আপনি কি মনে করেন, কম্পিউটার ভবিষ্যতে মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে? মানুষের বুদ্ধিমত্তার লেভেল বা সিঙ্গুলারিটি যদি কৃত্রিম বুদ্ধি (AI) অতিক্রম করে যায়, তখনকার পৃথিবীতে কি মানুষের প্রজাতিগত নিরাপত্তা বজায় থাকবে? ভবিষ্যতের কম্পিউটারের কি নিজস্ব নৈতিকতা থাকবে? থাকলে, তা কি মানুষের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন হবে? যদি না হয়? এসব প্রশ্ন নিয়ে আমার একটা নিজস্ব তত্ত্ব আছে। সেটা হলো Constant Gap Theory বা CGT।
যখন আপনি কোনো কিছু ক্রয় করতে চান। ধরুন, সেটির মূল্য ৫০ টাকা। কিন্তু আপনার কাছে আছে ৫ টাকা। তাই আপনি টাকা জোগাড় করতে থাকলেন। এক পর্যায়ে আপনি ৫০ টাকার মালিক হলেন। ততদিনে জিনিসটা দাম হয়ে গেছে ৫০০ টাকা। আবারো আপনি টাকা জোগাড় করতে থাকলেন। যখন আপনি ৫০০ টাকা জোগাড় করে বাজারে গেলেন। তখন দেখলেন ততদিনে জিনিসটার দাম হয়ে গেছে ৫০০০ টাকা। বুঝতেই পারছেন, এ হলো Constant Gap Theory। আপনার ক্রয়ক্ষমতা ও দ্রব্যমূল্য, উভয়ই সমানতালে ঊর্ধ্বমুখী। ফলাফল হলো, শেষ পর্যন্তও আপনি কাঙ্খিত পণ্যটি হস্তগত করতে ব্যর্থ হলেন। দূর থেকে মনে হয়, ওই ওখানে রেললাইন দুটো একসাথে মিলে গেছে। যেন ওইটাই সিঙ্গুলারিটি পয়েন্ট। দূর থেকে মনে হয়, ওই তো ওখানে আকাশ আর মাটি একসাথে মিশে গেছে। কাছে গেলে দেখবেন, আকাশটা এখনো সমপরিমাণে উঁচুতে।
রেনেসাঁ পরবর্তী সময়ে ইউরোপে বৈজ্ঞানিক আবিস্কার নিয়ে যে অতি আশাবাদ গড়ে উঠেছিলো, এআই নিয়েও বর্তমানে বস্তুবাদী বৈজ্ঞানিক মহলে তেমনই অবাস্তব ধ্যানধারণা গড়ে উঠেছে। ষোড়শ-সপ্তদশ শতকের যান্ত্রিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানীরা মনে করেছিলো, এই তো মানুষ বানানোর উপাদানগুলো সম্বন্ধে আমরা ‘পূর্ণাঙ্গ’ জ্ঞান পেয়ে গেলাম বলে…! মানুষ বানানোটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। অথচ, এখন দেখা যাচ্ছে, বিশালত্বের অসীমতার চেয়ে ক্ষুদ্রত্বের অসীমতা কিছুমাত্র কম নয়। infinity in either directions. আমার ধারণায় কৃত্রিম বুদ্ধি নিয়ে এই উচ্ছ্বাস কয়েক দশকের মধ্যে স্তিমিত হয়ে আসবে।
সে যা-ই হোক, কর্মদক্ষতাকে যদি শ্রেষ্ঠ হওয়ার মানদণ্ড হিসাবে বিবেচনা করা হয় তাহলে মেশিন ইতোমধ্যেই মানুষকে ছাড়িয়ে গেছে। এটি অবভিয়াস। কিন্তু সৃষ্টিশীলতার দিক থেকে মেশিন এখনো মেশিনই রয়ে গেছে। অনাগত যে কোনো ভবিষ্যতেও মেশিনের অকল্পনীয় দক্ষতা বৃদ্ধি সত্ত্বেও মেশিন সৃষ্টিশীলতার দিক থেকে কখনো মানুষকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না। মানুষ ভুল করে। মানুষের আবেগ আছে। মানুষের আছে জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ। মানুষ নিজেকে ছাড়িয়ে, জগতকে ছাড়িয়ে, এমনকি স্রষ্টাকেও ছাড়িয়ে যেতে চায়। শেষ পর্যন্ত, হয়তো সে আত্মসমর্পণ করে। তখন সে হয় বিশ্বাসী। অথবা, সে অপরিমেয় (?) আত্মশক্তির ওপর ভরসা করে বিশ্বাসহীনতার সাথেই ঘর বাঁধে। কোনো বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী যন্ত্র হওয়ার সম্ভাবনাটা বাই-ডেফিনেশন, অসম্ভব।
আমার মনে হয় না মেশিন এ পর্যায়ে যেতে পারবে। ‘আমার মনে হয় না’ – এটুকু বলে যে কেউ তুষ্ট থাকলেও ফিলোসফির লোক হিসাবে আমাকে যুক্তি দিতে হবে, কেন আমি সেটা মনে করি না। এই ভিডিওতে সেই যুক্তিই পাবেন। এর প্রতিযুক্তিও পাবেন। এতে আমি দেখিয়েছি আস্তিক-নাস্তিক উভয় ধরনেই কনস্ট্যান্ট গ্যাপ থিওরি একটা সুসামঞ্জস্য যুক্তি।
“https://www.facebook.com/MH.philosophy/videos/1854696877880772/”
ফেসবুকে প্রদ্ত্ত মন্তব্য–প্রতিমন্তব্য
Aminul Huda: What are your thoughts on transhumanism? What challenges (ethical and moral) do you think Muslims will face in a transhuman world? Also, do you think libertarian economic philosophy is compatible with Islam?
Mohammad Mozammel Hoque: ট্রান্সহিউমেনিজম সম্পর্কে পোস্টে দেয়া লিংকে ভিডিওটা দেখেন।
Moniruzzaman Monir: কিছু বিষয় হচ্ছে হবে। তবে রাগ হাসি কান্না বা কাউকে ক্ষমা করা বা এইটা কতটুকু খারাপ ভালো এগুলো পারফেক্টলি কখনই সম্ভবপর বলে আমার মনে হয় না।
Mohammad Mozammel Hoque: simulation of emotion is possible, but intrinsic emotion is not possible. The first one is called weak AI and the second one is called strong AI.
Humayun Kabir: অনেকদিন পর একটু ফিলোসফি……আমাদের সময় (2003-2004) এমন কোর্স পাইনি। ভাল লাগল স্যার……….অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Mohammad Mozammel Hoque: “Philosophical Aspects of Artificial Intelligence” – Wahed Sujanদের সময় থেকে পড়াচ্ছি। আমার জানা মতে, আমাদের দেশে কিংবা আশপাশের কোনো দেশের ফিলোসফি ডিপার্টমেন্টে এ ধরনের কোনো কোর্স পড়ানো হয় না।
Wahed Sujan: এ সুযোগে পুরনো লেখাটা শেয়ার করলাম: আমার ভাব-ভাষা কি আসলেই আমার
Farid A Reza: শুনলাম। ইন্টারেস্টিং। সিটিজি আছে, চলবে। কিন্তু মেশিনের স্রষ্টা তো মানুষ। তাই মেশিনের দক্ষতা ও ক্ষমতার উৎস হচ্ছে মানুষের মেধা। আমরা সকল ক্ষেত্রেই মাঝে মাঝে স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টির ক্ষমতার ব্যাপারে ভুল করি। মনে হয় যেন স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টি এগিয়ে গেলো। আসলে তা নয়। মানবশিশু এবং শিম্পাঞ্জির উদাহরণটা চমৎকার। মানুষের সম্ভাবনা অফুরন্ত। তাই আমার মতে মেশিন কখনো মানুষকে অতিক্রম করে যেতে পারবে না। মেশিন আকাশে উড়ে, মানুষ পারে না। কিন্তু মেশিন ততটুকুই উড়তে পারে যতটুকু মানুষ ঠিক করে দেয়।
Maruf Karim: পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে ভার্চুয়াল ক্লাসটা সম্পন্ন করলাম। খুব ভালভাবে বুঝতেও পারলাম। এই সিজিটি টপিকটা সরাসরি ক্লাস করে অতটা বুঝিনি এখন যা বুঝেছি। তখন কেন বুঝিনি কারণটা এই মুহূর্তে মনে করতে পারছিনা!! অনেক ভালো লাগল স্যার। ধন্যবাদ। মাঝে মাঝে এরকম আরও টপিক নিয়ে লাইভ ক্লাস নিলে আমরা প্রাক্তনরাও একটু ক্লাসের স্বাদ নিতে পারি…!!
Mohammad Ahsanul Haque Arif: মেশিন লার্নিং এবং কম্পিউটার ভিশনের উপরে পিএইচডি করতে গিয়ে এ ব্যাপারে শ্রদ্ধেয় মোজাম্মেল ভাই থেকে আমার আন্ডারস্ট্যান্ডিং বেশ কিছুটা স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড। মানুষ ও মেশিন কে কাকে অতিক্রম করবে এ ব্যাপারে প্রথমে ডিফাইন করা দরকার কি ক্ষেত্রে অতিক্রম করার কথা বলা হচ্ছে। এরপর স্টেপ বাই স্টেপ প্রক্রিয়াগুলো ব্যখ্যা করা যেতে পারে যে মানুষ কতটুকু পারে বা পারবে, আর মেশিনকে কতটুকু করানো যেতে পারে। সাধারণভাবে মানুষের ক্যাপাসিটি বলতে আমরা যা বুঝি তার বিরাট অংশই মেশিন দ্বারা মিমিক করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ক্রিয়েটিভিটি, আবেগ… এমনকি এ জাতীয় বিষয়গুলোকেও মিমিক করা যেতে পারে। এগুলো এমনকি বর্তমানেই সম্ভব অনেকাংশে। বিস্তারিত কথা বলার আগ্রহ আছে। দেখা যাক। 🙂
Mohammad Mozammel Hoque: আপনি zombie argumentটাকে মনোদর্শের দিক থেকে কীভাবে দেখেন? Is zombie possible?
মোহাম্মাদ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী: আস্তিকতা বা নাস্তিকতা নিয়ে লেখার পর্যাপ্ত জ্ঞান আমার নাই, তবে এই দুটি বিষয়ের উপর বিজ্ঞানের প্রভাব নাই বলে আমি মনে করি। বিজ্ঞানের অগ্রগতি কিন্তু Constant Gap Theory-কে হার মানিয়েছে বলে আমি মনে করি। হাজার বছর ধরে বিজ্ঞান এমন অনেক কিছুই দিয়েছে যে সময় ঐ আবিস্কার বা উদ্ভাবনকে অসম্ভব মনে হত, এভাবে চাহিদা ও অর্জনের singularity অনেকবার অর্জিত হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা ঘটমান বর্তমানে আমরা পুরাঘটিত বর্তমানকে ব্যবহার করছি না। এ যেমন ধরুন ‘রকেট, আবিস্কারের সাথ সাথে মানুষ অধরা চাঁদ ধরল। সাথে টেলিস্কোপ অদেখা ভুবন, constant gap, দেখল এবং রকেট পাঠিয়ে জ্ঞান নিল। Singularity is achieved, isn’t it? প্রতিটি ground breaking আবিস্কার কি একবার করে singularity philosophy কে স্পর্শ করছে না?
Mohammad Mozammel Hoque: অধরা চাঁদকে ধরার সাথে সাথে “ওই তো চাঁদ, ধরতে পারলেই সারা” – এই মনোভাবেরও অবসান হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে দূর থেকে সেটাকে যত স্মুথ দেখা গেছে, বাস্তবে সেটা অত স্মুথ না। ইত্যাদি। অর্থাৎ এক একটা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সাথে সাথে পূর্বেকার অজানা নতুন নতুন ফিল্ড বের হয়ে পড়েছে, যেগুলো এক্সপ্লোর করার জন্য পরবর্তী বৈজ্ঞানিকেরা হন্যে হয়ে চেষ্টা করছে। এখন তারা যেসব বিষয় নিয়ে চেষ্টা করছে, অভিজ্ঞতা ও যুক্তি বলে, এক সময়ে তারা সেগুলোও জানতে পারবে।
অভিজ্ঞতা ও যুক্তি সাথে সাথে Constant Gap Theory’র কথাও বলে। অর্থাৎ অতীতের অজানা সম্পর্কে বর্তমানে অনেক বেশি জ্ঞান লাভ করার সাথে সাথে আরও অকল্পনীয় বৃহত্তর ও ক্ষুদ্রতর জটিলতার মুখোমুখিও হতে হয়েছে।
দিগন্ত ছোঁয়ার মরীচিকার মতো ‘আসল’ জ্ঞান মানুষের শেষ পর্যন্ত আয়ত্বের বাইরে থেকে যাবে। আমার মতে, এটিই সেই বাস্তবতা নামক ‘অস্তিত্বহীন’ কালো বিড়াল, যা আমরা অভিজ্ঞতার অন্ধকার ঘরে নিয়ত খুঁজে বেড়াই।
মোহাম্মাদ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী: এইটা হচ্ছে বিজ্ঞানের recursion , প্রতিটি অধ্যায়ের সারসংক্ষেপ নতুন অধ্যায়ের সুচনা করে। এই প্রতিটি অধ্যায়কে আমি কিন্তু এক একটি মাইলফলক বলছি। সুতরাং প্রতিটি মাইলফলকে CGT collapse করবে, হয়তো নতুন সংজ্ঞা নিয়ে আসবে।
Mohammad Mozammel Hoque: সব সময়ে মনে হয় দিগন্তে আকাশ মাটির সাথে মিশে গেছে। যদিও সেখানে গেলে দেখা যায়, আকাশ এখনো সম উচ্চতায় উপরেই আছে। তেমনভাবে, বিজ্ঞানের প্রতিটি অগ্রগতি আমাদের জানার পরিধিকে সমান হারে বাড়িয়ে দেয়। যদি তাই হয় তাহলে তো Constant Gap Theoryই সঠিক।
There is no ultimate unit or building block. There is no theory of everything. Still, we like to feel self-satisfaction to ‘identify’ something as ultimate building block. It gives us self-satisfaction to ‘find’ a theory of everything.
Every age has its own kind of ‘ultimate unit’ and theory of everything.
This line of discussion also confirms CGT.
Abdullah Al Noman: নিউরো সাইন্টিস্টরা সফট কনশাসনেস নিয়ে কাজ করলে সাইকিয়াট্রিস্টরা কি নিয়ে কাজ করে?
Mohammad Mozammel Hoque: চেতনার হার্ড প্রবলেম প্রসঙ্গে ডেভিড শালমার্স