আমি একজন পরাজিত মৌলবাদী। একসময় শিবির করেছি তুমুল। পরে ছিলাম জামায়াত নেতা। ওসব ছেড়ে-ছুঁড়ে দিয়ে এখন পরাজিত, পরিত্যক্ত; কিন্তু পুনরায় যুদ্ধে নেমে বিজয়ী হওয়ার নেশায় স্বপ্নগ্রস্ত এক যৌবন-বিগত যুবক। বর্তমান সরকারের দমনপীড়নের সাথে আমার এ নতুন পথচলার সম্পর্ক কো-ইন্সিডেন্টাল বা নিছক কাকতালীয়। আসলে জীবন সম্পর্কে আমার এমন কিছু উপলব্ধি উৎপন্ন হয়েছে যা আগে কখনো এতটা এভাবে অনুভব করিনি।

আজকে কিছু কথা অত্যন্ত খোলামেলাভাবে বলতে চাই। আমার ধারণায়, মানুষেরা সাধারণত কিছু মৌলিক প্রবৃত্তি বা চাওয়াকে কেন্দ্র করে বাঁচে। এরমধ্যে কিছু তার (১) জৈবিক-সহজাত প্রবৃত্তি, কিছু তার (২) সাংস্কৃতিক-সহজাত প্রবৃত্তি, কিছু তার (৩) বুদ্ধিবৃত্তিক-সহজাত প্রবৃত্তি। আর কিছু হলো তার (৪) আধ্যাত্মিক-সহজাত প্রবৃত্তি।

ক্ষুধা, যৌনতা, নিদ্রা ও নিরাময় – এগুলো হলো মানুষের জৈবিক-সহজাত প্রয়োজন (physical instinct)। আনন্দময়তা সংশ্লিষ্ট আর্টস ও সোশ্যাল বিষয়গুলো হলো মানুষের সাংস্কৃতিক-সহজাত চাহিদার ব্যাপার (cultural instinct)। দর্শন ও বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলো হলো মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক সহজাত প্রবৃত্তির ব্যাপার (intellectual instinct)। এর পাশাপাশি, এক পরম সত্তার সন্ধানে ব্যাপৃত থাকা, মৃত্যুর পরেও নিজেকে কোনো না কোনো ধরনের অস্তিত্বগত ধারাবাহিকতায় যুক্ত করে কর্মতৎপর হওয়া, পরজীবনের কল্পনা, কিংবা এ জীবনকে পরজীবনের মতো সুন্দরতম করে গড়ে তোলার ইউটোপিয়াকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করা, এক কথায় মানুষের মধ্যে অতিবর্তীতার যেসব বৈশিষ্ট্য, তা হলো তার আধ্যাত্মিক-সহজাত প্রবৃত্তির পরিচায়ক (spiritual instinct)।

মানুষ ১ম পর্যায়ের চাহিদাগুলোর জন্য ২য়, ৩য় বা ৪র্থ পর্যায়ের চাহিদা পূর্ণ না হওয়াকে মেনে নিতে পারে। ১ম পর্যায়ের চাহিদাগুলো পূরণ হওয়া সাপেক্ষে ২য় পর্যায়ের চাহিদাগুলো তার কাছে মূল চাওয়া। যা সে কোনোমতেই ছাড়তে চায় না। ১ম ও ২য় পর্যায়ের চাহিদাগুলো পূরণ হওয়া সাপেক্ষে ৩য় পর্যায়ের চাহিদাগুলো তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে ১ থেকে ৩ নম্বর ক্যাটাগরির চাহিদাগুলো ন্যূনতম মানে পূরণ হওয়া সাপেক্ষে মানুষ ৪র্থ ক্যাটাগরির চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে।

ছোটবেলা থেকে একটা ধারার ইসলামী সংগঠনে কাজ করে মানুষের মৌল প্রবৃত্তি সম্পর্কে আমার উল্টো ধারণা গড়ে উঠেছিলো। তখন ভাবতাম ১ নম্বরে হলো মানুষের আধ্যাত্মিকতা, ২ নম্বরে বুদ্ধিবৃত্তি, ৩ নম্বরে সংস্কৃতি ও ৪ নম্বরে জৈববৃত্তি। এখন বুঝি, তখন কত ভুল বুঝেছিলাম!

না, শিবিরের সিলেবাসভুক্ত কোনো বিশেষ বইয়ে এটি লেখা নাই। বরং, সেখানকার যে আবহ তাতে এই ধরনের একটা ফলস প্যারাডাইম গড়ে উঠেছিলো। বড় কথা হলো, জীবন সম্পর্কে এই ধরনের নিতান্ত ভুল ধারণা গড়ে উঠেছে মসজিদ-মাদ্রাসাকেন্দ্রিক এ দেশের বৃহত্তর ধর্মীয় পরিমণ্ডলে। তাই, সব ইসলামী সংগঠনের মাইন্ডসেট হলো, মানুষের জন্য এক নম্বরের বিষয় হলো তার আধ্যাত্মিকতা।

মানুষের আধ্যাত্মিকতার চাহিদা সম্পর্কে ভুল বুঝার কারণে তাদের এই ভুল ধারণা গড়ে উঠেছে। উনাদের ধারণায়, স্রষ্টার অস্তিত্ব হলো মানব জ্ঞানের কেন্দ্র বা সূচনাবিন্দু। অথচ, মানুষের সব জ্ঞানের কেন্দ্র হলো তার নিজের অস্তিত্ব তথা আত্মসত্তার একান্ত অনুভূতি। নিজের পরিচয় জানতে গিয়েই মানুষ জগত সম্পর্কে জানতে চায়। জগত সম্পর্কে জানতে গিয়ে সে এক পর্যায়ে যুক্তি ও উপলব্ধির সিঁড়ি বেয়ে পরমসত্তার অস্তিত্ব-বিশ্বাসে উন্নীত হয়।

মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির চূড়ান্ত পরিণতি হলো আধ্যাত্মিকতা। ইসলামকে যতটুকু জেনেছি, তাতে বুঝেছি, মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির এই ক্রমসোপানকে (hierarchy) ইসলাম অনুমোদন করে। বরং, ইসলামের প্রস্তাবনাটাই হলো মানুষের চাহিদাগুলোকে ভিত্তিস্তর, মধ্যস্তর, উন্নত স্তর ও লক্ষ্য-স্তরের এই ধারায় সুবিন্যাস্ত করা।

মুশকিল হলো, আমরা যখন কোরআন-হাদীসের মতো বেসিক টেক্সটগুলো পাঠ করি, তখন প্রায়শই নিজেদের আশপাশে বিদ্যমান স্টাবলিশমেন্টের পক্ষের দলীলগুলো খুঁজে পাই। টেক্সটের নিরপেক্ষ পাঠ বলে কিছু নাই মর্মে পোস্টমর্ডানিস্টরা বেশ বলাবলি করে। তাদের কথাগুলো স্রেফ স্ববিরোধী বা self-refuting আঁতলামি ছাড়া আর কিছু নয়। আমার মতে, সব টেক্সটেরই নিরপেক্ষ পাঠ আছে। সেটা হলো, লেখক কোন প্রেক্ষাপটে, কোন অবস্থানের পক্ষে বা বিপক্ষে লিখেছেন, তা অনুধাবন করে টেক্সটের অর্থ নিরূপণ করা।

সে হিসাবে কোরআন ও হাদীসের টেক্সটগুলোকে যদি আমরা জীবনবাদী-সমাজকর্মীর দৃষ্টিতে দেখি তাহলে বুঝবো, কীভাবে এখানকার ধর্মীয় সংগঠনগুলো উল্টা করে অর্থাৎ ‘পা উপরে আর মাথা নিচে’ রেখে ইসলামকে সমাজে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা ভাবেন, পরজীবনের জন্যই তো এ জীবন। অথচ, এ জীবনের ন্যায্য ধারাবাহিকতাই হচ্ছে পরজীবনের যৌক্তিকতা ও স্বার্থকতা। তারা ভাবেন, খোদা আছেন ধরে নিয়ে তো সবকিছু বিবেচনা করা উচিত। অথচ, আমি আছি, এ ব্যাপারে অন্তত আমি নিঃসন্দেহ বলেই আমি জীবনের অস্তিত্ববাদী আত্ম-অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে খোদার অস্তিত্বে ঈমানদার হয়ে উঠি। আদর্শের মূল এপ্রোচটা সোশ্যাল, এটি বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক আদর্শবাদীরা মানতে চান না।

ইসলামপন্থীদের ব্যাপারে যদি বিশেষভাবে বলি, ইসলামকে তারা মূলত ধর্ম মনে করে। তারচেয়েও অদ্ভূত ব্যাপার হলো, তারা মনে করেন, ইসলাম শ্রেষ্ঠ ধর্ম। তাই ইসলাম মোতাবেকই সবকিছু হওয়া উচিত। অথচ, ধর্ম হলো মানুষের অন্যতম ব্যক্তিগত ও সামাজিক ফেনোমেনা। উপরে আমি যে স্কেল দিয়েছি তাতে ধর্মের অবস্থান ৪র্থ নম্বরে। তাই, সবকিছু ধর্মভিত্তিক হওয়ার দাবি কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আমার কাছ হতে এ ধরনের কথা শুনে তারা ভীষণ আশ্চর্যান্বিত হবেন। ভাববেন, এর তো মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাদের যুক্তি হলো, মানুষের জীবনের সব আসপেক্ট সম্পর্কেই তো কোরআনে সুস্পষ্ট ও স্বনির্ভর বক্তব্য ও গাইডেন্স আছে। তাহলে ইসলামপন্থীরা কেনো মানষের জীবনের সবকিছুতে ইসলাম নিয়ে হাজির হতে পারবে না?

হ্যাঁ, আমিও মনে করি, মানুষের জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র নিয়ে ইসলামের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও কনসিসটেন্ট বক্তব্য আছে। বরং আমার কাছে তা সেরা। তারচেয়েও বেশি। বরং, ইসলামই আমার কাছে একমাত্র পরিপূর্ণ সত্য, যা মানুষের জীবনকে সুসংগতভাবে, জীবনের সব আসপেক্টগুলোকে প্রপার ওয়েতে কাভার করে। তাই, ইসলাম আমার কাছে একটা আদর্শ ক্যাটাগরির বিষয়। ধর্মমাত্র নয়। as a “deen” Islam belongs to the category of ideology, not of religion.

আধুনিক ইসলামিস্টদের মতো, ইসলাম আমার কাছে এমন ধর্ম নয় যার মধ্যে রয়েছে রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তি। কথাটা আগের লাইনে যেভাবে বললাম, ইসলাম আমার কাছে একটা জীবনাদর্শ। যেটার মধ্যে আছে ধর্ম, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তি। এসব একটা আরেকটা হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নও নয়, আবার এগুলো একাকারও (identical) নয়। বরং, একটা বহুতল ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরের মতো এগুলো স্বতন্ত্র অথচ পরস্পর নির্ভরশীল।

সাধারণভাবে বলা যায়, ইসলামপন্থীরা মোটাদাগে ধর্মীয় প্রেরণা দ্বারা উদ্বুদ্ধ। সংস্কৃতি থেকে শুরু করে রাজনীতি, এক কথায় সবকিছুকে তারা ধর্মীয় দৃষ্টিতে দেখে থাকে। যার কারণে, মানুষের জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলোকে তারা ঠিক মতো বুঝতে পারে না। সমাজের পালসকে তারা ঠিক মতো ধরতে পারে না। যুগের সেন্টিমেন্টকে তারা প্রপারলি রিড করতে পারে না। বরং অবুঝ এক আধ্যাত্মিকতার আবেগে সবকিছুকে তারা ধর্ম বনাম অধর্মের এক ফলস বাইনারিতে মূল্যায়ন করে।

আমি যা বলছি তা আমার অভিজ্ঞতা হতে বলছি। আমার কথা পরিষ্কার। মানুষের সহজাত চাওয়াগুলোকে দমিয়ে রেখে ইতিবাচক কিছু অর্জন করা অসম্ভব। বরং এগুলোর কোনোটির চাওয়া-পাওয়ার সাথে অন্যটির সমন্বয় হতে পারে। একটা একটু বেশি পেলে অন্যটা কিছুটা কম পেলেও মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। কিছুটা বেশকম করে কোনো সামাজিক ব্যবস্থা স্বাভাবিকভাবে রান করতে পারে। কিন্তু, কোনো সমাজ, রাষ্ট্র বা অথরিটি এই সহজাত চাওয়াগুলোর কোনোটিকে স্থায়ীভাবে বা সিগনিফিকেন্টলি দমন বা অস্বীকার করতে চাইলে মানুষ কোনো না কোনো উপায়ে ঠিকই সেই চাহিদাকে পূরণ করার পথ খুঁজে নিবে।

প্রয়োজনে সে বিপ্লব ঘটাবে। জৈবিক ও সাংস্কৃতিক প্রয়োজন তো বটেই, এমনকি, আধ্যাত্মিকতার চাহিদা মিটাবার জন্যও মানুষ বিপ্লব ঘটাতে পারে, যদি তার কোনো মৌলিক প্রয়োজন পূরণের স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়। সহজাত প্রবৃত্তির তাগিদে প্রয়োজনে বিকল্প পথ খুঁজে নেয়া বা বিপ্লব ঘটানোর এই মানবীয় ফর্মূলা প্রযোজ্য হতে পারে উপরে বর্ণিত ১ থেকে ৪ পর্যন্ত ক্যাটাগরির যে কোনোটির জন্যই।

চিত্তবিনোদন বা আনন্দময়তা হলো মানুষের দ্বিতীয় পর্যায়ের মৌলিক প্রবৃত্তি। নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এর চর্চা মানুষ করে। যদি বলি, আমি বুঝি না, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ইসলামপন্থীদের কেনো এত নেতিবাচক মনমানসিকতা, তাহলে তা ভুল বলা হবে। আমি জানি, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত, ধর্মের দৃষ্টিতে সবকিছু দেখাই হলো ইসলামপন্থীদের দৃষ্টিভঙ্গিগত মূল সমস্যা। এই সমস্যার কারণ উপরে বলেছি।

আগেই বলেছি, তারা ইসলামকে সেরা ধর্ম মনে করে। ২০১০ সালের দিকে লিখেছিলাম, Islam must be rescued from its religion image। ইসলামকে ধর্ম-পরিচিতি হতে উদ্ধার করা না গেলে, বিশেষ করে একবিংশ শতাব্দীর এই প্রেক্ষিতে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন কার্ল মার্কসের সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের মতোই অসম্ভব-কল্পনা বা utopia হিসেবে থেকে যাবে। ইসলাম জগতে ইউটোপিয়া হিসেবে আসে নাই। এসেছে বাস্তব জীবনাদর্শ হিসেবে। শর্ত হলো, এজন্য ইসলাম অনুসারীদের কাজ করতে হবে। এবং সে কাজ হতে হবে বাস্তবসম্মত উপায়ে।

কিছুদিন আগে কয়েকজনের সাথে একটা দীর্ঘ আলোচনা করেছিলাম। তাতে ধর্ম, আদর্শ ও ইসলামের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলোর তালিকা তৈরি করে তাদেরকে দেখিয়েছিলাম, ইসলাম মূলত একটা জীবনাদর্শ হিসাবে নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করে। ধর্ম এর অংশ মাত্র। ধর্মের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যগুলোর অধিকাংশকেই ইসলাম সরাসরি অস্বীকার বা রিফিউট করে।

একজন ইসলামিস্ট হিসাবে নিজের সম্পর্কে আমার অনুভূতি পরাজয়ের। Life-view বা জীবনাদর্শের দিক থেকে শার্পলি ডিভাইডেড এ সমাজে পক্ষ-বিপক্ষ উভয় পক্ষের কাছে আমি একজন নিতান্তই অপাংক্তেয় হিসাবে নিজেকে আবিষ্কার করি। তাদের কাছে আমার কথাগুলো অবাস্তব, পাগলামিপূর্ণ, আবেগী ও অভিনব। রীতিমত heretic। একপক্ষ ইসলামকে ধর্ম হিসাবে চিহ্নিত করে একে জীবনের বৃহত্তর সামাজিক প্রেক্ষিত হতে অপসৃত করার সর্বাত্মক চেষ্টায় নিয়োজিত। এর বিপরীত পক্ষ, ইসলামকে বিশেষ এক super-inclusive religion বা ‘সবকিছুওয়ালা ধর্ম’ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় তুমুল নিয়োজিত। আমার দৃষ্টিতে, ইসলাম সম্পর্কে প্রচলিত এই ডমিন্যান্ট এপ্রোচদ্বয়ের দুটোই কমবেশি ভুল।

ইসলাম সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি হলো সাদামাটা পরিষ্কার।

আমরা মানুষ। এটি আমাদের মূল পরিচয়। এরপরে আমাদের বাদবাকি যা কিছু পরিচয়, পরিচিতি, আইডেন্টিটি ইত‍্যাদি। আচ্ছা হলো, আমরা মানুষ। বুঝলাম। এরপর কী? ‘মানুষ’ বলতে কী বুঝবো? এ ধরনের বেসিক প্রশ্ন উত্থাপন ও অনুসন্ধানের পরিণতি হলো যার যার জীবনাদর্শ। এই ধরনের সোল-সার্চিং প্রসেসের ending বা উত্তর হিসাবে বাজারে যেসব ‘আদর্শিক পণ্য’ আছে তার একটি হলো ইসলাম। আমার কাছে মানুষের আত্মপরিচয় সংক্রান্ত উত্তরমালার মধ্যে ইসলাম হলো সবচেয়ে নিখুঁত, সুসামঞ্জস্য প্রস্তাবনা। তাই, এটি আমার কাছে একমাত্র সঠিক উত্তর।

জীবনাদর্শ হিসাবে ইসলাম কীভাবে ‘অপর’কে একোমোডেইট করে তা ‘ইসলামী মতাদর্শের আলোকে সামাজিক আন্দোলন’ শিরোনামে আমার একটি লেখায় সংক্ষেপে তুলে ধরেছি। এর একটা অংশ হলো নিম্নরূপ–

প্রতিটা মানুষেরই রয়েছে তিন ধরনের জাতিগত পরিচয়। (১) রাজনৈতিক জাতীয়তা, (২) নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তা, ও (৩) ধর্মীয় জাতীয়তা। এর কোনোটি অপরটির বিকল্প নয়। বরং, এগুলো পরস্পর পরিপূরক। পহেলা বৈশাখ উদযাপন যদি ধর্মবিরুদ্ধ হয়, তাহলে বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কেনো ধর্মসিদ্ধ হবে? দুই ঈদ ছাড়া যদি কোনো জাতীয় দিবস উদযাপন নাজায়েয হয়, তাহলে ‘বদর দিবস’ বা ‘বালাকোট দিবস’-এর মতো প্রচলিত ধর্মীয় দিবসগুলোর উদযাপন কী করে জায়েয হবে?

আগে একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দেয়াটা হারাম মনে করতাম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সিনিয়র-মোস্ট প্রফেসর আনোয়ারুল হক খতিবী স্যারকে এ ব্যাপারে একদিন জিজ্ঞাসা করাতে উনি বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে এ সংক্রান্ত কিছু কথা বললেন। উনার সাথে কথা বলে জানলাম, এগুলো হলো সন্দেহজনক বা বেহুদা কাজ। শরয়ী পরিভাষায় এগুলোকে ‘উরুফ’ বা লোকাচার বলে। কোনো কিছু হারাম হওয়ার জন্য ‘নস’ বা অকাট্য দলীল প্রয়োজন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আমি সব হারামগুলোকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি’। ইউসুফ কারজাভীর ‘ইসলামে হারাম ও হালালের বিধান’ হতে জেনেছি, হারাম না হওয়া সাপেক্ষে সবই প্রাথমিকভাবে হালাল হিসাবে বিবেচনাযোগ্য।

আজকে পহেলা বৈশাখের এই দিনে একজন ইসলামপন্থী হিসাবে নিজেকে সাংস্কৃতিক দিক থেকে পরাজিত বোধ করছি। মানুষকে হালাল আনন্দময়তার সুযোগ না দেয়ার পরিণতিতে মতলববাজ প্রগতিশীলদের সাথে এ দেশের ইসলাম অনুসারী বৃহত্তর জনগণ এক ধরনের বৈপরিত্যমূলক সমঝোতা করে নিয়েছে, যা বিপদজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ। জনগণের দিক থেকে এর কোনো গত্যন্তর নাই। জাহাজের উপরতলার লোকেরা পানি সরবরাহ না করায় ডেকের লোকেরা তলা ফুটা করে পানি সংগ্রহ করতে চাওয়ার মতো ব্যাপার।

আনন্দয়তার সব পথ রুদ্ধ করে মানুষকে কঠোরভাবে ধার্মিক বানাবার দৃশ্যমান চেষ্টা বুমেরাং না হয়ে পারে না। এটি অনিবার্য। মানুষ সব সময়ে আধ্যাত্মিক চেতনা নিয়ে জীবনযাপন করে না। এমনকি, মানুষ সব সময়ে বুদ্ধিবৃত্তি দ্বারাও পরিচালিত হয় না। এমন কি বুদ্ধিজীবীরাও নয়। জীবনের এক একটা দিক থেকে এক একটা প্রয়োজনকে মানুষ গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। কোনো আদর্শ নিখুঁত হতে হলে তাকে মানুষের বাস্তব চাহিদাগুলোকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা জরুরী। আমার দৃষ্টিতে, ইসলাম তেমনি একটা প্রাকৃতিক জীবনাদর্শ।

অথচ দেখেন, মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা তথা চিত্তবিনোদনের কোনো ব্যবস্থাই নাই। যে কোনো ধরনের ক্রীড়া ও আমোদ-প্রমোদের ব্যাপারে ইসলামপন্থীরা ওভারঅল নেগেটিভ। নারীদের সাজগোজকে তারা নিতান্ত খারাপ মনে করে। এমনকি, সুস্পষ্ট হাদীস থাকা সত্ত্বেও তারা নারীদের মসজিদে প্রবেশাধিকার হরণ করেছে। মেয়েরা মাজারে জেয়ারত করতে পারে, কিন্তু মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য অনুমতি পায় না। ইসলামপন্থীরা দেশের ক্ষমতা পেতে চান, অথচ নারীদের ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, পারিবারিক ও সামাজিক ন্যায্য মানবিক অধিকার প্রদানে তারা অসম্মত।

প্রচলিত মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় যদি ‘নিউস্কিম মাদ্রাসার’ মতো যুগোপযোগী সব বিষয়ের শিক্ষা দেয়া হতো তাহলে হয়তোবা, ইংরেজি শিক্ষা বনাম মাদ্রাসা শিক্ষার এই দ্বিমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হয়ে একমুখী শিক্ষা এ দেশে কায়েম থাকতো।

ইসলামপন্থীদের গোঁড়ামি, প্রতিক্রিয়াশীলতা, ধর্মান্ধতা, বুদ্ধিবৃত্তির প্রতি নেতিবাচকতা, আখেরাতের নামে জীবন-বিমুখিনতা, বিশেষ করে নারীবিদ্বেষী পুরুষতান্ত্রিকতার পরিণতি হলো ধর্ম ছাড়া সব অঙ্গনে তাদের আধিপত্যহীনতা, ক্ষেত্রবিশেষে অস্তিত্বহীনতা ও পরাজয়। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক ময়দানে।

একজন জীবনবাদী সমাজকর্মী হিসাবে যেখানে মানুষের সমাগম, সেখানে আমি সাধারণত ঘুরে আসি। মানুষকে বুঝতে চেষ্টা করি। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, এরপর কীভাবে কী করা যেতে পারে, তা ভাবার চেষ্টা করি। শিবিরের সদস্য সম্মেলনের ফাঁকে যখন শাহবাগের শিশু পার্কে গিয়েছিলাম, তখনও আমার মধ্যে এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করেছিলো। যখন একটা শিক্ষক সংগঠনের নেতা ছিলাম, তখনও বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত বৈশাখের অনুষ্ঠানে গেছি।

শারীরিক অসুস্থতার জন্য এবার বের হই নাই। আমার মেয়েরা ঘুরে এসেছে। ডিপার্টমেন্টের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বসে নিজেকে পরাজিত বোধ করেছি, বারে বারে। যেমন করে অপরাপর ইসলামপন্থীদের মতো আজকেও কেমন জানি পরাজয়ের খানিকটা গ্লানি ছুঁয়ে যাচ্ছে। এই দিক থেকে এ দেশের বামপন্থীরা জয়ী। তাদের দৃষ্টিতে একটা ‘ধর্মান্ধ’ সমাজে সংস্কৃতির খোলা মাঠে তারা মুহুর্মুহু গোল দিয়ে যাচ্ছেন। ইসলামপন্থীদের কূপমণ্ডুকতার কারণে তারা এ দেশের এমনকি ধার্মিক জনগোষ্ঠীকেও সাংস্কৃতিক চেতনায় বেশ খানিকটা ধর্মহীন হিসাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।

ধর্মের মধ্যে আনন্দময়তা চাই না। ‘সনাতন ধর্মের’ মতো আনন্দময় ধর্মও চাই না। চাই, আনন্দময় মানবজীবন। প্রাকৃতিক, স্বাভাবিক ও ওভারঅল একটা তুষ্ট জীবন। চাই, বুদ্ধিসঙ্গত জীবন। চাই, আধ্যাত্মিক জীবন। এগুলোর একটা আরেকটার বিকল্প হিসাবে নয়। বরং, পরিপূরক হিসাবে। খাওয়া-পরা, নিরাময় ও প্রজননের প্রয়োজন পূর্ণ হোক। আনন্দময়তা থাকুক ইঞ্জিন-অয়েলের মতো পর্যাপ্ত। বুদ্ধির চর্চা হোক অবারিত। আধ্যাত্মিকতার চাহিদা পূরণ হোক যথার্থ মানে। তবেই তো সে জীবন পূর্ণ জীবন, শুদ্ধ জীবন। চাই এমন সমাজ যেখানে মানুষের সব সহজাত প্রবৃত্তিগত চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা রয়েছে ন্যায়সংগত উপায়ে, অন্তত ন্যূনতম মানে। প্রকৃতিবিরুদ্ধ, একদেশদর্শী, আরোপিত ও অতিকৃত্রিম কোনো শুদ্ধ জীবন চাই না।

যখন এ ধরনের প্রকৃতিত সমাজব্যবস্থা কায়েম হবে তখনই শুধু নিজেকে ভাববো, বিজয়ী। আজকের এই পরাজয় গ্লানির সাথে সাথে ভেতর থেকে টের পাচ্ছি নিকট ভবিষ‍্যতে তেমন এক বিজয়-সম্ভাবনার পদধ্বনি। আগামী দিনের এই ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে আজকে যারা সর্বাত্মকভাবে কাজ করতে চান, তাদের প্রতি রইলো অভিবাদন, সালাম। আপনারাই সত্যিকারের মানুষ। বাকিরা সব জনগণ। তেমনই সাংসারিক বিবেচনায় ‘বেকুব বিপ্লবীদের’ একজন হিসাবে নিজেকে ভাবতে ভালো লাগছে।

জীবন মানেই খানিকটা জয়, খানিকটা পরাজয়। একাট্টা জয়, সবসময়ে ভালো নয়।

এই লেখা এতটুকু পর্যন্ত যদি পড়ে থাকেন, আমার লেখার বিষয়বস্তু বা মান যা-ই হোক না কেন, পাঠক হিসাবে আপনি নির্ভেজাল উঁচুমানের ধৈর্যশীল, সফল। তাই, শুভেচ্ছা আপনার প্রতি। ভালো থাকুন। পারলে, আসুন, বিপ্লবী হই। সূচিত এই বিপ্লবের অগ্রযাত্রায় সামিল হই। ক’দিনই-বা আর বাঁচবো…! একদিন তো মরেই যাবো…! জানেন তো, বিপ্লবী হওয়া মানে প্রকারান্তরে মৃত্যুকে অতিক্রম করে যাওয়া। তা যে আদর্শের পক্ষেই হোক না কেন…।

তাই, গোবেচারা নির্বিবাদী সুশীল নাগরিক হওয়ার চেয়ে বিপ্লবী হওয়া লং টার্মে অধিকতর লাভজনক। বিশেষ করে ইসলামের মতো সভ্যতা-সঞ্জিবনী আদর্শ যখন আপনার আছে, তবে আর চিন্তা কী? নাজাতলোভী হয়ে মৃত-প্রায় জীবনযাপনের চেয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করে এগিয়ে যাওয়াই বেহেতর নয় কি?

ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Sabuj Kabir: এমন একটি শিক্ষনীয় লিখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

Mohammad Mozammel Hoque: আজকের কথাগুলো বলেছি একেবারে মন খুলে। কেমন হয়েছে জানি না। এত বড় লেখা কেউ পড়বে কিনা, তারও পরোয়া করছি না। ফেইসবুক আছে বলে লেখাগুলো সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে আপলোড করি। এরমানে এই নয় যে ফেইসবুকে প্রকাশের জন্য লিখছি। লেখালেখি করি মূলত মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য। তারচেয়েও বেশি, আগামী দিনে যারা কাজ করবে তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য।

Sheikhul Ripon: মৌলিক লেখা। চমৎকার। জীবনকেন্দ্রিক ও সামাজিক আদর্শ হিসেবে ইসলাম এবং ইসলামকেন্দ্রিক সামাজিক আন্দোলনের ধারণা আমাদের ধারণার চেয়েও দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যাচ্ছে। এক লেখাতে অনেক বিষয় উঠে এসেছে। এগুলোর আরো অনেক এলাবোরেশন একান্ত আবশ্যক। প্রতিটি বিষয়ে বহু সাহিত্য সৃষ্টি সময়ের দাবি। যারা বিষয়টা হৃদয়ঙ্গম করেছেন, তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। হয়তো আগামী প্রজন্ম বা তার পরের প্রজন্মে কাংখিত সমাজকর্মী/বিপ্লবীদের দেখা মিলবে। সেই বিপ্লবের ভিত রচনাই হয়ত এ প্রজন্মের দায়িত্ব। ধন্যবাদ।

Mohammad Mozammel Hoque: “ইসলামকেন্দ্রিক সামাজিক আন্দোলনের ধারণা আমাদের ধারণার চেয়েও দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যাচ্ছে।” – এটি সঠিক। সমস্যা হলো আমরা যারা এ বিষয়ে কথাবার্তা বলছি তারা আসলে এই ধরনের একটা স্বতন্ত্র ধারায় কাজের লোড নেওয়ার জন্য মানসিকভাবে ও বস্তুগতভাবে প্রস্তুত নই। আমাদের, বিশেষ করে আমার, অবস্থা হয়েছে দৌড়ের জন্য নাম লিখিয়ে, লাইনে দাঁড়িয়ে দৌড় শুরু করার হুইসেল বাজার পরমুহূর্তে ঘাবড়ে যাওয়া অ্যাথলেটের মত…!

Sheikhul Ripon: নিশ্চিতভাবে আমরা প্রস্তুত নই। হয়তো আগামী প্রজন্মে বা তার পরের প্রজন্মে কাংখিত লোকদের দেখা মিলবে। ভিত রচনাই হয়ত আমাদের দায়িত্ব।

Mayeen Uddin Jahed: এমন লেখা আরো চাই। সাথে পাবেন।

Mohammad Mozammel Hoque: ইসলামপন্থীরা মোটাদাগে আসলেই প্রতিক্রিয়াশীল। একটা জাতীয় উৎসব অনুষ্ঠানে তারা আনন্দময়তা না দেখে ‘বেলাল্লাপনাই’ দেখে। তাদের ভাবসাবে মনে হয় ইসলাম এসেছে মানুষদেরকে একেকটা মোহন্ত বানানোর জন্য। বিশেষ করে নারীদেরকে পর্দার মধ্যে রাখার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য। ভিতরে ভিতরে এসব কাঠখোট্টা ইসলামপন্থীরা কিন্তু ভীষণ ভোগবাদী। মানুষকে অখণ্ডভাবে না দেখে এবং মানুষের জীবনকে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা না করে, খণ্ডিত ও ভারসাম্যহীনভাবে নিছক ধর্মবাদিতার দৃষ্টিতে সবকিছুকে দেখার কারণে তাদের এই চিন্তাগত বিভ্রান্তি। মানুষকে গড়ে তোলা, ইতিবাচকভাবে সমাজকে গঠন করার পরিবর্তে ইসলামপন্থীদের সকল মনোযোগ হলো মানুষকে সাইজ করা এবং সমাজটাকে ঠিক করা। সমাজটাকে কারা গড়বে, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা কীভাবে টিকে আছে কিংবা থাকবে, এ নিয়ে তারা কখনও ভাবতে চায় না। ইসলামিস্টরা নিজেদেরকে ধর্মীয় পুলিশের অতিরিক্ত কিছু ভাবতে পারে না। অতি ক্ষুদ্রসংখ্যক কিছু ব্যতিক্রমী জীবনবাদী সমাজকর্মী ছাড়া সংগঠন করা না-করা নির্বিশেষে সব ইসলামপন্থীদের এই অবস্থা।

Mayeen Uddin Jahed: এদের কোনো সমাজ জীবন নেই। যা আছে কোটারী জীবন। তাই সামাজিক বন্ধন বুঝে না, সে জীবনে নিজেদের জড়াতেও পারে না। তার ভেদ সূত্র বোঝা তো অনেক দূরের ব্যাপার।

Shahjahan Mohammad: স্যার, আপনার সাথে সেই ২০১৩ সালে বিতর্কে জড়িয়েছিলাম। কিন্তু গত ২/১ বছর ধরে আপনার একটা লেখাও বোধহয় মিস করিনি। আজকের লেখাও অনেক ভালো লাগলো।

Mohammad Mozammel Hoque: তর্কেই জীবন, যদি তা হয় যুক্তির খাতিরে। বিশেষ করে ফিলোসফির লোকজনেরা বিনা যুক্তিতে কোনো কিছুকেই মানতে চাওয়ার কথা না। এমনকি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি যদি ভুলও বুঝে থাকেন। Claiming the truth without evidence and proper understanding, is not knowledge countable, even though it is independently true. In that case, such a knowledge claim will count as a mere lucky-guess. মনে পড়ে জ্ঞানতত্ত্বের এইসব কথা?

Shahjahan Mohammad: স্যার, মনে পড়ে বলেই তো সস্তা জনপ্রিয়তার সোশ্যাল মিড়িয়ার যুগেও বিপরীত মতাদর্শের আপনার লেখা মিস করি না।

আর ইদানিং আপনার লেখায় যুক্তির সাথে আবেগ জড়িয়ে অন্যরকম একটা অনুভূতি নিয়ে আসে। প্রথম প্রথম আপনার লেখা পড়ার জন্যই পড়তাম কিন্তু এখন ভালো লাগে তাই পড়ি।

Mohammad Mozammel Hoque: আমার লেখার আমি এক নম্বর পাঠক। বলতে পারো, নিজের জন্যই মূলত লিখি। ‌এক একটা লেখা যেন আয়নাতে নির্দিষ্ট কোনো এঙ্গেল থেকে নিজেকে আরেকবার দেখা। আমার জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো শুনতে অন্যদের ভালো লাগে, সেটা আমার সৌভাগ্য। ভালো থাকো।

একরামূল হক শেখ: “জীবন মানেই খানিকটা জয়, খানিকটা পরাজয়। একাট্টা জয়, সবসময়ে ভালো নয়।”

পুরোটাই খুব ধীরে ধীরে পড়লাম। আপনার লেখা ধীরে না পড়লে আমাদের মতো বেকুব কিছুই বুঝতে পারে না। সমৃদ্ধ হই পড়ে, আজও সেটাই অনেক বেশি হলাম। সালাম ও শ্রদ্ধা জানবেন। এক জীবনবাদী অনবদ্য ইসলাম জানলাম।

Mohammad Mozammel Hoque: ভাই, আমরা সবাই এক একটা বেকুব। যারা মুসলমান, যারা ঈমানদার, কোরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে লোকেরা কী মনে করে সে প্রসঙ্গে বলেছেন, “আমরা কি ওইসব বোকাদের মত ঈমান আনবো?” মুনাফিকরা মুমিনদেরকে বোকাই মনে করত। তাই, সমাজের সুবিধাবাদী, ভোগবাদী, চালাকদের দৃষ্টিতে খানিকটা বোকা সাব্যস্ত না হলে সেই ব্যক্তির ঈমানের যথার্থতা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায় বৈকি। আসুন, শেষ পর্যন্ত দুনিয়াদারদের দৃষ্টিতে বেকুবই থেকে যাই। ওই যে এক অপ্রসিদ্ধ কবি ফজলে আলমের একটা কবিতা পড়েছিলাম যার শেষ লাইনটি ছিল এরকম– “শুধু একবার জয়ী হতে চাই, অসংখ্য পরাজয়ে…!”

Shaykh Mahfuz: পড়লাম স্যার। নিজেকে অনেক সময় পরাজিত মনে হয়। ক্যাম্পাসের পাশে থেকেও আজ কোথাও বের হবার মতো মন সায় দেয় নাই। হয়তো পরাজয় দেখে লুকিয়ে থাকতেই ভালো লাগে।

ভাবছি, আপনার লেখায় অনেক পয়েন্ট নতুনভাবে খুঁজে পাই। সাহস আসে। আল্লাহ আপনার খেদমত দীর্ঘ করুন।

Mohammad Mozammel Hoque: ঘুরে দাঁড়ানোর, পুনরায় বিজয়ী হওয়ার পূর্বশর্ত হলো পরাজয়কে মেনে নেয়া। স্পষ্ট পরাজয়ের পরও বিজয়ী বিজয়ী ভাব নিয়ে নানা রকমের অপ্রাসঙ্গিক পান্ডিত্য ফলানোর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না। পরাজয়কে যারা মেনে নেয় একসময় বিজয় তাদের হাতের মুঠোয় এসে ধরা দেয়। কিন্তু পরাজিত মানসিকতার লোকেরা কখনো সত্যিকারভাবে জয়ী হতে পারে না। তাই, সাংস্কৃতিকভাবে আমি-তুমি তথা এদেশের ইসলামপন্থীরা সামগ্রিকভাবে পরাজিত। কিন্তু এটলিস্ট আমি পরাজিত মানসিকতার লোক নই। ইসলাম বিজয়ী হওয়ার জন্য এসেছে। পরাজিত হয় ভুল পথে চলা মুসলমানেরা। নিছক ধর্মের গুটি দিয়ে সমাজ গঠন ও পরিবর্তনের এ খেলায় শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা বা বিজয়ী হওয়া অসম্ভব। সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শন, বিজ্ঞান, এসব নিয়ে খোলা মনে নতুন করে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করতে হবে। মন-মগজ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে হবে। মাজার, পূজামণ্ডপ আর পতিতালয় ছাড়া সব জায়গা দখল করতে হবে। আমি মনে করি এটি সম্ভব। প্রয়োজন শুধু আদর্শের ভুল ব্যাখ্যার পিছুটান হতে মুক্ত হওয়া। ইসলাম শুধুমাত্র তৎকালীন আরবদের জন্য আসে নাই। ১০০০ বছর আগের জন্য আসে নাই। ১৩০ বছর আগের জন্য এসেছে, এমনও নয়। It’s for all time to come, it is the best and most viable ideology for mankind. But we have to prove it by our genuine quality and activities.

Moniruzzaman Akash: স্যারের লেখাটা আমার মনে হয় শুধু বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান তথা ভারত উপমহাদেশের ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের প্রেক্ষাপটে লিখা। আমাদের এই উপমহাদেশের ইসলামের সাথে মিডল ইস্ট, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আধুনিক আমেরিকার ইসলাম ও ইসলামী রীতিনীতির অনেক পার্থক্য। বিশেষ করে আরবের ইসলাম আর বাংলাদেশের ইসলাম অনেক ফারাক।

Mohammad Mozammel Hoque: আমাদেরকে তো ভাই আমাদের এখানকার প্রেক্ষাপট অনুসারে চলতে হবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই পড়ানো হোক না কেন, আমার মালিকানায় যে জমিন আছে আমাকে তো তাতেই চাষাবাদ চালিয়ে যেতে হবে, তাই না? আন্তর্জাতিক নানা পরিস্থিতি নিয়ে অতিউদগ্রীব, চট্টগ্রামের হাটহাজারী বাড়ি এমন এক তরুণ ইসলামপন্থীকে বলেছিলাম, “গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হোক কিংবা তোমার খেলাফত সিস্টেমে হোক, মনে করো, ঢাকায় একটা ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আচ্ছা, তাতে করে এই তোমাদের আমানবাজার এলাকায় হাশেমী সাহেবদের দাপট কি কমবে? এখানকার আকিদাগত সমস্যা নিরসন হবে? মাজার পূজা বন্ধ হবে?” বুঝতেই পারছেন আমার এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর ওর কাছে ছিল না। ওর ধারণা মোতাবেক, উত্তর চট্টগ্রামের এই ধর্মীয় সমস্যা নিরসনযোগ্য নয়। আমি ওই তরুণের মতো এত অস্থির ও আন্তর্জাতিক নই। ওকে বলেছি, “আমি আদার ব্যাপারী। কত বড় বড় জাহাজের খবর নিয়ে আমার লাভ কী?” তাই, যতই খারাপ লাগুক, আমার আশপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতি ও সমকালীন বাস্তবতাকে সামনে রেখেই আমাকে যা কিছু করার করতে হবে। We have to focus and priorities on the present and local situation, I think. Never misunderstand me, please! Do dua for us.

Moniruzzaman Akash: কিন্তু স্যার আপনি ১২০ কোটি মানুষের সাথে সম্পর্কিত কোনো বিষয় নিয়ে লিখেছেন, যা আজকের ১২০ কোটি এবং অনাগত আগামীর লক্ষ-কোটি মানুষের ইহজগৎ ও পরজগতের সাথে সম্পর্কিত। আমাদের প্রিয় নবী ১৪ শত বছর আগে পাথুরে মরুভূমিতে বসে মানুষের জীবনঘনিষ্ট বিষয়ের যে সমাধান দিয়েছেন, যা হাজার বছর পরও সারাবিশ্বরে মানুষের কাছে মনে হয় এইমাত্র বুঝি এই সমস্যাটা আসল আর এখনই সময়োপযোগী সমাধান বলে দিলেন। আর সেই সমাধানগুলো কতোই না সার্বজনীন। সেখানে কোন আঞ্চলিকতার লেশমাত্র নেই। অথচ সে একই বিযয়ে আপনি লিখেছেন কিছু এলাকায় প্রেক্ষাপটে। শুধু একটা উদাহরণ দেয়া যাক। মহিলাদের মাজারে যাওয়া আর মসজিদে না যাওয়ার বিষয়। মাজার তো কোনো অবস্থাতেই ইসলামসম্মত নয়, আর মসজিদে মহিলাদের নামাযে যাওয়া কিন্তু শরীয়তে নিষেধ নেই। আমাদের দেশের সার্বক অবস্থা বিবেচনায় মসজিদে যাওয়া নিরুৎসাহিত করা হয় মাত্র।

তবে হ্যা স্যার, আপনার লেখাটা চিন্তাশীলদের চিন্তার খোরাক বটে। এ জাতীয় লেখা যত বেশি আসবে, ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য ততই কল্যাণ।

রাইয়ান ইয়ামিন আইমান: তারমানে আল্লাহর উপর ভরসা করে বৈশাখের মিছিলে শামিল হওয়া বেহেতর!!

Mohammad Mozammel Hoque: বৈশাখ বলতে খালি মিছিল দেখেন কেন? মেলা দেখেন না? আমার বাড়ি উত্তর চট্টগ্রামে। বাবুনগর মাদ্রাসার ঠিক পাশে। চবির পাশে হাটাজারী মাদ্রাসা, বাবুনগর মাদ্রাসা, এক কথায় এখানকার কওমি মাদ্রাসার বার্ষিক সভা উপলক্ষেও সবসময়ই মেলা বসে। মেলা হলো গ্রামীণ সংস্কৃতি। মঙ্গল শোভাযাত্রা হলো আরোপিত সংস্কৃতি। আপনি মিষ্টিটা খান, কিন্তু ‘বিচিটা’ ফেলে দেন। সমস্যা কী?

রাইয়ান ইয়ামিন আইমান: আপনি কি পারবেন মেলাতে দাঁড়িয়ে বলতে যে, মঙ্গল শোভাযাত্রা আরোপিত সংস্কৃতি, একে বর্জন করুন??

যে মিষ্টিতে জীবাণু সংক্রমণ হয়েছে, সেটা বিচি ফেলে খাওয়ার জরুরীটা কি?

মঙ্গল শোভাযাত্রাকারীরা মেলার অংশ। তাঁরা অপসংস্কৃতি আমদানি করলে আপনার এই বিষয়ে প্রকাশ‍্যে প্রতিবাদ করা দরকার। তা নাহলে বিচি সরিয়ে খেতে যাদের পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরাও একদিন ভাইরাসে আক্রান্ত হবে না কে বলবে।

বৈশাখের কাছে মঙ্গল কামনা করা হচ্ছে। বৈশাখ এই দাও, এই নিয়ে আস! বলি বৈশাখটা কে?? মাদ্রাসার মেলার দিনগুলোতে কি এমন প্রকৃতি পূজার আয়োজন হয়??

Mohammad Muslem Uddin Munna: ধন্যবাদ স্যার। আরো চিন্তায় ফেলে দিলেন। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর অস্পষ্টতায় সাথী-সদস্য শপথ নেয়ার সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলাম, আজও আছি আমার সমর্থিত সংগঠনের উপর পূর্ণআস্থা ও বিশ্বাসহীনতায়, সে প্রশ্নগুলো আরো স্পষ্ট ও জোড়ালো হল।

Mohammad Mozammel Hoque: Professor Dr Mohammad Muslem Uddin Munna, তোমরা দেশ বিদেশের কত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছো। দুনিয়ার কত বাস্তবতাকে মুখোমুখি অভিজ্ঞতায় জানতে পেরেছো। তোমাদের ইসলামী আন্দোলন কি তোমাদেরকে কোনোদিন জিজ্ঞাসা করেছে, “অমুক ভাই, আপনি তো আমাদের অনেক পরীক্ষিত ত‍্যাগী একজন পুরনো জনশক্তি। বলেন তো, এদেশে ইসলামকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে কী করা দরকার? কোথায় আমাদের ভুল হচ্ছে? কী করা যায়?” আমি জানি, এদেশের ইসলামী শক্তিগুলো অন্যদেরকে তো নয়ই, এমনকি, নিজেদের রিসোর্স পার্সনদেরকেও থোড়াই কেয়ার করে। তারা মনে করে, তারা সব জানে। সব সময় একটা গোবেচারা নির্যাতিত নির্যাতিত ভাব আর কৃত্রিম বিনয় নিয়ে চলে। আসলে এরা ভীষণ গোয়ার, একরোখা ও ….। থাক, আর বলতে চাই না। তবে, নতুন দিনের জন্য তোমাদের মতো লোকদের এগিয়ে আসা উচিত। কেউ তোমাকে সাথীপদ, সদস্যপদ বা রুকনিয়াত দানে ধন্য করবে, সেজন্য তুমি আমি বসে থাকতে পারি না। আমাদের উচিত আমাদের জীবনের বিস্তীর্ণ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর জন্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে লেগে পড়া। বুদ্ধিজীবীসুলভ মনমানসিকতা নিয়ে কখন কে ডাকবে হেদায়েত বিতরণের জন্য, সে জন্য বসে থাকলে চলবে না। এক্ষেত্রে এ দেশের বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা অনুসরণীয়। their effort and sacrifice is exemplary. they do not wait for their organisation’s approval or green signal. Then, why should we …? Do something in your circle. Engage with the people. always be pro-active, pro-people. আল্লাহর কাছে আমাদের সব নেয়ামতের হিসাব দিতে হবে ব্যক্তিগতভাবে। সংগঠনের দোহাই সেখানে কোনো কাজে লাগবে না। এগুলো সব পুরনো কথা। নতুন করে একজন আরেকজনকে স্মরণ করিয়ে দেয়া। যাহোক, ভালো থাকো। আমাদের জন্য দোয়া করো।

Manzurul Haque: Saber Chowdhury ভাই, ইসলামের মৌলিক ও বেসিক জায়গাগুলো নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। তবে তিনি যে স্তরগুলো পর্যায়ক্রম দিয়েছেন, সেটার যুক্তিগুলো কী এবং কেনো জৈববৃত্তিকে প্রথম ও ধর্মকে শেষে নিয়েছেন, তার কোনো আলোচনা আনেননি। যদিও ইসলামকে ধর্মীয় ফেনোমেনো থেকে বের করে জীবনাদর্শ হিসেবে উপস্থাপনটাই তিনি যে ইসলামকে সঠিকভাবে জানেন, তার বড় প্রমাণ। মানুষকে ধর্মীয় অবিচার থেকে রক্ষা করাও মহানবীর (সা.) অন্যতম একটি অবদান, আবুল হাসান আলী নদভি তার একটি সীরাত সেমিনারে বলেছেন, ভাষণটি নবীয়ে রহমতের শেষে যুক্ত আছে। লেখকের কনসেপ্টের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার কোনো জায়গা দেখি না। আপনার মন্তব্য জানায়েন।

Saber Chowdhury: শুকরান আখিল কারীম। আমার মন্তব্য জানাবো।

Mohammad Mozammel Hoque: লেখার মধ্যে আমি একটা বিল্ডিংয়ের উদাহরণ এনেছি। বিল্ডিংটা বানানো হয় এর উপর তলাকে লক্ষ করে। অথচ এর ভিত্তি বা ফাউন্ডেশন হিসেবে থাকে নিচের তলাগুলো। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করে উচ্চশিক্ষায় উপনীত হতে হয়। কথাটা অন্যভাবে বললে উচ্চশিক্ষা লাভের পূর্বশর্ত হলো প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করা। তাই একটা হলো শুরুর দিক থেকে বা ভিত্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। একটা হলো পদ্ধতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ, আবার অন্যটা হলো লক্ষ‍্য বা মনযিল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।

মনযূরুল হক ভাই, সময় থাকলে এই ভিডিওটা যদি দেখেন­– cognitive centrality in a non-centered universe

Manzurul Haque: দেখবো, ইনশাআল্লাহ, স্যার…

Mohammad Mozammel Hoque: মনযূরুল হক, এটি আমার মেয়ের সাথে বছর দুয়েক আগে একটা নিছক ঘরোয়া আলোচনা। আপনার সাথে যে পয়েন্টে কথা বলছি তার সাথে এটার সংশ্লিষ্টতা আছে। সেজন্য এটার লিংক দিলাম। আশা করি আপনার ভালো লাগবে।

Ferdous Sujon: স্যার, দারুণ বিশ্লেষণ। গুরুত্বপূর্ণ লেখা। এমনকি বামপন্থীদের জন্যও। ভারতীয় উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কিছু মূল্যবোধ বামপন্থীরাও বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি। এই লেখাটা পড়া তাদেরও উচিত। শেয়ার করার অনুমতি চাইছি স্যার।

Mohammad Mozammel Hoque: আমার ধারণা ইসলামপন্থীরা অযাচিত সব পিছুটান ঝেড়ে ফেলে শুদ্ধ, প্রো-পিপল ও জীবনবাদী মনমানসিকতা নিয়ে সংস্কৃতির ময়দানে কাজ শুরু করলে সহসাই তারা অনেক বেশি সফলতা লাভ করবেন। কারণ, মানুষ মূল্যবোধ এবং বিনোদন-সুবিধা, দুইটা একসাথে পেতে চায়। নাস্তিক বামপন্থীদের কাছ থেকে বিনোদন-সুবিধা নিতে গিয়ে যে মূল্যবোধের বারোটা বাড়ছে এটা অনেকেই বুঝতে পারেন। কিন্তু এই ফিল্ডে ইসলামপন্থীদের কোয়ালিটি প্রোডাক্ট না থাকার কারণে মানুষ বাধ্য হয়ে বামপন্থীদের সাংস্কৃতিক নেতৃত্বকে মেনে নিচ্ছে। মেলা হলো মিষ্টি, মঙ্গল শোভাযাত্রা আর প্রদীপ জ্বালানো হল বিচি। বুদ্ধিমান বালকটির মতো আমাদের উচিত বিচিটা ফেলে দিয়ে মিষ্টিটা খাওয়া। বাই দ্যা বাই, বিচি ফেলে দিয়ে মিষ্টি খাবার কাহিনীটা কি মনে আছে?

Ferdous Sujon: জ্বি স্যার। মনে আছে। স্যার, আপনার এই নাস্তিক বাম আখ্যার সাথে দ্বিমত করছি। বাম মানে নাস্তিক এটা অতি জেনারালাইজ করা। আপনি নিশ্চয় জামাল উদ্দিন আফগানীর মত লোককে ভুলে জাননি।

Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ, বামপন্থা আর নাস্তিকতা অভিন্ন নয়।

Hasan Bin Nazrul: অবশ্যই বেহেতর। কিন্তু আমাদের কূপমণ্ডূক ভাইয়েরা তা বুঝতে চায় না। এরা সবখানে বেদাত আর হারামের গন্ধ খোঁজে। ফেরকাবাজীতে আগুয়ান কিন্তু ঐক্যের মর্ম বোঝে না। তালাকের ফতোয়া খোঁজে কিন্তু মিলনের মন্ত্র জানে না।

আপনার লিখা হতে একটা সুবিন্যস্ত ভালো ধারণা পেলাম। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই ভেবে আসছি, তবে তা এমন গোছালো ছিল না, গুছিয়ে দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ প্রিয় মুরুব্বী।

Muntasir Mahmud: স্যার, পুরোটা যেহেতু পড়েছি তাহলে আমার ধৈর্য একেবারে খারাপ না। কিন্ত স্যার জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে আমার বুঝতে খুব কস্ট হয়। কিন্ত যতটুকু বুঝেছি তার মধ্যে আমার একটাই প্রশ্ন আছে, যেটা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি।

এই যে আজ পহেলা বৈশাখে আমরা নিজেদের পরাজিত ভাবছি, আমাদের সেই রকম সাংস্কৃতিক শক্ত নাই যে মানুষকে হালাল আনন্দময়তার সুযোগ করে দিবো, সেখানেই তো প্রশ্ন। হালাল হারামের সীমা কোনটা, আর আসলেই কি হালালভাবে সেই রকম আনন্দ দেয়া সম্ভব, যেটা হারামের সাথে ‘ফাইট’ করতে পারবে??

হ্যা, আমি জানি আমাদের অনেক রকম হালাল সাংস্কৃতিক শক্তি আছে কিন্ত ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বিনোদনের দিক থেকে তথাকথিত হালাল বিনোদন আসলে প্রচলিত সংস্কৃতির সাথে একেবারেই টেক্কা দিতে পারবে না!

Mohammad Mozammel Hoque: অবশ্যই পারবে। কেন পারবে না? আমি সারাজীবন cultural phenomena নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি। এর পাশাপাশি এসব বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করেছি। এর মানে এই নয় যে আমি এসব বিষয়ে কিছু একটা করে দেখাবো। But I am sure and sanguine that it could be done and very easily and successfully it could be done. I tell you, islamist people could beat the so-called progressive ones more quickly as it is generally thought about. এই নিয়ে একদিন আসো, সরাসরি কথা বলবো।

Imran Muhammad: স্যার, সালাম নিবেন। আপনার পুরো পোস্টটা মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। আরো কয়েকবার পড়তে হবে পুরোপুরি বোঝার জন্য। তবে আমার কিন্তু কনফিউশন আছে স্যার। সময় পেলে দয়া করে আমাকে ক্লিয়ার করে দেবেন। (এক) লেখনীতে আপনি একাধিকবার বলেছেন যে নিছক একটা ধর্ম হওয়ার চাইতে ইসলাম বরং একটা পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এটা ঠিক আছে। কিন্তু এই কথার পাশাপাশি আবার আপনি বলেছেন ইসলামপন্থীদের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে তারা জীবনের সবকিছুকেই ইসলাম দিয়ে বিচার করতে চায়, তারা চায় তাদের জীবনের প্রতিটা স্টেপ ইসলাম মেনেই হোক। আমি যদি ভুল না বুঝে থাকি তাহলে আমার মনে হচ্ছে এই দুটো বাক্য কি পরস্পর কন্ট্রাডিক্ট্রি না?? ইসলাম যদি একটা টোটাল জীবন ব্যবস্থাই হয় তাহলে জীবনের সবকিছুকেই ইসলাম দিয়ে বিচার করাতে সমস্যা কোথায়??

(দুই) আপনি বলেছেন পহেলা বৈশাখের খারাপ বিষয়গুলা বাদ দিয়ে অন্যান্য কাজ যেমন মেলায় যাওয়া, ঘুরতে যাওয়া এইগুলা করা যেতে পারে, আনন্দলাভের উপায় হিসেবে এসবে জীবনবিধান ইসলামের কোনো বাধা নেই। এইখানে আমার কনফিউশান হচ্ছে, আমাদের দেশে, যদি এইসব মেলার কথাই ধরি, তাহলে এইগুলা কিভাবে পালিত হয় এটা আমরা সবাই জানি। একটা সিস্টেমেটিক ওয়েতে সেলফ ক্রিয়েট হয়ে যাওয়ার পরে না হয় উচিত- অনুচিত, ঠিক-ভুল আইডেন্টিফাই করা যায়, কিন্তু সেটার আগ পর্যন্ত ধরেন শিশুদেরকে যদি শৈশব থেকেই পহেলা বৈশাখের মেলা বা বিভিন্ন প্রশ্নবিদ্ধ সাংস্কৃতিক উৎসবে অভ্যস্ত করে ফেলা হয়, ফলটা খেয়ে বিচি ফেলে দেয়ার কৌশলটা তাদের জন্য কিভাবে প্রযোজ্য হবে? এক পহেলা বৈশাখে অভ্যস্ত কাউকে ক্রমপরবর্তীতে কোন দোহাই দিয়ে চৈত্র সংক্রান্তি, ভ্যালেন্টাইন উদযাপন বা সাকরাইন উৎসব থেকে ফেরানো যাবে? এতে কি হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেড়ে যায় না?

আপনার মতামতের অপেক্ষায় রইলাম। আল্লাহ আপনার হায়াত এবং সুস্থতা বাড়িয়ে দিন।

Mohammad Mozammel Hoque: জীবনের বাইরে ইসলাম নাই। ইসলামের বাইরে জীবন নাই। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে যেগুলো মুয়ামালাত বা সামাজিক আচরণগত বিষয়, সেগুলো পরিস্থিতি সাপেক্ষে একাধিক উপায়ে উপস্থাপন ও আমলযোগ্য। এগুলো আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তর। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর বেশ কয়েকটা মন্তব্যে দেয়া হয়েছে। সংক্ষেপে তা হলো, সমাজে থাকতে হলে আমাদেরকে নানা বিষয়ে এডজাস্ট করে থাকতে হয়। যে বিষয়গুলোকে আমরা পছন্দ করি না সেগুলোকে আমরা এড়িয়ে চলি। যেগুলোকে আমরা এড়িয়ে চলতে পারবো না সেগুলা হতে নিজেদেরকে আত্মরক্ষা করতে হবে। এই যে কথাগুলো বললাম এগুলো নিতান্তই দ্ব্যর্থবোধক। কোনো কোনো ফলে ফল হলো বিচিটুকু। কোনো কোনো ফল হলো খোসা। বিচি ফেলে দিতে হয়। যেমন– বরই। এখন কেউ যদি ফল খাবে তো বিচিশুদ্ধা আগাগোড়া খাবে, তার জন্যও তো খুব বেছে বেছে ফল জোগাড় করতে হবে। দুনিয়ার এমন ফল খুব কমই আছে যেগুলো গাছ থেকে পেড়ে হাতে ধরেই টুক করে পুরোটা একসাথে গিলে ফেলা যায়।

Imran Muhammad: ধন্যবাদ স্যার, শুকরিয়া।

Ismail Chowdhury: Mohammed Touaha Akbar, Yaqub Chowdhury, … please study carefully and speak out.

Nayeem U Faisal: ইসলামী আক্বিদাহকে দর্শনের মারপ্যাঁচে ফেলে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ গোমরাহির পথ উন্মুক্ত করে, এটা স্যারকে দেখলেই বুঝা যায়।

Ismail Chowdhury: Faisal, স্যারকে দেখেই বুঝা যায়!!?? মাশাআল্লাহ্, আল্লাহ্ আপনার দৃষ্টিশক্তিকে আরও আরও প্রখর করুন।

Ismail Chowdhury: Mohammed Touaha Akbar, দ্বিমতের জায়গাগুলো আলোচনায় আসলে আমরাও উপকৃত হতাম।

Nayeem U Faisal: অনুচিত মনে হলে আফওয়ান। ইসলামি আক্বিদাহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে খুব সেনসেটিভ হিসেবে জানি। তাই সালাফের দেখানো পথ ছেড়ে মনগড়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ইমান বিধ্বংসী মনে হয়। আর ইসলামী আক্বিদায় দর্শনের অনুপ্রবেশ কখনো ভালো ফল বয়ে আনেনি বলেই জানি। যার ফলস্বরুপ অনেক বাতিল ফিরক্বার আবির্ভাব হয়েছে। জাযাকাল্লাহ

Nayeem U Faisal: ভাইয়া কমেন্টগুলো দেখেন, আক্বিদাহগত বিভ্রান্তির কারণে কেউ ইমানহারা হলে তার দায় স্যার নিবেন কিনা জানিনা।?

Mohammad Mozammel Hoque: Faisal, the conflict of philosophy and revelation, is a pseudo conflict. It’s a fallacy of false binary. You understand that? Perhaps, not. Because you have made a গোড়ায় গলদ। Of course you know Islam but you don’t know philosophy. আপনি যদি একটু সময় করে এ সংক্রান্ত আমার লেখাগুলো পড়তেন, খুব খুশি হতাম।

Nayeem U Faisal: স্যার, সত্যি আমি কিছু বুঝিনি। বুঝার চেষ্টা করিনি কারণ ইসলামের প্রিন্সিপল বিষয়গুলোতে সালাফের দেখানো পথ ও ট্রাডিশনাল আলিমদের অনুসৃত পন্থার বাইরে অন্যকোন চিন্তাভাবনার অবকাশ আছে বলে মনে করিনা। অন্তত আক্বিদার ক্ষেত্রে গোঁড়া মৌলবাদী হবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।

Ismail Chowdhury: Mohammed Touaha Akbar, স্যার যেহেতু ওপেন প্ল্যাটফরম ফেসবুককেই বেছে নিয়েছেন সেহেতু এখানে আলোচনায় অনেকেই উপকৃত হবেন, পরম্পরা বুঝতে পারবেন।

আর, বেয়াদপি?!

এটা ফিতরাতের সমস্যা হলে পাল্টানো যাবে না— সবখানেই প্রকাশ পাবে।

সচেতন থাকি— মুক্ত কথায়। কথা বলতে দিতে হবে— এটা বুঝার মত যথেষ্ট জ্ঞান + অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে নি:সন্দেহে, তাই নয় কি?

Mohammad Mozammel Hoque: Faisal, আমার এক নম্বর সালাফ হলো আমার বিবেক। মানুষকে এ ধরনের একটা আলোকবর্তিকা দেওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কোরআন শরীফের মধ্যে কনফার্ম করেছেন। ‘যুক্তির বাইরে কিছু নয়। বুদ্ধির অনুকূলে সর্বদা’ – এটি হলো আমার স্লোগান। অতএব বুঝতে পারছেন, আপনার সাথে আমার মিল হওয়ার কথা নয়। যুক্তির কার্যকারিতা এতটাই অবশ্যম্ভাবী, যুক্তির দরকার নাই – এই কথাটাও কাউকে যুক্তি দিয়েই বলতে হয়। যুক্তির মধ্যে আছে খারাপ যুক্তি, ভালো যুক্তি, নিম্নপর্যায়ের যুক্তি, উচ্চপর্যায়ের যুক্তি। উচ্চপর্যায়ের যুক্তিকে গ্রহণ করে নেয়া হলো বুদ্ধির দাবি। আগ্রহী হলে freethoughts.dorshon.com-এ ঢুঁ মেরে আসতে পারেন।

Mohammad Mozammel Hoque: Faisal, কেউ তো কারো দায়িত্ব নিবে না। নেয় না। নেয়ার কথা না। এ ব্যাপারে কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা নিজেই পরিষ্কার করে বলেছেন। তারপরও এ ধরনের মন্তব্য/প্রশ্ন কেন?

মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ: Mohammad Mozammel Hoque, সেটা কোন ধরনের দায়িত্ব? আর ফেতনা যদি কেউ শুরু করে তবে সে সম্পর্কে হাদীসে কি বলা আছে বা আদো কিছু বলা আছে কি না? আর আকিদা যুক্তি নয় বরং অন্ধবিশ্বাসের নাম, যুক্তি চলে শুধু তা সহী কিনা, মানে তা কি রাসূল (সা.) অথবা আল্লাহর বানী কি না তার উপর, মানে তা যাচাইয়ে। মুতাজিলাদের পথভ্রষ্টতা যুক্তির কারণে আর শিয়াদের কুযুক্তিনির্ভর বাড়াবাড়ি কমবেশ একটু আধটু জানা আাছে। উত্তর দিলে উপকৃত হব।

Imran Hossain Nahid: বাহ কি চমৎকার!

//আমার এক নম্বর সালাফ হলো আমার বিবেক!//

অবাক হচ্ছি, স্পর্ধা দেখে। মডারেটদের বরাবরই এমন বক্তব্য দিতে শুনেছি । এই সমস্ত লোকেরাই কোরআন, হাদীছ, সালাফদের মতের উপর নিজের প্রবৃত্তির খাহেশ অনুসারে মনগড়া যুক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে ।
আর সৃষ্টি করে নতুন নতুন ফেরকার।

Nayeem U Faisal: আমার বিবেক নিঃসৃত সিদ্ধান্তকে অবশ্যই সালাফের কষ্টিপাথরে যাচাই করে নিতে হবে। যদি দেখা যায় যে, বিবেক খাটিয়ে বের করা আমার সিদ্ধান্ত সালাফে সালেহিনের বুঝের বাইরে চলে গেছে তাহলে বুঝতে হবে আমার বিবেক আমার সাথে প্রতারণা করেছে। ফাইনালি সালাফ হলো একটা স্ট্যান্ডার্ড। যদি বিবেকের কথা বলা হয় তবে সেই বিবেকের ক্ষেত্রেও তারাই সেরা আদর্শ।

Sourav Abdullah: Mohammed Touaha Akbar ভাই, স্যারের সাথে খোলামেলা কথা বলতে পারেন। দরকার হলে অফলাইনে দেখা করে বলেন। অন্তত নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, উনি আপনার আর্গুমেন্টকে বেয়াদবি হিসেবে নিবেন না। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

Bhuian Monoar Kabir: প্রিয় মোজাম্মেল। মনে কর, এ বিষয়ে বছর কয়েক আগে আমার বাসায় তোমার সাথে আমার দীর্ঘ কথোপকথন হয়েছিল একাধিক দিন। তোমার আজকের লেখাটা বার দুয়েক পড়ে সেই কথোপকথনের কথা মনে পড়ল। আসলে, কখনো যদি তোমার সংজ্ঞামত ইসলামপন্থীগণ রাষ্ট্রশক্তিতে বিপ্লব বা অন্য কোন পন্থায় ক্ষমতায় আসেও ideological apparatus-এর drficiency-র কারণে বিপ্লবের টিকে থাকা ও সফলতার পথে মৃত্যুঘাতী চ্যালেঞ্জ হয়ে আসতে পারেই। আবার আমাদের বঙ্গীয় অঞ্চলের ইসলামের উৎপত্তি ও বিকাশ, চরিত্র, সমাজের অন্যান্য অংশের ও আচারের সাথে যে নেগোশিয়েশান হয়েছে এবং এর ফলে ইসলাম যেটুকু ছাড় তাদেরকে দিয়েছে, তা আর reclaim করাটা প্রায় অসম্ভবই মনে হয়। এমতাবস্থায়, basic principles, features ইতাদি বাদে বাংলার ইসলামের এই সমাজের প্রেক্ষিতে বিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ইসলাম সংক্রান্ত ধারণার (সকল নেগোশিয়েটেড ছাড়সহ) মধ্যেই ইসলাম পালন ও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা ও তার কাছাকাছি প্রাপ্তির মধ্যেই তুষ্ট থাকাই এই সময়ে সঙ্গত বলে মনে হয়। তবে, আশাবাদী এবং রোম্যানটিক্যালী naive বিপ্লবীদের বিষয়টি আলাদা।

Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ স্যার, অতিআশাবাদ ও হতাশাবাদের মাঝামাঝি বাস্তববাদী পজিশনে থাকার চেষ্টা করা উচিত।

Fuad Hasan: Can’t agree more. ভয়ে ভয়ে শেয়ার করলাম। রেফারেন্সের জন্য সেভও করেছি।

Mohammad Mozammel Hoque: ভয় কিসের if you are agreed with the points?

Fuad Hasan: We are generally least receptive to new ideas especially if it relates to Islam. সে জন্যই ভয়।

Mohammad Mozammel Hoque: সেইটা ইসলামপন্থীদের সমস্যা। ইসলামের না। আদর্শ আর আদর্শের অনুসারী এই দুইটা আলাদা জিনিস। এই দুটোকে যারা একাকার করে ফেলে, বিশেষ করে আদর্শের অনুসারীদেরকে দিয়ে যারা আদর্শকে মূল্যায়ন করেন তারা ভুল করেন। আনফরচুনেটলি, এই ভুলটা মানুষ অহরহ করে। বিশেষ করে ইসলামের মতো আদর্শের ক্ষেত্রে, যেখানে ক্লিয়ার-কাট বেসিক টেক্সট রয়ে গেছে, সেখানে ইসলামপন্থীদের অযাচিত আচরণকে ইসলামের উপর আরোপ করাটা রীতিমত অসততা। এরচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, ইসলামবিরোধীদের এই ধরনের একতরফা দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ইসলামপন্থীরা নিজেরাই দায়ী। ইসলামপন্থীরা নিজেরাই নিজেদেরকে ইসলামের ধারক বাহক ও সমার্থক হিসেবে উপস্থাপন করেন। যাহোক, পোস্টটা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ভালো থাকো।

Gazi Saleh Uddin: মোজাম্মেল, পুরো বিষয়টি পড়েছি, যেহেতু আপনাকে আমি জানি, তাই দুটি প্রশ্ন করবো: ধর্মকে আমরা সংস্কৃতি হিসাবে দেখতে পারি কিনা, যেমন সন্ধার সময় এক মুসলমান মেয়ে এবং এক হিন্দু মেয়ে মসজিদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আজান দিলে মুসলিম মেয়েটি মাথায় কাপড় দিবে, হিন্দু মেয়েটিও দিবে। ভারতে আমি ঠিক উল্টোটা দেখেছি, মন্দিরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় নমস্কার করছে। একজন করছে ধর্মের জন্য অন্যজন করছে দেখাদেখি, অর্থাৎ একজনের কাছে ধর্ম অন্যজনের কাছে সংস্কৃতি। তাহলে তো এই ধর্মান্ধতা থাকে না।

দ্বিতীয়ত: ধর্মের উৎপত্তি নিয়ে সর্বপ্রাণবাদ ও মহাপ্রাণবাদ তত্ত্ব মানেন কিনা।

Mohammad Mozammel Hoque: স্যার, আপনি আমাকে তুমি করে না বলে ‘আপনি’ করে বলছেন কেন?

আর, ধর্ম ও সংস্কৃতি কাছাকাছি জিনিস। এই উভয়ের ভিত্তি হলো জীবনবোধ। এই উভয় বৃত্তের অনেকখানি mutually overlapping। দ্বিতীয় কথা হলো, স্যার, কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, বার বার করে বলেছেন, আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে তা সবকিছু আল্লাহর তাসবীহ করে। এই দৃষ্টিতে মুসলমান মাত্রই এক ধরনের সর্বপ্রাণবাদে বিশ্বাসী।

Gazi Saleh Uddin: উত্তরটি বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা হলো না, যা তুমি তোমার লেখার মধ্যে এনেছিলে ।

Mohammad Mozammel Hoque: স্যার, কষ্ট করে আমার এই দুটো লেখা যদি পড়তেন, তাহলে আপনার কাছে ক্লিয়ার হতো, ধর্ম, ইসলাম আর সভ্যতা সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি।

১। মানব সভ্যতার প্রচলিত সংজ্ঞা ও ইতিহাস পর্যালোচনা

২। ধর্ম আর মতাদর্শের অন্তর্গত সম্পর্ক

Shahedul Alam: নিশ্চয় আমি আপনাকে স্পষ্ট বিজয় দিয়েছি। (সূরা ফাতাহ)

এ আয়াতের তাফসির পড়ে নিবেন। জয় পরাজয় কাকে বলে বুঝতে পারবেন আশা করি।

আর আল্লাহ নিজেয় যেখানে ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন, সেখানে নিজেকে পরাজিত মনে করেন, আনন্দের জন্য নতুন সংস্কৃতি খুঁজেন তাহলে আপনাকে আর কিছু বলার নাই।

আর হা, আমি একজন মুসলিম। যে কাজে আনন্দ আছে কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি নেই সে কাজে আমি নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টিই আমার কাছে আনন্দ, আল্লহর অসন্তুষ্টিই আমার কাছে পরাজয়।

আনন্দের জন্য ইনিয়ে বিনিয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতির পক্ষে নেওয়ায় আপনার পরাজয় হয়েছে।

Mohammad Mozammel Hoque: তাহলে মুসলমানদের কোন পরাজয় নাই, এটা বলতে চাচ্ছেন? তাহলে তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালাম বিজয়ের জন্য আল্লাহর কাছে যে দোয়া করেছেন তা অর্থহীন বা redundancy হয়ে দাড়ায়।

ঈমানদার হিসেবে বেঁচে থাকাই বিজয়ী থাকা। এটি ব্যক্তিগত বিবেচনা। সমষ্টিগত দিক থেকে আমরা জয় এবং পরাজয় উভয়টির অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকি। সে জন্যই আল্লাহ তায়ালা বিশেষ করে ওহুদ যুদ্ধের পরাজয়ের প্রেক্ষিতে বলেছেন, এটি হচ্ছে সময়, যা মানুষের মধ্যে আবর্তিত হয়।

Shahedul Alam: আপনি যে বলতে চাচ্ছেন, ফহেলা বৈশাকে অংশগ্রহন করতে না পারায় আমরা পরাজয়ী। এ কথা মানতে পারলাম না। যে কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি নেয় সে কাজে সংখ্যাঘরিস্ট দেখাতে না পারা মানে পরাজয় নয়। ধন্যবাদ।

Sourav Abdullah: ভাই, পহেলা বৈশাখে আমাদের অংশ গ্রহণ করতে না পারাটা আমাদের পরাজয় না। পরাজয় হচ্ছে, আপনি দেখতে পাচ্ছেন দলে দলে লোকজন শির্কি কাজে লিপ্ত হচ্ছে, অথচ আপনি কিছুই করতে পারছেন না। বরং হাত-পা গুটিয়ে বিজয়ীর বেশে আরাম করছেন।

এখন দেখেন, কিছু করতে না পেরে বোমা মেরে ‘বেলাল্লাপনায়’ জড়িত পুরা জনগোষ্ঠীকে উড়িয়ে দিয়ে জয় লাভের চিন্তা করিয়েন না।

Shahedul Alam ভাই, Sourav Abdullah, এটা ফিতনা ফাসাদের যুগ। এখানে খুব অল্প সংখক মানুষকে আপনি ইসলামের পথে পাবেন।

তাছাড়া এটা রাসুল (স) এর প্রেডিকশন যে শেষ যামানায় অধিকাংশ মানুষ দলাদলি, শিরক, বিদা’আতে লিপ্ত হবে এবং ইসলাম থেকে দূরে সরে যাবে। আর এখন তাই হচ্ছে। আর তাই যদি না হত তবে রাসুল (স) এর প্রেডিকশন মিথ্যা প্রমাণিত হবে।

আর আমি নিজে এসব পহেলা বৈশাখে যায় না এবং অন্যদেরকে বিরত রাখার চেস্টা করি। ধন্যবাদ।

Razib Ahmed: স্যার, এখানে হারামটাই বা কেন সে ধারণাটাই পরিস্কার হওয়া উচিত।
পহেলা বৈশাখটা কন্টিবিউট কারা করছে? মঙ্গল শোভাযাত্রা কারা করছে? চারুকলা থেকে সবখানে কালচারাল সংস্কৃতি কারা নিয়ন্ত্রণ করছে?

এসব জায়গায় গিয়ে কি ভালো কিছু করা সম্ভব?

Mohammad Mozammel Hoque: আমি আমার এলাকার কথা বলতে পারি। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকি। এখানকার বৈশাখী আয়োজনে যদি ইসলামপন্থী শিক্ষকগণ যার যার মতো করে অংশগ্রহণ করেন তাহলে এখানকার আয়োজন ও পরিবেশগত অনেক সমস্যা খুব সহজেই সমাধান করা সম্ভব। এর বিপরীতে এই আয়োজনকে একতরফাভাবে ছেড়ে দিলে নৈতিকতার সনাতনী মূল্যবোধের যারা বিরোধীপক্ষ তারা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের লাইসেন্স পেয়ে যাবে। যেটা হচ্ছে বর্তমানে।

Sourav Abdullah: স্যার, কেন যেন এই সোজা কথাটাই মানুষ বুঝতে চেষ্টা করছে না। অহেতুক কঠিন করে এক ‘পিউরিটানিক’ আরাম বোধ করছে!

Fuad Hasan: আপনার পোস্টটা বেশ ভাবাচ্ছে। আর ভাবতে ভাবতে মনে হলো আমার একটা চিন্তা আপনার সাথে শেয়ার করি। আপনার সাথে যোগ করাও বলতে পারেন, যদিও সেটা শরঈ ধারণায় কতটা গ্রহণযোগ্য সেটা বলার মতো কোনো পড়ালেখা আমার নেই। আপনি যে চার ধাপে প্রবৃত্তি/চাহিদার কথা বলেছেন যেগুলোর ১ম ধাপ পূরণ হওয়া সাপেক্ষে ২য় ধাপ প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে সেটা “নীড হায়ারার্কি” নামের একটি শিল্প মনস্তাত্ত্বিক ধারণা/তত্ত্বের সাথে কাঠামোগতভাবে বেশ মিলে। আমার মনে হয় ঐ তত্ত্বের একটা অসম্পূর্ণতা হচ্ছে সেটা “ফিল্ট্রেশন” বা “ছাঁকন” সম্পর্কে কিছু বলে না। একইভাবে, আপনি যদিও ফোকাস না করে এই নিয়ে কথা বলেছেন, আপনার মূল ধারণা ফিল্ট্রেশনকে আরও গুরুত্বের সাথে ধারণ করতে পারে। যেমন ধরেন, জৈবিক-সহজাত প্রবৃত্তি অবাধ যৌনতা চাইবে এক সময়। সেটা নিয়ন্ত্রিত হবে পরের দুই ধাপে আর আধ্যাত্মিক ধাপ যদি ইসলামিক ওয়েকে ফলো করে সেটা বিয়ে-বহির্ভূত জীবনে নিষিদ্ধ হবে। একইভাবে, সাংস্কৃতিক-সহজাত প্রবৃত্তি বা সোশ্যাল ও আনন্দময়তার চাহিদা এলকোহলকে বা স্ট্রিপ/জেন্টেল্ম্যান’স ক্লাবগুলোকে নিয়ে আসবে। কিন্তু, পরের ধাপে বিজ্ঞানের ধারণায় বুদ্ধিবৃত্তিক-সহজাত প্রবৃত্তি বলবে “সোবার” হতে আর শেষ ধাপে ইসলাম হলে বলবে দূরে থাকতে। ৩য় ধাপে বুদ্ধিবৃত্তিক-সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যে আপনি যাদু-টোনা বা ব্ল্যাক ম্যাজিককে নেবেন কিনা জানি না। আমার সাবজেক্টের (মার্কেটিং) পৃথিবীবিখ্যাত এক পণ্ডিত (নর্থ ওয়েস্টার্নের পিএইচডি) ড. নিখিলেশ ধোলাকিয়া। তার সাথে ফিলোসফি অব সায়েন্স নিয়ে এক আলোচনায় আমাকে চমকে দিয়েছিলেন এই কথা বলে যে, বিজ্ঞান জ্ঞানের সবচেয়ে ডমিন্যান্ট সোর্স হলেও একে একমাত্র সোর্স ভাবা মূর্খতা। আর্ট, ধর্ম, এমনকি ম্যাজিক বা ব্ল্যাক ম্যাজিক – এসবও জ্ঞানের খুব গুরুত্বপূর্ণ সোর্স। তার ব্যাখ্যা আমার কাছে “বাঙ্গাল সেক্যুলার-বিজ্ঞানমনস্ক”দের অনেক অসারতা পরিস্কার করে দিয়েছিল। যদিও তিনি আমাদের এই বিশেষ ফেনোমেনন সম্পর্কে একেবারেই ওয়াকিবহাল নন। যাক, যা বলছিলাম, ৩য় ধাপে কেউ যদি বুদ্ধিবৃত্তিক-সহজাত প্রবৃত্তি থেকে এই ব্ল্যাক-ম্যাজিকে ঢুকে পড়েন আর আপনার ৪র্থ ধাপে যদি সে ইসলাম অনুসরণ করে তাহলে সে মেনে নেবে এটা কুফরী কাজ। আমার মনে হয়, আপনি মানুষের/মুসলমানের উৎসব ধারণা বা বিজ্ঞানমনস্কতা এবং সর্বোপরি গ্রহণন-বর্জনের পদ্ধতি নিয়ে যে প্রপোজিশন (অবশ্যই শরঈ ধারণার সম্মতিতে) দিলেন তা আরও পরিস্কার হয় এই “ফিল্ট্রেশন” বা “ছাঁকন” প্রক্রিয়াকে যুক্ত করলে। একইসাথে, ১ম ধাপ থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে ৪র্থ ধাপে না গিয়ে ৪র্থ ধাপে সরাসরি পড়লে বা সেই ধাপ থেকে শুরু করলে কিভাবে সব নির্দোষ জিনিসও হারাম হয়ে যায় সেটা পরিস্কার হবে। তবে, আমার এই কাঁচা চিন্তা কতটা ইসলামসম্মত সেটা নিশ্চিত করার মতো জ্ঞান অবশ্য আমার নেই। ভুল হলে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আপনার মতামত পেলে খুশি হবো, আলোকিত হবো।

Mohammad Mozammel Hoque: It’s tremendous and I strongly agree with your interpretation. আমার মূল লেখার মধ্যে আমি বলেছি এই ধাপগুলো স্বতন্ত্র কিন্তু পরস্পর নির্ভরশীল। ঠিক যেন একটা চার তলা বিল্ডিংয়ের মতো।

Fuad Hasan: ধন্যবাদ। উপরের ধাপ যে নিচের ধাপে গ্রহণযোগ্য অনেক বিষয়কে ক্রমান্বয়ে ছেঁকে বাদ দেবে/ পিউরিফাই করবে সেটা আমি হাইলাইট করতে চেয়েছিলাম।

Tofail Ahmed: পুরোটাই পড়লাম। ভালো লাগল। নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, বিকল্প ভাবনা। হুজুরদের মধ্যে সর্বসময়ে নৈরাশ্য। আজাব-গজব ছাড়া কোনো বয়ান নাই।

Mohammad Mozammel Hoque: স্যার, আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

Habib Bin Mazid: স্যার, ইসলামপন্থীরা মঙ্গল শোভাযাত্রার মতো সরাসরি পৌত্তলিক একটা আয়োজনকে কীভাবে সমর্থন করতে পারে?

Mohammad Mozammel Hoque: না, কোনোভাবেই পারে না। এরপর? চৈত্র সংক্রান্তি, বৈশাখ উদযাপন, মেলা আর মঙ্গল শোভাযাত্রা, এ বিষয়গুলো তো এক নয়। এর প্রথম এবং শেষেরটা পৌত্তলিকতা। নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে মেলার আয়োজন হলো গ্রামীণ সংস্কৃতি।

Habib Bin Mazid: ঠিক, আমরা তো বর্ষবরণের বিভিন্ন অনুষঙ্গের কোনো কোনোটির ব্যাপারে কঠোর, আবার কোনোটির ব্যাপারে শিথিল।

Nazmul Haque: মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশগুলোর সাথে হিন্দু ধর্মের এবং পুজার মিল রয়েছে। যেমন–

১. পেঁচা: হিন্দু ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী পেঁচা মঙ্গলের প্রতীক। তাদের অন্যতম দেবতা লক্ষীর বাহক। পেঁচার মুখোশ পরিধান করলে মঙ্গল আসবে, বরকত আসবে, হিন্দু ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী। যা মঙ্গল শোভাযাত্রায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

২. ইদুর: গনেশের বাহন।

৩. হনুমান: রামের বাহন।

৪. হাঁস: স্বরস্বতীর বাহন।

৫. হাতি, বাঘ, সিংহ: দূর্গার বাহন।

৬. গাভী: রামের সহযাত্রী।

৭. ময়ূর: কার্তিকের বাহন।

৮. ক্ষিপ্ত সাপ: শীবের বাহন।

৯. সূর্য: হিন্দুদের সূর্য দেবতা।

১০. কপালে টিপ: কপালে সিঁদুর হিন্দু ধর্মীয় একটি আলামত ।

১১. কুলা: হিন্দু ধর্মে পূজার জিনিসগুলো বহন করা হয় কুলা দিয়ে।

১২. পান্তা-ইলিশ: আশ্বিনে রান্না করে কার্তিকে খাওয়া। হিন্দু পূজার অংশ।

উপরের তথ্যাবলী মুসলিম সংস্কৃতির অংশ কি?? ১লা বৈশাখের নামে মুসলিম সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে কি?? আমরা অন্যের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার হচ্ছিনা তো?????

Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ আমরা তো সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের সম্মুখীন। তাতে কি বুঝা গেল? উত্তর আপনি দেবেন। তার সাথে আমার এ কথাও যুক্ত করবেন, সভ্যতা ও সংস্কৃতি মাত্রই অন্তর্গতভাবে অতি অবশ্যই আগ্রাসী চরিত্রের বা বৈশিষ্ট্যের, যদি তা স্বতন্ত্র কোনো সভ্যতা ও সংস্কৃতি হয়ে থাকে। এই দৃষ্টিতে হয়তো আপনার সংস্কৃতি প্রাধান্য বিস্তার করবে অথবা অন্যের সাংস্কৃতিক আধিপত্যের অধীনে আপনি জীবনযাপন করবেন। সভ্যতা ও সংস্কৃতির সহবস্থান হলো নিতান্ত আপেক্ষিক ও reciprocal বিষয়।

Engr Md Atikur Rahman: ঢাকার পয়লা যেন অষ্টমীর একডালিয়া / আনন্দবাজার পত্রিকা

Sourav Abdullah: Engr Md Atikur Rahman, তো বুঝেন, এই পূজা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য, আনার জন্য আমরা নিজেরাই ভালো কিছু নিয়ে মানুষের কাছে হাজির হবো, নাকি হাত-পা গুটিয়ে আল্লাহ আল্লাহ করবো, নাকি বাকিদেরকে গোল্লায় গেছে, গোল্লায় গেছে বলে গালি দিবো?

Nazmul Haque: মৌলবাদী গালি দিয়ে ইসলামের বিপক্ষে লিখার লোকের অভাব নেই।।। আমাদের ভাবনার বিষয়, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম ১৯৮০ দশকে তখন ১লা বৈশাখ এত জমজমাট ছিল না।। মোটামুটি হিন্দুরা পালন করতো।। আমাদের ফেনী শহরে হিন্দুরা রথ টানতো। ভুট্টা বিক্রি করতো। চিড়া, দই, মিষ্টি, কলা ক্রয় করে পরিবার নিয়ে খাইত।। আমাদের গ্রামের পার্শ্ববর্তী উত্তর কাশিমপুর গ্রামে ৮০% হিন্দু পরিবারের বসবাস।। মুসলিম গরীব, বিধবা মহিলারা ১লা বৈশাখ হিন্দু গ্রামে যেয়ে দই, কলা, চিড়া, মিষ্টি খেয়ে এসে গল্প করতো।।

আপনি চবি অধ্যাপক ও গবেষক, আপনার লিখা ভালো, তবে তা অপসংস্কৃতি প্রচারকারীর পক্ষে যাচ্ছে কি?? মঙ্গল শোভাযাত্রার আবিষ্কারক কে? কখন মঙ্গল শোভাযাত্রা ১লা বৈশাখে যুক্ত হলো??

Mohammad Mozammel Hoque: নাজমুল ভাই, এক সময়ে যা খেয়ে আপনার দিব‍্যি চলত এখন তা আর যথেষ্ট নয়। কিংবা নয় ততটা উপযোগী। এটি আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যে কারো ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এক সময়ে চিঠি লিখে মানুষ সামাজিক থেকেছে। এখন মানুষ যোগাযোগ আর সামাজিকতা রক্ষা করার জন্য কী করে তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে?? ভাষা আর সংস্কৃতি হলো চলমান প্রবাহ। নদীর মতো। দিনের আবর্তনের মতো। অথবা ঋতু পরিবর্তনের মতো। এক সময় যেভাবে চলেছেন, অন্যদেরকে চালিয়েছেন, সবকিছু মোটামুটি ঠিকঠাক মতো চলেছে, এখন তো সেভাবে চলতে পারবেন না। অন্যদেরকে সেভাবে চালাতে পারবেন না। আগের মতো করে চলতে চাইলে এখন অনেক কিছুই ঠিকঠাক মতো আর চলবে না। উৎসব উদযাপন তথা আনন্দ বিনোদন ব্যবস্থা সংক্রান্ত আমাদের সামাজিক কাঠামো ও কার্যক্রম এর ব্যতিক্রম নয়। মূল্যবোধ অপরিবর্তনশীল। কিন্তু মূল্যবোধ চর্চার উপায় ও প্রক্রিয়া পরিবর্তনশীল। এটি বুঝতে হবে। যেমন করে নামাজ সব সময় পড়তে হবে। কখন কিভাবে কতটুকু পড়বেন তা তৎকালীন বিরাজমান পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।

Ahsan Habib: মানবকল্যাণে আপনার চিন্তা, সময় দেয়া মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে প্রশংসিত ও ক্বিয়ামতের কঠিন সময়ে নাজাতের উসিলা হোক কামনা করছি! আপনার অধিকাংশ মতামতের সাথে নিজেদের খুঁজে পাই, মসজিদে যথার্থ পর্দার সাথে নারীদের অবস্থানকে স্বাগত জানাই! তবে কিছু কথা আরো স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন যা’ সুন্দর মননে অনুরনিত হয়ে সুললিত ধারায় অন্তরে অন্তরে বাজুক, বিকশিত হোক! আমরা তো সুবিশাল প্ল্যানেরই অংশ সেই সৃষ্টির পূর্ব থেকেই, যদি বিশ্বাসী হই। আদম হাওয়ার উত্তরসূরি হয়ে ছিটকে পড়ে ভাগ হতে হতে একেকজন বিচ্ছিন্ন দ্বীপে ভিন্ন আঙিকে ও সংস্কৃতিতে এ পৃথিবীতে নিজেদের দেখছি। আরব, অনারব, আফ্রিকান, ইউরোপিয়ান, আমেরিকা,ন এশিয়ান, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া বাংলাদেশ, চাঁদপুরের এক আধুনিক শিক্ষিত ছেলের মতামত হলো– সে চাঁদপুরের মেয়েই বিয়ে করবে। কারণ, চট্টগ্রামের মেয়ে তার সংস্কৃতি নাও বুঝতে পারে। তার মতামতকে আমি শ্রদ্ধা করি, বাস্তবতা মানি! নাক কানের ছিদ্র বন্ধ করে পুকুরে গোটা তিনেক ডুব দিয়ে উঠে যাওয়া কি সম্ভব?

আমাদের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জীবন, তার যথার্থতা খুঁজতে সত্যিই কি আমরা এতটাই ব্যর্থ? ফজর থেকে এশা এক কাতারে আশরাফ-আতরাফের পাঁচবার হাজিরা, জীবনের শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত অবিরাম শৃঙ্খলায় থেকেও নিজেদের কেন পরাজিত ভাবছি, অন্তঃসারশূন্য মুখোশের অন্তরালে কি আছে না জেনেই! তবে খোলস থেকে বেরিয়ে আসার বিকল্প নেই, স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে যেমন পারবো না, খোলসে ঢুকে একে অপরের গা চুলকিয়ে বাঁচার অর্থও বুঝি না! দেয়ালের পর দেয়াল সাজিয়ে নিরাপত্তার চাদরে আবৃত হয়ে পথচলাতে সার্থকতা দেখি না, এমন নির্বোধ হওয়া আমাদের ঠিক মানাচ্ছে না!

ক্বিয়ামতের পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত ভাবনারা আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে এখন এ কথা নিশ্চিত করে বলতেও পারছি না, যেখানে হিমশীতল মৃত্যু সদা সর্বদা চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের ক্ষমতা দেখিয়ে দ্যায়!

Md Rifat Chowdhury: সাহিত্য সংস্কৃতি প্রসঙ্গে বাঙালি মুসলিম একটি প্রবল প্রতিক্রিয়াশীল বোকা জাতি:

সম্ভবত বাংলা সাহিত্য ও বাঙালি সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ লোকাচারই একমাত্র উদাহরণ, যাতে আপনি হিন্দু ও সেকুলার প্রধান্যই বেশি পাবেন । এটা আপনি অন্যান্য মুসলিম জাতিগোষ্ঠির সাহিত্য সংস্কৃতিতে দেখবেন না। আরবীর বাইরে কি ঊর্দূ, ফারসি কিংবা তুর্কি সংস্কৃতির লোকজ ঐতিহ্য আনুষ্ঠানিকতায় কোন না কোনভাবে আপনি ইসলামী উপাদান ও প্রভাব ছাপ খুঁজে পাবেন।

বাঙালি সংস্কৃতিতে এই হিন্দুয়ানি ও সেকুলার প্রভাবের জন্য যতটা না সেকুলারদের অবদান বেশি, তারচেয়েও বেশি অবদান বাঙালি মুসলিম ও উলামাদের। বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চা ও সংস্কৃতির বেলায় শত শত বছর ধরে হারাম আর হারামের নিষেধাজ্ঞা বাঙালি সংস্কৃতি ও সাহিত্যের জগতটাকে হিন্দু ও সেকুলারদের জন্য প্রায় ফাঁকা পোস্টে গোল দেবার সুযোগ করে দিয়েছে।

এতো এতো গোল খাবার পরও কি বাঙালি সংস্কৃতির জগতে আজকের আধুনিক ইসলামপন্থীদের হুশ হয়েছে???? উত্তরটা হলো– না। বরং আজো তারা হারামের চক্করের গোলকধাঁধায় ঘুরছে।

Md Kamrul Islam Uzzal: উনার এতবড় লেখার উদ্দেশ্য এক কথায় সাংস্কৃতিক বিপ্লব। কিন্তু এটা আমি আমার ল্যাংটাকাল থেকেই উপলদ্ধি করি। কিন্তু কর্মপদ্ধতি কী হবে, সেটা নিয়েই তো যত ক্যাচাল। সেই কর্মপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা দরকার।

Enayat Ullah: অত্যধিক বিজয়াখাঙ্ক্ষা এই পরাজয়ের অনুভব তৈরি করেছে। নয়তো পরাজিত হওয়া এত সহজ নয়- কিছু বৈশাখ দেখলাম আর দেখলাম তার সহস্রগুণ মিডিয়া কভারেজ, এরপর ভাবতে লাগলাম পরাজয়।

বৈশাখ তো সময়ের সৃষ্টি। এরপর প্রত্যেকটি সময় একে নিজের মতো করে ধারণ করেছে। আকবরের সময় এটিকে ধারণ করেছে খাজনা আদায়ের সুবিধা হিসাবে। ইংরেজরা যেহেতু শোষণের ক্ষেত্রে সুবিধা-অসুবিধা বিচার করত না তাই তাদের নিকট এটির আলাদা কোন চরিত্র ছিল না। আর এখন বামদের রমারমা বাণিজ্য আর মিডিয়া কারিশমায় বৈশাখ তাদের আদর্শমুখী। পাঁচই জানুয়ারীর পারফর্মটা একটু ভিন্ন হলে হয়তো বৈশাখটা থাকতো একটু অন্যরকম। চিরায়ত বাংলার হালখাতা অথবা সাধারণ কোন মেলার মতোই। সুতরাং পরাজয় এতো সহজ নয়।

দ্বিতীয়ত, জীবন ও ধর্মের যে বয়ান দাঁড় করানো হয়েছে তা অনেকটা শংকাজনক। এ কারণে যে- জৈবিক চাহিদা, সাংস্কৃতিক চাহিদা, বুদ্ধিবিৃত্তিক চাহিদা এসব আপন চাহিদা অনুযায়ী পূরণ সাপেক্ষে যদি চতুর্থ পর্যায়ে আধ্যাত্মিকতা অর্জনে মনোযোগী হন, ধর্ম পালনের মতো আর তেমন কিছুই থাকবে না। অথবা হবে এরকম- বাছ-বিচারহীন সবকিছুই করেন, এরপর ঈদের দিন কিংবা জুমার দিন এসে খাটি সেক্যুলারের মতো ধর্মের দিকটাও একটু চেখে যান। আর যদি বলেন জৈবিক চাহিদা পূরণেও ধর্মীয় রীতি-নীতি কেয়ার করবেন, তাহলে তো প্রথম স্তরেই চতুর্থ স্তরের ধর্মকে টেনে আনলেন!

তৃতীয়ত, আপনি ইউসুফ কারজাবীর বরাতে বলেছেন, সবকিছুতেই বৈধ হওয়াটাই মূল। হারাম হওয়ার জন্য দলীল লাগবে। অবশ্যই এটি সঠিক। হানাফী মাজহাবের একটি উসূল বা মূলনীতি। এ কারণে, ইসলাম সকল নতুনকেই হারাম সাব্যস্ত করে না। যাবত না তা ইসলামের সার্বজনীন, সর্বকালীন কোন মূল কাঠামোর সামনে দাড়ায়। এমনিভাবে নারীরা ইসলামের প্রথম যুগে যেসব সুবিধা পেত অনেককিছুই বর্তমান সমাজে রহিত। এর পক্ষে হাদীসের রেফারেন্স দিয়েছেন। সহিহ বাত। এমন আরও অনেক বিষয়ই আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে, যার জন্য সামাজিক আন্দোলন করা যেতে পারে। আমাদের সামাজিক আচরণকে ইসলামের প্রথম যুগের আচরণের সঙ্গে সঙ্গিতপূর্ণ করার চেষ্টাও হতে পারে।

কিন্তু এসবের জন্য ধর্মকে চতুর্থ পর্যায়ের পালনীয় বিষয় হিসাবে সাব্যস্ত করে উপরোক্ত স্তরবিন্যাসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ তখন মানুষের সামনে কোন নিয়ন্ত্রণ রেখাই থাকে না। প্রত্যেকেই নিজের মতো করে প্রথম তিনটি স্তরের সীমা ও পরিধি নির্বাচন করবে। আপনি নিজেই ভেবে দেখুন সমাজটা তখন কোথায় যাবে।

Mohammad Mozammel Hoque: কোনো এক প্রতিমন্তব্যে বলেছিলাম, একটা বহুতল ভবন, মনে করেন, একটা টাওয়ার, তো এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ কোন তলা? নিচের তলা, নাকি উপরের তলা? এই প্রশ্নটা “১০-এর মান কত?” প্রশ্নটার মতো অনির্দিষ্ট। ১০ কে কত দিয়ে কী করা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করবে ১০-এর মান কত হবে। আমাদের কলা ভবন সংলগ্ন পাহাড় হলো উত্তর দিকে। আমাদের ক্লাস রুমগুলোতে আমরা পশ্চিমমুখী হয়ে বসি। তো, আমি যদি বলি “ডান পাশে পাহাড়”, আর ছাত্ররা যদি বলে, “না, বামদিকে পাহাড়” – এই কথা দুটির কোনটা ঠিক? আমরা জানি, দু’টাই সঠিক। পশ্চিমমুখীদের জন্য ডানদিকে পাহাড় আর পূর্বমুখী হয়ে যারা বসে আছে তাদের জন্য বাম দিকে সঠিক।

লক্ষ্যগত গুরুত্বের দিক থেকে ধর্ম হলো ১ নম্বরের ব্যাপার। আবার ধর্মের ভিত্তি ও এর প্রস্তুতিগত দিক থেকে ধর্ম হলো চার তলা বিল্ডিংয়ের ৪ নম্বর তলার মতো। cognitive centrality’র ধারণাটা ক্লিয়ার হলে আশা করি ভুল বুঝাবুঝির অবসান হবে। এ নিয়ে আমার একটা ইনফরমাল বক্তব্য আছে। এর সাথে subjectivity এবং objectivity’র পার্থক্য ও অন্তঃসম্পর্কটাও যদি একটু খেয়াল করেন, ভালো হয়।

মনে করেন, আমরা নামাজ পড়ি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। নামাজ পড়ার জন্য তাহারাত অর্জন করি। তো এই ধরনের ক্রমসোপানমূলক ধারাবাহিক বিষয়গুলোকে একই সমতলে এনে মুখোমুখি দাঁড় করানো হলো ভুল পদ্ধতি। আগে গোসল ও অজু। এরপর নামাজ। এর মাধ্যমে আল্লাহর বন্দেগী ও রেজমন্দী হাসিল করার চেষ্টা। এখানে স্পষ্টতই ১ নম্বরে তাহারাত, ২ নম্বরে এবাদত ও ৩ নম্বরে আল্লাহর সন্তুষ্টি। এ পর্যায়ে কি এমন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি ১ নম্বরে নয় কেন?

Enayat Ullah: আপনি আপেক্ষিক ব্যাপারটার কথা বলছেন। যেমন- প্রত্যেকেই তার আপন স্তরে গুরুত্বপূর্ণ, যেমন ছাত্র-উস্তাদের উদাহরণে প্রত্যেকেই তার আপন অবস্থানে সত্যবাদী।

আমার কথা সেখানে নয়। আমার প্রশ্নটা হলো– প্রথম স্তর, দ্বিতীয় স্তর, তৃতীয় স্তরে ধর্মকে (অর্থাৎ, ধর্মের বিধি-বিধান, সীমারেখা, ইত্যাদি) আপনি মানবেন কিনা?

Mohammad Mozammel Hoque: এই পোস্টে জনাব Fuad Hasan-এর সাথে এ বিষয়ে আমার যে আলাপ হয়েছে, এ বিষয়ে তিনি যে supplementary বক্তব্য দিয়েছেন, সেটার উপরে আমার যে কমেন্ট, একটু কষ্ট করে সেগুলো পড়লে আপনার এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

Saber Chowdhury: আমি মনে করি এই কমেন্ট এবং রিপ্লাইগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানেই ব্যাপারটা সমাধান হবে আশা করি। ধন্যবাদ উভয়কে। এবং এনায়েত ভাই, কামনা করছি আপনি সামনে আগাবেন।

সাইফ সিরাজ: পাহাড়ের ডান-বাম উদাহরণটা এমন সিরিয়াস আলাপে দরকার ছিল না।

এইসব তর্ক ডিবেট প্রতিযোগিতায় আসতে পারে। বাট এমন সিরিয়াস আলাপে না। কথা বলার আগ্রহটাই হারিয়ে গেলো।

Mohammad Mozammel Hoque: সাইফ সিরাজ, এর মানে হলো কোনো বিষয়ে মতবিরোধ অনুসন্ধান ও ঐক্যমতে পৌঁছনোর জন্য কিছু বিষয়ে একমত হতে হয়। উত্তর এবং দক্ষিণ দিক সম্পর্কে যারা সম্পূর্ণ একমত নন তারা কি করে কোনো একটা বিষয়ে ফয়সালা করবেন যে সেটি উত্তর দিকে অবস্থিত, নাকি দক্ষিণ দিকে অবস্থিত?

এই আলাপে উত্তর-দক্ষিণের প্রাসঙ্গিকতা হলো, ধর্ম বলতে আপনি কী বুঝেছেন, সাধারণত কী বুঝানো হয় এবং আমি কী বুঝাতে চেয়েছি, তা নিয়ে নিঃসংশয় হওয়া। ধর্ম নিয়ে আপনার ধারণা কী, তা আমি জানি না। এই পোস্টে আমি ধর্ম সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার বিরোধিতা করেছি। বলাবাহুল্য, এখানে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি। এখানে ধর্ম এসেছে ইসলাম প্রসঙ্গে। ইসলাম সম্পর্কে আমার ধারণাটা আমি ব্যক্ত করেছি।

[ইসলাম = (অন্যতম বা সেরা) ধর্ম]

– এমন সমীকরণকে কেউ যদি সঠিক মনে করেন, তার সাথে আমার মিলবে না।

ইসলাম সম্পর্কে আমার সমীকরণটি হলো নিম্নরুপ–

[ইসলাম = (অন্যতম, সেরা ও একমাত্র) জীবনাদর্শ]

ধর্ম হলো এর একটা অংশ। যদিও তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীফ এক্সিকিউটিভের অফিসের মতো কিংবা আমাদের শরীরে মস্তিষ্কের মতো এর অবস্থান সর্বোচ্চ স্থানে। যে স্থানে যেতে হয় নিচতলা দিয়ে দোতলা পার হয়ে তিনতলা। এরপর আপনি ৪র্থ তলায় উঠতে পারবেন।

Physical priority and hierarchy-কে significance priority and superiority হতে আলাদা করে বিবেচনা না করলে আপনি কোনোভাবেই আমার সাথে একমত হতে পারবেন না। এনিওয়ে, ভালো থাকেন। অনেক লম্বা উত্তর দিলাম। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। মুমিন মুমিনের জন্য ভাই, বন্ধু এবং আয়না স্বরূপ, তাই না?

Habibur Rahman Habib: একজন জ্ঞানী ব্যক্তি উপস্থিত লোকদেরকে আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদের সৌন্দর্য দেখাচ্ছিলেন আর লোকেরা তার আঙ্গুলের দিকে তাকাচ্ছিলো (চাইনিজ প্রবাদে আছে এমন কথা)। অবস্থা হয়েছে তাই। লেখার সার কথা বুঝতে হলে Prudent Reader হওয়া চাই। অন্ধের হাতি দর্শনের মতো চিন্তা করলে কি করে চলবে, তবে ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করি। বৃত্তের ভিতরে থাকা লোকেদের কাছে এই লেখাটি ঠিকঠাক মনে না হওয়াটাই স্বাভাবিক। সময়ের প্রয়োজনে শ্রেষ্ঠ লেখা।

Obayed Rahman: ‘অশ্লীল আনন্দের চেয়ে পবিত্র বেদনা উত্তম।’ আসুন শামিল হই অপার আনন্দে। আপনি বা আমি কেউই পরাজিত নই। আমরা যুদ্ধমান। ‘বিজয়’ আমাদের সুনিশ্চিত যদি আমরা ‘মুত্তাকী’ হই।

Mohammad Mozammel Hoque: অশ্লীলতা বর্জন, পবিত্রতা অর্জন, মুত্তাকী হওয়া– এসব কিছু ব্যক্তিগত গুণ। ইসলাম তো নিছক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যাপার নয়। ব্যক্তির পাশাপাশি সমষ্টি তথা সামাজিক বিষয়গুলো ইসলামে সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি তো জানেন ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো বিষয়ে পারসোনাল অ্যাপ্রোচ এবং সোশ্যাল অ্যাপ্রোচ দুই ধরনের বা দুই মাত্রার ব্যাপার। এবং তা হলো, কোনো বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমাদেরকে আজিমত বা সর্বোচ্চ মান বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। অথচ একই বিষয়ে অন্যদের জন্য রোখসত বা সর্বনিম্ন মানকে অনুমোদন করতে হবে। বলাবাহুল্য, অন্যদের জন্য ন্যূনতম মানকে অনুমোদন করা হলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আজমত তথা সর্বোচ্চ নৈতিক মানেরই দাবি।

তাই নিজেকে মুক্তাকী হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি সমাজটাকেও যথাসম্ভব তাকওয়াভিত্তিক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা জরুরি। এই সামাজিক পুনর্গঠনের কাজই হলো ইসলামী আন্দোলন। ক্রমধারা তথা bottom up approach হলো এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

Ahmadul Hasan Safwan: স্যার, গতকাল ডিপার্টমেন্ট থেকে রুমে ফিরার পর থেকে মনটা খারাপ। না পারছি বই পড়তে, না পারছি খেতে। কারণ, ভার্সিটি লাইফে এটা আমার প্রথম পহেলা বৈশাখ। এর আগে আমি পহেলা বৈশাখের এই সর্বগ্রাসী রূপ দেখিনি। কাল আমাদের ডিপার্টমেন্টের সকল ব্যাচের মেয়েরা শাড়ি পরে এসেছে এবং ইসলামের ন্যূনতম পর্দার যে বিধান তা তারা মানেনি। ছেলে মেয়ে অবাধে মেলামেশা করেছে। একসাথে হাত ধরে ছবি তুলেছে। আমি দূরে দাড়িয়ে এই বিভীষিকাময় অবস্থা দেখেছি। একটা বিষয় উপলব্ধি করলাম যে আমরা যেভাবে সমাজ পরিবর্তন করতে চাচ্ছি, এইভাবে সমাজ পরিবর্তন হবে না। আমার মনে হয় আপনি যথার্থই বলেছেন যে আমরা জনগনের পালস বুঝতে পারছি না। আপনার লেখাটি পড়েও হতাশা কাটছে না। আমার প্রশ্নটা হলো এই সমস্যার সমাধান কি? এটা কি আমরা ইসলাম দিয়ে সমাধান করব? নাকি আমরাও এটার সাথে মিশে যাব? তবে এটা নিশ্চিত, ইসলামী দলগুলো যেভাবে সমাজ পরিবর্তন করতে চাচ্ছে এইভাবে সমাজ পরিবর্তন করা যাবে না। স্যার, দয়া করে এর সমাধান বলুন।

Mohammad Mozammel Hoque: আমার এ কথাটা যদি মনে রাখো তাহলে সমাধানের সূত্র খুঁজে পাবে– “ventilation prevents explosion”

Ahmadul Hasan Safwan: স্যার, ventilation-এর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছি। কিন্তু এখানে আমার কিছু প্রশ্ন আছে: (১) ছিদ্রগুলো কত বড় হবে, এটা কে নির্দেশ করবে? (২) আজ আমাদের প্রয়োজনে আমরা ছিদ্র করলাম। দশ বছর পরে আবার প্রয়োজন হলো, আবার ছিদ্র করলাম। এভাবে করতে করতে এক সময় ইসলামই ছিদ্র ছিদ্র হয়ে যাবে না তো? (৩) ছিদ্রের পরিমাণ যদি এতো বেশি হয়ে যায় যে উভয় পাশের বায়ু চাপ সমান হয়ে গেলো, তখন comeback করার সুযোগ থাকবে কি?

Mohammad Mozammel Hoque: কাউকে সমস্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হলে তখন সে সর্বহারা বা have-nots হয়ে দাঁড়ায়। সর্বহারাদের সামনে একটাই পথ খোলা থাকে। আর তা হলো উপরের যা-কিছু সব উপড়ে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানো। কথাই বলে না, বেঁধে পিটালে বিড়ালও বাঘ হয়ে যায়? যেমন করে আমাদের সমাজে মেয়েদেরকে সব ধর্মীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে অনেক বেশি পরিমাণে বঞ্চিত করা হয়েছে। যারা মসজিদে ঢুকতেই পারে না, তারা রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াবে, এটাই তো স্বাভাবিক ।

S M Abul Hashem: খুব ভালো লেখা। মানুষের স্বাভাবিক দিককে অস্বীকার করে জীবন হতে পারে না। অনেক দিন ধরে ভাবতাম বিশ্বাসীদের জীবন নিরানন্দ। আপনার লিখা পড়ে নতুন চিন্তার খোরাক পেলাম। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

Mohammad Mozammel Hoque: মুসলমানরা এত রসকষহীন কেন?

জোবায়ের আল মাহমুদ: [স্যারের সাথে একটু যুক্ত করছি]

আমাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে আমরা আমাদের দেহের সাথে তুলনা করতে পারি। আমাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে চারভাগে ভাগ করা যায়। ১) জৈবিক কাজ, ২) বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ, ৩) সাংস্কৃতিক কাজ এবং ৪) ধর্মীয় কাজ।

জৈবিক কাজকে আমাদের খাদ্যনালীর সাথে তুলনা করা যায়, বুদ্ধিবৃত্তিক কাজকে আমাদের মস্তিষ্কের সাথে তুলনা করা যায়, সাংস্কৃতিক কাজকে আমাদের চর্মের সাথে তুলনা করা যায়, এবং, ধর্মীয় কাজকে আমাদের হৃদয়ের সাথে তুলনা করা যায়।

খাদ্যনালী, মস্তিষ্ক, চর্ম ও হৃদয়, সবাই একে অপরের উপর নির্ভরশীল হলেও সবার কাজের ধরণ ও সময় ভিন্ন ভিন্ন।

১) খাদ্যনালীকে প্রতিদিন অবশ্যই ২/৩ বার খাবার দিতে হয়।

২) মস্তিষ্ক দিয়ে চিন্তাও করা যায়, আবার, মস্তিষ্কের ওপরে একটা বস্তা রাখা যায়। শরীরের বাহ্যিক অঙ্গগুলো নড়াচড়া করার দরকার হলেই তখন কেবল মস্তিষ্কের প্রয়োজন।

৩) চর্মের কাজ বাইরের ধুলাবালি শরীরের ভিতরে প্রবেশ করতে না দেয়া। কিন্তু চর্ম নিজে প্রায়ই ময়লা হয়ে যায়, এবং নিজেকে নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হয়।

৪) হৃদয়ের কাজ প্রতি মিনিটে ৬০ বারের অধিক সারা শরীরে উষ্ণতা ছড়িয়ে দেয়া। হৃদয়ের কাজ তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে বেশী।

অর্থাৎ, জৈবিক কাজগুলো আমাদেরকে অবশ্যই করতে হয়, কিন্তু প্রতিদিন খুব অল্প সময় দিতেই তার চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। বুদ্ধিবৃত্তিক কাজগুলো সবাই করতে হয় না, এটা ইচ্ছের উপর নির্ভরশীল। সাংস্কৃতিক কাজগুলোই মানুষের পরিচয় বহন করে, কিন্তু সাংস্কৃতিক কাজগুলো খুব দ্রুত দুষিত হয়ে যায়, তাই সাংস্কৃতিক কাজগুলো নিয়মিত পরিশোধন করা প্রয়োজন। ধর্মীয় কাজগুলো ধনী-গরিব সকল মানুষকে সর্ব অবস্থায় করতে হয়, এক মিনিটও ধর্মীয় চিন্তার বাইরে যাওয়া যায় না।

Mohammad Mozammel Hoque: very nice supplements. Thanks.

Md Asraful Islam Acs: আপনার কথার অনুরণন!

Mohammad Mozammel Hoque: ওয়াও, ফ‍্যানটাসটিক, ট্রিমেন্ডাস…! রীতিমত ওয়ানডারফুল…!!! So many many many thanks…

What from you took it? Or, you have made it?

Md Asraful Islam Acs: এটা ম্যানেজমেন্টে পড়ানো হয়, মাসলোর থিওরি হিসাবে! আর সবচাইতে বড় বিষয়, আমাদের প্রিয় নবীর জীবনটাও এমন ধাপে ধাপে বিন্যস্ত, একটু খেয়াল করে উনার জীবন চরিত পাঠ করলেই বোঝা যায়! তবে স্যার এই বিষয়গুলোর ইসলামী পাঠ অলরেডি শুরু হয়ে গিয়েছে।

Mohammad Mozammel Hoque: any online Link, I mean, better content on this issue?

Md Asraful Islam Acs: You May search “Needs Hierarchy theory” by Abraham Maslow!

Fuad Hasan: This is what I was talking about in my comment. It’s “need hierarchy” by Abraham Maslow, an Industrial Psychologist. My criticism against it is that it doesn’t explain filtration of input from previous stages. I wanted to add the same notion to your thoughts.

Farid A Reza: ”Islam must be rescued from its religion image। ইসলামকে ধর্ম-পরিচিতি হতে উদ্ধার করা না গেলে, বিশেষ করে একবিংশ শতাব্দীর এই প্রেক্ষিতে, ইসলাম প্রতিষ্ঠা মার্কসের সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার মতোই অসম্ভব ব্যাপার। ইসলামকে আমি নিছক ইউটোপিয়া হিসাবে মানতে রাজী নই।”

একমত, শুধু একটি শব্দ পরিবর্তন করে। ‘ইসলাম প্রতিষ্ঠা’ নয়, ‘ইসলামের অনুশীলন’।

Mohammad Mozammel Hoque: রেজা ভাই, ‘ইসলাম প্রতিষ্ঠা’ কথাটার অসুবিধা কী?

Farid A Reza: অসুবিধা নেই, প্রশ্নটা ব্যাপকতা ও স্বাচ্ছন্দের। আমার কাছে মনে হয়, অনুশীলনের মধ্যে আমার অবস্থান আছে এবং তা উন্নতির পথে এগিয়ে চলার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আমি যদি বলি, ‘স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি’, তা হলে বুঝা যাবে কাজটা শেষ এবং সেখানে আমার বর্তমান উপস্থিতি অস্পষ্ট। হতে পারে এটা আমার একটা ধারণা মাত্র।

Mohammad Mozammel Hoque: দুনিয়ার মধ্যে একজন ঈমানদার থাকা মানেই হলো ইসলাম (ন‍্যূনতম মানে) কায়েম আছে। দুনিয়ার বুকে একজন কাফের থাকা মানে ইসলাম (সর্বোচ্চ মানে) কায়েম নাই। ইসলাম কায়েম করার চেষ্টা হলো একটি ধারাবাহিক ও নিরন্তর কার্যক্রমের ব‍্যাপার। এমনকি দুনিয়ার সব মানুষ মুমিন-মুসলমান হয়ে গেলেও বলা যাবে না, ইসলাম (পরিপূর্ণভাবে) কায়েম হয়েছে, যদি সব মুসলমানেরা ‘নফসে মুতমাইন্না’ বা এহসানের স্তরে উন্নীত না হয়।

Mohammad Mozammel Hoque: Mohammed Touaha Akbar, আল্লাহর রাসূল (সা.) দুনিয়াতে এজন্য আসছেন কি, যে সবাইকে তিনি মুসলমান বানাবেন? এবং সবচেয়ে ভালো মুসলমান বানাবেন? বরং উনার দুনিয়াতে আসার যে কারণ ছিল, যা তিনি সফলভাবে করে গেছেন, সেটা হচ্ছে সবাইকে হেদায়েতের পথ তিনি দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। এবং যারা হেদায়েত পেতে চেয়েছে তাদেরকে তিনি হেদায়েত পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেছেন। যা হচ্ছে নবী ও রাসূলদের কাজ। নবী বা রাসূল কথাটার অর্থের মধ্যেই তো এ ব্যাপারটা পরিষ্কারভাবে রয়ে গেছে। সে হিসেবে আপনার প্রশ্নটা কতটুকু প্রাসঙ্গিক তা ঠিক বুঝতে পারছি না।

Mohammad Mozammel Hoque: Mohammed Touaha Akbar, দুনিয়াতে মানুষকে পাঠানো হয়েছে ইসলাম কায়েম করার জন্য। আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করা মানে আল্লার হুকুম কায়েম করা। ইসলাম কায়েম করা, আল্লাহ তায়ালার প্রতিনিধিত্ব করা, আল্লাহর হুকুম কায়েম করা, দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা তথা একামতে দ্বীন, এইসব পরিভাষার সবগুলোই হচ্ছে সমার্থক কথাবার্তা বা synonymous rhetorics।

ব্যক্তি থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্ব, বিশ্বব্যবস্থা, এক কথায়, কোনো কিছুই ইসলাম কায়েমের আওতামুক্ত নয়। তবে কথা হলো, এই কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ব্যক্তিবর্গের ঐকান্তিক ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা হলো সফলতার শর্ত। বাস্তব তথা বস্তুগত সফলতা কতটুকু পাওয়া গেলো তার উপর প্রচেষ্টাকারী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সফলতা নির্ভর করবে না।

ইসলাম যদি কায়েমের বিষয় না হয় তাহলে what Islam actually is for? কোনো মানুষের জীবনে এমন কোনো ক্ষেত্র নাই যা ইসলাম কায়েমের আওতাবহির্ভূত। একইভাবে, ইসলাম তথা ইসলামের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও ব্যবস্থাপনা কায়েম করা, এর উৎকর্ষতা সাধন এবং দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা হিসেবে একে অক্ষুন্ন রাখার অপরিহার্যতা নাই, এমন কোনো সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা বিশ্ব হতে পারে না।

নৈসর্গিক নোমান: সবাই যেখানে প্রাচীর তুলতে নিয়ত ব্যস্ত সেখানে আপনি বিশাল প্রাচীরে শাবলের দুই একটা আঘাত হানছেন। ধন্যবাদ স্যার

Mohammad Mozammel Hoque: প্রাচীর যদি হয় রুদ্ধ-আবেগ, মূড়-জড়তা, বুদ্ধি-বৈকল্য ও অচলায়তনের, তাহলে সেটা ভাঙ্গাই তো ভালো।

Abu Nishat: রাসূল (সা) মদীনার মান‌ুষদের নবব‌র্ষের উৎসব (নও‌রোজ) কেন বা‌তিল ক‌রে ঈদ উৎসব দি‌লেন?

Mohammad Mozammel Hoque: কারণ, তিনি তখন সেখানে নতুন একটা রাষ্ট্র ও সভ্যতার ভিত গড়ে তুলছিলেন। তৎপূর্বে তিনি নিজের জন্মভূমি মক্কায় মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। সেখানকার প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী আচার-অনুষ্ঠানগুলোর সাথে নিজেকে একাকার করে দেননি এবং সেগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্যও এগিয়ে আসেননি। বরং কিছু নীতিকথা বা নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার জন্য কাজ করেছেন।

কথা হলো, এখন আমরা মাদানী যুগে আছি, নাকি মক্কী যুগে? এই প্রশ্নের উত্তরের উপর নির্ভর করছে, আমরা এই বিষয়ে কী করবো তা।

Kamal Uddin: I READ IT COMLETELY AT A GLANCE. MAASHALLAH A HIGH THAUGHT WRITTING.

Azharul Islam Tasnim: ধর্মের মধ্যে আনন্দময়তা চাই না। প্রজননের চাহিদা পূর্ণ হোক ন্যায়ের সাথে। এই বিষয়গুলো দুর্বোধ্য মনে হচ্ছে।

Mohammad Mozammel Hoque: কথাগুলোকে একসাথে পড়তে হবে। আমি বলেছি, “ধর্মের মধ্যে আনন্দময়তা চাই না। ‘সনাতন ধর্মের’ মতো আনন্দময় ধর্মও চাই না। চাই, আনন্দময় মানবজীবন।”

ধর্ম হলো ব্যক্তিসত্তার সাথে পরম সত্তার সম্পর্কের ব্যাপার। ধর্মের যদিও একটা বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান বা ritual-এর ব্যাপার আছে, তবুও বলতে গেলে ধর্মের যে অন্তর্গত দিক তা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। বলাবাহুল্য, ধর্মের এই অন্তর্গত দিক হল আধ্যাত্মিকতা। আধ‍্যাত্মিকতা কখনো আনন্দময়তার ব্যাপার হতে পারে না।

কোনো কোনো ধর্ম (যেমন– হিন্দু ধর্ম) এক ধরনের প্রবৃত্তি-অনুকূল ও আনন্দময় ধর্ম পালন করে। তাইতো এই সনাতন ধর্মের মধ্যে যুক্তি দুর্বল। চিত্তবিনোদনের সংস্কৃতি তথা আনন্দময়তা সেখানে প্রবল। তাদের পূজা-পার্বন ও ধর্মীয় উৎসবের মূল আকর্ষণটি হচ্ছে আনন্দ-ফুর্তি। Kind of soft sex entertainment or exercise. I may be wrong about that and I am sorry to say this, but this is what I saw from my boyhood in my surrounding areas।

তাই বলেছি, ধর্মের মধ্যে জৈবিক চিত্তবিনোদনের মত আনন্দময়তা সেট করাটা অর্থহীন ও স্ববিরোধী কাজ। কেননা, পরমসত্তার সাথে ব্যক্তিসত্তার এই যে সম্পর্ক সেটি এক বিশেষ ধরনের ভাষাতীত একান্ত অনুভবের ব্যাপার। সেখানে লঘু জৈবিক চিত্তবিনোদনের মতো ব্যাপার নিতান্ত বেমানান। এর পাশাপাশি আনন্দময় ধর্মের উদাহরণ তো উপরে দিলাম।

ধর্ম ও সংস্কৃতির এই বিরোধ ও সংকটের সমাধান হচ্ছে, ধর্ম ধর্মের জায়গায় থাকুক। আনন্দময়তা তথা সংস্কৃতি সংস্কৃতির জায়গায় থাকুক। বুদ্ধিবৃত্তি বুদ্ধিবৃত্তির জায়গায় থাকুক। এভাবে সামগ্রিকভাবে আনন্দময় এক মানবজীবন ও সমাজ গড়ে উঠুক।

বিস্তারিত বলেও কথাগুলো ক্লিয়ার করতে পারলাম কিনা বুঝতে পারছি না।

Mohammad Mozammel Hoque: Edward Elric Edward Elric, হ্যাঁ। এ যেন দুটি বৃত্ত যেগুলো একটা আরেকটাকে overlap করেছে কিছুটা অংশ জুড়ে। আমার পুরো লেখাটা বুঝবেন যদি এই একটা মাত্র উদাহরণ মাথায় রাখেন। একটা বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশন, নিচের তলা, উপরের তলা, এগুলো এক নয়। এগুলোর ফাংশনও এক নয়। এগুলো একাকারও নয়, পরস্পর বিচ্ছিন্নও নয়। যার যার জায়গায় প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক হচ্ছে ইংরেজিতে যেটাকে আমরা বলি hierarchical relation।

Azharul Islam Tasnim: স্যার, আপনি অবশ্যই যৌক্তিক ব্যাখ্যা এবং জ্ঞানগর্ভ আলোচনা রেখেছেন তারপরও আমরা অনেক পিছিয়ে, কিন্তু আমি তো ছোট মানুষ খুবই কম জানি এবং ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু জানি তা হলো– ইসলামের কোড অব কন্ডাক্ট স্পেসিফিক ব্যাখ্যা অথবা রাসূল (সা)-এর অনুসরণ সবটুকুই আমাদের সামনে পরিস্কার। এখানে আমাদের ব্যক্তিগতভাবে কিছু ডিফেন্স ম্যাকানিজম থাকতে পারে, কিন্তু আপামর জনসাধারণের জন্যে আল্লাহর কাছ থেকে রাসূল (সা)-এর কাছে যে সুস্পষ্ট বিধান এসেছে তা অবিকলভাবে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। এখন অবিকল সেই বিধান পৌছে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কি কোনো কম্প্রোমাইজ করতে পারি কি না?

এটা আমি একারণেই বললাম যে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রাসূল (সা) এবং সাহাবীরা সবচেয়ে বেশী স্পষ্টভাষী ছিলেন এবং বিধান পালনের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী অগ্রগামী ছিলেন। অথচ আমরা কি তারচেয়ে বেশী স্পষ্টভাষী হতে পেরেছি? অথবা রাসূলকে (সা) মানার ব্যাপারে কতটুকু অগ্রসর হয়েছি যে এখন বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে একটা আপেক্ষিক পরিবর্তন আনার জন্যে ইসলামের বেসিক সিস্টেমের কিছু পরিবর্তন করতে চাওয়ার আদৌ অধিকার রাখি কি না?

এই প্রশ্নটা আপনার উপর রাখলাম না আপনার স্ট্যাটাস পড়ে আমার মনে হল! হয়তোবা আমার কথাগুলো অযৌক্তিক হতেও পারে। কারণ, আমি অবশ্যই কম জানি, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

Mohammad Mozammel Hoque: উত্তর না দিয়ে একটা লিংক দিলাম বলে মাইন্ড করবেন না, আশা করি। ভালো করে যদি নিবন্ধটা পড়েন, খুশি হবো।

ইসলামী শরীয়াহ বাস্তবায়নে ক্রমধারার অপরিহার্যতা

জীর্ণ জীবাশ্ম: স্যার, পহেলা বৈশাখ নিয়ে আপনার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। কিন্তু স্যার, একুশে ফেব্রুয়ারি বেদিতে ফুল দেয়া শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ হলে তো কবরেও বৈধ! এ ব্যাপারে ক্লিয়ার করলে খুশি হবো।

Mohammad Mozammel Hoque: দেখেন কোনো কিছু হারাম হওয়ার জন্য অকাট্য দলিল প্রয়োজন। শরীয়তের পরিভাষায় যাকে ‘নস’ বলে। শরীয়তের অন্যতম মূলনীতি হল যথাসম্ভব কঠোরতাকে এড়িয়ে যাওয়া এবং কাউকে যথাসম্ভব বেনিফিট অব ডাউট দেয়া। সেজন্য দেখবেন অবৈধ সঙ্গম ও পশু সঙ্গমের মধ্যে শরয়ী বিধান হিসাবে হদ প্রয়োগের ক্ষেত্রে পার্থক্য করা হয়েছে।

শহীদ মিনারে কোনো কবর নাই। এই ধরনের একটা ফালতু কাজের ব্যাপারে শরয়ী বিধান কি হবে তা বলা নাই। পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন অবস্থা থেকে আমরা এ বিষয়ে করণীয় কি তা যাচাই করে দেখছি। অথচ কবরে ফুল দেওয়ার ক্ষেত্রে শরীয়তের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আছে। তাই কঠোরতাকে যথাসম্ভব সংকুচিত রাখার নীতি অনুসারে কবরে ফুল দেয়ার বিধানকে শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার সাথে এক করা যাবে না।

হ্যাঁ, আপনি যে দৃষ্টিতে বললেন সেই দৃষ্টিতে অর্থাৎ এবাদতের উদ্দেশ্য বা কোনো বিশেষ বুজুর্গ ব্যক্তি হতে বিশেষ কোনো ফয়েজ বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে কবরে ফুল দেয়ার সেন্টিমেন্টের সাথে আমার দৃষ্টিতে শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার আবেগ ও মন-মানসিকতার সামঞ্জস্য রয়েছে। সেজন্য এটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে হারামের কাছাকাছি বলে মনে করি।

আপনি জানেন আরেকটা নিয়ম হলো নিজের জন্য প্রত্যেকের নীতি হওয়া উচিত সর্বোচ্চ মান তথা আজিমতকে বজায় রেখে চলা। কিন্তু অন্যদের জন্য অনুকরণীয় সাজেস্ট করার সময় যথাসম্ভব সহজতা-উদারতা-প্রসারতা তথা ন্যূনতম মানকে অনুমোদন করা।

এ বিষয়ে এখানে আপাতত শেষ কথা হলো, আমি নিজে কখনো শহীদ মিনারে যাই নাই। সেখানে গিয়ে ফুল দেয়ার তো প্রশ্নই উঠে না।

জীর্ণ জীবাশ্ম: ধন্যবাদ স্যার। আপনার বাসায় আপনার সাথে মুখোমুখি আমি একবারই হয়েছিলাম স্যার। আমি জানি,আপনি কখনো প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে উঠেন না। তো স্যার, এই যে আপনি বললেন ‘হারামের কাছাকাছি’, এই ‘কাছাকাছি’র জন্যে তো কিছু ইসলামী ডেজিগনেশন আছে, পরিভাষা আছে? আপনি কি আপনার দর্শনের চিন্তার আলোকে স্পেসিফাই করবেন? এটাই সুন্দর হতো। আরেকটি কথা আমি বলতে চাই স্যার, শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়া মানুষটি যদি তার মননে এই চিন্তা লালন করে যে ‘আমি তাদের প্রতি সম্মান এবং কৃতজ্ঞতার প্রকাশ করছি’ কিন্তু ‘আত্মার শান্তি কিংবা প্রার্থনার অংশ নয়’! তবে কি স্যার আপনার কথা মতো ফুল দেয়াটা বৈধতা পাবে?

Mohammad Mozammel Hoque: জীর্ণ জীবাশ্মের কথাবার্তা তো অতি জীবন্ত! সে যাই হোক ফতোয়া দেয়ার লোক আমি না। I think I have made my point clear। এরচেয়ে বেশি কিছু বলতে গেলে ডা. জাকির নায়েকের মতো ঝামেলায় পড়তে হবে। কী দরকার?

জীর্ণ জীবাশ্ম: সত্য এবং সাহস আপনার চলার পাথেয় হোক। ধন্যবাদ স্যার

তরিকুল হুদা: মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের “পরাজিতের বিজয় ভাবনা” পাঠ ও পর্যালোচনা

Mohammad Mozammel Hoque: আপনি ভুল বুঝেছেন। এর দায় অংশত আমারই। বিষয়বস্তুর হক আদায় করে লেখা উচিত ছিল। অবশ্য তাতে করে লেখার কলেবর আরো অনেক বেড়ে যেত। বিশেষ করে Fuad Hasan-এর সাথে এ বিষয়ে আমার যেসব কথা হয়েছে সেগুলো যদি আরেকটু ভালো করে পড়তেন হয়তোবা ভুল বোঝাবুঝি কিছুটা কমতো।

সে যাই হোক, লেখাটা পড়েছেন, কষ্ট করে এতো বড় নোট লিখেছেন, বিষয়গুলোর সাথে নিজের গভীর সংশ্লিষ্টতা অনুভব করছেন, ভাবছেন, এসব যথেষ্ট প্রশংসনীয়। আলাপ-আলোচনার এই ধারাটা চলুক। এসব বিষয়ে দরকার ধারাবাহিক মুক্ত আলোচনা, ওয়ার্কশপ, সেমিনার ইত্যাদি। আল্লাহ চাইলে কখনো এসব হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হেদায়েতের পথে পরিচালনা করুন! আমীন।

তরিকুল হুদা: ভাই, আমার ভুল বুঝার দায় আপনার হবে কেন? যদি হয় এটা অবশ্যই আমারি। কিন্তু ভুলগুলি চিহ্নিত করে দিলে পরিস্কার হতো অথবা নতুন করে দায় ভাগাভাগি করে নিতে পারতাম।

Mohammad Mozammel Hoque: শবে বরাতের এই রাতে আসেন সবাই সব ধরনের ভুল বুঝাবুঝি থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।

তরিকুল হুদা: ভাই, এই সময়ে আমরা যে আত্মসমালোচনা করতে চাচ্ছি এটা অনেক বড় ব্যাপার। কিন্তু এই প্রচেষ্টায় আমরা যদি উল্টা দিকে হাঁটতে শুরু করি তাহলে এই পরিশ্রমের সফল কি ঘরে উঠানো যাবে? ফুয়াদ হাসানের সাথে আলাপ পড়লাম। ইসলামপন্থীদের অনেক সমস্যা আছে। আবার অনেক ইতিবাচক দিকও আছে। আমি দেখাতে চেয়েছি ইসলামের ফান্ডামেন্টাল প্রেমাইসের জায়গাটা কি। আর ইতিহাসে স্তর বিন্যাসের একটা পর্যায়ে আধ্যাত্মিকতায় পৌছানোর তরিকাটার গোড়া কোথায়। এই দুই জিনিস বুঝলে আসলে আর কিছুই দরকার নাই।

ইসলাম কিভাবে উপনিবেশজাত আধুনিকতাকে পর্যালোচনা করবে, মোকাবেলা করবে আবার কন্টেক্সচুয়ালাইজড করবে সেটা একটা দিক। আবার এটা করতে আমরা যদি মডারেট ইসলামের খপ্পরে পড়ি তাহলে সেটা হলো বিপদের দিক। চলেন মাথা ব্যথা সারাই, মাথা না কেটে।

Saber Chowdhury: দুজনের প্রতি ভালোবাসা। তর্কটা সামনে আগাইলে খুব ভালো লাগতো। এভাবে মাঝখানে ঢুকে পড়ায় ক্ষমা চাচ্ছি।

Mohammad Mozammel Hoque: আসুন, তর্কাতর্কি থেকে দূরে থাকি।

Saber Chowdhury: শুকরিয়া, স্যার। আমি আসলে বুঝাতে চাচ্ছি– আলোচনা। আলোচনা কি দরকারী নয়?

Mohammad Mozammel Hoque: আপনি তো বললেন, ‘তর্কটা’, এখন বলছেন ‘আলোচনা’। তর্কের মধ্যে আমি নাই। আলোচনা সব সময়ে দরকারী। ভালো। সমস্যা হলো, যারা আলোচনার নামে তর্ক করতে চাচ্ছেন, তারা লেখাটা পড়লেও ভালো করে যে পড়েননি তা উনাদের কথা থেকে স্পষ্ট।

কেন আমি তরিকুল হুদা ভাইয়ের সাথে এনগেইজ হই নাই তা নিয়ে আলাদা একটা লেখা দিতে পারি। ফিফটি ফিফটি চান্স।

Saber Chowdhury: শব্দটা আপনাকে আঘাত করেছে, মনে হয়। এ জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।

একাডেমিক বা তাত্ত্বিক আলোচনায় ‘তর্ক’ শব্দটা ‘বিশেষায়িত আলোচনা’ অর্থে খুবই ইতিবাচকভাবে ব্যবহার হয় বলে জানি এবং আমার সার্কেলে এর এরূপ ব্যবহার দেখি। এ কারণেই এটা বলেছিলাম। আমার জানায় ভুল থাকতে পারে, হৃদয়ে নাই।

এনগেইজ হওয়া-না হওয়া আপনার ইচ্ছা। লেখতেও পারেন, এটাও আপনার ইচ্ছা। ভালো থাকবেন, স্যার!

Mohammad Mozammel Hoque: এটি একটি ‘মজহারি’ পরিভাষা। বৃহত্তর অর্থে, এটি একটি ‘প্রগতিশীল’ বামপন্থী পরিভাষা। কোনো ইসলামিক স্কলারের লেখায় এটি পাবেন না। বাংলায়।

আমি মজহার বিরোধী। কেন, তা পাবেন, “আমি কেন জামায়াতের সংস্কারবাদী নই” সিরিজ লেখাটিতে।

লেখাটাতে স্পষ্ট, এটা ইসলামকে যারা own করে তাদের জন্য। তাই, ‘ইসলামিক কম‍্যুনিজম’ ফ্লেভারের কোনো এক্সচেঞ্জের মধ‍্যে আমি নাই।

বিশেষ করে আপনার জন্য একটা ভিডিও সাজেস্ট করছি, ‘বেসিক নিড হাইয়ারয়ারকি’। পাবেন, ‘সামাজিক আন্দোলন’ নামের ইউটিউব চ‍্যানেলে- বেসিক নিড হাইয়ারআরকি

তরিকুল হুদা: যেই পয়েন্টে বলেছি সেটা ঠিক মতন বুঝতে পারছেন না দেখা যাচ্ছে। লিখাটা আবারো পড়ে নিলে দেখতে পারবেন নিড হায়ারার্কি নিয়ে সমস্যাটা কোথায় হয়। আমি ভালো মতন ব্যাখ্যা করেছি। ওই পয়েন্টে কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন অথবা আমার সমালোচনার পয়েন্টে আপনার কোন কথা থাকলে বলতে পারেন।

Tuhin Mazhar: I learn from the inside. A question to you, Sir– What’s meaning of Religion? As you mentioned it in other part of life. Thank You.

Mohammad Mozammel Hoque: relagion শব্দটির শাব্দিক অর্থ, বুৎপত্তিগত অর্থ ইত্যাদি বিষয়ে আমার ঠিক আলোচনা উদ্দেশ্য নয়। religion বা ধর্ম বলতে লোকেরা সাধারণত যা বুঝে থাকে আমি সেটাই বোঝাতে চেয়েছি। religion বা ধর্ম হলো এই দৃষ্টিতে ব্যক্তিসত্তার সাথে পরমসত্তার এক ধরনের সম্পর্কের ব্যাপার। মানুষের জীবনে এটি অন্যতম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক। প্রত্যেক মানুষেরই একটা ধর্মগত অবস্থান রয়েছে। কথাটা পরিস্কার করে বললে বলতে হয়, প্রত্যেক মানুষের একটা ধর্ম রয়েছে। এমনকি নাস্তিকদেরও নিজস্ব ধর্ম রয়েছে। সেটা হলো নাস্তিকতার ধর্ম। transcendence বলতে যে জিনিসটা আছে কোনো মানুষই এটার বাহিরে নয়। প্রত্যেকেরই একটা sense of transcendence and belief system আছে বা থাকে, যাকে আমরা ধর্ম হিসেবে বলতে পারি। প্রচলিত ধর্মগুলোতে এর অতিরিক্ত একটা জিনিস আছে। তা হলো এবাদত, পূজা-অর্চনা বা ইংরেজিতে বললে rituals।

শরীরে হৃৎপিণ্ডের মতো religion বা ধর্ম হলো ইসলামের প্রাণকেন্দ্র বা core of the system or body.

ইসলামের মধ্যে ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, বুদ্ধিবৃত্তি ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট সব মানবিক দিকগুলো আছে, যেভাবে করে একটা দেহের মধ্যে পা থেকে মাথা পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঙ্গতভাবে ক্রিয়াশীল থাকে।

Tuhin Mazhar: Thank You Sir. And Sir, I Want to Know the Explanation of The Ayah– Wallajinahum Anil Lagwee Mu’ridun (al Muminun- 3).

Mohammad Mozammel Hoque: উপরে অনেকগুলো কমেন্টের উত্তরে এ সংক্রান্ত কথা বলা হয়েছে। বাজে ও বেহুদা কাজ থেকে বিরত থাকার এই নির্দেশনাটি ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য। সমাজের ক্ষেত্রে তথা সামষ্টিক বিষয়ে এর প্রয়োগযোগ্যতা প্রেক্ষিত বিবেচনা সাপেক্ষ। আজিমত বা সর্বোচ্চ মান ও রোখসত বা ন্যূনতম মানের ধারণা যদি আপনার কাছে পরিষ্কার থাকে তাহলে এই আয়াতের অর্থ বোঝার ক্ষেত্রে তা সহায়ক হবে।

Tuhin Mazhar: Thank You Sir.

Mohammad Mozammel Hoque: Thanks for the sharing.

Fuad Hasan: পশ্চিমে রিভার্টেড মুসলিমদের অনেকগুলো ঘটনা দেখলে আপনার ভাবনার বিষয়টা হয়তো আরও ভালোভাবে বোঝা যায়। অনেক সময় ডিফ্রেন্ট পার্সপেক্টিভ আমাদেরকে একটি ফেনোমেনন বুঝতে যতটা সাহায্য করে ততটা নিজের আটপৌরে পার্সপেক্টিভ থেকে বোঝা যায় না।

যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের রিভার্টেড মুসলিমদের একটি বড় অংশ কৃষ্ণাঙ্গ কয়েদীরা। আমি গ্রেটার ডালাসের একজন পাকিস্তানী ভদ্রলোককে চিনি, যিনি কারাগারে অমুসলিম কয়েদীদের মাঝে কোরআনের শত শত কপি বিতরণ করেন ও তাদের কাউন্সেলিং করেন। কিন্তু, কৃষ্ণাঙ্গ রিভার্টেড কয়েদীদের বড় একটা অংশ মুক্তি পেয়েই ইসলাম ভুলে যান। এর কারণ হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে অবাধ যৌনতা, এলকোহল ও বেপরোয়া জীবন যাপনে অভ্যস্ত এই মানুষগুলো কারাগারে যখন ইসলাম গ্রহণ করে তখন তাদের স্বাভাবিক জীবনের সেই জৈবিক-সহজাত, সাংস্কৃতিক-সহজাত ও বুদ্ধিবৃত্তিক-সহজাত প্রবৃত্তিগুলো বন্দী থাকে। এবং তারা এদের সাথে বোঝাপড়া ছাড়াই তাদের আধ্যাত্মিক সহজাত প্রবৃত্তি পরিবর্তন করে। ফলে কারাগার থেকে মুক্তির পর ঐ প্রবৃত্তিও যখন মুক্তি পায় তখন তারা ইসলামের সাথে এগুলোর চরম সাংঘর্ষিক অবস্থান দেখে। এমন অবস্থায় তাদের অনেকের কাছেই ইসলামের চেয়ে পূর্বের জীবন অনেক সহজ মনে হয়। যার ফলে তারা আবার ইসলাম থেকে দূরে চলে যায়।

পক্ষান্তরে, স্বাভাবিক জীবন যাপনের মধ্যে থেকে যারা ইসলাম গ্রহণ করে তারা এত সহজে এটা ত্যাগ করে না। এর মূল কারণ তারা তাদের আধ্যাত্মিক প্রবৃত্তি পরিবর্তনের আগেই ধীরে ধীরে অন্য তিন প্রকার প্রবৃত্তির সাথে নিজেরাই বোঝাপড়া করে ও ধীরে ধীরে সেগুলো থেকে বেরিয়ে তবেই ইসলামকে জীবনবিধান হিসেবে মেনে নেয়।

আমি এখন সাউথ টেক্সাসের যে জায়গায় থাকি সেখানে হিস্পানিক জনগোষ্ঠীই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণের হার অন্য জায়গার তুলনায় অনেক বেশি। তবে, এদের ক্ষেত্রে ইসলামের দাওয়াতদাতাদের যথোপযুক্ত ফলোআপ না করার অনেক অভিযোগ শোনা যায়। তারপরও তারা বন্দী জীবনে ইসলাম গ্রহণ করাদের মত চট করে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায় না।

যে দু’ দল মানুষের রিভার্টেড হওয়ার ঘটনা বললাম ও তাদের দু’রকম পরিণতিকে স্যোশাল বা বিহেভিয়োরাল রিসার্চে কয়েদী গ্রুপ্টাকে কন্ট্রোল গ্রুপ ও বাকিদের এক্সপেরিমেন্টাল গ্রুপ হিসেবে নিয়ে একটি গবেষণা হলে এই পার্থক্যটা কতটা তাৎপর্যপূর্ণ তা বোঝা যেত। তবে, সাধারণ অবজার্ভেশনে বোঝা যায়, পার্থক্যটা বেশ ব্যাপক। আগ্রহী কেউ এমন একটা এক্সপেরিমেন্টাল রিসার্চ করলে আপনার এই ধারণার পক্ষে শক্ত এম্পিরিক্যাল এভিডেন্স পাওয়া যেত, এ ব্যাপারে আমি অনেকটা নিশ্চিত।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

One Comment

  1. আসসালামু আলাইকুম ওয়া…. বারাকাতুহ
    কেমন যেন সমান্তরালে রয়ে গেলাম- মিলে-ও না, দূরেও যায়না- এমন!
    আপনি বলেছেন-
    আমার ধারণায়, মানুষেরা সাধারণত কিছু মৌলিক প্রবৃত্তি বা চাওয়াকে কেন্দ্র করে বাঁচে। এরমধ্যে কিছু তার (১) জৈবিক-সহজাত প্রবৃত্তি, কিছু তার (২) সাংস্কৃতিক-সহজাত প্রবৃত্তি, কিছু তার (৩) বুদ্ধিবৃত্তিক-সহজাত প্রবৃত্তি। আর কিছু হলো তার (৪) আধ্যাত্মিক-সহজাত প্রবৃত্তি।
    . . . .
    তখন ভাবতাম ১ নম্বরে হলো মানুষের আধ্যাত্মিকতা, ২ নম্বরে বুদ্ধিবৃত্তি, ৩ নম্বরে সংস্কৃতি ও ৪ নম্বরে জৈববৃত্তি। এখন বুঝি, তখন কত ভুল বুঝেছিলাম!
    * *
    আমি তো মনে করি অগ্র-পশ্চাতের এ ধারণার চেয়ে বরং সমান্তরাল ভাবাটাই অধিক যুক্তিযুক্ত! জৈবিক চাহিদা পূরণে চরম সংকট বা ব্যস্ততার মাঝেও মানুষ যেহেতু আধ্যাত্মিকতা বর্জন বা উপেক্ষা করেনা, সেক্ষেত্রে ক্রমধারার প্রশ্ন আসে কেমনে?!!
    মুমিন জীবনে চাহিদার ক্রমধারায় জরুরাত, হাজিয়াত বা তাহসিনিয়াতের কোথাও কি আধ্যাত্মিকতা অনুপস্থিত থাকে?
    **
    নিচের তিনটি অংশতে আমার মনে হলো (ভুল হতে পারে), আপনি ‘ক’ এবং ‘খ’-এর দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্যটা এড়িয়ে গেছেন এবং একেরটা অপরের কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছেন! ‘আতপচাল’ ও ‘সিদ্ধচাল’ শুধুই “চাল” বিবেচনা করাতে উভয়ের পার্থক্যের জায়গাগুলো একাকার হয়ে গেছে! অথচ পৃথক মূল্যায়ন করাই ন্যায়সংগত হতো!

    “বড়কথা হলো, জীবন সম্পর্কে এই ধরনের নিতান্ত ভুল ধারণা গড়ে উঠেছে মসজিদ-মাদ্রাসাকেন্দ্রিক এ দেশের বৃহত্তর ধর্মীয় পরিমণ্ডলে।”
    *
    “প্রতিটা মানুষেরই রয়েছে তিন ধরনের জাতিগত পরিচয়। (১) রাজনৈতিক জাতীয়তা, (২) নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তা, ও (৩) ধর্মীয় জাতীয়তা। এর কোনোটি অপরটির বিকল্প নয়। বরং, এগুলো পরস্পর পরিপূরক। পহেলা বৈশাখ উদযাপন যদি ধর্মবিরুদ্ধ হয়, তাহলে বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কেনো ধর্মসিদ্ধ হবে? দুই ঈদ ছাড়া যদি কোনো জাতীয় দিবস উদযাপন নাজায়েয হয়, তাহলে ‘বদর দিবস’ বা ‘বালাকোট দিবস’-এর মতো প্রচলিত ধর্মীয় দিবসগুলোর উদযাপন কী করে জায়েয হবে?”
    *
    “অথচ দেখেন, মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা তথা চিত্তবিনোদনের কোনো ব্যবস্থাই নাই। যে কোনো ধরনের ক্রীড়া ও আমোদ-প্রমোদের ব্যাপারে ইসলামপন্থীরা ওভারঅল নেগেটিভ। নারীদের সাজগোজকে তারা নিতান্ত খারাপ মনে করে। এমনকি, সুস্পষ্ট হাদীস থাকা সত্ত্বেও তারা নারীদের মসজিদে প্রবেশাধিকার হরণ করেছে। মেয়েরা মাজারে জেয়ারত করতে পারে, কিন্তু মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য অনুমতি পায় না। ইসলামপন্থীরা দেশের ক্ষমতা পেতে চান, অথচ নারীদের ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, পারিবারিক ও সামাজিক ন্যায্য মানবিক অধিকার প্রদানে তারা অসম্মত।”
    *
    আপনার বক্তব্যের শেযে যা বলেছেন
    “আসুন, বিপ্লবী হই। সূচিত এই বিপ্লবের অগ্রযাত্রায় সামিল হই। ক’দিনই-বা আর বাঁচবো…! একদিন তো মরেই যাবো…! জানেন তো, বিপ্লবী হওয়া মানে প্রকারান্তরে মৃত্যুকে অতিক্রম করে যাওয়া। তা যে আদর্শের পক্ষেই হোক না কেন…।”
    **
    সে পথে সে মিছিলেই তো সত্তুরের দশক থেকে অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে এলাম অনেক প্রশ্ন ও ভিন্নমত নিয়েই! কাণ খাড়া করেই আছি- কিন্তু কই, আজো নতুন ঢঙে কোন বিপ্লবী আহ্বান তো শুনলাম না!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *