আমার কাছে মনে হয় ফিলোসফি বুঝার জন্য এই দুইটা বিষয়ের সম্যক জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। কথাটা উল্টাভাবে বললে, আমার ফিলোসফিকেল কথাবার্তা বুঝার জন্য এই দুইটা বিষয় সম্পর্কে ক্লিয়ার কনসেপ্ট থাকা জরুরী।

১. কোনো কিছুর সাথে কোনো কিছুর কী ধরনের সম্পর্ক, তা বুঝতে পারা। সম্পর্ক মাত্রই হয়তো contingent বা occasional, নাহলে necessary, অথবা identical। এর ব্যতিক্রম নাই।

২. raw events বা data, information, correlation, causation, reason ও explanation –এর মধ্যকার hierarchical রিলেশন।

আজ প্রথমটা নিয়ে কিছু কথা বলবো।

১ নম্বর কথা: ফিলোসফি সবকিছু নিয়ে ডিবেট করে, কথাটা ঠিক না। আমাদের চিন্তার কিছু আকার বা ফর্ম আছে, এটাকে স্ট্রাকচারও বলতে পারেন, যা যে কাউকে মানতে হয়। কোনো বিষয়ে আপনি হয়তো পক্ষ হবেন, অথবা বিপক্ষ হবে, কিংবা নিরপেক্ষ। এই triod এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই।

২ নম্বর কথা: এই দৃষ্টিতে বস্তুবাদ একটা self-refuting মতবাদ। কেননা, বস্তুর মধ্যে তো বস্তুবাদ নাই। বস্তুবাদ সহ যে কোনো ‘বাদ’ বা ইজম হলো নিতান্ত subjective বা বিষয়ীগত ব্যাপার। গণিত স্বয়ং বস্তু-নিরপেক্ষ বা বস্তু-উর্ধ ব্যাপার, যাকে আমরা abstract বলি।

৩ নম্বর কথা: ‘দুইটা কলম’ এর মাধ্যমে আমরা ‘দুই’এর সাথে পরিচিত হই, যাকে two হিসাবেও বলা যায়। তো, এসব ‘দুই’ কিংবা ‘two’ কে ডিলিট করে দিলেও ২-এর ধারণাটা থেকে যাবে।

৪ নম্বর কথা: ২-এর ধারণাটা থেকে যাওয়ার জায়গা হিসাবে স্মৃতির কথা বলতে পারেন। মনে করেন, কোনো এক জনপদে বিশেষ এক সংখ্যার কথা কেউ বলেনি। সেই বিশেষ সংখ্যাটাকে কেউ ‘আবিষ্কার’ করে নাই। এরফলে গণিতের স্থান-কাল-পাত্র নিরপেক্ষ নৈর্ব্যক্তিক (abstract) জগতে উক্ত সংখ্যা তো ‘নাই’ হয়ে যাবে না।

যেমন, আমেরিক মহাদেশ ‘আবিষ্কারের’ আগেও আমেরিকা মহাদেশ তো ছিল? নাকি, ছিলো না? থাকলে, থাকলে কীভাবে ছিলো?

৫ নম্বর কথা: অতএব, যতই বস্তুবাদী হোন, গণিতের বস্তু-নিরপেক্ষতা বা বস্তু-অতিরিক্ততা যাকে আমরা এবেসট্রেক্ট বা নৈর্ব্যক্তিকতা অনস্বীকার্য।

বলতে পারেন, কোনো না কোনো বস্তুকে দেখেই তো সংখ্যা বুঝা যায়। অতএব, সংখ্যা মানেই মূলত: বস্তু।

না। সংখ্যা মানেই মূলত: বস্তু না। ৩ নম্বর কথায় এ নিয়ে বলেছি। বস্তু হলো সংখ্যার প্রতীকায়ন বা উদাহরণ। বস্তুর মাধ্যমে আমরা সংখ্যাকে জানি বটে।

৬ নম্বর কথা: অভিজ্ঞতা অর্জন করে আমরা জানতে পারি, এই অভিজ্ঞতা ‘অর্জনের’ জন্য, ‘অভিজ্ঞতাটা’ অভিজ্ঞতা হয়ে উঠার জন্য ‘কিছু বিষয়’এর পূর্ব-উপস্থিতি জরুরী। যেমন, স্থান-কালের ধারণার কারণে কোনো কিছু ‘দেখা’ বা জানা হয়ে উঠে।

শুরু করার জন্য, তা যা-ই হোক না কেন, একটা ‘জায়গা’ লাগে। তো, শুরু করলে বা করার চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারি, এই ‘শুরুর জায়গা’টার আগেও ‘কিছু জায়গা’ ছিলো। না হলে, শুরুর জায়গা ফিক্স করা যায় না।

২০টাকা রিচার্জ করলে ২০টাকা বোনাসের মতো। রিচার্জের মাধ্যমে এই ‘অতিরিক্ত’ ব্যালেন্সটা পেলেও এটি তো ‘বোনাস’? নাকি?

৭ নম্বর কথা: তাহলে বুঝতেই পারছেন, প্রকৃত সংখ্যা যাকে আমরা নৈর্ব্যক্তিক বলছি, তার সাথে লিখিত বা উচ্চারিত ভাষানির্ভর সংখ্যা-রূপের সম্পর্ক হলো necessary বা আবশ্যিক সম্পর্ক।

এই সম্পর্ক identical বা অভিন্নতা বা একাত্মতার সম্পর্ক নয়।

৮ নম্বর কথা: অভিন্নতা বা একাত্মতা সম্পর্ক হলো এমন সম্পর্ক যা বাস্তব ও তত্ত্ব উভয় অবস্থাতেই অটুট থাকবে। P এবং Q –এর সম্পর্ক তখনই অভিন্ন হবে যখন Pকে বাদ দিলে Q-ও বাদ যাবে। P ছাড়া Qকে, Q ছাড়া Pকে পাওয়া যাবে না। আসলে এই ক্ষেত্রে P এবং Q হলো একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো একই জিনিস বা স্বত্তার দু’টা দিক মাত্র।

Studentshipএর সাথে curriculamএর সম্পর্ক অভিন্নতার সম্পর্ক।

৯ নম্বর কথা: ইংরেজী বর্ণমালার Q এবং U এর সম্পর্ক হলো অপরিহার্য। Q থাকলে U –ও থাকবে। যদিও আসলে দু’টি স্বতন্ত বর্ণ। প্র্যাকটিকেলি এই দু’টিা আলাদা করা না গেলেও একটিকে অপরটি ছাড়া কল্পনা করা যায়। তাই এদের মধ্যকার সম্পর্ক হলো আবশ্যিক সম্পর্ক।

হৃৎপিণ্ডের সাথে ফুসফুসের সম্পর্ক অপরিহার্য। অভিন্নতা নয়।

১০ নম্বর কথা: আমার পোষাকের সাথে আমার সম্পর্ক, নামের সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক, বইয়ের সাথে খাতার সম্পর্ক – এ ধরনের সম্পর্কগুলো occasional বা contingent সম্পর্ক।

Similar Posts

২ Comments

  1. স্যার সালাম , objective and subjective বিষয় নিয়ে এরকম একটা লেখার অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *