বর্তমান বিরুদ্ধ পরিবেশে দুজন ছাত্রীর সাথে বাসায় বসে ‘ইসলামী মতাদর্শের আলোকে সামাজিক আন্দোলন’ সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব ‘ইসলামী আন্দোলন’ নিয়ে যখন আলাপ করছিলাম তখন আমার সনি হ্যান্ডিক্যামটি অন্তত এক যুগের পুরনো একটা ট্রাইপডের উপরে দাঁড় করানো ছিলো।

পুরনো সোফা, বিবর্ণ দেয়াল, অপর্যাপ্ত আলো, মানসম্পন্ন অডিও সাপোর্ট না থাকা ইত্যাদি কারণে রেকর্ড ভালো না হওয়ার সব ‘অনিবার্যতা’ থাকা সত্ত্বেও নিজের বক্তব্য নিজেই রেকর্ড করলাম। এরপর ‘সর্বকাজের কাজী’ সিএসসিএস-এর নির্বাহী পরিচালক মাসউদুল আলমকে ভিডিও ক্লিপগুলো দিয়ে অনুরোধ করলাম, কোনো রকমে যেন জোড়া লাগিয়ে দেয়। সে দেখলাম শুরুতে একটা পরিচিতিও লাগায় দিছে। মা-শা-আল্লাহ !

প্রযুক্তিগত দিক থেকে এমন নিম্নমানের ভিডিও বক্তব্য প্রচার করাকে মাসুদ অপছন্দ করলেও আমি মনে করি, প্রচলিত যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার সামর্থ্যহীন এই আমার মতো ‘ফকির-ফ্যাকরার’ পক্ষে এ ধরনের গেরিলাযুদ্ধই ভরসা। আমি তো আর ড. অমুক আর শায়খ তমুকের মতো খ্যাতিমান বু্দ্ধিজীবী নই, যাদেরকে বিরাট সব সেটআপ দিয়ে কনসিসটেন্টলি facilitate করা হয়…! আমার নাই একাডেমিক ডিগ্রির বহর, নাই কোনো ফলোয়ার, নাই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পজিশন। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারি করি, এ-ই যা পরিচিতি।

জঙ্গল পশ্চিম পট্টির (ভূমি দপ্তরে চবি এলাকার স্থানীয় মৌজা নাম) এক প্রান্তে ম্যাডামের নামে বরাদ্দকৃত পাকিস্তান আমলে বানানো এবং ‘অজ্ঞাত কারণে’ মেরামতবিহীন একটা পুরনো ও ছোট্ট ডুপ্লেক্সের গ্যারাজে বসে এই ফরোয়ার্ডিংটা লিখছি। এটি সিএসসিএস-এর ঠিকানা বা একমাত্র শাখা তথা ‘হেড কোয়ার্টার’। চবি হতে এমএসএস ডিগ্রী নিয়েও কোনো চাকুরির সন্ধান না করে ‘কীসের নেশায় যেন’ স্বেচ্ছায় ক্যারিয়ার সেক্রিফাইসকারী একজন প্রাক্তন ছাত্র এবং অপর দুজন ছাত্র সহকারী আমাকে নিয়মিতভাবে যথাসম্ভব সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

অচলায়তনের এ সমাজ ভেঙ্গে একটা শুদ্ধ মানবিক সমাজ গঠনের কাজে যা কিছু করা দরকার সে তুলনায় আমার এইসব প্রচেষ্টা নিতান্তই তুচ্ছ, জানি। আমার দিক থেকে আপাতত এতটুকু ছাড়া আর কীইবা করার আছে? ছিলাম একটা বড় সংগঠনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ময়দানের অন্যতম ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল। নিজের বুঝ-জ্ঞানের দাবি পূরণ করতে গিয়ে স্বতন্ত্র ধারায় কাজ শুরু করতে বাধ্য হয়েছি। সব ‘সাংগঠনিক এস্টাবলিশমেন্টকে’ ফেলে রেখে সমাজের মূলধারা হয়ে উঠার প্রত্যয়ে রাস্তায় নেমেছি। অবুঝ পরিচিত মহলে আমি অপাংক্তেয়, নিছকই একজন ব্যক্তি, অসহায়, একা। যেন সাগরের পাড়ে হিতাহিত-জ্ঞানশূন্য এক স্বপ্নগ্রস্ত মাতাল। যে কিনা ছোট্ট একটা ডিংগি নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ি দেয়ার দুঃসাহসে মত্ত…!

সে যা-ই হোক, এতটুকু পর্যন্ত যখন পড়েছেন তখন আরো একটু সময় ব্যয় করে যদি নিচের আলোচনাটাও শুনে ফেলেন, হয়তোবা ততটা খারাপ লাগবে না। সমর্থন বা অংশগ্রহণ করুন বা না করুন, নতুন চিন্তার খোরাক পাবেন। নিশ্চিত। ভালো থাকুন আর আমাদের জন্য দোয়া করতে ভুলবেন না যেন…!

লেখাটির ফেসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *