যা হওয়ার নয় তাই যদি হয়ে যায় তাহলে সেটি হলো ভালোবাসা (love)। আর যা হওয়ার আশা করা হয় এবং অ্যাকর্ডিংলি সেটি হয়ে ওঠে তখন সেটি হলো সম্পর্ক (affair)।

ভালোবাসা গড়ে ওঠে। তৈরি করা যায় না। কিন্তু, সম্পর্ক তৈরি করা হয়। চুক্তি করে ভালোবাসা যায় না, সম্পর্ক করা যায়।

ভালোবাসা মাত্রই এক ধরনের সম্পর্ক। কিন্তু সম্পর্ক মাত্রই ভালোবাসা নয়। সম্পর্ক এক ধরনের সামাজিক প্রেক্ষিতের ব্যাপার। ভালোবাসা নিতান্ত ব্যক্তিগত অনুভবের ব্যাপার।

ভালোবাসা যেখানে গৌণ, সম্পর্কটাই মুখ্য, সেখানে সম্পর্কের সীমানাগুলো বজায় রাখা সাপেক্ষে সেই নিছক সম্পর্ক হিসেবে গড়ে ওঠা সম্পর্ক এক সময় ভালোবাসায় উন্নীত হতে পারে। সুস্থ সম্পর্ক থেকে মায়া সৃষ্টি হয়। মায়া হলো ভালোবাসার অপূর্ণ রূপ বা প্রাথমিক স্তর।

সম্পর্কের যত্ন নিতে হবে। সম্পর্কের মধ্যে দায়িত্ব পালন এবং অধিকার আদায়ের ব্যাপার থাকে। অন্যদিকে, ভালোবাসার সম্পর্ক একপাক্ষিক। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসার বিষয়টি বরং ঝামেলা সৃষ্টি করে।

কোনো এক পক্ষের পক্ষ থেকে ব্যাপারটা যদি নিছক সম্পর্ক না হয়ে সত্যিকারের ভালোবাসা হয়ে থাকে, তাহলে তাদের সেই সম্পর্ক এক ধরনের ভালোবাসার সম্পর্ক হিসেবে গণ্য হতে পারে।

ভালোবাসার সম্পর্ক যদি হয় উভয় পক্ষ থেকে স্বতন্ত্রভাবে একপাক্ষিক ও ঐকান্তিক, তাহলে তাদের মধ্যে একটা দ্বিপাক্ষিক স্বর্গীয় ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে।

তুমি যদি অপরপক্ষকে সত্যিকারভাবে ভালোবাসো তাহলে সে কেন তোমাকে ভালোবাসে না, এটা নিয়ে তুমি দুঃখবোধ করতে পারো, কিন্তু কোনো আপত্তি বা অভিযোগ উত্থাপন করতে পারো না।

‌‘ও আমাকে ভালোবাসে না, তাই আমি তাকে ভালোবাসা সত্ত্বেও তার সাথে ভালোবাসার দাবি হিসেবে যা করা দরকার সেটা করতে পারছি না’— এমন ধরনের কথা আমরা কখনো শুনে থাকি। এটি খুবই হাস্যকর এবং অগ্রহণযোগ্য কথা।

তুমি কাউকে ভালোবাসবে, সেটার জন্য তার অনুমতি কিংবা সম্মতির দরকার নেই। ভালোবাসার সম্পর্কে হিসেবের প্রসঙ্গ আসবে না। চাওয়া-পাওয়ার হিসেব যেখানে মুখ্য হয়ে ওঠে সেটি ভালোবাসা নয়, নিছক সামাজিক সম্পর্ক।

আমরা প্রায়শই সমাজস্বীকৃত ব্যক্তিগত সম্পর্ক আর ভালোবাসার পার্থক্যকে গুলিয়ে ফেলি। সুস্থ সম্পর্ক প্রত্যাশা এবং চর্চা করো। ভালোবাসা না হলেও চলবে। হলে ভালো। ভালোবাসার নামে মূলত সম্পর্ক চর্চা করে নিজেকে এবং অন্য মানুষটিকে প্রতারিত করো না। ঠকিও না।

শুরুতে যেমনটা বলেছি, প্রত্যাশানুযায়ী যেটা ঘটে, সেটা হচ্ছে সম্পর্ক। অপরদিকে, ধারণা, কল্পনা এবং প্রত্যাশার বাইরে যেটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে, কীভাবে যেন ঘটে যায়, সেটা হচ্ছে ভালোবাসা। কথাটা মনে রেখো।

কন্ট্রাডিকশন ছাড়া এফেয়ার হতে পারে, ভালোবাসা হতে পারে না। আবেগ আর যুক্তির সম্মিলনে গড়ে উঠে একটা সুস্থ সম্পর্ক। অপরদিকে ভালোবাসা হলো শুদ্ধ আবেগের ব্যাপার। ভালোবাসাতে আবেগটাই মুখ্য। সম্পর্ক হলো দেয়া-নেয়ার মামলা।

ভালোবাসা আমাদেরকে যতটা আনন্দ দেয় তার চেয়ে বেশি দেয় কষ্ট। অথচ একটা সুস্থ সম্পর্ক চর্চার মাধ্যমে উভয় পক্ষ লাভবান হয় অনেক বেশি। সম্পর্ক হলো আলো জ্বেলে পথ চলা। আর ভালোবাসা হলো অনির্দিষ্ট লক্ষ্যের পানে অবিবেচকের মতো ছুটে চলা।

কেন জানি আমাদের সমাজে সাহিত্য-গল্প-উপন্যাস-কবিতায়, সামাজিক আলাপ-আলোচনা-আলাপচারিতায় ভালোবাসাকে খুব বেশি হাইলাইট করা হয়েছে। অথচ আমাদের ফোকাস করা উচিত সুস্থ সম্পর্ক চর্চার ওপরে। ভালোবাসাটা একটা বিরল ব্যাপার। হলে ভালো। না হলেও চলে।

যদি সুখি হতে চাও, তাহলে ভালোবাসাবাসি এড়িয়ে চলো। সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তোল। মনোনিবেশ করো বিদ্যমান বাস্তবতার ওপর। অযথা তরল আবেগচর্চা দিনশেষে তোমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

হ্যাঁ, তোমার যদি থাকে অনেক আবেগ, গভীর আবেগ, সময়ে তুমি চাও বা না চাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেটি প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং তা স্থিত হয়ে থাকবে সুদীর্ঘ সময়, এমনকি আজীবন। সে জন্য কোনো প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার নেই। যদি এমনটি হয়েই যায় তাহলে সেটাকে নিরবে স্বীকার করে নাও, কিন্তু দাবি করতে যেও না। ভালোবাসার কোনো দাবি হয় না। দাবি করার প্রসঙ্গ আসে স্বীকৃত সম্পর্কে। কথাগুলো মনে রেখো।

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *