ম্যারি কেলকিনস। একজন ফিলোসফার। মৃত্যু বরণ করেছেন ১৯৩০ সালে। সাইকোলজি ও ফিলোসফি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন হার্ভাডে। ওসব দেশে এই কিছুদিন আগেও নারী অধিকার পরিস্থিতি কেমন ছিল তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক theconversation.com থেকে ম্যারি কেলকিনস সম্পর্কে উদ্ধৃত করছি, “Although she completed her PhD requirements, Harvard refused to award it because of her gender. Despite this, Calkins made great contributions to philosophy.”
আরেকজন দার্শনিক হিলডা ওকলে। মৃত্যু বরণ করেছেন ১৯৫০ সালে। পড়াশোনা করেছেন অক্সফোর্ডে। এই ফিলোসফারের সাথে কেমন আচরণ করা হয়েছে তা ‘দা কনভারসেশন’-এ প্রকাশিত এমিলি থমাসের আর্টিকেলের উদ্ধৃতি থেকে পড়েন, “Hilda Oakeley was not awarded her Oxford degree when she completed it, because she was a woman. Nonetheless, she published six philosophy books; and taught at McGill, Manchester, and King’s College London.”
ক্যলকিনস এক পর্যায়ে আমেরিকান ফিলোসফিক্যাল এসোসিয়েশানের প্রথম মহিলা সভাপতি হয়েছিলেন। ওকলিও এই ফোরামের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন তৃতীয় নারী সভাপতি।
উক্ত আর্টিকেলে লেখক এমিলি থমাস একটি উপশিরোনাম দিয়েছেন, “Why are these philosophers neglected?”
সেখানে তিনি লিখেছেন, “One probable reason for this neglect is that idealism fell out of fashion. Another is misogyny. And I offer a further reason: their arguments use introspection or inner experience, arguably a kind of “intuition”.”
দেখেন কারবার, এই দার্শনিকগণ ছিলেন ভাববাদের সমর্থক। তদুপরি নারী। তাই তাদেরকে এভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে।
লেখকের মতে, “their philosophy is poorly known. They lack entries in the Stanford Encyclopaedia of Philosophy, and are omitted from many histories of philosophy.”
তাদেরকে উচ্চতর ডিগ্রী প্রদান করা হয়নি। মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে তাদের দার্শনিক অবদানকে।
হালনাগাদের অ্যাক্যাডেমিয়ায় অন্তর্দর্শন পদ্ধতি ও আত্মগত চেতনার আলোচনা এবং সেই সুবাদে ভায়াবল থিওরি হিসেবে আইডিয়েলিজম আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। তাই তাদের কথা এখন কারো কারো মনে পড়ছে!
বেশিদিন আগের কথা নয়। হিলারী ক্লিনটন ওবামার সাথে প্রেসিডেন্সিয়াল কেন্ডিডেইট হওয়ার দৌড়ে হেরে গিয়ে সান্তনা পুরষ্কার হিসেবে ওবামা সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পার্টির মনোনয়ন পেলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো প্রার্থীর সাথে হেরে যান। ধারণা করা হয়, তাঁর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে না পারার ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ ছিলো পুরুষ না হওয়া; তথা নারী হওয়া …!
বছর কয়েক আগে Asian University for Women-এর একজন নারী শিক্ষক আমাদের ডিপার্টমেন্টের ফোর্থ ইয়ার স্টুডেন্টদের একটা ক্লাসে androcentrism (পুরুষতন্ত্রের একটা ভার্সান)-এর ওপর একটা টক দিয়েছিলেন। সেখানে আমি একটিভ পার্টিসিপেন্ট ছিলাম।
মজার ব্যাপার হলো, সেখানকার আলোচনাতে AUW-এর সেই ফ্যাকাল্টি মেম্বারসহ উপস্থিত সবাই কনভিন্সড হয়েছিলেন যে পাশ্চাত্যের তুলনায় আমাদের দেশে নারী অধিকার পরিস্থিতি অনেক দিক থেকেই বেটার। ঐতিহাসিক এবং বর্তমান, উভয় প্রেক্ষাপট থেকেই এটি সত্য।
এক ধরনের বাড়াবাড়ি বা প্রান্তিকতা মানুষকে দ্রুতই বিপরীত ধরনের বাড়াবাড়ি বা অপর প্রান্তিকতায় নিমজ্জিত করে, আমরা জানি। ইউরোপ-আমেরিকায় নারী অধিকার ও যৌনতা নিয়ে ইদানিং যা হচ্ছে তা নিছকই বাড়াবাড়ি।
ম্যারি কেলকিনস, হিলডা ওকলে ও হিলারী ক্লিনটনসহ নারীদের সাথে সংঘটিত বৈষম্যমূলক ঘটনাসমূহ হতে আমরা হালনাগাদের পাশ্চাত্য দুনিয়ায় বিরাজমান সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে সহজে অনুমান করতে পারি।
প্রসঙ্গক্রমে তারা এগুলো খানিকটা স্বীকার করছে। এটি ভালো। যদিও নারীদের ওপর প্রকৃতিবিরুদ্ধ যে সামাজিক বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দিয়েছে, তারা তা স্বীকার করতে চায় না।
আমি পাশ্চাত্য বিরোধী রক্ষণশীলও নই, পাশ্চাত্যপন্থী আপসকামীও নই। আমি মধ্যপন্থী। একজন উদার মনোভাবাপন্ন মুসলিম। সেটি আপনারা জানেন।
ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব দর্শন দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত একটি লেখা পড়তে গিয়ে এটি পেলাম। ভাবলাম, পাঠকদের সাথে শেয়ার করি। তাই লেখা।