যারা চান ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হোক, জামায়াতে ইসলামীর সাথে বা এর কোনো অঙ্গসংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত আছেন, ব্লগের কিছু পোস্টে দেখা যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর অনেক সমস্যা আছে বলা হচ্ছে; জামায়াতের নিয়মতান্ত্রিক সংশোধনের আশা সুদূর পরাহত– কেউ এমন মনে করলে তাদের জন্য অতঃপর কী করণীয়?
সন্ধ্যায় জামায়াত সংক্রান্ত একটা পোস্ট দেয়ার পর একজন অপরিচিত ভাই ফোন করে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনার লেখাগুলো তো জামায়াতবিরোধী। কেউ আপনার বক্তব্যের সাথে একমত হলে, আপনার মতে, তার কী করা উচিত?’ আমি বললাম, তিনি আমার মতো করবেন। আমি এখানে জামায়াতের অ্যাক্টিভ কর্মী। নিষ্ক্রিয়তা আমার জীবনে অনুপস্থিত। আর আমার লেখায় জামায়াত সংগঠনের সমালোচনা থাকায় এটা মনে করা ঠিক হবে না যে আমি জামায়াতবিরোধী।
এটি জামায়াতেরই একটা কৃতিত্ব যে, জামায়াতের অ্যাক্টিভ লোকজনও জামায়াতের ওপেন বিরোধিতা করে। এখানে আপনাকে জামায়াতের লালিত ও ঘোষিত আদর্শ (অর্থাৎ, ইসলাম) এবং জামায়াতের সাংগঠনিক পলিসি ও কার্যক্রমের পার্থক্যকে বুঝতে হবে। দুটো আলাদা। যদিও একটি আরেকটির অনুসরণ করে। তত্ত্ব হলো, ইসলাম কায়েম করতে ইচ্ছুক যে কোনো সংগঠনকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে আদর্শ ও সংগঠন সমার্থক হয়ে না দাঁড়ায়। সংগঠনকে আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যশীল করে গড়ে তুলতে হবে, যতটা সম্ভব।
জামায়াত তো ইসলামের পথ হতে সরে যায়নি, ইসলাম কায়েমের পথ হতেও সরে যায়নি, জামায়াতের আকীদায় অ-ইসলামী কিছু ঢুকে পড়েনি। জামায়াতই সবচেয়ে অধিক বুদ্ধিবৃত্তিক ইসলামপন্থী দল। এসবই ঠিক। কিন্তু এসব সত্য থেকে জামায়াত অতিরিক্ত যা দাবি করছে, তা ভুল। অর্থাৎ, গণতান্ত্রিক পন্থায় বিপ্লব, অন্তত বাংলাদেশে। শরয়ী দৃষ্টিতে ‘আল-জামায়াত’ জাতীয় মনোভাব পোষণ। যারা জামায়াতের সংগঠনে সম্পৃক্ত নন, তাদেরকে আদতে দুর্বল ঈমানদার বা বিচ্যুত মনে করা। ইত্যাদি।
জামায়াতের প্রতি বিদ্বেষপ্রবণতা কারো ইসলামী আন্দোলনের কমিটমেন্ট বা বুঝজ্ঞানের ঘাটতিকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে। কিন্তু তাই বলে জামায়াতের নেতৃবৃন্দ যদি মনে করেন, অন্যদের কাজগুলো কিছু নয়, বিগ জিরো, সত্যিকারের ইসলামী নয়– তাহলে আমি অকপটে বলবো, জামায়াতের এ ধরনের চিন্তা অগ্রহণযোগ্য।
জামায়াতের আদর্শ নিয়ে আপত্তি নাই, অন্তত আমার নাই; কিন্তু নেতাদের বাস্তব কর্মধারা স্পষ্টতই ত্রুটিপূর্ণ। ‘ইসলামী আন্দোলন: সাফল্যের শর্তাবলী’, ‘বিপ্লবের পথ’ এসব বইয়ে মাওলানা মাওদূদী এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
হতাশাবাদীদের বলছি, আমি হতাশ নই। ঈমানদাররা হলেন খেজুর গাছের ডালের মতো। হাদীসে আছে। সবসময় সতেজ ও সবুজ থাকে। যতক্ষণ গাছের সাথে থাকে। তাহলে যতদিন আমরা বেঁচে আছি, ততদিন পর্যন্ত আমাদের প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কারো আপত্তি নাই। সমস্যা হলো চেষ্টার পথ নিয়ে, চলার বাহন নিয়ে, কৌশল নিয়ে।
আপনারা ভাবুন। আমাকে মন্দ বলুন, আপত্তি নাই। কিন্তু ভাবতে থাকুন। গভীরভাবে। তার মানে এই নয়, আগে ভাবনাচিন্তা সব শেষ হোক, পথ ঠিক হোক, তারপর চলা শুরু করবেন। দেখুন, ভেবেছেন বলেই মুহাম্মদ (সা) নবী হতে পেরেছেন, ইব্রাহীমকে (আ) তাঁর ভাবনা মুশরিক বানিয়েছে, পরদিনই তিনি শিরকের মেঘমুক্ত হয়ে তাওহীদের আলো গ্রহণ করে নবী হতে পেরেছেন। অ্যারিস্টটল বলেছেন, We have to learn to do and we learn by doing. সুতরাং চলতে থাকুন। কাজ করতে থাকুন। যত ভালো আছে, সবগুলোতে কন্ট্রিবিউট করার প্রতিযোগিতায় লেগে যান।
কর্মবাদী অন্যদের সাথে আমার পার্থক্য হলো আমি কর্মের পাশাপাশি চিন্তনকেও পূর্ণ সক্রিয় রাখতে চাই। আমার অফিস কক্ষের দরজায় একটা কথা লেখা আছে, বড় বড় হরফে– ‘আসুন, আপন আলোয় পথ চলি…’ আমি যখন দায়িত্বশীলের নির্দেশে কাজ করি তখনও আমি শুধু আনুগত্য করি না, বরং ‘দায়িত্বশীলের কথা মানা উচিত’ এ কথা ভাবার কারণেই আনুগত্য করি। এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও।
দেখুন, আমাদের এক মরহুম দায়িত্বশীল বলেছেন, ‘আমরা এমন এক সংগঠনের কর্মী যারা ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের হুকুম মানে, আবার তাদের হুকুমও অন্যরা (আনুগত্যশীলগণ) মানেন…।’ রাসূল (সা) বলেছেন, ‘সাবধান, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল…’
আমি নতুন ধারা গড়ে উঠার কথা বলেছি ও বলছি। নতুন সংগঠন করার কথা কখনো বলিনি। ডিক্লারেশান দিলেই সংগঠন হয় না, যদিও সংগঠন করতে হলে ঘোষণা লাগে। একটা পূর্ণতার ফসল হলো ঘোষণা। সে পূর্ণতাও আবার একদিনে হয় না। এটির একটা পর্যায় লাগে। তবে পর্যায়েরও একটা টাইমলাইন থাকে, থাকতে হয়। যেটিকে বলে পরিকল্পনা। যে বিয়েই করেনি সে তো সন্তানের প্যারেন্ট হতে পারবে না।
যেভাবে সন্তান জন্মগ্রহণ করে, যেভাবে শষ্যবীজ ফসল ফলায়, যেভাবে বৃক্ষে ফল আসে সেভাবে বিপ্লব, বিপ্লবী সংগঠন হয়, হতে হয়। চাইলেই সবকিছু হয় না। আবার যেভাবে চাইতে হবে তা না করে শুধু চাইলে, অন্যভাবে ফলানোর বা ঘটানোর চেষ্টা করলে হবে না। এজন্য সমাজ অধ্যয়নকে সমাজবিজ্ঞান বলা হয়।
আমার দৃষ্টিতে, জামায়াতের বর্তমান কর্মধারায় বাংলাদেশে ইসলামী সমাজ কায়েম হওয়াটা দুরূহ। কারণ, গণতন্ত্রনির্ভরতা। মার্কিন কূটনীতিকরা জামায়াতকে যখন সার্টিফিকেট দেয়, তখন জামায়াতের তত্ত্বানুসারেই জামায়াতের ভাবার অবকাশ থাকে বৈকি!
আমার সকল কথার মূল কথা হলো, জামায়াত মক্কী যুগকে এগজস্ট না করে মাদানী যুগের স্বপ্নে বিভোর!
সম্ভবত অধ্যাপক গোলাম আযমের ভুল চিন্তার ফলশ্রুতি এসব। আমি কয়েকবার উনার কাছ হতে সামনাসামনি শুনেছি, তিনি বলছেন– দেশের মানুষ ইসলাম চায়, সমস্যা হলো নেতৃত্বের। অথচ বাস্তবতা হলো, মানুষ ইসলাম বুঝেই না, চাওয়া তো দূরের কথা। মানুষ চায় ধর্মীয় ইসলাম, যেটি হলো পপুলার এন্ড সিরিয়াস মিসটেক। জামায়াত যদি এসব ইলেকশনের পিছনে কোটি কোটি টাকা না ঢেলে মানুষকে ইসলাম বোঝানোর জন্য কাজ করতো, জামায়াতও লাভবান হতো, দেশও বাঁচতো! গোলাম আযম সাহেবের ফর্মূলা মোতাবেক তাবলীগের লোকজন ব্যাপক হারে জামায়াতে জয়েন করার কথা। বাস্তবে তা হচ্ছে না এবং হওয়ারও নয়। ৩০০ আসনে নির্বাচন করার কথা নাইবা বললাম।
সংগঠনবাদিতার যত রকমের বিপদ, সব জামায়াতকে পেয়ে বসেছে। আমার ধারণায়, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় (ইহতেসাব ইত্যাদির মাধ্যমে) জামায়াতের কাঙ্খিত সংশোধন হবে না। আর আল্লাহ যদি কোনো ব্যবস্থা করেন, তাহলে সেটি ভিন্ন কথা!
আপনারা বলতে পারেন, আপনি কেমন কর্মী হলেন, সংগঠনের সমালোচনা ব্লগে করেন? আমি তো আর সামহোয়্যার বা অন্য ব্লগে লিখছি না। ছদ্মনামেও লিখছি না। আমার টেলিফোন নম্বর ইত্যাদি লিখে দিচ্ছি। আমি চাচ্ছি, বিষয়টা নিয়ে আপনারা ভাবুন। আপনি হয়তো নিজেকে আনুগত্যশীল মনে করে নিরাপদ ভাবছেন। এটি আপনার স্বনির্মিত সান্ত্বনা মাত্র। যদিও ব্লগিং অনেক পুরনো প্রযুক্তি, কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের পশ্চাৎপদশীল লোকদের মধ্যে আপনি ব্যতিক্রম ও উন্নতদের অন্তর্ভুক্ত। আমাদের লোকজন যখন মাত্র ইমেইল শিখছে, ততদিনে আপনি একজন ব্লগার! তাই, আপনার যোগ্যতা দিয়ে আপনি সংগঠনকে কতটুকু হেফাজত করছেন তা ভাবুন। আপনি যদি বিদেশে থাকেন তাহলে ভাবুন তো আপনার পছন্দের টার্কিশ এডাপ্ট্যাশন বাংলাদেশের জামায়াতে আসছে না কেন? রিপোর্ট রাখা, বায়তুলমাল দেয়া, প্রোগ্রামে যাওয়া– এসব নৈমত্তিক কাজের বাহিরে আপনার করণীয় কিছু আছে কি?
মানুষ আপত্তি করে তার ব্যাপারে, যার সাথে সে নিজেকে সংশ্লিষ্ট ভাবে, যার মঙ্গল কামনা করে। সংগঠনের দোষত্রুটি চেপে যাওয়াটা কর্মী বা দায়িত্বশীল হিসাবে আপনার স্বাভাবিক দায়িত্বানুভূতির খেলাপ নয় কি?
আপনি বলুন, আমার বিরুদ্ধেও বলুন, তবুও বলতে থাকুন। থামবেন না। মুখ বুজে পড়ে থাকা আর মুখ বুজে চলা একই কথা। আপনি যতটা উচ্চশিক্ষিত, এই আন্দোলনের অনেকেই ততটা নন। কোরআনে বলা হয়েছে, একদল থাকতে হবে যারা জ্ঞান-গবেষণা করবে আর জিহাদ হতে প্রত্যাবর্তনকারীদের সতর্ক করবে তথা নির্দেশনা দিবে। এ দায়িত্ব যাদের উপর অর্পিত, আপনি তাদের একজন। হোক আপনার মান রুকন, কর্মী অথবা সমর্থক।
সংগঠনের মালিক কেউ নন, আল্লাহ ছাড়া। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল (সা) ছাড়া সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন কেউই। তাই না?
আবার সমালোচনা করার সময়ে আনুগত্য প্রত্যাহার বা স্থগিত রাখার কোনো অফিসিয়ালিটি ইসলামী আন্দোলনে নাই। কাজ ও প্রশ্ন একসাথে চলতে হবে। আর ফোরামে যাদের একসেস নাই, ফোরামের লোকজন যাদের কথা শোনে না, শুনলেও আইডেল কনসেন্টের বাহিরে কিছু করে না, বা করার ক্যাপাসিটি রাখে না– তারা তো স্বীয় পাবলিক প্লেসে সমালোচনা করবেই। এটি নিতান্ত স্বাভাবিক। ইসলামের সমালোচনা নীতি নিয়ে বিশেষ করে পাবলিক ক্রিটিসিজম ও জন-জবাবদিহিতার বিষয়ে বিস্তারিত বক্তব্য থাকবে এমন পোস্ট আশা করছি।
আসুন, অন্ধ আনুগত্য ও অলস সমালোচনার প্রান্তিকতাসহ যে কোনো প্রান্তসীমাকে এড়িয়ে আমরা মুমিনের উপযুক্ত মধ্যপন্থানুসারী হয়ে প্রত্যেকেই নিজ নিজ খিলাফতের দায়িত্ব পালনে ব্রতী হই।
এসবি ব্লগ থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
আবু জারীর: জনাব মোজাম্মেল হক সাহেব,
আপনাকে ধন্যবাদ। সমালোচনা করা অবশ্যই ভালো, তবে মাত্রা জ্ঞান থাকা দরকার। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের কনসেপ্ট আপনার পছন্দ নাও হতে পারে, তবে আমার হয়। দ্বিতীয়ত আমাদের নিয়েই জামায়াত। নেতাদের ত্রুটি তো অবশ্যই ধরিয়ে দেবো, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই পরিস্থিতিতে যদি আমি নেতা হতাম তাহলে কী সিদ্ধান্ত নিতাম? একই প্রশ্ন আমার মত আরও পাঁচ জনের কাছে করলে দেখা যাবে ২/৩ রকমের মতামত আসছে। কিছু যাচ্ছে নেতাদের পক্ষে আর কিছু বিপক্ষে। যদি তারা উল্টা সিদ্ধান্ত নিত তাহলেও একই ফল হতো। অর্থাৎ বিরোধী মত থাকতই। ভুল সিদ্ধান্তের মাধ্যমেও বিজয়ী হতে পারলে তখন ভুল আর ভুল থাকে না। ভুলটাই শুদ্ধ হয়ে যায়।
আমিও একজন সমালোচক, মাত্রাজ্ঞানে আমারও ক্রটি থাকতে পারে। ১৯৯৬ নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির সাথে সখ্য করলে কর্মীরা বিদ্রোহ করতো, তা আমি হলফ করে বলতে পারি। আমিত করতামই! আর একক নির্বাচনের ফলাফলে কর্মীরা মনে কষ্ট পেলেও কেউ বিদ্রোহ করেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে যদি জামায়াত অংশগ্রহণ না করতো তাহলেও আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় আসত। আর সকল দোষ পড়তো জামায়াতের ঘাড়ে। নির্বাচন করে হেরে গেলেও জনগণ বুঝতে পেরেছে যে নির্বাচনে কী হয়েছিল। নির্বাচন না করলে কর্মী তো কর্মীই বরং অর্ধেক রোকনও যে তাবলীগের চিল্লায় যেতো, তাতে অন্তত আমার সন্দেহ নেই।
তুরুস্কের ব্যাপারে আমাদের যে ভুল ধারণাটা আছে তাহলো আমরা এরদোগান বা আব্দুল্লাহ গুলের দালকে জামায়াত মার্কা ইসললামী দল মনে করি। আসলে তা নয়। যদি তাই হয়, তাহলে আপনি একটু বিবেক খাটিয়ে বলুন, আজ যদি নিজামী-মুজাহীদ-সাঈদী সাহেব এরদোগানের মতো সেভ করে প্যান্ট-শার্ট-কোট পরা শুরু করে, তাহলে আমরা কয়জনে তা মেনে নিব? তুর্কির দলটা আমাদের বিএনপি আর জামায়াতের মধ্যবর্তী স্থানে আছে। এ অবস্থায় আমাদের যেতে হলে মাহমুদুর রহমান সাহেবকে আমীরে জামায়াত, আর ফরহাদ মজহার সাহেবকে সেক্রেটারী জেনারেল বানাতে হবে।
দেশের জনগণ জামায়াতের দিকে তাকিয়ে আছে, এ কথাটা ঠিক। তা না হলে জামায়াতের লোকেরা মেয়র নির্বাচিত হতো না। যেখানেই জনগণ উপযুক্ত নেতা পেয়েছে, সেখানেই তারা রায় দিয়েছে। নেতৃত্বের মধ্যে আমার দৃষ্টিতে দুইটা গুণ অতি জরুরি– (১) দ্বীনদারী আর (২) গণভিত্তি। আমাদের অনেক নেতাদের দ্বীনদারী আছে কিন্তু গণভিত্তি নেই। আর নেতার গণভিত্তি তৈরীতে কর্মীদের ভূমিকা অপরিসীম। আমিও তো কোনো না কোনো পর্যায়ের নেতা। বলুন তো আমাদের লেবেলের একজন আওয়ামী লীগ নেতার যে গণভিত্তি, তা আপনার-আমার আছে কিনা? যদি আমাদের মধ্যে না থাকে তাহলে আমি অন্যের সমালোচনা করি কীভাবে? এভাবে সমালোচনা না করে বরং স্পেসেফিক ত্রুটি তুলে ধরে সে ব্যাপারে নিজের মতামত দিতে পারি। তবে মতামত দেয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যার ব্যাপারে মন্তব্য করছি তার স্থানে আমি হলে কী করতাম। আমি যে এলাকায় থাকতাম সে এলাকায় ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারসহ উচ্চশিক্ষিত লোক ছিলা, কিন্তু সভাপতি ছিলেন আন্ডার ফাইভ একজন মুদি দোকানী। এমনটা কেন হলো? কারণ, বড় বড় ডিগ্রিধারীরা সংগঠনের হাল ধরার জন্য এগিয়ে আসেনি। এজন্য আপনি কাকে দোষ দিবেন? এবার আমি আমার মতামত দিতে চাই। সেটা হলো–
০১) তিনশত সংসদীয় আসনেই নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচনী খরচ স্থানীয়ভাবেই নির্বাহ করতে হবে। যে সকল আসনে আমাদের জেতার সম্ভাবনা আছে কেবল সে সকল আসনেই কেন্দ্র থেকে যতটা সম্ভব সহায়তা করতে হবে। নির্বাচনের পরে প্রয়োজনে ন্যায্য অধিকারের ভিত্তিতে সরকার গঠনে যে কোনো দলকে সহায়তা করতে হবে, যতদিন পর্যন্ত আমরা এক বা দুই নম্বর দলে পরিণত হতে না পারব। জনগণ যদি আওয়ামী লীগকে ১২৫টা সিট দেয়, তাহলে সরকার গঠন করতে আমার ২৬টা সিটের সমর্থন দিতে পারবো না কেন? যৌথ সরকার হলে তারা যেমনি তাদের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে পারবে না, তেমনি আমরাও আমাদের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে পারব না। আবার আওয়ামী লীগ যদি বিএনপিকে নিয়ে সরকার গঠন করে তাহলে তারা যা খুশি তাই করতে পারবে। আর আমাদের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করলে অন্তত ইসলামবিরোধী পদক্ষেপ নেয়ার আগে ১০ বার চিন্তা করবে। আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে পূর্ণ ক্ষমতা না পাওয়া পর্যন্ত। এই ফাঁকে আমাদের দায়িত্ব পালন করে প্রমাণ করতে হবে যে এত পঙ্কিলতার মধ্যে থেকেও আমরা নিষ্কলুশ থাকতে পেরেছি। এতে কিছু সমালোচনা অবশ্যই হবে, তবে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে আরও বেশি।
০২) স্থানীয় নির্বাচনের প্রতি জোর দিতে হবে। কারণ, স্থানীয় নেতাদের সাথেই গণসংযোগ থাকে বেশি, যেটা সাংসদদের সাথে থাকে না।
০৩) সকল নেতাকর্মীকে স্থানীয় সকল জনগণের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করতে হবে। যে কোনো নেতাকর্মীর মধ্যে এতটুকু আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে যে– সে যে কোনো মানুষকে উপকার করতে পারবে। তা নিজের প্রচেষ্টায় হোক বা সংগঠনের পরিচালিত দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় হোক।
০৪) জাকাত-ফিতরা স্থানীয়ভাবে বণ্টন করেতে হবে। বণ্টনের সহায়তার জন্য প্রয়োজনে নেতাদের আমন্ত্রণ করে আনা যেতে পারে।
০৫) কোনোভাবেই সাংগঠনিক কাজ বৈঠক, এয়ানতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। মাসের চারটা বৈঠকের একটা হবে সাংগঠনিক, আর বাকি তিনটাই করতে হবে দাওয়াতী বৈঠক বা গণসংযোগমূলক।
সর্বপরি মানুষের মাঝে আমাদের মিশে যেতে হবে। প্রত্যেক দায়িত্বশীলের কাছেই তার এলাকার আন্দোলনের লোকদের সাথে যোগাযোগ থাকতে হবে, তা সে দেশেই থাকুক আর বিদেশে। আমি যদি বিদেশে থাকি আর আমার এলাকার এমপিপ্রার্থী বা উপজেলা চেয়ারম্যান যদি আমাকে মিসড কল দেয়, তাহলে আমি কি ফোন ব্যাক করব না? অবশ্যই করব। বরং খুশিও হবো। দুঃখের বিষয় হলো ফোন থাক দূরের কথা, তারা তো আমাদের চিনেই না। এরকম আরও অনেক কিছু আছে যা আমরা সহজেই করতে পারি, কিন্তু করি না। আমি এক রুগীকে পাঠিয়েছিলাম আমাদের এক ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার রুগীর কথা শুনে বললেন, এটা তার কেস নয়। তিনি অন্য ডাক্তারের কাছে রেফার করলেন। ভালো কথা। কিন্তু নিজের ভিজিট ৫০০ টাকা না নিলে কি পারতেন না? ভিজিট নিলেন! রুগী জানেন যে ডাক্তার জামায়াতের লোক। বলুন তো কী ইমপ্রেশন হলো? এতটুকু সেক্রিফাইস করতে না পারলে মানুষের ভালোবাসা পাব কীভাবে?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনার বড় মন্তব্যটা সুন্দর। দ্বিমতের বিষয়গুলোও ভালো লেগেছে। ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ‘নেতাদের ভুল হয় না’ ধরনের মনোভাব পোষণ করা খারাপ। কেউ তো নেতাদের মাসুম ঘোষণা করেন না। অথচ বাস্তবে তা-ই করেন। এর লক্ষণ হলো নেতাদের কোনো ভুল সিদ্ধান্তের বিষয়ে বললে ইনাদের ‘সাংগঠনিক স্পিরিট’ মোচড় দিয়ে উঠে!
আচ্ছা, খলিফা ওমরকে (রা) যদি সাধারণ গ্রাম্য লোক খুতবার মধ্যে ব্যক্তিগত বিষয়ে জবাবদিহিতার জন্য বাধ্য করতে পারে, আমরা কেন দায়িত্বশীলদের ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারি না?
বলতে না দিয়ে পরিবেশ সুন্দর রাখা নয়, বেটার এন্ড মোর ইসলামিক সিস্টেম হচ্ছে– যে কোনো প্রশ্নকে এন্টারটেইন করে সুন্দর উত্তর দেয়া।
ইবনে বতুতা: খুব সুন্দর লেখা। প্লাস।
জামায়াতের মধ্যে অহংকার বেশি। এটা কমানো অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। উদাহরণ– নিজেকে আল-জামায়াত মনে করা, সমালোচনায় কর্ণপাত না করা, পরামর্শ দিলে উড়িয়ে দেয়া, নেতাদেরকে ভুলের ঊর্ধ্বে মনে করা, নেতাদের কাজের সমালোচনা করাকে কুফরিতুল্য ভাবা ইত্যাদি।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: জামায়াত একটা ইসলামী সম্প্রদায়ের রূপ নিয়েছে। আন্দোলন হিসাবে দল এবং সম্প্রদায় হিসাবে দল– এ দুইয়ের মধ্যে পার্থক্যের ভিত্তিতে এ কথা বুঝতে হবে।
পার্টিশন ‘৪৭: আমি কোনো ইসলামী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী নই। আমি একজন দুর্বল ঈমানের মুসলমান, যে পরিচয় দিতে আমি ভালোবাসি। তবু আপনার লেখাটি ভালো লেগেছে।
এটি জামায়াতের কোনো দলীয় ফোরাম না হওয়া সত্ত্বেও এখানে আপনার লেখায় আমি ধারণা করতে পারি, আপনি জামায়াতের বাইরের মানুষের কাছেও আপনার মননকে শেয়ার করতে চান।
“যারা জামায়াতের সংগঠনে সম্পৃক্ত নন, তাদেরকে আদতে দুর্বল ঈমানদার বা বিচ্যুত” মনে করা ঠিক নয়– কথাটি ভালো লেগেছে। সম্ভত এটিই জামায়াতের সবচেয়ে বড় ত্রুটি। জামায়াতের গঠনতন্ত্র ও রাজনৈতিক আদর্শ অ্যাবসল্যুটলি গণতান্ত্রিক হলেও এ দেশের জনগণ জামায়াতের দিকে তাকিয়ে নাই। যদি তাই হতো, তা হলে জামায়াতের লোকেরাই সব আসনে ফাইট দিতেন। এর কারণ, জামায়াতের সংগঠনের বাইরে এর কোনো জনভিত্তি নেই, যদিও অধিকাংশ নেতাকর্মী দ্বীনদার। এর কারণ ওই যে… এর নেতৃত্ব মেগালোম্যানিক, অর্থাৎ ইবনে বতুতার ভাষায় “নিজেকে আল-জামায়াত মনে করা, সমালোচনায় কর্ণপাত না করা, পরামর্শ দিলে উড়িয়ে দেয়া, নেতাদেরকে ভুলের ঊর্ধ্বে মনে করা, নেতাদের কাজের সমালোচনা করাকে কুফরিতুল্য ভাবা ইত্যাদি।”
এ কারণে দলটি তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে একের পর এক ভুল করে আসছে। যেমন– ‘৪৭ সালে পাকিস্তান আর ‘৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতা করা। আপনি কারও সেন্টিমেন্টে আঘাত করে তাকে নিজের মতে আনতে পারেন না। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর জামায়াতের নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল, পরবর্তীতে আবার নামটি ফেরত আনা হয়। এটি প্রমাণ করে জামায়াত নেতৃত্ব পাবলিক সেন্টিমেন্ট বোঝে না। নামে কি বা আসে যায়, কর্মই আসল। ইখওয়ান কিন্তু মুসলিম ব্রাদারহুড হতে পেরেছিল।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মতো সুবক্তা বাংলা ভাষায় আর কখনও আসবে বলে মনে হয় না। তাঁকে কেন নির্বাচনের রাজনীতিতে আনার প্রয়োজন পড়ল, আমার বোধগম্য হয় না। বাংলাদেশের মানুষ রাজনিতিকদের পিছনে নাচে কিন্তু তাদের ভালো মানুষ মনে করে না। আজ সাঈদী সাহেবের দুরবস্থা দেখলে মনটা কেঁদে ওঠে এ জন্য যে, মানুষটার জন্য একদিন নিজের জীবন তুচ্ছ করে তাঁর বডিগার্ড হয়েছিলাম। আজ ওয়াজ শোনার মানুষ পাওয়া যায় না। কী অসুবিধা ছিল তাকে সক্রিয় রাজনীতির বাইরে রেখে ইসলামের মুখপাত্র রাখতে! আজকের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের যুগে তিনিই হতে পারতেন নেতা নির্বাচনে সাধারণ মানুষের পথ প্রদর্শক।
‘নির্বাচনে নারী নেতৃত্ব হারাম’ প্রচার করে আবার নারী নেতৃত্বকেই গ্রহণ করাটা রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে, কিন্তু ইসলামী আদর্শের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। এতে ইসলামের ক্ষতি হয়েছে।
“জামায়াতের প্রতি বিদ্বেষপ্রবণতা কারো ইসলামী আন্দোলনের কমিটমেন্ট বা বুঝজ্ঞানের ঘাটতিকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে।”
কথাটি সত্য, তবে গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের দায়িত্বও পালন করতে হবে।
“মানুষ ইসলাম বুঝেই না, চাওয়া তো দূরের কথা। মানুষ চায় ধর্মীয় ইসলাম, যেটি হলো পপুলার এন্ড সিরিয়াস মিসটেক। জামায়াত যদি এসব ইলেকশনের পিছনে কোটি কোটি টাকা না ঢেলে মানুষকে ইসলাম বোঝানোর জন্য কাজ করতো, জামায়াতও লাভবান হতো, দেশও বাঁচতো! গোলাম আযম সাহেবের ফর্মূলা মোতাবেক তাবলীগের লোকজন ব্যাপক হারে জামায়াতে জয়েন করার কথা। বাস্তবে তা হচ্ছে না এবং হওয়ারও নয়। ৩০০ আসনে নির্বাচন করার কথা নাইবা বললাম।”
কথাগুলো ভালো লেগেছে। রাসূলের (সা) মক্কী জীবন অনুসরণ করে মানুষকে ইসলাম বুঝানোর কাজ করা ভালো ছিল। ইরানের বিপ্লব পূর্ববর্তী যুগে আয়াতুল্লাহর দলটি কোনো ইলেকশনে অংশ নিয়েছিল বলে আমার জানা নেই। মুসলিম ব্রাদারহুড দলটির অস্তিত্ব থাকলেও নিজ নামে ইলেকশন না করেও নেতারা নির্বাচিত হচ্ছেন। কারণ, তারা মানুষকে ইসলাম বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন এবং নিজেদেরকে গণমানুষের নেতা হিসেবে প্রমাণ করতে পারছেন।
জামায়াত স্বনামে বা অন্য নামে একটি ইন্সটিটিউট হতে পারত, যা মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা দিতো এবং যোগ্য ইসলামী নেতা তৈরি করত। এসব নেতা শুধু জামায়াত নয়, অন্য দলে থেকেও ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পারত।
সশস্ত্র বিপ্লব নয়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ই সমাজ পরিবর্তন করার লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হবে। আর সে জন্য দরকার জামায়াতের নেতাকর্মীদের আরও বেশি গণমানুষের কাছে আসা। মেগালোম্যানিয়া নয়।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বা-ব্বা!! গতকাল গভীর রাতে পোস্ট করলাম, আর আজ রাতে খুলে দেখি কত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য!
মাঝে মাঝে আমাকে বিদগ্ধজনেরা জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি… দলের ঘোষণা… ইত্যাদি! আচ্ছা, এই যে আমরা ক’জন পরস্পরের পোস্টে একটা স্পষ্ট ধারায় মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য দিয়ে যাচ্ছি, এটি কি এক ধরনের সংঘবদ্ধতা নয়?
ব্লগে পরিচয় হওয়া একজনকে একটু আগে ইমেইলের উত্তরে বলেছি– দল গড়ে উঠে, যেভাবে একটা দ্বীপ জেগে উঠে, যেভাবে একটা দীপ জ্বলে উঠে। বিপ্লব ঘটে যায় যেভাবে মায়ের চাওয়া, না চাওয়ার তোয়াক্কা না করে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়ে যায়, যেভাবে আগ্নেয়গিরি কোনো সময় না দিয়ে অগ্নুৎপাত ঘটায়! দল তৈরি করা যায় না, বিপ্লব ঘটানো যায় না। প্রস্তুতি কাজের মাত্রা পূর্ণ হলে তা আপনাতেই এসে যায়।
আপনার লেখা নিয়ে পয়েন্টভিত্তিক মন্তব্য করতে গেলে আরও একটা দীর্ঘ লেখা হয়ে যাবে। আপাতত অনেক অনেক ধন্যবাদ। সাথে থাকার জন্য।
লাল বৃত্ত: “আমার সকল কথার মূল কথা হলো, জামায়াত মক্কী যুগকে এগজস্ট না করে মাদানী যুগের স্বপ্নে বিভোর!”
এই বিষয়টা সত্যিই যে কতটা ভয়াবহ তা কল্পনাতীত। বরং আমি মক্কীজীবনেরও আগে রাসূলের নবুয়তপূর্ব সময়ে ফিরে যেতে চাই। যে সময় আল্লাহ ইসলামের জন্য উপযোগী একটি নরম শষ্য ক্ষেত তৈরি করেছেন আরবের বুকে, যেখানে বিশ্বস্ততার উর্বরতা আর সত্যবাদিতার পরম সম্মিলনে সামাজিক কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায় যুবক মুহাম্মদের সামাজিক অবস্থান পরিস্কার দেখিয়ে দেয়। এটাও কম ছিলো না। মানুষ তাকে পাগল বলতে ঠিকই, কিন্তু সেই বলাকে নিজেরাও বিশ্বাস করতো না।
এ রকম কিছু কি হয়েছে? নাকি জ্ঞানভিত্তিক ক্যাডার ব্যবস্থার গ্যাঁড়াকলে পড়ে সেই জ্ঞানের অদৃশ্য উষ্ণতা দূরত্ব সৃষ্টি করছে সাধারণ মানুষের জীবন থেকে? অবশ্যই প্রয়োজন জ্ঞান এবং ক্যাডারভিত্তিক ব্যবস্থা। কিন্তু তা দূরত্ব সৃষ্টিতে নয়, বরং কী করে দূরত্ব কমাতে পারে– তা নিয়ে ভাবনার বিস্তৃত অঞ্চল খুলে দিতে হবে।
‘আল ইয়াওমু আকমালতু’ বলা হয়েছে মানেই এই নয়– ইসলাম পুরোটা একটা ট্যাবলেট, আর তা মসনদে গিয়ে জোর করে বাচ্চাকে তেতো ঐষধ খাওয়ানোর মতো করে নাক টিপে পানির সাথে গিলিয়ে দেবো। আল্লাহ চাইলে সব মানুষকে একবারে হিদায়াত দিতে পারতেন। আবার চাইলে যাদেরকে হিদায়াত দিয়েছেন, তাদেরকেও এক নিমিষেই পূর্ণ মুসলিম বানিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি হিউম্যান নেচারকে এভয়েড করে ইসলাম কায়েম হোক, তা চাননি।
আরো সমস্যা হচ্ছে: ইসলাম না জানা মানুষকে ইসলাম জানানো এক জিনিস, আর বহু বছর ধরে ভুল ইসলামের অনুসারীদেরকে ইসলামের আসল রূপে অভ্যস্ত করে তোলা আরেক জিনিস। দ্বিতীয়টা দুঃসাধ্য ও চরম দূরূহ একটি কাজ।
এই অঞ্চলের মানুষ ইসলাম কী জিনিস এবং তার আসল রূপটি কতটা আধুনিক ও যুগোপযোগী এবং এটা যে আসলে কোনো ধর্ম নয়, বরং জীবনব্যবস্থা তা-ই তো জানে না। আর তাদেরকে ইসলামী রাজনীতি শেখানো? আজব!! আর তাও যারা শেখাবে তারা যদি সেই জনতার প্রিয় মানুষের অবস্থান গ্রহণ করতে না পারে… পুরোই অরণ্যে রোদন।
পার্টিশন ‘৪৭: আপনার কথাগুলো ভালো লেগেছে। জামায়াতের কর্মকাণ্ডে আপনার কথাগুলোই প্রতিফলিত হয়। আমি মনে করি, আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ ইসলামী সমাজব্যবস্থা, ইসলামী রাষ্ট্র তার একটি উপাদান মাত্র। অথচ জামায়াতর কর্মকাণ্ড রাষ্ট্র নিয়েই আবর্তিত, সমাজ নিয়ে ততটা নয়।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: চবির স্বনামধন্য ইসলামী গবেষক প্রফেসর ড. আ ক ম আবদুল কাদের আমাকে প্রায়ই উৎসাহ দিয়ে থাকেন। ইসলামী শরীয়াহ বাস্তবায়নে ক্রমধারা সংক্রান্ত আমার ধারণাটাকে তিনি প্রবলভাবে সমর্থন করেন। তিনি আমাকে একটা লেকচার দিয়েছেন দলিল প্রমাণ দিয়ে যে, ইসলাম জাহেলী যুগের বেশ কিছু টার্ম, নিয়ম ও ঐতিহ্যকে গ্রহণ করেছে।
লালবৃত্তের এই ধারণাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, অথচ এক্সপার্টরাও এসব খেয়াল করেন না! কারণ, তারা পপুলারিস্ট-সিনড্রোমে ভুগছেন!
আর পার্টিশন মহোদয়ের কথাবার্তায় তো মনে হয়, তিনি ওয়াইডলি ইন্টিগ্রেটেড! “আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ইসলামী সমাজ”– এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা। সমাজ আগে এসেছে, রাষ্ট্র পরে। সমাজ টিকে থাকে রাষ্ট্র না থাকলেও।
ব্লগের এসব লেখা বৃদ্ধিবৃত্তিক সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা পড়েন না– এ কথা হলফ করে বলতে পারি। কারণ, তারা স্বীয় জ্ঞান-বুদ্ধির বিষয়ে অতীব আস্থাশীল। শুধুমাত্র সমাজটা খারাপ বলে ইসলাম কায়েম করতে পারছেন না!?
লাল বৃত্ত: এটা কেবল জাহেলি যুগেই নয়, বরং সকল যুগেই নবী ও রাসূলগণ সেই যুগের কর্মপন্থা এবং প্রযুক্তিগত বিষয়ের সর্বোচ্চ ব্যাবহার নিশ্চিত করেছেন। আর আমাদের কর্মপন্থা হচ্ছে আগে হারাম, পরে উপায় না থাকলে বাধ্য হয়ে হালাল অথবা মুবাহ বলা।
এম এন হাসান: করণীয় জেনে ভালো লাগল। অনেক হতাশার মধ্যে একটু নির্দেশিকার মতো। আমি প্রচণ্ডভাবে একমত– যে সমালোচনা করবে তার কাজও বেশি করতে হবে। আলোচনা-সমালোচনা ও দ্বীনের কাজ একসাথে চলবে। আমি কিছুদিন আগে শায়খ কামাল উদ্দিন জাফরীকে লন্ডনে একটি প্রোগ্রামে পেয়ে ফতোয়া জিজ্ঞেস করলাম। ইসলামী আন্দোলন করা ফরজ জানি, কিন্তু আমার স্টাডি অনুসারে আমি যদি দেখি, ইসলামী আন্দোলন তার কর্মপদ্ধতি এমনভাবে নিয়েছে যার ফলে আমার কাছে মনে হচ্ছে না এটা আর ইসলামী আন্দোলন। সেই অবস্থায় আন্দোলনের সাথে থাকা আমার জন্য ফরজ কিনা? উনি আমার কথা খুব সিরিয়াসলি নিয়েছিলেন এবং উপস্থিত আরো অনেককে লক্ষ্য করে যা বললেন তার সারসংক্ষেপ এ রকম: আন্দোলন তার স্ট্র্যাটেজি রিভিউ করা জরুরী, সময়ে সময়ে এই রিভিউ না হলে সঠিক ডাইরেকশনে এগুচ্ছে কিনা জানা যায় না। আন্দোলনের সমসাময়িক কাজকর্মে বিভিন্ন প্রশ্ন ইয়ং জেনারেশনের ভেতরে থাকলেও এটা সত্য, আন্দোলন তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিবর্তন করেনি। আর তাই আন্দোলন ছাড়া যাবে না, কাজ চালিয়ে যেতে হবে। হ্যাঁ, ভেতর থেকেই পরিবর্তনের জন্য নিজেদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
এই কথা থেকে আমার কনক্লুশন: ইসলামী আন্দোলনের কাজ অনেক, যে যেই বিষয়ে এক্সপার্ট সেই বিষয়ে নিজ দায়িত্বে কাজ চালিয়ে উচিত। আন্দোলনের কল্যাণার্থে রিভিউ, আলোচনা-সমালোচনা করাই ঈমানের দাবি।
বি. দ্র.: আমার সিরিজ চালু হওয়ার আগেই উনার সাথে আমার এই আলোচনা হয়েছিল।
ধন্যবাদ আপনার লেখার জন্য।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ভেতর থেকে পরিবর্তনের বিষয়টা আমি অসম্ভব-প্রায় মনে করি। যদিও তাত্ত্বিকভাবে তা সম্ভব। বরং সম্ভব হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ বিষয়ে আমার ফোর-পয়েন্টের কথা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
আন্দোলন লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পরিবর্তন করেনি বটে, তবে এটির যা হাল বা গতি তাতে এটির উপরে চড়ে ঘুমানো বা হাওয়া খাওয়া হলো আল্লাহ প্রদত্ত যোগ্যতা ও দায়িত্বকে এড়িয়ে যাওয়া। রিক্সায় চড়ে চট্টগ্রাম হতে ঢাকা যাওয়ার মতো!
ধীর গতি, ভাঙ্গা গাড়ি, আশেপাশে অনর্থক ছোটাছুটি– এসব কারণে এ গাড়ি দিয়ে যে কাজ হবে না, এই অপ্রিয় সত্য কথাটা অতি স্পষ্ট করে বলতে হবে।
অশ্বারোহী: ভালো লাগলো। অন্য একজনের একটি মন্তব্য এখানে পেস্ট করলাম।
ক্ষ্যাপা দুর্বাসা লিখেছেন: দুঃখের সাথে স্বীকার করতে হচ্ছে তাগুতের সাথে ক্ষমতার ভাগাভাগি করেছে আমাদের বৃহত্তর ইসলামী দলটি। পরিহাসের ব্যাপার হলো ক্ষমতার এই ভাগাভাগিকে তারা তুলনা করেছে হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে!! সহমত।
অপ্রিয় প্রশ্ন আবার এসে যায়। (হুদায়বিয়ার চুক্তিকে বিবেচনায় নিলে) যদি সাঈদীরা ইসলামপন্থী হয়, তবে খালেদা/হাসিনা কাফের, পক্ষান্তরে খালেদা/হাসিনা যদি মুমিন হয় তবে সাইদীরা কাফের– এই দুইয়ের যে কোনো একটি সিদ্ধান্তে মানুষকে আসতে হবে। কারণ, হুদায়বিয়ার সন্ধি তো মুমিনের সাথে কাফেরের সন্ধিচুক্তি। কোন পক্ষ মুমিন, কোন পক্ষ কাফের– কেউ বলে দিবেন কি? জামাতিদের এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেবার সেই সৎসাহস নেই, আমি জানি।
রাসূল কি মদীনার রাষ্ট্রপরিচালনার কাজে মক্কার কাফেরদের অংশীদার করেছিলেন হুদায়বিয়ার পর? কারো জানা থাকলে জানাবেন। জামাতিদের হুদায়বিয়া কোন অর্থে ফাতহুম মুবিন (সুস্পষ্ট বিজয়), জানতে পারি কি?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: যারা ইসলামের জন্য কাজ করেন, তারা ইসলামকে ব্যবহার করেন। এটি দূষণীয় নয়, প্রয়োজনীয়। আমাদের জীবনের সাথে তুলনা করার জন্য (রাজমিস্ত্রীদের ওলনের মতো) আমরা রাসূল (সা) ও সাহাবাদের জীবন ও ঘটনাবলীর প্রসঙ্গ আনবো– এটি স্বাভাবিক।
তবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, এতে আমাদের প্রসঙ্গটি রাসূল (সা) ও সাহাবাদের সাথে মিলাতে হবে। তা না হয়ে যদি উল্টো ঘটে, সেটি খুবই খারাপ। এ রকমটা ঘটে। যেমনটা আপনি উল্লেখ করেছেন।
অশ্বারোহী: তাহলে এখন আপনিই বলেন, কোন যুক্তিতে আমি বৃহত্তর এই ইসলামী দলটিতে যোগ দিতে পারি? এটা কি আমার ঈমানকে ক্ষতি করবে না?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমাদের উচিত বৃহত্তর ইসলামী দলে যোগদান করা ও সক্রিয় থাকা। আল্লাহ বলেছেন, তোমরা ভালো কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো। মন্দ কাজে নয়। যেসব কাজ ভালো তথা শরীয়তসম্মত, সেসব কাজে অগ্রণী ভূমিকায় থাকতে অসুবিধা কী? বা আশেপাশের ভালো কাজে অংশগ্রহণ না করার কোনো যুক্তি বা শরয়ী উজর আছে কী? আপনি যখন মসজিদে যান তখন যেসব বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেমন– ইমাম সাহেবের অজু আছে কিনা, তিনি সূরা-কেরাত, মাসলা-মাসায়েল জানেন কিনা ইত্যাদি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে কি জামায়াতে শরীক হোন? নাকি জামায়াত চলমান থাকলে সরাসরি তাতে শরীক হয়ে যান?
কারো কোনো ভালো কাজে সহযোগিতা করার জন্য সেই ব্যক্তির ব্যক্তিচরিত্র যত না গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কাজটি। এটি ব্যক্তি ও সংগঠন উভয় ক্ষেত্রে সমপ্রযোজ্য।
বৃহত্তর ইসলামী দল বলতে আপনি যা বোঝাচ্ছেন, এর সবকিছু কি খারাপ? নিশ্চয়ই তা নয়। বরং তাত্ত্বিক দিক থেকে এতে অনেক গ্রহণযোগ্য বিষয় রয়েছে। খোলা মন নিয়ে দেখলে নিশ্চয় তা যে কারো নজরে আসবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে ‘আল-জামায়াতের’ স্ট্যাটাসে গ্রহণ করা (যা অনেক দায়িত্বশীল করে থাকেন) স্পষ্টতই ভুল। আবার, জামায়াত আদতে ইসলামী দলই নয় বা হলেও অত্যন্ত নিম্নমানের– এসব যারা বলে বা মনে করে, তারা সংশ্লিষ্ট শরয়ী সীমার বাহিরে গিয়ে তা করছেন।
এ সংক্রান্ত আমার ফোর পয়েন্টস হচ্ছে:
১. নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জামায়াত সংশোধিত হবে না। যদিও তাত্ত্বিকভাবে তা হওয়া উচিত।
২. জামায়াতের বিকল্প ইসলামী দল গঠন এ মুহূর্তে সম্ভব নয়। কারণ, উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব।
৩. বিচ্ছিন্ন, একাকী ও নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকা, দেখি না কী হয়, দেখি না অন্যরা কী করে ইত্যাদি ধরনের পজিশন ঈমানের দাবির বিপরীত।
৪. আমাদের উচিত ইসলামের প্রচলিত ধারাসমূহের সাথে যথাসম্ভব ভালোভাবে সম্পৃক্ত থাকার সাথে সাথে মোস্ট সিরিয়াসলি কনসেপ্ট বিল্ডআপের কাজ করে যাওয়া। ফলাফল, ভবিষ্যত তথা আল্লাহর হাতে।
ধন্যবাদ।
অশ্বারোহী: হিজরত শেষ হয়ে যায়নি। তাগুত যখন আমার উপর বলপ্রয়োগ করবে, তখন না হয় আমি হিজরত করবো। আল্লাহর দুনিয়া তো আর ছোট হয়ে যায়নি।
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّىٰ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ
তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তাঁর সাথীদের মধ্যে একটি উত্তম আদর্শ বর্তমান। তিনি তাঁর কওমকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছিলেন: আমরা তোমাদের প্রতি এবং আল্লাহকে ছেড়ে যেসব উপাস্যের উপাসনা তোমরা করে থাক তাদের প্রতি সম্পূর্ণরূপে অসন্তুষ্ট। আমরা তোমাদের অস্বীকার করেছি। আমাদের ও তোমাদের মধ্যে চিরদিনের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে– যতদিন তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনবে। (মুমতাহিনা: ৪)
وَمَن يَرْغَبُ عَن مِّلَّةِ إِبْرَاهِيمَ إِلَّا مَن سَفِهَ نَفْسَهُ ۚ وَلَقَدِ اصْطَفَيْنَاهُ فِي الدُّنْيَا ۖ وَإِنَّهُ فِي الْآخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ
এখন কে ইবরাহীমের পদ্ধতিকে ঘৃণা করবে? হ্যাঁ, যে নিজেকে মূর্খতা ও নির্বুদ্ধিতায় আচ্ছন্ন করেছে সে ছাড়া আর কে এ কাজ করতে পারে? ইবরাহীমকে তো আমি দুনিয়ায় নিজের জন্য নির্বাচিত করেছিলাম আর আখেরাতে সে সৎকর্মশীলদের মধ্যে গণ্য হবে। (বাকারা: ১৩০)
لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ ۖ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ ۚ فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। ভ্রান্ত মত ও পথ থেকে সঠিক মত ও পথকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। এখন যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে, সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন আঁকড়ে ধরে, যা কখনো ছিন্ন হয় না ৷ আর আল্লাহ (যাকে সে অবলম্বন হিসেবে আঁকড়ে ধরেছে) সবকিছু শোনেন ও জানেন। (বাকারা: ২৫৬)
মন্ত্রীত্ব না নিয়েও আল্লার দ্বীন প্রচার করা যায়, তাগুতকে ত্যাগ করেও আল্লার দ্বীন প্রচার করা যায়, অতীতের বহু নাবী ও রাসূলগণ এই পদ্ধতিরই অনুসরণ করেছেন।
শ্রদ্ধেয়, এরা তো তাগুতের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে, এদের কোনো ভালো কাজকে হয়তো স্বীকৃতি দেওয়া যায়, কিন্তু তাদের মধ্যে থেকে সংগঠনে কাজ করা কোনোমতেই সম্ভব নয়। তারা তো স্পষ্ট নাবীদের অনুসৃত নীতি থেকে দূরে সরে গিয়েছে। তারা স্পষ্ট বুরহান নিয়ে মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। আল্লাহর বিধান থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের কথা শুনাও যাবে না, মানাও যাবে না, যদিও তারা কিছু ভালো কাজ করে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনার মন্তব্যের উপরে আমি এ মুহূর্তে অতিরিক্ত কিছু বলছি না। তবে, আপনাকে হযরত আলীর (রা) সাথে মতবিরোধকারীদের বিষয়টি সতর্কতার সাথে স্মরণ রাখার পরামর্শ দিতে চাই।
ধন্যবাদ।
অশ্বারোহী: আলী অথবা মুয়াবিয়া (রা)– তাঁরা উভয়ই আল্লাহর আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, উভয়ে কাফিরদের প্রতি কঠোর ছিলেন। তারপরও কিছু ভুল বুঝাবুঝির কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল।
কিন্তু আপনি যদি আওয়ামী লীগ বা বিএনপিকে এবং জামায়াতে ইসলামীকে এক জায়গায় করতে চান সেটা সম্ভবত মিলবে না।
আপনি যদি আপনার মন্তব্য একটু বিস্তারিত করেন তাহলে জবাব দেওয়া সহজ হবে আশা করছি, অবশ্য আপনি যদি আলোচনা চালিয়ে যেতে চান।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ধন্যবাদ।