শুরা ব্যবস্থা

আমরা জানি, আল্লাহ তায়ালা পারস্পরিক সব বিষয়ে পরস্পরের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বলেছেন। এতে মনে হতে পারে, অধিকাংশের পরামর্শ তথা মেজরিটি অপিনিয়নকে গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সীরাতের মধ্যে আমরা এর পক্ষে অনেক উদাহরণ দেখতেও পাই। অপরদিকে কোরআনের মধ্যে যত জায়গায় ‘অধিকাংশ’ (আকছার) শব্দটা এসেছে প্রত্যেকটাতেই সেটাকে নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি রাসূলকে (সা) আল্লাহ তায়ালা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন– হে নবী, আপনি যদি অধিকাংশের কথা অনুসারে চলতে থাকেন তাহলে আপনি বিভ্রান্ত হয়ে যাবেন।

এই আপাত বিরোধের পেছনে সামঞ্জস্যতার বিষয়টা বুঝতে হবে। যেসব বিষয় নীতিগত ও মৌলিক সেসব বিষয়কে গুণগতভাবে দেখা হয়েছে। আর যেসব বিষয় প্রায়োগিক তথা বাস্তবায়নের বিষয়, বিশেষ করে মুয়ামালাত তথা সামাজিক সম্পর্কের বিষয়, সেসবকে প্রধানত পরিমাণগতভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। বলাবাহুল্য, গুণগত পরিমাপে ‘অধিকাংশ-নীতি’ অচল। যদিও তা পরিমানগত পরিমাপের জন্য অপরিহার্য।

গণতন্ত্রকে একটা প্রায়োগিক পদ্ধতি হিসাবে দেখলে তা ইসলামের শুরা ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পাশ্চাত্য প্যারাডাইমে গণতন্ত্রকে নিছক পদ্ধতি হিসাবে দেখা হয় না। আমার পর্যবেক্ষণে, তারা গণতন্ত্রকে একটা পরিপূর্ণ আদর্শ হিসাবে গণ্য করে। কথাটা ইংরেজিতে বললে, গণতন্ত্রকে আমরা as a means হিসাবে নিচ্ছি, নাকি as an end হিসাবে নিচ্ছি, তা গুরুত্বপূর্ণ। আপাতদৃষ্টিতে এই পার্থক্য গ্রাউন্ড লেভেলে তেমন চোখে না পড়লেও বাস্তবে হায়ার লেভেলে গিয়ে এটি ব্যাপক ফারাক তৈরি করে। ইসলামের সাথে যারা গণতন্ত্রের বিরোধ দেখতে পান তারা গণতন্ত্রকে as an end in itself হিসাবে দেখেন।

তো, গণতন্ত্রকে আপনি end হিসাবে দেখবেন, না means হিসাবে দেখবেন, গণতন্ত্র স্বয়ং কিন্তু তা বলে না।

শুরা ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কারা কারা সংশ্লিষ্ট পরামর্শ সভার সদস্য হবেন, কীভাবে তারা মতামত পেশ করছেন, তাদের মাঠ পর্যায়ের দায়বদ্ধতা তথা constituency আছে কিনা, গাছের শিকড় হতে ডালপালায় রস সঞ্চালনের মতো তৃণমূল তথা আমজনতার চাওয়া না-চাওয়ার বিষয়গুলো যথাযথভাবে উপরে পৌঁছার ব্যবস্থা আছে কিনা, এসব। বলা হয় যে, the last member can turn-down the whole set।

যারা রসায়নবিদ্যার ব্যবহারিক ক্লাস করেছেন তারা এটি ভালো বুঝবেন। দেখা যায়, আর একটা মাত্র ফোঁটা বেশি ঢালার কারণে পুরো দ্রবণটির গুণগত মানে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে গেছে। হেগেল যেটাকে পরিমাণের গুণে রূপান্তর হিসাবে বলেছেন। রাসেল যেটাকে মুরগীর উদারহণ হিসাবে বলেছেন। প্রতিদিন আমরা মুরগীকে খাওয়াই। একদিন আমরা মুরগীটাকেই খেয়ে ফেলি।

তাই, পরামর্শ সভায় উপযুক্ত সব ব্যক্তির সমাহার না ঘটলে, তারা ভালো করে যুক্তি উপস্থাপন করার পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ না পেলে, পুরো শুরা ব্যবস্থাটাই ভেংগে পড়বে। শেষ পর্যন্ত উপরে উপরে শুরা ব্যবস্থা হিসাবে বহাল থাকলেও বা দাবি করা হলেও বাস্তবে তা ব্যক্তিবিশেষ বা বিশেষ কোনো সিন্ডিকেটের স্বৈরতন্ত্র হিসাবেই আবির্ভূত হবে। প্রচলিত সব ইসলামী সংগঠন ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় এ মুহূর্তে গণহারে যা হচ্ছে।

