যখন আমার মন খারাপ থাকে তখন আমি ভিডিও লেকচার শুনি। একটানা। কোনো একটা বিষয়ের ওপরে। না হয় আমি কিছু একটা লিখি। অথবা, গান শুনি। মাঝে মাঝে রাকেশ চৌরাশিয়ার বাঁশি অথবা আনুশকা শংকরের সেতার শুনি। এর কোনোটি না করলে মাঝে মাঝে মন খারাপের সময় আমি কোথাও হাঁটতে যাই। কেউ সাথে থাকলে ভালো লাগে। না থাকলে আরো বেশি অনুভব করি প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য।
আমার সবচেয়ে ভালো লেখাগুলো আমি লিখেছি মন খারাপের সময়ে। দুঃখবোধ আমাকে দেয় জীবনীশক্তি। করে তোলে সৃজনশীল।
দুঃখ চাই না। সুখ চাই। অবারিত। সবটুকু। তবুও দুঃখ আসে জীবনে। কারণে অকারণে। ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু পারে না। কীভাবে যেন ক্রমান্বয়ে ডিপ্রেশন-ম্যানেইজমেন্ট শিখে গেছি বেশ। কীভাবে যেন দুঃখটাই শেষ পর্যন্ত সুখে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
পিছন ফিরে দেখি, দুঃখবোধ না থাকলে এতটুকু এগোতে পারতাম না। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “তোমাদের মন্দগুলোকে আমি ভালোতে রূপান্তরিত করে দেবো।” খারাপ কাজ আর বাজে অভিজ্ঞতাগুলোকে শেষ পর্যন্ত কল্যাণকর রূপে ফিরে পাওয়ার এই অলৌকিকতা এসেছে আমার জীবনে বারে বারে।
ডেল কার্নেগীর এই কথাটা আমি প্রায়ই বলি, ‘দুশ্চিন্তাহীন নতুন জীবন’ বইয়ে তিনি যেটি বলেছেন, “লেবু থাকলে শরবত বানিয়ে নাও।” “কাঠের গুড়োকে করাত দিয়ে কেটো না।” জীবনটা একশ মিটারের স্প্রিন্ট-দৌড় নয়। বরং দশ হাজারের মিটারের দৌড়ের মতো দীর্ঘ, ক্লান্তিকর ও সমাপ্তিনির্ভর ব্যাপার। কথায় বলে, “সব ভালো যার শেষ ভালো তার।”
তাই, সব বলে আমি ব্যাট করতে যাই না। অহরহ মেনে নেই আপাত পরাজয়। কাছের প্রিয় মানুষদেরকেও বলি, অধৈর্য হয়ো না। অমোঘ নিয়তি বা তাকদীরকে মেনে নিয়ে অবশিষ্ট বা বিকল্প সুযোগকে কাজে লাগাও। হতে পারে, তুমি ব্যতিক্রমী। তাই সবার মতো হওয়ার চেষ্টা করো না। তুমি তোমার মতো হও। তাতেই তুমি সফল হবে নির্ঘাত।
ক’দিন আগে লিখেছিলাম, try to do the best in every given situation। কখনো কখনো পরাজয় মেনে নেয়াটাই সর্বোত্তম উপায়। কখনো কখনো উঠে দাঁড়ানোটাই বাঁচার একমাত্র পথ। কখন তুমি ঘুরে দাঁড়াবে, কখন মেনে নিবে, তা তোমার বিবেক বলে দিবে। এভাবে জোয়ার-ভাটার মতো করে সমঝোতা আর অবিচলতার উভয় সুইচকে পর্যায়ক্রমে অন-অফ করে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে হবে।
হতাশা আছে। থাকবে। দুঃখবোধ আছে। থাকবে। তাই বলে বসে থাকলে চলবে না। একটা কিছু করতে হবে। তোমাকে। আমাকে। প্রত্যেককে। বিশেষ একটা কিছু। সেটা হোক অন্যদের মতো, অথবা অনন্য সাধারণ।
তীব্র দুঃখবোধের সময় জীবনকে যতটা গভীরভাবে বুঝতে পেরেছি, সুখের সময় ততটা জীবনবোধ আসেনি আমার অনুভবের সীমানায়। সুখী হতে চাই, সব দুঃখকে জয় করে। গৌতম বুদ্ধের অষ্টাঙ্গিক মার্গ কতটা কার্যকর বা বাস্তবসম্মত পদ্ধতি, তা জানি না। কখনো সেভাবে প্র্যাকটিস করে দেখি নাই। কিন্তু উপর্যুক্ত চারটি কাজ আমার ভারাক্রান্ত মনকে উৎফুল্ল করে তোলে।
যখন মন খারাপ হয় তখন ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার মতো করে, বার্ডস আই ভিউ থেকে জীবনের সামগ্রিকতাকে বোঝার চেষ্টা করি। এই চার ধরনের কাজ এক অদ্ভুত সেল্ফ-রিয়েলাইজেশান লাভে আমাকে সহায়তা করে। শক্তি জোগায়।
মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য
Nazamul Hoque: মন খারাপ হলে আপনি মনের যিনি সৃষ্টিকর্তা তার ধ্যান করলে মন ভালো হবেই।
Mohammad Mozammel Hoque: আমি এখানে ঔচিত্যের কথা বলি নাই। বরং আমার জন্য যেটি কার্যকর বাস্তবতা, অকপটে সেই কথাগুলোই বলেছি।
কাজী স্বাধীন: মোজাম্মেল ভাই, সালাম। জীবনে মোটিভেশনাল বই বেশ পড়েছি। ডেল কার্নেগী নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। এখন সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি পাই সালাতে। মন খারাপ হলেই যা বলার জায়নামাজে সেজদায় আল্লাহর কাছে অভিযোগ করি, প্রার্থনা করি। মন ভালো হয়ে যায়।
Mohammad Mozammel Hoque: সালাম নিবেন। ডেল কার্নেগী আত্মহত্যা করেছেন, এটি হচ্ছে একটা নিছক প্রচারণা। আমার মন খারাপ হলে আমি কী করি, সেটা আমি বলেছি। ভালো থাকেন।
কাজী স্বাধীন: জ্বী ভাই। আমিও আমার মন খারাপ হলে কী করি তাই বলেছি। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।