একদিকে ভরপুর অন্যদিকে শূন্যতা, এই হল আমার জীবনের বাস্তবতা। এক একটা বাস্তবতা যেন একেক ধরনের অর্থহীনতা। প্রায় ছয় দশকের এ জীবন। মনে হয়, এইতো সেদিন। জীবনের একেকটা অধ্যায়, মনে হয় যেন মঞ্চ নাটকের একেকটা পর্ব।
কখনো মনে হয় এইতো জীবন। বেশ সুখের। প্রতিষ্ঠিত, তৃপ্ত, বর্ণময়। ভালোবাসি ফুল। পাখি দেখি সারাক্ষণ আমার আঙ্গিনায়। চড়ে বেড়ায় বাইশটি খরগোশ সারাটা বিকাল জুড়ে।
কখনো আপন মনে উদাস তাকিয়ে থাকি আকাশের দিকে। মনে হয় সব ফাঁকি, ‘সব ঝুঁট হ্যায়’! মনে হয় একদিন যা ছিল জীবনের হৃষ্টপুষ্ট বর্তমান, আজকে তা জীর্ণশীর্ণ বিস্মৃত প্রায় ফেলে আসা ব্যক্তিগত স্মৃতি।
আশপাশের লোকদের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, এ পৃথিবী আমার নয়। আমার ছিল যে পৃথিবী, সেই পৃথিবী কোথাও নেইকো আর। আমার পৃথিবী আজ অন্যদের পৃথিবী। আমার জীবনটাই শুধু একান্ত আমার আপনার।
যখন মাটি হয়ে যাব তখন কেউ একজন পড়বে হৃদয়ের এই আঁকুতি, আবেগে আচ্ছন্ন হবে, জীবনের পরিণতি জেনে শিউরে উঠবে, এ কথাগুলো ভাবতে কেন জানি আমার খুব ভালো লাগছে। তাই লিখে গেলাম এই কথাটুকু রাত্রি গভীরে।
নাই হয়ে যাওয়ার পরও মানুষ কেন যেন থাকতে চায়, আমিও নই এর ব্যতিক্রম। জীবন এক অনিবার্য বাস্তবতা। জীবনের এই ধারাবাহিকতায় ব্যক্তিজীবনের বিশেষ কোনো মূল্য নাই। অথচ আমরা সবাই বেঁচে থাকতে চাই ব্যক্তি হিসেবে।
এ এক মর্মান্তিক সত্য। জীবনের এই তিক্ততা, এই ভিন্নচিত্র দেখে আমি রীতিমতো আতঙ্কিত।
অনেকের আমি প্রিয়, অথচ এই বন্ধুহীন সময় আমাকে অনেক কষ্ট দেয়। বারেবারে শুধু সেই কবেকার লেখাটার কথা শুধু মনে পড়ে, ‘জীবনের পরিণতি অনিবার্য, তবু স্মৃতি তবুও বিস্মৃতি বাঁচিয়ে রাখে আমাদের।’