বাংলাদেশের প্রচলিত ইসলামী আন্দোলনের যে ধারা, তা একবিংশ শতাব্দীর প্রেক্ষিতে একটি পূর্ণ সমাজ বিপ্লবের জন্য উপযুক্ত নয় বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। ইসলামী আন্দোলনের মূল ধারা নিজেকে এডাপ্ট করে নিবে– আমার পর্যবেক্ষণে এটিও দুরাশা। একটি সিলসিলা হিসাবে এটি টিকে থাকবে। যেভাবে টিকে থাকবে প্রচলিত মাদ্রাসাসমূহ, তাবলীগ জামাত ইত্যাদি।
আমার গড়ে উঠা: ইসলামী আন্দোলনের দিক হতে আমি আজকে যেখানে আছি, তিন দিক হতে পর্যাপ্ত সাপোর্ট পাওয়ার কারণেই সেটি সম্ভব হয়েছে– আমার পরিবার, বাংলাদেশের বিদ্যমান সামাজিক ইসলাম এবং প্রচলিত ইসলামী আন্দোলনে আমার অতীত ও বর্তমান সম্পৃক্ততা। যেভাবে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে আজ আমি সফল কর্মজীবী। স্কুলের পড়া শেষ না করলে আমি কলেজের পড়া বুঝতাম না। কলেজের পড়া ভালোভাবে আয়ত্ব না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যা পড়েছি তা নিঃসন্দেহে স্কুল-কলেজ হতে অনেক উন্নত। লেখাপড়া করা এবং তা আমার যে কোনো পছন্দনীয় বিষয় নিয়েই হতে পারে, এটিই যেহেতু আমার পেশা। এখন বুঝি আগে কত কম পড়েছি, কত কম বুঝেছি। যখন বোঝাতে যাই, তখন বুঝি।
এসব কথা এ জন্যই বললাম, আমার বাবা-মা, বড় ভাইবোন, প্রাক্তন শিক্ষকবৃন্দ– আমাকে গড়ে তোলার ব্যাপারে এদের অবদান অপরিসীম ও অপরিশোধযোগ্য। তাই বলে আমি যদি তাঁদের চিন্তা-চেতনা-চৌহদ্দিতে নিজেকে কনফাইন্ড করে রাখি, সেটি কি ঠিক হবে? ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে হলে বুঝতে হবে– শিক্ষক নয়, শিক্ষাই অনুসরণীয়। এমনকি কখনো যদি তা শিক্ষকের বিরুদ্ধেও যায়।
অর্গানাইজেশনালিজম: যাহোক, আমাদের বিদ্যমান সমাজব্যবস্থার যেমন আমূল পরিবর্তন দরকার, এক কথায় দরকার একটা পূর্ণ বিপ্লবের; তেমনি প্রচলিত ধারার ইসলামী আন্দোলনেরও ব্যাপক পরিবর্তন দরকার। সাময়িক ব্যবস্থা, সংস্কার ইত্যাদি দিয়ে হবে না। কাজীর গরু (বিপ্লব তথা বৈপ্লবিক চরিত্র) শুধু কিতাবে থাকলে হবে না, গোয়ালেও থাকতে হবে। সাংগঠনিকতাবাদ (অর্গানাইজেশনালিজম, মানে সংগঠনের অবস্থানই মূলত ঠিক এবং সেটিকে যথার্থ প্রতিপন্ন করাই সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব) যেভাবে সর্বপর্যায়ে গভীরভাবে প্রোথিত হয়েছে তাতে আমি মনে করি না– ইনারা ন্যাচারালি এডাপ্ট করবেন।
ম্যাল এনভায়রনমেন্ট: ভাবতে খুব কষ্ট লাগে, কীভাবে ম্যাল-এনভায়রনমেন্টের (আর্থিক সুবিধা ইত্যাদি) কারণে অত্যন্ত মুখলিস ভাইয়েরা দায়িত্বশীল বনে যাওয়ার পরে ‘ডিফেন্ডারস অব ট্রাডিশানালিজম’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন! ইনারা যখন আমাদের সাথে কথা বলেন, তখন কত কিছু বলেন! কিন্তু স্পষ্ট ভুল ধারার প্রবক্তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গ আসলে অনেক সংস্কারবাদীকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা ‘ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ’-এর নিচে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজেন। ‘ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহ’র উপরে কায়েম থাকার সাহস কম লোকেরই হয়, যদিও তাদের অনেক অনেক ব্যাক-ট্র্যাক থাকে।
কনসেপ্ট গ্রুপ: ইসলামী আন্দোলনের মধ্য হতে যারা নিজেদেরকে ‘ওয়ালতাকুম মিনকুম উম্মাতুন’ভুক্ত বলে মনে করেন, প্রাথমিক ভুল বোঝাবুঝি ও অপবাদের ঝুঁকি সত্ত্বেও তাদের প্রকাশ্যে দাঁড়াতে হবে। অন্ততপক্ষে একটা কনসেপ্ট গ্রুপ গঠন করে কাজ করা যেতে হবে। বসে থাকার সুযোগ নাই। দেখি না কী হয়, অন্যরা কী করে, সংগঠনকে বলে দেখি, আমি একটু গুছিয়ে নেই ইত্যাদির কোনো সুযোগ নাই। আল্লাহ প্রত্যেককে খলিফা নিযুক্ত করেছেন, ব্যক্তিগতভাবে। আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতাও নিশ্চয়ই সামষ্টিকভাবে হবে না। তাই না?
প্রতিমন্তব্য উত্তর:
(১) মিস-কোটেশন: আমি প্রচলিত ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপারে কোরআন-হাদীসের মিস-কোটেশনের কথা বলেছি। হ্যাঁ, আমিও মনে করি না, ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীলগণ ইল-মোটিভে মিস-কোটেশন দেন। মিস-কোটেশন মানে আমি বুঝিয়েছি, কারেক্ট কোটেশন বাট রং কনটেক্সট। কোরআন-হাদীসের এ ধরনের ভুল প্রয়োগ যুগে যুগে ইসলামপন্থীরা করেছে। জাল হাদীসের এটিও একটা উৎস।
(২) শব্দচয়ন: থেরাপি ইত্যাদি শব্দ প্রয়োগের আপত্তির জবাবে শুধু এটুকু বলবো, সিরিয়াস আলোচনায় এগুলো অগ্রহণযোগ্য। ব্লগে যদি মন্তব্য প্রদানকারীর পক্ষে প্রদত্ত মন্তব্য সংশোধন করে পুনর্পোস্ট দেয়ার সুযোগ থাকতো তাহলে তা দিতাম।
(৩) কনসেপ্ট ক্লারিফিকেশন: একজন ভাই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের ভোট দেয়ার জন্য দেশের মানুষের মেজর থেরাপি দরকার বলেছেন। আচ্ছা, সেক্যুলারিজম যে একটা কুফরী মতবাদ, দেশের মানুষকে এটি বোঝানোর জন্য ইসলামপন্থীরা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে? ইসলামী দলের কোনো নেতার নাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য যত জীবন, শ্রম, সময় ও অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তার অংশমাত্রও যদি মানুষের কনসেপ্ট ক্লারিফিকেশনের জন্য ব্যয় করা হতো, তাহলে হয়তোবা মানুষ ইসলাম অথবা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ কোনো একটা গ্রহণ করতে হবে– এ রকম একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতো। এবং অনেকেই ইসলামকে বেছে নিতো। যেমনটি হয়েছে ইরান বিপ্লবের সময়।
(৪) অত্যাচার–নির্যাতন: ইসলামী আন্দোলনের মূলধারার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বর্তমান সাফারিংসের ব্যাপারে আমার মন্তব্য কিছু ভাইয়ের খারাপ লেগেছে। উনাদের মতে, সাফারিংসকে আমি নেতাদের অন্যায় ও ভুলের প্রমাণ এবং আল্লাহর পক্ষ হতে শাস্তি হিসাবে গণ্য করছি। না, তেমনটি নয়। ন্যায়-অন্যায় এক জিনিস, আর জুলুম-অত্যাচারের শিকার হওয়া ভিন্ন জিনিস। তবে অন্যায়ভাবে শাস্তি পাওয়ার মাধ্যমে কৃত অন্যায়ের দায়মুক্তি ঘটে। এটি জানা কথা।
(৫) কোন ইসলাম আগে কায়েম করতে হবে? কনসেপ্চুয়াল ইসলাম: আপত্তি করে প্রতিমন্তব্যকারী ভাই বলেছেন, জামায়াত বিদায় হজ্বের মাধ্যমে পূর্ণতাপ্রাপ্ত ইসলাম কায়েম করতে চায়। অবিশ্বাস্য! কারণ, যে সকল সাহাবী দাওয়াতের প্রাথমিক পর্যায়ে ইন্তেকাল করেছেন, এমনকি বদরী সাহাবীরাও সুদের মধ্যে ছিলেন, যাকাত দেননি, হিজাব মানেননি ইত্যাদি। কারণ, উনাদের জীবনকালে সেসব বিধিবিধান ইসলামে ছিল না। তাহলে উনাদের ইসলাম কি অপূর্ণ ছিল?
বাংলাদেশের সাধারণ মুসলমানদের ইসলাম-জ্ঞান হতে মক্কার কাফের-মুশরিকদের ইসলাম-জ্ঞান অনেক পারফেক্ট ছিলো। সুফীদের মাধ্যমে প্রচারিত ইসলামে দীক্ষিত এ দেশের মানুষ ইকামতে দ্বীন ও তৎসম্পর্কিত পরিভাষাসমূহ তথা ইসলাম বোঝেই না। অথচ সর্বোচ্চ নেতারা বক্তৃতা করেন, ‘দেশের মানুষ ইসলাম চায়, শুধু নেতৃত্বের সমস্যা’!
ধর্ম হিসাবে ইসলাম হলো, যে কোনোখান হতে শুরু করেন, যা পারেন করেন, না পারলে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নাই। আর দ্বীন হিসাবে ইসলাম হলো মক্কী পর্যায়, প্রাথমিক মাদানী পর্যায়, এরপর পরিপূর্ণ পর্যায়– এভাবে ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়া। যেখানে যা প্রযোজ্য। সে হিসাবে নাসেক-মানসুখের প্রচলিত ব্যাখ্যা হতে সরে আসতে হবে। ইতোমধ্যে আমি প্রখ্যাত কয়েকজন আলেমের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি।
শুধুমাত্র একবার ভাবুন তো, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক তাঁর শ্রেষ্ঠ ছাত্রদের জন্য যে পর্যায়ক্রম অনুসরণ করেছিলেন, কিয়ামত-সন্নিকটের বর্তমান চরম ফেতনার যুগেও কি সেটির কোনো কার্যকারিতা আর নাই!? এ কেমন এবজার্ড কথা!
(৬) ১৯৭১ পর্ব: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ প্রসংগে প্রতিমন্তব্যকারী আমার বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি জাতীয়তাবাদের বিরূদ্ধে বলেছেন। আচ্ছা, জাতীয়তাবাদ কি হারাম? জাতীয়তাবাদের চরম রূপ খারাপ নিশ্চয়ই। কিন্তু আমারটা আমার, আপনারটা আপনার। আপনার সাথে আমার লেনদেন হবে। আমার সীমানার হেফাজত করা আমার দায়িত্ব। এটি যদি ব্যক্তি বনাম ব্যক্তি, পরিবার বনাম পরিবার, এলাকা বনাম এলাকা হতে পারে, তাহলে রাষ্ট্র বনাম রাষ্ট্র হতে পারবে না কেন?
ঐ যে বলেছিলাম, নিজেরা ভালো করে না বুঝে অযথা ‘ইসলাম চাই’, ‘ইসলাম চাই’ বলে গলা ফাটানো! অধিকাংশ ইসলামপন্থীরা ইসলামকে এর চূড়ান্ত রূপে ও সর্বরোগবটিকা হিসাবে জনগণের কাছে তুলে ধরে। দুটোই ভুল। ইসলাম ইজ অ্যা কনসেপ্ট, নট অ্যা বান্ডেল অফ রুলস। এটি বুঝতে হবে, বোঝাতে হবে।
একবিংশ শতাব্দীর প্রেক্ষাপটে মাইক্রো ও ম্যাক্রো উভয় এপ্রোচ থেকে আমাদেরকে বুঝতে হবে। বিশেষ করে দণ্ডবিধি সম্পর্কিত বিষয়গুলো সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তথা ম্যাক্রো-এপ্রোচে বুঝতে হবে। মানুষকে ভয় পাইয়ে দেয়ার একটা ‘ধর্মীয়’ প্রবণতা বরাবরই লক্ষ্য করা যায়। ইসলামী আন্দোলনের জন্য যারা কাজ করবেন তাদেরকে মনে রাখতে হবে– দ্বীনের মূলনীতি হলো সহজ করা। অপেক্ষাকৃত কঠিনকে বাদ দেয়াটাই হলো তাকওয়া ও সুন্নত।
খেলাফত: আচ্ছা, খেলাফত মানে কি দুনিয়াজোড়া একটি একক রাষ্ট্র? কনফেডারেশন হলে, ইইউর মতো হলে বা ইউএনের মতো হলে কি হবে না? আচ্ছা, ইসলামী রাষ্ট্র আমেরিকার মতো অনেকগুলো ‘স্টেট’ নিয়ে হলে কি হবে না? হবে?
তাহলে, বাংলাদেশ আলাদা হওয়ার বিষয়টি মানতে কী আপত্তি ছিল? ইন্ডিয়া? এটি হলো জুজুর ভয়। এ দেশ বরাবরই স্বাধীন ছিলো। এমনকি মোঘল আমলেও এই মাটি স্বাধীন সালতানাত হিসাবে স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছিলো। সেসব ইতিহাসের কথা।
গতকাল আমি আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের দুজন সিনিয়র মোস্ট প্রফেসরের সাথে কথা বলেছি, যারা সরাসরি একাধিকবার মাওলানা মওদূদীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা বলেছেন, ৭১ সালে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সম্পূর্ণভাবে একজন শীর্ষ দায়িত্বশীলই দায়ী। এমনকি তৎকালীন আমীরও এটি চাননি। আমি প্রফেসর ড. মো: আনওয়ারুল হক খতিবীকে পাল্টা জিজ্ঞাসা করলাম– স্যার, আপনি কীভাবে জানেন? তিনি বললেন, আমাকে মাওলানা আবদুর রহীম সাহেব নিজে বলেছেন। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে আমি এই রেফারেন্সটি দিলাম।
নাগরিকত্ব ইস্যুর ব্যাপারে জাতীয় সংসদে জামায়াতের জনপ্রিয় এমপি ছিলেন তেমন একজন সমপর্যায়ের আরো কয়েকজন দায়িত্বশীলের উপস্থিতিতে গত তিনদিন আগের এক সন্ধ্যায় আমাদের ক’জনের সামনে বলেছেন, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলের শেষ কথা ছিলো– ‘আমাকে দায়িত্ব নিতে হলে অবশ্যই প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতে হবে।’ যার কারণে বাধ্য হয়েই তৎকালীন সংগঠন এ ধরনের একটি অপ্রয়োজনীয় ও নিতান্তই ব্যক্তিগত ইস্যুতে জড়িয়ে পড়ে।
ঐ প্রাক্তন এমপি ও বর্তমানে উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল আরো বললেন– তারা যখন আওয়ামী লীগের সাথে বিরোধী দলে আসীন তখন আওয়ামী লীগের অমুক অমুক নেতারা উনাদের অনুরোধ করেছেন, ৭১ ইস্যুতে যেন একটা ক্লারিফেকেশন দেয়া হয়। রাজশাহী অঞ্চলের একজন এমপি-দায়িত্বশীলসহ উনারা এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের বুঝিয়েছেন। একজন ছাড়া (যিনি সাম্প্রতিক যুদ্ধাপরাধী ইস্যুটি তৈরি করেছেন) সবাই নাকি রাজি হয়েছিলেন!
বশংবদ পরামর্শ সভা ও এককেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত: প্রতিমন্তব্যকারী বলেছেন, ৭১ সালে একজন দায়িত্বশীল সব ফোরামকে কনভিন্স করতে পেরেছিলেন, এটি নাকি উনার কৃতিত্ব! হ্যাঁ, পেরেছিলেন বটে। তবে যে আহলে রায়দের উল্লেখযোগ্য অংশ বেতনভোগী, সরাসরি আর্থিকভাবে বেনিফিসিয়ারি ও মনোনীত, রাতদিন যারা আনুগত্যশীলদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকেন, ‘কাজের’ চাপে যারা চিন্তাভাবনার কোনো অবসর পান না– তাদের পক্ষে এ ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত নেয়াটা স্বাভাবিক নয় কি? এরমধ্যে আছে এক ধরনের তাবলীগী টাইপের পীর-মুরীদী আবহ!
বাংলাদেশের প্রচলিত ইসলামী আন্দোলন গণতন্ত্রের ধারণাকে অ্যাবিউজ করছে। এতে না ইসলাম হচ্ছে, না গণতন্ত্র হচ্ছে!
রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিশেষ প্রকৃতি: রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া সব বিষয় সিদ্ধান্ত গ্রহণকালীন প্রেক্ষাপটে মূল্যায়িত হয়। কিন্তু রাজনৈতিক বিষয়াদি মূল্যায়িত হয় পরবর্তী পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে। এটি রাজনীতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তাই যদি হয়, তাহলে ৭১’র ব্যাপারে ইসলামপন্থীদের এত লুকোচুরি ও দোদুল্যমানতা কেন?
জামায়াতে ইসলামী তো একা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেনি। সব ইসলামপন্থী দল, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পাকিস্তান ভাঙ্গার বিরোধিতা করেছে। এমনকি চীনপন্থী কমিউনিস্টরাও। কে জানত শেখ মুজিব এসে ভারতের পরিকল্পনা ভেস্তে দিবেন? শেখ মুজিব যদি ভারতীয় বাহিনী প্রত্যাহারে ইন্দিরা গান্ধীকে বাধ্য না করতেন, ৭ দফা গোপন চুক্তি প্রত্যাখ্যান না করতেন, তাজউদ্দীনদেরকে সরকার হতে বের করে না দিতেন– তাহলে জামায়াতসহ অপরাপর ইসলামপন্থীদের ভুলটাই সঠিক বলে প্রমাণিত হতো!
রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি: অতএব, যে কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যখন পরবর্তী পরিস্থিতির আলোকে ভুল বা সঠিক হিসাবে মূল্যায়িত হয়, তখন নেতাদের দায়িত্ব হলো বর্তমানকে সুতীক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করে, ভবিষ্যতকে জানা ও বোঝার চেষ্টা করে, এক কথায়, প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টিকে কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া। কোনো বিষয়ে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব না হলে মাঝামাঝি অবস্থান নেয়া। এই দৃষ্টিতে জামায়াতের নেতারা ৭১ সালে এবং ৭১ সালের পর হতে এই ইস্যুতে সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে। জনশক্তির সুস্পষ্ট মতামত থাকা সত্ত্বেও। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে থাকাকালীন সময়ে প্রাপ্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ৭১ ইস্যুকে চিরতরে দাফন করা যেতো।
সাইড ইস্যুতে জড়িয়ে পড়ার ভুল: ‘অর্গানাইজেশনালিস্ট’রা বলবেন, ‘কীভাবে জানলেন, এই ইস্যু শেষ হতো? বাতিলের ইস্যুর কোনো শেষ নাই।’
হ্যাঁ, বাতিলের ইস্যুর কোনো শেষ নাই। কিন্তু তাই বলে হক-বাতিলের মূল ইস্যুকে ফোকাসের বাহিরে রেখে কোনো ব্যক্তিগত, স্থানীয় ও পার্শ্বইস্যুতে সর্বশক্তি নিয়োগ করা কি ভুল পলিসি ও পণ্ডশ্রম নয়? আপনারা জানেন যে মাওলানা মওদূদী বলেছেন, চলার পথে কাঁটা ছাড়ানোর জন্য কোনো সময় ব্যয় করা যাবে না।
আমরাও বিচার চাই: কোথায় চিন্তা-গবেষণার সংগ্রাম! এর পরিবর্তে বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের মূল ইস্যু এখন শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যুদ্ধাপরাধী নয় প্রমাণ করা! নেতাদের থিসিস ছিলো, মানুষ এসব ভুলে যাবে! অথচ, পুনরুজ্জীবিত হিব্রু ভাষার মতো ৭১ ইস্যু এখন বাংলাদেশে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, সবাই বলে ‘আমরাও বিচার চাই’।
পরিস্থিতির চাপে পড়ে ইসলামপন্থীরাও যখন বলে ‘আমরাও বিচার চাই’ তখন ভাবি, ১৯৭১ সালে নির্মমভাবে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রসঙ্গ উত্থাপনেরও সাহস আমাদের নাই! মাত্র ক’দিন আগেও নেতাদের গাড়িতে উড়ত জাতীয় পতাকা! আমি বলছি না, তারা দোষ করেছেন। তবে, এটি স্পষ্ট যে, তারা ব্যর্থ হয়েছেন।
রথ দেখা আর কলা বেচার ফর্মূলায় তারা যেভাবে নিজেরা ও প্রায় পুরো জনশক্তিকে সংগঠন ও ব্যবসা-বাণিজ্য একসাথে করার তরীকা শিখিয়েছেন, গণতন্ত্রের যে শর্টকাট ইসলাম শিখিয়েছেন– তাতে দেখা যাচ্ছে কেবলমাত্র একজন প্রখ্যাত মুফাসসির ছাড়া আটক কারো জন্য বলতে গেলে কারো তেমন কোনো খারাপলাগা কাজ করে নাই। এই প্রখ্যাত আলেম, বাংলাদেশে যার কথা আজকের জাকির নায়েকের মতো উচ্চারিত ও আলোচিত হতো, তিনি যদি ‘সিলযুক্ত’ না হতেন, আজকে তাঁর মাধ্যমে আলেম সমাজকে মাঠে নামানো যেতো, হয়তোবা। তাঁকে চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে, যাতে তিনি ‘বিপ্লব’ করে ফেলতে না পারেন!?
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই লেখাটি ‘ক্যাডার সংগঠন হিসেবে রাজনীতিতে অভিষেক: জামায়াত অধ্যয়ন-১২’ শীর্ষক পোস্টে মন্তব্য-প্রতিমন্তব্যের ধারাবাহিকতায় লেখা। তাই এই পোস্টে মন্তব্য করতে হলে যে পোস্টের মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য হিসাবে এটি লেখা হয়েছে, আপনাকে কষ্ট করে সেখানে যেতে হবে। কিছু পাঠকের পরামর্শে স্বতন্ত্র লেখা হিসাবে এটিকে পোস্ট করলাম।
এসবি ব্লগ থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
এম এন হাসান: I was about to tell you to give this as a post. চমৎকার বলেছেন। কনসেপ্ট গ্রুপের আইডিয়াটাও ভালো লেগেছে। পৃথিবীর সব আন্দোলনে এই জাতীয় গ্রুপ বা থিংকট্যাঙ্কের অস্তিত্ব রয়েছে, যদিও থিংকট্যাঙ্কের সাথে আপনার বলা কনসেপ্ট গ্রুপের পার্থক্য রয়েছে।
আপনি এমন কতগুলো বিষয় তুলে এনেছেন, যা আমি পরবর্তী আলোচনায় পাশ কাটিয়ে যাবার চিন্তা করেছিলাম। ভালোই হলো, চিন্তার নতুন কিছু দিগন্ত উন্মুক্ত হবে আশা করি। আরো কিছু ব্লগার এগিয়ে আসবে আশা করি। কারণ, সংগঠনের সাথে যারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং যারা একটুখানি পড়াশোনা করে স্ট্রাকচারের বাহিরে চিন্তা করেন, তাদের মনেও সিমিলার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয় বলে আমার বিশ্বাস। সেই সমস্ত ভাইগুলো তাদের নিজেদের অবস্থান থেকে আওয়াজ তুলবে বলে বিশ্বাস করি।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ধন্যবাদ।
একমত হওয়ার কাতারে সবাই আছে। বাস্তবায়নের ব্যাপারে তেমন কেউ নাই। ওই যে বলেছিলাম, ‘ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ’-এর পর্যায়ে অনেকে আছেন, ‘ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহ’র কাতারে আছে খুব কম। আসুন এই অত্যল্পদের কাতারে ঐক্যবদ্ধ থাকি।
প্রস্তাবিত কনসেপ্ট গ্রুপের বিষয়ে আমি নিয়মিত রিসোর্স পারসনদের সাথে কথা বলি। বিভিন্ন প্র্যাকটিক্যাল ও থিওরিটিক্যাল আসপেক্ট নিয়ে।
আমি চাই কথা ও কাজ একসাথে। শুধু কথা নয়।
সাধারণ মানুষের কনসেপ্ট ক্ল্যারিফিকেশনের আগে অগ্রগামী-নকীবদের মধ্যে কনসেপ্ট ক্ল্যারিফিকেশন মোর ইম্পর্টেন্ট এন্ড প্রায়োর টু অল হওয়া উচিত। সেজন্য ফাইন্ডিংসগুলোকে পয়েন্ট আউট করে সাজিয়ে নিতে হবে।
সাংগঠনিকভাবে বেকার– এমন প্রাক্তনদের অলস আড্ডা ও নির্দোষ আশাবাদের চেয়ে এটি আমার কাছে রীতিমতো ভেরি ভেরি সিরিয়াস জব। কারণ, স্বাভাবিক মেয়াদকাল ধরে নিলে অলরেডি আমার জীবনের তিন-চতুর্থাংশ ব্যয়িত হয়ে গ্যছে! সো, আই ক্যান্ট স্ট্যাক অর হ্যাঙ এট এনি পয়েন্ট। টু প্রসিড ইজ মাই অনলি অপশন।
ওকে, আমি আপনাকে চারটি প্রপোজিশন দিচ্ছি–
১. প্রচলিত ধারার নিয়মতান্ত্রিক সংশোধন = অসম্ভব-প্রায়।
২. বিকল্প ধারা ঘোষণা = (নিজেদের মধ্যকার কনসেপ্ট ক্ল্যারিফিকেশন, উপযুক্ত নেতৃত্ব ও প্রচলিত ধারার উপর জুলুম-অত্যাচারের প্রেক্ষিতে) আপাতত সম্ভব নয়।
৩. নীরব/অলস/দর্শকের ভূমিকা পালন = শরীয়ত অনুমোদন করে না।
৪. অতএব, কনসেপ্ট বিল্ডআপের কাজ করে যাওয়া। ভবিষ্যৎ আল্লাহর হাতে।
Muktiসেনা.71: New ideas to keep the business running. I guess business is not so good when all the leader is behind bars. Sell is down. So, you writing about new concepts. আর কতদিন ধর্ম ব্যবসা করবেন?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনার মন্তব্যটি ক’দিন আগে দেখেছি। পিসি নিয়ে বসেছি এইমাত্র। তাই উত্তর দিতে দেরি হলো।
আপনি বলেছেন, “আর কতদিন ধর্ম ব্যবসা করবেন?” কথাটি যদি আমাকে বলে থাকেন, তাহলে ভুল করেছেন। কারণ, ধর্মের সাথে আমার কোনো কারবার নাই। আমি আদর্শবাদ চর্চা করি। আমার আদর্শের জায়গা হলো ইসলাম। দ্বীন ইসলাম বা জীবন ব্যবস্থা হিসাবে ইসলাম।
হ্যাঁ, ইসলামকে আমি ধর্ম বা রিলিজিয়ন কোনোটাই মনে করি না। তাই, যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার বিপক্ষে আমি তাদের পক্ষে।
ইবনে বতুতা: বিরাট লেখা। অনেক কিছু বলার আছে, কিন্তু কোনটা রেখে কোনটা বলি? যদি কয়েক ভাগে লেখাটা দিতেন তাইলে সুন্দরভাবে কমেন্ট দিতে পারতাম।
নিঃসন্দেহে আপনি অনেক গভীর চিন্তা থেকে লিখেছেন। ভাসা ভাসা লেখা পড়তে পড়তে আমরা এমন ভাসা ভাসা হয়ে গেছি যে, গভীরভাবে ভাবতেও ভুলে গেছি। আপনার লেখা পড়ে অনেক চিন্তার খোরাক পাওয়া গেল।
আমার একটা অনুরোধ, আপনার ভাবনাগুলো বিষয়ভিত্তিক ভাগ করে সাজিয়ে লিখুন। আপনার লেখায় অনেক গুরুতর ও মূল্যবান বস্তু আছে। এই ভাবনাগুলো ছড়িয়ে দিতে হবে। এভাবেই একসময় কিছু লোক বেরিয়ে আসতে থাকবে, যারা শুধু ভেবেই দায়িত্ব শেষ করবে না, ভাবনাগুলোকে কাজে পরিণত করতে এগিয়ে আসবে। সেই লোকগুলো হয়ত নতুন কোনো আন্দোলন শুরু করবে, অথবা হয়ত চলমান আন্দোলনের গতিপথ পাল্টে ফেলবে।
তবে একথা অনস্বীকার্য, কিছু লোক শুধু গবেষণাই করে যাবে, তারা সক্রিয় আন্দোলনে জড়াবে না, অনেকটা থিংকট্যাঙ্কের মতো। সবাইকে যে একই কাজ করে যেতে হবে, এমনটা ঠিকও নয়। সমাজের ভিন্ন ভিন্ন অংশের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ও উপায়ে কাজ করবে, কিন্তু মূল উদ্দেশ্য থাকবে একটাই। যেমন, একটা স্কুলে টিচার যেমন থাকেন, তেমনি পিয়ন, ঝাড়ুদারও থাকেন। ঝাড়ুদার যদিও শিক্ষাদান করেন না, তবুও তিনি স্কুল-সিস্টেমেরই অংশ। তাকে ছাড়া সিস্টেম অচল। আর সিস্টেমের উদ্দেশ্য একটাই– ছাত্রদের শিক্ষিত করে তোলা। আমরা নিশ্চয়ই চাইব না যে, ঝাড়ুদারকেও ক্লাস নিতে হবে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: লেখা আলাদা আলাদা করে দেয়ার টেকনিক আস্তে আস্তে রপ্ত করবো। তবে ফুল টাইম ব্লগ চর্চা করা আমার জন্য ডিফিকাল্ট। মাঝে মাঝে বসি। তবে, ব্লগিং বেশ ভালো লাগে।
আমার ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য হলো মূল কথা প্রথম সুযোগে বলে ফেলা। দেখি না অন্যরা কী বলে টাইপের এপ্রোচ আমার ভালো লাগে না।
থিঙ্কট্যাঙ্কের লোকেরাও কিন্তু ‘লিমা তাক্বুলু-না মা-লা তাফয়ালু-ন’ থেকে পরিত্রাণ পাবে না। আমার রক্তে অ্যাক্টিভিজমের জীবাণু এমনভাবে ঢুকে গেছে যে, শুধু ঘাড় নিচু করে লিখে যাওয়া আমার ধাতে সয় না। আমি চাই থিওরিস্ট-এক্টিভিস্ট হতে। বোথ। থ্যাঙ্কস এ লট।
প্রবাসী মজুমদার: মোজাম্মেল ভাই, আসসালামু আলাইকুম। আপনার এ বিশ্লেষণধর্মী লিখাটির যৌক্তিকতা অনস্বীকার্য। চোখ-কান খোলা রেখে যারা ইসলামী আন্দোলন করে, তাদের তাড়িত বিবেক এগুলোকে সমর্থন দেবে এটাই স্বাভাবিক। আমার ‘প্রবাসী মজুমদার’ ছদ্মনামটি অনেকেই না জানলেও কাছের মানুষগুলো অনেকটা জানে। সত্য কথাটি বলতে গিয়ে অন্যরা জেনে যাবার বা দীর্ঘদিন থেকে প্র্যাকটিস করতে করতে গড়ে উঠা অভ্যাসটি একদিনে তো আর বদলানো যায় না। যেমনটি হয়তবা আপনিও পারেননি। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করার জায়গা পেলে অনেক আগেই কাব্য না হলেও উপন্যাস তো লিখতে পারতাম। এ সকল ক্ষোভ অনেক সময় নিজের অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলে গিলে ফেলি। কিন্তু কত গেলা যায়? সত্যি কথা বলতে গিয়েই তো অনেককে সংগঠন ছাড়তে হয়েছে। আমরা কেন জানি একটি সিস্টেমের মধ্যে পড়ে গেছি। একটু বেশি দাওয়াতী কাজ করলেই নেতা হয়ে যায় এখন। অথচ শূরা বৈঠকে বসে কত রাত মতপার্থক্য করে দায়িত্বশীলের কাছে নিজেকে চক্ষুশূল বানিয়েছি। এ সকল দাওয়াতী নেতাদের বৈঠকি আর সাংগঠনিক জ্ঞান নেই বললেই চলে। চরিত্র দেখে নিজেরই কিছু শেখার থাকে না, অন্যকে কী বলবো।
দ্বিতীয়ত: বর্তমানে অনেক নেতাই ইন্সুরেন্স/সমিতি/ব্যবসা করতে গিয়ে নিজের একটা পরিমণ্ডল তৈরি করে ফেলেছেন। এখন সে গ্রুপের কাছেই যেন সংগঠন জিম্মি হয়ে আছে। এ গ্রুপের অভিশাপটি আমি পেয়েছি। আমার ২৭ বছরের সাংগঠনিক জীবনকে মাড়িয়ে দিয়েছে। বিচার না পেয়ে নিজেই মাফ করে দিয়েছি। বিকল্প ব্যবস্থা থাকলে কবেই না চলে যেতাম।
আমি যদি বুঝি যে আমার চেয়ে আমার পীরের ইবাদত বন্দেগী বেশি নয়, তাহলে সেই বাইয়াত রাখারইবা মানে কী?! কারো হাতে করা বাইয়াত যদি ইনসিকিউরড হয়, এ বাইয়াত তো আমাকে জান্নাতে নেবার গ্যারান্টি আর নেই। আমার অনেক পরিশ্রমের পর ইসলামী বিপ্লব হলো, কিন্তু আমি জান্নাত পেলাম না, তাহলে এ দুর্ভাগ্যটি বরণ করার আগেই নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়াটা অনেক বড় প্রয়োজন। এটিকে হালকাভাবে নেয়ার যৌক্তিকতা কোরআন-হাদীসে নেই।
আমি মনে করি, এ অবস্থা হতে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতি হয়, এমন ধরনের পদক্ষেপের জন্য সমালোচনার পাশাপাশি উত্তরণের জন্য পরামর্শভিত্তিক লেখা আসা দরকার। সময়ের বিবর্তে একজন ইসলামী আন্দোলনের কর্মীর মূল স্পিরিট ও ধ্যানধারণ কী হওয়া উচিত, এ ব্যাপারেও লেখা আসা দরকার। সবচেয়ে বড় কথা হলো, সংস্কারের উদ্দেশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।
আজকের এ বিশ্বায়নে আমরা আজও বিশ্বায়িত হইনি। ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরির পাশাপাশি ব্লগে নিয়মিত লিখছেন, এমন ভাইদের উৎসাহিত করে শক্তিশালী লেখকসংঘ তৈরি করা অতীব প্রয়োজন। চিন্তায় বিপ্লব ঘটানোর জন্য লেখার প্র্যাকটিস একটি দারুণ হাতিয়ার।
অবশেষে আপনার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বেশি লিখে ফেলার জন্য দু:খিত। নিয়মিত লিখবেন সে প্রত্যাশায় থাকলাম।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ধন্যবাদ।