Putting the cart before the horse কথাটির মানে হলো ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ানো। আমরা জানি, গাড়ি থাকবে ঘোড়ার পিছনে। কিন্তু কেউ যদি গাড়িকে ঘোড়ার আগে এবং ঘোড়াকে গাড়ীর পিছনে বাধে তাহলে কোনোক্রমেই সেটা ঘোড়ার গাড়ি হবে না। এই ধরনের অদ্ভূত ‘ঘোড়ার গাড়ি’তে করে কারো যাতায়াত বা কোনো মালামাল পরিবহন করা সম্ভব হবে না। ঘোড়ার গাড়িতে ঘোড়া থাকবে আগে, গাড়ি থাকবে পিছনে এবং ঘোড়া গাড়িটাকে টানবে। এটাই নিয়ম।
ঘোড়ার গাড়িতে ঘোড়াও থাকে গাড়িও থাকে। এখন কেউ যদি এটা দেখে মনে করে যে ঘোড়া আর গাড়ি – এ দুটো থাকলেই সেটা ঘোড়ার গাড়ি হবে তাহলে তা হবে ভুল। তার মানে, কোনো কিছুর ব্যাপারে যখন আমরা বিশেষ কোনো উদাহরণ ঠিক করব তখন যেখান থেকে এই উদাহরণটা নেয়া হচ্ছে সেখানে উদাহরণটা যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই আমাদেরকে তা নিতে হবে। উদাহরণটা যদি আমরা নেই কিন্তু সেটার seriality বা সম্পর্কগত পারম্পর্য বজায় না রাখি, তাহলে কখনো সেই উদাহরণটা আমাদের বিবেচ্য ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না।
এই ধরনের উল্টাপাল্টা করে কোনো ‘উদাহরণ’ কেউ যদি নিয়ে আসে সেটাকে আমরা ইংরেজিতে বলবো চেরি পিকিং ফ্যালাসি। এই ধরনের ফ্যালাসি বা বিভ্রান্তি হতে বাঁচার জন্য কোনো বিষয়ের মধ্যে যেসব বিষয় অপরিহার্য উপাদান হিসাবে অন্তর্গত থাকে সেই বিষয়গুলোর সবগুলোকে যথাযথভাবে গ্রহণ করেই তবে বিষয়টাকে নিতে হবে।
অজ্ঞেয়বাদী, নাস্তিক ও বামপন্থীরা সাধারণত এই অপকর্মটা করে। এর একটি উদাহরণ হলো সমকালীন মনোদর্শনের আলোচনায় আচরণবাদীদের পক্ষ হতে প্রস্তাবিত Computational and Representational Theory of Thought। সংক্ষেপে CRTT। এটি একটা এথিইস্টিক বস্তুবাদী যুক্তি। একটু খেয়াল করলে সহজেই বুঝা যায়, এটা একটা কুযুক্তি বা ভুল যুক্তি।
কম্পিউটার কিভাবে চালানো হয় তা লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাই, কম্পিউটার মূলত একটা যন্ত্র। অথচ সেটা অনেক বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করতে পারে। এ থেকে সিলোজিজম বা অনুমান করে দাবি করা হয়, মানুষের শরীরও যেহেতু উন্নত মানের যন্ত্রবিশেষ তাই মানুষও আদতে এক ধরনের উন্নতমানের কম্পিউটার। কম্পিউটারের মতো তাই মানুষেরও মন বা আত্মা বলে বস্তু-অতিরিক্ত কিছু নাই।
কম্পিউটার নামক যন্ত্রের সাথে মানুষও অনুরূপ ‘যন্ত্র’ – এই তুলনার সমস্যা হলো কম্পিউটারের থাকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। কম্পিউটার পরিচালনা করে মানুষ। এমনকি, কম্পিউটারসহ যে কোনো স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র নির্মাণ, নিয়মকানুন নির্ধারণ, সার্বিক পরিচালনা ও প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য ওভারঅল মানুষের ওপর নির্ভর করে।
মানুষকে কম্পিউটারের মতো মনে করলে আমাদের স্বীকার করতে করতে হবে, কম্পিউটারের মতো মানুষেরও ঊর্ধ্বতন একটা কর্তৃপক্ষ আছে, যারা বা যিনি মানুষ নামক ‘কম্পিউটার’কে বানাইছেন এবং পরিচালনা করছেন। যেসব সুপার কম্পিউটার কম্পিউটার বানায় এবং যেসব সুপার কম্পিউটার অটো রান করে, অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে সেগুলোও কেউ না কেউ ডিজাইন করছে, বানাইছে এবং চালু করেছে। কার্য-কারণ সম্পর্কের এই অনিবার্যতার দিকে খেয়াল করলে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বিশ্বাস বরং বেড়ে যাওয়ার কথা।
নাস্তিকদের পক্ষ হতে উদাহরণকে বিকৃত করে সেট করার এই প্রবণতার আমি নামকরণ করেছি fallacy of wrong example হিসাবে। স্পষ্টতই এটি তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক অসততা।