আসসালামু ওয়ালাইকুম। আমার একটা প্রশ্ন আছে। আমার অস্তিত্বের কারণ কী, আমি এটি কেন খুঁজব? এর কী প্রয়োজন আছে?”

খান আফিফ ফারহান নামের একজন পাঠকের এই প্রশ্নের উত্তরে ফেসবুক মেসেঞ্জারে তাঁর সাথে আমার নিম্নোক্ত কথাবার্তা হয়েছে:

আমি: আমার অস্তিত্বের কারণ আমি খুঁজবো। কারণ, আমার আত্মমর্যাদাবোধ আছে। এবং আমার আত্মমর্যাদাবোধ আমার আত্মপরিচয় অনুসন্ধানকে সামনে নিয়ে আসে। অর্থাৎ যথার্থ আত্মপরিচয় না থাকলে আমি নিজেকে আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন ভাবতে পারি না। আত্মমর্যাদাবোধ আমাকে আমার আত্মপরিচয় ও আত্মার অনুসন্ধান কাজে উদ্বুদ্ধ করে। আমার এই অস্তিত্বের কারণ খোঁজার কাজে আমাকে বাধ্য করে।

প্রসঙ্গক্রমে আমি আমার দিক থেকে ব্যাপারটা কেমন তা আপনাকে বললাম। আপনি ব্যাপারটাকে কীভাবে দেখেন তা নিতান্তই আপনার।

পাঠক: আত্মমর্যাদাবোধ কী? এটা কি মানুষের কোনো এসেনশিয়াল প্রপার্টি? আর আত্মমর্যাদাবোধের সাথে অস্তিত্বের কারণ খোঁজার সম্পর্ক কী? অন্য শ্রেণীর জীবের মধ্যেও তাদের নিজস্ব মর্যাদা নিয়ে সচেতন থাকতে দেখা যায়। কিন্তু এর সাথে সেই প্রাণীর নিজের অস্তিত্বের কারণ খোঁজার প্রয়োজন কী?

আমি: একটা কিছুকে আর একটা কিছুর সাথে তুলনা করে কোনো বিষয়কে আমরা বুঝতে চাই। কিন্তু এমন কোনো জিনিস কি আছে যেটা তুলনা ছাড়া বোঝা যায়? তা যদি না থাকে তাহলে তুলনা করার এই ব্যাপার বা প্রক্রিয়াটা তো শুরুই হতে পারে না।

তার মানে হলো, কিছু কিছু জিনিসকে আমরা স্বগতভাবেই বুঝতে পারি এবং সেগুলোর ভিত্তিতে বাদবাকি বিষয়গুলোকে আরো ভালো করে বোঝার জন্য আমরা প্রশ্ন করি। এবং সম্ভাব্য উত্তর জানার চেষ্টা করি।

আমি মনে করি, আত্মমর্যাদাবোধ এমন একটা জিনিস যা আমরা নিজ থেকেই বুঝতে পারি। যেটাকে ‘আত্মমর্যাদাবোধ কী?’ প্রশ্ন দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। এই দৃষ্টিতে এই প্রশ্নটাই বরং ভুল।

পাঠক: আপনার কাছ থেকে এটুকু বুঝলাম, অস্তিত্বের কারণ খোঁজাটা মানুষের বিবেকের দাবি। বা আত্মপরিচয় জানার আকাঙ্ক্ষাটি মানুষের স্বগত বিষয়।

আমি: হ্যাঁ, মানুষ জানতে চায়। বলতে পারেন এটা একটা ‘মানবিক রোগ’। একটা হার্ডওয়্যারড ‘ভাইরাস’। অন্তহীন এক আজন্ম ‘সমস্যা’। মানুষের জানতে চাওয়ার কোনো শেষ নাই। অস্তিত্বের প্রশ্ন দিয়ে এর শুরু। এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে বানর জাতীয় কিছু প্রাণী, বলা যায়, শেষ পর্যন্ত মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছে। যারা বিবর্তনবাদকে সঠিক মনে করে এই ব্যাখ্যাটি তাদের জন্য।

আর যারা সৃষ্টিবাদকে সঠিক মনে করে তাদের কাছে ব্যাপারটা তো আরো পরিস্কার। তাদের মতে, সৃষ্টিকর্তা তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য দিয়েই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। সেজন্য মানুষ জানতে চায়, অনুসন্ধান করতে চায়, সত্যকে খুঁজে নিতে চায় এবং অনন্তের পানে প্রতিনিয়ত ছুটে চলে। তার এই পথচলা শ্রান্তিহীন, ক্লান্তিহীন। অদম্য প্রত্যয়ে সে এগিয়ে যেতে চায়।

পাঠক: মানুষের আত্মপরিচয় জানার আকাঙ্ক্ষা বা নিজের অস্তিত্ব খোঁজার কারণ সম্পর্কে কোনো বই বা লেখা থাকলে আমাকে জানাবেন।

আমি: আমার কিছু পড়াশোনা আছে বটে। কিন্তু আমি বুকিশ নই। স্বভাবতই রেফারেন্স দিয়ে কথা বলা আমি পছন্দ করি না। বিশেষ করে যখন খুব বেশি রেফারেন্স আমি জানিই না। আমি কথা বলি যুক্তি দিয়ে। সেখানে রেফারেন্স থাকে খুব কম। কিন্তু যুক্তি থাকে অকাট্য।

বলতে সংকোচবোধ করছি। তথাপি বলতে হয়, আসলে অন্যদের বই সম্পর্কে আমার সচরাচর তেমন একটা সুধারণা থাকে না। অর্থাৎ কাউকে কোনো বই রিকমেন্ড করার ব্যাপারে আমি সাধারণত খুব একটা কনভেনিয়েন্ট ফিল করি না। আমার অর্জিত জ্ঞান মূলত এসেছে আমার জীবনবোধ ও অভিজ্ঞতা থেকে।

পাঠক: আমি এ ব্যাপারে আরো আলোচনা জানতে আগ্রহী, সে কারণে চেয়েছি। সে যাই হোক, আপনার কথা অনুযায়ী এতটুকু বোধহয় বলা যায়আত্মিক দিক থেকে মানুষ, মানুষ হয়ে উঠার essential property হলো তারমধ্যে আত্মপরিচয় জানার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হওয়া।

আমি: আপনার সাথে এই আলোচনাটাকে এডিট করে আমি একটা পোস্ট দিতে চাচ্ছি। আপনার সম্মতি আছে কিনা জানাবেন এবং সেখানে আপনাকে ট্যাগ করা যাবে কিনা সেটাও বলবেন।

পাঠক: ওকে। অবশ্যই। সমস্যা নাই।

লেখাটির ফেসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *