নারী অধিকার নিয়ে বাংলা ভার্চুয়াল জগতে গত ক’দিন হতে যে জোয়ার বইছে তাতে পোস্ট দিয়ে অংশগ্রহণ করার কোনো তাগিদ না থাকলেও একটা বিষয়ে কেউ ক্লিয়ারকাট কথা বলছে না দেখছি। সেটি হলো, আরব দেশে যৌথ পরিবার ব্যবস্থা না থাকা। অন্ততপক্ষে পাক-ভারত উপমহাদেশের মতো করে। এর ফলে ‘এর শরীয়াহ ইমপ্লিকেশন হলো, ইসলাম আসলে অনু পরিবার ব্যবস্থার পক্ষপাতী, বড়জোর যৌথ পরিবার ব্যবস্থাকে ইসলাম সমর্থন করে মাত্র’ – কারো কারো এমন ধরনের মারাত্মক ভুল ধারণা তৈরি পারে। একচুয়েলি হয়েছে দেখতে পাচ্ছি। সুন্নাহ বলতে আমরা আল্লাহর রাসূল (সা) এবং তাঁর সাহাবীদের জীবনযাপনকেই মূলত বুঝি। কোরআন-হাদীসকে সীরাতের আলোকেই ব্যাখ্যা করি।
যৌথ পরিবার ব্যবস্থা হলো এক ধরনের পরিবার ব্যবস্থা, যা মূলত যৌথ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত। পরিবার ব্যবস্থা হলো মূলত একটা নৈতিক ব্যবস্থা। যদিও পরিবারের অর্থনৈতিক ভিত্তি ও লক্ষ্য রয়েছে। আরবের অর্থনীতি আমাদের মতো কৃষিনির্ভর নয়। ওখানকার কৃষি, যদ্দুর জানি, খেজুর গাছ লাগানো, সেগুলোর যত্ন করা, কাঁদি কাটা এবং সেগুলো বস্তা ভরে রাখার মধ্যে মূলত সীমিত। এ কাজগুলো ধান, আলু, গম চাষ বা মাছ ধরার মতো নিবিড় যৌথ শ্রমের ওপর ততটা নির্ভরশীল নয়।
তদুপরি মক্কা ও মদীনার সমাজ ছিলো ব্যবসানির্ভর শহুরে সমাজ। গ্রামীণ কৃষিজীবী সমাজে যতটা দেখা যায়, শহুরে সমাজে যৌথ পরিবার ব্যবস্থা তেমন দেখা যায় না। এমনকি যেসব সমাজে কয়েক ভাই মিলে একজন নারীকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করে সেখানেও পরিবারের যৌথ জমির মালিকানা অক্ষুণ্ণ রাখাই গবেষকদের দৃষ্টিতে এই পলিয়েন্ড্রি সিস্টেমের মূল কারণ।
অতএব, অর্থনৈতিক কারণই যৌথ পরিবার ব্যবস্থার ভিত্তি। আরো খোলাসা করে বললে দারিদ্রই যৌথ পরিবার ব্যবস্থার ভিত্তি। তো, ইসলাম কি শুধু শহুরে স্বচ্ছলদের ব্যাপার, নাকি দুনিয়ার সব শ্রেণী-পেশার মানুষের ব্যাপার?
যৌথ পরিবারের বিপক্ষে প্রধান যে যুক্তিকে আমি লক্ষ করেছি তা পর্দা সংক্রান্ত। অথচ এটি যৌথ পরিবার ব্যবস্থার অন্তরায় নয়। অন্তত আল্লাহর রাসূলের (সা) কোনো পাকা দালান বা কাঠের মজবুত ঘর ছিলো না। উম্মুল মুমিনীনদের ঘরগুলো ছিলো যাকে আমরা ‘ছাপড়া ঘর’ বলি সে ধরনের। এক কক্ষের। দরজায় পর্দা ঝুলানো থাকতো। উম্মুল মুমিনীন হিসেবে তাঁদের বিশেষ মর্যাদা সংরক্ষণের জন্য সেখানে ফিজিক্যাল আড়াল বা হিজাবের অন্তরাল ছিলো অপরিহার্য।
ইসলাম প্রাইভেসির ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। মা-বাবার ঘরেও সবসময় প্রবেশ করা যায় না। অন্যদের তো দূরে থাক। প্রাইভেসির গুরুত্ব যতই থাকুক তা মানবিকতার দাবি পূরণ ও আত্মীয়তার হক আদায়ের বিকল্প হতে পারে না।
বিষয়গুলো কারণে-অকারণে ধুমধাম করে বাইনারি হিসাবে দেখা এবং এসপার-ওসপার প্রান্তিকতায় চলে যাওয়াটা হলো পাশ্চাত্য ধরনে চিন্তার কমন বৈশিষ্ট্য। ওয়েস্ট সবসময় বিষয়গুলোকে ডাইকোটিক হিসাবে তুলে ধরে। যার যার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এমন বিষয়গুলোকে অনর্থক মুখোমুখি দাঁড় করায়। ইসলামী নারীবাদীদের মধ্যেও এ ধরনের প্রান্তিকতার লক্ষণ সুস্পষ্ট। যেমন তারা পর্দা রক্ষা ও নিকট আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকে আইদার-অর প্যাটার্নে পাল্লা দিয়ে মাপতে চায়। মনে করে, তারা খুব ইসলাম চর্চা করছে। এটি ভুল।
যেমন, আমরা যখন মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ি তখন আমাদের আধ্যাত্মিকতা ও সামাজিকতা উভয়কেই যথাসম্ভব রক্ষা করতে হয়। শুধু আধ্যাত্মিকতা চর্চার ব্যাপার হলে নিভৃতে ইবাদত করাই হতো সবার জন্য অধিক যুক্তিসংগত। সমাবেশের মধ্যে আধ্যাত্মিকতায় মনোনিবেশ করাটা ব্যাহত হয়। তৎসত্বেও বলা হয়েছে, “তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু করো।” এর তাৎপর্য বুঝতে হবে।
একই ধরনের আপাত দ্বন্দ্ব জিহাদের বেলায়ও দেখা যায়। গনীমতের আশায় জিহাদে যোগ দিলে তা জিহাদই গণ্য হবে না। অথচ দেখা যায়, তায়েফের যুদ্ধের গনীমত বণ্টন নিয়ে আনসার সাহাবীগণ আল্লাহর রাসূলের (সা) কাছে ডেলিগেশন পাঠিয়েছিলেন! ড. তারেক সোয়াইদানের লেকচারে এ বিষয়ে খুব মজার আলোচনা আছে। আমরা যেন সাহাবীদের চেয়েও বেশি ইসলাম বুঝে ফেলেছি, কারো কারো এমন ভাব। আমরা কি মনে করবো, আল্লাহ মাফ করুক, আনসারগণ গনীমতের লোভ করেছিলেন? বাহ্যত ব্যাপারটা গোলমেলে ঠেকে। তাই না?
আসলে জীবনটাই তো গোলমেলে। ঈমান, রক্ত-মাংস-জমিনের বাস্তবতা ও ভেতরকার নিয়ত – এ সবকিছুকে সামগ্রিকভাবে না দেখলে সবকিছুকেই তথাকথিত নিরপেক্ষ কিংবা আপাতদৃষ্টিতে গোলমেলে মনে হবে। দেখুন, নারীরা এক রকমের মানুষ। আবার পুরুষরা সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের মানুষ। নারীরা মা হয়। পুরুষরা বাবা হয়। এই উভয় প্রজাতির মানবের গন্তব্য, মেজাজ ও চরিত্র শুধু ভিন্নই নয়, বিপরীতমুখী। অথচ তাদের একত্র বসবাসই পরিবারের ভিত্তি। যা ক্রমে সমাজ, রাষ্ট্র ও সভ্যতায় সম্প্রসারিত হয়। তো শিকলের বিপরীতমুখী আংটার মতো এসব বৈপরিত্য নিয়েই তো পরিবার ও সমাজ এবং এতদুভয়ের সব কিছু। আই মিন, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, রাজনীতি ইত্যাদি। নারীও নয়, পুরুষও নয় – এমন কোনো মানুষ তো নাই। লিংগপরিচয়হীনরা আলাদা কোনো ক্যাটাগরি নয়। সেটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার মতোই এক ধরনের অপূর্ণতা।
তাই, কন্ট্রাডিকশান মাত্রকেই উপড়ে ফেলে প্রকৃতিগতভাবে স্বতন্ত্র দুই দল মানবসন্তানকে ফিজিক্যালি অর্থাৎ সম্ভাব্য সকল বাস্তব ক্ষেত্রে এক করে ফেলার চেষ্টা ধ্বংসাত্মক ও অর্বাচীন প্রয়াস মাত্র। তা ব্যর্থ হতে বাধ্য। শেষ পর্যন্ত মানুষের মানবিক পরিচয়ই তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হতে বাধ্য। জীবন ও জগত সম্পর্কে মৌলিক বিশ্বাস তথা ঈমান-আকীদা ছাড়া ইসলাম সব বিষয়েই কন্ট্রাডিকশানকে এলাউ করে। প্রয়োজন মোতাবেক সেসব বিরোধকে ইন্টিগ্রেট করে। সমাজের বৃহত্তর পরিসরে একোমোডেইট করে। এর মানে পর্দা রক্ষা ও যৌথ পরিবার কন্ট্রাডিকটরি হলেও এতদুভয়কে সমন্বয় করাই হলো ইসলামের দাবি। এ হলো পারিবারিক ইজতেহাদ। কীভাবে করবেন তার কিছু সীমানা বা নিশানার কথা ইসলাম বললেও স্পেসেফিকলি কোনো ফর্মের পক্ষে হুকুম জারী করে না। শরীরের সতর বা পর্দার মতো পরিবারের সতর বা পর্দাকেও তাই নিজ নিজ অবস্থা ও এলাকাভেদে কাস্টমাইজ করে নিতে হবে।
আরব দেশের অনু পরিবারের কথা যদি এরপরও বলেন, তাহলে আরব দেশের পলিগেমিও তো মানতে হবে। বলুন, ক’জন ইসলামী নারী নেত্রী পাশের কক্ষে বা ফ্ল্যাটে সতীনের সাথে পালা বণ্টনে রাজি হবেন? আল্লাহর রাসূলের (সা) স্ত্রীদের মধ্যে হযরত আয়িশাকে (রা) তারা খুব রেফার করেন। ওসব আসলে মতলবী ব্যাপার-স্যাপার। কেন তারা সাওদার (রা) কথা ততটা বলেন না? কেন তারা হাফসার (রা) কথা ততটা বলেন না? কেন তারা খাদীজাতুল কোবরার (রা) কথা ততটা বলেন না?
অধুনালুপ্ত সোনার বাংলাদেশে ব্লগে কোনো এক লেখায় বলেছিলাম, আমাদের ইসলামী নারী নেত্রীরা ‘নিজেদেরকে আয়িশার স্থানে কল্পনা করেন, খাদিজার অবস্থানে ততটা ভাবেন না’। পুরুষরাও বউ হিসাবে একজন আয়িশাকে যতটা কামনা করেন, আমার পর্যবেক্ষণে, একজন খাদিজাকে ততটা মূল্যায়ন করেন না। কারণটা সুস্পষ্ট। আমি শুধু হযরত খাদিজার (রা) কথাই বলবো। সীরাতের গ্রন্থগুলোতে তাঁর পর্দা করা না করার কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। তিনি বড় মাপের স্কলারও ছিলেন না।
তিনি ছিলেন তাঁর স্বামীর মিশনে অগ্রগামী সহযোদ্ধা। বলা হয়, তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন। এটি অর্ধসত্য। একের পর এক অকাল প্রয়াত পূর্ববর্তী দু’জন স্বামীর সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে তিনি তাদের ব্যবসার হাল ধরেছিলেন। জীবনের প্রথম হতে কি তিনি বিজনেস ক্যারিয়ার গঠন করেছিলেন? এ জন্যই কি রাসূল (স) উনাকে বিয়ে করেছিলেন? বরং তিনি ছিলেন মানবিক গুণে গুণান্বিত একজন মহিয়সী নারী। অহী নাজিলের শুরুর ঘটনা বিশ্লেষণ করে এক অর্থে বলা যায়, তিনি তো রাসূলকে (সা) ‘রাসূল বানিয়েছিলেন’। আমাদের ওভার-এক্সট্রোভার্ট নারী নেত্রীদের ক’জন উনার মতো এতগুলো সন্তানের মা হতে রাজি? বলুন…! স্বামীর জন্য নিজের (ব্যবসায়ী) ক্যারিয়ার সেক্রিফাইস করতে রাজি? নিজের স্বামীর বালক চাচাতো ভাইকে প্রতিপালনে রাজি? আল্লাহর ওয়াস্তে নিজের মাইন্ড রিড করে বলুন, এসব ‘ইনকনভেনিয়েন্ট ট্রুথ’ শুনে আপনার মন কি গলে গেছে? নাকি কীভাবে আমার এসব কথাকে রিফিউট করবেন, তা ভেবে আকুলতা বোধ করছন?
আপনারা, মানে ইসলামী নারীবাদীরা যৌথ পরিবারের বিপক্ষে বলেন। অথচ এ কথা চেপে যান, তৎকালীন আরব সমাজে যৌথ পারিবারিক ব্যবস্থার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী গোত্রতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলবৎ ছিলো, ইসলাম যাকে বহাল রেখেছে। সাম্প্রদায়িকতাকে ইসলাম গুড়িয়ে দিয়েছে, সম্প্রদায়কে নয়। এই সম্প্রদায় ব্যবস্থা বা গোত্র ব্যবস্থার প্রেক্ষিতকে বাদ দিয়ে অনু পরিবার থেকে সোজা সমাজ গঠনে আপনারা জাম্প করতে চান। এটি ঠিক না। এর মানে এই নয়, আমাদেরকেও গোত্র ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে। সমতল ও নিরাপদ জনপদে গোত্র ব্যবস্থা লাগে না। কিন্তু নানা দিক থেকে অনিরাপদ পরিবেশে এক ধরনের বৃহত্তর সুরক্ষা ব্যবস্থার দরকার হয়। ক্ষেত্রবিশেষে এর নাম যৌথ পারিবারিক ব্যবস্থা কিংবা গোত্র ব্যবস্থা।
যা হোক, মহিলা সাহাবীগণ নিজেদের অধিকার নিয়ে কতো সচেতন ছিলেন তার মাত্র দুটো উদাহরণের ইংগিত আমি দিতে চাই। কিশোরী বারিরা (রা) স্বাধীন হওয়া মাত্রই নিজের বৃদ্ধ স্বামীকে, এমনকি আল্লাহর রাসূলের (সা) সুপারিশ সত্ত্বেও, পরিত্যাগ করেন। এ কথা আমরা জানি। অন্য এক মহিলা সাহাবী স্বামীর কাছ হতে তালাক নিয়ে নতুন করে বিয়ে বসেন। এরপর বাসর ঘর হতে উঠে সোজা আল্লাহর রাসূলের (সা) কাছে এসে কাপড়ের কোনা দেখিয়ে বলেন, “এ লোকের কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু নাই। আমি এর সাথে থাকবো না।” আপনারা জানেন, আল্লাহর রাসূল (সা) সেই মহিলার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। সেই মহিলা তার পূর্বস্বামীর সাথে আবার বিয়ে বসেন।
তো, তাঁরা ছিলেন স্বাধীনচেতা। আমরা নারী বলতে পাক-ভারত উপমহাদেশে যা ভাবি, উনারা সে রকম দাসী-বাঁদি টাইপের ছিলেন না। যথেষ্ট ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ছিলেন। এর মানে এই নয়, তারা সংসারী ছিলেন না। এর মানে এই নয়, তারা ভোগবাদী ছিলেন।
আচ্ছা, আদর্শ মুসলিম নারী বলতে আমরা কেন সবসময় উম্মুল মুমীনিনদেরই বুঝাই? এখানেও মতলব আছে। বউ যখন হবো তখন সেনাপতিরই হবো, এই ধরনের মনোভাব। কেন, আপনাদের মনে হযরত আসমার (রা) কথা আসে না? যিনি বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে স্বামীর খেজুর বাগানে কাজ করার জন্য যেতেন। একদিন তিনি মাথায় বোঝা নিয়ে আসছিলেন। পথে আল্লাহর রাসূলের (সা) সাথে দেখা। রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে নিজের সওয়ারির পিছনে উঠার অফার করলে হযরত আসমা (রা) তা বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেন। পরে হযরত আসমা (রা) বলেছেন, আল্লাহর রাসূলের (সা) পেছনে উঠতে তাঁর ইচ্ছা করছিলো। কিন্তু সেখানে অন্য লোকজন থাকায় এবং স্বামী জোবায়েরের (রা) অত্যধিক আত্মসম্মানবোধের কারণে তিনি তা করেন নাই। এ ঘটনা হতে আমরা কী শিক্ষা পেলাম?
হ্যাঁ, আপনাদের প্রিয় তাফহীমুল কোরআনে গায়রে মাহরাম আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ককে মাওলানা মওদূদী এক ধরনের কোয়াজি রিলেশানের, আই মিন, ইন বিটুইন ধরনের ব্যাপার হিসাবে দেখেছেন। বিশ্বাস না হলে আবার পড়ে দেখুন। মনে পড়ে, সদ্য বিবাহিত এক নারী শ্বশুর বাড়িতে পর্দা রক্ষা সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে মাওলানা মওদূদীর পরামর্শ চাইল তিনি হ্যাঁ-না জাতীয় উত্তর না দিয়ে তাকে পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষা করাকে অধিক গুরুত্বারোপ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কেউ চ্যালেঞ্জ করলে আমি এর রেফারেন্স খুঁজে বের করতে পারবো, ইনশাআল্লাহ। এই প্রশ্নোত্তরটা তখনই আমার মনে দাগ কেটেছিলো।
দুনিয়াটা অনেক বড়। জীবনটাকে হলিস্টিক্যালি দেখতে হবে। বিদ্যমান কোনো লোকাল সমাজ বাস্তবতার আলোচনা-পর্যালোচনাকে সংশ্লিষ্ট আদর্শের তত্ত্বগত বিশ্লেষণ থেকে পৃথক করে বিবেচনা করতে হবে। পাঠকের কাছে ক্লিয়ার থাকতে হবে, আপনি সংশ্লিষ্ট বিষয়টাকে কোন আসপেক্ট হতে দেখছেন। থিওরি, হিস্ট্রি ও প্র্যাকটিক্যালিটিকে গুলিয়ে ফেলে ঢালাও মন্তব্য করা ঠিক নয়। এতে সমাজ গঠনের পরিবর্তে সমাজে বিশৃংখলা তৈরি হবে।
জানি, খুব কম পাঠকই আমার লম্বা-চওড়া লেখাগুলো পড়েন। একে তো বড়, তার উপর আবার তাত্ত্বিক। আমার লেখা পড়ার ক্ষেত্রে পাঠকের এরচেয়ে বড় যে সমস্যা তা হলো আমার কথাগুলো লাইক-বুভুক্ষু বা পপুলিস্ট ট্রেন্ডের নয়। তাই পাঠকের কাছে তা ‘কেমন যেন’ মনে হয়। আমি সমসময়ই আমার মনের কথাগুলো বলি। একেবারে অকপটে। জাস্ট স্পিক দা মাইন্ড। একজনও যদি বৃত্তের বাইরের পাঠক পাই, তবে এ লেখা সার্থক।
লিখলে অনেক কথাই লেখা যায়। ঘুমাতে না গিয়ে কেন যে কীবোর্ডে হাত দিলাম…!
আল্লাহর রাসূল (সা) কখনো ভাত খান নাই। আমরা জানি। তাহলে আমরা যে দুই বা তিন বেলা ভাত খাই, আমরা কি খাওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূলকে (সা) অমান্য করছি না? প্রশ্নটা খুবই সিলি। মানলাম। কিন্তু এর শিক্ষাটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ইচ্ছা করছে, পাঠকদেরকে ইউসুফ কারজাভী ও তার শিক্ষক মুহাম্মদ আল গাজালীর লেখা একই শিরোনামের ‘কাইফা না-তায়ামালু মায়াল কোরআন’ (কীভাবে আমরা কোরআন বুঝবো) ও ‘কাইফা না-তয়ামালু মায়াসসুন্নাহ’ (কীভাবে আমরা সুন্নাহকে বুঝবো) শীর্ষক এই বই চারটির অন্তত কোনো একটা পড়তে বলি। বই চারটা বললাম এ জন্য, তাঁরা গুরু-শিষ্য দুজনে একই নামে একই বিষয়ে বই লিখেছেন। Approaching to Sunnah শিরোনামে আল্লামা কারজাভীর একটা বই বাজারে পাওয়া যায়।
যা হোক, আল্লাহর রাসূলের (সা) বাবা-মা-পোষ্যরা যদি জীবিত থাকতেন তাদের জন্য তিনি কি ‘ওল্ড হোম’ টাইপের ব্যবস্থা করতেন? বৃদ্ধ বয়সে দুনিয়ার অন্য যে কোনো নামিদামি বস্তু বা প্রাপ্তির চেয়েও প্রিয়জনের সাহচর্যের আকাঙ্খা মানুষের মধ্যে প্রবল হয়ে উঠে। আমাদের ইসলামী নারী নেত্রীদের সবাইকে কোরআন-হাদীস-সীরাতের পরিবার সংক্রান্ত অংশগুলোর পাশাপাশি পারিবারিক সংকট ইত্যাদির ওপর বেশি বেশি সিনেমা দেখার কথা বলবো। আপাতত অস্কার পাওয়া ইরানী ছবি The Separation দেখতে পারেন।
সংবেদনশীল মন, গভীর পর্যবেক্ষণ ও ট্রু সিনসিয়ারিটি থাকলে কোরআন-হাদীস ইত্যাদি তেমন না পড়েও যে কেউ সত্যকে জানতে ও বুঝতে পারে এবং সে মোতাবেক চলার পথে উদ্ভূত সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু সমাধানও খুঁজে পেতে পারে। যেমনটা ছিলেন, আমার হাফ-পড়া নন-ক্যারিয়ারিস্ট মা। যেমন এনলাইটেন্ড এন্ড প্রপারলি গাইডেড ছিলেন আমার গণ্ডমূর্খ অশিক্ষিত দাদী। এই শুদ্ধ জীবনবোধের কারণেই আমাদের দাদী-নানী-মা-চাচী-খালা-ফুফু ও বোনেরা মানবিক সম্পর্কসূত্রসমূহের গুরুত্ব ও সীমা অনায়াসে ও সঠিকভাবে বুঝতে পারেন। ডিগ্রি না থাকলেও তাদের core of knowledge বলতে যা বুঝায় তা ছিলো।
পাশ্চাত্য ধারার আধুনিকতা ও ক্ষমতায়ন এক ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিয়েছে। অস্বীকার করার উপায় নাই, এশিয়ান মুসলিম সমাজে নারী অধিকারের যত কথাবার্তা ও কাজকর্ম, তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাশ্চাত্য ফেমিনিজমের প্রভাবে নানা মাত্রায় প্রভাবিত। বলা উচিত ‘দূষণে দূষিত’। পাশ্চাত্য নারীবাদের সমাপ্তপ্রায় তৃতীয় ধাক্কার (third wave) এই সময়ে এটি অতি স্পষ্ট, পাশ্চাত্য সভ্যতা হলো পরিবারবিরোধী। ইসলামী সমাজ হলো পরিবারকেন্দ্রিক। অতএব, এখানকার সব ক্ষমতায়নের কথা হতে হবে এখানকারই অবস্থা ও ঐতিহ্যের আলোকে। পাশ্চাত্যের ‘পাশবিক নারীবাদের’ কোনো ইসলামী ভার্সান এখানে চলবে না। অন্তত এ দিক থেকে পাশ্চাত্য সভ্যতাকে একশ ভাগ অস্বীকার করেই আমাদের নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় পথ চলতে হবে। তাই কোনো ধরনের ‘ইসলামী নারীবাদের’ আমি ঘোর বিরোধী। এই অর্থে, চাই না নারীর ক্ষমতায়ন। চাই, নারী ও পুরুষের অম্লমধুর মিতালী, কর্মক্ষেত্রের মোটাদাগে বিভাজন ও মানবিকতার অব্যাহত উন্নয়ন।
২য় পর্বের লিংক: যৌথ পারিবার ব্যবস্থা প্রসংগে ‘ইসলামী নারীবাদ’ বিষয়ক কিছু অনুক্ত বয়ান-বৃত্তান্ত (অবশিষ্টাংশ)
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য:
Ahsan Habib: আলহামদুলিল্লাহ্ একটানা পড়ে গেলাম, পাশে আমার প্রিয় স্ত্রীও আগ্রহ নিয়ে শুনেছে। মন্তব্য করলেন, পুরুষরা নারীদের সেই সম্মানের জায়গায় রাখে নাই, বুঝে কিংবা না বুঝে হোক তারা প্রিয় নবীর (সা) অনুসরণ থেকে দিনে দিনে অনেক দূরে সরে গেছেন, নারীরা তাদের দাদা-বাবা-ভাই-স্বামী-ছেলেদের কাছে সেই অনুসরণীয় শিক্ষা পায়নি। সুতরাং প্রথমে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি ও তার অনুশীলনের মাধ্যমে প্রতিটি সংসারে অনুকরণীয় উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। এটা তাদেরই প্রধান দায়িত্ব। কারণ এ ব্যাপারে প্রচুর অবহেলা হয়েছে।
Mo Min: স্যার গভীর রাতে কিবোর্ডে হাত রেখেছিলেন বলেই গভীর রাতে আপনার লিখাটা পড়ার সৌভাগ্য হলো, জাযাকাল্লাহু খায়র।
সেই ইসলামী নারীবাদীর লিখাটা পড়ে আমিও হতাশ হয়েছিলাম কিছুটা, কারণ পড়ার মাঝেই বুঝেছিলাম যে লিখাটা একেবারেই একপেশে এবং কোন একটা পক্ষকে ‘হিট’ করে লিখা। সংস্কার অবশ্যই সাধুবাদের যোগ্য তবে সেটা হওয়া দরকার পজেটিভ ওয়েতে। উনার আগের কিছু লিখা পড়েও আমি হতাশ ছিলাম। হতাশ হলেও জবাবী লিখার যোগ্যতা ও জ্ঞানের অভাবে কিছু বলা হয়নি। আশা করি আপনার লিখাটা পড়ে উনি আরেকবার হলেও নতুন করে চিন্তা করবেন। সে যাই হোক, অত্যন্ত চমৎকারভাবে সুন্দর একটা বিশ্লেষণের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার।
কারো কারো লিখা পড়লে মনে হয় শুধু ইসলামের ‘সর’টা উনারা খেতে চান, অর্থাৎ যা শুধু উনাদের মতের সাথে মিলবে, বাকিসব যেভাবেই হোক এড়িয়ে যেতে হবে!
দুঃখজনক হলো অনেক বড় বড় পন্ডিত ব্যক্তিবর্গরাও নির্দ্বিধায় ওই সমস্ত নারীবাদীদের সাপোর্ট দিয়ে লাইক শেয়ার কমেন্টে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। জানি না উনাদের আপনার এ লিখা পড়ার সুযোগ হবে কিনা!
আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ সময়োপযোগী এ লিখার জন্য।
Mohammad Mozammel Hoque: অনেকেই একজন ‘ইসলামী নারীবাদীর’ যে লেখাটার কথা রেফার করেছেন, মজার ব্যাপার হলো, আমি এ মুহূর্ত পর্যন্ত লেখাটা পড়িই নাই। এক ছোট বোন উনার সফট ডিফেন্সে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে আমাকে ট্যাগ করার পরে সেখানে আমি একটা সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করি। পরে অপর এক স্নেহাষ্পদ ছোট ভাই উক্ত ‘ইসলামী নারী অধিকার নেত্রীর’ লেখাটা পড়ে আমাকে বললো, (সে চবি’র ছাত্র ছিলো) স্যার, আপনি অমুকের ভাইরাল হওয়া লেখাটা পড়ে এই মন্তব্যটা করেছেন, তাই না? আমি বললাম, কেন তুমি এটা বলছো? আমি তো লেখাটা পড়ি নাই। ওই অসহিষ্ণু লেখিকার লেখা পড়া বাদ দিয়েছি কয়েক বছর হতে। তখন সে বললো, আপনার মন্তব্যটা তো মোস্ট একুরেট হয়েছে। সেটা না পড়ে কীভাবে আপনি এপ্রোপ্রিয়েট মন্তব্য করলেন…!
সেখানে করা মন্তব্যটা হলো: “নতুন সমাজ গড়তে হলে নারীদের মধ্যে কাজের নতুন ধারা তৈরী করতে হবে। এই নতুন ধারা সমাজের রক্ষণশীল ও প্রগতিশীল ধারাকে সমন্বয় করে একটা মধ্যবর্তী ধারা হিসাবে ভূমিকা পালন করবে।
নারীদেরকে বুঝাতে হবে, তারা আগে মানুষ, এরপর নারী। নারীদের অধোগতির জন্য নারী নেত্রীদের দায়ও কিছুমাত্র কম নয়। এমনকি ইসলামী নারী নেত্রীদের বেলায়ও এটি প্রযোজ্য। কেন তারা পুরুষদের জন্য অপেক্ষা করে, যে তারা (পুরুষরা) এসে তাদের (নারীদের) অধিকারগুলো দিয়ে দিবে? এটি পুরুষ-মুখাপেক্ষিতার পরিচয়।
“সতীত্ব = মনুষ্যত্ব” – নারীদের ব্যাপারে এমন একটা ধারণা পোষণ করা হয়। উভয় তরফ থেকেই। আসলে “নৈতিকতা = মনুষ্যত্ব” – সমীকরণটা এমনই হওয়া উচিত। বলাবাহুল্য, যৌন নৈতিকতা, নারীদের ক্ষেত্রে যাকে সতীত্ব বলা হয়, তা হলো নৈতিকতার একটা অংশ বা দিক মাত্র।
নারীদের মধ্যে কাজের ব্যাপারে আমি খুবই আগ্রহী। আল্লাহ তৌফিক দিলে কোমর বেধে নামবো, ইনশাআল্লাহ।”
Mo Min: স্যার, নারীদের কাজের ব্যাপারে কোমর বেঁধে নামা সময়ের দাবী। কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের সমাজ এখনও নারীদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি না হলেও অধিকাংশেই ব্যর্থ। পাশ্চাত্যে নারীরাও নিগ্রহের শিকার হয়, এমনকি কোন কোন পার্সপেক্টিভে অনেক বেশী; কিন্তু তারা কর্মক্ষেত্রে ঠিকই নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
আমাদের সমাজে নারীদের স্বাধীনতার কথা যারা বেশী বলে তারা আসলে নারী সংস্পর্শ পাওয়ার আশায়ই বলেন, সত্যিকারের স্বাধীনতা তারা চায় না বলেই কেন যেন আমার মনে হয়।
ফার্স্ট প্রায়োরিটি আসা দরকার কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
আমার স্পষ্ট মনে আছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরই কোন একজন বয়স্ক প্রফেসর (যিনি নিজেকে কট্টর মুক্তমনা দাবী করেন) তিনি একবার তার ডিপার্টমেন্টে নারী শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, “মেয়েরা টিচার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় লেবেলে একেবারেই থার্ড ক্লাশ, তারপরেও ডিপার্টমেন্টে মেয়ে কলিগ না থাকলে রসহীন মনে হয়, হো হো।” (কথাটা লিটারালি এদিক সেদিক হতে পারে কিন্তু মেসেজ একশতভাগ এমনই ছিলো)। তো এমন ‘রসে’র জন্য যারা নারী কলিগ চায় তারা আসলে নারীদের কতটা সম্মান করবেন, তা আমার ধারণার অতীত!
Mahmudur Rahman: Women are broadly subjugated in our society. Whatever we see from their writing is disrespect to the injustice. So, we should pay attention and listen to them. We should help them/us to get out of this mess, instead of bullying and/or keeping us away from them.
Mohammad Mozammel Hoque: Nobody is “bullying” anybody at least in this post.
Mahmudur Rahman: Sir, I didn’t mean so. A lot other people are doing. I had to be precise. I didn’t include you with that for sure.
Mohammad Mozammel Hoque ওই তো জিদাজিদির ব্যাপার …!! কিছু লোক যুক্তি ও তথ্যকে এবিউজ করে তাদের কারো ওপরে জয়ী হওয়ার জন্য। এ ধরনের পাল্টাপাল্টি জয়-পরাজয় দিয়ে আর যাই হোক, কনসেপ্টচুয়্যাল ডিভেলপমেন্ট হয় না। আমি ওসবে নাই। এবং এ ধরনের কোনো প্রবণতাকেও প্রশ্রয় দেই না। তবে, যে কোনো ফেয়ার ডিবেটকে স্বাগত জানাই।
Tohur Ahmad Hilali: লেখাটি পুরোপুরি পাঠ করলাম। খুবই ভালো লাগলো। পাশ্চাত্য ধ্যান-ধারণায় উজ্জীবিত কিছু ইসলামী লেবাসের মহিলা আমাদের পরিবার প্রথাকে ভেঙ্গে দিতে চাচ্ছে এবং ইতোমধ্যে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। সাধারণত তাদের লেখাগুলো আমি উপেক্ষা করে চলি। পরিবারের নিকটতম সদস্যদের সাথে সম্পর্ক না রাখার পক্ষে তারা। ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা এবং পরিবার ব্যবস্থা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্পষ্ট। এখানে পিতা-মাতা, স্ত্রী, সন্তান, অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন, এমনকি চাকর-বাকর সবার অধিকার সংরক্ষিত। ইসলামে তালাক বৈধ কিন্তু খুবই নিন্দনীয়। কোন পিতা-মাতা যদি চান যে তার সন্তান স্ত্রীকে তালাক দিক তাহলে সন্তান বাধ্য। হযরত ওমর (রা) ও তাঁর সন্তান আব্দুল্লাহর (রা) ঘটনা এর উদাহরণ। অথচ এইসব নারীবাদীরা এগুলো উপেক্ষা করে চলে। ইসলামে পিতা-মাতার স্থান যেমন সর্বাগ্রে, আবার স্ত্রীকেও পুরুষের সম মর্যাদা দান করেছে। কুরআনে বলা হয়েছে ঈমানদার পুরুষ ও নারী পরস্পরের বন্ধু ও সাথী। হাদিসে বলা হয়েছে, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। ইসলাম চায় সবার সাথে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে।
Rafiqul Hoque: Your grandmother was not uneducated, she was unlettered for institutional reading and writing are not the only way to be learned one.
Sumaiya Habiba: আমিও গত কিছুদিন থেকেই ফেইসবুকের নিউজফিডে দেখতে পাচ্ছি একই টাইপ পোস্ট। তখনই বুঝেছি আবার ফেইসবুকাররা কিছু একটা নিয়ে মেতেছে! খুব একটা সময় দিতে পারি না, তাই তাদের পোস্ট, পাল্টা-পোস্ট পড়ার সময় পাইনি। তবে আপনার লেখা আর কমেন্ট থেকে বুঝলাম ইসলামী ভাবাপন্ন নারীদের কাছ থেকে কিছু জটিলতামূলক পোস্ট এসেছে। আর তাতেই সবাই শোরগোলে মেতেছে! এটা আমার মনে হলো। আসল ব্যাপার জানি না। তবে, যে বিষয়টায় আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি তাহলো, ইসলামী নারীনেত্রী বলেছেন, (সরাসরি না বললেও আপনিও জানেন আপনার লেখায় বিশেষ একটা গ্রুপের ইংগিত আছে। আমার বুঝার ভুল থাকতে পারে। তবে আমার মনে হলো তাদেরই বুঝিয়েছেন) এবং, যেমন বললেন “আপনাদের প্রিয় তাফহিমুল কুরআন!” যদি তাদের ইংগিত সত্যিই করে থাকেন তাহলে, আবার বলছি তাহলেই আপনাকে জানাচ্ছি সে গ্রুপের নারীনেত্রীরা আদতে এ জাতীয় প্যাঁচালগুলোতে কম থাকে। তাদের গোল আবার আলাদা। এ জাতীয় হাবিজাবিতে থাকে সহীহ আকীদা প্রচার বা সহীহ দ্বীন প্রচারক কিছু দ্বীনি বোন। যারা ইসলামটাকে পেয়েছেন মূলত ভার্চুয়ালি। এতদুভয়ের সাথেই আমার বেশ জানাশোনা আছে। এদের একদম ভেতর থেকে দেখা জানার সুযোগ আমার হয়েছে। ইভেন, এখনও দেখছি উভয়কেই।
তবে, হ্যা, একটি ক্ষুদ্র গ্রুপ আছে যাদের প্রথমোক্ত গোষ্ঠীর সাথে লিংক ছিলো এককালে। বা লতায়পাতায় জরাজরি ছিলো। কিন্তু বেইসিক্যলি তাদের ওই ক্যাটেগরিতে ফেলা যায় না! আমি তাদের আলাদা এক গোষ্ঠী হিসেবেই দেখেছি নিজেদের উপস্থাপন করতে। এবং আপনার ইন্ডিকেইটেড দলের সাথে তাদের রেষারেষি নেহাৎ কম নয়। তাদের অনেক বিষয়ে অনেক কিছুই বলার থাকতে পারে, থাকতেই পারে, এবং বাস্তবিকপক্ষে আছেই, তবে আপনার পোস্টের বিষয়বস্তুর সাথে তাদের মূলধারার অধিকাংশেরই যোগ নেই। খাঁটি বাংলায় বলতে গেলে- “তারা আছে তাদের তালে!” 🙂
আর বিষয়বস্তু নিয়ে বলছি আপনার ভিউ আমি বুঝেছি। আমারও এ সংক্রান্ত কয়েকটি কলাম আছে। আমি পত্রিকার মানুষ। তাই হয়তো ক্যাচাল নেই লেখা নিয়ে। তবে, আমার স্বল্প জ্ঞানে যতটা পেরেছি বাস্তবতার আলোকে লিখতে চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতেও লিখবো। আপনাদের পরামর্শ পেলে আরো মজবুত হবে লেখনি। দোয়া করবেন।