[আজ সকাল সাড়ে নয়টা হতে দুপুর বারোটা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নানা সামাজিক অসংগতি নিয়ে এই সিরিজ লেখা। আসলে ওয়ার সিমেট্রির যে মালির সাথে আমি কথা বলেছি তাকে বলেছি, বিষয়টা নিয়ে লিখবো। সেই ওয়াদা রক্ষা করার জন্য লেখা। লিখতে বসে ভাবলাম, অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়েও লিখি। লেখা শুরু করার পরে বড় হয়ে গেলো। তাই পর্ব ভাগ করে দেয়া। দুপুর তিনটা হতে রাত দশটার মধ্যে লেখা।]
প্রসঙ্গ: বাচ্চাদের লেখাপড়া
আজ সকালে চবি ক্যাম্পাস হতে ২৪ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম শহরে আসলাম ছোট মেয়েকে নিয়ে। সপ্তাহে দুদিন রাহনুমা জেএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসাবে জিইসির কাছে ‘আরিফ স্যারের’ কাছে প্রাইভেট পড়তে আসে। দু’ঘণ্টার একটা ব্যাচে ওরা ৮০ জন। ওর এক বান্ধবীও সেখানে পড়ে। তার পেরেন্টসও চবি শিক্ষক। তারা সম্প্রতি শহরে চলে এসেছে বাচ্চাদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে। ওই শিক্ষক দম্পতির সাথে মাঝে মাঝে দেখা হয়। উনারা প্রগতিশীল রাজনীতিতে সক্রিয়। আমি তো ‘প্রতিক্রিয়াশীল’।
আমাদের সময়–ওদের সময়, এই আমল–সেই আমল, এই দল–সেই দল, প্রগতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল উভয় দল-আমল মিলে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজটাকে আমরা আমলি-ঐক্যমতের ভিত্তিতে ‘শেষ’ করে দিয়েছি। একটা খারাপ স্কুলের যত বৈশিষ্ট্য হতে পারে, আমার জানা মতে, বর্তমানে চবি স্কুলের তেমনই শোচনীয় অবস্থা।
প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত চবি ক্যাম্পাসে থাকা, বিশেষ করে চাকুরীস্থলের নিকটতম অবস্থানে থাকার জন্য শিক্ষকেরা ক্যাম্পাসে থাকতে চায়। অথচ, গত এক দশকে অনেক শিক্ষক শুধুমাত্র বাচ্চাদের পড়ালেখার জন্য ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। অপরদিকে, তলারটা খেতে গেলে আগারটা হাতছাড়া হওয়ার মতো, শহরে যারা থাকেন, সাপ্তাহিক ৫ কর্মদিনের প্রত্যেক দিন, দেড়-দ্বিগুণ ৩ ঘণ্টা শুধুমাত্র শিক্ষক বাসে ঝিমিয়েই কাটান। কী ভয়াবহ, দুঃসহ…!
মনে পড়ে, আমরা চট্টগ্রাম কলেজেও টিকেছি, চবি কলেজেও টিকেছি। সায়েন্সল্যাব-নতুনপাড়া-সেনানিবাস এলাকা হতে দুই কলেজের দূরত্বই সমান। মামুন, তাহেরসহ সেখানকার আমরা কয়েকজন চবি কলেজকেই প্রেফার করেছি। এটি ১৯৮২ সালের কথা। তখন চবি কলেজের তেমনই সুনাম ছিলো। ফজলি হোসেন স্যারের ছেলেকে ডাব পাড়ার ঘটনায় বেয়াদবি করার তুচ্ছ অভিযোগে কলেজ হতে বহিষ্কার করা হয়েছিলো। কমিটির প্রধান ছিলো আলী ইমদাদ খান স্যার। দু’জনেই বাম দলের নেতা এবং ব্যক্তিগতভাবে ঘনিষ্ট বন্ধু। এমনই ছিলো ডিসিপ্লিন। কোনো ক্লাস না হওয়া ছিলো অসম্ভব ব্যাপার। এখন এটি ‘মাশাআল্লাহ’ বিশ্ববিদ্যালয় মানের ‘স্বাধীনতা’ অর্জন করেছে। বলতে পারেন, পুরাই ব্রেক-ফেইল, ‘মুক্ত পরিবেশ’।
ফল কথা হলো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দলীয় প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হবে। যে কোনো মূল্যে। আমার–আপনার, নিজ দল–বিরোধী দল, তথাকথিত নিরপেক্ষ, সবার যৌথ স্বার্থেই এই জায়গাটাকে ঠিক রাখতে হবে। দেশে বলুন, ইউনিভার্সিটিতে বলুন, যারা দল করেন তারাই প্রশাসন পরিচালনা করেন। এই বিবেচনায়, যে কোনো প্রশাসনিক সংস্কারই দলীয় মন-মানসিকতার উপর নির্ভরশীল। হতে পারে, বিরোধী পক্ষ ক্ষমতায় থাকতে কোনো অপকর্ম করেছে। এখন আপনি কিংবা আপনার দল ক্ষমতায়। দণ্ড এবং মুণ্ড উভয়টাই আপনার কিংবা আপনার দলের করতলগত। পাল্টা হিসাবে আপনিও একই অপকর্ম করবেন, এবং কিছুটা বাড়িয়েই করবেন, এমন হলে তো চলবে না। এভাবে চলতে থাকলে সবকিছুর ভিত্তি যে সমাজ ব্যবস্থা, তাই ভেংগে পড়বে। চবি স্কুল ও কলেজ এ ধরনের একটা উদাহরণ মাত্র।
তাই, লেখাপড়া নিয়ে দলাদলি করবো না, এমন মতৈক্যের গত্যন্তর নাই।
তাহলে, কেন সেটি হচ্ছে না? বা, উল্টোটাই হচ্ছে?
উত্তরটা সহজ: মূল্যবোধের অবক্ষয়।
ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Hasan Bin Nazrul: মূল্যবোধের অবক্ষয়ের মূল কারণ যারা সমাজ পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখত তারা নিজ দ্বায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করেনি বা আমরা আমাদের অগ্রজদের যেমন যোগ্য মনে করেছি তারা তেমন যোগ্য নন।
Abu Masud Nurullah: Earlier in my career, I taught at a new public university. Even some 25 years ago, what I witnessed disillusioned me from the so-called glamour of teaching. A lot many folks called themselves teachers who probably would not qualify for an equivalent corporate job. They have become teachers because of political connection.
Mohammad Mozammel Hoque: মাসুদ ভাই, আপনার কথা খুব মনে পড়ে। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আমাদের জন্য দুআ করবেন।
Abu Masud Nurullah: Keep writing. Somebody has to tell the bitter truth. The decay has even invaded those who call themselves “religious”
Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ, যারা নিজেদের আদর্শবাদী দাবী করে, রাষ্ট্র ও বিশ্বে ‘বিপ্লব’ করতে চায় তাদেরও অধিকাংশকে দেখি নানা রকমের সামাজিক অসংগতির সাথে নীরবে আপস করে চলছেন। এক পক্ষের কাছে ধর্মটা নিছকই ব্যক্তিগত। এর প্রতিক্রিয়ায় আর এক পক্ষের উদ্ভব হয়েছে যাদের কাছে ধর্মটা প্রধানত রাজনৈতিক। মাঝখানের যে স্তর, অর্থাৎ সমাজ, তা যেন সবার কাছেই উপেক্ষিত।
*****
পাবলিক টয়লেট না থাকার অমানবিকতা
রাহনুমাকে টিচারের বাসায় পৌঁছিয়ে দিয়ে ভাবছি, দু’ঘণ্টা কী করবো? চবি ক্যাম্পাস হতে আসার সময়ে পানি বোধ হয় বেশি খেয়েছিলাম। ওয়াশ রুমে যাওয়ার তাড়া অনুভব করছিলাম। কাছেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট। সেখানে গেলাম। দেখলাম, দুজন কর্মচারী গেট খুলছেন। পরিচয় দিয়ে ওয়াশ রুম ব্যবহার করলাম। এরপর একটু ঘুরে ফিরে দেখলাম। ভালোই লাগলো।
ওয়াশ রুমের কথা বললাম, তাতে আমার শালীন পাঠকরা কেমন কেমন যেন মনে করছেন। আমি পানি সব সময়ে বেশি খাই। সে কারণে অধিকতর ফ্রিকোয়েন্টলি ওয়াশরুম ব্যবহার করতে করতে হয়। আমার খুব খারাপ লাগে, মেয়েরা পারতপক্ষে পানি খায় না। বিশেষ করে বাহিরে যাওয়ার আগে। বা বাহিরে থাকাকালীন। কারণ, ওই যে বললাম, ওয়াশরুম সমস্যা। কোথায় পাওয়া যাবে বিশেষ কাজ করার এই কাংখিত স্থানটুকু?
এমন কি মসজিদের টয়লেটগুলো পর্যন্ত নামাজের সময় ছাড়া বন্ধ করে রাখা হয়। মানুষ নিতান্ত মানবিক সহায়তাটুকু পায় না যে স্থানে সেটি কীভাবে পবিত্র হয়? সেটি ধর্মের বিবেচনায় যত পবিত্রই হোক না কেন, আমার বিবেচনায় এটি অমানবিক। মসজিদগুলোতে যেহেতু নারীদের প্রবেশাধিকার নাই, তাই এ প্রসংগে মসজিদের কথা আর বাড়িয়ে লাভ নাই।
খেয়াল করে দেখেছি, ৪ ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা চলাকালীনও ছাত্রীরা ওয়াশরুমে যায় না। ‘বজ্জাত’ পোলাগুলো দেড় ঘণ্টার মাথায় সিরিয়াল ধরে টয়লেটে যেতে থাকে। অবশ্য টয়লেটে গেলে ‘বিশেষ কারণে’ না পারা প্রশ্নগুলোর উত্তর সহসাই ‘মনে পড়ে’ যায়। অথচ, মেয়েগুলোকে দেখি, ঠায় বসে লিখতে থাকে। টয়লেটে গেলে সময় নষ্ট হবে, এজন্য নয়। ধারণা করছি, পুরুষ টিচারের সামনে টয়লেটে যাওয়ার কথা, বা পুরুষ সহপাঠীদের সামনে টয়লেটে যাওয়ার কথা কীভাবে বলবে, তা তারা ভেবে পায় না।
এই অহেতুক ক্ষতিকর অর্থহীন লজ্জাবোধ হতে মুক্ত হতে হবে। ছেলেদের সাথে ফাঁকতালে ‘এইটা-ওইটা’ করতে তাদের লজ্জা লাগে না। ‘প্রস্রাব’ কথাটা যেন, ‘স্রাবের’ মতো অতীব সংবেদনশীল। ‘সহবাসের’ কথা নাই বা বললাম।
পবিত্র কোরআনে অথচ এ কথাগুলো কোনো রকমের ডিসক্রিশান ছাড়াই বার বার এসেছে।
এক মুসলিম সাহাবী কাফেরদের হাতে বন্দী হয়েছিলেন। তাঁকে যে ঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছিলো সেই ঘরের মহিলাটির কাছে নিজের যৌনাঙ্গের কেশ পরিষ্কার করার জন্য তিনি একটা ক্ষুর চাইলেন। মহিলাটি তা ছুড়ে দেয়ার পর পরই মহিলাটির একটা ছোট সন্তান ওই বন্দীর কাছে চলে যায়। যাকে আগামীকালই হত্যা করা হবে সে বাচ্চাটার কোনো ক্ষতি করে কিনা, এই আশংকায় মহিলাটি আতংকিত হয়ে পড়েন। তা দেখে উক্ত সাহাবী সেই কুরাইশ মহিলাকে অভয় দিয়ে বললেন, কোনো মুসলমান না-হক্বভাবে কারো ক্ষতি করে না। তিনি ছিলেন খুবাইব (রা)। গুপ্তাংগের লোম পরিষ্কার করার জন্য একজন অপরিচিত মহিলার কাছে ক্ষুর চাইতে তাঁর লজ্জা লাগে নাই। তারা ছিলেন, শ্রেষ্ঠ মানুষ। সেই নারী পরবর্তীতে বলেছেন, এমন সজ্জন বন্দী তিনি কখনো দেখেন নাই।
যে কথা বলার জন্য এ ঘটনা বলা, অহেতুক লজ্জা পাওয়া অনুচিত। আজলের অধিকাংশ বর্ণনাতে রাবী হলেন মহিলা। এমনকি মা তার ছেলেকে বলছেন, তোমার বাবা আমার সাথে এভাবে করতেন। মহিলাদের ‘বীর্যপাত’ নিয়ে মহিলা সাহাবীরা আল্লাহর রাসূলকে (সা) জিজ্ঞাসা করেছেন। এমনকি, এ নিয়ে তাঁর সাথে ক্রস-টকও করেছেন। মহিলা সাহাবীদের এ ধরনের ‘খোলামেলা’ কথাবার্তার প্রচুর বর্ণনা হাদীসে পাবেন। আমাদের সমাজে প্রচলিত ‘লজ্জা-শরমের স্ট্যান্ডার্ডে’, নাউযুবিল্লাহ, পুরুষ ও মহিলা উভয় পর্যায়ের সাহাবীগণ ছিলেন খানিকটা ‘নির্লজ্জ’ ও অনেকটাই ‘ভোগবাদী’।
পবিত্র কোরআনের এমনকি একটা আয়াতেই সহবাস কথাটা তিনবার এসেছে। সূরা বাকারার ১৮৭ নং আয়াত। পবিত্র কোরআনে কোনো ‘বিশেষ অধ্যায়’ নাই, এইজ রেসট্রিকশান নাই। সব বর্ণনাই পাবলিক ও ওপেন। সেই কোরআনের অনুসারীদের ওয়াশরুম ব্যবহার করার হাজত নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে এতো সংকোচ ও সংবেদনশীলতা কেন? টয়লেট সারার সময়ে পর্দা করা হয়। তা-ই তো ডিসেন্সির জন্য যথেষ্ট।
বিষয়টা ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। এটি অন্যতম সামাজিক অসংগতি। বলতে পারেন, আমাদের মূল্যবোধেরই একটা সমস্যা। নিতান্ত জৈবিক যে বিষয়গুলোকে স্বীকার করাটাই মানবিকতার দাবি সেখানে অতিরিক্ত আদব দেখাতে যাওয়াই অস্বাভাবিকতা। অস্বাভাবিকতা মাত্রই খারাপ।
ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য–প্রতিমন্তব্য
Siddique Ullah: অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার, খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে আলোকপাত করলেন। এক জরিপে দেখা যায় বিদ্যালয় থেকে ১০ শতাংশ ছাত্রী অর্থ্যাৎ মেয়েরা ঝরে পড়ে কেবল যথাযথ টয়লেট না থাকার কারণে। সংকোচের কারণে তারা অন্যদের মতও টয়লেট ব্যবহার করতে পারে না।
Nusrat Rahman: দেখার চোখ ডেভেলপ করলে কত অল্প সময়েই কত কিছু দেখা যায়। মাশাআল্লাহ। তাবারাকাল্লাহ।
Mohammad Mozammel Hoque: অনূর্ধ্ব আড়াই ঘণ্টা অভিজ্ঞতার খণ্ডাংশকে কলমে তুলে আনতে প্রায় সাত ঘণ্টা সময় লেগেছে। কোনো কথাকে হ্যাঁ/না’র বাইনারিতে বললে লোকেরা ভুল বুঝে। একটু গুছিয়ে বলতে হয়। আমি কথায় যত চালু, লেখায় ততটা আনাড়ি। এটি বিনয় নয়, বাস্তবতা। ব্যক্তিগতভাবে যারা আমাকে জানেন, তারা এটি ভালো বুঝবেন।
এই লেখার ফাঁকে মেয়েদের জ্ঞানবুদ্ধি সংক্রান্ত সালাম আজাদী ভাইয়ের সাম্প্রতিক লেখাটার ব্যাপারে যে কনক্লুসিভ আলোচনা করেছি তা যদি লেখায় আনতে যাই তাহলে এই রাতে আর ঘুমাতে হবে না। একজন বলছিলো, তার ধারণায় মেয়েদের জ্ঞানবুদ্ধি আসলেই কম। আমি তাকে কনভিন্স করেছি, এই ধারণা ভুল।
যাহোক, দোয়া করবেন। জাযাকাল্লাহ।
মেয়েদের জ্ঞানবুদ্ধি কম থাকা সংক্রান্ত হাদীসের কথাগুলোকে ইউজুয়্যাল সিম্পল রেটরিক হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। কথাটা উসুলি নয়, উপদেশমূলক। এ সংক্রান্ত আমার একটা কনসেপ্ট আছে। তা নিয়ে অন্য একদিন অন্য কোনো লেখায় আলোচনা করা যাবে।
Nusrat Rahman: আচ্ছা, চিন্তা শেয়ার করার জন্য ফেইসবুক কেমন মনে হয় আপনার? (সময় পেলে জানায়েন কোন এক সময়)
Mohammad Mozammel Hoque: কাজের ফাঁকে সোশ্যাল মিডিয়া, কিংবা নিছক প্রচারণার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া – এতটুকু হলে ঠিক আছে। একে সিরিয়াসলি নিলে ঠকতে হবে। আমার লেখা যারা মোর ফ্রিকোয়েন্টলি লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করে তাদের কারো কারো সাথে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে অনেক হতাশ হয়েছি। মানুষকে চেঞ্জ করার জন্য ম্যান-টু-ম্যান, হার্ট-টু-হার্ট কাজ করতে হবে। এর বিকল্প নাই।
Nusrat Rahman: আমারও তাই মনে হয়। পরিচিতি বাড়াতে পর্যন্ত ফেসবুক ঠিক আছে। পরিবর্তন তো আর এক কথায় আসে না।
*****
চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটে নগ্ন নারীর অশালীন উন্মুক্ত দেয়াল চিত্র
রাহনুমাকে টিচারের বাসায় পৌঁছিয়ে দিয়ে ভাবছি, দু’ঘণ্টা কী করবো? চবি ক্যাম্পাস হতে আসার সময়ে পানি বোধ হয় বেশি খেয়েছিলাম। ওয়াশ রুমে যাওয়ার তাড়া অনুভব করছিলাম। কাছেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট। সেখানে গেলাম। দেখলাম, দুজন কর্মচারী গেট খুলছেন। পরিচয় দিয়ে ওয়াশ রুম ব্যবহার করলাম। এরপর একটু ঘুরে ফিরে দেখলাম। ভালোই লাগলো।
চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজকে যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আত্মীকরণের কথা উঠে তখন দলীয় বিবেচনায় আমরা এর বিরোধিতা করেছিলাম। জিয়া হায়দার স্যার যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে চট্টগ্রাম শহরে স্থানান্তরিত করার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলেন তখন আমরা মানে বিএনপি-জামাত মিলে যে সাদা দল তার তরফে এর ঘোরতর বিরোধিতা করা হয়। এর কারণ ছিলো রাজনৈতিক। আমাদের আশংকা ছিলো চট্টগ্রাম শহরে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’একটা ফ্যাকাল্টিও শিফট হয়ে যায় সেখানে তেমন রাজনৈতিক প্রভাব গড়ে তোলা ও তা বজায় রাখা কঠিন হবে। এখন, এত আফসোস করি। ইস্, পাহাড়তলীর সে সময়কার খালি জায়গাগুলো নিয়ে অন্তত দুই-একটা ফ্যাকাল্টি হলেও যদি শিফট হতো তাহলে সবারই কতো সুবিধা হতো…!
সে যাই হোক, চারুকলা ইনস্টিটিউট ঘুরে ফিরে দেখছিলাম। সদ্য সমাপ্ত বার্ষিক প্রদর্শনীর ছবিগুলো দেখলাম। পাহাড়ের ঢালে গড়ে উঠে এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির পুরো পরিবেশটাই বেশ নান্দনিক। জায়গায় জায়গায় সিঁড়ি, পাহাড়ের ঢালু দিকগুলো কোথাও খোলা, কোথাও তা চওড়া পুরো গাঁথুনি দেয়াল দিয়ে রিটেইন করা। চমৎকার এই ফাইন আর্টস ক্যাম্পাসের পশ্চিম দিকে এ রকম একটা ঢালের ইটের গাঁথুনির মাঝ বরাবর উপরে-নিচে ইঞ্চিখানেকের মতো ফাঁক। সেটির উপরের দিকে এক জায়গায় কিছু আগাছা বের হয়েছে। মাঝ বরাবর একটা জায়গাতেও কিছু হালকা-পাতলা আগাছা জন্মেছে।
কে করেছে, জানি না, এই দুই গোছা আগাছাকে ইনটেক্ট রেখে পুরো হেলানো দেয়াল জুড়ে বিরাট একটা পেইনটিং করা হয়েছে। খুব সিম্পল। কিন্তু ভয়াবহ রকমের অশ্লীল। একটা নারী দেহ। নগ্ন। মাঝখানের আগাছার জায়গাটাতে যোনির ভাজ আঁকা হয়েছে। ওই ছোট্ট আগাছাগুচ্ছকে যোনিকেশ হিসাবে মনে হচ্ছে। উপরের আগাছাগুচ্ছ একটু বড়। ওগুলোকে মাথার চুলের মতো মনে হচ্ছে। মাঝারি সাইজের স্তন, বোঁটাসহ চিত্রিত। লাস্যময়ী ভঙ্গিমা। ফেসিয়াল এক্সপ্রেশান নাই।
একবার ভাবলাম, ছবি তুলি। পরে চিন্তা করলাম, এ ছবি তো দেয়া যাবে না। বর্ণনাটাই তো অনেক বেশি…।
হ্যাঁ, যারা এগুলো আঁকেন, যারা এসব এনজয় করেন, এপ্রিশিয়েট করেন, তারা বলবেন, ‘ও আপনার দৃষ্টিভংগীর ব্যাপার’।
কথাটা ঠিকই। যারা সিগারেট খান তারা তা এনজয়ই করেন। অতীব ভালো মানুষকেও দেখেছি, এমনকি আমার বাবাও প্রথম জীবনে সিগারেট খেতেন। তিনি এ জন্য পরবর্তী সারা জীবন শ্বাসকষ্টে ভুগেছেন। আমার মা পানের সাথে তামাক পাতা, লোকাল ভাষায়, সাদা পাতা খেতেন। ওনাদের কাছে ওগুলোতে কোনো সমস্যাই ছিলো না। বরং না খেলে খারাপ লাগতো। চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ করে কক্সবাজারের লোকেরা খুব ঝাল খায়। তাদের কাছে যা খুবই নরমাল স্বাদের ঝাল, অন্যদের কাছে তা মুখ পোড়া যাওয়ার মতো ভীষণ ঝাল, অখাদ্য।
আমরা তো খাওয়া শুরু করে তরকারীতে লবন কম হয়েছে মনে হলে একটু আলগা লবন নেই। আমার শ্বশুড়বাড়ী মাদারীপুরের লোকেরা ভাত খাওয়া শুরু করা আগেই প্লেটের মাঝখানে এত্তগুলো লবন নিয়ে মাখাতে থাকবে। শিক্ষিত অশিক্ষিত ধনী গরীব নির্বিশেষে সব লোকদেরকে আমি এটি করতে দেখেছি। আমরা গরুকে পানি খাওয়ানোর সময়ে ছোট বেলায় এভাবে বালতির মধ্যে লবন মিশাতাম। এই উদাহরণের কথা বললে আমরা বউ ভীষণ রাগ করে। সাংঘাতিকভাবে রেগে যায়।
ইউরোপ-আমেরিকাতে বিয়ের ইজাব-কবুল হওয়ার পর পরই নব দম্পতি সবার সামনে পরষ্পরকে লিপ-কিস দেয়। চুমুটা তাদের কাছে যৌনতা না। হলেও সেটা তাদের কাছে সহনীয়। আমরা কি তা ভাবতে পারি? আরব অঞ্চলে পুরুষেরা সামাজিক অনুষ্ঠানে পরষ্পরের গালে চুমু দেয়। এটি তাদের কাছে নির্দোষ। এটি আমাদের কাছে অশালীন, নিন্দনীয় ও অকল্পনীয়। প্রসংগত উল্লেখ্য, এই কুপ্রথার কোনো বিবরণ আমি কোরআন-হাদীস-সিরাতে পাই নাই।
পোষাক কি শুধু আবহাওয়াগত কারণের ব্যাপার? ‘মুসলিম মেজোরিটি’ ইত্যাদি ফালতু কথা আমি বলি না। এটি ইসলাম-অনৈসলামের ব্যাপার না। নিছক ধর্মীয় কোনো সমস্যাও না।
সমস্যাটা মানবিকতার। ইস্যুটা মূল্যবোধের। নৈতিকতার।
এ পর্যায়ে আমার প্রগতিশীল বন্ধুরা বলবেন, আপনার ‘নেতিবাচক’ মানসিকতা পাল্টান। দেখবেন কোনো সমস্যা নাই।
হ্যাঁ, বিষয়টা সত্যিই মন-মানসিকতার ব্যাপার। তো, অজন্তা-ইলোরার গুহাচিত্রের মতো, সম্মানিত ফাইন আর্টিস্টরা, আপনারা নর-নারীর সঙ্গমচিত্র ও মূর্তি এখনো বানান নাই কেন? অথবা, বানালেও বা আঁকলেও, এমন মূর্যাল চোখে পড়ে না কেন? অথবা, পাবলিকলি এ ধরনের ‘স্বাভাবিক সৌন্দর্য্যের’ ফেরি করেন না কেন? আপনাদের কি কোনো গোপন এজেন্ডা আছে? এনি হিডেন মিশন?
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাকেই ফোকাসড রাখার জন্য যে কোনো ধরনের যৌনতার চর্চা যথাসম্ভব রোধ করে রাখতে হবে। শিক্ষার বিষয় অর্থাৎ ডিসিপ্লিন যা-ই হোক না কেন, এটি শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মূলনীতির অন্তর্ভূক্ত। অবশ্য শিক্ষাটা যদি যৌনতা সংশ্লিষ্টই হয়, তাহলে ভিন্ন কথা। যেমন, মেডিকেল ফিজিওলজি। সেখানেও কিছু এথিকস মেনে চলা হয়। আমি জয়ী হওয়ার শত ভাগ গ্যারান্টি দিয়ে যে কোনো পর্যায়ে যে কোনোখানে যে কারে সাথে এ বিষয়ে ডিবেট করতে পারবো। I will be more than happy if anybody engage with me on this issue. Decency guaranteed.
বাউলদের মতো, যৌনতাই যাদের মানবিকতা ও ধর্ম তাদের কথা আলাদা। আমাদের চারুকলা ইনস্টিটিউটে ‘শখের বাউল’ থাকতে পারে। কিন্তু সেখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের ইনস্টিটিউটে বাউলবাদ চর্চা করেন না, এমনটাই আশা করি।
কেউ বলতে পারেন, এগুলো তো আগাছা। আপনার চোখ খারাপ। তাই সেগুলোকে যোনিকেশ মনে করছেন। বা, আঁকা স্তনদ্বয়কে মাতৃস্তনই মনে করতে পারেন।
এ ধরনের কথা যারা বলেন বা বলতে পারেন, তারা নৈতিকতার যে মানকে নিজেদের জন্য গ্রহণ করেছেন তা নিরপেক্ষতার পক্ষ বা অজ্ঞানতার জ্ঞানের মতো আদতে একটা ভোগাস জিসিস। আসলে তারা ইতিবাচক নৈতিকতার কোনো ধারই ধারেন না। এমনকি পাশ্চাত্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখবেন, সেক্সুয়ালি এক্সপ্লিসিট বলে একটা ব্যাপার আছে, যৌনতার একটা স্কেলকে মেনে চলা হয়। তারা কনস্ট্যান্টলি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর রেটিং করেন। কতোটুকু কোথায় এপ্লিকেবল হবে, তা নির্ধারণ করেন ও মেনে চলেন। যা কিছু করে, তা বলে কয়ে করে। সোশ্যাল ও লিগ্যাল কনসেনশাসের ভিত্তিতে করে।
সমস্যা হলো, আমরা পাশ্চাত্যকে মেনে চলি ফন্দীবাজের মতো। চাইছিলাম, অন্ধের মতো মেনে চলি, এইভাবে বলি। বাস্তবতা কিন্তু তার বিপরীত। অন্ধের মতো মেনে চললে তারা যা যা ভালো করেন, তাও আমরা করতাম। আমাদের উদার ও প্রগতিশীল পাশ্চাত্যপন্থীরা ভেতরে ভেতরে অত্যন্ত দুর্বল, বলতে পারেন মানসিক রুগী। কষ্ট করে স্বাস্থ্য তারা অর্জন করতে অনিচ্ছুক। সংক্রমিত ব্যধিকেই স্বাস্থ্য করে তুষ্ট।
২.
এতক্ষণ চারুকলার ‘বিরুদ্ধে’ যা বললাম তাতে আমার ধর্মপ্রাণ ভাই-বেরাদরের অনেকেই প্লিজড ফিল করবেন। এসব বিরক্তিকর অবুঝ দ্বীনদারেরা বুঝে না, এসব ফাইন আর্টসে আমরা যাই না বলেই অশ্লীল ছবি ও মূর্তি ওখানে ঝুলতে থাকে। মুহম্মদ যদি ক্বাবায় না ঢুকতো পৃথিবীর প্রথম প্রার্থনা গৃহে এখনো পর্যন্ত লাত, উযযা আর হোবলের মতো দেবতাদেরই পূজা-অর্চনা চলতো। এ কথার মানে হলো, চারু ও কারু কলার মতো একটা দারুণ সাবজেক্টকে অবহেলা করা, এড়িয়ে যাওয়া মোটেই ঠিক হচেছ না। এর অপ্রতিরোধ্য মানবিক আবেদনকে অবহেলা করা যাবে না। সঠিক অর্থাৎ গঠনমূলক ধারায় এর চর্চা অব্যাহত রাখা শুধু নয়, এর বিকাশ সাধন করতে হবে। অতএব, এই ডিসিপ্লিনের লোকেরা ছবি আঁকবে, মূর্তি বানাবে, নকশা করবে। এসব খুবই ন্যাচারাল।
নগ্নতা ও যৌনতাও ন্যাচারাল। কিন্তু তা প্রাইভেট। ন্যাচারকে আমরা সব জায়গায় মানি, তা নয়। আমাদের সুবিধামতো মাঝে মাঝে স্থান বিশেষে ন্যাচারকে আমরা ম্যানিপুলেট করি। এটাই সভ্যতা। কিংবা, সভ্যতার দাবী। কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে, নৈতিক মান দিয়ে এসব বুঝতে হবে। সবখানে আইন খুঁজলে হবে না। অবশ্য, পাবলিক নুডিটি অবশ্য আইনেরও খেলাফ।
৩.
ফাইন আর্টস আমার খুব ভালো লাগে। ইসলামী ছাত্রী সংস্থার এক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সভানেত্রীর মেয়ে চবিতে ফাইন আর্টসে ভর্তি হয়েছিলো। মেয়েটা এখন ঢাকায় একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ক্রিয়েটিভ টিচার হিসাবে চাকরী করে। ওই ছাত্রীকে ফার্স্ট ইয়ার হতে শেষ পর্যন্ত আমরা পরিবারের সদস্যের মতো দেখাশুনা করেছি। আমাদের ড্রয়িং রুমে প্রায় আড়াই হাজার বইয়ের ফাঁকে একটা মাত্র ছবি আছে। সেটা ওর আঁকা। আমার বাচ্চাদের কাছে ‘লামিয়া আপু’ হলো আইকন, অল গুড টাইপের একটা ব্যাপার।
চবি চারুকলা বিভাগের মেধাবী সব সিনিয়র স্যারদের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যক্তিগতভাবে ভালো মুসলমান। অন্তত আমি যেভাবে দেখেছি। চারুকলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আমি ওভারঅল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখি। আশা করি, এমন উদ্ভট সৃষ্টিশীলতার ব্যাপারে তারা যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Abdul Alim Masud: মুসলিম সালতানাতগুলো ধ্বংসের পিছনে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করতো খ্রিস্টান ও হাসান বিন সাবাহর অনুসারীদের আঁকা তৈলচিত্র। যে তৈলচিত্রে অর্ধউলঙ্গ নারীদের ছবি আঁকা থাকতো। সেই সময় তৈলচিত্রগুলো আঁকতো ভণ্ড নবী হাসান বিন সাবাহর অনুসারীরা। বর্তমানে তা আঁকছে মুসলিম ঘরে জন্ম নেয়া যুবকেরা।
আমরা অনেকে চারুকলাতে পড়াশুনা করাকে নিরুৎসাহিত করি কিন্তু বছরের শুরুতে ক্যালেন্ডার ছাপানোর জন্য ক্যালিওগ্রাফি খুঁজি। কিন্তু কখনো ভাবি না, এই ক্যালিওগ্রাফিগুলোও চারুকলার একটা অংশ।
*****
চিটাগাং কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি: চট্টগ্রাম শহরের অন্যতম বিনোদন স্পট
চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত চারুকলা ইনস্টিটিউটের পাশেই কমনওয়েলথ ওয়ার সেমিট্রি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর যেসব সৈনিক বার্মা ফ্রন্টে আহত হয়েছিলেন তাদের কাউকে সিলেটে কাউকে কুমিল্লায় কাউকে চট্টগ্রামে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিলো। যারা মারা গেছে তাদের এই তিন জায়গায় ক্ববর দেয়া হয়। তখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছিলো না। আন্দরকিল্লাহ তে অবস্থিত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে যারা মারা গেছেন এমন ৭৫০ জন মুসলিম, খৃষ্টান, হিন্দু ও কিছু জাপানী বন্দীকে এখানে সমাহিত করা হয়। পাহাড়ের ঢালে জায়গাটা খুবই সুন্দর ও পরিপাটি। একটা অফিস এর ব্যবস্থাপনা করে। ৪জন মালি আছে।
অনেক ছোট থাকতে একবার গিয়েছিলাম। সারি সারি ক্ববর। মুসলমানদের ক্ববরের উত্তরে শিয়রের দিকে এবং অমুসলিমদের ক্ববরের দক্ষিণে পায়ের দিকে ফলক আছে। ওসব পড়লে ভেতর থেকে কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠে। কোনো কোনো ফলকে, বিশেষ করে খৃষ্টানদের ক্ববরে পরিবারের সদস্যদের হৃদয়গ্রাহী বাণী উৎকীর্ণ আছে। পুরো পরিবেশটাই অদ্ভূত রকমের আধ্যাত্মিক ও আবেদনময়। মানবিক।
না, মানবিকতার কথা বলার জন্য এই নোট নয়। এটি ভ্রমণ কাহিনীও নয়। আজ রাহনুমাকে কোচিংয়ে দিয়ে চারুকলা ঘুরে পাশের ওয়ার সেমিট্রিতে গেলাম। তখন দুপুর পৌণে এগারটা। যা দেখলাম, তা অমানবিক।
প্রেমিক-প্রেমিকারা ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে। সেলফি তুলছে। ঘনিষ্ট হয়ে বসে আসে। এক গ্রুপ ছেলে-মেয়ে দেখলাম গ্রুপে সমস্বরে গান গাইছে। ওখানকার এক মালির সাথে অনেক কথা বললাম। মধ্য তিরিশের মতো বয়স হবে। সে আমাকে একটা মুসলিম ক্ববরের ফলকে উৎকীর্ণ কোরআনের আয়াতের খণ্ডাংশ দেখিয়ে বললো, এই লেখাটা আরবী। আমি হিন্দু হলেও বুঝতে পারছি কোনো ধর্মীয় বাণী এখানে লেখা আছে। বিশ্বাস করতে আপনার কষ্ট হবে, এর উপরে বসে ছেলে-মেয়েরা গল্প করে, ছবি তুলে।
চিটাগাং শহরে ডেটিংয়ের অন্যতম উৎকৃষ্ট জায়গা এই কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি। জুতা খুলে আমি পুরো জায়গাটা হেটে হেটে দেখলাম। ক্ববরের উপর দাঁড়াতে আমার খারাপ লাগে। তাই প্রথমেই জেনে নিয়েছি, ডেড বডিগুলো কোনদিকে আছে। ফলক দেখার জন্য যেদিকে দাঁড়াতে হয় তা ডেড বডির উপরের দিকে। এই অসুবিধার জন্য সবগুলো ফলক ভালো করে পড়া হয় নাই।
দেখেছি, যাদের আমরা তুচ্ছ অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত মনে করি, তাদের জীবনবোধ অনেক গভীর। সেই কর্মচারী ছেলেটি গাছের পাতা কুড়ানো আঁকশি হাতে আমাকে বললো, এই ক্ববরস্থান তিনটা বিষয়ের কথা বলে। তার ভাষায়, জন্ম, মৃত্যু ও কর্ম। সারি সারি ক্ববর দেখিয়ে সে বললো, স্যার, এরা সবাই তো জন্ম গ্রহণ করেছিলো। তারা সবাই মৃত্যু বরণ করেছে। রেখে গেছে তাদের কর্ম। মনে হলো, এই সিমেট্রি গারডেনারের যে জীবনোপলব্ধি তা কতো গভীর। আমরা অনেক কিছু জানি, অনেক বড় বড় ডিগ্রী অর্জন করি। কিন্তু, প্রায়শ: জীবনের সহজ কিন্তু কঠিন সত্য তা সব কনফিউজ করি।
ভাবলাম, এরা নন মুসলিম। মানে বৃটিশরা। তারা ক্ববরকে কতো সুন্দর সাজিয়ে রাখে। আর আমরা মুসলমানেরা ক্ববরস্থানকে জংগল বানিয়ে রাখি। কাউকে ক্ববর দেয়ার জন্য ক্ববরস্থানের অংশ বিশেষ পরিষ্কার করি। ক্ববরকে পাকা করা, সেখানে সেজদা দেয়া ইত্যাদি নিষেধ। কিন্তু ক্ববরস্থানকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে অসুবিধা কী?
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা ক্ববর যেয়ারত করো। এটি মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সত্যিই, জন্মের চেয়ে বড় বিষ্ময় আর মৃত্যুর চেয়ে বড় সত্য পৃথিবীতে নাই। ক্ববরকে চিহ্নিত করে রাখার মধ্যে কোনো দোষ নাই। এরা কী চমৎকার করে এটা করেছে। আদর্শের ‘ফাল পাড়তে থাকলে’ আর মিথ্যা অহমিকার দিবা স্বপ্ন দেখতে দেখতে জীবন কাটালেই সভ্যতা গড়ে উঠে না। সভ্য আচরণ করতে শিখলেই সভ্যতা গড়ে তোলা যায়।
কবর পূজা করতে সংগত কারণেই নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু ক্ববরস্থান সংরক্ষণের জন্য তো তাগাদা দেয়া হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংগ – এই হাদীস কি ক্ববরস্থানের জন্য প্রযোজ্য নয়? কোনো ক্ববরস্থানে কাদেরকে কোথায় দাফন করা হয়েছে তার হদীস রাখা, রেজিস্টার ও ম্যাপ ব্যবহার করাতে অসুবিধা কী? আমি যদ্দুর জানি, এতে ধর্মের কোনো বাঁধা নাই। সমস্যা হলো আমাদের মন-মানসিকতা ও মূল্যবোধের। অবশ্য, ডিজিটাল এই জমানায় যখন ডেড বডির সাথে কিংবা দাফন কার্যের সেলফি দেয়া হয় তখন এখানে ‘একটু-আধটু’ এফেয়ার টাইম কাটালে তেমন অার অসুবিধা কী?
আসার সময়ে দেখলাম একজন সাদা চামড়ার বয়স্ক মানুষ সিমেট্রি ভিজিটে আসছেন। আমি উনার সাথে কথা বললাম। ভদ্রলোক অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেন। প্রসংগক্রমে এখানে লোকালরা যা কিছু করছে তা নিয়েও দুঃখ প্রকাশ করলাম। প্রত্যুত্তরে তিনি যা বললেন তা তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বললেন, আমার ক্ববরের উপরে বাচ্চারা খেলাধূলা করলে তাতে আমার আপত্তি নাই। বাচ্চারা এটি করতেও পারে। বড়দের ব্যাপারে তার কথা হলো, তাদের তো বিবেক বুদ্ধি থাকার কথা। তারা এমন কাজ কেন করবেন যা দৃষ্টিকটু।
আমরা ছুরতে বড়রা আসলে কতটুকু বুদ্ধি বিবেচনায় বড় …?
*****
কাপড়ের দোকানে ডল সাজিয়ে রাখার সিস্টেম
৭১ জনের ব্যাচে রাহনুমার প্রাইভেট পড়া শেষ হবে দুপুর ১২টায়। এখনো হাতে পৌণে এক ঘণ্টার মতো সময় আছে। ভাবলাম একটা ছোট সাউন্ড বক্স কেনা দরকার। চলে আসলাম চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে অভিজাত মার্কেট ‘সানমার ওশান সিটি’তে। এ ধরনের জায়গায় আসলে ভাবি, যাদেরকে আইডল-আইকন হিসাবে গ্রহণ করে আমরা আদর্শ চর্চা করি তাদের জীবনমান আমাদের তুলনায় কতো প্রিমিটিভ ছিলো।
আমরা যারা ইসলামী আদর্শের কথা বলি, তারা কি এটা বুঝতে চেষ্টা করি? যে, আল্লাহর রাসুলের সাথীদেরকে এনে যদি এ ধরনের একটা মার্কেটে ছেড়ে দেয়া হয় তাঁরা কী ভাববেন? বেয়াদবি হলে আল্লাহ মাফ করুন, আমার তো মনে হয়, তাঁরা বেহেশত বলে যা কল্পনা করেছেন, সাময়িকভাবে হলেও এমন অত্যাধুনিক জায়গাকে তাদের সে রকমের মনে হবে। আল্লাহর রাসূল (স.) মিরাজে গিয়ে যেহেতু সব দেখে এসেছেন, উনার কথা ভিন্ন।
তো, প্রযুক্তিগত দিক থেকে অকল্পনীয় এই যুগে আমরা যারা ‘মধ্য যুগীয় আদর্শ’ পুনঃপ্রচলনের চেষ্টা করছি তাদের দিক থেকে এই আপত্তি কিংবা বিষ্ময়ের ডিফেন্সটা কী? কেন ১৪০০ বছর আগের আদর্শ এখন চলবে?
২.
হ্যাঁ, চলবে। আলবৎ চলবে। এই আদর্শ না হোক, যে আদর্শই চলুক না কেন, তা পুরনো। আদর্শমাত্রই অতি পুরনো। এমনকি ইসলামও সে সময়কার কাফের-মুশরিকদের কাছে ‘পুরনো’ই ছিলো। ‘আসাতি-রুল আউয়ালিইন’ হিসাবে তারা ঠাট্ট-মশকারি করতো।
ইসলাম বা ধর্মের কথা বাদ দিয়ে চোখ বুজে লটারীর টিকেট বা কুপন ড্র করার মতো যে কোনো বিষয়ে যে কোনো একটা আদর্শকে পিক করেন। দেখেন, তা অভিনব, না পুরনো। দেখবেন, উপস্থাপনের ধরন নতুন হতে পারে, জিনিস কিন্তু পুরনো। বোতলই কেবল নতুন, পানীয় পুরনো।
প্রযুক্তিগত যত পরিবর্তনই হোক না কেন, একটা দিক থেকে মানুষ বরাবরই সমান। সেটা মানবিকতা। নৈতিকতা যার ভিত্তি। বিজ্ঞানের ভিত্তি যে প্যারাডাইম Principle of Uniformity of Nature (PUN) এর মতো নৈতিকতার ভিত্তি ও মূল জায়গাটুকুও চিরন্তন, শ্বাশ্বত। এমন কি যারা আপেক্ষিতার কথা বলে, ওই ‘আপেক্ষিতা’ও সিরিয়াসলি নিলে রিয়েলি আপেক্ষিক নয়। যাহোক, আজ আর Liar Paradox-এর আলোচনার দিকে যাবো না। আজ একটা মার্কেট ব্যবস্থাপনার কথা বলবো।
৩.
বাংলাদেশের মার্কেট ব্যবস্থাপনার অনেক ইতিবাচক দিক আছে। আজ একটু নিন্দার কথাই বলবো।
বিষয়?
কাপড়ের দোকানে মডেল হিসাবে সাজিয়ে রাখা অশালীন dollগুলো। কী দৃষ্টিকটু!! বাপ রে বাপ!!!
দেখলাম একটা ইয়াং ছেলে একটা মেয়ে-ডলের সালোয়ার খুলছে। কেউ বা সেটার বুকের দিকে টাইট করার জন্য পেছনের দিকে পিন মারছে। বুক উচিয়ে থাকা এইসব ডল সাজিয়ে না রাখলে কি ব্যবসা কমে যাবে? বিক্রী কম হবে? লাভ কম হবে?
এমনও তো নয় যে, কাপড়ের ব্যবসায়ীরা খৃষ্টান। খৃষ্টানেরা পাশ্চাত্যে এ ধরনের চলাফেরা ও দেখায় অভ্যস্ত। হ্যাঁ, দেখতে দেখতে আমাদেরও মানিয়ে যাবে। যেভাবে গলির মোড়ে নেংটা পাগল বা পাগলিকে দেখতে দেখতে মানিয়ে যায়। বিশ্বাস করুন, ন্যুডিস্ট সমাজে নেংটো দেখার অত উৎসাহ থাকে না। rational experience থেকে বুঝছি। [রেশনাল এক্সপেরিয়েন্স ‘বিষ পানে মৃত্যু’র জ্ঞানের মতো ব্যাপার।]
তাহলে কি আমরা দিন দিন নেংটো হয়ে যাবো? আফসোস, বস্ত্র পরিধান হলো মানব সভ্যতার অন্যতম সেরা অবদান। সে জন্যই তো বস্ত্রের কেনা-বেচা, বস্ত্র বিতান। কিন্তু ভাবখানা এমন, বিশেষ করে মেয়েদের পোষাকের ক্ষেত্রে, যেন কমাতে পারলেই ভালো। তো, অত টেকনিক করে না কমিয়ে উদোম করে রাখলেই অসুবিধা কী? সমস্যাতো যে দেখবে তার। ‘ভালোদের’ তো কোনো ‘প্রতিক্রিয়া’ হয় না। আর ‘প্রতিক্রিয়া’ অর্জনই যদি লক্ষ্য হয় তাহলে ‘ক্রিয়া’তেই বা সমস্যা কী? সেই ‘মুক্ত ক্রিয়া’তে ‘উপযুক্ত’ আগ্রহীদের না করার গ্রহণযোগ্য যুক্তি কী?
কেউ বলতে পারে, কাপড়ের দোকানের ডল দেখে এত কথা কেন ? আপনার কি কোনো ‘অসুবিধা’ হইছে? না। আমার অত সহজে ও পারমিশান ছাড়া যত্রতত্র ‘অসুবিধা’ হয় না। বয়স, মন-মানসিকতা ও রুচি – এসব কারণে। আজকে পুতুলের যে বুক-খোলা সাজ, আগামীকাল তা ‘জ্যন্ত পুতুলেরাই’ গণহারে আমল করা শুরু করবে। নদীর পাড়ের ভিটার মাটিতে কম্পন দেখেই বুঝা যায়, কী ঘটতে যাচ্ছে। তাই সামাজিক ব্যাপারগুলোকে চেক এন্ড ব্যালেন্সের মধ্যে রাখতে হয়।
একবার একজন সত্যিই এ রকম একটা সাজানো পুতুল-নারীর সামনে দাঁড়াইছে। একটু পরে ‘পুতুল’টা কথা বলে উঠলো, ‘এক্সকিউজ মি স্যার! আপনাকে কোনো হেল্প করতে পারি’। সে লোক তো চমকে উঠছে …! কী দরকার এসব জড় বা জীবন্ত শোপিসের। নারীদের কি খারাপ লাগে না? তাদের জন্য কি বিকল্প কিছু করা যায় না? দেখবেন, যতো বিকল্পই করেন, কোনো না কোনো ফর্মের রূপজীবী চলছে। বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা না থাকাই যদি রূপজীবীতার কারণ হতো তাহলে উন্নত বিশ্বে তা সব বন্ধ হয়ে যেতো। কিন্তু তা হয় নাই। কারণ অন্য জায়গাতে। সে আলোচনা বিশ্লেষণ অন্য সময়ে করা যাবে। এর রিমেডে নিয়ে বরং আজ বলি।
আইন লাগবে, সামাজিক প্রতিরোধ লাগবে। তার আগে যথেষ্ট পরিমাণে বলাবলি করতে হবে। উপরের গল্পটা আজকে সন্ধ্যায় একজন বললো। যেসব দোকানীরা এরকম পুতুল সাজায় তাদের অধিকাংশ মার্কেটে নামাজের আযান দিলে মসজিদে দৌড়ায়। কর্মচারীরা নামাজ পড়ার ততটা সুযোগ না পেলেও অধিকাংশ দোকানীরা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে।
যদি এমন হতো, পুতুল না সাজালে সরকার জরিমানা করবে বা ব্যবসা হবে না তাহলে এক ধরনের বাধ্যবাধকতার অজুহাত দেয়া যেতো। স্পষ্টত:ই এটি সামাজিক সমস্যা। মূল্যবোধের সমস্যা। নৈতিকতার সমস্যা।
অর্থনৈতিক নৈতিকতা, সামাজিক নৈতিকতা, ধর্মীয় নৈতিকতার, বুদ্ধিবৃত্তিক নৈতিকতা ইত্যাদির মতো যৌন নৈতিকতাও চর্চার বিষয়, প্রচলন থাকার বিষয়। সমাজের সব লোকেরা নৈতিকতা বুঝে নৈতিক আচরণ করে এমন নয়। অধিকাংশ মানুষ পিঁপড়ার সারির মতো গা ভাসিয়ে চলে।
৪.
এসব বিষয়ে কেউ কথা বলে না। আদর্শবাদীরা যখন নামীদামী মার্কেট বা রেস্তোরাতে যখন যায় তখন যেন তারা মাথার টুপি খুলে পকেটে রাখার মতো নৈতিকতাকে হৃদয়ের ভাঁজে ভাঁজ করে ঢুকেন। ভাবখানা এমন, এতো খারাপ জায়গা। যে যা পারে করুক। কাম সেরে কোনো মতে কেটে পড়তে পারলেই হলো। এ ধরনের গাছাড়া ভাবের কারণে এসব কমন প্লেসে যত সব বাজে কাজগুলো অবুঝ পোলাপাইন ইচ্ছামতো করে যেতে পারে। সবাই ভয় পায়। আমার তো মনে হয়, প্রকাশ্যে কেউ কাউকে জোরাজুরি না করে জড়াজড়ি করলেও কেউ কিছু বলবে না। বরং, আরামসে ভিডিও করবে। ছবি তুলবে। এরপর ফেইসবুকে ‘ধর্ম-যুদ্ধ’, না হয় ইউটিউবে ‘কর্ম-যুদ্ধে’ লিপ্ত হবে।
জাতি হিসাবে আমরা কেমন যেন হিপোক্রেট হয়ে পড়ছি। এই যে বললাম, “আমরা হিপোক্রেইট হয়ে পড়ছি” – এর দ্বারা অকালপক্ক ফেইসবুক বুদ্ধিজীবীরা মনে করবে, ও তো ‘ওরা’, ওই যে অমুক পার্টি যারা করে, তারা। খারাপরা। আমি তো ভালো। জীবনে কোনোদিন এ ধরনের সোশ্যাল নর্মগত প্রবলেমের সম্মুখীন হয়ে প্রতিবাদ করেছেন কি না, তার উপর নির্ভর করবে, আপনি হিপোক্রেট, নাকি সত্যিকারের ঈমানদার।
সত্য কথা বলা যদি সর্বোত্তম জিহাদ হয় তাহলে তা আপনার আশেপাশে এ মুহূর্তে যা কিছু দেখছেন তা নিয়ে নয় কেন? বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তনের জন্য আপনি ক্রমধারা অবলম্বন করবেন। কিন্তু সমাজের যেসব প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধ কিছু বেকুব ফ্যাশন ডিজাইনার সূক্ষ্মভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে সে সব বিষয়ে অন্তত ভয়েজ রেইজ করবেন না কেন?
আর হ্যাঁ, ফ্যাশন ডিজাইনের কাজগুলোতেও আদর্শবাদীদের ঢুকতে হবে। ইনফ্যাক্ট সেগুলোতে কোয়ালিটি দিয়ে উঠে আসতে হবে। নামকরা লাইফ স্টাইল ম্যাগাজিন emel সম্পাদক সারা জোসেফ আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন ব্যক্তি। তার মতো কোনো নারীকে যদি পেতাম, অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করতাম। এই কথার উল্টোপিঠের কথা হলো, অধিকাংশ আদর্শবাদী নারীকে দেখেছি, আদর্শ তাদের ফ্যাশন। পেশন অব লাইফ নয়। পর্দা ইত্যাদি যেন way to be appreciated অথবা, fashion অথবা নিছকই অভ্যাস। মানবিক মূল্যবোধ ভেতরে নাই, পর্দার উদ্দেশ্যকে যে প্রতিনিয়ত সম্ভাব্য ভিন্ন উপায়েভ ভায়োলেট করে তার পর্দার করার সেঙকটিটিটা আর থাকে না।
৫.
শেষ কথা হলো, ময়লাকে ময়লা মনে করে যতোই এড়ানোর চেষ্টা করবেন, ময়লা পাঁকে ততই আমরা জড়িয়ে পড়বো। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বিনোদনের মতো ফ্যাশন ডিজাইনের মতো আপাত তুচ্ছ বিষয়ের ক্ষেত্রেও এটি সত্য। মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে। সে জন্য জোর খাটানো যাবে না। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত কল্যাণকর ব্যবস্থা ও মূল্যবোধকে কেউ ভেংগে দিতে বা দুর্বল করতে চাইলে রাসুলুল্লাহর (সা) হাদীস মোতাবেক তা ঠেকাতে হবে।