জীবনের সব ঋণ, একদিন
দিয়ে যাব সব
করে দিয়ে শোধ।
দিতে হবে না আর কোনো কৈফিয়ৎ।
ফিরে যাব বিধাতার কাছে।
কখনো হবো না কারো কষ্টের কারণ।
কারো অধিকার নষ্ট হবে না আর
আমার হাতে।
সন্ধ্যা, রাতে, দিবস-প্রাতে অনেক বেশি
সুখে থাকবে তোমরা।
আমাকে স্মরণ করে মলিন হবে না
তোমাদের সুন্দর সময়।
যদি পারো, ক্ষমা করো।
ছিলাম তোমাদের অযোগ্য আপন হিসেবে।
নিয়তির ফায়সালাকে মেনে,
ব্যর্থতার বোঝা কাঁধে নিয়ে
চলেছি জীবনের সমাপ্তি-পথে।
যতটুকু পারি দিয়ে যাব,
চাইবো শোধ করতে তোমাদের
অবশিষ্ট পাওনাটুকু।
ফিরে যাব মাটির কোলে,
বাবুনগর গ্রামে, মসজিদ ভিটায়,
বাবার কবরের ডান দিকে
এক চিলতে খালি জায়গায়।
তার আগে, হবো জীবন-পণ
তোমাদের পৃথিবীটাকে যতটা পারি
সুন্দরতর করার প্রতিজ্ঞায়।
আমাকে নিয়ে তোমরা বিব্রত হও,
সেটি চাই না। বিখ্যাত
নামী, দামি, প্রিয় হতে চাই না।
হতে চাই শিরোনামহীন,
যেন ছিলাম এই পৃথিবীতে অস্তিত্বহীন
এক অজ্ঞাত প্রাকৃতজন হিসেবে।
মুছে যেতে চাই তোমাদের স্মরণ হতে।
যেন কষ্ট না দেই
বেশি দিন আর।
তোমাদের মুক্ত করে, চিরতরে
চলে যাবো।
ফিরে যাবো তাঁর কাছে,
আড়ালে সমুখে, রহমতের ফেরেশতা দিয়ে
যিনি রক্ষা করেছেন আমাকে,
এ যাবৎকাল।
ফিরে যাব মহান প্রভূর দরবারে।
যাঁর কাছে
ফিরে গেছে আমার
বাবা, মা, মেজ ভাই, আত্মীয়, স্বজনসহ
দুনিয়ার সব বিগত মানুষেরা।
যাবো। যেতে হবে।
যাওয়াটাই এখানে নিয়ম।
পৃথিবীর এই আজন্ম নিয়মের যেহেতু
নেই কোনো ব্যতিক্রম।
তবু,
বাঁচতে চাই আরও কিছুদিন।
রয়ে যাওয়া দায়
যতটুকু পারি শোধ করে, এরপরে
নিতে চাই বিদায়।
জীবনকে নিয়ে রঙিন স্বপ্ন দেখার
সময় ফুরিয়েছে আমার,
এটুকু বুঝে গেছি।
তাই,
ছুঁড়ে ফেলে সব পিছুটান বন্ধন,
এখন সময় শুধু এগিয়ে যাওয়ার।
অসমাপ্ত যত কাজ সব, এখন
সমাপ্ত করার পালা।
ফুরিয়ে যাওয়ার আগে
এখন কুড়িয়ে নেয়ার সময়।
সাজিয়ে নেয়া সব অবিন্যস্ত পুস্পমালা।
নিভে যাওয়ার আগে
এখন যেন আমার
জ্বলে উঠার সময়।
এখন যেন সম্পন্ন করার সময়
বিদায়ের যত আয়োজন।
ফিরিয়ে দেয়ার সময় এখন
জীবনের যত ঋণ।
যদি থাকে তেমন জীবন,
দেখা হবে নিশ্চয়ই একদিন,
অন্য কোনো সম্পর্কসূত্রে হয়তোবা,
জীবন-নদীর কোনো বিস্তৃত বন্দরে।