উলিল আমর প্রসংগে

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর এবং তাঁর রাসূলের (সা) এবং তোমাদের মধ্যকার উলিল আমরের। তো, এই উলিল আমর কারা? উলিল আমর হচ্ছে যাদেরকে আমরা সিভিল সার্ভেন্ট বলি তারা। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কর্মচারীবৃন্দ। উলিল আমরের শাব্দিক মানে হচ্ছে কোনো সামষ্টিক বিষয়ে হুকুমদানের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ। ইসলামসম্মত কোনো রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় যারা ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী তারা হলেন নাগরিকদের জন্য উলিল আমর।

যেমন, আল্লাহর রাসূল (সা) ইন্তেকালের পরে যারা খলীফা হয়েছেন তারা ছিলেন উলিল আমর। খলীফার অধীনস্ত সকল স্টাফই হচ্ছেন উলিল আমর। এটি শুধু ভাষাগত পার্থক্যের ব্যাপার। যেমন, এখনকার রাষ্ট্রের একজন সর্বনিম্ন শ্রেণীর কর্মচারীও রাষ্ট্রের প্রতিনিধি। এই কথাটাই আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন এভাবে, যে আমাকে মানবে সে আল্লাহকে মানবে, যে আমার প্রতিনিধিকে মানবে সে আমাকে মানবে। অতএব, এটি পরিষ্কার, উলিল আমর তথা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির জিম্মাদারী বা নেতৃত্ব হচ্ছে মূলত একটা প্রশাসনিক ব্যাপার (legal jurisdiction)।

প্রচলিত ইসলামী দলগুলো, বিশেষ করে রাজনৈতিক ইসলামপন্থীরা দাবি করে, তাদের সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দই হচ্ছেন এ সময়কার উলিল আমর। তাই তাদের পূর্ণ আনুগত্য করতে হবে। ইসলামী সংগঠনের দায়িত্বশীলবৃন্দের উলিল আমর হিসাবে মর্যাদা লাভের দাবির সাথে আমি একমত। যেভাবে বলা হয়, যারা দুর্ঘটনায় মারা গেছে, যারা সন্তান জন্মদান করতে গিয়ে মারা গেছে, যারা দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগে মারা গেছে তারাও শহীদ। যদি তারা আদতে মু’মিন-মুসলমান হয়ে থাকেন। যেভাবে যুদ্ধের মাঠের বাইরেও যে কোনো সৎ কাজের আন্তরিক ও প্রবল চেষ্টা জিহাদের সমতুল্য। যেভাবে দূরবর্তী বা বৃহত্তর অর্থে একজন মু’মিনের সকল কাজই ইবাদত হিসাবে গণ্য।

তাহলে বুঝতেই পারছেন, উলিল আমর কেবল একটা জনপদে একটা দল থেকেই হবে, এমন নয়। হক্বপন্থী যে কেউ উলিল আমর হতে পারে যদি তিনি তেমন কোনো দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন যাতে আপনি স্বেচ্ছায় ফলোয়ার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। যখন কেউ জামায়াত নামাজ আদায়ে নিয়োজিত থাকেন তখন ইমাম সাহেবই সংশ্লিষ্ট মুসল্লীদের উলিল আমর। এভাবে স্ত্রী-সন্তান ও অধীনস্ত গৃহকর্মীদের উপর উলিল আমর হচ্ছে পরিবারের কর্তা। আবার সন্তানাদি ও গৃহকর্মীদের উপর উলিল আমর হচ্ছে স্ত্রী। এভাবে আপনি উলিল আমরের মাসলাটা সহজেই পেয়ে যাবেন। এটি কঠিন বা বিশেষ কোনো কিছু নয়। সাধারণ বুদ্ধি বা কাণ্ডজ্ঞানের বিষয়। কাজটা পরিচিত ও পুরনো। পরিভাষাটাই শুধু, কারো কারো কাছে, নতুন।

আল্লাহর রাসুল (সা) বলেছেন, সাবধান, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। এবং তোমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ‘রা-ইন’ তথা দায়িত্বপ্রাপ্ত আর উলিল আমর তথা সামষ্টিক বিষয়ে দায়িত্বশীল – দুটো একই অর্থ বহন করে। চলার সময়ে যাকে গাইড হিসাবে মানা হয় সেও উলিল আমর।

উলিল আমরের আনুগত্য আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা) আনুগত্যের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা) আনুগত্য হলো শর্তহীন। আর উলিল আমরের আনুগত্য হলো শর্তসাপেক্ষ। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা ভালো ও কল্যাণজনক কাজে পরষ্পরকে সহযোগিতা করো। গুনাহ ও সীমালংঘনমূলক কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না।

সাধারণ সামাজিক ও নাগরিক জীবনে উলিল আমরের তাৎপর্য হলো– ইসলামের নীতি ও হুকুমের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন যে কোনো সামষ্টিক কল্যাণের কাজে যারা দায়িত্বপালন করছে তাদেরকে মেনে চলা। হাসবেন না প্লিজ, আমি যা বুঝেছি, রাস্তায় চলার সময়ে ট্রাফিক পুলিশই পথচারীদের উলিল আমর। কথাটা এজন্য বললাম, চারিদিকে এত ‘ইসলাম’, ‘ইসলাম’ জিগির চলছে তাতে কেউ কেউ মনে করে, শুধু নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত, নারীদের পর্দাপালন, সুদ-ঘুষ বর্জন ইত্যাদি নির্দিষ্ট কিছু do-s and don’t-s ই ইসলাম, মনে হবে যেন এগুলোই শুধু ইসলামী কাজ। চাষাবাদ করা, চাকুরী করা, পড়ালেখা করা কিংবা রাস্তায় হাঁটাচলার মতো নৈমত্তিক কাজ বুঝিবা ইসলামী কিছু নয়।

প্রকৃতপক্ষে মানব কল্যাণের জন্য যা কিছু করণীয় তা সবই ইসলামী হতে পারে বা হবে, যদি তাতে ‘ইসলাম’ নামক সিল বা লোগো লাগানো নাও থাকে। যদি না তা ইসলামের কোনো সুস্পষ্ট হুকুমকে ভংগ করে।

সম্ভাব্য কোনো ‘ইসলামী রাষ্ট্রের’ প্রশাসনিক কর্মচারীগণের বাইরে সেখানকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সামাজিক সংগঠনের দায়িত্বশীলবৃন্দও উলিল আমর হিসাবে গণ্য হবেন। যতক্ষণ তারা হক পথে থাকবেন ও হক কথা বলবেন। দলীয় উলিল আমরকে তাদের অনুসারীরা মান্য করবেন, যদি তা রাষ্ট্রীয় উলিল আমর হিসাবে যারা নিয়োজিত আছেন তাদের বিরোধিতার শামিল না হয়।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বার বার বলেছেন, তোমরা যদি কোনো কিছু না জানো, তাহলে যারা জানে তাদের কাছ থেকে জেনে নাও। তো, যারা জানে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতামত দেয়ার জন্য তারাই উপযুক্ত তথা উলিল আমর। এই অর্থে আলেম সমাজও উলিল আমর, যদি তারা প্রশাসনিক কোনো দায়িত্বে নাও থাকে।

নাগরিকত্বের ধারণা

নাগরিকত্ব হলো এক ধরনের চুক্তি। কেউ কোনো চুক্তি করলে তা পালন করা ধর্মীয় কর্তব্যও বটে। তাই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে বসবাস করার মানেই হলো চুক্তিতে আবদ্ধ থাকা। এক ধরনের আনুগত্যের অধীনে থাকা। এই দৃষ্টিতে একজন নাগরিক হিসাবে আপনি যাদের মেনে চলেন তিনি কোনো না কোনো ধরনের উলিল আমর বটে। ব্যস, এটুকুই। এই চুক্তির পরিধি কতটুকু, তা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ।

শুধু এটুকু বলে রাখি, নাগরিকগণের সাথে রাষ্ট্রের অপরিহার্য এই চুক্তি-প্রথার বাহ্যিক রূপ সাংবিধানিক বিধিমালা হলেও এর অন্তর্গত মূল ভিত্তিটা হলো সামাজিক মতৈক্য বা founding social contract। সেটা একধরনের নীরব মতৈক্যের (tacit agreement) ব্যাপার। একেকটা জাতির দীর্ঘ সংগ্রাম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ধর্ম এমনকি জলবায়ুগত বিষয়গুলোও এই সামাজিক মতৈক্য গড়ে উঠার ক্ষেত্রে কন্ট্রিবিউট করে। এই পয়েন্টে মূল আলোচনা এখানেই শেষ। এরপর, পরের আলোচনাতে আসেন।

ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

S M Riaz: আলহামদুলিল্লাহ, উলিল আমরের ব্যাপারটা খুব সুন্দর বলেছেন। ‘কাজ’ করতে গিয়ে এই ধরনেরই একটা দৃষ্টিভঙ্গি এসেছিল।

‘শূরা’কে যতটুকু বুঝেছি, এখানে বিজ্ঞজনদের মতামত নিয়ে ইমাম যেটা সঠিক মনে করেন সেটাই সিদ্ধান্ত নেন। সেটা অনেক সময় অধিকাংশের মতামত হতে পারে অথবা নাও হতে পারে। আবার সবার মতামতের বিপক্ষেও হতে পারে। যাকাত অস্বীকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আবু বকর (রা) প্রায় সবার মতের বিপক্ষে গিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কিন্তু গণতন্ত্রে অধিকাংশের মতামতকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে অধিকাংশের মতামতকে একই লাইনে আনার জন্য বিভিন্ন ক্যাম্পেইন করা হয়।

Mohammad Mozammel Hoque: একটা বিরাট সমস্যা হলো, যে কোনো বিষয়ে সুন্নাহর দাবী বুঝতে গিয়ে আমরা ‘খাইরুল কুরুন’ তথা প্রথম তিন যুগের কথা বলবো। অথচ, সে সময়কার রাজনৈতিক কাঠামো ও অবস্থা এখন আর নাই।

তাছাড়া, ইসলামী শরীয়াহর দাবী হলো, মুয়ামালাতের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে তৎকালীন কাঠামোর চেয়ে সেখানকার শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া।

সে হিসাবে এককেন্দ্রিক খেলাফত ব্যবস্থায় ইমাম বা খলিফার যে ক্ষমতা তা বর্তমান অবস্থায়ও প্রযোজ্য হবে না। যেহেতু সেরকম ব্যাপক ও সমন্বিত একক খেলাফত ব্যবস্থা এখন আর নাই। কখনো সেরকম কিছু হলে তখন সেটার প্রাসঙ্গিকতা থাকবে।

খেয়াল করলে দেখবেন, বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেও এক নম্বর পজিশানে যিনি থাকেন, তার বিশেষ কিছু একক ক্ষমতা থাকে। আবার রাজতান্ত্রিক বা স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেও শাসক চাইলে যে কোনো সময়ে যে কোনো কিছু করে ফেলতে পারে না। ইতিহাস এর সাক্ষী।

ব্যক্তিকেন্দ্রিক নেতৃত্ব-ব্যবস্থার ধারণা হলো ইসলামী প্রশাসনিক ব্যবস্থার একধরনের ভাষ্য। ব্যক্তি প্রধান থাকলেও সমষ্টির হাতেই আসলে ক্ষমতার লাগাম, এমন ইন্টারপ্রিটেশানও কিন্তু ইসলামের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে গ্রহণযোগ্য। যখন যেখানে যে ধরন উপযোগী হয় বা কাজে লাগে।

সেই পুরনো কথাই আবার বলতে হয়, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যাপারসহ মুয়ামালাতের বিষয়সমূহে ইসলাম বাহ্যিক ধরন ও পদ্ধতির চেয়ে ন্যায়, কল্যাণ, উন্নয়নের মতো মূলনীতিগুলোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়।

বলাবাহুল্য, ন্যায়, কল্যাণ ও উন্নয়নের ইসলামী ধারণা তাওহীদভিত্তিক। তাই, সেগুলোর ব্যাপ্তি ও বিবেচনার পরিধি আখেরাত পর্যন্ত বিস্তৃত।

পর্বটির ফেসবুক লিংক

*****

ইসলামী রাষ্ট্র প্রসংগে বহুত্ববাদের ধারণা

আল্লাহর মহান সত্তাগত এককত্ব (unicity) যাকে আমরা তাওহীদ বলি, তা ছাড়া ইসলামের সব ব্যাপারই কোনো না কোনোভাবে বহুত্ববাদী (pluralistic)। সংগত কারণেই তাই সমাজ ও রাষ্ট্র ধারণার দিক থেকে কষ্টকল্পনার (utopia) পরিবর্তে ইসলামী জীবনবিধান হলো প্রয়োগধর্মী ও বাস্তববাদী তথা বহুত্ববাদী।

এ প্রসংগে কান টানলে মাথা আসার মতো কথা আসবে, অনৈসলামী রাষ্ট্র কোনগুলো এবং তাগুত কারা, তা নিয়ে। নিচে ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ ধারণার অতি সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরছি–

কয়েক বছর আগে ইসলামের দিক থেকে রাষ্ট্র ধারণার একটা স্কেল তৈরি করেছিলাম। সিএসসিএস-এর সাইটে সেটা আপও করা হইছিলো (লিংক)। সেটাই আপনাদের দেখাচ্ছি:

বুঝতেই পারছেন, ইসলামী রাষ্ট্র একক কোনো ব্যাপার নয়। এটি ঠিক এভাবে হলে আছে বলা যাবে, এর খানিক ব্যত্যয় হলেই তা অনৈসলামি হয়ে গেলো, ব্যাপারটা এমন নয়। ইসলামের মৌলিক বিধিবিধানগুলো যে রাষ্ট্রের অধিবাসী হিসাবে অবাধে পালন করা যায়, তা-ই এক ধরনের ইসলামী রাষ্ট্র।

তো, এই ‘ইসলামের মৌলিক বিধিবিধান’ বলতে আমরা কী বুঝবো? মক্কী যুগের ইসলামকে যদি ইসলামই মনে করি তাহলে ইসলামী রাষ্ট্র ধারণার ব্যাখ্যা হবে প্রশস্ত। এই অর্থে, যে রাষ্ট্রে মুসলমানরা তাওহীদ, রেসালাত ও আখেরাত ভিত্তিক ঈমানী পরিচয় নিয়ে নামাজ-রোজা করতে পারে, সে ধরনের রাষ্ট্রও অনৈসলামী রাষ্ট্র নয় অর্থে ইসলামী রাষ্ট্র। উল্লেখ্য, মক্কী যুগে মুসলমানেরা স্বাধীনভাবে ইসলাম পালন করতে পারতো না। মুসলমান পরিচয় নিয়ে তারা ছিলো বিপদগ্রস্ত। তাই, মক্কী যুগের ইসলাম ব্যক্তিগত পর্যায়ের ইসলাম।

মাদানী জিন্দেগীর শুরুর দিকটাকে যদি আমরা ইসলামী রাষ্ট্রের ন্যূনতম মান হিসাবে বিবেচনা করি, তাহলে যে রাষ্ট্রের মুসলমানরা জুমা ও ঈদের নামাজ পড়তে পারে এবং যে রাষ্ট্রে মুসলমানদের নেতাই হলো রাষ্ট্রের কর্ণধার সেটি ইসলামী রাষ্ট্র। রাসুলুল্লাহর (স) মাদানী জিন্দেগীর শেষ পর্যায়, বিশেষ করে মক্কা বিজয়ের পরবর্তী অবস্থাকে যদি আমরা ইসলামী রাষ্ট্রের (একমাত্র) স্ট্যান্ডার্ড হিসাবে বিবেচনা করি, তাহলে সেই ধরনের রাষ্ট্র কায়েম করা কেয়ামত পর্যন্ত অসম্ভব। কারণটা পরিষ্কার। যে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন একজন নবী। নবী যেহেতু আর আসবেন না, তাই সেই ধরনের রাষ্ট্রও আর কায়েম করা যাবে না। বাহ্যত অনুরূপ মনে হলেও গুণগতভাবে পরবর্তী যে কোনো রাষ্ট্র সেই আদর্শ রাষ্ট্রের তুলনায় ইনফেরিয়রই হবে।

বিষয়টা খানিকটা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। রাজনৈতিক ইসলামপন্থীরা ব্যাপারটাকে তাত্ত্বিকভাবে যতটা সহজ ও নিছক বাস্তবায়নের ব্যাপার বলে মনে করেন, বাস্তবে তা ততটা সাদা-কালো ধরনের নয়। এ নিয়ে আমার “ইসলামী শরীয়াহ বাস্তবায়নে ক্রমধারার অপরিহার্যতা” শিরোনামে একটা গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ আছে। তাতে বিষয়টা বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি।

মোদ্দাকথা হলো, যে কোনো আধুনিক গণতান্ত্রিক কিংবা স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র, অত্যন্ত নিম্নশ্রেণীর হলেও, দিনশেষে তা এক প্রকারের ইসলামী রাষ্ট্রই বটে; যদি সেখানকার মুসলমানরা মুসলিম পরিচয় (identity) তথা ঈমান-আকীদা নিয়ে নামাজ-রোজা-হজ্ব-যাকাত আদায় করে বসবাস করতে পারে। ইসলামীরাষ্ট্র নিয়ে প্রচলিত ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক মনে হলেও রাষ্ট্র নিয়ে ইসলামের তরফে এটাই সঠিক ধারণা। ইসলামী রাষ্ট্র মানে এমন রাষ্ট্র যার সবকিছু পরিপূর্ণভাবে​ ইসলামসম্মত, যা বেসিকেলি মুসলমানদের রাষ্ট্র, মুসলমানেরা যে রাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ট​ অথবা যেখানে মুসলমানেরা ১ম শ্রেণীর নাগরিক, ইসলামী রাষ্ট্র সম্পর্কে এমন সব ভুল ধারনা লক্ষ করা যায়।

ইসলামী শরীয়াহ পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের আগে কোনো রাষ্ট্র যদি ইসলামী হিসাবে গণ্য না হয়, তাহলে, আল্লাহ মাফ করুক, হিজরতের পর পরই মসজিদে কুবায় জুমার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে যে রাষ্ট্রব্যবস্থার পত্তন আল্লাহর রাসূল (সা) করেছিলেন তাকে আর ইসলামী রাষ্ট্র বলা যাবে না। রাসূল (সা) পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ইসলামী নয় বলার দুঃসাহস কেউ করবে না, জানি। কিন্তু top-down অ্যাপ্রোচে (বাংলা কথায়, গায়ের জোরে) যারা দ্বীন কায়েম করতে চান তারা হয়তো বলবেন– মদীনায় প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রাথমিকভাবে ‘পূর্ণাঙ্গ’ ছিলো না। কেননা, তখনো শরীয়াহর বিধিবিধান সব নাযিল হয় নাই।

আমি তো এ কথাটাই বলার চেষ্টা করছি, আল্লাহ চাইলে মূসার (আ) ওপর নাযিলকৃত ten commandments-এর মতো সবকিছু একসাথে দিয়ে দিতে পারতেন। বাস্তবায়ন না হয় ধাপে ধাপে হতো। সেক্ষেত্রে রাসূল (সা) অনৈসলামী ব্যবস্থা হতে সরাসরি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে পারতেন। তা তো হয় নাই। কেন আল্লাহ তায়লা ও রাসূল (সা) তা করেন নাই? যাদের মধ্যে তিনি কাজ করছিলেন তারা (আল্লাহ মাফ করুক) কি তুলনামূলকভাবে খারাপ ও অযোগ্য লোক ছিলো বলে? বরং, ব্যাপারটা এর ঠিক উল্টা।

যাহোক, এখানে আমি এ নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না। একটু কষ্ট করে উপরের লিংকগুলো ব্রাউজ করলে খুব সম্ভবত এ ব্যাপারে আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে যাবেন। এখানে শুধু এটুকু বলে রাখি, দ্বীন কায়েম একটা ধারাবাহিক ও নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা। এমন কোনো পর্যায় আমাদের সামনে নাই যাতে পৌঁছতে পারলে বলা যাবে, হ্যাঁ, দ্বীন কায়েম সুসম্পন্ন হয়েছে।

তারমানে অনৈসলামিক রাষ্ট্র বলে কি কিছু নাই? হ্যাঁ, আছে। অনেক আছে। বৈশিষ্ট্য দেখে তা চিহ্নিত করা যাবে।

বাংলাদেশ কি ইসলামী রাষ্ট্র, নাকি অনৈসলামী রাষ্ট্র?

কথাটা পিছন দিক থেকে যদি আমরা শুরু করি, তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম বাংলাদেশ অনৈসলামী রাষ্ট্র। তাই “এখানে দ্বীন কায়েম করতে হবে। অর্থাৎ একে ইসলামী রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। হোক সেটা বিপ্লবের মাধ্যমে, অথবা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অথবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে। এবং এটাই হলো ইসলামী আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা ও অপরিহার্যতা।” এমনটা যারা মনে করেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, একটা অনৈসলামী রাষ্ট্র তথা দারুল হরবে এত মসজিদ-মাদ্রাসা, ঈদ-জুমা, আক্বদ-যাকাত ইত্যাদি হয় কী করে? দারুল হরবের লোকেরা এত বিপুল সংখ্যক, এমনকি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় হজ্বও করে কীভাবে?

যদ্দুর জানি, ক্লাসিক্যাল ফিকাহ অনুসারে রাষ্ট্র দুই ধরনের: (১) দারুল ইসলাম বা ইসলামী রাষ্ট্র ও (২) দারুল হারব বা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যায় বা যাদের সাথে যুদ্ধ চলছে এমন রাষ্ট্র, যাকে আমরা ইসলামবিরোধী বা অনৈসলামী রাষ্ট্র বলতে পারি। দারুল ইসলামও নয়, দারুল হরবও নয়– এমন রাষ্ট্রগুলো যে পক্ষের সাথে লিখিতভাবে বা সমঝোতার ভিত্তিতে মৈত্রীতে আবদ্ধ হবে তারা সেই পক্ষভুক্ত হিসাবে বিবেচিত হবে।

এবার বলুন, বাংলাদেশ তো দারুল ইসলামও নয়, দারুল হরবও নয়। এ ক্ষেত্রে যদি বলেন, বাংলাদেশ দারুল ইসলামের মিত্রপক্ষ, তাহলে আমার প্রশ্ন থাকবে, বাংলাদেশকে দারুল ইসলামের পক্ষভুক্ত মনে করার কারণ কী? দুনিয়ার কোন রাষ্ট্রটি আপনাদের হিসাবে ইসলামী রাষ্ট্র (প্রশ্ন নং-১)? এবং সেই কথিত ইসলামী রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের লিখিত চুক্তি বা অলিখিত সমঝোতাটা কখন, কোথায় ও কীভাবে হয়েছে (প্রশ্ন নং-২)?

জানি, এখানকার ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমে স্বপ্নগ্রস্তদের কাছে এ ধরনের জরুরি কিন্তু ক্রিটিক্যাল প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নাই। বাংলাদেশকে দারুল হরব তারা বলতে পারবেন না। তার কারণ দুই প্যারা উপরেই উল্লেখ করেছি। কোনো ইসলামিস্ট ব্যক্তি বা দল এমন অডাসিটি করলে তাদের ‘ইসলাম ইন বাংলাদেশ’ নামক অতিপ্রিয় অথরিটি-কোয়েশ্চনটা ধপাস করে ধ্বসে পড়বে। নব্বই পার্সেন্ট মুসলমানের দেশ বলে লেজিটিমেসি তারা হরহামেশা ক্লেইম করেন, তা আর টিকবে না।

এসব কথার মানে হলো, সমকালীন ফিকাহ বলে একটা জিনিসকে বুঝতে হবে। পড়ে যদ্দুর বুঝেছি, শায়েখ কারযাভী হতে শুরু করে তারিক রমাদান, সবাই এ ধরনের কথাগুলোই বার বার বলছেন। তারা বলছেন, দুনিয়ার তাবৎ রাষ্ট্র বা রাজ্যকে দারুল ইসলাম বনাম দারুল হরবে পৃথকীকরণের এই নীতি হতে সরে আসতে হবে। তো, সরে এসে কী করতে হবে, কোন ধরনের রাষ্ট্রের মান ও নাম কী হবে তা নিয়ে তাদের মধ্যে ততটা মতৈক্য নাই। সেসবে আমার আগ্রহও নাই। সেসব পণ্ডিতদের গবেষণা ও এক্সপার্ট ওপিনিয়ন দেয়ার বিষয়।

আমাদের বিবেচনা ও এনগেইজমেন্টের ক্ষেত্র হলো– একজন মুসলমান হিসাবে দ্বীন কায়েমের ফরজিয়াতকে আমি-আপনি কীভাবে আঞ্জাম দিবো, তাই মুখ্য বিষয় হিসাবে গণ্য হওয়া উচিত। এই পয়েন্টের শুরুতে যে কথাগুলো বলেছি তা আবার স্মরণ করিয়ে দিতে চাচ্ছি। অর্থাৎ মুসলমান পরিচিতি নিয়ে বাস করা অসম্ভব এমন রাষ্ট্রগুলোকে অনৈসলামী রাষ্ট্র বিবেচনা করে বাদবাকী সব রাষ্ট্রকে ইসলামসম্মত হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে আমি পাস মার্ক ধরেছি শতকরা ৫০ নম্বরকে। অর্থাৎ যে রাষ্ট্র ইসলামকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসাবে মানে না, আবার মুসলমানদেরকে ইসলামের মৌলিক হুকুম-আহকাম পালনে বাধাও দেয় না, সেই ধরনের রাষ্ট্র হলো কানায় কানায় পাস নম্বর পাওয়া দুর্বলতম ইসলামী রাষ্ট্র। এখান হতে শুরু করে ইসলামের হুকুম-আহকাম পালনের সুযোগ যতো বিস্তৃত, অবাধ ও শুদ্ধতর (perfection অর্থে) হবে ইসলামের দিক থেকে অনুমোদনযোগ্য রাষ্ট্র হিসাবে এটির পয়েন্ট বা গ্রেডও তত বাড়তে থাকবে। হিসাব পরিষ্কার?

অবশ্য আমার একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং সম্পর্কে ক্লিয়ার না থাকলে পাঠকের কাছে আমার কথাগুলোকে শেষ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য মনে হবে না। তা হলো, ইসলামী রাষ্ট্রে ইসলামের কী পজিশন হবে, তা ঠিকমতো বুঝতে পারা। দেখুন, একটা হলো কাজের ইসলাম, অন্যটা হলো নাম ও কাজের ইসলাম। কী, বুঝতে পারছেন না? ইসলামের কিছু কাজ আছে যা নামেও থাকতে হয়, কাজেও থাকতে হয়। এগুলোকে এবাদত বলে। যেমন, নামাজ, রোজা, হজ্ব ইত্যাদি। এ ধরনের গুটিকতেক বিষয় বাদে অবশিষ্ট সব সামাজিক কর্মকাণ্ডে ইসলামের নীতি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিয়ত ইসলাম অনুসারে হলেই তা ইসলামী হয়েছে বলে মনে করতে হবে। এই ক্যাটাগরির কাজগুলোকে বলে মুয়ামালাত।

সমাজের উর্ধ্বতন কাঠামো বা এক্সটেনশান অব অথরিটি হিসাবে রাষ্ট্রব্যবস্থাও মুয়ামালাতের অন্তর্ভুক্ত। তাই কোনো রাষ্ট্র, ইসলাম মোতাবেক হওয়ার জন্য তাতে ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ ঘোষণা থাকা অপরিহার্য নয়। সত্য কথা বলার সময়ে তা ইসলাম মোতাবেক বা আল্লাহর হুকুম অনুসারে বলা বা করা হচ্ছে– এমনটা দাবি করা বা ঘোষণা দেয়ার দরকার নাই। কথাটা সত্য বা কাজটা সঠিক হওয়া এবং ব্যক্তির নিয়তে আল্লাহর বন্দেগীর অনুভূতি থাকাই যথেষ্ট। রাষ্ট্র যেহেতু ব্যক্তি নয়, তাই রাষ্ট্রের কোনো অন্তরও নাই, আখেরাতও নাই। তাই রাষ্ট্রসত্ত্বার ‘বন্দেগীর অনুভূতি’ থাকারও প্রসংগ নাই। রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড ইসলামের সংশ্লিষ্ট উদ্দেশ্য ও নীতিমালার সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ হলো, তা-ই বিবেচ্য।

সবচেয়ে ভালো হয়, এ বিষয়ে ‘সমাজ ও সংস্কৃতি কেন্দ্রে’র সাইটে কয়েক বছর আগে আপলোড করা পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইডগুলো  একটু কষ্ট করে যদি দেখে নেন। ভালো থাকুন।

পর্বটির ফেসবুক লিংক

Similar Posts

২ Comments

  1. Supplementary addition to your discourse “ulul amr”…
    What kind of People to be regarded as Ulu al-Amr (Those Charged with Authority)?
    M.H. Islam (Abu Bushra)
    The Qur’an distinguishes some people those charged with authority and they are recognized as the ulu al-amr (Abbas and Hussein, 2017). The discussion of ulu al-amr as a Qur’nic epistomolgy relating to an intellectual institution or[and] leaders and scholars in the context of Muslim society. This is consistent with the tradition of the Prophet (s.a.w) as he said: “There will come to you leaders who are good and bad, the good will command the good deeds, while the wicked will enjoin the evil deeds. You must obey them if they are on the right path. And follow them, if they do good, because the reward is for them and for you, but if they act wickedly, the punishment is for them alone.” *Narrated on the authority of Abu Hurayrah (r.a.)+. In additon, Imam Ibn Taymiyyah’s interpretation on the Qur’anic term of ulu al-amr is also a good deliberation in the above mentioned hadith as he demonstrated:
    “People who have authority (ulu al-amr) are of two kinds: rulers (umara’) and scholars (‘ulama’). If they are right, the masses will also be right. Both should obey Allah and His Messenger and adhere strictly to His Book in all that they say and do.
    Al-Tabari, in the context of the term ulu al-amr, provides four definitions; referring to; (a) the religious scholars (’ulama’), (b) the learned in religion and thought (al-fiqh fi’ al-din wa al-‘aql), (c) the knowledgeable (al-‘ilm) and (d) the leaders of war (wulah fi al-harb). (Al-Tabari, 1997)., and Fadzli Adam, 2001). Furthermore, al-Tabari underlines some significant roles of ulu al-amr in the Muslim community. They are considered to be the third most fundamental source to be consulted, after the Qur’an and the Prophet Muhammad (s.a.w), in the case of any question or dispute arising. Also any news, good or bad, should be reported to them before all others because of their knowledge, learning and judgement (Fadzli Adam, 2001).
    Al-Zamakhshari, in his interpretation of the term ulu al-amr, agrees with al-Tabari’s point of view, as he considers that it has the meaning of umara’ al-haq (the true and pious leaders or rulers). These kinds of leaders, in all situations, are responsible for guiding the people to submit to Allah (SWT) (AI-Zamakhshari, n.d.). Likewise, they should not only concern themselves with the material fulfilment of their people, but also their spiritual needs, so that a balanced and impartial approach can be established in their worldly life (Fadzli Adam, 2001).
    Sayyed Abul A’la Maududi (1960) goes into detail from side to side the views of the early scholars and generalizes it into macro and micro level of the Muslim society. The Qur’anic expression of ulu al-amr is a term of wide association as he opines:
    all those leaders of the Muslim society who control and administer its affairs, may they be leaders of thought, religious divines, political leaders, administrators, judges, commanders or chiefs of social, cultural, tribal, municipal or local organisations.
    Thus whoever be in charge of any aspect of the Muslim affairs, he deserves to be obeyed and followed in his own sphere. Maududi accomplishes, the obedience to the ulu al-amr is, however, subject to the following two essential conditions: a) these ulu al-amr should be from amongst the Muslim community, and b) they should themselves be obedient to Allah (SWT) and His Prophet Muhammad (s.a.w) and their policies and actions must conform to the message and the spirit of the Shari‘ah.
    Reference:
    Al-Tabari, Abu Jafar Muhammad b. Jarir. (1997). Jam‘i al-Bayan fi Ta‘wil al-Qur’an, 12 vols., Beirut: Dar al-Kutub al `Ilmiyyah.
    Al-Zamakhshari, Mahmud Ibn `Umar. (n.d.). Al-Kashshaf `an Haqa’iq al-Tanzil wa ‘Uyun al-Aqawil fi Wujuh al-Ta’wil, 4 vols., Beirut: Dar a1-Ma’rifah.
    Fadzli Adam. (2001). The Concept of Khilafah According to Selected Sunni and Shi‘I Qur’anic Commentaries. The University Leeds, UK
    Ibn Taymiyyah. (2000). Ibn Taymiyyah Expounds on Islam: Selected Writings of Shaykh al-Islam Taqi ad-Din Ibn Taymiyyah on Islamic Faith, Life, and Society. Trnslated by Muhammad Abdul Haqq Ansari, USA: The Institute of Islamic and Arabic Sciences (IIAS)
    Ibn Taymiyyah. (2004). Fatwa Ibn Taymiyyah (Ahmad Ibn Abdul Halim ed.). Al-Madinah Al Munawwarah: Administration of Islamic Affairas, Awqaf and Daw’ah. See also [Selected writings of Ibn Taymiyyah on Islamic Faith, Life and Society, and Fatawa 28: 386-387].
    Sayyed Abul A’la Maududi. (1960). The Islamic Law and Constitution. (Khurshid Ahmad, trans.& ed.). Lahore: Islamic Publication Pvt Ltd.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *