বিজ্ঞান কাজ করে পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে। দর্শন কাজ করে যুক্তির ভিত্তিতে। ধর্ম নির্ভর করে বিশ্বাসের উপর।

পর্যব্ক্ষেণ লব্ধ তথ্যকে বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞান কিছু প্রায়োগিক ও প্রত্যক্ষ জ্ঞান নির্মাণ করে। এতে দর্শনের কিছু মৌলিক স্বীকার্যকে সে ব্যবহার করে।

বিজ্ঞানের এসব ফাইন্ডিংসকে নিয়ে দর্শন বৃহত্তর পরিসরে কাজ করে। ফলে, একই বিষয়ে দর্শন নানামুখী তত্ত্ব ও মতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিবেচনার আওতা বা পরিধি যত বাড়ে, ‘প্রমাণ’ তত দুর্বল হয়, যুক্তির প্রয়োজনীয়তা তত বাড়ে। পরিণতিতে বিরোধ তত প্রকট হয়।

তো, দর্শনের এই নানাবিধ বিকল্পের মধ্য হতে ব্যক্তি মানুষ হিসাবে দার্শনিকরা একটা মত বা তত্ত্বকে সঠিক হিসাবে গ্রহণ করে। এ পর্যায়ে সে এক ধরনের উভয় সংকট ও আত্মবিরোধের মুখোমুখি হয়।

কোনো বিষয়ে বিরোধপূর্ণ বিকল্পের মধ্য থেকে যখন সে কোনো একটাকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয় তখন সে দর্শনের অবাধ যুক্তিচর্চার নীতিকে ভংগ করে। আবার সেটি না করে নিরপেক্ষ থাকার সুযোগও তার থাকে না।

ফলকথা হলো, কোনো একটা বিশ্বাসব্যবস্থার অধীনতা দিনশেষে তাকে মানতেই হয়। হোক সেটি বুদ্ধিবাদ, অভিজ্ঞতাবাদ বা অন্যকিছু।

আমরা জানি, বাদ তথা মতবাদ মানেই এক প্রকারের বিশ্বাসব্যবস্থা। বিশ্বাসব‍্যবস্থা হতে পারে যুক্তিনির্ভর, হতে পারে নিছক আবেগনির্ভর। আবার, যুক্তিনির্ভর বিশ্বাসব‍্যবস্থামাত্রই একই ধারার হবে, এমনও নয়।

একেকটা ধর্ম এক প্রকারের স্বতন্ত্র ধারার বিশ্বাসব্যবস্থা। আচার-অনুষ্ঠান বা রিচুয়্যালস হলো উক্ত প্রকারের বিশ্বাসব্যবস্থার বহিঃপ্রকাশ।

ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানকে যারা পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড় করায়, তারা black & white বা either-or ফ্যালাসির শিকার। বস্তুত এগুলো একটা আরেকটার পরিপূরক। দর্শন বিজ্ঞানকে কাজে লাগায়। নিজেও উপকৃত হয়। ধর্ম দর্শনকে কাজ লাগায়। আবার নিজেও উপকৃত হয়।

তাই, যারা বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকে প্রমাণ বা খণ্ডন করার চেষ্টা করেন, তারা এই ত্রিবিধ ডোমেইন অব নলেজের অন্তঃসম্পর্ককে গুলিয়ে ফেলেন। এ ধরনের হীনমন্যতাসুলভ অপযুক্তি চর্চার মাধ্যমে তারা ধর্ম, বিজ্ঞান বা দর্শনের অপব্যবহারই করেন। যদিও তারা সেটি বুঝতে পারেন না।

অভিজ্ঞতা, যুক্তি ও বিশ্বাস – এই ধারায় বিজ্ঞান, দর্শন ও ধর্মের ক্রমসোপানমূলক সম্পর্ককে বুঝার জন্য এই ভিডিও বক্তব্যটা আপনার কাজে লাগতে পারে। একজন মাত্র শ্রোতার সামনে মাস চারেক আগে আধ ঘণ্টার এই ‘বাংলিশ’ একসেন্টের বক্তব্যটা উপস্থাপন করেছিলাম। দেখেন আপনার কেমন লাগে। বুঝতেই পারছেন, আলোচনাটি অনানুষ্ঠানিক। এবং চলমান বুদ্ধিবৃত্তিক গেরিলা যুদ্ধের অংশ।

[আজ সকালে ‘ছায়াপথের‘ একটা লেখা শেয়ার দিতে গিয়ে নিচের এই ফরোয়াডিংটা লিখেছিলাম। তেমন রেসপন্স দেখলাম না। তাই আমার ভিডিও বক্তব্যের এই পোস্ট। এ বিষয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ লেখার ইচ্ছা আছে।]

“be scientist, not sciencist. say ‘yes’ to science but ‘no’ to sciencism. চাই বিজ্ঞানচর্চা। চাই না বিজ্ঞানবাদিতা। তথাকথিত বিজ্ঞানমনস্কতা আসলে বিজ্ঞানবাদ ছাড়া আর কিছু নয়। বস্তুবাদ-ভাববাদের মতো বিজ্ঞানবাদও একটা দার্শনিক মতবাদ। বিজ্ঞানের মোড়কে বিজ্ঞানবাদ চালিয়ে দেয়া হচ্ছে কিনা, দেখতে হবে। বিজ্ঞান, দর্শন ও ধর্মকে যার যার জায়গা হতে বিবেচনা করতে হবে। আমার মতে, এই তিনটার পারস্পরিক সম্পর্ক ক্রমসোপানমূলক তথা mutually dependent and hierarchical.”

ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্যপ্রতিমন্তব্য

Iqbal Karim Ripan: যারা বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকে প্রমাণ বা খণ্ডন করার চেষ্টা করেন, … দর্শনকে অনুপস্থিত রাখলেন। ধর্ম দর্শনের কি প্যারালাল বা কাছাকছি। অর্থাত দর্শন কখনও কখনও ধর্মের বোধ ও নীতির পরিপূরক হয়ে উঠে? বিস্তারিত রাখলে সুবিধে হয়…

Mohammad Mozammel Hoque: বিজ্ঞান আর ধর্মের সম্পর্কের চেয়ে দর্শন আর ধর্মের সম্পর্ক নিকটতর। বিজ্ঞান আর ধর্মের মধ্যবর্তী হলো দর্শন। যেমন, ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে দর্শন (১) আছে, (২) নাই, (৩) জানি না, (৪) ইস্যুটাকেই দরকারী মনে করি না – এই চার অবস্থানের প্রত্যেকটির যৌক্তিক সুবিধা ও অসুবিধাকে তুলে ধরে। এর কোনো একটা অবস্থান গ্রহণ করা ছাড়া আমাদের পঞ্চম কোনো উপায় নাই। তাই ধর্মীয় অবস্থান মাত্রই দর্শনসম্মত। যদিও উক্ত ধর্মীয় অবস্থানের বাইরেও দর্শনের আরো কিছু বিকল্প-অবস্থান বা প্রতিযুক্তি থাকে।

রিপন ভাই, ধর্ম বনাম বিজ্ঞান, বিজ্ঞান বনাম দর্শন, দর্শন বনাম ধর্ম – এইসব বাইনারি চিন্তা আদতে ভুল। আমার কথা হলো, বিজ্ঞান হলো প্রাথমিক জ্ঞান, দর্শন হলো বৃহত্তর জ্ঞান, আর ধর্ম হলো পরিণতি।

এই অলোচনাতে আমি দেখিয়েছি, দর্শন মুক্ত বা অবাধ হলেও ব্যক্তিমানুষ হিসাবে দিনশেষে আমরা কোনো না কোনো ধরনের বিশ্বাসব্যবস্থা তথা ধর্মীয় বলয়েই আশ্রয় খুঁজে নেই। নিতে বাধ্য হই।

এসব বিষয়ে আলাপ করার জন্য একদিন চা খাওয়ার দাওয়াত পেলে অবশ্যই যাবো, ইনশাআল্লাহ।

Iqbal Karim Ripan: আড্ডাটা ক্যাম্পাসে হলে অনেক কিছুই উসুল হবে…

Mohammad Mozammel Hoque: শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া যে কোনো দিন ২টার পরে। শুক্র-শনিবার যে কোনো সময়ে। রওয়ানা করার আগে জাস্ট ফোন করলেই হলো।

Iqbal Karim Ripan: ইনশাল্লাহ…

পোস্টটির ফেসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *