ফুল পাখি লতা পাতা আকাশ বাতাস
এই হলো মেয়েদের ফেইসবুক স্ট্যাটাস
প্রোফাইল পিকচার ইনকগনিটো
সাধারণত কোনো বাচ্চার
যেন তিনিও একজন সোমন্ত বাচ্চা
পর্দানশীন মেয়েদের
কারো কারো প্রোফাইল পিকচারে দেখি
উড়ন্ত পরীর ছবি
যেন তিনি বলতে চান
উপরে যাই হোক অন্তরালে
তিনিও একজন ডানা কাটা পরি
কেউ কেউ নেকাবসহ ছবি দেন
আল্লাহ মালুম
নেকাবই যদি পড়েন তাহলে ছবি দেন কেন

সব মেয়েরাই গণহারে পলিগ্যামির
ঘোরতর বিরোধী কিন্তু
সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায় তারা
এনমাস মাশাআল্লাহ
অবাধ বন্ধুত্বে বিশ্বাসী
সম্পর্ক-সংযমে তারা যেন
অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী
নিজেদের ওপর তাদের ভীষণ আস্থা
জাস্ট-ফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড শুধু বন্ধুত্ব
এমনিতেই যোগাযোগ
বিশেষ হেল্প চাওয়া কিংবা করা
দিনে রাতে একান্ত আলাপ খুঁনসুটি
বিচিত্র সব সার্কাস্টিক কথাবার্তা
দূরে থেকেও যতটা সম্ভব কাছে আসা
হোক সেটা ভরা মজলিসে থেকে
তাতে কী
কোনো অসুবিধা নাই
জাকারবার্গের দুনিয়ায়
সবই তো বন্ধুত্বময়

আমরা পুরনো মানুষ
অতীত ধারণার লালনকারী
টেকনোলজিক্যালি নন-নেটিভ
আমাদের মতো ব্যাকডেইটেডদের কাছে
নারী আর পুরুষের সম্পর্ক
নিছক পরিচয় কিংবা সামাজিক সম্পর্কের বাইরে
অন্য কিছু নয়
নিজেদের পশ্চাৎপদতার কারণে
হয়তো পরিচয় নয়তো পরিণয়
এর মধ্যবর্তী অন্য কিছুতে
আমরা বিশ্বাসী নই

যারা নিজেদের ওপরে তেমন আস্থাশীল
তাদেরকে জানাই হ্যাটস অফ স্যালুট
আমি অতটা পবিত্র নই
গোবেচারা দুর্বল তাই
কাউকে ভাবতেও পারি না
তেমন শক্তিশালী নৈতিকতার
এ আমার অক্ষমতা দুর্বলতা ত্রুটি
তাদের ফুল পাখি লতা পাতা
লুতুপুতু মার্কা স্ট্যাটাস দেখে
মনে হয় বিলক্ষণ বুঝতে পারি
আসলে তারা কী চান
উত্তরটি বলে দিতে অবশ্য
ভীত আমি নিদারুণ
কেন এমন ইতিউতি স্ববিরোধ
চাইলেই আপনি জেনে নিতে পারেন
মানব বিবর্তনের
সুদীর্ঘ ইতিহাস হতে

আমি অক্ষম নিরুত্তর ক্ষমাপ্রার্থী
আমার পাঠিকাদের কাছে
এই যে পাঠিকা শব্দটি ব্যবহার করলাম
সে জন্য আবারো ক্ষমা চেয়ে
আপাতত কেটে পড়ছি
ভালো থাকো
শ্রদ্ধেয় কিংবা স্নেহাষ্পদ
ইনিয়ে বিনিয়ে সর্বপ্রকারে
আত্মপ্রকাশের দুর্নিবার অধিকারপ্রাপ্ত
আমার টেক্সট্রোভার্ট ফ্রেন্ডস এন্ড ফলোয়ারবৃন্দ

ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Jahid Hasan Hridoy: স্যার, আপনাদের জেনারেশন আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো ফেইস করেনি। এখানে শুধু মেয়েদের প্রবলেম নয়, টু বি অনেস্ট, ছেলেদেরও প্রায় একই সমস্যা আছে! আমার নিজের এবং বন্ধুদের ক্ষেত্রে দেখেছি। আমাদের গাইড করার জন্য সিনিয়রদের তেমন একটা উদ্যোগ দেখি না। শুধু সমস্যা দেখলেই তো হবে না, এর গভীরের কারণগুলোর সন্ধানও জরুরি। আমাদের জেনারেশনটা অনেক বেশি মাত্রায় আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগে। তাই মনে হয় তাদের সমালোচনার থেকেও সিনিয়রদের সহযোগিতার মনোভাব অনেক বেশি জরুরী।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমার পক্ষ থেকে এ ধরনের ‘মিসোজিনিস্ট’ কথা আসায় যারা মনোকষ্ট পেয়েছেন তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। ফেইসবুকের অপব্যবহার করার দিক থেকে ছেলেরাও কম যায় না। এমনকি বয়স্ক পুরুষরাও নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে।

এসব বিষয়ে আমার তেমন ব্যাপক অভিজ্ঞতা নাই। তবে আশপাশে একটু-আধটু যতটুকু দেখেছি তাতে এটা মনে হয়েছে। সেজন্য উচিত ছিল ছেলেদের সমস্যাগুলা নিয়েও লেখা। তাতে করে নারী বিদ্বেষের অভিযোগ থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যেত।

তবে ছেলেদের সমস্যাগুলো আমার ততটা চোখে পড়েনি। হতে পারে এটা আমার চোখের দোষ। এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কী করা যেতে পারে! এসব বিষয়ে আমার একটা মূলনীতি হলো এসব নিয়ে খুব বেশি চর্চা না করা। কারণ, অপরাধ নিয়ে চর্চা করা হচ্ছে অপরাধপ্রবণ মন-মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। বরঞ্চ সমাধানটা কী হতে পারে, সেটা নিয়ে আমাদের ফোকাস করা উচিত। ভাবছি এ নিয়ে পরবর্তীতে লিখব।

Shamsun Nahar Mitul: এখানে দেখলাম আটজনের মধ্যে এ পর্যন্ত দুজন মেয়ে লাইক দিয়েছেন। দুজন মেয়েকেই বলছি, আপনারা কি লেখাটা ভালো করে পড়েছেন?? ফুল পাখি লতা পাতা লুতুপুতু এই কথাগুলোই তো ভীষণ আপত্তিজনক। মেয়েরা যদি ফুল পাখি লতা পাতা নিয়ে লিখেই থাকে তাতে ক্ষতি কী??

আরো অনেক কিছুই আমার কাছে বেশ প্রশ্নবিদ্ধ মনে হচ্ছে! সরি, লেখাটা ভালো লাগলো না। আর এভাবে ঢালাওভাবে মেয়েদেরকে নিয়ে বলাটাও আমার কাছে ঠিক মনে হচ্ছে না। শিরোনামটাও যেন কেমন। সবকিছুতেই কেমন যেন হেয় করে দেখা হয়েছে। ললনা কথাটির মধ্যেও একটা নেগেটিভ মিনিং রয়েছে। আপনার কাছ থেকে এ রকম লেখা আশা করা যায় না।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এমন প্রতিবাদী হওয়া উচিত। বুঝা উচিত কখন কাকে কতটুকু কীসে মানায়। আত্মসম্মান নিজেকেই মেইনটেইন করতে হয়।

Faiza Tabassum: ম্যাম, আপনার কমেন্টে যারা হাহা দিলো, তাদের উদ্দেশ্যে দুই কথা বলার জন্য গলা নিশপিশ করতেসে। ছেড়ে দিলাম। মেয়েদেরকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করাটাকে অনেক ছেলেরা স্মার্টনেস ভাবে। তাদের পৌরষত্বের বহিঃপ্রকাশ ভাবে। দিন শেষ এদের অনেকেই ওরকম মেয়েদের সাথে চ্যাটে আড্ডা জমায়, প্রেমফ্রেম করে। এ রকম মেয়ে খুঁজেই বিয়ে করে, সংসার পাতে।

