ছেলেদের সাথে না বসে আলাদাভাবে মেয়েদের সাথে বসতে চায় এমন মেয়েদেরকে যারা ক্লাসে হেয় প্রতিপন্ন করে মন্তব্য করে, তারা কারা?

বোরকা, দাড়ি, টুপি, পাঞ্জাবী নিয়ে পরোক্ষভাবে কটুক্তি করাসহ ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচিতির কারণে সুযোগ পেলেই কাউকে তির্যক মন্তব্য করে, ভিকটিমাইজ করে, তারা কারা?

ধর্মপ্রাণ মানুষের একটা দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চাকে কূপমণ্ডুকতা হিসেবে গণ্য করে, তারা কারা?

বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে ছাত্রীদের জন্য অন্তত একটি বগি বরাদ্দ করার দাবিকে যারা ‌‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসেপ্টের সাথে যায় না’ এমন অদ্ভুত যুক্তিতে বিরোধিতা করে, তারা কারা?

বিয়ে করাকে যারা খারাপ চোখে দেখে অথচ কারো সাথে যে কোনো মাত্রায় ‘সম্পর্ক’ করাটাকে যারা কিছুমাত্র খারাপ মনে করে না, তারা কারা?

বাচ্চার মা, এমন ছাত্রীদেরকে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার উপযুক্ত বলে যারা হরহামেশা তিরস্কার করে, তারা কারা?

বিনোদন সংস্কৃতির সব উপাদানে যতটা সম্ভব যৌনতা মিশিয়ে না দিলে যাদের ভালো লাগে না, তারা কারা?

পারিবারিক বন্ধন ও মূল্যবোধের পরিবর্তে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতাকে যারা প্রমোট করে, তারা কারা?

জোর করে মানুষকে যারা তাদের মনমতো করে ‌‘আধুনিক ও প্রগতিশীল’ বানাতে চায়, তারা কারা?

‘ইলাস্টিক কবিতা’র মতো করে এই প্রশ্নমালাকে শত-সহস্র প্রশ্নে টেনে নেয়া সম্ভব। তারা কারা, তা আপনিও জানেন, আমিও জানি। কিন্তু বলা যাবে না। বললে ‘চাকরী থাকবে না’।

এই ধরনের প্রশ্ন যারা উত্থাপন করে, অতি-প্রগতির প্রবল আগ্রাসনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা নিজেদেরকে অনাহুত ও বিপন্ন বোধ করে। অথচ ব্যাপারটা এমন নয় যে তারা লেখাপড়ায় খারাপ কিংবা কম মেধাবী।

উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয় সম্পদ। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আজ কিছু সংখ্যক ‘শিক্ষা-দুর্বৃত্তের’ দখলে। তাদের দৃষ্টিতে রক্ষণশীল মূল্যবোধে বিশ্বাসী ছাত্র বা শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য হওয়ার জন্য যথেষ্ট যোগ্য নয়। সময়ের চাকাকে পিছনের দিকে ঘোরানো গেলে এরা মৌখিক পরীক্ষাভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় ফেরত যেতো, যাতে করে দেখে দেখে তারা ‌‘প্রতিক্রিয়াশীল’ স্টুডেন্টদেরকে বাদ দিতে পারে।

এসব বুদ্ধিবিকল ‌‘শিক্ষা দূর্বৃত্তদের’ দৃষ্টিতে নিজ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সমাজ ও ধর্মের পক্ষে যারা কথা বলে তারা ‘সংকীর্ণমনা’, ‘পশ্চাদপদ’ ও ‘প্রতিক্রিয়াশীল’। তারা বলতে চায়, পারিবারিক মূল্যবোধের বিপরীতে ফ্রি স্টাইল লাইফ মেইনটেইন করার পর্যাপ্ত সুযোগ লাভ করা যেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারভুক্ত সবার ‘বিশ্ববিদ্যালয়গত-অধিকার’ ….!

আমার মতো প্রান্তিক বুদ্ধিজীবীর কথা কারো কাছে যথেষ্ট মানসম্পন্ন বলে মনে না হলে, সমকালীন পাশ্চাত্য উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা কোত্থেকে এসেছে, কীভাবে তা গড়ে উঠেছে এ নিয়ে সলিমুল্লাহ খান স্যারের মতো লোকের কথা শুনতে পারেন। নিজে খোঁজখবর নিতে পারেন।

দেখবেন, বিশ্ববিদ্যালয় নামক পাশ্চাত্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে প্রাচ্যদেশে তখনকার সময়ে ডমিনেন্ট মুসলিম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘জামেয়া’র আদলে। তৎকালীন প্রাচ্যকে অনুসরণ করে পাশ্চাত্য ক্রমে ডমিনেন্ট হয়ে উঠেছে। এখন আমরা তাদেরকে অনুকরণ করছি। আফসোস …!

সার্কুলার না পেলে, প্রজেক্ট না পেলে পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থার কোনো ভাল বৈশিষ্ট্য এখানে চালু করার ব্যাপারে আমরা কোনো আগ্রহবোধ করি না। এর বিপরীতে, তাদের সব খারাপ বৈশিষ্ট্যগুলোকে আত্মস্থ করার ব্যাপারে আমরা যেন এক পায়ে খাড়া। অনেকবার বলেছি, তাই প্রমথ চৌধুরীর কথাটা এখানে আর না বলি।

ব্যক্তিজীবনে আমি ধার্মিক। তাই বলে এখানে আমি ধর্মকে টেনে আনছি না। বরং আমি এখানে প্রাচ্য জীবনদর্শন ও সমাজব্যবস্থার স্বাতন্ত্র্য এবং পাশ্চাত্য জীবনদর্শন ও সমাজব্যবস্থার সাথে এর পার্থক্যের বিষয়গুলোকে বিবেচনা করার কথা বলছি। তাদের সাথে আমাদের সভ্যতাগত যে পার্থক্য, ধর্ম তাতে একটামাত্র ফ্যাক্টর; একমাত্র কিম্বা প্রধান ফ্যাক্টর নয়।

একটা সভ্যতা যখন ভিন্ন কোনো সভ্যতার সাথে ইন্টারেক্ট অ্যান্ড কনফ্রন্ট করে, তখন সে অপর সভ্যতার ভালো বৈশিষ্ট্যগুলোকে নিতে পারে। তাতে করে সে অধিকতর সমৃদ্ধ হবে। আবার তার দৃষ্টিতে যা খারাপ, অপর সভ্যতার মানদণ্ডে যা ভালো, এমনকিছুকেও নিতে পারে। অপর সভ্যতার খারাপ বৈশিষ্ট্যগুলোকে গ্রহণ করার মাধ্যমে কোনো সভ্যতা ফ্রম উইদিন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মজার ব্যাপার হলো, কোনো সভ্যতা ডমিনেন্ট হওয়া সত্ত্বেও সে যদি অপর কোনো সভ্যতার কোনোকিছুকে ফিল্টারিং করা ছাড়াই গ্রহণ করে তাহলে উক্ত ডমিনেন্ট সভ্যতা ভিতর থেকে দুর্বল হয়ে একপর্যায়ে ভেঙ্গে পড়বে। এই আশঙ্কায় পশ্চিমা দেশগুলো প্রাচ্য থেকে মানুষজন নিলেও তাদেরকে, বিশেষ করে মুসলমানদেরকে, কন্ট্রোলের মধ্যে রাখতে চায়। একটা মাত্রার বাইরে নিজের ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চা করার অধিকার তারা ইমিগ্রেন্টদের দেয় না। ইমিগ্রেন্টদেরকে তারা তাদের সমাজে একীভূত (ইন্টিগ্রেশন) করে রাখতে চায়। তাদের এই চাওয়াটা তাদের দিক থেকে স্বাভাবিক।

বিজয়ী সভ্যতার নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোকে সানন্দে গ্রহণ করে কোনো ডরমেন্ট সিভিলাইজেশন কখনোই ডমিনেন্ট হয়ে উঠতে পারেনি, পারার কথাও না। তাই, ধর্মীয় মূল্যবোধের চেয়েও লেখার শুরুর দিকে উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর গুরুত্ব এ’দেশীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতাগত মূল্যবোধের সাথে অধিকতর সংশ্লিষ্ট।

আমরা যদি সবকিছুতে ওদের মতো হতে চাই তাহলে আমরা যত ভালই করি না কেন, আমরা আলটিমেটলি ওদেরই একজন বা অংশ হয়েই থাকবো। কখনো আমরা আমাদের মতো হয়ে উঠতে পারবো না। নিজের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যকে বিসর্জন দিয়ে কেউ কখনো আত্মপরিচয়ে পরিচিত হতে পারেনি। অবশ্য যাদের কাছে আত্মপরিচয়টা গ্লানির বিষয়, তাদের কথা ভিন্ন। আমাদের সাংস্কৃতিক জগতের একটা বিরাট অংশ বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রতি দিলখোলা। ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক। বরং কাজের কাজ হচ্ছে, মিষ্টিটা খেয়ে ‘বিচিটা’ ফেলে দেয়া। মিষ্টিটা খেয়ে ‘বিচিটা’ ফেলে দেয়ার এই কাহিনিটা শোনেন নাই?

আচ্ছা, বলছি। গল্পটা এ’রকম: এক মা কোনোমতেই তার সন্তানকে টেবলেট খাওয়াতে পারছেন না। তিনি জানেন, বাচ্চাটা মিষ্টি খেতে পছন্দ করে। তাই বুদ্ধি করে তিনি একটা রসগোল্লার মধ্যে টেবলেটটা পুরে দিয়ে বাচ্চাকে বললেন, ‘আচ্ছা, তোমাকে টেবলেট খেতে হবে না। তুমি বরং এই মিষ্টটা খাও।’ বাচ্চাটা বললো, ‘আচ্ছা খাবো। এখানে রেখে যাও।’ একটু পরে মা পাশের ঘর থেকে উচ্চস্বরে জিজ্ঞাসা করলো, ‘মিষ্টিটা খেয়েছো?’ বাচ্চাটা বললো, ‘হ্যাঁ, খেয়েছি।’ মা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘পুরোটাই খেয়েছো?’ বাচ্চাটা বললো, ‘হ্যাঁ খেয়েছি, তবে ‘বিচিটা’ ফেলে দিয়েছি।’

প্রযুক্তি হচ্ছে পাশ্চাত্য সভ্যতার রসগোল্লা। যৌন স্বাধীনতা হচ্ছে সেই রসগোল্লার ভিতর পুরে দেওয়া ট্যাবলেট বা ‌‘বিচি’। প্রযুক্তিগত দিক থেকে আধুনিক জীবনযাপন করছেন মানে আপনি মিষ্টির দোকানেই আছেন। মিষ্টি তো অলরেডি খেয়েছেন, আরো খাবেন। তবে ‘বিচি’সহ খাবেন, নাকি ‘বিচিটা’ ফেলে দিয়ে খাবেন, সেটা আপনার ওয়ার্ল্ড ভিউ আর রুচির ব্যাপার। ভালো থাকেন।

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Mohammed Shah Alam: যানবাহনে মেয়েদের জন্য আলাদা আসন রাখার বিষয়টি আপেক্ষিকভাবে দেখতে হবে। মেয়েরা যদি মনে করে নির্বিশেষে সর্বক্ষেত্রে তারা সমতার অধিকারী, পুরুষের চাইতে কোথাও তারা এক চুলাগ্রও কম না, সেক্ষেত্রে আমি মেয়েদের জন্য আলাদা রিজার্ভ আসন রাখার বিরোধী। তবে প্রাধিকার দেওয়া কিছু আসন চিহ্নিত থাকতে পারে লিঙ্গ নির্বিশেষে মজবুর বা ভালনারেবল মানুষের জন্য। এ শ্রেণীতে পড়বে সন্তান সম্ভবা মা, বাচ্চা কোলে নেওয়া মা, অতি দুর্বল বৃদ্ধ মানুষ, রোগ বা অসুস্থতার কারণে দাঁড়াতে অক্ষম মানুষ। সীমিত সংখ্যক এমন আসনগুলোতে যে কোনো ব্যক্তি বসবে, কিন্তু প্রাধিকার পাওয়ার বৈশিষ্ট্যের মানুষ উঠলে সামনের দিক থেকে ক্রমানুসারে এ আসনগুলো ছেড়ে দেবে। রিজার্ভ আসনের নামে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে কিছু আসন খালি রেখে দেওয়া বিবেচনা বিরুদ্ধ ব্যবস্থা।

সে সাথে মানুষের এ ‍“শিক্ষা” পাওয়াটা মানবতা ও সভ্যতার দাবী যে কোনো ভালনারেবল ব্যক্তির জন্য সবল, সক্ষম যে কেউ আসন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত থাকবে এবং দেবে। যে দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা এ শিক্ষাটা দিতে পারে না, সে দেশের জাতীয় শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন করার অবকাশ আছে।

আর শুধুমাত্র নারী বলেই যানবাহনে বসার জন্য প্রাধিকার পেতে হলে নারীরা যে অপেক্ষাকৃত দুর্বল সেটা সামগ্রিকভাবে জাতীয় নীতিমালায় ও মূল্যবোধে স্বীকৃতি পেতে হবে। সেটা কি নারীবাদীরা মেনে নেবে!

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনি চিটাগাং ইউনিভার্সিটি’র শাটল ট্রেনের কনটেক্সট আর সিচুয়েশনটা বোধহয় বুঝতে পারেন নাই। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

Mohammed Shah Alam: সামগ্রিকভাবে জাতীয় প্রেক্ষিতে কথাগুলো বলেছি।

FarhaNa Yesmin SUmaiya: আপনার মত একজন শিক্ষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে বলেই নিজের কাছে ভালো লাগে। আপনি ব্যতিক্রমধর্মী। অন্য আর ১০টা টিচারের মত প্রগতিশীল সেকুলারিজমের পোশাক পরিধান না করে ন্যায় নৈতিকতার সাথে দাঁড়িয়েছেন।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: নো বডি ইজ দ্যাট মাচ্চ গুড, নট ইভেন মি অর ইউ। আদম সন্তান মানেই মাত্রাভেদে গুনাহগার। এটা খুব বড় সমস্যা নয়। বড় সমস্যা হলো, যারা নৈতিকতার সীমারেখা তুলে দিতে চায় তাদের পক্ষ গ্রহণ করা। অনৈতিকতা বরাবরই ছিল, আছে, থাকবে। অনৈতিকতাকে স্বীকৃতি দেয়া বা না দেয়ার মাধ্যমে বোঝা যায় যে সমাজটা নৈতিক কিনা।

এখনকার সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, কিছু লোক প্রগতিশীলতার নামে অনৈতিকতাকে সমর্থন করছে। এমনকি ইসলামী রাজনৈতিক দলের অনেক লোকেরাও নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে অনৈতিকতাকে সমর্থন দিচ্ছে। ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক স্বার্থে সামাজিক মূল্যবোধ বিরোধীদের সাথে জোট বেঁধে তারা আন্দোলন করছে। ইউরোপ আমেরিকাতে বসবাসকারী মুসলমানদেরকেও দেখা যায় তারা গণহারে লিবারেল ডেমোক্রেটদেরকে ভোট দেয় যারা মুসলমানদেরকে এবং LGBTQওয়ালাদেরকে সমান তালে সমর্থন করে।

মানুষের মূল পরিচয় তার নৈতিকতাবোধ। এটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কোনো সাময়িক অর্জন আলটিমেটলি কাউকে লাভবান করে না।

Mostafa Mobinullah Azad: তথাকথিত পাশ্চাত্যপ্রেমীরা এদেশীয় নৈতিক-সাংস্কৃতিক অবক্ষয়কে তাদের বিজয় হিসেবে গণ্য করে!

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: তাদের দিক থেকে এটাই তো স্বাভাবিক। এটা একটা paradigmatic conflict, actually.

Anik Talukder: এইমাত্র জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও, তাদের কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও ঢালাওভাবে যাদেরকে অভিশপ্ত জাতি বলে ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে, সংখ্যায় কম হলেই যাদের মতামতের কোনো দাম থাকেনা, একজন ব্যক্তিমানুষ হওয়া সত্ত্বেও যাদেরকে অর্ধেক বিবেচনা করা হয়েছে, যারা সংখ্যায় কম হলে জিজিয়া কর দিয়ে থাকতে হয়, যারা পুরনো ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অভিশাপের ভয় থেকে বেরিয়ে প্রশ্ন করতে শিখেছে এরা তারা।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: মানুষ জন্মগতভাবে মর্যাদাপ্রাপ্ত। প্রাকৃতিকভাবে অথবা ঈশ্বরপ্রদত্ত। কর্মের কারণে মানুষ ভালো বা মন্দ হতে পারে। তাই জন্মগতভাবে কেউ অভিশপ্ত হয় না। কারো ক্ষেত্রে যদি এমনটাই হয়েছে বলে মনে হয়, তাহলে বুঝতে হবে তারা কারো কাছ হতে জুলুমের শিকার।

কথাগুলো ওভারঅল বলা। সুনির্দিষ্টভাবে কার ক্ষেত্রে কী হয়েছে না হয়েছে, তা ভিন্ন আলোচনার বিষয়।

Mohammad Ishrak: স্যার, এই ভদ্দরনোকটাকে বলুন পারলে যেন গণতন্ত্র চায়। পারলে যেন যেসব রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে ক্রসফায়ারে খুন করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে তাদের হয়ে কথা বলে। দেশে গণতন্ত্র খুন করে মানবাধিকার মারায়। মানুষ মেরে, জমিদারতন্ত্র কায়েম করে দেশের সংখ্যাগুরু মানুষকে লুটপাট করে এখন ডাকাতরা ভিক্টিম প্লে করে: ‍“মাম্মাহ, ওরা আমাদের এত ঘৃণা করে কেন?”

Khadeeza Tut Tahera: বাচ্চার মা-ও না, স্রেফ বিবাহিতা পর্দানশীনদেরকেই পাবলিক মেডিকেল কলেজ থেকে ন্যাশনালে পড়ার পরামর্শ দেয়। হিজাবী, বোরকা পরা, এবং পজিটিভলি চিন্তা করলে ‍“মাস্ক দিয়ে নেকাব করা” টীচাররা।

নন মুসলিম টীচাররা জাজমেন্টাল, নন-কোঅপ করেন, তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি করেন মগজ ধোলাই হওয়া মুসলিমরা। মাঝে মাঝে প্রচণ্ড দুঃখে কেবল শুকরিয়া আদায় করি যে আল্লাহ আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন নাই।

Ariful Islam Tapu: সমস্যা হচ্ছে ‍“আমাদের সভ্যতা” বলতে যা কিছু আছে এসবকে একটি দল পশ্চাৎপদতা জ্ঞান করে। পাশ্চাত্য সভ্যতাকে তারা মুক্তির মূলমন্ত্র হিসেবে দেখে। এ রোগের চিকিৎসা আছে কিনা জানা নেই।

একটি বয়েজ হাইস্কুলে সরকারি একটা কোর্স অনুষ্ঠিত হচ্ছিলো। মোটামুটি ছেলে-মেয়েরা সবাই আলাদা আলাদা বসতো। শেষে সার্টিফিকেট প্রদানের দিন স্কুলের এক ম্যাডামকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। উনি ছেলে আর মেয়েদেরকে আলাদা আলাদা বসতে দেখেই যেন তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠলেন। মেয়েদেরকে বকাঝকা দিয়ে রীতিমত ফোর্স করলেন ছেলেদের পাশে গিয়ে বসতে। কিন্তু কেউ যায়নি। সবাই আলাদা আলাদাই বসে ছিল।

MD Mashiur Rahman: স্যার, লেখাটি অসাধারণ ছিল এবং যুক্তিসঙ্গত। বর্তমানে ওপেন মাইন্ডের নামে যারা সেক্সকে প্রমোট করতে চায় তাদের জন্য একটি সুন্দর ক্যাপসুল ছিল, কিন্তু সংশয় বা চিন্তার বিষয় হচ্ছে তারা কি আদৌ এটা গলাধঃকরণ করবে?

আমি মনে করি, ধর্মনিরপেক্ষবাদ বা সেকুলারিজম বলতে কিছু নেই। যারা নিজেদেরকে ধর্মনিরপেক্ষ দাবি করে তারাও কোনো না কোনো ধর্মের অন্তর্ভুক্ত, তারাও তাদের মতবাদ বা তাদের ধর্মকে প্রমোট করতে চায় মানুষের মাঝে।

Feroz Ahmed: দায়বোধ থেকে আওয়াজ দেওয়া আর জ্ঞানের হক আদায় করার মতো জ্ঞানী দেখি কোথায়? শিক্ষক তো বরং পেশাজীবী, অনেকটাই ছা-পোষা, প্রায়শ কৌশলী। ভেতরের আলো যেটুকু আছে তা প্রায় নাই, বন্ধ। আপনার ভেতরের আলো ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে। আল্লাহ রহম করুন।

Humayra Luba: প্রতিটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এটলিস্ট একজন করে আপনার মত থাকলে আমাদের এতো কটূক্তি/বৈষম্য সহ্য করতে হতো না হয়তো। এট লিস্ট আশাতে থাকতাম একজন আছেন যিনি বোঝেন।

Shahinoor Islam: বরাবরের মতো অসাধারণ উপস্থাপনা করেছেন জনাব! অনার্স লাইফে প্রায় প্রতিদিনই দাড়ি, টুপি, পাঞ্জাবির কারণে কটুকথা শুনতে হয়েছে বি.সি.এস ক্যাডার শিক্ষকদের দ্বারা। কটুক্তির মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে সহ্য করতে না পেরে চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরিয়েছি।

বোনদের তো আরো বেশি কটুকথা শুনতে হয়েছে যেটা অবর্ণনীয়! ‍“প্যাকেটে মুড়িয়ে আমার ক্লাশে আসার দরকার নেই” এমনটাও বলতেন।

I hate Bangladesh educational system! 😢

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *