১. সম্পত্তি তথা অবকাঠামো ও আন্দোলন:
অবকাঠামো গড়ে তোলা দরকার। কিন্তু এর আগে দরকার সেই এস্টাবলিশমেন্টকে হজম করার মতো যোগ্যতা। পরিশ্রম করে, গায়ের জোরে, মুখস্ত করে, প্রবল ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভালো রেজাল্ট বাগিয়ে, চ্যানেল মোতাবেক লেগে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার হয়েছেন। একই পন্থায় নামের আগে ড বিসর্গ (ডঃ) ও একাধিক পোস্ট-ডক লাগিয়ে দেশে-বিদেশে পেপার-সিনোপসিস দিয়ে বেড়াচ্ছেন – এমন লোকজনকে দেখি, বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা ধান্ধাবাজ হিসাবে পরিচিত। আবার এমন বেশ কিছু শিক্ষক আছেন যাদের অনেকেরই তেমন কোনো দ্বিতীয় ডিগ্রি ও প্রকাশনা নাই, অথচ তারা একাডেমিশিয়ান হিসাবে সুপরিচিত ও দল-মত নির্বিশেষে সবার শ্রদ্ধেয়।
কথাটা এজন্য বললাম যে, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থাও হয়েছে প্রথমোক্ত ধরনের শিক্ষকের মতো। কষ্ট করে তিনি অনেক অর্জন করেছেন কিন্তু কারো প্রত্যাশা ও স্বপ্নের সওদাগর হতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ভালো শিক্ষকের মতাদর্শকে সমর্থন না করলেও তার মতো ব্যক্তিত্ব হওয়ার স্বপ্ন দেখে। নন-একাডেমিশিয়ান (তার যতই উচ্চতর ডিগ্রি থাকুক না কেন) শিক্ষকদেরকে রাজনীতি, ছাত্রদের সহযোগিতা ইত্যাদি কারণে সবাই যতই সমাদর করুক না কেন তাদেরকে আদর্শ মনে করে না। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনে কাজে লাগায় মাত্র।
তেমনি জামায়াতও বুদ্ধিবৃত্তি (যা হলো অনলি এক্সকিউজ ফর ইসলাম) ও সামাজিক নৈতিকতার মারাত্মক সংকটে (যেমন, দলবাজী ইত্যাদি) পড়ে জাতির আশা-আকাঙ্খার কেন্দ্রস্থল থেকে ছিটকে পড়েছে। মানুষ জামায়াতকে এর (বাহ্যত) কঠোর সাংগঠনিক শৃংখলার জন্য কম্যুনিস্ট পার্টির সাথে তুলনা করে। যা নিয়ে অবুঝ জামায়াত কর্মী ও নেতারা আহ্লাদিত হয়ে থাকেন। কম্যুনিস্ট পার্টির সাথে জামায়াতকে তুলনা করাটা যে জামায়াতের জন্য ডিসক্রেডিট তা বোঝার যোগ্যতাও উনারা অনেকাংশে হারিয়ে ফেলেছেন। এটি জামায়াতের নিম্ন-মধ্যবিত্তসুলভ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।
বিগত প্রায় তিরিশ বছর হতে আমি ‘মাসিক পৃথিবী’ নিয়মিত রাখি। অধ্যাপক নাজির আহমদ যেমন সংগঠনবাদিতার পারফেক্ট এমবডিমেন্ট, তেমনি এই সম্মানিতের মাসিক পৃথিবীও জামায়াতের শ্যালোনেসের আদর্শ উদাহরণ। এতে কোরআনের আয়াত থেকে শুরু করে কৃষি – সব বিষয়ে কিছু না কিছু পাবেন। থট প্রোভোকিং ম্যাটেরিয়্যাল হিসাবে সেগুলো ভালো জিনিস। সমস্যা হলো এসব ছোট ছোট বই ও লেখা পড়ে কেউ তো কাঙ্খিত মানের জ্ঞানী হতে পারবেন না। অথচ এ ধরনের মোটিভেটিং ট্রেন্ডের সংক্ষিপ্ত লেখা পড়েই জামায়াতের অনেক লোকজন নিজেদেরকে যথেষ্ট জ্ঞানী মনে করেন। বড় বড় আলেম ও বিশেষজ্ঞদেরকে তারা হেদায়েতী জ্ঞান দিতে পরম উৎসাহবোধ করেন!?
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশে শিক্ষিত ইসলামপন্থীদের ব্যাপকভাবে কার্যত আহলে হাদীস বনে যাওয়ার এটাই কারণ। তারা হয়তো ‘রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নামায’ জাতীয় শিরোনামের কোনো বইয়ে কিছু সহীহ হাদীস সম্পর্কে পড়েছেন। আর ভাবছেন, এই হাদীস যেহেতু সহীহ তাহলে আমল করতে অসুবিধা কী? অর্থাৎ কোনো অসুবিধা নাই। অথচ, যদি তারা সরাসরি হাদীসের কিতাবগুলো থেকে অধ্যায়ভিত্তিক পড়াশোনা করেন, জাল হাদীস সম্পর্কে মূল সূত্রগুলো থেকে জানার চেষ্টা করে মাওজুগুলো বাদে বাকি হাদীসগুলোকে সমন্বয় করার চেষ্টা করেন, তাহলে বুঝবেন, কোনো বিষয়ে একটা বা কতিপয় হাদীস বিশেষকে পেয়েই আমলের জন্য দৌড় দেয়া ঠিক নয়। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সব নস তথা রেফারেন্সগুলোকে বিবেচনা করে সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। একটা মতকে প্রাধান্য দিলেও সনাতনী ফিকাহর মতো বাকিগুলোর যে কোনোটার উপর আমলের পথ রুদ্ধ না করে একটা প্লুরালিস্টিক অবস্থানে আসতে হবে। ব্যাপার হলো, জামায়াত কোনো বিষয়েই প্লুরালিজমে বিশ্বাসী নয়। সবাইকে এক করতে চায়। অথচ সবাই শুধুমাত্র আকীদাগতভাবে এক এবং বাদবাকি ব্যবহারিক বিষয়ে যার যার মতো হওয়ার কথা ছিলো। (প্রকাশ্য) বিরোধিতা করলে খারিজ হয়ে যাবে – এ ধরনের সংবেদনশীল পরিবেশ মোটেও কাম্য নয়।
২. জামায়াতের কিছু প্রতিষ্ঠান:
বিআইএ: চট্টগ্রামের লোক হিসাবে আমি দুইটা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলবো। বিআইএ – চট্টগ্রামের জামায়াত-শিবিরের লোকজনের নিকট অতি পরিচিত একটা নাম। ‘বাংলাদেশ ইসলামী একাডেমী’ নামে দুই যুগ পূর্বে চালু হওয়া এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে একটা চারতলা বিল্ডিং। এর নিচতলায় একটা খোলা স্পেস, গ্যারাজ, ওজুখানা ও এক পাশে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলার অফিস। দোতলায় মূল মসজিদ। এক পাশে কিছু গেস্ট রুম। তিন তলায় মসজিদের এক্সটেনশন। এক পাশে মহানগরী জামায়াতের আমীরসহ কর্মকর্তাদের রুম। চার তলায় বায়তুলমালসহ বিভিন্ন বিভাগের অফিস। বিআইএ কার্যালয়ের প্রবেশমুখে দুটি বইয়ের দোকানসহ কিছু দোকান রয়েছে। এই পুরো স্থাপনায় সাধারণ মানুষের বসার, কিছু পড়ার, কিছু দেখার কোনো ব্যবস্থা নাই। পুরো বিল্ডিংটি মহিলা, জুতা ও ধূমপান নিষিদ্ধ এলাকা। মাঝে মাঝে ইন্টেলিজেন্সের লোকজন ছাড়া এই মসজিদে কোনো স্থানীয় লোককে কখনো নামাজ পড়তে আসতে দেখিনি। বহু দিন-রাত সেখানে কাটিয়েছি। এখানে রিসেপশনের কোনো ব্যবস্থা নাই। এক কথায়, জামায়াতের জনবিচ্ছিন্নতার জ্বলন্ত নমুনা!
মামুন স্মৃতি পাঠাগার, চবি: ১২/১৪ বছর আগে শিবিরের ছেলেরা আমাকে ধরলো ইনডেক্সের টাকা দিয়ে তারা চবিতে একটা জায়গা নিতে চায়। আমি যেন বৈঠকে সেটা পাশ করিয়ে দেই। বৈঠকে আমি ছাড়া আর কোনো জামায়াত দায়িত্বশীল এটির অনুমতি দেয়ার পক্ষে ছিল না। আমি যুক্তি দিলাম– ছাত্ররা হলের বাহিরে একটা স্থাপনা পেলে সেখানে আবৃত্তি ও গান চর্চা করতে পারবে। একটা কম্পিউটার ল্যাব করতে পারবে, ক্যারিয়ার এইডের কাজ কাজ করতে পারবে ইত্যাদি। এক পর্যায়ে তাদেরকে সেটি কেনার অনুমতি দেয়া হলো। এখন সেটি ছাত্রদের একটা মেস, নাথিং এলস!
৩. সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে উন্নয়ন:
এটি একটা গোলক ধাঁধাঁ। যে কোনো পথের একটা শুরু ও শেষ থাকে। এরপর আবার নতুন কোনো দিগন্তে অভিযাত্রা। আর গোলক ধাঁধাঁ হলো একই বৃত্তে দিনরাত ছুটে চলা। ট্রেডমিলে দৌড়ানোর মতে। যেখান থেকে শুরু, শেষ পর্যন্তও সেখানে। ব্যায়ামের জন্য ট্রেডমিলে দৌড়ানো যেতে পারে। কিন্তু কোথাও পৌঁছতে হলে সত্যিকারের পথেঘাটে হাঁটতে হবে, পারলে দৌড়াতে হবে। ‘ওয়া সা-রিয়ু ইলা মাগফিরাতিম-মির-রাব্বিকুম’ বলতে কোরআন শরীফে তাই বলা হয়েছে।
সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে উন্নয়নকে অধ্যাপক গোলাম আযমের পরিভাষায় ‘খেদমতে দ্বীন’ বলা হয়েছে। মুখে অহরহ ইসলামী আন্দোলন দাবি করা হলেও বাস্তবে জামায়াতে ইসলামী খেদমতে দ্বীনের একটা পারফেক্ট উদাহরণে পরিণত হয়েছে। বিপ্লবের পরিবর্তে এটি এখন বিবর্তনে বিশ্বাসী। শাহাদাতের চেয়েও টিকে থাকার নীতিতে নির্ভরশীল। মাওলানা মওদূদী কিছু বিপ্লবী চেয়েছিলেন, সমাজের লোকেরা যাদের পাগল বলবে। কোরআনের সূরা বাকারার দ্বিতীয় রুকুর শুরুতেও তা বলা হয়েছে। জামায়াতের লোকজন দুনিয়াদারীর দিক থেকে এখন ‘হুশ ঠিক মাথা খারাপ’ হিসাবে নিজেদের প্রমাণ করছেন।
ভালো ভালো দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে দুনিয়াদারী, আর্থিক আমানতের খেয়ানত ইত্যাদি কারণে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। সবকিছু ‘আমাদেরকরণ’ করতে করতে যথার্থই প্রতিক্রিয়াশীল হিসাবে এখন রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আঞ্চলিতকতা, চাঁদাবাজি ইত্যাদি যত নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যাবলী এখন জামায়াত দায়িত্বশীলদেরও সাধারণ বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে!
কামারুজ্জামান ভাইয়ের সাথে জরুরি সরকারের শুরুর দিকে উনার বাসায় একবার দেখা। উনার দুটি কথা বেশ মনে আছে। তিনি বললেন, সবকিছু আমাদেরকরণ করতে করতে পরিস্থিতি এ পর্যায়ে এসেছে যে, কারো লাশ দাফনের জন্য কোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠান হতে সাহায্য চাইলেও উনারা বলেছেন, লোকটা কি আমাদের ছিল!?
কামারুজ্জামান ভাই সাপ্তাহিক সোনার বাংলা সম্পর্কে বললেন, জামায়াত যদি সাপ্তাহিক সোনার বাংলাকে স্বাধীন নীতিতে চলার অনুমতি দেয়, এমনকি জামায়াতের কোনো সমালোচনা হলেও, তাহলে এই পত্রিকাটিকে জনপ্রিয় করে তোলা কোনো ব্যাপার নয়। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জামায়াত পরিচালিত দৈনিক কর্ণফুলীর কথা নাইবা বললাম।
৪. সাংগঠনিকভাবে মিথ্যা বলা:
যুদ্ধের ময়দান, নিরপরাধীর প্রাণ রক্ষা, দাম্পত্য সম্পর্ক রক্ষা – এই তিনটা ক্ষেত্র ছাড়া কোথাও মিথ্যা বলা জায়েয নাই। রাজনীতির ময়দানে দ্ব্যর্থবোধক কথা বলার অনুমতি আছে। এছাড়া মুসলমানদের সাধারণভাবে সত্যবাদী হতে হবে। এটি ব্যক্তির জন্য যেমন প্রযোজ্য তেমনি দলের জন্যও প্রযোজ্য।
শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিদের মধ্যে রেজাউল করিমই সর্বপ্রথম জামায়াত নেতৃত্বের সাথে একসাথে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন এবং ক্যান্টনমেন্টে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। উনাকে আমি এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। শিবির যদি জামায়াতের অঙ্গসংঠন হয়ে থাকে, সে কথা প্রকাশ্যে বলা হয়নি কেন? শিবিরের সংবিধানের ৫২ নং ধারা কার্যকর করা হচ্ছে না কেন? জামায়াতের অঙ্গসংগঠন হিসাবে নিজেকে উপস্থাপনের মাধ্যমে শিবিরের সংবিধান কি লংঘিত হয়নি? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে এম এন হাসানের লেখায়। যেখানে তিনি জামায়াতের উপর একটা পিএইচডি গবেষণার সূত্রে দেখিয়েছেন, জামায়াতের রিক্রুটমেন্টের মূল অংশ শিবির হতে আসে। শিবির না থাকলে জামায়াত বহু আগেই মুসলিম লীগের মতো ইতিহাস হয়ে যেত। তাই শিবিরকে আলাদা হতে দেয়া যাবে না।
তাহলে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে একটা আলাদা সংগঠন কায়েম করা হলো কেন? কারণ, মানুষ বৈচিত্র্য খোঁজে, অকলুষতাকে পছন্দ করে। শিবির নিয়ে জামায়াতের ইঁদুর-বিড়াল খেলার মতো আচরণ মিথ্যা না বলার সাধারণ নৈতিকতাকে লংঘন করছে। হ্যাঁ, এরপরও তো রিক্রুটমেন্ট হচ্ছে। কারণ, বাংলাদেশের সবখানেই লোক বাড়ছে। বলুন, কোথাও কি কমেছে? নিজেদের কতজন আছে, সেটি ভেবে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর না তুলে সর্বদাই তুলনামূলক পরিসংখ্যান উপস্থাপন করার উচিত।
৫. সাংগঠনিক অবকাঠামো ও ব্যক্তি–উদ্যোগ:
সিঙ্গাপুরের জামায়াত দায়িত্বশীল আমার প্রাক্তন রুমমেট। প্রায়ই কথা হয়। তিনি খুবই সাধারণভাবে চলেন। দেখলে জামায়াত করেন বলে মনে হবে না। ছাত্রজীবনের সেন্টিমেন্ট এখনও ধরে রেখেছেন। তাঁর কাছ হতে শুনেছি। সেখানে এক নির্যাতিত ছাত্রনেতা গিয়ে সংগঠনের ভাইদের নিয়ে একটা দোকান দেন। শেষ পর্যন্ত সেখানকার সংগঠন ব্যবসায়িক গন্ডগোলে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। সব ধরনের সাংগঠনিক ব্যবসা বন্ধ করার ফলে এখন সংগঠন সেখানে অনেক মজবুত। বাংলাদেশে থেকে কেউ গেলে যদি উনার সাথে যোগাযোগ করে তাহলে প্রথমেই তিনি জানতে চান, এই ভাই কী নিয়তে সিঙ্গাপুরে এসেছেন। যদি জায়গা অথবা ফ্ল্যাট বেচার জন্য আসেন তাহলে তিনি তাকে কোনো প্রকার সাংগঠনিক সুবিধা দেন না। দেখাও করেন না। রথ দেখা ও কলা বেচার এই ফর্মূলা মাওলানা মওদূদীর মতো মুজতাহিদ বুঝতে পারেন নাই। জামায়াতে কার্যবিবরণীর প্রথম খণ্ডেই এই সাংগঠনিক ব্যবসার প্রস্তাবকে তিনি ফ্ল্যাডলি নাকচ করে দিয়েছিলেন।
অবকাঠামো যা হয়েছে, যেগুলোর উন্নতি হয়েছে সেগুলোতে নাসের সাহেব, মীর কাশেম আলী সাহেবদের স্বৈরাচারেরও ব্যাপক অভিযোগ আছে। কেন? একবার আমি মীর কাশেম আলী সাহেবের এক ঘনিষ্টকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এতসব অনিয়মের অভিযোগ সত্ত্বেও তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন না কেন? তিনি বললেন, মীর কাশেম আলী সাহেবরা তো এসব গড়ে তুলেছেন, এই সত্য তো মানেন? হ্যাঁ, এটি না মেনে উপায় নাই। আসলে নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান কেউ ছাড়ে না। ছাড়তে পারে না। ড. ইউনুস বলেন, আর অমুক তমুক যা-ই বলেন না কেন, একই চিত্র। সবাই এটাকে নেতিবাচক ভাবলেও আমি একে পজিটিভ হিসাবে দেখি। আমরা এই অন্তর্নিহিত সত্যকে ভুলে যাই যে, ব্যক্তির কর্তৃত্ব, স্বাধীনতা, সোজা কথায় মালিকানা ছাড়া কোনো কিছুর প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন সম্ভবপর নয়। নিজের স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও সত্তাকে বিলিয়ে দিয়ে কোনো কিছু সফলভাবে পরিচালনা করাটা মানব চরিত্রবিরোধী ও অসম্ভব। ইসলামও তাই বলে। স্বতন্ত্র মালিকানা কিন্তু পারস্পরিক সহযোগিতা – এমনটাই হওয়া উচিত।
৬. শেষ কথা:
জামায়াত নিজেকে এ দেশের ইসলামের সোল এজেন্ট দাবি করে। অন্যদেরকে ফর নাথিং মনে করে। এ জন্য তাদের ফর্মূলা হচ্ছে, নো অল্টারনেটিভ থিওরি। এর মানে হচ্ছে, যেহেতু আমরা সেরা, সুতরাং আমরাই একমাত্র। ইসলামে রাজনীতি আছে এটি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তারা ইসলামকে মূলত রাজনীতিতে নামিয়ে এনেছে। এটি পলিটিক্যাল রিলিজিওনের একটা ভার্সন মাত্র।
রাজনীতিতেও যদি জামায়াত ভালো করতো বা করার কোনো পথ খোলা রাখতো, তাহলেও কথা ছিল। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দ্বি-দলীয় রাজনীতির যে পাঁকে জামায়াত নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলেছে, আমার ধারণায়, জামায়াত কখনো এই গোলকধাঁধাঁ হতে বেরিয়ে আসতে পারবে না। ইসলামী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনে বা প্রয়োজনে পিছনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে একটা তৃতীয় ধারা সৃষ্টি, সেটিকে বেগবান ও সফল করার জন্য যে ধরনের সাংগঠনিক নমনীয়তা (ফ্লেক্সিবিলিটি) এবং ত্যাগ ও সহনশীলতার যে মাত্রা থাকা দরকার; জামায়াতের তা আদৌ নাই, কখনো ছিলও না। এটির একমাত্র সম্ভাব্যতা ছিল জামায়াতের একমাত্র পাবলিক ফিগার, স্পোকসম্যান ও পলিটিক্যাল ফিউচার মাওলানা সাঈদী। সাঈদী ব্র্যান্ডের সম্মুখে শীর্ষ জামায়াত নেতৃত্ব নিজেদেরকে বিপন্ন ভেবেছেন। তাই তাঁকে গিলোটিন করা হয়েছে। ১৯৭৩ সাল হতে তিনি যদি রুকন হয়ে থাকেন, তাহলে এখন কেন তাঁকে জামায়াত সিল দেয়া জরুরি হলো? কারণ, তাঁকে কন্ট্রোল করা? তিনি যদি কিছু করে ফেলেন! জামায়াত যদি আওয়ামী লীগের ফাঁদে পড়ে প্রেসিডেন্সিয়াল সিস্টেম পরিবর্তনে বিএনপিকে বাধ্য না করতো, তাহলে ‘সাঈদী কার্ড’ খেলে জামায়াত বিজেপির মতো সফলতা অর্জন করতে পারতো, হয়তোবা। ইসলামী সংগঠন হিসাবে নিজেদের জয় না চেয়ে জামায়াতের চাওয়া উচিত ছিল বা চাইতে হবে ইসলামের বিজয়। জামায়াতের নাম থাকুক বা না থাকুক।
এসবি ব্লগ থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
সালমান আরজু লিখেছেন: জামায়াতের অনেক সমস্যা আছে, এটা ঠিক। কিন্তু আমরা যারা এ আন্দোলনের সাথে আছি, তারা কি শুধু এসব সমস্যা নিয়ে সমালোচনাই চালিয়ে যাব? সমাধানের কি কোনো পথ নেই?
বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের এই যে বিবর্তন, তা নিয়ে আপনার মতো অনেকেই শংকিত। এখন থেকে যদি সমাধান করা না যায়, তাহলে এদেশে ইসলামী আন্দোলন নিয়ে আমাদের দুঃখের অন্ত থাকবে না।
আসুন, আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাই। আপনার এ ব্লগ লেখা যদি সে চেষ্টার অংশ হয় তাহলে বলার কিছু নেই। তবে করার মনে হয় আরো অনেক কিছু আছে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক লিখেছেন: ‘অতঃপর কী করণীয়?’ এবং ‘অতঃপর কী করণীয়-২’ – আপাতত এ লেখা দুটি দেখুন।
আর সমস্যা আছে বলে বাদ দিতে হবে – এমন তো কোনো কথা নাই। কোনো বিকল্প না থাকার তত্ত্ব যেমন অগ্রহণযোগ্য তেমনি বাদ দিতে হবে বা কোনো সম্পর্ক রাখা যাবে না (যেহেতু এতে ত্রুটি আছে ইত্যাদি) – এটিও অগ্রহণযোগ্য। সকল ভালো কাজে অংশগ্রহণ ও সমর্থন করবেন সর্বোচ্চ পরিমাণে। সকল ভুল কাজের প্রতিবাদ করবেন জোরালোভাবে। সংশোধন ও প্রতিবাদের ধারা হাদীসে বর্ণনা করা আছে। হাতে, না হয় মুখে, না পারলে পরিকল্পনায় তথা অন্তরে।
পক্ষপাতদুষ্ট লিখেছেন: হুম। আপনার লেখার আমি ধৈর্যশীল পাঠক, তবে নিয়মিত নই। আজকের পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
কিছু বিষয় শেয়ার করি: অধ্যাপক নাজির আহমদ সাহেবকে আমি খুবই শ্রদ্ধা করতাম। তার বই পেলেই এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলতাম। কিন্তু তার সান্নিধ্যে গিয়ে দেখলাম– তার জ্ঞান খুবই সীমিত এবং তিনি আসলে একরকম জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব নিয়ে থাকেন। পোশাক-পরিচ্ছদে খুব তাকওয়াবান বেশে চললেও ঝুঁকি আছে কিংবা গদিনসীনদের বিরাগভাজন হবেন – এ রকম কাজে তিনি এড়িয়ে চলেন। মিছিল-মিটিংয়ে পরিশ্রম এবং ভয়-ভীতি আছে, তাই এগুলোতে তিনি কম উপস্থিত থাকেন। নিজে বহু লোককে দ্বীনের দীক্ষা দিলেও নিজ সন্তানদের আগলিয়ে রেখেছেন ঝামেলার কাজ থেকে। একজন শিবির সভাপতির কাছে শুনেছি, তিনি এবার একটি তদন্ত কমিটির সভাপতি হিসেবে আমানতের চরম খেয়ানত করেছেন। এই লোকটির প্রতি আমার এখন বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা নেই।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক লিখেছেন: অধিকাংশ সদস্যরা ভোট দেয় নাই, কিন্তু সভাপতি হিসাবে (তথাকথিত সাংগঠনিক স্বার্থে) নাম ঘোষণা করে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম মহানগরীতে। ১৯৮৮-১৯৯০ সালের দিকে। আশরাফ ভাই নামের একজন পুরনো সদস্য আমাকে এটি জানালেন। ঘোষণা হয়ে যাবার পরে সদস্যরা কানাঘুষা শুরু করলে বিষয়টা ফাঁস হয়ে পরে। ইতোমধ্যে যা হবার তা তো হয়েই গেছে। আমি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য।
আচ্ছা, বাহ্যত জামায়াত গণতন্ত্রের জন্য শহীদ হওয়ার উপক্রম। নিজেদের মধ্যে এ ধরনের নিয়ন্ত্রিত (নাকি, কৃত্রিম!?) গণতন্ত্র চর্চা কেন? এই লুকোচুরির শরয়ী ভিত্তি কী?
তারাচাঁদ লিখেছেন: পক্ষপাতদুষ্ট ভাই, একজন ব্যক্তির অনুপস্থিতে তার নাম নিয়ে সমালোচনা করার নাম গীবত, যা স্পষ্টভাবে কবীরা গোনাহ। কারো সামনে এমন গোনাহ করা হলে এর প্রতিবাদ করা দ্বীনি দায়িত্ব। কবীরা গোনাহ করার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক লিখেছেন: অপ্রয়োজনে কিম্বা ব্যক্তিগত কোনো হিংসা-বিদ্বেষের কারণে কারো এমন কোনো ব্যক্তিগত ত্রুটির বিষয়ে অন্যের কাছে বা জনসমক্ষে মন্তব্য করা যাতে তিনি হেয় প্রতিপন্ন হন– এমন আচরণ হলো গীবত। যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আগে ব্যক্তিগতভাবে সতর্ক করা সত্ত্বেও তিনি সংশোধন না হন তাহলে তার বিষয়ে প্রসঙ্গক্রমে কথা বলাটা গীবত হিসাবে গণ্য হবে না।
গীবতের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জামায়াত নেতারা নিজেদের অযৌক্তিক একচেটিয়াবাদকে জায়েজ করার চেষ্টা করেন।
Rose leaf লিখেছেন: জামাতের এই করুন অবস্থা দেখে খুব দুঃখ হয়। কিন্তু আফসোস হয় জামাত নেতারা এই বিষয়গুলি মানতে চান না। সংগঠন নিয়ে বেশিরভাগ নেতারাই সমালোচনা পছন্দ করেন না। তাদের কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো সহযোগিতা, চাকরি ইত্যাদি প্রয়োজনে গেলে প্রথমেই প্রশ্ন আসে ব্যক্তিটি সংগঠনের কোন পর্যায়ে দয়িত্বশীল ছিল! আমার মনে হয় এটা একটা সাম্প্রদায়িকতার নমুনা। তাছাড়া সাধারণ মানুষের কাছেও তাদের আসা-যাওয়া খুব কম। এসব সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে জামাতের মূল উদ্দেশ্য অর্জন অনেকটা সহজ হয়ে যেত। জামাত নেতাদের সতর্ক করা প্রয়োজন।
আপনার প্রচেষ্টার জন্য অভিনন্দন। আমার মনে হয়, আপনার যেহেতু জামাত-শিবিরের অনেকের সাথে পরিচয় আছে সেহেতু নেতা পর্যায়ের কারো সাথে বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করে দেখতে পারেন, এতে যদি তাদের বর্তমান অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক লিখেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
নোমান সাইফুল্লাহ লিখেছেন: জামায়াত নেতারা যখনই তাদের নেতৃত্বের জন্য কাউকে হুমকি মনে করেন, তখন তাকে নানান কৌশলে সংগঠনে নিগৃহীত করার সকল প্রচেষ্টা করে থাকেন। আল্লামা সাঈদীর উদাহরণটা বাস্তব জলজ্যান্ত উদাহরণ। বিষয়টা নিয়ে আমিও ভাবছিলাম। আপনার লেখায় আরো সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ায় অভিনন্দন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক লিখেছেন: আমি এমনও শুনেছি, জামায়াতের আমীর হিসাবে নির্বাচনী প্যানেলে সাঈদী সাহেবের নাম ছিল। তিনি সর্বাধিক ভোটও নাকি পেয়েছিলেন। সংগঠনবাদিতার মূর্তপ্রতীক মুহতারাম নাজির আহমদ সাহেব একাধিকবার যা করেছেন সে মোতাবেক (গায়েবীভাবে!?) সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্তকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন। আমি জানি না, বিষয়টা কতটুকু সত্য। তবে একজন উচ্চতর দায়িত্বশীল পর্যায়ের রুকনের কাছ হতে এটি আমি শুনেছি। প্রার্থিতার বিষয়ে লুকোচুরির তথাকথিত সাংগঠনিক প্র্যাকটিসের মূলে রয়েছে এ সংক্রান্ত হাদীসের বর্ণনাগুলোর ভুল অর্থ বুঝা। প্রার্থিতা সংক্রান্ত সহীহাইনে বর্ণিত হযরত আলী (রা) ও উসমানের (রা) প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হাদীসগুলোর নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে মাওলানা মওদূদী প্রশ্ন তুলেছেন। আমার মতে, তিনি ভুল বুঝেছেন। হযরত ইউসুফ (আ) তো পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। তাই না?
তারাচাঁদ লিখেছেন: আপনার পোস্ট পড়ার পর আমাকে সমস্যায় পড়তে হয়। আপনার লেখায় বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ (observation) থাকে, কিছু চিন্তার খোরাক থাকে, আমার নিজের কিছু উত্তর থাকে। এগুলোর জবাব দেয়া অনেক সময়ের ব্যপার। আমি যে শুধু পোস্ট পড়ি তা নয়, মন্তব্যগুলোও ভালো করে পড়ি।
সম্পাদক হিসাবে এককভাবে নাজির সাহেবের দিয়ে লাভ নেই । ‘পৃথিবী’তে দু’তিন জন ছাড়া ভালো লেখক নেই। নাজির সাহেব তো লেখক জন্ম দিতে পারেন না। পাক্ষিক পালাবদল, ঢাকা ডাইজেস্ট, অঙ্গীকার ডাইজেস্ট, সাপ্তাহিক নতুনপত্র ইত্যাদির মতো মানসম্মত পত্রিকাগুলো যখন পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে, পাঠকের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তখন এককভাবে নাজির সাহেবদের দোষ দিয়ে লাভ কি? এর কালিমা (black spot) তো সামষ্টিকভাবে আমাদের গায়েও লাগে। আবুল আসাদের মতো দূরদৃষ্টিসম্পন্ন লোকটির মেধা এখনও অনেকটাই অব্যবহৃত। ইসলামী আন্দোলনের সামনে আগামী দিনগুলোতে চ্যালেঞ্জ কী কী, এ বিষয়টি তিনি খুব সহজে বুঝতে পারেন এবং বুঝাতে পারেন । অথচ তাঁর এই প্রতিভা বিকাশের সুযোগ কোথায়? ৪২ বৎসর আগে পয়দা হওয়া ‘সংগ্রাম’ এখনো সদ্যোজাত শিশুই রয়ে গেছে। উপযুক্ত মা না পেলে এই শিশু কখনোই কিশোর হবে না। আবুল আসাদ সাহেবকে সংগ্রামের দূরবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, দলীয় পত্রিকা স্বাধীনভাবে বিকশিত হয় না। এখানে অনেক সীমাবদ্ধতা মেনে চলতে হয়। সহজ কথায়, ‘সংগ্রামের’ কোনো ভবিষ্যত নেই। মীর কাশেম আলীরা (বহুবচনে) তাদের প্রতিষ্ঠান চালান অনেকটা একনায়কভাবেই। তাই এমন সেনাপতি দিয়ে খুব শীঘ্র ইসলামী রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছি না। একটি রাষ্ট্র মানুষের চিরায়ত লালিত আচরণকে, সংস্কৃতিকে বদলাতে পারে না। তাই, আমি এখন ইসলামী রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি না। এখন রাষ্ট্রের স্বপ্ন বদলে ফেলেছি। স্বপ্ন দেখি ইসলামী সমাজের, যেখানে ইসলাম কায়েম থাকবে ব্যক্তির মাঝে, পরিবারে, সমাজে ও সামাজিক কালচারে। ইসলামের শিকড় থাকবে মাটির গভীরে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত। যে শিকড় কোনো ফেরাউন বা ক্লাইভ উপড়াতে পারবে না। নতুন স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে নতুন সিপাহসালার। আসুন, আমরা নতুন সৈনিকদের নতুন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখাই।
লাল বৃত্ত লিখেছেন: সুপার লাইক
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক লিখেছেন: আপনার এ মন্তব্য ভীষণ ভালো লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ।
লালবৃত্ত’র ‘রাষ্ট্র নয়, আগে সমাজ’ তত্ত্ব একটি অতি বাস্তব বিষয়।
কাপাসিয়া লিখেছেন: “স্বপ্ন দেখি ইসলামী সমাজের, যেখানে ইসলাম কায়েম থাকবে ব্যক্তির মাঝে, পরিবারে, সমাজে ও সামাজিক কালচারে। ইসলামের শিকড় থাকবে মাটির গভীরে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত। যে শিকড় কোনো ফেরাউন বা ক্লাইভ উপড়াতে পারবে না। নতুন স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে নতুন সিপাহসালার। আসুন, আমরা নতুন সৈনিকদের নতুন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখাই।”
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক লিখেছেন: রাষ্ট্র যখন ছিল না বা থাকে না, তখন ইসলাম ছিল না বা থাকবে না– এমন তো নয়। রাষ্ট্রব্যবস্থা ইসলামের অপরিহার্য অংগ বা শর্ত নয়। রাষ্ট্রব্যবস্থা ইসলামের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। রাষ্ট্র ইসলামের লক্ষ্য নয়, সহায়ক পদ্ধতি। ইসলামের তত্ত্বের মধ্যে রাষ্ট্রের ধারণা অতি স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে প্রোথিত। রাষ্ট্রের এজেন্ডা বাদ দিয়ে যারা দ্বীন কায়েম করতে চান, তাদের ইসলামের ব্যাখ্যা তারা দিবেন !!!??? কোরআন-হাদীস ও রাসূলের (সা) জীবননির্ভর যে ইসলাম, তাতে রাষ্ট্রব্যবস্থা অনস্বীকার্য বটে। তবে তা লক্ষ্য হিসাবে নয়, উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পদ্ধতি হিসাবে। উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছার আগে/জন্য ভিত্তি লাগবে যা হলো সমাজ বা সামাজিক ব্যবস্থা। ধন্যবাদ।
ঈগল লিখেছেন: নো কমেন্ট অ্যাবাউট দিস পোস্ট। আই অ্যাম কমফিউজড অ্যাবাউট এনি ইসালামিক অর্গানাইজেশন। সো, আই অ্যাম ফলোয়িং দিস হাদীস– হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান, যদি কোনো জামায়াত ও মুসলিম ইমাম না থাকে তখন করণীয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন– তুমি সমস্ত ক্ষুদ্র দলাদলি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখ, যদিও তোমাকে গাছের শিকড় খেয়ে জীবন ধারণ করতে হয় এবং এ অবস্থায় মৃত্যু হয়। (মুসলিম, ইসলামিক সেন্টার কতৃর্ক অনূদিত, হাদীস নং ৪৬৩৩)
এর উপর আপনার কোনো মতামত আছে কি?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক লিখেছেন: আমি মনে করি না বর্তমান বাংলাদেশ বা বিশ্ব পরিস্থিতি এতটা নাজুক!!! আমি কর্মবাদী তথা এক্টিভিস্ট। কাজ করুন। কী করবেন? হাতের কাছে যা আছে তা দিয়ে শুরু করুন।
Now is the best time, persons around you are the most important ones and to help them for better life is the most important job for you. There is no chance to remain aloof. A truly believer can’t be confused anyway. It is a fallacy that we have to work together being member of a single jamaat. When there is no Islamic state, we need not be in a single jamaat. Let us try to build and float the ship sustainably. This kind of effort has to be dispersive. So, don’t say about confusion. When you are Muslim. You itself is an organization. Prophet (s.) has said that a mu’min is like a date-tree-leaf which never becomes gray so long it is attached with the branch and the tree. Isn’t it?