(৭-৮ বছর আগে লেখা)
১. ভিশন– শরীয়াহভিত্তিক ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার প্রকাশ্য/অপ্রকাশ্য উদ্দেশ্যের পরিবর্তে একটা আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আপমর জনসাধারণের অর্থনৈতিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশ ও জাতিগঠনে ভূমিকাপালন।
২. কাজের গুরুত্বের শতকরা হার– স্বতন্ত্রভাবে দাওয়াত, সংগঠন, সমাজসেবা ও রাজনীতির উপর পূর্ণ মনোযোগ দেয়া। অর্থাৎ জনশক্তিকে এলাকাভিত্তিক ইউনিটে ভাগ না করে দাওয়াতী, সাংস্কৃতিক, সমাজসেবামূলক, বুদ্ধিবৃত্তিক, মিডিয়া, রাজনৈতিক কাজকর্ম ইত্যাদি এক এক ধরনের কাজে কেন্দ্র হতে প্রত্যন্ত পর্যন্ত এক একটা স্বতন্ত্র ও স্বাধীন সেট-আপ গড়ে তোলা। যারা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে অখণ্ড মনোযোগ সহকারে ঐকান্তিকভাবে আত্মনিয়োগ করবে। অন্য কোনো সেক্টরের কারো কাছে তাদের জওয়াবদিহিতা করতে হবে না।
এ ধরনের পেশাভিত্তিক ও বিকেন্দ্রীকৃত সংগঠন পদ্ধতিতে কেন্দ্র সমন্বয়ক ও সহায়ক (coordinator and facilitator) এর ভূমিকা পালন করবে। বর্তমান পিরামিড আকৃতির পরিবর্তে মূল সংগঠন হবে ছাতা-আকৃতির। সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে, ‘আরোপিত’ হবে না।
৩. কর্মসূচীগত ভারসাম্য রক্ষার উপায়– দাওয়াতী কাজ, সাংগঠনিক মজবুতীর কাজ, সমাজসেবামূলক কাজ ও রাজনীতির কাজগুলো ভিন্ন ভিন্ন মেজাজের। তাই একজন ব্যক্তি প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুসারে সব কাজই করবে – বর্তমান এই নীতির পরিবর্তে প্রত্যেকে নিজের প্রতিভা ও সুযোগ অনুসারে এর কোনো একটা অঙ্গনে কাজ করবে। বাদবাকী কাজের সাথে শুধুমাত্র অকেশনাল রিলেশান রাখবে। যেমন, যারা রাজনীতি করবে না তারা ইলেকশান আসলে ভোট দেবে। বিশেষ রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসাবে পরিচিত হবে না। রাজনীতির ওপর weightage যত কমই দেয়া হোক না কেন, অন্তর্গত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সদা জরুরী বিষয় হওয়ার কারণে এক পর্যায়ে তা প্রাধান্য লাভ করবেই। যেমনটা বর্তমানে হয়েছে। এর বিপরীতে, যারা রাজনীতি করবে, তারা সেটাতেই ফুলটাইম, কন্সিসটেন্ট এন্ড সিরিয়াসলি লেগে থাকবে।
৪. রিপোর্টিং সিস্টেম– দলীয় রিপোর্ট পর্যালোচনার ক্ষেত্রে কাজের পরিধি বা স্কোপ, গৃহীত পরিকল্পনা ও কৃত কাজের হিসাব পাশাপাশি থাকতে হবে। প্রথমটির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। নচেৎ, যা হবার, যা হয়েছে, তাই হবে। ব্যক্তিগত রিপোর্টিং সিস্টেম থাকবে না।
৫. জনবল কাঠামো– ক্যাডার সিস্টেমের পরিবর্তে সাধারণ আর দশটা সংগঠনের মতো করে সংগঠন গড়ে তোলা জরুরী। লেনিনের নেতৃত্বে দুনিয়াতে ক্যাডার সিস্টেম ইনট্রুডিউসড হওয়ার আগে যারা এ ধরনের কাজ করেছে, এরপর হতে যারা ক্যাডার সিস্টেমে দল পরিচালনা না করেও যা কিছু করেছে, এবং এখনো করছে, তারা যেভাবে চলেছে, এবং চলছে, সে মোতাবেকই দল পরিচালনা করা উচিত।
ক্যাডার সিস্টেম হতে উঠে আসা দলীয় নেতৃবর্গ যেহেতু জনগণের সমর্থনে, এমন কি দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভোটেও পদ লাভ করে না, (সহ-দায়িত্বশীলদের ভোটে নির্বাচিত হয়) তাই পপুলার হওয়ার, প্রো-পিপল হওয়ার কোনো তাড়নাও তারা সংগত কারণে বোধ করেন না।
ক্যাডার সিস্টেমে পরিচালিত দল হতে কোনো ক্রিয়েটিভ বা ক্যারিসমেটিক পার্সন উঠে এসেছে, দুনিয়াতে এর কোনো নজির নাই। লেনিন বা মাওলানা মওদূদীরা আগে থেকেই তেমন নেতা ছিলেন। তারা ওই সিস্টেম গড়ে তুলেছেন। নিজেরা এর প্রোডাক্ট নন। ক্যাডার সিস্টেমে পরিচালিত পার্টি ভোটের রাজনীতিতে কখনো ভালো করতে পারবে না। পারার কথা না। কোনো বিশেষ জাতীয় পরিস্থিতিতে ইলেকশানে ভালো করলেও তাদের আমলাতান্ত্রিক শীর্ষ ক্যাডারগণ কর্তৃক জনগণের পালস বুঝতে না পারার কারণে তারা ক্ষমতায় স্থিত হতে পারবে না।
৬. টার্গেট পিপল (বয়সগত দিক থেকে)– যাদের বয়স ন্যূনতম ২০ হতে অনূর্ধ ৩৫। বয়স্করা সংখ্যা-সুখ দেয়, ত্যাগ স্বীকার করে না।
৭. টার্গেট পিপল (পেশাগত দিক থেকে)– সব পেশার লোকদের মধ্যে সমগুরুত্ব দিয়ে কাজ করা উচিত। উপরেই বলা হয়েছে, প্রত্যেক পেশার লোকেরাই তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে কাজ করবে। এলাকাভিত্তিক সংগঠন না হয়ে পেশাভিত্তিক সংগঠন হবে।
৮. রিক্রুটমেন্ট প্রসেস– ক্যাডার সিস্টেমের মাধ্যমে রিক্রুটেড লোকদেরকে মডেল হিসাবে গড়ে তোলার পলিসির কারণে বর্তমানে “minimum recruit, maximum perfection” – এই ধারায় কাজ হচ্ছে। তার পরিবর্তে “maximum recruit” এর পলিসি গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য যথাসম্ভব সর্বোচ্চ মান অর্জনের প্রচেষ্টার বিষয়টিতে ছাড় দিতে হবে। নৈতিক ও ধর্মীয় মানকে ব্যক্তিগত হিসাবে রেখে নিছক উদ্বুদ্ধকরণের মধ্যে দলীয় নিয়ন্ত্রণকে সীমিত রাখতে হবে। যাতে করে লোকদের মধ্যে intrinsic morality গড়ে উঠে। সমতলের গবাদিপশুর মতো গলায় দড়ি দিয়ে বেঁধে না রেখে পাহাড়ি গরুর মতো আদর্শিক প্রেরণার ওপর আস্থা রেখে ছেড়ে দিতে হবে।
৯. পদের মেয়াদ– কারো মেয়াদই দু’বছরের বেশি, পর পর দু’বারের বেশি হওয়া উচিত নয়।
১০. উপদেষ্টা পরিষদ– শুরা ইত্যাদির মাধ্যমে বর্তমানে পরিচালিত যৌথ নেতৃত্বের পরিবর্তে আমীরের একক নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। এতে করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার পটেনশিয়ালিটিকে কাজে লাগাতে পারবেন। যদি না পারেন, তাহলে তিনি পরবর্তী পদ নির্বাচনে বাদ পড়বেন। কাউকে খুব বেশি ব্যর্থ হতে না দেয়ার সিস্টেমে, যতই যোগ্য হোন না কেন, কারো বিশেষ যোগ্যতা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখার তেমন সুযোগ থাকে না। প্রতিটা স্ট্রাইকের বিষয়ে ‘ফোরামের পরামর্শ’ নামক দড়িতে বাঁধা সাতারুরা সাতরাতে পারবেন না, ডুববেন, তাতে সন্দেহ কী?
১১. সেক্রেটারিয়েটগুলোর এফেকটিভনেস বাড়ানোর উপায়– দলের সব অভ্যন্তরীণ তৎপরতাকে ‘উদ্ধর্তন ফোরামে’র বাতাবরণে এক প্রকারের গোপন কার্যক্রম হিসাবে না রেখে অধিকতর ওপেননেস ও স্বচ্ছ্তার নীতি প্রবর্তন করতে হবে। যাতে করে কোনো বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষ লোকেরা সব সময়ে এনগেজড থাকা ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি সাধারণ অনুসারীরাও মাঝে মাঝে বিষয়গুলোকে প্রপারলি জানতে পারেন ও সামগ্রিকভাবে পরামর্শ দিতে পারেন। পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতি বা লাটিমের ঘূর্ণনের মতো।
১২. পেশাজীবী সংগঠন– একটি রাজনৈতিক সংগঠনের অধীনে কোনো পেশাজীবী সংগঠন রাখা মানে এক একটা তল্পীবাহক, অকার্যকর ও সংশ্লিষ্ট পেশায় নন-মেইনস্ট্রীম নামকাওয়াস্ত ধরনের সংগঠন-স্তুপ তৈরী করা। এগুলো জনশক্তিকে উদ্দীপ্ত করার কাজে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু তাতে করে দেশের মানুষ, মূলধারার সমাজ ও রাষ্ট্রের কোনো উন্নয়ন ঘটে না। পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে সত্যিকারভাবেই স্বাধীন হবে। নেতৃত্ব চাপিয়ে দিয়ে মূল সংগঠনের একটা ‘পার্শ্ব চরিত্র’ (extra image) তৈরা করা যায়, সংশ্লিষ্ট এরিয়াতে নেতৃস্থানীয় সংগঠন গড়ে তোলা যায় না। তাই, স্বাধীন ও স্বতন্ত্র মেজাজের এই সংগঠনসমূহের মধ্যে কেবলমাত্র মতাদর্শগত সাযুজ্য ও ইস্যুভিত্তিক ঐক্য থাকাটাই বাঞ্চনীয়।
১৩. কওমীধারার আলেমদের মধ্যে কাজ– আল্লাহর ওয়াস্তে “মাওলানা মওদূদী ইস্যু”কে বাদ দিতে হবে। ‘আমি শুদ্ধ’ প্রমাণ করে তর্কে জেতা যায়, কার্যকর ঐক্য হয় না। ইসলামী আন্দোলনের জন্য যথেষ্ট লিটারেচার গত পঞ্চাশ বছরে দেশে-বিদেশে তৈরী হয়েছে। গাছের তলারটা আর আগারটা সব সময়ে একসাথে খাওয়া যায় না। প্রয়োজনে পর্যাপ্ত অনুবাদ ও উপযোগী গ্রন্থ পূনর্লিখন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কওমীধারার আলেমরাই এ দেশে ইসলামী ধারার নেতৃত্বের আসনে সমাসীন। মানুষ তাদেরকেই চিনে। রাজনৈতিক দল হিসাবে যে মুখ্য পরিচয়, যেভাবেই হোক, প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে বা গড়ে উঠেছে, তা মুছে ফেলা অসম্ভব-প্রায়। তারচেয়ে, যাদেরকে মানুষ ইসলামের এক ধরনের অথরিটি হিসাবে মানে তাদেরকে আস্থায় নিয়ে আগানোই বুদ্ধিমানে কাজ। “বড় যদি হতে চাও, ছোট হও আগে”।
১৪. অভ্যন্তরীণ দলীয় ভুল–বুঝাবুঝি নিরসনের উপায়– সপ্ত আসমানের ‘তাবাক্বান তাবাক্বে’র মতো কঠোর, অনেক ক্ষেত্রে ফাঁপা, মানগত দলীয় স্তর বিন্যাসের পরিবর্তে কোরআন-হাদীসে বর্ণিত স্বচ্ছ ও গণ-জওয়াবদিহিতা নির্ভর বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করা উচিত।
১৫. নেতৃত্ব নির্বাচনে ফ্যাক্টর– (১) তাক্বওয়া, (২) দলের জন্য সেক্রিফাইস, (৩) দলীয় সিনিয়রিটি ও (৪) বয়োজ্যেষ্ঠতার পরিবর্তে যে ফিল্ডে দায়িত্বপালন করতে হবে সে ফিল্ডে কাজ করার ক্ষেত্রে (৫) সক্ষমতা ও সম্ভাবনাকে মূল গুরুত্ব দিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন করা উচিত। ৫ম বৈশিষ্ট্যটি থাকলেই শুধুমাত্র ১-৪নং বৈশিষ্ট্যগুলোকে এডিশনাল কোয়ালিটি বা ক্রাইটেরিয়া হিসাবে বিবেচনা করা যাবে। ভালো মানুষ হওয়া আর ভালো নেতা হওয়া – এক কথা নয়। সততা ও যোগ্যতার সম্মিলন শ্লোগান হিসাবে যতটা শ্রুতিমধুর, ততটা বাস্তবসম্মত নয়।
১৬. সংগঠনের যে স্তরকে শক্তিশালী করা জরুরী– পারিবারিক, পেশাগত ও সামাজিক জীবনে settled – এমন বয়স্কদের মাথাগুণে আত্মতুষ্টি লাভ করার চেয়ে তরুণদের মধ্যে কাজের ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে হবে। বিশেষ করে নারীদের কাজে লিবারেল ও ইনক্লুসিভ নীতি গ্রহণ করে সমাজের রক্ষণশীল ও আধুনিক ধারার মাঝে একটা মডারেট (wasatiyah) ধারা তৈরী না করে আগানো অসম্ভব।
১৭. পরিবার গঠনে করণীয়– আদর্শ পরিবার গঠন করতে হলে একই পরিবারের সবাইকে নেতা-নেত্রী বানানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। নেতাদের উঠতি বড়লোকি ও consumerist lifestyle-কে বজায় রেখে সন্তানাদিকে মূল্যবোধে সমৃদ্ধ করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ নেতানেত্রীদের জীবনমানকে সামর্থ্যের চেয়ে কিছুটা নীচে, যথাসম্ভব সাধারণ মানে রাখতে হবে। যাতে করে পরবর্তী প্রজন্ম মানবিকতা, মাটি ও মানুষের ষ্পর্শে থেকে আরোপিত কৃত্রিম নৈতিকতার পরিবর্তে টেকসই সামাজিক নৈতিকতা নিয়ে গড়ে উঠতে পারে।
১৮. মানোন্নয়ন– “The Gift of Magi”-এ বর্ণিত ‘one dollar and eighty seven cents’ মতো তুচ্ছ অর্জনকে বারংবার গণনার পরিবর্তে, অর্থাৎ নৈতিক মানকে কিছু গতানুগতিক স্কেলে কোয়ানটিফাই করার পরিবর্তে পড়াশোনা, এবাদাত ও সোশ্যাল কন্ট্রিবিউশানের মতো বিষয়গুলো চর্চার একটা ট্রেণ্ড চালু করতে হবে। ক্যাডার সিস্টেমের ‘সিস্টেমেটিক ফাঁকি’ বন্ধ হলে এই ট্রেন্ড আপনাতেই গড়ে উঠবে।
১৯. সাংগঠনিক পরিভাষা– পরিভাষা ব্যবহারের ধরনই বলে দিবে, এটি কি জনগণের সংগঠন, না কি বিশেষ সংগঠন। অন্যকথায়, একটা জীবন্ত জনআন্দোলন, বিশেষ সংগঠন ব্যবস্থায় পর্যবসিত হয়েছে কিনা তা যেসব লক্ষণ দিয়ে বুঝা যাবে তার একটি হলো, নিজস্ব সাংগঠনিক পরিমণ্ডলে তারা জনগণের কাছে অপ্রচলিত ধরনের কোনো puritanic পরিভাষা ব্যবহার করে কিনা। গণমানুষের ভাষায় কথা বলতে হবে।
২০. সংগঠনের ‘আকীদা’– এটি এক অদ্ভূত ব্যাপার। এক হাদীসে জিবরীলই তো আকীদার জন্য যথেষ্ট। এতো বর্ণনা কী দরকার? এতো এতো ক্লজ দেয়ার পরও কি বলা যাবে, কমপ্লিট হয়েছে? ইসলামের নীতি আদর্শকে ফলো করার কথা থাকলেই তো হলো। কোন্ সংগঠন কোন্ ধরনের আকীদাকে বোঝে তা সেই সংগঠনের কাজকর্ম থেকেই তো বোঝা যাবে। আগেভাগে এ ধরনের ঝামেলা সৃষ্টির তো দরকার নাই।
২১. সাংগঠনিক মজবুতি, গণভিত্তি ও যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি– সাংগঠনিক মজবুতি ও গণভিত্তি – এ দুটো জিনিস পরস্পর বিপরীত অনুপাতে সম্পর্কিত। একটি বাড়লে অন্যটি কমবে। দুটোই একসাথে হবে না। তাই, আমি দ্বিতীয়টার ওপরই অধিকতর গুরুত্ব দেয়ার পক্ষপাতী। গণভিত্তি সব সময়ে দেখা যায় না। কিন্তু সাংগঠনিক মজবুতি সদা দৃশ্যমান। যেন, চোঙ্গার মতো, দু’পাশেই সমান diameter.
একক সাংগঠনিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার ফলে (এটি অনিবার্য ছিলো) কেউ কেউ প্যারালাল সাংগঠনিক নেতৃত্ব ও সামাজিক নেতৃত্বের কথা বলছেন। এটিও সোনার পাথর-বাটি’র মতো অবাস্তব ফর্মূলা। বরং সাংগঠনিক নেতৃত্বকে একটা পার্শ্ব ও সহায়ক শক্তি হিসাবে রেখে গণনেতৃত্বকে স্বাধীন করে দিতে হবে। দায়িত্বশীলের পরামর্শের অদৃশ্য সুতার টান থাকলে দুনিয়া দুর্বল হতে বাধ্য, আখেরাতে যা-ই হোক।
অটোনোমাস গণ নেতৃত্বের ফলে সংগঠনের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা, সোজা কথায়, কোন্দল বৃদ্ধি পাবে। সুশৃঙ্খলতার সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। কিন্তু দিনশেষে মজবুত গণভিত্তি তৈরী হবে। বিবদমান নেতৃত্বের লেজিটেমেসি বা রেফারেন্স পয়েন্ট যেহেতু ইসলামী নৈতিক মূল্যবোধ ও আদর্শ, তাই সেটি রক্ষা করে ‘সাংগঠনিক নেতৃত্ব’র সাথে কেউ ঝামেলা তৈরী করলেও শেষ পর্যন্ত তাতে নেতৃত্বের নির্দোষ প্রতিযোগিতাই সৃষ্টি হবে। যোগ্যতর এগিয়ে যাবে। বলাবাহুল্য, ফেয়ার কম্পিটিশান ছাড়া নেতৃত্বের গুণগত মান উন্নয়ন অসম্ভব। কথাটা বাজেভাবে বললে, উপদলীয় কোন্দল প্রকারান্তরে দলকে শক্তিশালী করে। নেতৃত্বের জন্য প্রতিযোগিতা না থাকা ময়দানে দায়িত্বপালনের উদাহরণ হলো শান্ত জলে বৈঠা বাওয়ার মতো ব্যাপার। এ ধরনের মাঝিরা প্রকৃত নদী বা সাগরে গিয়ে ডুববে, অন্ততপক্ষে পথ হারাবে, সন্দেহ নাই।
শেষ কথা– এতক্ষণ যা বললাম, তা খুবই বাস্তবসম্মত ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নিঃসৃত অকপট পরামর্শ। যার জন্য যেখানে যে কাজেই এগুলো বিবেচনা করা হোক না কেন, এমনকি বরাবরের মতো এসব ‘তাত্ত্বিক কথা’কে শোনার দায়িত্বপালন শেষে “… ও কান দিয়ে বের করে দেয়া” তথা ট্রেশ করা হলেও এ কথাগুলো পয়েন্ট আকারে এভাবে বলতে পেরে স্বস্তিবোধ করছি। নিছক ‘তাওয়াছাও বিল হক্ব’ হিসাবে এগুলো বলা। অনেকেই জানেন, এ ধরনের কথাবার্তা আমি দীর্ঘদিন হতে বলে ও লিখে আসছি। জানতে চাইলে সরাসরি বলা এবং নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী যতটুকু পারি, কিছু একটা করার চেষ্টা করে যাওয়া। এর বাইরে ভাবিনা। ওয়া মা আলাই না, ইল্লাল বালা-গ ….!