Jahid Hasan Hridoy: Faiza, মিতুল ম্যামের কমেন্টে আমি বরং খুশিই হয়েছি। স্যারকে স্ত্রীর হাতে জব্দ হতে দেখে ‘হাহা’ দিয়েছি। এখন সব ‘হাহা’কে যদি ঠাট্টা বিদ্রুপ ধরে নেন তাহলে তো আর কোনো রিয়েক্ট কিম্বা কমেন্ট কিছুই করা যাবে না। অনুমান বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মিথ্যে হয়। যাহোক, এখানে রাগ করাটা অর্থহীন, বিশেষ করে শেষের কথাগুলো খুবই আপত্তিকর। আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আপনারা যারা আছেন তাদের সাথে কখনো এমন করেছি কিনা তা তো আপনারাই সাক্ষী। কোনোদিন কাউকে অসম্মান করে কথা বলতে দেখেছেন? হ্যাঁ, ‘হাহা’ রিয়েক্টের উল্লেখ করাতে ব্যাপারটাকে পার্সোনালিই নিয়েছি।

Faiza Tabassum: Jahid, ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে নিচ্ছেন কেনো? স্যারের স্ট্যাটাসে তো লাভ রিয়েক্ট দিয়ে এসেছেন। সে আপনার মর্জি। সমস্যাটা কোথায় জানেন? একমত পোষণ করেই ক্ষান্ত দেন না। সবচেয়ে প্রগতিশীল ছেলেটাও তো এই সমাজেরই ছেলে, যে নিজেকে কাইন্ড অফ সুপিরিয়র ভেবে নিয়েছে চেতনে/অবচেতনে। সমাজের একটা বড় সংখ্যার মেয়েকে স্যার এনেছে স্ট্যাটাসে। তার বাইরেও মেয়ে আছে, তারা সংখ্যালঘু কিন্তু নগন্য নয়। তাদেরকে এপ্রিশেয়ট কি কখনো করেছেন এরকম সপ্রতিভভাবে? এরকম নিষ্ক্রিয় মেয়েদের চিন্তার খোরাক দেয়ার চেষ্টা করেছেন কখনো? তাদের মধ্যে নিজস্বতা ডেভলপড করার কোনো প্রচেষ্টা? তাদেরকে মেকাপ, কাপড়, শপিং, রান্না, সেলফি, সংসারের বাইরে নিয়ে আসার কোনো উদ্যোগ? যতটা সপ্রতিভভাবে মেয়েদের এটা করা উচিত, ওরকম হওয়া উচিত করে সবাই মিলে, তার সিকি ভাগ টাইমও কেউ মেয়েদেরকে অই গন্ডি থেকে হাতটা ধরে বের করে আনার পেছনে ব্যয় করে না। তাই আফসোস করি। আর যেই শ্রেণীর মানুষের কথা বর্ননা করলাম কমেন্টের শেষে, সেটা ব্যক্তিগতভাবে নিয়েন না। স্যার তো সবসময়ই নারীদের পক্ষে কথা বলা মানুষ, কাজ করা মানুষ। অন্য সবাইকেই দেখেছি কেবল কথায় পটুত্ব। সেইসব কাবিল ব্যক্তিবর্গ চান যে দুনিয়ার তাবৎ নারী নিজের যোগ্যতাকে কাজে লাগাক, কিন্তু আমার বউ আমার পকেটে ঢুকে বসে থাকুক। এর বাইরে যারা সচেতনভাবে চিন্তাই শুধু করেন না, উপরন্তু মেয়েদের মানুষ হিসেবে ট্রিট করেন, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানের দোয়া থাকলো।

Salma Abedin: Mitul ম্যাডাম, স্যারের লেখায় দর্শন আছে, আর আপনার লেখায় লজিক আছে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: Salma Abedin, আর আপনার মন্তব্যে বিচক্ষণতা আছে। একে আপনি রাজনীতিও বলতে পারেন।

Salma Abedin: আপনার উচ্চতর দর্শনের জন্য আলহামদুলিল্লাহ।

Abdus Salam Azadi: আমার এক্সপেরিয়েন্সের সাথে মেলাতে পারছি না।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: তাহলে তো বলতে হয়, আল্লাহ আপনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা থেকে বাঁচিয়েছেন।

Faiza Tabassum: স্যার, মেয়েদের কাছ থেকে তাহলে আর কী আশা করেন? অইরকম একটু-আধটু ফুল, পাখি, আকাশ, বাতাস নিয়াই এরা কথা বলুক। অন্য কিছু বলতে গেলে তাকে তার নারীত্বের পরীক্ষা দিতে হবে, আসলেই নারী কিনা এইটা নিয়ে সংশয় হবে। ফেসবুকে ভালো রাজনৈতিক বিশ্লেষণ দেন, এমন এক আপুকে কম হ্যাপা পোহাতে দেখলাম না। ছেলেরা ফেসবুকে আদতে কী করে, এইটা নিয়ে কথাই বললাম না। পাল্টা এট্যাক করে আর কী হবে। মেয়েদেরকে সবাই একটা নির্দিষ্ট গন্ডিতেই রাখতে চেয়েছে। তারা সেই গন্ডিতেই বেড়ে উঠেছে। চিন্তাভাবনার স্বকীয়তা, স্বাধীনতা, এইসব জিনিস তাদের কাছে কাল্পনিক। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কোনো মেয়েকে দেখলে ছেলেদের তুলনায় কটাক্ষ মেয়েরাই বেশি করে। আর আত্মপরিচয়সম্পন্ন মেয়েকে লোকে বলে বেয়াদব, একরোখা। আমি তো বলি, মেয়ে তুমি বোকা হয়েই রও।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমার এই মেয়েটা বরাবরই সেরা। আল্লাহ তার যোগ্যতা ও গুণ আরো বাড়িয়ে দিন। তাকে বরকত দান করুন। আ-মিন।

Sabuj Kabir: মাথার উপর দিয়ে গেল!

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: লেখাটা পাঁচটা প্যারায় সমাপ্ত। এর প্রথম তিন প্যারা না বুঝার কোনো কারণ নাই। পঞ্চম প্যারাটা উপসংহার। আপনার না বুঝার কিছু হতে পারে চতুর্থ প্যারায়, যেখানে আমি বিবর্তনের ইতিহাস থেকে উত্তর খুঁজে নেওয়ার কথা বলেছি।

জৈবিক বিবর্তনের বাস্তবতার আলোকে একথা আমরা বুঝতেই পারি, নারীরা সহজেই প্রকাশ-উন্মুখ। তবে গ্রহণ করার ব্যাপারে তারা স্বভাবতই সতর্ক। তাদেরকে সুন্দর করে তৈরি করা এবং তাদের এই অন্তর্গত সৌন্দর্যপ্রিয়তার ক্ষেত্র এবং মাত্রা বিবেচনাই ঠিক করবে, সেটি কতটুকু ভালো কিংবা মন্দ বিবেচ্য।

নজরুলের অনুবাদ করা ওমর খৈয়ামের একটা রুবাইয়াত পড়েছিলাম। যেখানে দেখা যাচ্ছিলো, এক শেখজি এসেছে এক বাঈজীর ঘরে। শেখজির বাম হাতে মদের বোতল। আর সামনের ডান হাতে তসবি। তখন বাইজি বলছে, তোমার চেয়ে তো আমি ভালো। আমি বাইজি। সবাই আমাকে সেভাবে জানে। কিন্তু তুমি শেখজি যে আমার কাছে আসো সেটি তো লোকেরা জানে না।

যারা পর্দানশীন নন তাদের কথা আলাদা। কিন্তু যারা দৃশ্যত পর্দা রক্ষা করে চলতে চান তারা যখন কারণে অকারণে প্রদর্শনী করে বেড়ান তখন সেটা একটা কন্ট্রাডিকশন তৈরি করে।

Sabuj Kabir: এটা নরেন দেবের করা ওমর খৈয়ামের অনুবাদ:

সে একদিন পানশালে কোন বারাঙ্গনা দেখে,
শেখজি বলেন ডেকে–
দেখছি তুমি মূর্তিমতী পাপ!
মদ্যপায়ী ব্যাভিচারীর অসংযমের ছাপ
অংগে তোমার আঁকা!
তোমার রূপের কদর্যতা থাকছে না আর ঢাকা।
বরবণিতা বললে হেসে, স্বামী
দেখেছো যা– তা সত্য বটে আমি।
কিন্তু, তোমার বাইরে প্রভু, দেখতে যে রূপ পাই,
যথার্থ কি অন্তরেতেও সত্য তুমি তাই?

ফেসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *