আমাদের অব্যক্ত কথাগুলো সবচেয়ে বেশি বাঙময় হয়ে ওঠে আমাদের অনুভবের গভীরে। মাঝে মাঝে নীরবতা হয়ে ওঠে মধুরতর। অনুক্ত কথাগুলো কীভাবে যেন গেঁথে যায় অন্তরের জমিনে। বেড়ে ওঠে অগোচরে।
কথাহীন সুর তাই এত ভালো লাগে.! কর্মহীন দুপুর অথবা রাত্রি গভীরে কিছু একটা যেন ভর করে আমাদের উপরে। কাছের মানুষকে তখন মনে হয় অতিদূরে। দূরের মানুষকে মনে হয় অতিকাছের। যেন আপন জন্ম-জন্মান্তরের।
না বলা কথা দিয়ে, না দেখা ছবির সাথে মিলিয়ে আমরা ঠিক পেয়ে যাই আমাদের মনের মানুষকে। নির্বাক অবসরে আমরা খুঁজে পাই নিজেকে নিজে।
অথবা, কোথায় যেন হারিয়ে যাই। ধ্বসে পড়ে সমস্ত অস্তিত্ব। নিমিষেই সব অর্জন হয়ে যায় অর্থহীন। তখনকার সেই আমি নয় সে জন, যাকে তোমরা চেনো।
নীরবতার চেয়ে শক্তিশালী নাই কোনো ভাষা। সকল ভাষা হারিয়ে যায় অনুভবের ঋদ্ধতায়। নিঃশব্দ শব্দের জগতে আমরা খুঁজে পাই অস্তিত্বের ঠিকানা।
তেমনই এক অনুভবের জগতে, মাঝে মাঝে, আমি হয়ে উঠি পৃথিবীর একমাত্র মানুষ। মনে হয় এ পৃথিবীর সব কিছু যেন শুধু আমারই জন্যে। সবকিছু যেন আমার একার। প্রতিটি মানুষ যেন আমারই এক একটা প্রতিচ্ছবি।
কখনো মনে হয়, আমি যেন নই কিছুমাত্র নিজের। যেন আমি প্রত্যেকের। সবার। যেন আমার নাই স্বতন্ত্র কোনো অস্তিত্ব পরিচয়। যেন আমি সহযোগী সহচর, এর বেশি কিছু নয়।
যা কিছু বললাম, ঠিক এই কথাগুলোই যে বলতে চেয়েছি, এমনটা নয়। যা বলতে চেয়েছি, তা বলতে পারিনি। আবার, যা বলেছি তা যে ভুল, ব্যাপারটা ঠিক এমনও নয়।
আসলে আসল ব্যাপারটা যে কী, সেটা আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু সঠিক বলতে পারি না। তাই তো আমরা আবিষ্কার করেছি, সমস্ত বিশ্বচরাচরের চেয়েও ভারী একটি শব্দ, ‘নীরবতা’।
নীরবতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাই কোনো শব্দ আমাদের শব্দ-ভাণ্ডারে। এই একটি শব্দ ধারণ করে আছে অর্থপূর্ণতার সমগ্র অবয়ব।
নীরবতার প্রাঞ্জল সাবলীলতায় সব ভাষা থেমে যায়, হয়ে ওঠে বিমূর্ত। নীরবতার জঠরে গড়ে ওঠে সব শব্দ, সব ভাষা, সকল অভিব্যক্তি।
নিজের সাথে আমি কথা বলি, শয়নে স্বপনে জাগরণে একটিমাত্র ভাষাতে, একটি মাত্র শব্দে। একটিমাত্র কথায় আমি প্রকাশ করি সব কথা। সেই কথাকে, সেই ভাষাকে তোমরা বলো ‘নীরবতা’।
নীরবতার অখণ্ডতায় এসে ভাষা পায় আমার সব না বলা কথা।