একা থাকি যখন, ভালো লাগে অনেক। নিজেকে খুঁজে পাই উপলব্ধির গভীরতায়। যখন কেউ সাথে থাকে, ভালো লাগে ততোধিক। বিস্ময়ে দেখি সজীব প্রাণ। এক একটা মানুষ যেন চলমান এক একটা ইতিহাস। ভালো লাগার। আবেগের। অনুভূতির। স্বপ্নের। বিদ্বেষের। মূঢ়তার। অহংকারের। জ্ঞানের।
মানুষ আছে বলেই জগতটা টিকে আছে। কেননা, মানুষই একমাত্র প্রাণী কিংবা অস্তিত্ব যে কিনা পরোয়া করে এ জগতের, জীবন নিয়ে ভাবে, প্রশ্ন করে সব কিছুকে নিয়ে। বেঁচে থাকার জৈবিক প্রয়োজনের বাইরে গিয়ে মানুষই তো গড়েছে বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, সাহিত্য ও অর্থনীতি। কোনো প্রাণী কি রান্না করে খায়? মানুষ ভিন্ন অন্যদের আছে আবাসস্থল। নাই সভ্যতা।
যে মত ও পথেরই হোন না কেন, মানুষ মাত্রই পবিত্র। মহান। ততোধিক মহান তিনি যিনি এমন এক আশ্চর্য সৃষ্টির কারিগর নির্মাতা। পৃথিবীর জটিলতম সব যন্ত্রের চেয়েও অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ কিছু হলো একজন ব্যক্তিমানুষ। মানুষ মাত্রই ভালোবাসার যোগ্য। পাপীকে নয়, ঘৃণা করতে হবে পাপকে। মানুষের প্রতি ভালোবাসা হারানোর চেয়ে বড় ক্ষতি আর নাই।
মানব জন্মের জন্য আমি কৃতজ্ঞ। কত সৌভাগ্য আমার-আপনার। কতো অমূল্য এ জীবন! ভেবেছেন কখনো? অন্য কিছু থাক বা না থাক, জীবন তো আছে। হোক সেটা কষ্টের। জীবনের চেয়ে বড় কোনো সম্পদ নাই। শুদ্ধ অনুভবের চেয়ে মূল্যবান অর্জন নাই। জীবনই হলো সবচেয়ে দামী। তাই মানুষের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু হতে পারে না। মানুষ মাত্রই পবিত্র। যদিও তার বিশ্বাস ও কর্মে গলদ থাকে।
আমার কাছে প্রাণের উষ্ণতার চেয়ে সুখকর কিছু নাই। মানুষের মধ্যে যারা প্রাণখোলা নয়, তাদের এড়িয়ে চলি। কী অবাক শঠতায় নিজেকে তারা বঞ্চিত করে জীবনের মোহময় আবেগ থেকে! যার আবেগ নাই তার অনুভূতি জড়। আবেগই হলো নীতি ও আদর্শের উৎসভূমি। আবেগ হলো মনুষ্যত্বের সারসত্তা। ভাবাবেগশূন্য জীবন বেঁচে না থাকার শামিল।
মানুষের বেঁচে থাকার প্রেরণা অদম্য। জীবনের মোহ আর বেঁচে থাকার স্বপ্ন না থাকলে সব অর্থহীন হয়ে পড়তো। সব নিরর্থক হতো যদি না থাকতো অন্তহীন এ জীবন প্রাণ প্রবাহ।
যখন একা থাকি তখন নিজের মধ্যকার এই চেতনবিশ্বের হয়ে ওঠি তুমুল অভিযাত্রী। নিজেকে ফিরে পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় একাকিত্বের প্রতিটা ক্ষণে। যখন কারো সাথে থাকি তখন উপভোগ করি মানব সঙ্গসুখের অমীয় ধারা। সাথের জন হোক পূর্ব পরিচিত কিংবা অপরিচিত। হোক বন্ধুভাবাপন্ন কিংবা সন্ধিগ্ধ। সম্পর্ক গড়তে অসুবিধা হয় না এমনকি বিদ্বেষঋদ্ধ হলেও। মানুষ হলেই হলো। মনে হয় শুধু, মূল্যবান একটা সময়ের সম্ভাবনা নিয়ে আমরা মুখোমুখি।
মানুষকে ভালোবাসি। সম্মান করি। পাশের জন যদি কোনো কারণে ভুল বুঝে ঘৃণা করে আমাকে তবুও অনুরূপ ঘৃণা ছুঁতে পারে না আমাকে। অন্তরের সংকীর্ণতা কখনো গ্রাস করেনি, নির্ঘাত স্মরণ করতে পারি। মুক্ত থেকেছি বরাবর মানুষকে ঘৃণা করার দুর্ভাগ্য হতে। বিরোধিতা করেছি অনেকের। এখনো করি। কখনো কখনো মোকাবিলা করেছি প্রবলভাবে। কিন্তু মানুষ হিসাবে সম্মান করেছি সবাইকে।
ঘৃণা আর বিদ্বেষমুক্ত প্রত্যয়ী জীবন দিয়েছো প্রভূ, এরচেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে!
ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Sourav Abdullah: “মানুষ মাত্রই পবিত্র।” কথাটা যদি আরো বিশদভাবে বলতেন…
Mohammad Mozammel Hoque: এবাদতের জন্য পবিত্রতার সাথে মানবিক পবিত্রতাকে একাকার করে ফেলবেন না, প্লিজ!
Sourav Abdullah: এবাদতের জন্য পবিত্রতার বাহিরে ভুল/অন্যায় কাজের মাধ্যমেও আমরা নিজেদের আত্মিকভাবে অপবিত্র করে ফেলি, তখন কী বলতে পারি?
Sadikur Rahman Abid: স্যার, আমি আপনাকে ভালোবাসি আল্লাহর জন্য।
Mohammad Mozammel Hoque: ‘যে ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসলো আল্লাহর ওয়াস্তে, কাউকে ঘৃণা করলো আল্লাহর ওয়াস্তে সে পূর্ণ করে নিলো তার ঈমানকে।’ – বলেছেন আল্লাহর রসূল মুহাম্মদ (সা.)।
MD Khasru Azad: টিটু তোমার লেখাগুলো ভালো লাগে। পড়ি আমি, মাঝে মাঝে কঠিন লাগে। ভালো থেকো। দোয়া করিও।
Jahirul Islam: মানুষের প্রতি ভালোবাসা হারানোর চেয়ে ক্ষতি আর নেই।
Mohammad Mozammel Hoque: যারা সমাজ সংস্কার করতে চায়, বিশেষ করে বললে যারা নিজেদের মুসলমান তথা ইসলামী আন্দোলনের কর্মী দাবি করে তাদের কাজের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো মানুষকে সম্মান করা। ভদ্রতা ও কৌশল হিসাবে নয়। বরং অন্তর থেকে মানুষকে ভালোবাসা।
দুঃখজনক হলেও সত্য, ইসলামপন্থীদের অধিকাংশই মনে করে তারা যেন জাতির ত্রাণকর্তা। মানুষকে যেন তারা উদ্ধার করছে। মানুষকে উদ্ধার করে একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। দায়ীর (সত্যের পথে আহ্বানকারী) ভূমিকা মূলত তার নিজেকে বাঁচানো। যেহেতু দাওয়াত দেয়াটা তার উপর ফরজ।
Arif Elahi Shamim: মুহতারাম, সূরা তাওবার ২৮ নাম্বার আয়াত!!! ‘পাপীকে নয় পাপকে ঘ্রিনা কর’ কথাটির শরীয়তী ভিত্তি কি ব্যাক্যার দাবি রাখে ।
Mohammad Mozammel Hoque: এবাদতের পবিত্রতার বিবেচনায় ওই আয়াতে মুশরিকদেরকে অপবিত্র বলা হয়েছে। এ জন্য বলা হয়েছে, এরপর থেকে তারা এই পবিত্র মসজিদে এবাদতের জন্য আর আসতে পারবে না। এ ধরনের ‘অপবিত্রতা’ তো মুসলমানদের ক্ষেত্রেও সময়ে সময়ে প্রযোজ্য হয়ে থাকে। আমরা জানি, ‘বড় ধরনের নাপাকী’র কারণে মুমিনরা সাময়িকভাবে এবাদত করতে পারে না। এর অতিরিক্ত হিসাবে নারীরা তো নিয়মিতভাবে কিছুদিন ‘অপবিত্র’ থাকে।
আমার লেখায় যে মানবিক পবিত্রতার কথা বলেছি তার সাথে এবাদতের পবিত্রতাকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হচ্ছে না।
Faisal Alam: স্যার, এই বাস্তবতাকে কতজন স্বীকার করে?
Mohammad Mozammel Hoque: আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ওয়া লাক্বাদ কাররামনা বনি আদম। অর্থাৎ আমি সম্মানিত করেছি আদমের সন্তানকে। তাই মানুষ মাত্রই সম্মানের পাত্র। মর্যাদার অধিকারী। এই অর্থে মানুষ আল্লাহর মহান সৃষ্টি। আশরাফুল মাকলুকাত।