, বৃদ্ধ বনিতার হৃদয়িক উচ্চরণে। আমি কী করে নিষেধ করি! যখন কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা জারী থাকে। পথ চলায় থাকে মৃত্যুঝুঁকি। প্রশ্ন করায় থাকে গুম হয়ে যাওয়ার মানুষদের ঝুলন্ত জীবন, ডুবন্ত ভরসার টোপ! যে কোনো একটি ‍ছুঁই ছুঁই করে কোনোটিই ছোঁয়া হয় না যখন। ঠিক তখনো— আমরা কথা বলতে চাই। আমরা প্রশ্ন করতে চাই বলে অধিকারের আওয়াজ ওঠে মৃতপুরীর অন্দর মহল কাঁপিয়ে!

Farhan Rahman: স‍্যার, আপনি সাবধানে থাকবেন, বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে আপনার পোস্ট স্ক্রিনশট নিয়ে সিন্ডিকেট পোস্ট হচ্ছে বিষয়টা এলার্মিং, আল্লাহ আপনাকে সহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন, আমীন।

Mohammad Mozammel Hoque: মৌচাকে ঢিল পড়ার মতো অবস্থা। দেখা যাক। আল্লাহ ভরসা।

Farhan Rahman: আল্লাহ ভরসা

Aman Abduhu: বাঙালি ইন জেনারেল মূর্খ, উগ্র এবং দলবদ্ধ বীর। এদের মাঝে আপনার জন্য ভালো কোনো পরিণতি বা ভবিষ্যৎ নাই বলেই ধারণা করি।

Md Mahdi Hasan: ধারণাটি ভুল। উনার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে। নীরবে উনার লেখা পড়ে অনেকেই প্রভাবিত হয়েছে এবং হচ্ছে। আমি মনে করি উনার কষ্ট সার্থক।

Md Mahdi Hasan: ‘… একবার আমরা সিরিয়াস আলোচনা করেছিলাম।’ ওই আলোচনাটি রেকর্ড করা নেই?

Mohammad Mozammel Hoque: এটি ডেইলি স্টারের লেখা। প্রতি শুক্রবারে একটা sub-editorial বের হতো cross talks শিরোনামে। তেমনি এক পর্বের শিরোনাম ছিল education is certified ignorance। ইংরেজি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকসহ আমরা পুরো এডিটোরিয়ালটা লাইন বাই লাইন পড়েছি এবং আলোচনা করেছি। তবে সেটার কোনো রেকর্ড নাই। ঘটনাটা ৬/৭ বছর আগের।

Sohel Rana: Assalam. Please keep on it! You may never actually know how many of us get inspired from the works you are doing. Jazak Allah.

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *