[আমার চিন্তাধারা]
আমার সম্পর্কে যারা জানেন বলে মনে করেন, অথচ জানেন না সঠিকভাবে, অথবা যারা আমাকে ভুল বুঝছেন তাদেরকে অনুরোধ করবো, বিগত প্রায় দশ বছরে লেখা আমার সাত শ’র বেশি আর্টিকেল হতে অন্তত এই কয়টি লেখা পড়বেন; অথবা পুনর্পাঠ করবেন।
১. ইসলামী শরীয়াহ বাস্তবায়নে ক্রমধারার অপরিহার্যতা
২. ইসলামী মতাদর্শের আলোকে সামাজিক আন্দোলন
৩. অন্যান্য মতাদর্শের সাথে সম্পর্কের দিক থেকে ইসলামের ইতিবাচক অনন্যতা
[কাদিয়ানী প্রসঙ্গ]
আচ্ছা, আপনার কী ধারণা, কাদিয়ানীদের আমি অমুসলিম বলে মনে করি?
না, আমি তা মনে করি না। আসলে আমি জানি না, তারা মুসলিম কিনা। হোক তারা মুসলিম বা অমুসলিম, তাতে আমার কিছু আসে যায় না।
মন্দগুলোকে বাদ দিলে ভালোটা পেয়ে যাবো, আপাতদৃষ্টিতে এই পন্থাকে নির্দোষ বা কার্যকরী বলে মনে হয়। সেজন্য আমরা কখনো কখনো কারা কারা বাতিল তা নির্ণয়ে উঠেপড়ে লাগি। প্রকৃতপক্ষে এটি একটা ভুল পদ্ধতি। আল্টিমেইটলি এটি এক ধরনের সংশয়বাদী open-ended class বা infinite regress-এ আমাদেরকে ঠেলে দেয়।
সে জন্য আমার বিশ্বাসের ভিত্তিকে আমি দাঁড় করিয়েছি পজিটিভ চিন্তার উপর। আমি দায়িত্ব নিয়েছি শুধু আমার বিশ্বাসের নিশ্চয়তা ও দাবি ঘোষণার।
হ্যাঁ, আমি মুসলিম। ইসলাম আমার পরিচয়। আমি যা কিছু বলি তা ইসলামের ভিতর থেকে অকাট্য যুক্তি দিয়েই বলি। আমার লেখাগুলো পড়লে আপনি তা বুঝতে পারবেন। আমার রেফারেন্সগুলো এতটাই অকাট্য ও সুপরিচিত যে সেগুলোকে রেফারন্স হিসেবে হাজির করতে হয় না।
[শিয়াদের প্রসঙ্গে]
আকীদাগত দিক থেকে যদি বলেন, কাদিয়ানীদের তুলনায় শিয়াদের আকীদা, ইসনা আশারিয়াদেরকে মূল ফেরকা ধরলে, কম আপত্তিজনক নয়। কাদিয়ানীরা মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে ইমাম মাহদী হিসেবে মানে। ইমাম মাহদী হলেন বা হবেন ছায়া নবী। সে হিসেবে তারা মীর্জা গোলাম আমহদ কাদিয়ানীকে নবী মানে। তার পরবর্তী লিডারদেকে তারা খলিফা হিসেবে মানে।
লক্ষ করলে দেখবেন, শিয়ারা তাদের ইমামদেরকে অঘোষিতভাবে নবী বলে মনে করে।
শীয়াদের মতে ইমামগণ ইমাম নিযুক্ত হন আল্লাহর ইচ্ছায়। জনগণের মতামতের ভিত্তিতে নয়। তারা কখনো ভুল করতে পারেন না। ইমামরা সরাসরি আল্লাহ তায়ালার গাইডেন্সে পরিচালিত হন। ইমামদেরকে মাসুম মনে করা এবং কোরআন ও তাদের হাদীসের গ্রন্থগুলোকে তাদের ইমামদের ব্যাখ্যা ও অনুমোদনের আলোকেই বিবেচনাযোগ্য মনে করার মাধ্যমে কার্যত তারা ইমামদেরকে নবীর মর্যাদা দেয়।
কাদিয়ানী ও শিয়ারা হুবহু সেই কোরআনকেই পড়ে, মানে এবং অনুসরণ করে, যেই কোরআনকে আমরাও পড়ি, মানি এবং অনুসরণ করি।
মওদূদীর বই না পড়ে যারা তথাকথিত মওদূদীবাদ বা মওদূদী ফেতনার বিরুদ্ধে ‘জেহাদরত’, আপনিও কাদিয়ানী আর শীয়াদের ব্যাপারে তেমন কিসিমের জেহাদী ভূমিকায় লিপ্ত কিনা, ভেবে দেখবেন।
[মাজারপন্থীদের সম্বন্ধে]
এরপরও যারা কাদিয়ানী ও শিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার জন্য জেদ ধরবেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আপনি বা আপনারা কি পারবেন, যাদেরকে আপনি বা আপনারা মাজারপুজারী হিসেবে দিনরাত গালি দিয়ে থাকেন, চট্টগ্রামকেন্দ্রিক জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া মাদ্রাসার অনুসারী সেই কড়া সুন্নীদেরকে অমুসলিম ঘোষণার দাবি তুলতে?
শাফায়াতের ব্যাপারে বেরলভী ধারার যে আকীদা, তা কি আপনার দৃষ্টিতে ইসলামসম্মত? অনুমোদনযোগ্য? কোনোভাবে কি একে জায়েযকরণ করা সম্ভব?
সেই জন্যই বলছিলাম, আমি নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবি করতে পারি। ঈমান ও ইসলাম কী, এমন প্রশ্নের উত্তরে হাদীসে জিবরীলের উপর ভিত্তি করে উত্তর দিতে পারি। কিন্তু কাউকে তাকফির করা তথা কাফের ঘোষণার দাবি করতে পারি না।
আপনি শির্ক, কুফর ও বেদাতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন। ঈমান, ইসলাম ও সুন্নাহ সম্পর্কে সচেতন হোন। কিন্তু তাকফির করতে যাবেন না। সে ক্ষেত্রে আমি আপনার সাথে থাকবো না।
পরিশেষে, একটা কথা ওয়ান্স এগেইন ক্লিয়ার এন্ড লাউডলি বলি।
[ভাগ্য ভালো, জন্মেছি পাকিস্তানে; কিন্তু বেড়ে উঠেছি, বসবাস করতে পারছি ধর্মীয় সহনশীলতার দেশ এই বাংলাদেশে। বাড়াতে হবে এর বহুমাত্রিক সামাজিক গাঁথুনি]
আজ যদি স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক না হতাম, আমার ধারণা, এতদিনে আমার ফাঁসিতে ঝোলা সম্পন্ন হয়ে যেতো। অথবা জেলখানায় সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে আমাকে জীবন কাটাতে হতো।
একটা ঘটনার কথা বললেই আমার এই উদ্বেগের কারণ আপনি বুঝতে পারবেন।
কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে ক্লাসে বক্তব্য রাখার কারণে সম্প্রতি এক আইনের অধ্যাপককে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হয়েছে। সেই ভিডিওটি আমি দেখেছি। এটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের ঘটনা। ওই ম্যাডাম ক্ষমা চেয়ে বেঁচেছেন। আমার যে চরিত্র, আমি তো জীবন চলে গেলেও ক্ষমা চাওয়ার লোক নই। আমার কী হতো, তা সহজেই অনুমেয়।
[দ্বীন ও শরীয়াহর পার্থক্য]
আমার কথা পরিষ্কার। ইসলাম বা যে কোনো মতাদর্শকে দেখতে হবে সেটার তত্ত্বগত দিক থেকে। প্রায়োগিক তথা আইনী দিক থেকে কোনো দ্বীন বা জীবনাদর্শকে দেখাটা ভুল পদ্ধতি।
ইসলামে দ্বীন ও শরীয়াহর যে পার্থক্য তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ঈমান ও ইসলামের মতো। এর কোনোটিকে বাদ দিয়ে অপরটি চলতে পারে না। তৎসত্ত্বেও, শরীয়াহর উপর দ্বীনের গুরুত্ব বেশি। ইসলামের চেয়েও ঈমানের গুরুত্ব বেশি।
[ইহুদী নাসারাদের ষড়যন্ত্র তথা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব]
যারা এতকিছু ফেইসবুকে পড়তে চান না, তারা আমার আগ্রহ-বৃত্তের বাইরের লোক। হতে পারেন, তারা ভালো মানুষ। তাতে আমার কিছু আসে যায় না। এই বিরূপ সময়ে ব্লগ, ওয়েবসাইট ও ফেইসবুক, তথা ‘ইহুদী-নাসারাদের’ নানা ধরনের এপারেটাস আমাকে বিপুলভাবে সাহায্য করেছে।
ইন্টারনেট না থাকলে, সোশ্যাল মিডিয়া না থাকলে জোবরা গ্রাম সংলগ্ন মৌজা জঙ্গল পশ্চিম পট্টিতে পড়ে থাকা এই ‘খ্যাপাটে মাস্টার’কে কে চিনতো?
এমনকি, আমার বিশ্ববিদ্যালয়েরই অনেকে আমাকে চিনেছে ব্লগ-ফেইসবুকে আমার লেখা পড়ার মাধ্যমে। আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ মাসউদুল আলমও ‘ইসলামী শরীয়াহ বাস্তবায়নে ক্রমধারার অপরিহার্যতা’ শীর্ষক লেখাটা পড়ে আমার সাথে ডিপার্টমেন্টে দেখা করতে এসেছিলো। সেই থেকে সে আমার সাথে।
আমি যাদের নুন খেয়েছি তাদের গুণ গাইতে লজ্জা পাই না। তারা যারাই হোক না কেন। হ্যাঁ, যেটা ভুল, অন্যায়; সেটা ভুল, অন্যায়। ভুলকে ধামাচাপা দেয়ার পক্ষপাতী আমি নই। সেটা যে-ই করুক না কেন। যেটা অন্যায়, আমি সেটার চিরশত্রু।
[আমি আবেগী, কিন্তু তারচেয়েও বেশি বাস্তববাদী]
পক্ষান্তরে, যা বাস্তব, আমি তা স্বীকার করি। আমি সব সময় বিশ্বাস করি, identification of the problem, is half of the solution। সো, লেটস ফাইন্ড দ্যা প্রবলেম।
ধর্মীয় চরমপন্থা হলো সমকালীন সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান সমস্যা। ধর্মীয় চরমপন্থার কবল থেকে ইসলামকে রক্ষা করতে হবে। একজন ইসলামপন্থী হিসেবে এটি আপনার আমার আমাদের সকলের দায়িত্ব।
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Wise Hikmat: আপনি একশ্রেণীর লোকের ব্যাপারে লিখেছেন যে তারা না পড়েই কারো কারো বিরুদ্বে প্রচারণা চালায়। একই প্রশ্ন আপনাকেও করতে পারি যে আপনি শিয়া এবং কাদিয়ানীদের কি কি লিটারেচার পড়েছেন? শিয়াদের সাথে সুন্নিদের বিরোধ ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই চলে আসছে এবং দুইপক্ষ অনেক অনেক বই লিখেছে যেগুলো গভীর থিওলজিকাল ও ফিলোসোফিকাল ডিসকাশন। কাদিয়ানীদের সাথেও বিরোধ শত বছর হয়ে গেছে এবং তাদের কর্মকান্ড নিয়ে শত বই লেখা হয়েছে, সেই লেখকদের মাঝে আছেন গত শতাব্দীর স্রেষ্ঠ আলেমগণ। কয়টি আপনি পড়েছেন? কাদিয়ানীদের মূল লিটারেচারই বা আপনি কয়টি পড়েছেন? তাদের ইতিহাস এবং কর্মকান্ড সম্পর্কে আপনি কতটুকু অবগত? এই ইস্যুটি এমন যে মুসলিম বিশ্বের সকল অথেন্টিক স্কলাররা একমত। এরকম খুব কম ইস্যু আছে যে ব্যাপারে সমস্ত মুসলিম স্কলাররা এতো ব্যাপকভাবে একমত হতে পারে। এ থেকেই বুঝা যায় এ ইস্যুটি ইসলামের জন্য কতটা মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ। তা আপনি উপলব্দ্বি করতে না পারলেও বিগত শত বছরের সমস্ত বিখ্যাত আলেম ও স্কলাররা উপলব্দ্বি করেছেন। এরকম একটি ইস্যু নিয়ে একজন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল হিসাবে কথা বলতে গেলে যে মিনিমাম একটা স্টাডি করা প্রয়োজন তা কি আপনি করেছেন? আপনার পোস্টটি পড়ে আমার আশংকা হয়েছে যে আপনি তা করেননি। এজন্য কিছু মৌলিক বিষয়ে আপনি সিরিয়াসলি কনফিউজড। শিয়াদের ইমামত আর কাদিয়ানীদের নবুয়াত আপনি এক করে ফেলেছেন। আপনি এই বেসিক পার্থক্যটা বুঝেননি যে শিয়াদের ইমামগণ নিজেরা কেউ ইমামতের দাবি করেনি, কিন্তু কাদিয়ানীদের ফাউন্ডার নিজেই তো নবুয়াত দাবি করেছে! আবার সুন্নিদের অজ্ঞতা, কুশিক্ষা ও কুসংস্কারজনিত শিরক বেদাতকে কাদিয়ানীদের সজ্ঞানে নবুয়াতের দাবির সাথে তুলনা করেছেন! এসব বিষয়ে অনেক পান্ডিত্যপূর্ণ লেখা রয়েছে যা ইলমী, থিওলজি ও ফিলোসফির অনেক জটিল ও গভীর আলোচনায় সমৃদ্ব। কাদিয়ানীদের ব্যাপারে কিরকম পদক্ষেপ নিতে হবে সে ব্যাপারে দ্বিমত আছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করার সুফল কুফল নিয়েও দ্বিমত আছে- তা ঠিক. কিন্তু তাদের কুফরি সম্পর্কে গত একশ বছরে অথেন্টিক কোন আলেম কি দ্বিমত করেছেন? ইসলাম-কুফর নির্ধারণ করার বিষয়ে কত বিতর্ক হয়েছে ইসলামের ইতিহাসে, ব্যাপক লিটারেচার আছে। ভুলক্রমে বা অসৎ উদ্দেশ্যে কেউ কাউকে তাকফির করলে বৃহত্তর উম্মাহ তা সমর্থন করেনি, কোন না কোন আলেম এরকম তাকফীরের বিরুদ্বে সোচ্চার হয়েছেনই, এবং বৃহত্তর উম্মাহ সঠিক সিদ্বান্ত নিয়েছে। শিয়াদের সাথে হাজার বছরের সংঘাত, মারামারি, যুদ্ব সব হয়েছে, তবুও সব শিয়াকে ঢালাওভাবে তাকফির করা হয়নি। অন্তত বেনিফিট অফ ডাউট দেয়া হয়েছে। তাকফিরের বিরুদ্বে প্রায় সকল বিখ্যাত স্কলার কিছু না কিছু লিখেছেন। কিন্তু সমস্ত বিতর্ক আর লিটারেচার এনালাইসিস করেও কাদিয়ানীদেরকে অন্তত বেনিফিট অফ ডাউট দেয়ার মত সাহস কোন অথেন্টিক স্কলার দেখাননি। পুরা উম্মাহ তাদেরকে তাকফির করেছেন- বিষয়টা এতোই অকাট্য প্রামাণ্য ও পরিষ্কার। তাদের ব্যাপারে কেন মুসলিম উম্মাহ এতোটা কঠোর এবং ঐক্যবদ্ধ- তা ভালোভাবে জানার কোন আগ্রহই আপনার টোন থেকে পাওয়া যায়না।আপনার লেখায় ইলমী জ্ঞান বা গবেষণার কোন চিহ্নই পাওয়া যায়না সেটা খুবই দুঃখজনক- যারফলে আপনি কিছু চাইল্ডিশ অনুমান নির্ভর যুক্তি দিয়েছেন। আপনার দ্বারা অনেকেই কনফিউজড এবং প্রভাবিত হতে পারে তাই আশাকরি আপনি এসব বিষয়ে লিখতে গেলে ভালোভাবে গবেষণা করে লিখবেন।
Mohammad Mozammel Hoque: আমার ‘শিশুতোষ’ কথাবার্তায় যাতে লোকেরা বিভ্রান্ত হতে না হয় সেজন্য এখানে বিস্তারিত লিখেছেন। ভালো করেছেন। আপনার ওয়ালেও আপনি এটা পোস্ট করেন। আরো লেখেন। বলেন। প্রচারণা চালান। ক্ষতি কী? করেন।
লেখালেখি বলাবলি করে কাউকে সামাজিকভাবে কোণঠাসা করা, আর আইন করে কাউকে নিষিদ্ধ করা, দুইটা দুই জিনিস। প্রথম ক্ষেত্রে যা চলে, কখনো কখনো তা দ্বিতীয় ক্ষেত্রে চলে না; বা চলা উচিত নয়। পক্ষান্তরে, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে যা চলে তা প্রথম ক্ষেত্র হতে ম্যাচিউরড হয়ে আসতে হবে।
চিরন্তন ও সার্বজনীন মানবিক মূল্যবোধসমূহ ছাড়া মতাদর্শগত কোনো বিষয়কে স্থায়ীভাবে আইন করে চাপিয়ে দেয়ার যে অপচেষ্টা, আমি সেটার চরম বিরোধী।
ভালো থাকেন।
Wise Hikmat: আইন করে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা তো এক ব্যাপার এবং সে ব্যাপারে দ্বিমত আছে তা আমি নিজেই বললাম। আপনিও দ্বিমত করতে পারেন অসুবিধা নাই. কিন্তু আপনি মৌলিক প্রশ্ন অর্থ্যাৎ তারা আদতে অমুসলিম কিনা সেই ব্যাপারেই প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ তারা ব্যক্তিগত ও ফেরকাগত ভাবে অমুসলিম সেই ব্যাপারে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একশ বছরের ইতিহাসে কোন অথেন্টিক ভালো আলেম পাওয়া যাবে না যিনি তাদেরকে অমুসলিম মনে করেননা। এর চাইতে বড় ইজমা আর কি হতে পারে? তাই এব্যাপারে নতুন করে প্রশ্ন তোলা, সন্দেহ সৃষ্টি করা বা দ্বিমত করার জন্য যে শক্তিশালী ইলমী রেফারেন্স, অকাট্য যুক্তি প্রয়োজন তা ইসলামের আক্বিদা ফেকাহ ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান আছে এমন সবাই বুঝবেন। কিন্তু আপনি সেরকম রেফারেন্স বা যুক্তি ছাড়াই এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্রেফ ধারণাবশত কথা বলেছেন। আপনার লেখার সেই দুর্বলতা এবং স্ববিরোধিতার দিকটিই আমি তুলে ধরেছি।
Mohammad Mozammel Hoque: আমি চাচ্ছি কাদিয়ানী, শিয়া, মাজারপূজারী, এমনকি ভিন্নমত পোষণকারী হিসেবে আমাকেও আপনারা ইগনোর করেন। তবে আমার কথাকে ডিসটর্ট যেন করা না হয়। অর্থাৎ আমি যা বলিনি তাই যেন আমার ওপর আরোপ করা না হয়। করলেও আমার কিছু করার নাই। হুজুগে বাংগালী দিয়ে যে কোনো কিছু সম্ভব।
Wise Hikmat: আমি কোথায় আপনার কথা ডিসটর্ট করলাম? আপনি তো স্পষ্ট লিখেছেন:
“আচ্ছা, আপনার কী ধারণা, কাদিয়ানীদের আমি অমুসলিম বলে মনে করি?
না, আমি তা মনে করি না। আসলে আমি জানি না, তারা মুসলিম কিনা। হোক তারা মুসলিম বা অমুসলিম, তাতে আমার কিছু আসে যায় না।”
আপনি স্পষ্টত কাদিয়ানীদের মুসলিম-অমুসলিম হওয়ার বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর বিপরীত অবস্থান নিয়েছেন। অকাট্য দলিল প্রমানের ভিত্তিতে সমগ্র উম্মাহর ইজমা হওয়া একটা বিষয়ে আপনি নিজেকে ইচ্ছাকৃত ধোঁয়াশার মধ্যে নিক্ষেপ করেছে, উম্মাহর সর্বসম্মত সিদ্বান্ত, শিক্ষা, গাইডলাইন উপেক্ষা করেছেন।। কিন্তু তার জন্য আপনি দলিল প্রমান এর ধার ধরেননি। বিষয়টা ভালোভাবে জানার চেষ্টাও করেননি। আপনি বলছেন যে আপনি জানেন না তারা মুসলিম কিনা! না জেনে কিভাবে লিখতে গেলেন? আর জানলেননাই বা কেন- এই বিষয়ে তো স্পষ্ট সিদ্বান্ত রয়েছে। এখানেই আপনার স্ববিরোধিতা- কারণ একই পোস্টে আপনি অন্যদের ব্যাপারে একই অভিযোগ তুলেছেন যে তারা না জেনে এটাসেটা করে.
আবার আপনি বলেছেন যে এতে আপনার কিছু আসে যায়না। তাহলে ইসলামের বা মুসলিম উম্মাহর আর কোন কিছুতেই কি আপনার কিছু আসে যায়? আপনি কি ইসলাম এবং উম্মাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বা সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন যে তাদের একেবারে মৌলিক একটা ইস্যু আপনি কোন কেয়ারই করেন না. ঈমান আক্বীদার ইস্যু যদি আপনার কাছে পাত্তা না পায় তাহলে মুসলিম উম্মাহর আর কি ইস্যু আপনার কাছে পাত্তা পাবে? অথচ আপনার তো জানা থাকার কথা একজন মুসলমানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কি. সেই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসই আপনি গৌণ করে দিলেন, তাহলে মুসলমানদের আর কি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হবে?
দ্বিতীয়ত পাবলিক প্লেসে একজন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল হিসাবে মতামত দিলে সেটা ইগনোর করা যায় কিভাবে? ইগনোর করলে তো সমাধান হয়না। আলাপ আলোচনা তর্ক বিতর্কের মাধমে সমাধান এবং ভুল নিরসনের আশা করা যায়. আর এখনকার সোশ্যাল মিডিয়ার উদ্দেশ্যই তো হলো আলাপ আলোচনার দ্বার উম্মুক্ত করা. সেখানে কিভাবে আপনি ইগনোর করতে বলেন? তাহলে কি আপনি শুধু নিজের সমর্থক তথা জ্বি হুজুরদের উদ্দেশ্যেই লিখে থাকেন?
Mohammad Mozammel Hoque: আচ্ছা। আপনার কথার সাথে আমি একমত না হওয়া সত্ত্বেও আপনার সৌজন্যতাবোধের ব্যাপারে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
কাদিয়ানীরা মুসলমান কিনা সেটা আমি জানি না, এই কথাটা বলার দুইটা কারণ আপাতত মনে পড়ছে:
(১) কোনো কিছু জানার জন্য পক্ষ-বিপক্ষ হতে নেয়া প্রাইমারি সোর্স থেকে যেভাবে জানতে হয় এ ব্যাপারে সেভাবে জানার সুযোগ আমার হয়ে ওঠেনি।
(২) তদুপরি, আমি মনে করি বিষয়টা ধর্মতত্ত্বের দিক থেকে যতটা গুরুত্বপূর্ণ, সামগ্রিকভাবে অর্থাৎ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে বিষয়টা ততটা গুরুত্ব বহন করে না।
এর একটা কারণ হলো, এরা সংখ্যায় অত্যন্ত কম।
দ্বিতীয় কারণ হলো, সংখ্যালঘু ভিন্নমত পোষণকারীদের ব্যাপারে খড়গহস্ত হওয়াটাকে আমি অপছন্দ করি।
এটি আমার সামাজিক বহুত্ববাদ নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আর একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এখানে বিবেচনা করা দরকার। সেটি হলো, আমাদের আলেম উলামারা নিজেদেরকে কাবিল মনে করে শুধু ধর্মীয় ব্যাপারে। এইজন্য কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা, ব্লাসফেমি আইন ইত্যাদি ধরনের নিতান্তই ধর্মীয় ব্যাপারগুলোকে তারা এত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
এইসব আকাবিরেরা মনে করেন না, বৃহত্তর ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক বিষয়ে তাদের কিছু করণীয় আছে এবং এইসব বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সব ব্যাপারগুলোকে সামগ্রিকভাবে দেখা দরকার।
সেজন্যই তারা একদিকে সেক্যুলারিজমের বিরোধিতা করে, অন্যদিকে সেক্যুলার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন নিবেদন করা, দাবি-দাওয়া আদায়ে চুক্তি সমঝোতা ইত্যাদি করে চলে, এসব বিষয়ে খুব উৎসাহী।
এটি মূলত একটি সেক্যুলার মাইন্ডসেটের প্রমাণ। এবার বুঝেন, কারা কার্যত সেক্যুলার!
আমি ফিলসফির লোক। যুক্তি দিয়ে কথা বলি। এই কথাগুলোও যুক্তি দিয়ে বললাম। আশা করি খোলা মনে বোঝার চেষ্টা করবেন।
Abu Hanif: স্যার, এ দেশে ধর্ম নিয়ে এখন যেটা হচ্ছে তা খুবই ভয়ংকর ব্যাপার। কোন দলের ন্যূনতম সমর্থক কী বলল, কী করলো; সেটাকেই পুরো দলের অভিমত বা আইডিওলজি হিসেবে ধরে নেয়া হয়, এবং তাকে সেই দলের দালাল বলে ট্যাগ দেয়া হয়। আমার একটা ধারণা, কাদিয়ানী বা শিয়া মতবাদ নিয়েও আমরা সেই অন্ধ কুঠুরিতে আছি। যেমন কোন অমুসলিম আইএসকে দেখে সেটাকেই ইসলাম মনে করে।
Shahed Raju: কাদিয়ানীদের অমুসলিম মনে না করলে আপনি মুসলিম নন।
Mohammad Mozammel Hoque: তাহলে কী?
Shahed Raju: খিচুড়ি।
Alor Pothik: কাদিয়ানী কাফির। এটা যে বিশ্বাস করবে না সেও কাফির।
Mohammad Mozammel Hoque: যেমন, আমি?
Alor Pothik: ভাইয়া। আমি বলেছি যারা বিশ্বাস করে না যে কাদিয়ানীরা কাফির তারাও কাফির। এতে আপনি কোথায় পড়েন, তা আমার থেকে আপনি ভালো বলতে পারেন তাই না????
Mohammad Abdul Mabud: তাকফির রাসূল (সা) করেছেন। সাহাবারা করেছেন। মুজতাহিদীন ইমামগণ করেছেন। তাকফিরের মূলনীতিগুলো জানতে রুহামা পাবলিকেশনের মুফতি তারেকুজ্জামান লিখিত তাকফিরের মূলনীতি বইটি পড়তে পারেন। তাহলে শিয়া-কাদিয়ানীদের কেন তাকফির করা হয় আর বেরেলভীদের কেন তাকফির করা হয় না বুঝতে পারবেন। তবে তাকফির করা আলিমদের দায়িত্ব। হয় আপনি আলিম হবেন এ বিষয়ে, নাহয় আলিমদের অনুসরণ করবেন। দুয়ের মাঝে পথ নাই।
Mohammad Mozammel Hoque: এখানে ‘তাকফীর করা’ বলতে কথায় কথায় পান থেকে চুন খসলেই মানুষকে কাফের বলার কথা বলা হয়েছে। আপনি বিষয়টা বুঝতেই পারেন নাই।
আল্লাহর রাসূল (সা) কাউকে কাফের বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা কাউকে কাফের বলেছেন, এটা কি কেউ অস্বীকার করেছে?
এখন কেউ যদি কাউকে কাফের বলে সে তো নিজেকে আল্লাহ কিংবা রাসূলের (সা) পর্যায়ে নিয়ে গেল।
এজন্য বলতে হবে, এই কাজটা কুফরের সমতুল্য। নিজেকে মুসলমান দাবি করে এমন কাউকে সরাসরি কাফের বলা যাবে না। বুঝতে পেরেছেন, আশা করি।
Mohammad Abdul Mabud: মুসায়লামাতুল কাযযাবসহ অনেক ভণ্ড নবীদের সাহাবারা তাকফির করেছেন। সাহাবারা আল্লাহ বা নবীর পর্যায়ে চলে যায়নি। এটাকে আল্লাহ ও রাসূলের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া মনে হাস্যকর কথা। মুসলমান দাবি করে এমন কাউকে কাফির বলা যাবে না, এটা যদি উসূল হয়; তবে বলুন কেউ যদি বলে, ক্বুরআনকে সে অবিকৃত মনে করে না কিন্তু সে মুসলিম; তাহলে কি তাকে কাফির বলবেন? কেউ যদি আল্লাহ ও রাসূলকে গালি দেয়, অতঃপর বলে সে মুসলিম; তাকে কি আপনি কাফির বলবেন?
Mohammad Mozammel Hoque: মুসাইলামা কাযযাব কি নিজেকে মুসলমান দাবি করেছিলো? সে কি কোরআনকে মানতো? মুহাম্মদকে (সা) রাসূল ও শেষ নবী হিসেবে মানতো?
কোরআনকে মানা আর কোরআনের কোনো আয়াতের ব্যাখ্যায় দ্বিমত করা, রাসূলকে মানা এবং রাসূলকে কীভাবে মানতে হবে সে সম্পর্কে স্পেসিফিক কোনো বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করা, এগুলো কি এক কথা?
Ibrahim Hossain: ঈমান এবং কুফরী অন্তরের ব্যাপার। আর অন্তর্যামী একমাত্র আল্লাহ। কোনো মানুষের অন্য কোনো মানুষকে কাফের আখ্যা দেয়া চূড়ান্ত ঔদ্ধত্য।
Mohammad Abdul Mabud: এগুলো আপনাদের অজ্ঞাতাপূর্ণ কথা, যার স্বপক্ষে আল্লাহ কোনো আয়াত নাজিল করেননি, আর না আছে রাসূলের বর্ণিত কোনো হাদীস।
Manzurul Karim: মুসাইলামাহ নিজেকে মুসলিম দাবি করত, ইসলামী আযান দিত, নামাজ পড়ত। তার দাবি ছিল:
قال: «أريد أن يشركني محمد معه في النبوه كما أشرك موسى اخيه هارون». فسمعه النبي ، فأمسك عرجوناً صغيراً من الأرض وقال لمسيلمة: والله يا مسيلمة لإن سألتني هذا العرجون ما أعطيتة لك، فخرج مسيلمة ولم يبايع الرسول عليه الصلاة و السلام
মুসাইলামা তার চিঠিতে রাসূলকে লিখেছিল:
ن مسيلمة رسول الله إلى محمد رسول الله: آلا إنى أوتيت الأمر معك فلك نصف الأرض ولي نصفها ولكن قريشاً قومُ يظلمون
Masudul Alam: Manzurul Karim, আপনার এই মন্তব্যটি বিভ্রান্তিকর। মদীনায় আগত প্রতিনিধি দলটি (যে দলের সাথে মুসাইলিমা ছিলো) ইয়ামামায় পৌঁছামাত্রই মুসাইলিমা ইসলাম ত্যাগ করেছিলো বলে সীরাতে ইবনে হিশামে বর্ণিত আছে। সুতরাং সে নিজেকে মুসলিম দাবি করতো বলে যে দাবি আপনি করছেন, সেটি বিভ্রান্তিকর। সে প্রতিদিন ৩ ওয়াক্ত নামাজের প্রচলন করেছিলো, যা কাবার দিকে নয়, বরং যে কোনো দিকে ফিরেই আদায় করা যেতো। দিনের বেলা রোজার পরিবর্তে সে রাতের রোজা চালু করেছিলো। এভাবে আরো অনেক বিধান সে চালু করেছিলো, যেগুলো ইসলামের বিধানগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক।
আপনার মন্তব্যের সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর বিষয় হচ্ছে, “মুসাইলামাহ নিজেকে মুসলিম দাবি করত, ইসলামী আযান দিত, নামাজ পড়ত। তার দাবি ছিল-” বলে যে দুটি এবারত আপনি কোট করেছেন, তা। আরবী না জানা অধিকাংশ বাংলা ভাষাভাষী লোকজন আপনার বর্ণনাভঙ্গি থেকে মনে করবে, আপনি তার মুসলিম দাবি করা, আযান ও নামাজ পড়ার যে দাবি করেছেন, তার পক্ষে এই রেফারেন্সগুলো দিয়েছেন। অথচ, এই এবারতগুলো সেরকম কিছু নয়। বরং আপনি প্রথমে যে রেফারেন্সটি দিয়েছেন, সেটি অনুযায়ী আল্লাহর রাসূল (সা) মুসাইলিমার দাবি মেনে না নেওয়ায়, মুসাইলিমা ইসলাম গ্রহণই করেনি। ফলে নিজেকে মুসলিম দাবি করার প্রসঙ্গই আসে না।
এসব প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলা অনুবাদ না দিয়ে শুধু আরবী এবারত তুলে দেয়াটা উদ্দেশ্যমূলক।
পাঠকদের সুবিধার জন্য আমি এবারতগুলোর অনুবাদ এখানে দিচ্ছি। এগুলো পড়লে যে কেউ বুঝতে পারবেন, মুসাইলিমার মুসলিম দাবি করা, আযান দেয়া বা নামায পড়ার দাবির সাথে এই রেফারেন্স দুটির কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রথম এবারতের অনুবাদ:
মুসাইলামা বললো, “মুসা (আ) যেমন তার ভাই হারুনের সাথে নবুয়তি ভাগাভাগি করে নিয়েছেন, তেমনি আমি মুহাম্মাদের সাথে তার নবুয়তি ভাগাভাগি করে নিতে চাই।” রাসূল (সা) তার এ কথা শুনে মাটি থেকে গাছের ছোট্ট একটি ডাল তুলে নিয়ে মুসাইলিমাকে বললেন— আল্লাহর কসম হে মুসাইলিমা, তুমি আমার কাছে যদি এই ডালের টুকরোটাও চাও, আমি তোমাকে তা দিবো না। এরপর মুসাইলিমা বের হয়ে গেলো এবং রাসূলের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেনি।
দ্বিতীয় এবারতের অনুবাদ:
আল্লাহর রাসূল মুসাইলিমার পক্ষ থেকে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদের প্রতি: আমাকে আপনার নবুয়তের অংশীদার করা হয়েছে। পৃথিবীর অর্ধেক আমার এবং অপর অর্ধেক কুরাইশদের। কিন্তু কোরাইশরা জালেম জাতি।
Mohammad Abdul Mabud: উনি আরবি এবারতটা দিয়েছে আযান, নামাজ ইত্যাদির শুবুতের জন্য না। বরং সেও কাদিয়ানির মত আল্লাহকে আল্লাহ মানত, নবী(সা)-কে নবী মানত শুধু নিজেকে নবী দাবী করেছিল এটা প্রমাণ করতে। আপনার পুরো বক্তব্যটাই অযৌক্তিক হয়ে যায়। পোস্টদাতার সাথে তর্কই হচ্ছে এনিয়ে যে কেউ আল্লাহকে মানে, নবীকে নবী মানলেই তাকে অন্য কারণে তাকফির করা যাবে না এ নিয়ে।
দ্বিতীয়ত আপনি নিজেই বললেন নামাজ চালু করেছিল, রোজা রেখেছিল যেমনটি কাদিয়ানীরা রাখে বিকৃতভাবে। সুতরাং এ থেকেও বুঝা যায় শুধু নামাজ, রোজার দাবী করলেই কেউ মুসলিম হতে পারে না। এগুলো অবিকৃতও রাখতে হবে। এগুলোর মধ্যেও কমিবেশি করলে যেমনটা মুসায়লামাতুল কাজ্জাব করেছিল কাফির হয়ে যাবে, তাকে তাকফির করা হবে, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাবে সামর্থ্য থাকলে, যেভাবে সাইয়িদুনা আবু বকর (রা) করেছিল, যেভাবে সাহাবারা করেছিল, যেভাবে প্রত্যেক যুগের একনিষ্ঠ মুসলিমরা করেছিল। এটাকে আইসিসের মত র্যাডিকেল খাওয়ারিজপনা মনে করা অসুস্থ অশুদ্ধ চিন্তাধারার লক্ষণ।
Masudul Alam: আপনাকে পোস্টদাতা উপরে একটি রিপ্লাই দিয়েছিলেন এ রকম: “মুসাইলামা কাযযাব কি নিজেকে মুসলমান দাবি করেছিলো? সে কি কোরআনকে মানতো? মুহাম্মদকে (সা) রাসূল ও শেষ নবী হিসেবে মানতো?”
এর প্রেক্ষিতে মনজুরুল করীম বলেছেন: “মুসাইলামাহ নিজেকে মুসলিম দাবি করত, ইসলামী আযান দিত, নামাজ পড়ত।” এবং এর পক্ষে দুটি রেফারেন্স দিয়েছেন। ফলে আমার মন্তব্যটি অযৌক্তিক হয় কীভাবে?
এরপর আপনি যা বলেছেন, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। তারপরও বলি, কাদিয়ানীরা কি ৫ ওয়াক্ত নামাজের বদলে ৩ ওয়াক্ত নামাজ চালু করেছে? নামাজের ফরজ নিয়ম পাল্টে দিয়েছে? দিনের পরিবর্তে মুসাইলিমার মতো রাতের বেলা রোজা রাখে? এসব বিকৃতি কি কাদিয়ানীরা করে?
লাস্টে কাদীয়ানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাবে বলে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, এর ফলে আইসিসের সাথে আপনার চিন্তার পার্থক্যটা তো আর থাকছে না।
আল্লাহর রাসূলের (সা) ইন্তেকালের পর গণহারে ধর্মত্যাগের ফলে মক্কা, মদীনা ও তায়েফ বাদে বলতে গেলে গোটা আরব মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণের বাইর চলে যায়। ফলে আরবে মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিলো, যা রিদ্দার যুদ্ধ নামে পরিচিত। মুসলমানদের এই সফল সামরিক অভিযানের কারণেই পরবর্তীতে ইসলাম একটি সভ্যতা হিসেবে বিস্তার লাভ করতে পেরেছিলো। যার সুফল হিসেবে আমরা এখন নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে পারি। নয়তো দুনিয়ার ইতিহাস অন্যরকম হওয়ার কথা ছিলো।
এটি নিছক ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছিলো না। সেরকম কিছু হলে তো স্বয়ং আল্লাহর রাসূলই (সা) মুসাইলিমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতেন।
কনটেক্সট না বুঝে নিছক কিছু বর্ণনার ভিত্তিতে আপনার এমন এক্সট্রিম উপসংহারে পৌঁছানোই তো চরমপন্থার লক্ষণ।
Nazmul Hasan: Masudul Alam, কোন আলাপের মাঝখানে অপ্রাসঙ্গিক বা কনটেক্সট বিবেচনা না করে কুরআন বা হাদীসের উদ্ধৃতি (বিশেষ করে আরবীতে) হাজির করার অন্যতম একটা মতলব হলো আলাপটাকে থামানো বা ভিন্নখাতে নেয়া। আমি এই জাতীয় লোকদের সাধারণত ধান্ধাবাজ মনে করি। আপনি একজনকে ডিটেক্ট করেছেন দেখলাম। ধন্যবাদ সমৃদ্ধ করার জন্য।
Mohammad Abdul: Mabud Masudul Alam, ১/ কেউ নামাজ পড়ে কিন্তু নামাজ পাঁচ ওয়াক্তের বদলে তিন ওয়াক্ত মানে তাকে কাফির বলা যাবে?
২/কেউ রোজা মানে কিন্তু দিনের বেলায় নয় রাতের বেলায় তাকে কাফির বলা যাবে?
৩/ কেউ রাসূল(সা)কে নবী মানে কিন্তু শেষ নবী মানেনা কিংবা নিজেকেও নবুওয়তের অংশীদার মনে করে তাকে কাফির বলা যাবে?
৪/ কেউ যাকাত আদায়ের অধিকার নবীর আছে কিন্তু খলিফার নাই মনে করে তাকে কাফির বলা যাবে?
৫/ কেউ জিহাদকে মানসুখ মনে করে তাকে কাফির বলা যাবে?
৬/ কাকে কাফির বলবেন আর কাকে কাফির বলবেন না এব্যাপারে আপনাদের মূলনীতি কি?
৭/ নাবী (সা) মক্কা থাকাকালীন কাফিরদের সাথেও যুদ্ধ করেননি এটার মানে এই না যে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করা যাবে না। যুদ্ধ করার বিষয়টি সামর্থ্য এবং প্রতিপক্ষ মুহারিব কাফির হওয়ার উপর নির্ভর করে। আর আবুবকর (রা) এর যুদ্ধটি ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধেই ছিল যে কারণে নামই হল এ যুদ্ধের রিদ্দার যুদ্ধ। আর ইসলামী রাষ্ট্রে ধর্মত্যাগীদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড চাই পুরো রাষ্ট্রে ধর্মত্যাগী বা মুরতাদ একজনই হোক না কেন। ‘যে ব্যক্তি তার দ্বীন পরিবর্তন করল তাকে হত্যা করে ফেল’। সর্বোচ্চ তিনদিন সময় দেওয়া হবে, এরপর তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। এগুলোকে অস্বীকার করা সেক্যুলারদের আলামত।
Masudul Alam: Mohammad Abdul Mabud, প্রথম কথা হলো, আমি মূলত এই থ্রেডে যার সাথে এনগেজ হয়েছিলাম, তিনি আমার মন্তব্যের পর কোনো প্রতিমন্তব্য করেননি। তবে আপনি এনগেজ হয়ে প্রসঙ্গান্তরে চলে গিয়েছেন। এখন আপনার প্রসঙ্গ হলো মুরতাদের শাস্তি।
আপনার মন্তব্যের দুটি বিষয়ে একটু করে বলি। মুসাইলিমা কাযযাব নবুয়ত দাবি করেছিলো নবম হিজরীতে। সুতরাং, মক্কী জীবনে রাসূল (সা) কর্তৃক যুদ্ধ না করার যুক্তি এখানে খাটবে না। ইতোমধ্যে মক্কা বিজয়সহ অনেকগুলো সফল যুদ্ধ তিনি করেছিলেন। এমনকি আপনার সমর্থক মনজুরুল করীম যে রেফারেন্স উপরে দিয়েছেন, সে মোতাবেক মুসাইলিমা মদীনায় এসে সরাসরি আল্লাহর রাসূলের (সা) সাথে নবুয়ত ভাগাভাগি করে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলো। কিন্তু আল্লাহর রাসূল (সা) তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেননি। অথচ চাইলেই তা বাস্তবায়ন করার পূর্ণ সক্ষমতা তাঁর ছিলো।
দ্বিতীয় বিষয় হলো, আপনি আইসিস বা চরমপন্থীদের মতো দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছেন, কিন্তু নিজেকে সেই পরিচয়ে পরিচিত করাতে অস্বীকার করছেন। এই দ্বিচারিতা কেন?
যাহোক, অনলাইনে এসব তর্ক চাইলে দীর্ঘসময় ধরে করা যায়। অনেকে করেও। বাট আামার আগ্রহ নেই।
মুরতাদের শাস্তি প্রসঙ্গে আমি শুধু আগ্রহীদের জন্য কয়েকটি লেখার হদিস দিচ্ছি। দ্বীন পরিবর্তন করলে হত্যা করা সংক্রান্ত যে হাদীসের কথা আপনি উল্লেখ করেছেন, সেটির ব্যাপারে দ্বিতীয় লেখাটিতে বিস্তারিত আলাপ আছে। আপনার সাথে এ প্রসঙ্গে আর এনগেজ হওয়ার ইচ্ছা নেই।
১। মৃত্যুদণ্ডই কি মুরতাদের একমাত্র শাস্তি?
২। ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্মত্যাগ কি মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ?
৩। The Issue of Apostasy in Islam
আক্কাস আলী: কাদিয়ানী, শিয়া, সুফীরা মুসলিম না হওয়ার পিছনে কোনো ভালো যুক্তি আজও পেলাম না। বিশেষ করে শিয়াদের ইতিহাস সম্পর্কে সাধারণ মানুষ তো দূরে থাকে, হার্ডকোর মোল্লারাও পর্যন্ত ঠিক মতো জানে না। বেশিরভাগেরই তো সেই শিক্ষাগত যোগ্যতা নাই। কিন্তু, এসব ব্যাপারে কথা উঠলে প্রায় সবাই প্রতিবন্ধীর মতো তথাকথিত ঈমানী জোশে ঝাপায় পরে।
সত্যি বলতে এদের কাছে ইসলাম একটা কাল্ট (Cult) বা গ্যাংয়ের মতো। যখন যারে খুশি অমুসলিম ও কাফির ঘোষণা করাই এখন মুসলিম বিশ্বের ট্রেন্ড। তরুণ প্রজন্ম এমনিতেই নাস্তিক হচ্ছে না।
Mostafa Nur: ধর্মীয় চরমপন্থা কায়েমী চরমপন্থাকে সাজেশন দেয়, পথ করে দেয়। খাল কেটে কুমির আনার মতো।
Mohammad Mozammel Hoque: তাদের প্রতিক্রিয়াতেই বুঝা গেছে তারা চরমপন্থী। ক্ষমতা পেলে তারা এক একজন আইএস যোদ্ধা হয়ে উঠতো।