কিস্তি ১: ইসলামী আন্দোলন বলতে কী বুঝায় এবং এর ইতিহাস
সংজ্ঞা: ইসলামী আন্দোলন হলো ইসলামকে ধর্ম হিসাবে দেখার পরিবর্তে একটি সামগ্রিক জীবনাদর্শ হিসাবে বিবেচনা করা এবং পর্যায়ক্রমে মানবজীবনের সর্বস্তরে ইসলামকে একমাত্র অথবা প্রাধান্য লাভকারী মতাদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য সম্ভাব্য সব উপায়ে চেষ্টা করা।
উৎপত্তি: ইসলামের নামে যখন রাষ্ট্রক্ষমতা মুসলমানদের হাতে ছিলো তখন ‘ইসলাম একটি সামগ্রিক আদর্শ’ – এই কথাটার তেমন প্রয়োজনীয়তা ছিলো না। তাই তৎকালীন ইসলাম সম্পর্কিত কাজগুলো ইসলামের জ্ঞানচর্চা ও ধর্মপ্রচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। দণ্ডবিধির প্রয়োগ, অর্থনৈতিক ও সামরিক কম-বেশি রাষ্ট্রই করতো। বিগত শতাব্দী তথা বিংশ শতাব্দীর শুরুতে উসমানীয়া খেলাফতের বিলুপ্তির মাধ্যমে তৎকালীন উপনিবেশিত মুসলিম বিশ্বে আত্মপরিচয়ের প্রয়োজন প্রকট হয়ে উঠে। যার ফলে মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী নব-পূণর্জাগরণের সূচনা ঘটে। মুসলিম উম্মাহ বা জাতি-পরিচয়ের এই প্রচেষ্টায় অচিরেই রাজনীতির সব ব্যাপার-স্যাপার মুখ্য হয়ে উঠে। যা ইসলামী আন্দোলন হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।
ধর্ম হিসাবে ইসলাম: ধর্ম হিসাবে ইসলামের মূল কথা হলো ব্যক্তির পরকালীন মুক্তি। নামাজ-যাকাত-রোজা-হজ্ব-কোরবানী ইত্যাদি এবাদতের মাধ্যমে নাজাত লাভের প্রচেষ্টাই ইসলামের এই আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের মূল কথা। এর সাথে রয়েছে ব্যক্তিগতভাবে সৎ ও চরিত্রবান হিসাবে গড়ে উঠা। সামাজিক বিষয়াদিতে নৈতিক উপদেশ প্রদানের বাহিরে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না হওয়া। রাজনীতিতে না জড়ানো। যুক্তির চেয়ে ভক্তি ও শাস্ত্রের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া। ধর্ম হিসাবে ইসলামের আন্ডারস্ট্যান্ডিং তাই তুলনামূলকভাবে রক্ষণশীল।
আন্দোলন হিসাবে ইসলাম: এর বিপরীতে ইক্বামতে দ্বীন তথা দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার দাবী তুলে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলনের মূলধারাসমূহের আন্ডারস্ট্যান্ডিং মোতাবেক ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করা যাবে না। ইসলাম এমন এক ধর্ম যার মধ্যে পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষামূলক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক – এক কথায় ‘সব কিছু’ রয়েছে। এই ধরনের বুঝ-জ্ঞান মোতাবেক ইসলাম এক ধরনের রাজনৈতিক ধর্ম।
ওপরে বর্ণিত ‘সব কিছু’র এক ধরনের আন্ডারস্ট্যান্ডিং মোতাবেক পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষামূলক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক বিষয়াদির মৌলিক কাঠামো বা রূপরেখা ইসলাম দিয়ে দিয়েছে। যার যার সমাজ ও রাষ্ট্রকে সে অনুযায়ী পূণর্গঠন করতে হবে। এক কথায়, Islam is a complete code of life। আন্দোলনের কনসেপ্টে ইসলাম হলো অধিকতর যুক্তিবাদী ও তত্ত্বমুখী। সামাজিক বিষয়াদিতে এ ধারণার অনুসারীরা তুলনামূলকভাবে উদার, আধুনিক মনোভাবাপন্ন ও একটা পর্যায় পর্যন্ত প্রগতিশীল চরিত্রের বা বৈশিষ্টের।
সংগঠন কাঠামো: ইসলামী আন্দোলনের এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে দেশে দেশে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে উঠে। এই সংগঠনগুলো মোটাদাগে দাওয়াত, সংগঠন, প্রশিক্ষণ, সমাজসেবা ও (রাষ্ট্রীয়) বিপ্লব – এই পাঁচ ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করে। এতদনুসারে যখন যেখানে যতটুকু প্রয়োজন বা ক্ষেত্র সৃষ্টি হয় সে অনুসারে প্রত্যেককেই এই কাজগুলো করতে হয়। বিশেষ করে নির্বাচনী রাজনীতিতে পূর্ণমাত্রায় অংশগ্রহণের কারণে এই ‘ইসলামী আন্দোলন’গুলো এক পর্যায়ে রাজনৈতিক দল হিসাবে পরিচিত লাভ করে ও আভ্যন্তরীণভাবে বিবর্তিত হয়।
কিস্তি ২: বিগত শতাব্দীর ইসলামী আন্দোলন ধারণার ব্যর্থতা
উল্টোমুখী বিস্তৃতি: দাওয়াতের বিস্তৃত জমীন হতে পিরামিড মডেলে রাজনীতির শিখড়ে গড়ে উঠার পরিবর্তে, অর্থাৎ বটম-আপ এপ্রোচের পরিবর্তে ইসলামী আন্দোলনের ধারণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা সংগঠনগুলো প্রাকৃতিক অনিবার্য নিয়মেই, অজান্তেই (tacitly) টপ-ডাউন এপ্রোচে রিস্ট্রাকচারড হতে থাকে। দীর্ঘ মেয়াদী, মধ্য মেয়াদী ও জরুরী কাজগুলোকে আলাদা আলাদা চ্যানেলে রাখতে না পারার কারণে, স্বভাবত:ই জরুরী কাজগুলো, যেমন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ক্রমান্বয়ে প্রায়োরিটি পেতে থাকে। রাজনৈতিক ক্ষমতালাভই ইসলামের প্রধান দাবী – এমন ধরনের অভূতপূর্ব প্রপজিশন ইসলামী আন্দোলন ধারণার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। রাজনীতিকে ঠিক রেখে বাকী সব কর্মসূচীর আশু করণীয় নির্ধারিত হতে থাকে।
অনৈসলামী (লেনিনবাদী) সংগঠন-ব্যবস্থায় ইসলামী আদর্শের পরীক্ষা-নিরীক্ষা: ক্যাডারভিত্তিক ও কেন্দ্রনির্ভর সংগঠন ব্যবস্থার পরিণতিতে গঠন পর্বের ধারণা ও পরবর্তী বাস্তবতার এই ধরনের ফারাক সৃষ্টি হয়। ধারণা করা হয়, বিংশ শতাব্দীর প্রথম-তৃতীয়াংশে বিশ্বব্যাপী সর্বাত্মকবাদী (totalitarian) রাজনৈতিক আদর্শ ও সংগঠনসমূহের দৃশ্যমান সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ইসলামী আন্দোলনের কনসেপ্টে গড়ে উঠা সংগঠনসমূহ এ ধরনের রেজিমেন্টেড সংগঠন কায়েমের প্রেরণা লাভ করেন। নির্বাচনী রাজনীতিতে বিশেষ সাফল্য লাভ না করলেও এ ধরনের মজবুত সংগঠন ব্যবস্থার কল্যাণে তারা সামগ্রিকভাবে উল্লেখযোগ্য সফলতা লাভ করে।
চেতনার (পড়ুন, ঈমানী) এককত্ব ধারণার অপপ্রয়োগ: ইসলামের তাত্ত্বিক অখণ্ডতা অনুসরণ করতে গিয়ে, হয়তোবা, সংগঠন ব্যবস্থাতেও তারা এককেন্দ্রিকতা বজায় রেখে থাকবেন। আল্লাহর রাসূল (সা) ও খেলাফতে রাশেদা কর্তৃক পরিচালিত সাংগঠনিক তথা প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল এককেন্দ্রিক। বিংশ শতাব্দীর ইসলামী আন্দোলন হিসাবে সংগঠন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য যারা কাজ করেছেন তারা খুব সম্ভবত এই আদর্শতুল্য উদাহরণকে সামনে রেখেই অগ্রসর হয়েছেন। তৎকালীন অর্থাৎ পূর্ব-আধুনিক পিরিয়ডে ও গঠনপর্ব হিসাবে এটি সঠিক থাকলেও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে কাজের অগ্রগতি ও বিস্তৃতির এক পর্যায়ে সাংগঠনিক স্বাতন্ত্র্য গড়ে তোলা দরকার ছিলো। তা হয় নাই। এক ধরনের কঠোর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ দৃশ্যমানভাবে বা অদৃশ্যভাবে সব সময়ে বজায় ছিলো। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।
এক ধরনের কাল্ট হিসাবে গড়ে উঠা: বলা যায়, শুরুতে আদর্শের কিছুটা প্রাধান্য থাকলেও দ্রুতই এ ধরনের সংগঠনে আদর্শ, সংগঠন ও শীর্ষ পরিচালকবৃন্দ – এসব কিছু একাকার হয়ে যায়। বিংশ শতাব্দীর ইসলামী আন্দোলন ধারণা নির্ভর সংগঠনগুলো নানা ধরনের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির মুখে কমবেশি ‘গোপন-সংগঠনে’র রূপ লাভ করে। বলাবাহুল্য, গোপন সংগঠনে যা এখানেও তা হয়েছে। অর্থাৎ শীর্ষ পরিচালনাকারী ব্যক্তি মানেই সংগঠন, আর সংগঠন মানেই আদর্শ – এভাবে কার্যত ইভলভ করে। যদিও দৃশ্যমানভাবে পরামর্শদানকারী বিভিন্ন ফোরাম সহযোগী হিসাবে, পর্যালোচনাকারীদের মতে, বৈধতাদানকারী ফোরাম হিসাবে ক্রিয়াশীল ছিল। এবং আছে।
তাত্ত্বিক উন্নয়ন না হওয়া: বলাই বাহুল্য, সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ যত বেশি হবে সৃজনশীলতা তত হ্রাস পাবে। ঐক্যচেষ্টা যত মজবুত হবে বুদ্ধিবৃত্তি চর্চা তত দুর্বল হবে। ব্যাপারটাকে সহজ বলুন, প্যারাডক্সিক্যাল বা স্ববিরোধি বলুন, এটি হলো বাস্তবতা। প্রতিষ্ঠাতা তাত্ত্বিক-সংগঠকগণ যা করে গেছেন তার বাইরে এসব ইসলামী আন্দোলন ইসলামের ওপর গবেষণায় তেমন কোনো তাত্ত্বিক উন্নয়ন ঘটাতে পারে নাই। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই না পারাকে উনারা কৃতিত্বই মনে করেন। উনাদের মাইন্ডসেট হলো যা যা ঠিক-ঠাক করার তার পথ উনাদের তত্ত্বগুরু (ideologue) বলে গেছেন। দ্যটস ফাইনাল। এসব বাস্তবায়ন করাই একমাত্র ইস্যু।
এক্টিভিজমের ভুল অর্থ গ্রহণ: আদর্শ যত কালোত্তীর্ণ হোক না কেন, প্রত্যেক যুগের আলোকে তার তাত্ত্বিক নবায়ন জরুরী – এ কথা উনারা বুঝতে ও মানতে নারাজ। বর্তমান বৈশ্বিক গ্রাম পরিস্থিতিতে তাত্ত্বিক ও কর্মকৌশলগত কিছুটা প্রয়োজনের কথা মুখে স্বীকার করতে বাধ্য হলেও, টিনের চালে কোনো একটা-দু’টা টিন পরিবর্তনের মতো করে উনারা পুরনো তত্ত্ব ও কাঠামোকেই আঁকড়ে ধরে আছেন। নতুন আবেহ নতুন ধরনের কাজের জোয়ারে ভেসে যাওয়ার আগ পর্যন্ত উনারা প্রাণপণে শতবছর পূর্বেকার তত্ত্ব ও কর্মকৌশলেই থেকে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। অথচ পুরো টিনের চালটা ফেলে দিয়ে বহুতল বিশিষ্ট দালান নির্মাণই এখন সময়ের দাবী। যুগমাত্রেরই অগ্রগামী মতাদর্শ হিসাবে ইসলামকে দাবী করলেও সদা পরিবর্তনশীল সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বপরিস্থিতির বিষয়ে নিজেরা কোনো মৌলিক পরিবর্তনকে মানতে নারাজ।
চরমপন্থার উদ্ভব: ইসলামের মানোত্তীর্ণ গবেষণা অব্যাহত রাখতে না পারায় হতাশ কর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের একটা অংশ ইসলামের নামে জঙ্গীবাদে নিজেদেরকে সোপর্দ করে। সমাজে ব্যাপকভাবে ইসলামীকরণের কৃতিত্ব যারা নিতে চায় তারা এই অন্ধকার দিকটাকে অস্বীকার করার চেষ্টা করে। ব্যাপারটা দুঃখজনক। পুরো সংগঠন, বিশেষ করে নেতৃত্বের লেভেলটা চরমপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করাটা সঠিক ও কৃতিত্বের ব্যাপার হলেও প্রাক্তনদের একাংশকে ধরে রাখতে না পারাটা এই ধারার ইতিহাসে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ব্যর্থতা বটে। উল্লেখ্য, ইসলামী আন্দোলনের মাঠ পর্যায়ের যারা সালাফি (ধর্মীয় অতিরক্ষণশীল) হিসাবে পরিবর্তন হয়ে গেছে, বা জিহাদি হিসাবে যারা বের হয়ে গেছে, মূল সংগঠনের অতিগণতন্ত্রপ্রীতি ও রাজনীতিসর্বস্বতাসহ তাদের কাছে প্রতীয়মান তাত্ত্বিক অসংগতিসমূহ তাদের এহেন বিভ্রান্তির জন্য দায়ী।
কিস্তি ৩: বিংশ শতাব্দীর ইসলামী আন্দোলনের সাফল্য
স্বাধীনতা সংগ্রাম: বিংশ শতাব্দীতে ইসলামী আন্দোলনের কনসেপ্ট যদি গড়ে না উঠতো তাহলে কী হতো তা কল্পনা করাও অসম্ভব। ইসলামী আন্দোলনের ধারণা উত্তাপ, উৎসাহ, সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ক্ষেত্রবিশেষে নেতৃত্বের মাধ্যমে সে সময়কার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপদসমূহ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। বিশ্বব্যাপী খেলাফত ব্যবস্থার পুনরুদ্ধার না হলেও মুসলমানদের আত্মনিয়ন্ত্রানাধিকার উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরাধীন অবস্থার তুলনায় এটি নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এক একটা স্বাধীন রাষ্ট্র মানে বৃহত্তর মুসলিম উম্মাহ’র এক একটা শক্তি বা ভরকেন্দ্র। প্রেরণার উৎস। আশ্রয়। ইসলামী আন্দোলনকারীরা মুসলিম দেশগুলোকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে – এমন দাবী করছি না। বরং, তৎকালীন উপনিবেশিত মুসলিম এলাকাগুলোর স্বাধীনতা অর্জনে ইসলামী আন্দোলনপন্থীদের মৌলিক অবদান ছিলো – এই উপেক্ষিত ও অপ্রিয় সত্যের দিকে ইশারা করছি।
ইসলামী জনপরিমণ্ডল সৃষ্টি ও বিকাশ: বিংশ শতাব্দীর গোড়া হতে ইসলামী আন্দোলনের ধারণা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে বা প্রত্যক্ষভাবে তাদের তত্ত্বাবধানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহে প্রচুর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। এসব প্রতিষ্ঠান না থাকলে, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়, মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ইসলামের এতটা প্রভাব বজায় থাকতো না। দেশে দেশে গড়ে উঠা ইসলামী আন্দোলনগুলোর প্রভাবে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে কম্যুনিজমের বিস্তার মুখ থুবড়ে পরে। ইসলামী আন্দোলন ধারণানির্ভর সংগঠনসমূহ এর বিপরীতে ক্রমান্বয়ে পুঁজিবাদী ধ্যান-ধারণায় সিক্ত হয়েছে – এই অভিযোগ সঠিক হওয়া সত্বেও কম্যুনিজম ঠেকানোর কৃতিত্ব তাদেরকে দিতেই হবে।
ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিষ্ঠাবান শিক্ষকের মতো ভুল-শুদ্ধ যা তারা বুঝেছেন তা প্রাণপণে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেছেন। এখনো করে যাচ্ছেন। ওপরে যেমনটা বলেছি, ইসলামী আন্দোলনের সনাতন ধারার অনুসারীরা একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী নতুন ধরনের কাজের জোয়ারে তলিয়ে বা হারিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত statuesque-কে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করবেন। এ ধরনের সংগঠনকে কোনো সরকার নিষিদ্ধ করলেও কিছুটা আধুনিক, খানিকটা রক্ষণশীল, কথাবার্তায় ত্যাগী মানসিকতার দাবীদার কিন্তু ভিতরে ভিতরে পুঁজিবাদী-ভোগবাদী – এমন জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব থেকেই যাবে।
ইসলামের জাহাজকে গন্তব্যের পথে পরিচালনায় ব্যর্থ হলেও যোগ্য নাবিকের জন্য জাহাজটাকে বন্দরে নোঙর করে তো রাখা হয়েছে। এটুকুই বা কম কী? দেশে দেশে ইসলামী আন্দোলনগুলোর নানা রকমের সাফল্য-ব্যর্থতার মিথস্ক্রিয়ার ধারাবাহিকতাই হলো বর্তমান শতাব্দীর উদীয়মান ইসলামপন্থার উৎস। বর্তমান শতাব্দীতে ইসলামই পাশ্চাত্য সভ্যতার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী – এ কথা আজ স্বীকৃত। ইসলামপন্থার এই প্রবল উত্থান, ‘ব্যর্থ’ পূর্বসূরীদেরই (অনিচ্ছাকৃত!) অবদান, একথা অনস্বীকার্য। ভুলের ওপর বরকত আল্লাহ দিবেন। সেজন্য সন্দেহাতীত ভুলগুলোকেও অবদান দাবী করাটা, সনাতনপন্থী ইসলামী আন্দোলনকারীদের ভালো হয়েছে এমন ‘সবকিছু আমরাই করেছি’ টাইপের মন-মানসিকতার পরিচায়ক।
কিস্তি ৪: ইসলামী আন্দোলনের ভবিষ্যত
সামগ্রিক জীবনাদর্শ তথা ইসলামী আন্দোলন হিসাবে ইসলামই একবিংশ শতাব্দীর উজ্জ্বলতম সম্ভাবনা: ইসলামী আন্দোলনকারীদের কাংখিত সফলতা লাভ হয় নাই। গড়পরতা হিসাবে এটি সত্য। এর মানে তারা পরাজিত হয়েছে, ইসলামপন্থা অতীতের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে – এ ধরনের পাশ্চাত্য বুদ্ধিজীবীতা বুদ্ধিবৃত্তিক আঁতলামি ছাড়া আর কিছু নয়। এ ধরনের পণ্ডিতদের লেখার শিরোনাম হয় beyond Islamism, post-Islamist movement ধরনের। হতে পারে, পাশ্চাত্য আবহে এ ধরনের কথাবার্তা চলে। একজন মুসলিম হিসাবে আমি ইসলামকে ইসলামের দিকে থেকেই দেখবো। আমার অবস্থান হতে বিয়ন্ড ইসলামিজম বলতে আমি কী বুঝবো? বলতে পারেন, এ ধরনের রেটরিককে পাশ্চাত্য একাডেমিয়ার ধাঁচে বুঝতে হবে। কথা হচ্ছে, আমার দেশ, সংস্কৃতি, এর বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরাধিকার ও ধারবাহিকতা, এখানকার ধর্মীয় জনমানসের একেবারে সরাসরি পরিপন্থী কথাবার্তা কেন আমি নিবো? কেন আমি এসব সেকেন্ডারি (কু)তর্ক নিয়ে তেমনভাবে এনগেজড থাকবো। পরিচিত ‘post-Islamist’দেরকে এসবেই দিনরাত লিপ্ত থাকতে দেখি।
ইসলামকে ইসলামের দিক হতে ইসলামের মতো করেই বুঝতে হবে। পাশ্চাত্যবাসীরা ইসলামী কনসেপ্টে কি কি উন্নয়ন ঘটাচ্ছেন তা আমাদের জন্য খুব একটা দরকারি নয়। হ্যাঁ, এ কথা আমি বুঝেশুনেই বলছি। সেসব পরিবর্তন, সংস্কার ও অগ্রগতি নিয়ে আপডেটেড থাকার জন্য কিছু বুদ্ধিজীবী থাকাই যথেষ্ট। অনেকের ধারণা, পৃথিবীর তাবৎ বাতিল মতবাদকে রিফিউট করে, এবং সেজন্য সেগুলোর পুংখানুপুংখ রিভিউ করে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এটি ভুল পথ। ভুল পদ্ধতি। সোজা কথায় কমন মিসটেক, fallacy।
জগত ও জীবনের সঠিক জ্ঞান অর্জনের জন্য অতো বড় বুদ্ধিজীবী হওয়া লাগে না: কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন যে কোনো মানুষই তার জীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জীবনের সঠিক পথ ও করণীয়কে অন্ততপক্ষে মোটাদাগে বুঝে নিতে পারবে যদি সেই মানুষটির ইসলাম সম্পর্কে বেসিক নলেজ ও প্রপার আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকে। তথ্যনির্ভর জ্ঞান বা তত্ত্ব বিশেষ নয়, মানুষকে বুঝাতে হবে, ইসলামের বেসিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা paradigm। সোজা কথায় খোলামনে কোরআন, হাদীস ও সীরাতের যথাসম্ভব পড়াশোনা এবং ব্যাপকভাবে আলোচনা সভা ইত্যাদি করা।
এককেন্দ্রিক সংগঠন ব্যবস্থা বাদ দিতে হবে: হ্যাঁ, এটি করার জন্য এককেন্দ্রিক সংগঠন ব্যবস্থাকে বাদ দিতে হবে। ইসলামকে মুলত সামাজিক ব্যাপার হিসাবে উপস্থাপন করতে হবে। সমাজকে সামনে আনলে ব্যক্তি ও (রাষ্ট্রীয়) সমষ্টি আপনাতেই এক ধাঁচে এসে যাবে। সামাজিক যে কোনো বিষয়ই বহুমুখী, মতাদর্শগতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী ও সহাবস্থানধর্মী। এই কথার সরল তাৎপর্য হলো, যে কোনো গোষ্ঠী বা মহলকে এই সুযোগ দিতে হবে যাতে করে তারা নিজেদের এলাকা, ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও ইতিহাসের উপযাগী করে ইসলামী আন্দোলনের ধারণাকে গড়ে নিতে (customize) পারে। এর মানে দাওয়াতী সংগঠন, সামাজিক সংগঠন বা রাজনৈতিক সংগঠনকে শুধুমাত্র আলাদা করতে হবে এমন নয়। বরং এগুলোসহ সংশ্লিষ্ট সকল ফিল্ডে লোকেরা যে যার মতো করে সংগঠন কায়েম করবে। আসলে সংগঠনও কায়েম করবে না। বরং যে যার মতো কাজ করবে। কাজের ধারায় এক পর্যায়ে কোনো না কোনো ফর্মে সংগঠন কায়েম হয়ে যাবে। আবার সে সব সংগঠন দ্রুত ভেংগেও পড়বে। এতে শেষ পর্যন্ত আদর্শই লাভবান হবে।
বিভাজনেই বৃদ্ধি যদি বৃহত্তর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এক থাকে: এ যেন আমাদের শরীরের কোষ-বৃদ্ধির মতো। কোষ বিভাজিত হয়েই কোষ-বৃদ্ধি ঘটে। কোনো বিভাজনে যদি মূল বৈশিষ্ট্য প্রত্যেক অংশেই অক্ষুণ্ণ থাকা তাহলে সে ধরনের বিভাজন বৃদ্ধিকেই (growth) নির্দেশ করে। যেমন, চুম্বকের প্রতিটা অংশই এক একটা চুম্বক। বা, পারদের ফোঁটাগুলোর মতো, কমন ইস্যুতে তা ঠিকই একাকার হয়ে মিশে যাবে। আবার ভাগ হয়ে গেলে তা পারদই থাকবে। বায়োফিজিক্যাল ডেভেলপমেন্টের এই ফর্মূলা অনুসারে আগাতে হবে। এই দৃষ্টিতে প্রতিদ্বন্দ্বীতা ভালো। ভালো ও কল্যাণজনক কাজে পরষ্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া দোষের কিছু নয়। তাই না?
ব্যক্তি-যোগ্যতা স্ফূরণের ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করতে হবে: ‘ওয়া লা তা ফাররাক্বু’ (তোমরা পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না) – আল কোরআনের এই আয়াতের আমার কাছে আন্ডারস্ট্যান্ডিং হলো, দ্বীন কায়েমের বা ঈমানী দায়িত্বপালনের অপরিহার্যতার বিষয়ে তোমরা দ্বিমত করো না। এই বেসিক আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে তোমরা সর্বাবস্থায় একমত থেকো। তো দ্বীন কায়েমের কাজ কে কীভাবে করবে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিশেষ অবস্থানের আলোকেই নির্ধারিত হবে। এবং দ্বীন কায়েমের কাজে তথা ইসলামী আন্দোলনে অবদান রাখার মতো ক্ষেত্র কী হবে, তা নির্ধারন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির একান্ত নিজের। প্রত্যেকে কাজ করবে। এটি হলো মোদ্দা কথা। কে কোথায় কীভাবে করবে, তা কোনো অথরিটির ডিকটেশনে হওয়ার কোনো সুযোগ অন্ততপক্ষে এখন আর নাই। অতএব, কোনো প্রকারের কেন্দ্রীয় ফর্মাল কন্ট্রোল সিস্টেম থাকারও দরকার নাই।
সমাজের মূলধারার কাছে ন্যায্য ও যোগ্য হিসাবে হাজির থাকতে হবে: কর্মপদ্ধতিগত কোন্দলে ভয় পাবেন না। একটা নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত কোন্দল ভালো। বিশেষ করে ইসলামী আদর্শনির্ভর কোনো সংগঠন বা উদ্যোগের ক্ষেত্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং এর অনিবার্য পরিণতি হিসাবে দ্বিমত-প্রতিবাদ, যাকে আমরা এক কথায় কোন্দল বলি, তা সাংগঠনিক সুস্থতার জন্য ভালো। দ্বিমত, বাদ-প্রতিবাদকে চেপে যাওয়া মোটেও সওয়াবের কাজ নয়। আমরা জানি, ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়েটা সহজ হওয়া, আর ব্যভিচার করাটা কঠিন হওয়া ইসলামী সমাজের বৈশিষ্ট্য, ইসলামের নিয়ম। তেমনই সংগঠন বিশেষে যোগদান করা বা সংগঠন গড়ে তোলা নিতান্তই সহজ হওয়া উচিত। প্রাসংগিক নানা বিষয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দৃষ্টিভংগী ও কর্মকৌশলগত পার্থক্যের ভিত্তিতে নতুন নতুন সংগঠন-উদ্যোগ গড়ে উঠবে। এটি, উপরেই দেখিয়েছি, আদর্শকে দিনশেসে শক্তিশালীই করে। গুরুবাদী ব্যবস্থায় বা ক্যাডার সিস্টেমে আদর্শ শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোনো জীবন্ত সমাজে এ ধরনের অচলায়তন টিকতে পারে না। এক ধরনের social drain বা ventilation হিসাবে বড়জোর স্পেস পেতে পারে। ইসলামকে আমি চাই আগামীর সমাজে মূলধারা হিসাবে। শুধুমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে নয়, মদীনা রাষ্ট্রের গঠনপর্বের মতো করে, পৃথিবীর যে কোনে অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠও রাষ্ট্র মুসলমানদেরকে তাদের political arbitrator হিসাবে স্বাগত জানাক, এটি আমি দৃঢ়ভাবে কামনা করি।
এ দুনিয়ার জন্যও ইসলামই সেরা – এই ধারণাকে প্রমাণ করতে হবে: এ জন্য ইসলামকে কার্যত সেরা ও উপযোগী আদর্শ হিসাবে উপস্থাপন করতে হবে। আক্বীদা ও আমলগত অপরিহার্যতার পরিধিকে যথাসম্ভব সংকুচিত করে শরীয়াহ অনুমোদিত প্রশস্ততাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে। একই সাথে ইসলামকে ধর্ম-পরিচয় ও রাজনৈতিক পরিচয় থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। ইসলামকে ইসলাম হিসাবে ব্র্যান্ড করতে হবে। ধর্মীয় দিকগুলো ইসলামের কেন্দ্রীয়গুরুত্বের বিষয়। রাজনীতি ইসলামের অপরিহার্য কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের দিক। তাই ধর্ম, না, রাজনীতি – বাইনারি হতে বের হয়ে আসতে হবে। ‘ধর্মীয় রাজনীতি’ নামক সংজ্ঞাগতভাবে স্ববিরোধী রেটরিক থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। ইসলামকে অখণ্ডভাবে গ্রহণ করে কার্যত: সমাজের কোনো উপযুক্ত অংশে কর্মতৎপর হতে হবে।
নামের চেয়ে কাজের দিকে নজর দিতে হবে: পুরনো কথা নতুন করে বলতে হয়। এবাদাত ছাড়া বাদবাকী সব বিষয়ে সহী নিয়ত ও সঠিক কর্মপদ্ধতিই কোনো বিষয় ইসলামী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। বলা বাহুল্য, সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি – সবই মুয়ামালাতের বিষয়। অতএব, যেখানে সরাসরি ইসলামের নামে কাজ করা যাবে সেখানে সেভাবে করতে হবে। যেখানে সেভাবে করা যাবে না, সেখানে বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে প্রত্যেক মুসলিম-ব্যক্তি, প্রতিটা সম্ভাব্য গ্রুপই নিজের মতো করে স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নিবে, কীভাবে তারা কাজ করবে।
ইসলামের অনন্যতা: ইসলামের সেরকম binding capacity আছে। এটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে। unity within diversity’র সত্যিকারের সক্ষমতা ইসলামের আছে। তাই এ ধরনের স্বতন্ত্র ধারায় কাজের পরেও অনৈক্য বলতে যা বুঝায় তা হওয়ার সুযোগ খুব একটা থাকবে না। কারণ, প্রত্যেকে একটা বৃহত্তর কিন্তু সুনির্ধারিত গণ্ডীর মধ্যে থেকে অভিন্ন টেক্সট তথা একই কোরআন, হাদীস ও সীরাহ মেনে চলবে। সেজন্য ভেতর থেকে ইসলামের মৌলিক জ্ঞানার্জনকে বেশি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আধুনিক বিষয়াদি জানার জন্য খুব বেশি উতলা হওয়ার দরকার নাই। বলতে খারাপ লাগলেও, আমাদের অবস্থা হয়েছে পতিতালয়ের পাশের কলোনিতে থাকা লোকের মতো। গান-বাজনা, ধোঁয়ার গন্ধ ও আসা-যাওয়া দেখে যা বুঝা যায়, তাই যথেষ্ট। ওখানে গিয়ে দেখার দরকার নাই, ওখানে আসলে কী হচ্ছে। পাশ্চাত্য আধুনিক তত্ত্ব ও মতবাদগুলো এবং এগুলোর নানা উপসর্গ যেভাবে আমাদের প্রতিটা ইন্দ্রিয়ে দিন-রাত বিঁধছে, তাতে করে, কতিপয় বিশেষজ্ঞ বাদে, আমাদের জন্য সেগুলো নতুন করে জানতে যাওয়ার দরকার নাই।
ইসলামের একটা এ দেশীয় মডেল বিদেশীরা তৈরী করে দিবে না। কারণ, তারা তা পারবে না। এবং এ কাজ আপনি-আমিই করতে পারি। বিশ্বাস করুন, পাশ্চাত্যে যদি ইসলাম প্রতিষ্ঠিতও হয়, তাতে আমরা প্রতীচ্যবাসীদের সেসব আমদানি করে খুব একটা ফায়দা হবে না। মূল textual ইসলামের আলোকে, আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সক্ষমতার নিরিখে আমাদের ইসলামিক মডেল আমাদেরকই বানিয়ে নিতে হবে। কম্যুনিষ্টদের মতো করে আদর্শ আমদানির ভুল করা যাবে না। মানুষকে উদ্ধার করার জন্য নয়, বরং নিজের জীবনবোধের আলোকে, মানবতার দৃষ্টিতে, নিজেকে পুরো দুনিয়ার নেতৃত্ব দেয়ার উপযোগী হিসাবে সবকিছু বিবেচনা করুন।
কিস্তি ৫: শেষ কথা– ব্যক্তিগত অনুরোধ
আগামী দিনের ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপারে আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী। বিংশ শতাব্দীতে উদ্ভাবিত ইসলামী আন্দোলনের ধারণা এক বিংশ শতাব্দীতে নতুন করে বিকশিত হবে। বিশাল এই নতুন চর ইতোমধ্যে জেগে উঠেছে। নতুন জনপদ গড়ে উঠবে। এবং বিপ্লব হবে। তবে তা পূর্বেকার ধারণা মোতাবেক রাজনৈতিক চরিত্রের যত না হবে তারচেয়ে বেশি হবে বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় তথা আধ্যাত্মিক। বিপ্লব শব্দটির ব্যবহার ছাড়াও বিপ্লব তথা আমূল পরিবর্তন হতে পারে। এবং আমূল পরিবর্তন রাতারাতিই ঘটবে, এমন কোনো কথা নাই। শুধু এটুকু জানি, মৌলিক রূপান্তর ঘটবে। এ আমার বিশ্বাসনির্ভর আশাবাদ নয়। ইতিহাসের গতিধারা ও কাণ্ডজ্ঞান তাই বলে।
বিজয়ের এই ধারায়, বিপ্লবের এই কাফেলায় অবদান রাখার জায়গায় আপনি এ মুহুর্তে আপনার ব্যক্তিগত অবস্থান কোথায়, কীভাবে আরো এগিয়ে যেতে পারেন, আপাতত এটুকুই ভাবুন। অতএব, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও দেশীয় পরিস্থিতি নিয়ে অহেতুক উদ্বেগ প্রকাশের ফাঁকিবাজি পরিহার করুন। কাজে নেমে পড়ুন। একজন মুসলমান হিসাবে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব কীভাবে করা যায় তা নিয়ে ভাবুন। যারা কাজ করছে, তাদের ভুল-ত্রুটি অনুসন্ধানের পরিবর্তে কিছু একটাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যাপৃত হোন। যোগ্যতা ছাড়া আল্লাহ তায়ালা কোনো মানুষকে সৃষ্টি করেন নাই। মনে রাখবেন, শেষ পর্যন্ত আমরা কিন্তু প্রত্যেকে একা। অন্তত নিজের বিবেকের কাছে।
ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Md Rifat Chowdhury: স্যার, ব্যাপারগুলো যে উপরের নেতারা একদমই বুঝেন না, তা না। কিন্তু কেন জানি চক্র থেকে বের হতে পারছে না। ২০০৭ এর শেষের দিকে রেজাউল করিম ভাই একবার মেডিকেল স্টুডেন্টদের এক প্রোগ্রামে আপনার এই কথাগুলোই বলেছিলেন এভাবে:
“বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের রাজনৈতিক ট্রেন যতটুকু দ্রুত এগিয়েছে অন্য সেক্টরের ট্রেনগুলো তত দ্রুত আগায়নি। ফলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের টার্গেটে পরিণত হয়েছে উপযুক্ত শক্তি অর্জনের আগেই এবং বরাবরই তা মোকাবেলা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”
আর একই ধারার আরো নতুন কোন একাধিক দল তো বর্তমান দলগুলোর কারো কাছ থেকে আশা করাও ঠিক না বা সম্ভব না। সবচেয়ে ভালো হতো মূলধারার ইসলামী দলগুলো যে জায়গায় সফল হতে পারেনি সে জায়গাগুলো নিয়ে যদি অন্যরা কাজ করতে এগিয়ে আসতো। তাহলে তা সার্বিক বিচারে এই দেশ ও ইসলামের জন্য উপকার হতো।
Mohammad Mozammel Hoque: আপনার ‘সাংগঠনিক সংশ্লিষ্টতা’র ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। আমি ওসবকে আর ভিতর থেকে দেখি না। বিশ্লেষণের সুবিধার্থে holistically দেখি। বাংলাদেশে ইসলামের অন্যতম ধারা হিসাবে দেখি। যেহেতু ইসলামকে ইসলামী আন্দোলন অর্থে own করি, প্রমোট করি, তাই কেউ কেউ আমাকে ‘সংস্কারবাদী’ হিসাবেই দেখেন। কি আর করা। কারো মুখে তো আর হাত দিয়ে রাখা যায় না। যাহোক, করিম সাহেবেরা ওসব কথা সব সময়েই বলেন। বিশেষ করে আপনাদের মতো ইনোসেন্ট মাইন্ডেড লোকদের সামনে। অথবা, বলা যায় সামলে রাখার জন্য। উনার আগে আরো বহু ‘করিম’ সাহেবই এ রকম বহু কিছু বলেছেন। এখনো তারা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বা অভ্যন্তরীণ সমাবেশে ওরকম দরদী কথাবার্তাই বলেন। যদিও দিন শেষে তারাই হলেন তথাকথিত মূল রাজনৈতিক ধারার শক্ত প্রতিনিধি ও ডিফেন্ডার। যেমন, যার কথা বললেন, তিনি তো ক্যান্টনমেন্টে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে ‘আপসহীন নেত্রী’র সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সাংবাদিক সম্মেলনে বসেছিলেন। টিভিতে দেখাইছিলো। ইতোপূর্বে এতটা প্রকাশ্য মাখামাখি দেখা যায় নাই। উনি কি তখন দলীয় সংবিধান লংঘন করেন নাই? এসব কাগুজে বা হুজুগে বা নাম কা ওয়াস্তে শপথের কী মূল্য? মুখলিছ মানুষদের ঠকানো ছাড়া? কিসের কী…?? এ জন্য ২০১০ সালেই ব্লগে লিখেছিলাম, কোনো সংস্কার হবে না। এখনো বলছি, সম্ভাবনার দিক থেকে এ এক বিগত ধারা। আবেগের ইতিহাস মাত্র। অবশ্য টিকে থাকার দিক থেকে এটি আরো বহু বছর এ রকম ইমব্যালেন্স গ্রোথ নিয়ে টিকে থাকবে। কারণ, বাংলাদেশ বলে কথা…!! নানা সুযোগ-সুবিধাগত কারণে সব সময়ে এর কিছু স্টেকহোল্ডারও থাকবে। আমি এসব বিষয়ে কোনোভাবেই ইনভলভড হতে চাই না। আপনার প্রতি বিশেষ ইতিবাচক মনোভাবের কারণে, সেটি আপনার যোগ্যতার কারণেই, এখানে এই অনাকাংখিত মন্তব্যটা লিখলাম। ওই লোকের সাথে আমারও অনেক কথাবার্তা কোনো এক সময়ে হয়েছিলো। তখন আমি ও আমার সাথের বাদবাকীরা তাকে ব্যতিক্রমী ও সম্ভাবনাময় হিসাবে মনে করেছিলাম। অবশ্য অচিরেই তিনি এই ভুল ধারণা ভেংগে দিয়ে নিজেকে এক্সপোজ করেছেন।
Shahadat Mahmud Siddiquee: অন্যরা আসলে ভালো হতো, সন্দেহ নেই… কিন্তু যে অভিজ্ঞতা আপনাকে ‘সে কাজের’ মূল্য বুঝিয়েছে, সে বুঝ কি নতুন কারো জন্য অতো সহজ হবে?… যদি না হয়, আপনাকেই শেষ পর্যন্ত এগিয়ে আসতে হবে, পথ দেখাতে হবে, অন্তত পাশে থেকে হলেও পথ দেখাতে হবে…
Mohammad Mozammel Hoque: কোনো নতুন সংগঠন কায়েমের চেয়ে কাজের নতুন ধারা তৈরির ব্যাপারে আমি আগ্রহী।
Kawsar Alam Bhuiyan: স্যার, আমি আজীবন সংস্কারবাদী। মূল বিষয় ঠিক রেখে সবসময় সংস্কার করা যুগের অনিবার্য দাবী।
Mohammad Mozammel Hoque: সংস্কারবাদী থাকুন, তাতে আপত্তি নাই। তবে, সংগঠন বিশেষের সংস্কার দাবীকে মুখ্য করে নেয়া উচিত হবে না। একচুয়েলি, ইসলামের জরুরী সব কাজ একটি মাত্র সংগঠন দিয়ে আঞ্জাম দেয়ার চিন্তাটা অবাস্তব। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে। সুতরাং আসুন আমরা সবাই মিলে যার যার জায়গা হতে সমাজ সংশোধনের জন্য কাজ করি। বলাবাহুল্য, এ জন্য দরকার ব্যক্তির সংশোধন। তবে, ব্যক্তির সংশোধন করে সমাজ সংশোধন – এভাবে চিন্তা বা চেষ্টা করাটা ভুল। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও সরকার – সবকিছুর সংশোধনের কাজ সমান্তরালে চলবে। যদিও প্রত্যেকে সরকার সংশোধনের মতো জটিল কাজে প্রত্যক্ষভাবে এনগেজ হবে না। যোগ্যতা ও ক্ষেত্র অনুসারে একেক ধরনের লোক একেক ধরনের কাজে আত্মনিয়োগ করবে।
এক কথায় বললে, মতাদর্শের বৃহত্তর গণ্ডিকে ঐক্যের ভিত্তি হিসাবে ধরে বিশেষায়িত ও বিকেন্দ্রীকৃত সংগঠন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
Mohammad Mozammel Hoque: রাজনীতি হলো সদাজরুরী বিষয়। দাওয়াত ও সমাজসেবামূলক কাজ হলো দীর্ঘ মেয়াদী বিষয়। তাজকিয়া বা প্রশিক্ষণ হলো মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী বিষয়। বিভিন্নমুখী ও ক্ষেত্রবিশেষে বিপরীতধর্মী এসব কাজ একসাথে cause-list-এ রাখা হলে স্বভাবতই জরুরী কাজটি সব সময়ে প্রাধান্য পাবে। এভাবে imbalance তৈরী হবে। এক পর্যায়ে পায়ের পরিবর্তে মাথার ওপর ভর করে হাটা শুরু হবে। কারণ শরীরের ভর নেয়ার মতো শক্তি আর পা দুটোয় থাকবে না। আর যে কাজ গোড়ায় তা কমগুরুত্বের কিংবা যে কাজ চূড়ায় তা সর্বোচ্চ গুরুত্বের এমন নয়। বরং ফাউন্ডেশানের গুরুত্বই অধিক। বিস্তারিত দেখুন: সংগঠন কাঠামো @ Md Rifat Chowdhury
Shahadat Mahmud Siddiquee: ‘আল্লাহর রাসূল (সা) ও খেলাফতে রাশেদা কর্তৃক পরিচালিত সাংগঠনিক তথা প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল এককেন্দ্রিক।’ ঠিক। কিন্তু মত প্রকাশের অভূতপূর্ব স্বাধীনতা, নির্ভেজাল ইনসাফ, নেতৃত্বের পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং আন্তরিক জবাবদিহিতা সেই সাথে শরীয়ার বিস্তৃত সীমায় ব্যক্তির প্রকাশ্য বিকাশের সুযোগ, এক কথায়- সবাইকে প্রবহমান ভালবাসায় ধারণ করতে পারায় সেই ‘এককেন্দ্রিকতা’ উপভোগ্যই ছিলো। নিঃসন্দেহে আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা পুরুষরা এটাকেই স্টান্ডার্ড ধরেছিলেন। আপনিও যেটা বললেন- ‘unity within diversity’র সত্যিকারের সক্ষমতা ইসলামের আছে’।
এবং আমার ‘বুঝ’ হলো এটা এখনও আমাদের স্টান্ডার্ড। সেই স্টান্ডার্ডকে যদি আমরা মিসইউজ করি, সেক্ষেত্রে স্টান্ডার্ড নয়, মিসইউজিংটাকেই আমাদের চ্যালেঞ্জ করতে হবে। মিসইউজিং’এর ক্ষেত্রগুলোর খোল-নলচে দুটোই পাল্টে দিতে হবে। আত্মশুদ্ধির পীর-মুরিদী সিস্টেম এবং সেসময়কার অন্য অনেক প্রচলনের ক্ষেত্রে মাওলানা মওদূদী যেটা করেছিলেন।
এখন যদি দেখা যায় ক্যাডার সিস্টেম বা অন্যকোনো আভ্যন্তরীন সিস্টেমও দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত তো খোদ মাওলানার সাহিত্যেই আছে…
সে যাই হোক, এত বড় লিখা এতো সহজে শেষ করলাম… নিঃসন্দেহে চিন্তার গভীরতা ও পরিপক্কতার সারল্যে লিখাটি ঋদ্ধ। যে চিন্তা বিদগ্ধ হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত হয়, তা বৃথা যেতে পারে না…
Mazharul Islam Khondokar: গত কয়েক বছর থেকে আমার মনে হচ্ছে, মওদুদীর সংগঠনের পদ্ধতি লেনিন/কমুনিস্ট স্টাইলের। এখানে লোকদের রিক্রুট করা হয়। এখানে আসার পদ্ধতিটা সরু, তাবলীগের মত ওপেন না।
Mohammad Mozammel Hoque: হ্যাঁ, মিলিট্যান্ট বা রেজিমেন্টেড অর্গানাইজেশনাল সিস্টেম ইসলামের দিক থেকে ঠিক না। ইসলামী সামাজিক সংগঠন গণসংগঠন টাইপের হওয়াটা বাঞ্চনীয়। আর রাজনৈতিক সংগঠনসমূহও এক অর্থে অর্থাৎ বৃহত্তর অর্থে সামাজিক সংগঠনও বটে। স্বয়ং ইসলামকে কাটছাঁট বা কাস্টমাইজ করে সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটানোর মধ্যেও আদর্শগত দিক থেকে বড় ধরনের বিপদ আছে, সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
Mazharul Islam Khondokar: পাকিস্তান বা ভারতের জামায়াতের সংগঠন কিভাবে কাজ করে এ বিষয়ে আপনার একটা তুলনামুলক লেখা আশা করি। তারাও কিন্তু খুব বেশী সাফল্য অর্জন করেনি।
Mohammad Mozammel Hoque: এক সময়ে যে সংগঠনকে জীবনের সবকিছু মনে করতাম, যা এখন আর বিলং করি না, তার সমালোচনা-পর্যালোচনা নিয়ে রাতদিন লেগে থাকা কিংবা জনসমক্ষে ‘সংগঠনের সমালোচনা করা যাবে না – এই দুই প্রান্তিকতা হতে মুক্ত থাকতে চাই। বর্তমান নোটে, এমনকি এই প্রতিমন্তব্যের রাইটিং-স্টাইলেও এর প্রতিফলন পাবেন। ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
Mazharul Islam Khondokar: আমি আসলে তাদের ব্যর্থতাগুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে সংশোধন করার জন্য বলছি। তবে আপনার এই নোটটা খুবই সময়োপযোগী। যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে ভাল হবে।
Mohammad Mozammel Hoque: যদি আমরা এর প্রাসঙ্গিকতা ও উপযোগিতা সম্পর্কে কনফার্ম হই, কেউ গ্রহণ করুক বা না করুক (কেউ গ্রহণ করবে না, একচুয়েলি করতে পারবে না) আমি-আপনি তো অন্তত এই মোতাবেক পথ চলতে পারবো।
Mazharul Islam Khondokar অবশ্যই।
Farid A Reza: ”রাজনীতি হলো সদাজরুরী বিষয়। দাওয়াত ও সমাজসেবামূলক কাজ হলো দীর্ঘমেয়াদী বিষয়। তাজকিয়া বা প্রশিক্ষণ হলো মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী বিষয়। বিভিন্নমুখী ও ক্ষেত্রবিশেষে বিপরীতধর্মী এসব কাজ একসাথে cause-list-এ রাখা হলে স্বভাবতই জরুরী কাজটি সব সময়ে প্রাধান্য পাবে। এভাবে imbalance তৈরী হবে। এক পর্যায়ে পায়ের পরিবর্তে মাথার ওপর ভর করে হাটা শুরু হবে। কারণ শরীরের ভর নেয়ার মতো শক্তি আর পা দুটোয় থাকবে না। আর যে কাজ গোড়ায় তা কমগুরুত্বের কিংবা যে কাজ চূড়ায় তা সর্বোচ্চ গুরুত্বের এমন নয়। বরং ফাউন্ডেশানের গুরুত্বই অধিক।”
– চমৎকার। তবে একটু দ্বিমত আছে। আমার মতে, রাজনীতি বিশেষ লোকের জন্যে এবং সদাজরুরী বিষয়। তবে জান্নাতে যাওয়ার জন্যে ফেরাউনী রাষ্ট্রের চেয়ে রাষ্ট্রহীন মুসা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর তাজকিয়া স্থায়ী বিষয়। রাষ্ট্র বা রাজনীতি থাক বা না থাক, তাজকিয়া অপরিহার্য।
Mohammad Mozammel Hoque: নিচের প্রতিমন্তব্যটা আপনার সাথে দ্বিমতের জন্য নয়। বরং আপনাকে যারা ফলো করে তাদের পক্ষে বিষয়টিকে বুঝার ব্যাপারে সহযোগিতা করার জন্য। আর হ্যাঁ, দেখেছি, ‘দুনিয়ার তাবৎ লোকেরা’ যারা আপনার বিরোধিতা করে, যেহেতু আপনি তাদের ‘প্রিয় সংগঠনের’, একচুয়েলি নেতাদের সমালোচনা ও বিরোধিতা(?) করেন, তারা সবাই-ই তলে তলে আপনাকে ফলো করে। মা-শাআল্লাহ, তাদের অনেকেই আবার আপনার (এবং আমারও) মিউচুয়্যাল ফ্রেন্ড হিসাবে আছে। যাহোক, মুসা (আ) রাজনৈতিক মতদ্বৈততার কারণেই রাষ্ট্রহীন হয়েছিলেন। রাষ্ট্র না থাকলেও রাজনীতি থাকবে। কেননা, সমাজের অন্তর্গত প্রবণতাটাই রাজনৈতিক। সমাজ হতে রাষ্ট্র গড়ে উঠার এটিই কারণ। এক্ষেত্রে অবশ্য আমি polity, politics, political power, government এবং state – এগুলোকে সংশ্লিষ্ট কিন্তু স্বতন্ত্র হিসাবে বিবেচনা করছি।
Farid A Reza: (ব্যক্তিগত বিষয় ব্যক্তিগতই থাক।)
একমত। রাষ্ট্র না থাকলেও, বিশেষ করে বর্তমান গ্লোবাল প্রেক্ষাপটে, রাজনীতি থাকবে। গুহায় বাস করলেও রাজনীতি আমাদের তাড়া করবে, প্রভাবিত করবে।