একজন শ্রদ্ধেয় বড় ভাই আমাকে ইনবক্স করলেন–
“আমার এক ভাই আমাকে লিখলেন, প্রতিউত্তরে আমিও কিছু লিখলাম, আপনার মতামতও জানতে আগ্রহী!
ভাই লিখলেন: বিভিন্ন দিকে একটি রাজনৈতিক উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে মঞ্জু ভাইয়ের জামায়াত থেকে বের হয়ে যাওয়া অথবা বহিষ্কারের পর বিষয়টি আরো জোরালো হচ্ছে। ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের তিনটি বিষয়কে মূলনীতি ধরে একটি রাজনৈতিক উদ্যোগের ঘোষণা শীঘ্রই আসতে পারে। এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য আশা করছি ।
আমার উত্তর: অবশ্যই স্পেস থাকা প্রয়োজন, নয়তো মনোবলহীন হয়ে দুর্বল হতে হতে একসময় নাই হয়ে যেতে হবে! প্রয়োজন সঠিক গবেষণার। দেশে-বিদেশে সঠিক লোকদের সমন্বয়ে এটা হতে পারে। প্রয়োজনে বর্তমান বিশ্বে মুসলিমদের যারা লিড দিচ্ছেন তাদের সবার সাথে যোগাযোগ চাই! আগামী দিনে শান্তির বিশ্ব, মানবিক বিশ্ব, নৈতিক বিশ্ব বিনির্মাণে এঁদের ব্লেন্ডিং চাই! আমাদের ইসলামী শিক্ষা অনেক সহীহ হওয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রয়োজন! তাড়াহুড়ো করারও কোনো কারণ নাই। হয়তো আমার মনোভাব অনেকটা নিস্পৃহ ও দায়সারা গোছের হয়ে গেলো। তবে এর বাইরে চিন্তা করতে পারছি না কিংবা অনিচ্ছুক। ঠেকে শিখছি!”
***
যেই শ্রদ্ধেয় বড় ভাই আরেকজনের সাথে তাঁর এই কথোপকথন আমাকে ইনবক্সে জানিয়েছেন এবং আমার মতামত জানতে চেয়েছেন, তাঁকে আমি পুরো বিষয়টির উপরে আমার চিন্তাভাবনা সংক্ষেপে জানিয়েছি। এ ধরনের প্রশ্ন, ইস্যু ও সমস্যা এখনকার সময় আরো অনেকের জন্যই প্রাসঙ্গিক হতে পারে। তাই, তাঁকে দেয়া আমার মতামত কিছুটা পরিমার্জিত আকারে এখানে উদ্ধৃত করছি:
শ্রদ্ধেয় ভাই, আসসালামু আলাইকুম। তাড়াহুড়া করে কিছু একটা করা যেমন ঠিক হবে না, তেমন করে সব প্রস্তুতি নিয়ে তারপর কিছু একটা করবো, এমন ভাবাটাও ঠিক হবে না। যারা রাজনৈতিক ময়দানে কাজ করতে চাচ্ছে, তারা তাদের অবস্থান থেকে এখুনি কাজ শুরু করতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় যারা ইসলামকে আদর্শ হিসেবে মেনে নিয়ে রাজনীতি করছেন তাদের অভিজ্ঞতা থেকে এখানকার রাজনৈতিক ময়দানে সক্রিয় নেতাকর্মীরা শিক্ষা গ্রহণ করবে, এটি তো স্বাভাবিক; বা স্বাভাবিকভাবে এমনটিই তো হওয়ার কথা।
প্রসঙ্গক্রমে পুরনো কথা আবার নতুন করে বলতে হচ্ছে। সবাই তো আর রাজনীতি করবে না। কেউ বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানকে নিজের জন্য অধিকতর উপযুক্ত মনে করতে পারে। কেউ সমাজসেবামূলক কার্যক্রমকে নিজের জন্য অধিকতর উপযুক্ত ফিল্ড অফ কন্ট্রিবিউশন হিসেবে নিতে পারে। ধর্মীয় অঙ্গনে কাজ করাটাই উনার জন্য বেটার, কেউ এমনটাও মনে করতে পারে। কেউ কেউ আবার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ করাটাকে নিজের জন্য অধিকতর ফলপ্রসূ হিসেবে ভাবতে পারে।
এভাবে আল্লাহ প্রদত্ত যোগ্যতা, ইমিডিয়েট এনভায়রনমেন্ট, নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড বা গড়ে ওঠার প্রেক্ষাপট ও পেশাগত সুবিধা-অসুবিধাকে বিবেচনায় নিয়ে একেকজন ব্যক্তি ঠিক করবেন সমাজ ও রাষ্ট্রের কোন জায়গাতে ঠিক কীভাবে তিনি অবদান রাখবেন। একই ব্যক্তি সব ধরনের কাজে ইনভল্ভ হওয়ার পুরনো, প্রচলিত ও অকার্যকর রীতিকে বাদ দিতে হবে।
যে কাজই করেন না কেন, ‘আমি একজন মুসলিম, আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর খলিফা’ এই কথাটা সব সময় মনে রাখাটাই যথেষ্ট। কোরআন-হাদীসে উল্লেখিত আনুগত্যের বিষয়টা মূলত প্রশাসনিক ব্যাপার। সামাজিক কোনো সংগঠনে ধর্মীয় আনুগত্যের বিধান থাকার অবকাশ নাই। বলাবাহুল্য, রাজনৈতিক সংগঠনও এক ধরনের সামাজিক সংগঠন।
যারা পূর্বতন সংগঠনের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন, সেটা যে কারণেই হোক না কেন, তাদের উচিত নিষ্ক্রিয়তাজনিত নানা ধরনের সমস্যা থেকে আত্মরক্ষার জন্য কোনো না কোনো ধরনের উদ্যোগের সাথে সংযুক্ত হওয়া। সংগঠনের মান যা-ই হোক, আপনার নিজের জন্য এটি বেশি দরকার। কেননা, দীর্ঘদিন ব্যবহৃত না হওয়ার কারণে বসে যাওয়া ব্যাটারির মতো নিষ্ক্রিয়তার রোগে পেয়ে বসা ব্যক্তির পক্ষে কখনোই আর তেমন অর্থপূর্ণভাবে কোনো কিছুতে সক্রিয় হওয়া সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।
সেজন্য, হাতের কাছে থাকা কোনো কর্মোদ্যোগ, তা এমনকি অপর্যাপ্ত প্রস্তুতির বা কিছুটা ত্রুটিপূর্ণ হলেও তাতে শামিল হওয়া প্রত্যেকের উচিত। এভাবে সর্বাবস্থাতেই সংগঠন বা সংঘবদ্ধতার সাথে থাকার দায়িত্ব পালন সম্ভব। তাছাড়া, সারা জীবন যে একটিমাত্র সংগঠনই করবেন, এমন কোনো কথা নাই। গন্তব্য যেখান সুস্পষ্ট, গাড়ি বদলানো সেখানে অনুচিত কোনো ব্যাপার নয়। গতিই যদি হয় মুখ্য, প্রয়োজনে যানবাহন পরিবর্তন তখন স্বাভাবিক ব্যাপার বৈকি।
কথা হলো, বিচ্ছিন্ন ও নিষ্ক্রয় না থাকা। বরং সর্বাবস্থাতেই সক্রিয় থাকা, ও এর দাবি হিসেবে কোনো না কোনো সংগঠনের সাথে থাকা। এটি বাস্তবায়িত হতে পারে দুইভাবে: সর্বাত্মকবাদী কোনো একক সংগঠনের অধীনে আজীবন পড়ে থাকার মাধ্যমে। এমনকি দ্বিমত সত্ত্বেও। অথবা, গুচ্ছ পদ্ধতির সংগঠন ব্যবস্থাপনার অধীন কোনো একটা সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট বা সম্পৃক্ত থাকার মাধ্যমে।
প্রচলিত ধরনের ইসলামী আন্দোলনের ধারণা হচ্ছে প্রথমে উল্লেখিত কেন্দ্রীয় ও এককেন্দ্রিক সংগঠন পদ্ধতিনির্ভর ধারণা। আর ইসলামী আন্দোলনের নতুন কনসেপ্ট হচ্ছে দ্বিতীয় ধরনের। অর্থাৎ বিকেন্দ্রীকৃত ও গুচ্ছ পদ্ধতির সাংগঠনিক ব্যবস্থার ধারণা। এখানে কোনো প্রশাসনিক হায়ারার্কির চেয়ে মূল্যবোধ ও আদর্শিক বন্ধনই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তাই, এখনো যদি আপনি কোনো উদ্যোগের সাথে শামিল না হয়ে থাকেন তাহলে ‘দেখি না কী হয়’ ধরনের দোদুল্যমানতা পরিহার করে আপনার উচিত পরিচিত কারো আহ্বানে সাড়া দেয়া। আপনার জন্য উপযোগী কোনো উদ্যোগের সাথে অনতিবিলম্বে পূর্ণ উদ্যমে সক্রিয় হওয়া।
এ প্রসঙ্গে মাওলানা মওদূদীর একটি কথাকে আমরা স্মরণ করতে পারি। ‘ইসলামী আন্দোলন: সাফল্যের শর্তাবলী’ বইয়ে তিনি বলেছেন, যোগ্যতাসম্পন্ন লোকেরা ত্রুটিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়েও অনেক কাজ করতে পারে। অথচ, অযোগ্য লোকেরা একটি সুন্দর কর্মসূচি নিয়েও তেমন কিছু করতে পারে না। এ বিষয়ে আমার কথা হলো, পথ তৈরি করে কাজ হয় না। বরং কাজের মাধ্যমেই পথ তৈরি হয়। এই প্রজন্মের জন্য, আগামীর জন্য একটি সুন্দর পথ তৈরির এই দায়িত্ব আপনার, আমার, সবার।
যিনি বা যারা আহ্বান করেছেন তাদের অপূর্ণতা ও ত্রুটি অনুসন্ধান না করে একজন কর্মবাদী হিসেবে আপনার উচিত হলো এখনই কাজ শুরু করে দেওয়া। বাকিটা আল্লাহর হাতে। এ উদ্যোগ যদি সফল হয় তাহলে তো ভালো। আর যদি সফল না হয় সে ক্ষেত্রেও তা পরবর্তী কোনো সফল উদ্যোগের ব্যাকগ্রাউন্ড ইনিশিয়েটিভ হিসেবে কাজ করবে। ইন আইদার সিচুয়েশন, ফ্রম পার্সোনাল সেন্স অফ রেস্পন্সিবিলিটি, ইউ উইল বি সাকসেসফুল।
ফেসবুক থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Muhammad Moinul Islam: সুদানের ক্ষমতার পরিবর্তন হলো জনগণের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে পুঁজি করে, শত মানুষের জীবনের বিনিময়ে। কিন্তু মুক্তি কি আসবে? গাদ্দাফী, সাদ্দাম আর হালআমলের মোবারক– সবাইকে নামানোর জন্য জনগণ রাস্তায় নেমেছে, জীবন দিয়েছে। এরপর বিপ্লবকে ডাকাতি করেছে মোড়লরা। কিন্তু শুধু তাদের প্লানেই এই আন্দোলন, সংগ্রাম ও পরিবর্তন; নাকি এটা সত্যিই গণমক্তির আন্দোলন ছিল, জানা নেই। আর তাই কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তনের রাজনীতির ব্যাপারে পক্ষ-বিপক্ষ নেয়ার নৈতিক দায় থেকে দূরে থাকাই ভালো মনে করি। তবে ইস্যুভিত্তিক সামাজিক সমস্যার সমাধানে কাজ চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমি নিজেও রাজনীতি করবো না বলে বলেছি। আমার এই অবস্থানের কারণ হলো, আমি রাজনীতির ময়দান থেকে সামাজিক কাজ, বিশেষ করে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের ময়দানকে অধিকতর গুরুত্ব দিচ্ছি। সেজন্য। এটি আমার বর্তমান ব্যক্তিগত পেশা ও সামাজিক অবস্থানের সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই। সোজা কথায় আমি রাজনীতির চেয়েও অরাজনৈতিক ময়দানে বেশি ভূমিকা রাখতে পারবো। সেজন্য আমি রাজনীতি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কিন্তু রাজনীতি না করার জন্য আপনি যে কারণটা দেখিয়েছেন সেটি সম্পূর্ণ ভুল। রাজনীতির ময়দানে কখনো শতভাগ সফলতা আসে না। রাজনীতি হচ্ছে যুদ্ধের মতো। যুদ্ধে কখনো শতভাগ সফলতা হয় না। অধিকাংশ যুদ্ধ শেষ হয় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে। তার মানে এই নয় যে কোনো পক্ষই জয়ী হয়নি। একটি যুদ্ধ যখন সংঘটিত হয় তখন উভয় পক্ষই কোনো দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কোনো দিক থেকে লাভবান হয়। কারো সাময়িক পরাজয় তাকে দীর্ঘমেয়াদে বিজয় এনে দেয়।
যেসব সাম্প্রতিক রাজনৈতিক-সামরিক ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন, সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার সুযোগ এখানে নাই। তাই, আমার উপরের কথাগুলোর আলোকে আপনি পুরো বিষয়টি বুঝে নিবেন আশা করি। দয়া করে ভুল বুঝবেন না।
আসসালামু আলাইকুম ………. বারাকাতুহ
ব্যক্তির জন্য এটাই মূল কথা, মূল নীতি হওয়া উচিত–
“”সারা জীবন যে একটিমাত্র সংগঠনই করবেন, এমন কোনো কথা নাই। গন্তব্য যেখান সুস্পষ্ট, গাড়ি বদলানো সেখানে অনুচিত কোনো ব্যাপার নয়। গতিই যদি হয় মুখ্য, প্রয়োজনে যানবাহন পরিবর্তন তখন স্বাভাবিক ব্যাপার বৈকি।
কথা হলো, বিচ্ছিন্ন ও নিষ্ক্রয় না থাকা। বরং সর্বাবস্থাতেই সক্রিয় থাকা, ও এর দাবি হিসেবে কোনো না কোনো সংগঠনের সাথে থাকা।””
মানবতার কল্যানে , দেশের নাগরিকের অসুবিধা, তাদের প্রতি নির্যাতন কারিদের প্রতিরোধ কারী দল গঠন হউক প্রত্যাশা করি।