প্রতেকটা গোষ্ঠী বা কমিউনিটির কিছু গোষ্ঠীগত ভালো বৈশিষ্ট্য আছে। আবার কিছু শ্রেণীগত বা গোষ্ঠীগত খারাপ বৈশিষ্ট্য আছে।

ডাক্তার সম্প্রদায়ের কিছু ভালো বৈশিষ্ট্য যেমন আছে তেমনি তাদের এমন কিছু কমন কমিউনিটি বিহেভিয়ার আছে যা আসলেই খারাপ। রোগীদেরও কিছু শ্রেণীগত ভালো বৈশিষ্ট্য আছে। আবার কিছু খারাপ বৈশিষ্ট্যও আছে। বাড়িওয়ালাদের কিছু ভালো বৈশিষ্ট্য যেমন আছে তেমনি কিছু খারাপ বৈশিষ্ট্যও আছে। ভালো-মন্দ মিলিয়ে ভাড়াটেদেরও নিজস্ব শ্রেণী চরিত্র আছে। শিক্ষকদের রয়েছে শ্রেণীগত ভালো-মন্দ বৈশিষ্ট্য। শিক্ষার্থীদেরও তেমনি রয়েছে কিছু নিজস্ব ধরনের ভালো-মন্দ বৈশিষ্ট্য।

নারীপক্ষের রয়েছে কিছু বিশেষ নারীসুলভ সদগুণ বা বৈশিষ্ট্য। আবার রয়েছে কিছু নারীসুলভ কমন প্রবলেম। এর পাশাপাশি পুরুষদেরও রয়েছে তাদের নিজেদের মতো করে কিছু ভালো-মন্দ বৈশিষ্ট্য। স্বামীদের রয়েছে কিছু ভালো দিক। তেমনি রয়েছে কিছু খারাপ দিক। স্ত্রীদেরও রয়েছে নিজস্ব ধরনের কিছু ভালো ও মন্দ। শাসকের তরফে আছে অনস্বীকার্য কিছু কল্যাণকর দিক। তেমনি রয়েছে তাদের সাধারণ কতগুলো অপকর্ম-প্রবণতা। শাসিত বা জনগণের রয়েছে কিছু ভালো গুণ। আবার রয়েছে কিছু খারাপ চরিত্র।

জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সময় ও ভূগোল নিরপেক্ষভাবে সামগ্রিকভাবে দুনিয়ার প্রত্যেকটা সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। অপরাপর শ্রেণী বা গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই কমন কমিউনিটি বিহেভিয়ার বা টেনডেন্সির কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য ইতিবাচক তথা কল্যাণজনক এবং কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য নেতিবাচক তথা ক্ষতিকর হিসাবে ফুটে উঠে। এক পক্ষের কাছে যা নিতান্ত স্বাভাবিক ও যুক্তিসংগত, অপর পক্ষের কাছে, গঠনগত ভিন্নতার কারণে তা একেবারেই অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক হিসাবে মনে হতে পারে। অথচ, একই সমাজের সদস্য হিসাবে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী বা গোষ্ঠীর সবাইকে অন্য সবার সাথে মিলেমিশে জীবনযাপন করতে হয়।

সে হিসাবে প্রত্যেকের উচিত স্বীয় গোষ্ঠীগত ত্রুটি সম্পর্কে সচেতন থেকে ঐ ধরনের মন্দ বৈশিষ্ট্যসমূহ হতে গা বাঁচিয়ে চলা। নিজেকে ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার এটাই পদ্ধতি। নিজের শ্রেণীগত ত্রুটির বিষবাষ্প হতে আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে। ডাক্তার-রোগী, বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া, শিক্ষক-ছাত্র, নারী-পুরুষ, স্বামী-স্ত্রী এ রকমের নানাবিধ দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের যুথবদ্ধতার মাধ্যমেই সমাজ গড়ে উঠে, টিকে থাকে, পুষ্ট হয়।

আদর্শ সমাজ হলো সেইটা যেখানে প্রত্যেকে নিজের শ্রেণীগত ভালো-মন্দ সম্বন্ধে সচেতন থাকে। সম্ভাবনা ও সদগুণকে বিকশিত করার চেষ্টা করে এবং বিপরীত বৈশিষ্ট্য তথা স্বীয় গোষ্ঠীগত মন্দ বৈশিষ্ট্যকে যথসম্ভব দমন করে।

বিশেষ করে, নারী-পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এইটা খেয়াল রাখা জরুরী। নারীরা যদি নিজেদের শেষ পর্যন্ত নারীই ভাবেন, আর পুরুষেরা নিজেদেরকে আল্টিমেইটলি পুরুষই মনে করেন, তাহলে মানবতার কী অবস্থা দাঁড়াবে? পুরুষও নয়, নারীও নয় – এমন কোনো মানুষ তো নাই। হিজড়ারা কোনো লিঙ্গ-পক্ষ নয়। সেটি তাদের গঠনগত ত্রুটি।

নারীদের ভাবতে হবে, তারা আগে মানুষ, এরপর নারী। পুরুষদেরও ভাবতে হবে, তারা প্রথমত মানুষ। এরপর তারা পুরুষ। এভাবে ভাবলেই মানুষ হিসাবে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আমরা সচেতন হতে পারবো। সমাজটা সুস্থভাবে গড়ে উঠবে। এগিয়ে যাবে।

মোটের ওপরে নানা সামাজিক প্যারামিটারে কমবেশি নির্যাতিত শ্রেণী হিসাবে নারীরা, বিশেষ করে স্ত্রী হিসাবে নারীরা নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে যতটা সোচ্চার ও সচেতন, নিজ নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে ততটাই অসচেতন ও সুবিধাপন্থী। যে কোনো অধিকারবঞ্চিত শ্রেণী বা গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। ব্যতিক্রমীরা আবার প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠবেন না যেন।

দায়িত্বের সাথে অধিকারের সম্পর্ক প্রাকৃতিকভাবে সমানুপাতমূলক ও অবিচ্ছেদ্য। অর্থাৎ দায়িত্বপালন যত বেশি হবে অধিকার লাভের সম্ভাবনাও তত বেশি হবে। এই আপাত সত্যের বিপরীত সত্য হলো, কেউ কারো অধিকার এমনিতেই দিয়ে দেয় না। বিশেষ করে, পিছিয়ে পড়া, অনগ্রর বা দুর্বল শ্রেণীকে নিজ নিজ ন্যায্য অধিকার সংগ্রাম করেই আদায় করতে হয়। এ কাজে সর্বাগ্রে নিজ দায়িত্ব পালনে স্বতঃই এগিয়ে যাওয়া ও নিজ অধিকারের সীমা সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরী। অর্থাৎ, ন্যায্য অধিকার দাবির বিপরীতে অপরিহার্য দায়িত্বও যথাসম্ভব পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, একতরফা গিভ অ্যান্ড টেকের কোনোটাই বাস্তবসম্মত নয়। চাওয়া-পাওয়ার ন্যূনতম সমন্বয় ছাড়া কোনো সামাজিক সম্পর্ক সুস্থ ও সুষ্ঠুভাবে টিকে থাকতে পারে না।

ওই যে শ্রেণী চরিত্রের কথা বললাম। মানুষ সাধারণত নিজের দুর্বলতাটা দেখে না। এর বিপরীতে, অপরপক্ষের দুর্বলতাগুলোই শুধু মানুষের বেশি নজরে পড়ে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সুবিধাবাদিতার (‘চেরী পিকিং ফ্যালাসি’) আশ্রয় নেয়। বেছে বেছে শুধু নিজের অধিকারের কথাগুলোকেই ফোকাস করে নিজেকে ভিকটিম হিসাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে।

এ বিষয়ে সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি হলো, কোনো দায়িত্ব পালন না করে অধিকার দাবি করা। সবচেয়ে ভালো হইলো নিজ দায়িত্ব সর্বোচ্চ পালন করে অধিকার দাবি করা। এই দুই প্রান্তিকতার মধ্যবর্তী অবস্থান হলো মিনিমাম লেভেলে নিজ দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার পাশাপাশি নিজের ন্যূনতম অধিকারটুকু আদায় করে নেয়া।

পোস্টটির ফেসবুক লিংক

*****

১০ জুন, ২০১৮ তারিখে নিম্নোক্ত ফরোয়াডিংসহ লেখাটি ফেসবুকে রিপোস্ট করা হয়:

চট্টগ্রামের এক বেসরকারী হাসপাতালে এক সাংবাদিকের শিশু সন্তান ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসার ফলে মারা যাবার অভিযোগে সাংবাদিকদের সাথে ডাক্তারদের ব্যাপাক লাগালাগির ঘটনা ঘটেছে। ইদানীং। এর ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ডাক্তাররা প্রাইভেট ক্লিনিকে ধর্মঘট ডাকলে বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে আলোচনায় উঠে আসে।

গত বছর আমি একটা লেখায় মানুষের শ্রেণীস্বার্থ ও গোষ্ঠীগত অবস্থান নিয়ে কিছু তাত্ত্বিক মন্তব্য করেছিলাম। সাংবাদিক ও ডাক্তারদের এই গণ্ডগোলের প্রেক্ষিতে আমার প্রেডিকশানগুলোকে আপনারা মিলিয়ে নিতে পারবেন। সেখানে আমি দেখিয়েছি, মানুষের এই ধরনের গোষ্ঠীগত বৈশিষ্ট্যগুলো মজ্জাগত।

যারা মানুষকে ‘ভালো বানাতে’ চান, অর্থাৎ যারা মানুষকে নিয়ে কাজ করছেন, তাদের উচিত এই বাস্তবতাকে মেনে নেয়া। শ্রেণীস্বার্থগত ও গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে সমাজকর্মীদের করণীয় হলো নিজেদেরকে যথাসম্ভব এ ধরনের সাম্প্রদায়িকতা হতে মুক্ত রাখার চেষ্টা করা। মানুষের গোষ্ঠীগত স্বার্থ-সচেতনতাকে নির্মূল করার চেষ্টা হলো কয়লা ধুয়ে ময়লা পরিষ্কারকরণের ‘মহান উদ্যোগের’ মতো বৃথা চেষ্টা।

অতএব, কোদালকে কোদাল বলাই যুক্তিযুক্ত। কোদাল শব্দটা যতই শ্রুতিকটু বা অশালীন মনে হোক না কেন। কোদালকে বিশেষ ধরনের কলম হিসাবে বলার মধ্যে পণ্ডিতি থাকতে পারে, কার্যকারিতা নাই। এ কথার মানে হলো, কোনো ধরনের অবাস্তব আদর্শবাদিতা চর্চার মাধ্যমে কেউ কেউ মনে মনে বেহেশতে পৌঁছে যেতে পারে বটে। কিন্তু তাতে করে বাস্তব সমাজটাতে টেকসই কোনো পরিবর্তন ঘটবে না।

ফেসবুক রিপোস্টে প্রদত্ত মন্তব্য

Mohammad Mozammel Hoque: সাংবাদিকদের অভিযোগ, ডাক্তারদের প্রতিবাদ, ধর্মঘট, হাইকোর্টের মন্তব্য বা বিচার, এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ বটে। কিন্তু আমি এগুলোতে এনগেইজ হচ্ছি না। বরং এসব বিষয় সামনে রাখলে ওভারঅল ব্যাপারটা আমাদের কাছে কেমন মনে হতে পারে, সেটা নিয়ে আমার বক্তব্য।

আমার দৃষ্টিতে, মানুষের গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব থাকবেই। কারণ, প্রত্যেকে নিজের দৃষ্টিকোণ বা অবস্থান থেকে সবকিছুকে দেখে। একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে থাকা সাপেক্ষে এটি দোষের কিছু নয়। মানুষের এতটুকু কমিউনিটি সেন্স বা বায়াসকে মেনে নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

যেমন, ছাত্রদের দৃষ্টিভঙ্গি আর শিক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গি কখনো এক রকম হবে না। সন্তানদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং পিতা-মাতা ও অভিভাবকের দৃষ্টিভঙ্গি এক হবে না। ক্রেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিক্রেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি কখনো একই সমতলে আসবে না। ডাক্তারদের মন-মানসিকতা আর রোগীদের মন-মানসিকতা কখনো এক হবে না। একইভাবে যারা সাংবাদিকতা করে তারাও সমাজে একটা শ্রেণী বা গোষ্ঠী। দৃশ্যত বিশেষ করে সমকালীন বাংলাদেশে বিচারকরাও একটা গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এক একটি ঘটনাকে প্রত্যেক শ্রেণী বা গোষ্ঠী নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিবেচনা করে।

খোসার বাহিরে যেমন আসল পেঁয়াজ বলে কিছু নাই, তেমনি করে একেবারে নৈর্ব্যক্তিক ও নিরপেক্ষ বলে কিছু নাই। Only God can have a no where point of view. and that’s why, only His position is 100% neutral and fully objective.

একই সমাজে বসবাস করতে গিয়ে আমাদেরকে যেটি করতে হয় বা যেটি করা উচিত তা হলো এই বিভিন্ন ও বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী, group, পকেট বা কমিউনিটিগুলোকে যথাসম্ভব পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে আসা। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ সব ব্যক্তির উচিত নিজে কোনো রকমের দলাদলিতে অংশগ্রহণ না করা। বরং যথাসম্ভব ন‍্যায় ও ন্যায্যতা অনুসারে ভূমিকা পালনের চেষ্টা করা। এভাবে নিজের ভাবমূর্তি ও ব্যক্তিত্ব তথা integrityকে বজায় রেখে চলা।

এটি আমার বক্তব্য। @ Nure Elahi Shafat

রিপোস্টের ফেসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *