প্রশ্ন:আপনার এক ভিডিওতে শুনেছিলাম আপনার কোনো এক ছাত্র প্রশ্ন করেছিল, ‘আমের মধ্যে খেজুরের বিচি পাওয়া সম্ভব কি-না।’ আসলে আমি আপনার দেয়া জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারিনি!! হতেও তো পারে কোনোভাবে! ৫০-৫০ সম্ভাবনা।

মেসেঞ্জারে এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলেছি:

আম ‘আম’ হওয়ার জন্য তাতে শুধু আমের বৈশিষ্ট্যই থাকতে হবে। যেসব অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যের কারণে আম ‘আম’ হয়ে ওঠে, তার কোনোটি যদি পাওয়া না যায়, তাহলে সে জিনিসটাকে আমরা আম বলবো না। বরং যে জিনিসের বৈশিষ্ট্য সাথে সেটা মিলে যায় সেটাকে সেটাই বলবো।

সুতরাং, আমের মধ্যে আমের বৈশিষ্ট্যই থাকবে, খেজুরের বৈশিষ্ট্য থাকবে না, এটি আমরা কোনো আম না কেটেই বলতে পারি। আম আর খেজুরের কিছু অভিন্ন বা কমন বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন এ দুটোই হচ্ছে ভক্ষণযোগ্য ফল। তো, এইসব কমন বৈশিষ্ট্য সেগুলাকে ফল শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু যে কারণে আম আমই, খেজুর খেজুরই, সে কারণ ও বৈশিষ্ট্যগুলো এক্সক্লুসিভ।

যেই এসক্লুসিভ বৈশিষ্ট্যের কারণে কোনো একটা বিষয় সেই পার্টিকুলার বিষয় হয়ে ওঠে, অন্য কোনো বা ভিন্নতর কোনো জিনিসের মধ্যে সেই এক্সক্লুসিভ বৈশিষ্ট্য থাকবে না, এটাই তো স্বাভাবিক। এইটা জানার জন্য কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দরকার পড়ে না।

এভাবে, কোনো কিছু সম্পর্কে জানার জন্য, অস্তিত্ব বা সত্তাগত এই বিশেষত্ব বা এক্সক্লুসিভনেসকে ব্যবহার করাই হলো তত্ত্ববিদ্যা বা অন্টলজি।

তাত্ত্বিকভাবে যা অসম্ভব, তা বাস্তবে হওয়াটাও অসম্ভব। তাত্ত্বিকভাবে যা সম্ভব, তা বাস্তবে হতেও পারে, নাও হতে পারে।

আমের মধ্যে খেজুরের বিচি পাওয়াটা তাত্ত্বিকভাবে অসম্ভব। সেজন্য বাস্তবে সেটা হতে পারে কিনা তা বিবেচনা করার দরকার নাই।

যেমন, মানুষ কখনো আমগাছ হবে না। সুতরাং মানুষের মধ্যে আম গাছের বৈশিষ্ট্য আছে কিনা সেটা খোঁজার দরকার নাই। তবে মানুষটা ভালো হইতে পারে, খারাপ হইতে পারে। লম্বা হতে পারে, খাটো হতে পারে। মানুষ যে রকম হতে পারে সেরকম অনেক কিছুই হতে পারে। কোনো নির্দিষ্ট মানুষ কী রকম, সেটি অবশ্য যাচাই করে দেখার ব্যাপার।

আশা করি ontological method সম্পর্কে ধারণা করতে পেরেছেন। ফিলোসফি, বিশেষ করে মেটাফিজিক্স এই পদ্ধতিতে কাজ করে। কেউ যদি আমের মধ্যে খেজুরের বিচি পাওয়া বা না পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চান, তাকে সব খেজুর কেটে দেখতে হবে। সব খেজুর যেহেতু কেটে দেখা সম্ভব নয়, সেজন্য এ ধরনের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে আরোহ পদ্ধতি নামক এক ধরনের যুক্তিবিদ্যার নিয়মকে অনুসরণ করা হয়।

আরোহ পদ্ধতি বা ইন্ডাক্টিভ মেথডের যত ফিলোসফিক্যাল প্রবলেম থাকুক না কেন, এটি ছাড়া বিজ্ঞান অচল। এ রকম আরো বহু ফিলোসফিক্যাল কনসেপ্ট ব্যবহার করে বিজ্ঞান, বিজ্ঞান হয়ে ওঠে।

বিজ্ঞান যে দর্শন দিয়ে শুরু করে, দর্শনের উপর দাঁড়িয়ে থাকে এবং দার্শনিক সমস্যায় গিয়ে যাত্রা শেষ করে, সেটি অবশ্য বিজ্ঞানপূজারী তথা বিজ্ঞানবাদীরা জনসমক্ষে স্বীকার করতে চান না। হয়তো তারা বুঝতেও পারেন না।

পোস্টটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *