‌‘ফিলসফির দরকার নাই’, অথবা, ‌‘ফিলসফির মৃত্যু ঘটেছে’— এই কথাগুলো বা এ ধরনের যে কোনো কথার পিছনে কোনো না কোনো কারণ বা যুক্তি থাকবে। হোক সেটা গ্রহণযোগ্য অথবা অগ্রহণযোগ্য।

তো, কোনো কারণ বা যুক্তির ভিত্তিতে কিছু বলাই হচ্ছে ফিলসফি। তার মানে হচ্ছে, ‌‘ফিলসফির দরকার নাই’ কথাটাও বলা হচ্ছে, বা বলতে হচ্ছে সুনির্দিষ্ট ফিলসফিক্যাল ওয়েতে।

This is the paradoxical nature of philosophy.

philosophy is a must, it doesn’t matter someone is claiming that philosophy is dead, or something like that.

‌‘ফিলোসফি: প্রাথমিক ধারণা’ বইটার মধ্যে আমি একটা উদ্ধৃতি দিয়েছি। এ প্রসঙ্গে সেটার কথা মনে পড়লো:

Everyone does philosophy, but only a few are aware of doing that.

মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

নেপথ্য লোক: যিনি বলেন ফিলোসফি নাই, তিনি কেন এই কথার যৌক্তিক ভিত্তি দাঁড় করাবেন? তিনি তো তার অবস্থান আগেই পরিস্কার করে দিয়েছেন। যেহেতু যুক্তি মানেই ফিলোসোফিক্যাল ওয়ে। যুক্তি ছাড়া কি কোনো কথা গ্রহনযোগ্য নয়?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: যুক্তি ছাড়া কোনো কথা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হবে? এমন কি কোনো কথা হতে পারে যেটাকে জ্ঞান হিসেবে দাবি করা হয়েছে, অথচ সেটার পিছনে কোনো ভিত্তি বা যুক্তি নাই? কেন এটা বলা হয়েছে সেটার কোনো কারণ নাই, এমন কোনো কথা কি আদৌ অর্থপূর্ণ কোনো কথা হতে পারে?

Mohammad Shahadat Hossain: ‌‘ফিলোসফি নাই’ এই কথার বক্তাকে অবশ্যই ফিলোসফির ডেফিনেশন দিয়ে তারপরে সেটা প্রুভ করতে হবে যে ফিলোসফি নাই। যেমন কেউ যদি বলে ঈশ্বর নাই। এক্ষেত্রেও ঈশ্বরের ডেফিনেশন দেবার বার্ডেন অব প্রুফ তার উপরেই বর্তায়। কোনো কিছুর অস্তিত্ব আছে এটি প্রমাণ করার জন্য যুক্তির প্রয়োজন নেই, অস্তিত্বই তার প্রমাণ। কিন্তু কোনো কিছুর অনস্তিত্বকে কোনো অস্তিত্বশীল বস্তুর স্বাপেক্ষেই প্রমাণ করা লাগে, সেটি যত দুর্বল অথবা সবল প্রমাণই হোক না কেন। যুক্তি ছাড়া কোনো কিছু কি গ্রহণযোগ্য নয়, না হলে কেন? এটির প্রশ্নকর্তাও যুক্তিকে আশ্রয় করেই প্রশ্ন করেন। আর প্রশ্নের আগে উত্তরের অস্তিত্ব।

নেপথ্য লোক: ‌‘ফিলোসফি নাই’ এই কথার বক্তাকে কেন ফিলোসফির ডেফিনেশন দিতে হবে?

যিনি ফিলোসফির প্রবক্তা, ফিলোসফি কী কিংবা তার কী বৈশিষ্ট্য, সেগুলো বুঝিয়ে দেবার দায়িত্ব তারই। তিনি যে যে বৈশিষ্ট্যকে ফিলোসফি বলছেন, অন্য কেউ সে বিষয়কে ফিলোসফি নাও মনে করতে পারেন!

কেউ যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করলো ফিলোসফি আছে, কেউ সেই যুক্তি দিয়েই বললো ফিলোসফি নাই, সেখানে কেউ নির্দিষ্টভাবে যুক্তিকে ‌‘ফিলোসফিক্যাল ওয়ে’ বলতে পারেন না!

যদি তা ফিলোসফিক্যাল ওয়ে হয়, তবে একই সাথে নন-ফিলোসফিক্যাল ওয়েও হবার কথা! তাই নয় কি?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বুঝার চেষ্টা করেন। যুক্তি দিয়ে কিছু বললেই তা ফিলোসফিক্যাল হয়ে ওঠে। যুক্তিটা ভালো হোক বা খারাপ হোক, যুক্তিটা এই পক্ষে হোক বা অন্য পক্ষে হোক, তাতে কিছু আসে যায় না।

এ কারণে, ফিলসফিকে খণ্ডন করার দাবি হলো self-contradictory ক্লেইম। ‌‘আমি বেঁচে নাই’ বলার মতো হাস্যকর ও স্ববিরোধী দাবি।

আপনি-আমি বা যে কেউ কোনো বিষয়ে কোনো একটি দার্শনিক অবস্থানের পক্ষে বা বিপক্ষে থাকতে পারি। লিমিটেড এন্ড অ্যাভেইলেবল বিকল্প দার্শনিক অবস্থানগুলোর মধ্য হতে কোনো একটিকে গ্রহণ করতে পারি, এক ধরনের ফিলসফির পরিবর্তে অন্য ধরনের ফিলসফিকে প্রেফার করতে পারি। কিন্তু আল্টিমেইটলি at the end of the day আমরা ফিলসফির বাইরে যেতে পারি না। শেষ পর্যন্ত আমরা ফিলসফিতেই থেকে যাই।

This is an epistemic predicament for us.

এই দৃষ্টিতে ফিলসফি হলো মানুষের জ্ঞানপদ্ধতি ও জ্ঞানকাঠামোর ভিত্তি বা মৌলিক অংশ। এটি অবশ্যম্ভাবী এবং অপরিহার্য।

Mohammad Shahadat Hossain: ‍“তিনি যে যে বৈশিষ্ট্যকে ফিলোসফি বলছেন, অন্য কেউ সে বিষয়কে ফিলোসফি নাও মনে করতে পারেন! কেউ যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করলো ফিলোসফি আছে, কেউ সেই যুক্তি দিয়েই বললো ফিলোসফি নাই,”

যখন কেউ যুক্তি দিয়ে কিছু প্রমাণ অথবা অপ্রমাণ করার চেষ্টা করে সেটিই একটি ফিলোসফি। হোক সেটি কারো কাছে গ্রহণযোগ্য অথবা অগ্রহণযোগ্য। এভাবে ফিলোসফি সকল যুক্তিকেই ধারণ করে। যখন কোনো যুক্তি স্বতঃসিদ্ধ হয় তখন সেটি আলাদা ডিসিপ্লিন হয়ে উঠে। অর্থাৎ সেটি তখন ফিলোসফি থেকে আলাদা হয়ে তুলনামূলক ক্ষুদ্র ফিল্ড নিয়ে কাজ করে। যদিও পৃথক সেই ডিসিপ্লিনও যুক্তির (পড়ুন ফিলোসফির) হাত ধরেই চলে। তখন সেই ডিসিপ্লিন ‌‘নন-ফিলোসফিক্যাল ওয়ে’ মনে হলেও তা আখেরে ফিলোসফির হাতিয়ার যুক্তির মুখাপেক্ষী। ধন্যবাদ।

নেপথ্য লোক: তবে ফিলোসফি যে আছে তার প্রমাণ কী?

আমার ধারণা, আপনার উপর্যুক্ত কথাগুলি তখনই খাটে যখন ফিলোসফির অস্তিত্বের বিষয়ে কোনো প্রশ্ন না থাকে।

আপনি যুক্তি দিয়ে ফিলোসফি প্রুফ করবেন, আর আমি যুক্তি দিয়ে ফিলোসফিকে ডিনাই করবো; আপনি বলবেন, আমি কোনো না কোনোভাবে ফিলোসফি চর্চা করছি— এইটা কেন?

যেহেতু ফিলোসফির প্রমাণ দিতেও যুক্তি লাগে কিংবা ফিলোসফিকে ডিনাই করতেও যুক্তি লাগে, তবে কেন আপনি যুক্তিকে আপনার ফিলোসফিক্যাল ওয়ে বলবেন?

আমি তো সদাসর্বদা যুক্তিকে একটি স্বাধীন স্বতন্ত্র সত্তা হিসাবে পাচ্ছি। এক্ষেত্রে ফিলোসফি আছে না নাই, তা পুরোপুরি সাবজেক্টিভ হওয়ার কথা।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ফিলসফি বলতে কী বোঝানো হয় তা আগে বুঝেন। তিনটা বিষয়ের কারণে কোনো আলোচনা দার্শনিক আলোচনা হয়ে উঠে:

(১) বিষয়টা যদি মৌলিক হয়,

(২) বিষয়টার পক্ষে যদি কোনো যুক্তি দাঁড় করানো হয়,

(৩) বিষয়টি সংক্রান্ত যে কোনো পর্যায়ে প্রশ্ন করার যদি উন্মুক্ত সুযোগ থাকে।

ফিলোসফির কোনো সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞা নাই। কিন্তু এই তিনটি বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আমরা ফিলসফিকে আইডেন্টিফাই করতে পারি।

এরপরও যদি আপনি না বুঝেন তাহলে আমার একটা বই পড়তে পারেন: ‘ফিলোসফি: প্রাথমিক ধারণা’। এটি পাবেন এখানে

লেখাটির ফেইসবুক লিংক

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *