একদিকে ভরপুর সুখ অন্যদিকে শূন্যতা।
এক একটা বাস্তবতা
যেন
একেক ধরনের অর্থহীনতা।
প্রায় ছয় দশকের এই জীবন।
অথচ মনে হয় এইতো সেদিন,
একটা ছোট্ট সাইকেল-রিক্সা নিয়ে
আমি ছোটাছুটি করছি
মাস্টারবাড়ির পুকুর পাড়ের রাস্তায়।
জীবনের একেকটা অধ্যায়,
যেন মঞ্চনাটকের একেকটা পর্ব।
কখনো মনে হয় এই তো বেশ
সুখের জীবন।
স্বচ্ছল, সুপ্রতিষ্ঠিত, সফল।
ভালোবাসি ফুল। পাখি দেখি সারাক্ষণ।
দ্বিতল বাড়ির বিস্তৃত আঙ্গিনায়
চড়ে বেড়ায় বাইশটা খরগোশ
সারাটা বিকাল জুড়ে
সবুজের কার্পেটে।
আঙিনায় বসে পড়ন্ত বিকেলে
অথবা নির্জন প্রত্যুষে
আপন মনে উদাস তাকিয়ে থাকি
আকাশের দিকে। দেখি
বঙ্গোপসাগরের পাশ ঘেঁষে
মেঘের রাজ্য দিয়ে যায় উড়োজাহাজ
বন্দরের ঠিকানায়।
চারিদিক এত সুন্দর ছবির মত সাজানো।
তবুও কেন জানি মনে হয়
সব ফাঁকি, ‘সব ঝুঁট হ্যায়’!
যা ছিল একসময় ভরপুর বর্তমান,
আজকে তা
জীর্ণ,
শীর্ণ,
বিস্মৃতপ্রায়,
মলিন স্মৃতি।
আশপাশের লোকদের দিকে তাকিয়ে মনে হয়,
এ পৃথিবী আমার নয়।
আমার ছিল যে পৃথিবী,
তা নেইকো আর।
আমার পৃথিবী আজ অন্যের।
নবাগত এই পৃথিবীতে আমি অপরিচিত,
অযাচিত,
অনাহুত।
আমি আজ প্রিয়জনের শোকগাঁথায়
স্মরণ-অপেক্ষায় অপেক্ষমান।
অভিমান করে লাভ নেই।
নেই একান্ত নিজের কিছু, জীবনটাই বাদে।
ফিরে যাবো সেই গ্রামে,
বাবুনগর, মাস্টার বাড়ি, পুরান পুকুর পাড়।
বহুদিন পরে, কখনো কেউ
কোনো এক উদাস ক্ষণে
হয়তো পড়বে এই লেখা,
হয়তোবা আচ্ছন্ন হবে আবেগে।
হয়তোবা শিউরে উঠবে
কোনো এক অব্যক্ত অনুভবে।
এটি ভাবতে ভালো লাগছে আমার। তাই,
লিখে গেলাম এই কথাটুকু
শৈত্যপ্রবল এই নিবিড় রাত্রিগভীরে।
আশ্চর্য …!
নাই হয়ে যাওয়ার পরেও
মানুষ থেকে যেতে চায় স্মরণে স্মৃতিতে।
আমিও নই এর ব্যতিক্রম।
জীবন
এক অনিবার্য বাস্তবতা।
এ’জীবন অপ্রার্থিত,
অথচ, মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত।
আমরা বেঁচে থাকি মৃত্যুর অনিবার্যতা ভুলে,
যেন ছিলাম আছি থাকবো অনন্তকাল।
নিরন্তর এই প্রাণপ্রবাহে
ব্যক্তিমানুষের, তার যাপিত জীবনের
বিশেষ কোনো মূল্য নেই,
জানি।
তবুও কেন জানি, বেঁচে থাকতে চাই।
নিজেকে মৃত্যুহীন ভাবতে ভীষণ ভাল লাগে।
অনেকেরেই প্রিয়, ভালবাসার পাত্র। অথচ,
বেলা শেষে আমি একা।
বন্ধুহীন।
নিঃসঙ্গ।
এক নবাগত পৃথিবীতে নির্বাসিত।
এই বন্ধুহীনতা আর একাকীত্ব আমাকে অনেক কষ্ট দেয়।
তোমাদের পৃথিবীতে আমিও ছিলাম একদিন।
ভেবেছিলাম, এতো আমারই দুনিয়া।
অথচ এ পৃথিবী নয় কারো।
আমারই মতো তোমরাও নাই হয়ে যাবে
সহসাই একদিন।
এ’ পৃথিবী হবে অন্যের, তোমাদের পরবর্তী প্রজন্মের।
আজ শুধু মনে পড়ে
কোনো এক বিষন্ন দুপুরে লিখেছিলাম,
জীবনের পরিণতি অনিবার্য
তবুও স্মৃতি
তবুও বিস্মৃতি
বাঁচিয়ে রাখে আমাদের।