ইসলাম এক ও অভিন্ন প্রকারের। তবে সেটি হল তাত্ত্বিক ইসলাম। যা রেখে গেছেন প্রফেট মুহাম্মদ (সা), অনুসরণ করেছেন সাহাবীগণ প্রমুখ। সমাজে বা বাস্তবে ইসলাম আছে পাঁচ প্রকারের। বলা যায়, লোক ইসলাম পাঁচ ধরনের। দেখুন আপনি একমত হতে পারেন কি না:
১. ইসলাম লায়াবিলিটি হিসাবে।
২. ইসলাম ঐতিহ্য হিসাবে।
৩. ইসলাম পেশা হিসাবে।
৪. ইসলাম পরিচিতি হিসাবে।
৫. ইসলাম পছন্দ হিসাবে।
১. ইসলাম লায়াবিলিটি হিসাবে– তাদের কাছে যারা জীবনের একটা সময় মাদ্রাসায় পড়েছেন, বা ইসলামী সংগঠন করেছেন বা যাদের পরিবারে ইসলাম চর্চা হয় বা হতো; কিন্তু এখন তারা সর্বোতভাবে চেষ্টা করেন যাতে লোকে জানতে না পারে যে উনার একটা ইসলামী অতীত বা ব্যকগ্রাউন্ড আছে। অতীতের ইসলাম পরিচিতিকে লুকানোর জন্য কখনো কখনো এরা ইসলামপন্থীদের উপর খড়গহস্তও হয়ে থাকেন।
২. ইসলাম ঐতিহ্য হিসাবে– তাদের কাছে যারা একটা সময় মাদ্রাসায় পড়েছেন বা পরিবারে ইসলাম চর্চা হয় বা হতো; সে হিসাবে এখনও নামাজ পড়েন, পর্দা করেন; যতটুকু সম্ভব ইসলামী অনুশাসন অনুশীলন করেন। তবে নিজের স্বার্থকে একেবারে জলাঞ্জলি দিয়ে নয়। তাদের চিন্তাভাবনায় যে ইসলাম সেটি নিতান্তই ব্যক্তিগত। ইসলামের জন্য প্রয়োজনে জীবনও দিয়ে দিব– এদের মাথায় এটি কখনো আসে না। তাদের ইসলামকে বলা যায় মুসলিমলীগ মার্কা ইসলাম।
৩. ইসলাম পেশা হিসাবে– তাদের কাছে যারা ইসলামের চাকরি করেন। যেমন– মাদ্রাসার হুজুর, পীর ও তদীয় খাদেমগণ, মসজিদের বেতনভুক্ত ইমাম সাহেবগণ, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী বিষয়াদির শিক্ষকগণ ও ইসলামী সংগঠনের ফুল-টাইমার দায়িত্বশীলগণ। প্রচলিত আছে, ইমামতির চাকরি না করলে অনেক হুজুর পাঁচ বেলা মসজিদেও যেতেন না। উনারা নিজেদেরকে ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া (নবীদের উত্তরসূরী) দাবি করেন। কিন্তু মনে করেন, তাদের কাছে এসে ইসলাম বুঝে নেয়া জনগণের দায়িত্ব। নবীরা মানুষের কাছে যেতেন এবং পারিশ্রমিক না নেয়ার বিষয়টিকে তাদের বক্তব্যের পক্ষে দাবি হিসাবে লোকদের বলতেন। (বি. দ্র.– শিক্ষাদানের মাধ্যমে পারিশ্রমিক গ্রহণ বৈধ হলেও দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার জন্য কোনো প্রকারের বৈষয়িক বিনিময় গ্রহণ সম্পূর্ণ অবৈধ।) এসব পেশাধারী ইসলামপন্থীরা নিজেদের জন্য রুখসত (জায়েযের সর্বনিম্ন সীমা) অবলম্বন করলেও ওয়াজ করার সময় বা হেদায়েতী বক্তব্য রাখার সময় অত্যন্ত কঠোরভাবে (নাকি নির্লজ্জভাবে?) আযীমতের (সর্বোচ্চ মান) বয়ান করেন।
৪. ইসলাম পরিচিতি হিসাবে– তাদের কাছে যারা মূলত অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে থাকেন। ইসলাম তাদের সোশ্যাল আইডেন্টিটি। এরা প্রায়শই এপলোজেটিক হয়ে থাকেন। পরবর্তীকালে এরা ইসলাম পছন্দ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হন– এমন নজির বিদ্যমান।
৫. ইসলাম পছন্দ হিসাবে– আছেন তারা, যারা ইসলামকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আদর্শ হিসাবে মেনে চলেন। এরা ইসলাম বুঝেন, যথাসম্ভব মানেন। এই দলের লোক আবার তিন ধরনের। চরমপন্থী, নন-অফেনসিভ চরমপন্থী ও মধ্যপন্থী।
ক. চরমপন্থী: ইসলাম তাদের চয়েস অথচ চরমপন্থী হচ্ছেন তারা, যারা বোমা মেরে প্রচলিত আদালতের বিচারকদের হত্যা করতে চান। এ জন্য যে, এসব বিচারক আল্লাহর আইন অনুযায়ী ফয়সালা করেন না, যেখানে আল্লাহর বাণী হলো– যারা ইসলামের বিধান ব্যতিরেকে বিচার-ফয়সালা করে তারা কাফির…। আকীদাগত দিক থেকে এরা ইসলাম বুঝলেও বিদ্যমান সমাজে ইসলামের বাস্তবায়নের ব্যাপারে এরা অত্যন্ত দুর্বল জ্ঞান রাখেন। এরা যে কোনো ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সুকুমারবৃত্তি চর্চাকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন।
খ. আমলবাদী: এরা কখনো নন-অফেনসিভ এক্সট্রিমিস্টও হয়ে থাকেন। ইসলামের শুধুমাত্র লোকপ্রিয় (মূলত ধর্মীয়) দিকগুলো, যেমন স্পিরিচুয়ালিটি ইত্যাদি নিয়ে এরা থাকেন। এরা ইসলামিক পিউরিটানিজমে ভোগেন। ইসলাম পছন্দ চরমপন্থী ও মধ্যপন্থীদেরকে এরা সরাসরি অন্যতম বাতিল মনে করেন। এরাও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে অনুৎসাহিত করেন।
গ. মধ্যপন্থী: ইসলাম পছন্দ দলের মধ্যকার মধ্যপন্থী হচ্ছেন তারা যারা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিধানাবলীকে সামাজিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন করে ইসলামের বিধানাবলী সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। উনারা ইসলামী আন্দোলনের লোক। নারীদের ব্যাপারে এরা উদার মনোভাবাপন্ন, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সুকুমার চর্চাকে এরা জরুরি মনে করেন। সোশ্যাল ম্যাচিউরিটি এদের যে কোনো পলিসির মাপকাঠি হিসাবে কাজ করে। সমাজের সকল স্তর হতে লোকজন নিয়ে এই ক্যাটাগরি। আসুন এবার আত্মপর্যালোচনা করে দেখি আমি/আপনি কোন দলে?
এসবি ব্লগ থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
হাসমত: আমি একইসাথে মধ্যম/উদার/চরমপন্থী।
১। মধ্যম– কারণ, আল্লাহ বলেছেন: তোমাদেরকে আমি উম্মাতা ওয়াসাতা হিসেবে পাঠিয়েছি। যাতে তোমরা মানুষের জন্য সাক্ষ্যদানকারী হতে পারো
২। উদারপন্থী– কারণ, আমাদের রাসূল (সা) উদার ছিলেন। হুদায়বিয়ার সন্ধিতে লিখার সময় নিজে আল্লাহর নবী সেটা কেটে দিয়ে কাফিরদের সাথে চুক্তি করেছিলেন। যাতে আশ্চর্য হয়ে উমর (রা) জিজ্ঞাসা করেছিলেন– আপনি কি আল্লাহর রাসূল নন?
৩। কট্টরপন্থী– কারণ, (ক) এক অন্ধ সাহাবী ঘরে নামাজ আদায়ের অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দিলেন। পরে জিজ্ঞেস করলেন– তুমি কি আজান শোনো? – জ্বী, শুনি। – তাহলে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করবে বলে আগের অনুমতি তুলে নিলেন।
(খ) এক মহিলা যিনা করে গর্ভবতী অবস্থায় রাসূলের (সা) কাছে গিয়ে হুদুদ শাস্তি প্রয়োগের অনুরোধ করেন। রাসূল (সা) তাকে সন্তান প্রসব পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললেন। এরপর মিহিলা আবার আসলে তার আত্মীয়-স্বজনকে খবর দেন। তাদেরকে বাচ্চাটি দেখার দায়িত্ব দিয়ে মহিলার শাস্তি নিশ্চিত করেন।
(গ) আবু বকরের (রা) আমলে কেউ কেউ যাকাত দিতে অস্বীকার করে। তিনি ঘোষণা দিলেন, কেউ যদি উটের রশি পরিমাণ যাকাত দিতে অস্বিকৃতি জানায়, আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।
(ঘ) এক সর্দার নওমুসলিম আর এক গোলামের সাথে ঝগড়া হলে বিচার গেলো উমরের (রা) কাছে। বিচারের রায় গোলামের পক্ষে গেলে নওমুসলিম সর্দার ইসলাম ত্যাগের হুমকি দিলে হযরত উমর (রা) বললেন– জোর করে মুসলিম বানাইনি। স্ব-ইচ্ছায় আসার পর চলে গেলে এই তরবারী দিয়ে শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলব।
কোনো এক্সট্রিমিজম নয়। আল্লাহর হুকুম পালনে দৃঢ়তা। আল্লাহ বলেন– যারা বলে আল্লাহ আমার রব আর তাতে দৃঢ় থাকে, তাদের জন্য আমি ফেরেশতা পাঠাই, তাদের কোনো ভয় নেই, চিন্তারও কোনো কারণ নেই।
অনেক ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ধন্যবাদ জনাব হাসমত।
হাসমত: আর কিছু শেয়ার না করে ধন্যবাদ দিয়েই শেষ!
এক্সট্রিমিজম শব্দটা মুসলমান্দের জন্য বেশ ব্যবহার করা হয়। আমার এক্ট্রিমিজম হচ্ছে ইবাদত ও শরীয়াত দিয়ে আল্লাহর গোলামীতে। কারো অন্যায় ক্ষতি সাধন করে এক্সট্রিমিজম নয়। সর্বাধিক মতের ভিত্তিতে গৃহীত শরীয়া আইন বাস্তবায়নেও কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত থাকা কারো উচিত নয়।
ঈগল: এখানে আরেকটা প্রকার হতো। আসলে আমি সঠিকভাবে বলতে পারছি না প্রকারটা কী হতে পারে। তবে উদাহরণ দিতে পারি। যেমন–
১। তুরস্কের ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থী দল। এরা তুরস্কের সংবিধানের আলোকে ধর্মনিরেপেক্ষতাকে কৌশলগত কারণে গ্রহণ করেছে। এটা প্রমাণ করে তারা তাওহীদের মূলনীতি সম্পর্কে সজাগ নয়।
নূহ (আ) থেকে শুরু করে আমাদের নাবী (সা) পর্যন্ত নাবীরা যেভাবে দাওয়াত দিয়েছেন, দাওয়াতের শুরুতে মানুষদেরকে যা জানিয়েছেন তা থেকে বর্তমান তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের দাওয়াত একেবারেই ভিন্ন।
২। আমাদের জামায়াতে ইসলামীও একই রকম।
এদের দাওয়াতী পদ্ধতী পর্যবেক্ষণ করলে মনে হবে, রাষ্ট্রের ক্ষমতা হাতে পাওয়াই যেন সবকিছু!!!
হাসমত: তুরস্কের জন্য দোয়া করেন। আপনি ওখানে তাওহীদের পরিপন্থী কী দেখলেন? ইসলামের যাত্রা তো সবে শুরু হচ্ছে। ইসলামের প্রথম যুগে প্রকাশ্যে আজান দেয়া হতো না। কেন জানেন? কাফেরদের অত্যাচারের ভয়ে। পরে আল্লাহ উমরকে (রা) দিলেন। সাহস বাড়ল। আর ইসলামের দাওয়াত প্রকাশ্যে চলে আসল।
“জামায়াতে ইসলামীও একই রকম।”
সত্যি আপনি কী বুঝাতে চাচ্ছেন বুঝতে পারিনি।
যে ভাষায় জামায়াত দাওয়াত দেয়, তা তো আল্লাহর কুরআনে শিখিয়ে দেয়া পদ্ধতি। রাষ্ট্র ক্ষমতা থাকলে তো আরো অনেক কাজ সহজে করা যেত। তবে জামায়াত যে রাষ্ট্র ক্ষমতার উপযুক্ত নয় তা জামায়াত ভালো করেই বুঝে।
অনুরণন: “সত্যি আপনি কী বুঝাতে চাচ্ছেন বুঝতে পারিনি।”
হিজবুত তাহরীরই একমাত্র প্রকৃত ইসলামপন্থী দল, এই সোজাসাপ্টা অনুবাদটা বুঝতে পারলেন না।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ইসলাম পছন্দদের দলে হিজবুত তাহরীর, জামায়াত ইত্যাদি হতে পারে। আমি এসব নিয়ে বিতর্ক করতে আগ্রহী নই। ইসলাম পছন্দদের আকীদাগত শুদ্ধতা সত্ত্বেও সমাজে এর প্রায়োগিক দিক সম্পর্কে ব্যাপক/মৌলিক বিভ্রান্তি আছে। এটি হিজবুত-জামায়াতসহ এ ধরনের অন্যদের জন্যও প্রযোজ্য। সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। মন্তব্যকারী সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মি. ঈগলকে বলছি, তুরস্কের ইসলাম ধর্মনিরপেক্ষ-ইসলাম (?), যেহেতু রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ তাই সেখানকার ইসলামী সরকারও ধর্মনিরপেক্ষ। সরকারও বলছে না– আমরা ইসলামী। দুনিয়া বলছে, এরা ইসলামী। এখন এই ইসলাম যদি কৌশলগত হয় তাহলে সমর্থনযোগ্য। সেক্ষেত্রে এটি হবে ট্রানজিটরি স্টেজ। তাও অনুমোদনযোগ্য। কিন্তু তা যদি হয় লক্ষ্য (end) হিসাবে তাহলে তা স্পষ্টতই বাতিল। কারণ, ধর্মনিরপেক্ষ ইসলাম হতে পারে না। যদিও ইসলাম ধর্ম মাত্র নয়, কিন্তু এর ধর্মীয় দিকগুলো অপরিহার্য। যেমনি অপরিহার্য এর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিকগুলো। কথিত তুরস্ক মডেল নিয়ে অনেক বিতর্ক হতে পারে, বা হওয়া উচিত। তাই, এখনই শেষ কথা না বলা ভালো। ধন্যবাদ।
ঈগল: কুরআন ও সুন্নাহর দৃঢ় অনুসারীরাই প্রকৃত মধ্যমপন্থী এবং উদারপন্থী। এর বাইরে কোনো উদারতা নাই। যারা এর কমবেশি করবে তাই চরমপন্থী।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হ্যাঁ ভাই, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
এম এন হাসান: আলোচনা ভালো লাগল। মিশরের সাম্প্রতিক ঘটনায় আরো কয়েকটি টার্মের সাথে পরিচিত হলাম– সেক্যুলার ইসলামিস্ট, লেফ্ট-ইসলামিস্ট।
আমি প্রথম কিছুক্ষণ হাসলাম, আর ভাবলাম আরো কত কিছু শুনব। আল্লায় জানে কিছুদিন পর শুনি কিনা– অমুসলিম ইসলামিস্ট!
মনসুর: বুঝলাম না এই আলোচনা কেন ভাল লাগল?
মনসুর: মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আপনার লেখা আমার ভালো লাগেনি। আপনার নিকে নাম মুসলিম অথচ লেখাটা ইসলাম পরিপন্থী মনে হয়েছে।
একজন সৎ মুসলমান মানে মহান আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পিত মুসলমান। সমাজে তার প্রকাশ বিভিন্ন হতে পারে, তার জ্ঞানবুদ্ধি, দেশ, জাতি, পরিবেশ ইত্যাদি নানান কারণে। কিন্তু এগুলো ইসলামের প্রকারভেদ নয়।
একজন মুসলমান প্রথমে তার চেতনায় ইসলামকে আনে, তারপর তার নিজের বুঝ অনুযায়ী চর্চা করে। তাকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেওয়ার জন্য রয়েছে মহা পবিত্র কোরআন-হাদিসের বাণী সমূহ। আপনি ‘লোক ইসলাম’ বলে যা দেখাচ্ছেন, আমার কাছে তা বিভ্রান্তিমূলক মনে হচ্ছে। দুর্বল মুসলমানেরা এই অদ্ভুত প্রকারভেদের সাথে নিজেদের তুলনা করতে গিয়ে ঈমান নষ্ট করতে পারে।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে নেক হেদায়েত দান করুন। আমীন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ভাই মনসুর, আমার নিকটা নিক নয়, আসল নাম। যেমনটি লেখা। থাকি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রায় ৩০ বছর হতে (বর্তমান বয়স ৪৫ চলছে) ইসলামী আন্দোলনে আছি। আরও বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করতে পারেন: mozammel.philosophy@gamil.com, 01928672405
kabir: “ইসলাম পছন্দ হিসাবে আছেন তারা, যারা ইসলামকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আদর্শ হিসাবে মেনে চলেন। এরা ইসলাম বুঝেন, যথাসম্ভব মানেন।”
I agree with you. But I respectfully disagree with your divisions. Like ক. চরমপন্থী, খ. আমলবাদী, গ. মধ্যপন্থী। One standard for all.
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনি প্রাজ্ঞ ব্যক্তি। যতদূর আপনাকে দেখেছি। এসব ভাগাভাগির বিষয়ে সহকর্মীদেরকে আমি অনেক আগে থেকে বলছি। সেদিন একজনকে বলতে গিয়ে আটকে গেলাম। তিনটি বলার পরে বাকি দুইটা মনে আসছিল না। তাই ভাবলাম ব্লগে লিখে দিলে অন্যদের সাথে শেয়ারও হবে, মনেও থাকবে।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হতে এই ক্লাসিফিকেশন। বিস্তারিত লিখলে হয়তোবা আরও পরিষ্কার হতো।
চরমপন্থী হলেন কথায় কথায় অন্যদের কাফের ফতোয়া দেয়া, নারী-ফিতনায় অতি উৎকণ্ঠিত, কখনো বোমা মারা, নিজে না মারলেও যারা মেরেছে, ভালই করেছে– এমন মনে করেন যারা, ইনারা।
আমলবাদী হচ্ছেন তাবলীগ ও জামায়াতের সেসব সংগঠনবাদী ভাইয়েরা, যারা নিজেরা উচ্চশিক্ষিত হলেও ইসলামের বিষয়গুলো নিয়ে জ্ঞানচর্চাকে খারাপ চোখে দেখেন।
মধ্যপন্থী হলেন তারা, যারা ইসলামকে ধর্ম হিসাবে দেখেন না। ইসলাম হলো তাদের আদর্শবাদের অবলম্বন। এরা মৌলিক ইবাদতে নিয়মিত। নারীদের ব্যাপারে নমনীয়। যে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার আগে এর সামাজিক প্রয়োগযোগ্যতাকে বিবেচনা করেন, প্রয়োজনে লড়াই-ই শেষ বিকল্প– এমনটি সক্রিয়ভাবে ভাবেন, বুদ্ধিবৃত্তিকে ঈমানের সহায়ক মনে করেন।
আকীদা সহীহ হওয়াতে চরমপন্থী ও আমলবাদীদেরকেও আমি ‘ইসলাম এজ দ্যা চয়েস’ গ্রুপে রাখতে চাই।
শুধু মুসলমান হওয়ার জন্য আকীদা সহীহ হওয়াই যথেষ্ট। কিন্তু সমাজকর্মী হতে হলে আরও কিছু লাগবে, যা সুন্নাহ হতে আমরা পেতে পারি।
হক হওয়া আর হক কায়েম করা দুটি অভিন্ন নয়। সবাইকেই চেষ্টা করতে হবে যার যার অবস্থান ও যোগ্যতা অনুসারে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে সমাজকর্মী হওয়ার।
পরিশেষে, শুধু আপনার জন্য একটা কথা বলে শেষ করছি– ‘ইসলাম ইজ নো লেস মানডেইন দ্যান ইট ইজ স্পিরিচুয়্যাল।’
দোয়া করবেন। ভালো থাকুন।
মিরাজুল ইসলাম: মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক সাহেব, কোরআনকে অবমাননা করার ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে ইসলামী আইন কয়মে করা সম্ভব কিনা?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কোরআনের ভাষ্য মোতাবেক মুসলমানরা হচ্ছে মধ্যপন্থী জাতি। সব এক্সট্রিমের মাঝে (এক্সট্রিম?) ভারসাম্য।
সমাজ তখনও ছিল, যখন রাষ্ট্র ছিল না। বিপরীতভাবে, রাষ্ট্র না থাকলেও সমাজ থাকবে। সমাজ পরিবর্তনই মুখ্য হওয়া উচিত। রাষ্ট্রের বিষয়টা এসে যাবে।
বাংলাদেশে সমাজ পরিবর্তনের বিষয়টিকে ফোকাল পয়েন্ট হিসাবে এক নম্বর গুরুত্ব দিতে হবে। ‘সোশ্যাল ম্যাচিউরিটির’ আলোকে সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জানেন নিশ্চয়ই, সব পরিবর্তনই প্রগতি নয়, যদিও প্রগতি মানেই হচ্ছে পরিবর্তন। আমরা চাই, ইতিবাচক ও টেকসই পরিবর্তন তথা প্রগতি। তাই, সামাজিক উপযুক্ততা বা সোশ্যাল ম্যাচিউরিটিই হলো ইসলাম (ইসলামী আইন ইত্যাদি সব মিলিয়ে) কায়েমের একমাত্র পদ্ধতি।
ধন্যবাদ।
মিরাজুল ইসলাম: অনেক ধন্যবাদ
আরিফ: ইদানীং আরো কিছু ইসলামের কথা শুনি আমরা। মডারেট ইসলাম, পলিটিক্যাল ইসলাম, সেক্যুলার ইসলাম, পপুলার ইসলাম– এইগুলোও আলোচনায় আসলে ভালো হতো।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: হ্যাঁ, হতে পারে। আমার ডিভিশনটা ইসলামকে কে কীভাবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে গ্রহণ করেছে সেদিক থেকে করা। ইসলামকে সমাজে গ্রহণ বা বাস্তবায়নের দিক হতে মডারেট, পলিটিক্যাল, সেক্যুলার, পপুলারিস্ট ধরনের ভাগগুলো প্রযোজ্য।
ইসলামের এত রূপ! তবে, এটি অস্বাভাবিক নয়। যে কোনো আদর্শ ও মতবাদেরই এ অবস্থা। এরই মাঝে আমাদের বেছে নিতে হবে সঠিক পথ। ধন্যবাদ।
kabir: মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক Bhai. You are our great teacher, if you do not mind, you can write at least two articles month. Which will helpful to all of us. Islamic movement workers are life time student.
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে ইসলামের শ্রেণীবিভাগ হতে পারে। যদিও ইসলাম বলতে আমরা তা-ই বুঝবো হাদীসে জিবরীলে যা বর্ণিত আছে। আপনার পরামর্শ মূল্যবান। আল্লাহর রহমতে আমি যতটা বলতে পারি, লিখতে পারি না ততটা। দোয়া করবেন।
ইবনে বতুতা: এই সুন্দর লেখা ও আলোচনাটা এতদিন চোখে পড়েনি। তাই দেরিতে কমেন্ট দিলাম।
খুব সুন্দর ক্লাসিফিকেশন হয়েছে। বাস্তবমুখী। চিন্তার খোরাক আছে এতে।
তুরস্কের রাজনৈতিক দল সম্পর্কে যেটা বলেছেন সেটার সাথেও আমি সহমত– “এই ইসলাম যদি কৌশলগত হয় তাহলে সমর্থনযোগ্য। সেক্ষেত্রে এটি হবে ট্রানজিটরি স্টেজ। তাও অনুমোদনযোগ্য। কিন্তু তা যদি হয় লক্ষ্য (end) হিসাবে তাহলে তা স্পষ্টতই বাতিল।”
অফ-টপিক: জামায়াত এবং হিজবুত তাহরীরের কর্মীদের মধ্যে প্রকট রেশারেশি খুবই দৃষ্টিকটু লাগল। আমি শিবিরের খুব একটিভ সাথী ছিলাম একসময়। কিন্তু হিজবুতকে তো আমি খুবই পছন্দ করি। আকীদা সবার সঠিক হওয়া সত্ত্বেও কাজের ধারা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু তাই বলে একে অন্যকে না-হক ভাবছি কেন আমরা? জামায়াত, হিজবুত বা অন্যান্য কওমী ধারার সমস্ত ইসলামী দল একে অন্যের সহায়ক হতে পারে। একসময় জামায়াত একাই কাজ করত। এখন অনেক সংগঠন হয়েছে, যারা ইসলাম কায়েমের কথা বলছে। এতে বিরাট লাভ হচ্ছে বলেই আমার ধারণা। জনগণ এখন বিশ্বাস করে, ইসলাম রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কায়েম করার জিনিসও বটে। আগে যেখানে অনেকেই ভাবত, এই ব্যাপারটা জামায়াতের ভুল আকীদা।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: রিসেন্টলি দেয়া কোনো পোস্ট না থাকায় অনেকদিন লগইন করি না। কী মনে করে আজ লগইন করলাম। আর আপনার সুন্দর কমেন্ট। নাইস!
বিভিন্ন আসপেক্ট বা প্যারামিটার হতে ইসলামের অনেক রকমফের হতে পারে। যেমন–
১) স্পিরিচুয়্যাল ইসলাম: ভান্ডারী, পীরপন্থী যারা।
২) প্র্যাকটিসিং ইসলাম: তাবলীগ, জামায়াত, হিযবুত প্রমুখ।
৩) ইন্টেলেকচুয়্যাল ইসলাম: যেটিতে ইলমের চর্চাই মুখ্য ও মূলধারা। আমল যেন ইলমের বিপরীত না হয়, শুধুমাত্র এতটুকু লক্ষ্য রাখা হয়। স্পিরিচুয়্যালিটি যাতে সব সময়ে অন্তত ন্যূনতম মাত্রায় জাগরুক থাকে, সেটি নিশ্চিত করা হয়। এই ধারাটা দৃশ্যত নাই। তবে সৃষ্টি করতে হবে।
আমাদের সমাজের বর্তমান ইসলাম ততটা ইন্টেলেকচুয়্যাল নয়; হয় স্পিরিচুয়্যাল অথবা প্রাকটিসিং। আমলের যথাসম্ভব সর্বোচ্চ মান বা পূর্ণতা– এগুলো ভুল ধারণা (ফ্যালাসি)। জ্ঞানচর্চার চেয়ে উচ্চতর কোনো আমল নাই।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। দোয়া করবেন।